Monday 9 December 2019

মৃগশিরার মাসের অনুবাদ কবিতাঃ ডেনমার্ক থেকে ওলগা রাবঁ



খোলা 

খোলা: কোন শল্যবিদ ছুরি রেখেছে আমাদের পাত্রে
মেডুসার প্রতিরক্ষার একটি আয়না

কে এখন তার স্তন পুষ্ট করবে ? তোমার সুন্দর মুখ? তোমার কদর্য মুখ?



আমি যে সাপটিকে পুষ্ট করেছি আমার হলুদ, আমার নরম সোয়েটশার্ট, আমার ক্রিমে

আমার মুখে ঠান্ডা ক্রিম লাগছে, ভালোবাসার একই ক্লান্তি দায়।



আমার মুখ অশ্লীল সিনেমা, ভোগ্য পণ্য, নীল ফুল যা দুধে অদৃশ্য হয়ে যায় তা পূর্ণ

আমার মাতৃভূমি, মাইগ্রাস, আমার মাতৃভাষা, আমার জিভ মাংসের সাথে ভারী,

আমি আমার পিতামাতার চিহ্নটি প্রিয়জনের রোগ হিসাবে বহন করি।



সাদা পোশাকে সাদা দাগ, হার্ট-ফিটনেস, ঘরের পিছনে সৈকতের পাশে কুৎসিত বালিতে সামান্য সবুজ পাথর,

পরিচিত সৈকত, আপনার মুখ, ঘুমের অছিলায় বন্ধ,
 এটি কিছুই নয়, কিচ্ছু না



মেডুসা, আমি তার মুখ দেখতে পেলাম দূরের দূরের বালিতে, সূর্যের প্রথম রশ্মির দ্বারা আলোকিত,

অরণ্য এবং শিশুর বিছানা,
এর প্যাটার্নটি বড় হাতের মতো দেখায়,



দিনের প্রথমদিকে ধোঁয়াশা উপকূলের উপর দিয়ে যায়,
পরে সমুদ্রের মহান দেহ তার রাস্তাগুলি আলোকিত করে,

আমরা আমাদের নিজের হাতে হালকা ভাবে রেখেছি, নার্ভাস হয়ে পড়েছি, আমরা সাদা সুতো কেনাকাটা করেছি,



আমরা প্রাচীরের বিরুদ্ধে আমাদের গাল ঠান্ডা করেছি, যত্নশীল, সাদা পাথরগুলিতে প্রচন্ড উত্তপ্ত পর্যটকদের,

একটি একক পোকার উপর হামাগুড়ি দেওয়া একক পাথর



আমি গ্রীষ্মের পরিষ্কার মুখে জেগে উঠি, আমার চোখগুলি আপনার শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি দিয়ে ঢেকে গেছে।

সকালটা পুরনো।



( ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে ১৯৮৬ সালে ওলগা রাবেঁর জন্ম। বড় হওয়া ওই শহরেই। কবিতার পাশাপাশি উপন্যাস এবং অনুবাদেও তিনি সিদ্ধহস্ত। মূল ড্যানিশ থেকে বহু পরিশ্রমে তাঁর কবিতার অনুবাদ করলেন উষ্ণিকের সম্পাদক)

(ছবি ঃ সোফি ম্যাথিয়াসেন)





মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৭

Broadway Boogie Woogie (1943) - Piet Mondrian

প্রাপ্তি 
          -উমা মন্ডল 

জন্মদিনে  পায়েস  হয়না............শুভেচ্ছা  বার্তার  স্তূপ  পড়ে  আছে  বস্তা  ভর্তি  হয়ে
বসে  আছি  মাথাভর্তি  নির্জনতা  নিয়ে ; দেয়ালের  গায়ে  বসা  পোকা  কেটে  দেয়  আস্তরণ
ছাড়া  পাওয়া  বিষাদের  জঙ্গল , সবুজ  কান্না .........বনজের  গর্ভ  থেকে  কোকিলের  গান
শুনি । ভালোবাসি  তানের  নদীতে নৌকা  নিয়ে  ভ্রমণে  বেরাতে............

বেলা  পড়ে  আসে ; দিনের  অর্ধেক  চলে  গেছে , নেশাগ্রস্ত  পথ  চলতে  চলতে
পায়েসের  গন্ধ  পাই ; আজ  জন্মদিন  নয় , কালসর্পের  কাহিনী  মা  কি  ভুলে  গেল........

পড়ে  আছে  খোলসের  কঙ্কাল , রক্তাক্ত । ছুরি  দিয়ে  কেটে  দিচ্ছে  ভাণ্ড  নিয়ে  শক্তিরূপা
ভস্মের  প্রকোপে  অন্ধ  হয়ে  গেছি  একেবারে। আমার  পুরোনো  মাকে  দেখলাম  কতদিন
পর জীবাশ্মের  মায়াচিত্র  থেকে  উঠে  আসতে

(ছবিঃ পিয়েঁ মঁদ্রা)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৬

Related image


নদী
       -পাপড়ি গুহ নিয়োগী




অন্ধ রাক্ষস ড্রেজিং এর কাজ পেয়েছে



পচা গলা রক্তে শকুনের নগ্ন নাচ

আত্মহত্যা চিৎকার করে তল চায়



তুমি রাষ্ট্র পরিচালিত নরকের কথা বলো

আমি অসুখের হাত ধরে সাঁকো হই



অবশেষে ঘুমিয়ে পড়ে নদী, কান্নার দাগ রেখে





রক্ত নিয়ে খেলা এদের জন্মগত অধিকার



প্রত্যক্ষদর্শী ভয়ের ভেতর দাঁড়িয়ে

নিজের মৃতদেহের সাথে নিজস্বী তুলছে



এখন আর নদীর ভেতর ডুবে মরা যায় না

(ছবিঃ জেরেমি ইওর্ডানোফ) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৫

Arshile Gorky famous abstract artist Orphism

একা
         -দীপায়ন পাঠক



শ্যাওলার সাথে

কেমন যেন বন্ধুত্ব হয়ে গেছে



সূর্য্যের আলো কমে এলেও

ডাকে না কোন মুখ



হঠাৎ করে সন্ধ্যা নেমে এলে আর

নতুন করে হাওয়া ওঠে না



হেমন্ত বিকেলে কালো নৌকায়

ভাটিয়ালী গায় না মাঝি



শুকনো কাশফুলে পিঁপড়ের বাসার

অন্ধকার, ভাবায় না আর



এবার হয়তো একা থাকাও শিখে যাব

(ছবিঃ আর্শাইল গোর্কি) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৪

Related image
স্নায়ুগাছ
            -রাজেশ শর্মা


এমন উপলব্ধির ভিতর

একটি গাছ হয়

মায়াময় একটি গাছ


তার শিকড় ছড়িয়ে পড়ে স্নায়ুতে

বিকেল ঘনিয়ে আসে


যে পাখি সারাদিন রৌদ্র খুঁটে খেয়েছিল

সে এসে বসেছে কোলায়


রাত্রি হচ্ছে


খিদে পাচ্ছে জলের মতন


তোমার ডানার ভিতর

ঘাপটি মেরে শুয়েছে ঘুম!

(ছবিঃ ব্যাসিলী ক্যান্ডিনস্কি) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৩

Related image

দুলাল পাল : রাষ্ট্রহীন পিতার মাংস ; আসাম প্রদেশ
                                                                                -সু চক্রবর্তী 


সম্পর্ক গাঢ় হলে একধরনের দাগ পড়ে।সে দাগের চারপাশে ঘুরঘুর করে ওঠে তেমাথা সেলুন, ঐশ্বর্যহীন নাভিমূল। চুপিসারে এসে বসে পড়ে লাশ।আহার।আমরা দিন দৈনতায় ভুগি, অবুঝ সেলামি ফুঁড়ে ভেসে যান সন্তানেরা....তাঁদের হাতে মুখাগ্নির সামান; নুন, মরাভাত আর শকুন হয়ে যাওয়া পুরুষটি।



তুমি জেগে থেকো না বরং কিছুটা সময় কাকতালীয় ভাবে অপব্যয় করে যাও।একটা হাত ক্রমশ গ্রাস করছে তোমার বিস্মৃতি ও তার অতলে থাকা যাবতীয় রাষ্ট্রয়াক্ত শোকভোগ !  গুনে গুনে রাখো তাকে।  মাংস পচে উঠলে স্বীকৃতি  অন্তঃস্বত্বা যুবতীর  মতোই দেখায়। তোমার দেহজপুকুর ; নিমেষে ছাইভাত....আক্কেলসেলামি !   জলভরা শ্বাসে আটকে যায় কাঁটাওয়ালা মাছ, তাদের টুকরো দেহে আটকে থাকে অশ্রুমায়াপ্রেম। চোখ জুড়ে ত্রিবেণীসংগম.....




গোটা একটা গোষ্ঠ...থরে থরে সাজানো আছে জরাশোকমৃত্যু। ইট,পাথর, বালু, সিমেন্ট দিয়ে তৈরী হচ্ছে এক একটা  সুদৃশ্য শেকলঘর । সামনে পার্ক, জলের সুবন্দোবস্ত!  এতটুকু সব ঠিকঠাক, ঠাকঠমকীয় ! ভেতরের হাওয়া,  হিম! সারি সারি লাশ পড়ে আছে.....নিভৃতে.. একা, দারাপুত্রহীন!



অনেকটা ঘোরের মধ্যে হেঁটে চলেছে পুরুষ। তার দু হাতে বাজারের থলে,ভরতি.... নিয়মমাফিক । চাল ডাল আর আনাজপাতির আড়ালে উঁকি দিচ্ছে লাল হয়ে যাওয়া পিতার মাংস! এবার মুখাগ্নি হবে।

(ছবিঃ গেরার্ড রিখটার) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১২

Related image

দেখা হোক আরো একবার
                               -পিয়াল রায়

এদিকে শীতটা একটু কমতেই
                হঠাৎ  খানিকটা বসন্ত
                     জিরোতে এলো আমার বাড়ি

হেমবর্ণ মুখ
তেল চকচক গালে  ঠিকরে নামছে
মন কেমন হাওয়া

গান বেজে উঠল অকারণ

সামনের যুবক গাছটায় একটা
           লেজঝোলা রঙিন পাখি
কার যেন নাম করে ডেকে যাচ্ছে একটানা
                                             সঞ্জয় সঞ্জয়

রোদের দরজা হাট করে খোলা
            ধীরেধীরে জমে উঠছে শৃঙ্গার

ভেতরে ভেতরে কোথাও প্রবল শব্দে
ভেঙে পড়ছে জল

সে এক অনন্ত পরম্পরা... অশেষ বিস্ময়

অন্ধকার উজিয়ে উন্মাদ কোনো অদৃশ্য তরঙ্গের দিকে
             
 প্রতিধ্বনিত হল

' আবার দেখা হোক
         আমাদের আবার দেখা হোক '

(ছবিঃ জ্যাকসন পোলক) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১১

Related image

মাংস
         -তন্ময় ধর

মাংস খুব ছোট করে কাটতে বলেছিলে তুমি।
আমার হাত থেকে ছুরিটা পড়ে গেল।
আর হঠাৎ অন্ধকারে চেঁচিয়ে উঠল কেউ।
শাদা একটা মাছি উড়ল এনকাউন্টারের সামনে

মাংসের দাম ওঠানামা করতে শুরু করল।
তেল-নুন-মশলার ভেতর থেকে
কেউ পুড়িয়ে ফেলল আমার তীব্র জিভ।




(ছবিঃ ব্রুস গ্রে) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১০

Image result for abstract paintings by famous artists

ঘাতক 
          -নিলীমা দেব

দৃশ্য আমাকে দেখছে
যেমন করে আমি তোমাকেও দেখিনা নিখুঁত

শহরের  শরীর বেয়ে নেমে যায় আঙুল

 বেহুঁশ খেয়া

যে আমাকে গাইত সে  এখন গোধূলি গেয়ে কাত করে দেয় আগামীর ইতিহাস

খেয়া ঘুরালেই নাজেহাল রাজপথ চৌকো হয়ে ঢুকে যেতে চায় দাবাখানায়
মেহগিনির লোকাল পেরিয়ে  স্টেশনে আমাদের ঘর
যাকে আমরা খিদে ব’লে জানতাম…

জন্মের পা থেকে কুয়াশা ভাঙে ঈশ্বর

(ছবিঃ সামান্থা লেসলী)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৯

Related image

প্রশ্ন 
          -প্রদীপ চক্রবর্তী

নেশাতুর তুমি | অপরিহার্য নেশার মতো
জলের মৃত ইনকাদের সভ্যতায়
এখনো লেগে আছে অতীত শীৎকার |
নেশাতুর কুহেলি পৃথিবীতে ,
সব কিছু ছায়াছায়া |
ঘন দেহান্তর ঘটেছে নেশার লালায়
তোমার আমার সূক্ষ্ম দ্রবণে ...


নেশাতুর তুমি |
দুমুঠো ভাতের গন্ধে আকাশেও দ্যাখো
খিদের অভিসার |
অথৈকে  অনল কোরকে রেখেছো |
নিজেকে পোড়ানোর ধোঁয়াময়  তূরীয়তা ...


এই বুঝি মনের প্রকোষ্ঠে কাটাছেঁড়া ...
তল থেকে ভেসে উঠে আসছে ,
মহাপৃথিবীর টানা ও পোড়েনে আছে
রকমপাড় নকশা , ডুরে , সহজাত কবিত্ব কুন্ডল !
যতবার তুমি  তাদের কাছে নিজেকে মেলে ধরেছো ,
 তারা তোমাকে নিঃস্ব করেছে স্বরচিত টাটকা রক্তের ধারায় ...


তুমি তো শেখোনি  ব্যবহারবিধি |  বহুদূরের বীজবোনা ,
জল দেওয়া ফসল আগলে রাখা মন |
দেশের রোদে হাঁটেন রাজরানী |
বেনেতির হরেক জিনিস |
একদিকে যখন এরকম কথা হয়
আবার অন্যদিকে তোমার আড়ালে তুমিই নিজেকে বিকিয়ে দাও ফের |
 অবিক্রিত নেশার পাচন তো দিয়েছে মন !


তবু আপৎকালে তরতাজা মেয়েটিকে কূটনোর মতো খন্ড খন্ড কুটলে কেন বাংলা কবিতার  মৃৎপাত্রে ,  দিশি রাজা অয়দিপাউস ?

(ছবিঃ মাইকেল করিন্নে) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৮


কমপ্লেক্স
            -দেবারতি চক্রবর্তী

একটা ভুল হয়ে যায় বারে বারেই
কেন জানি অজান্তেই
আমরা সবটা জেনে যাই
জানি বলেই,
এই সমস্ত চুপ করে থাকারা আসকারা পায়
কি দারুণ সব ভাঙা ভাঙা কথা লিখে ফেলি
আর আকিঁবুকি সারা ঘর
টেবিলে মনখারাপ বাড়ে
চায়ের কাপে রাত্রি,
এই ভাবে জলচোখে
আমাকে দেখেনি কেউ

(ছবিঃ সাই ত্বোম্বলি) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৭



সংসার 
        -নীলাদ্রি ভট্টাচার্য   
           
বিনষ্ট হলেও অতগুলো শীতের নীচে
খড় বাঁধা ভারহীন সুদূর  ...
বনাঁচল ঘেঁষে ওঠে

ঘর সংসার অফলা উনুন
নিয়মের অতর্কিত স্তূপ আসবাব
পরিচয় দিতে চায়

অভাবে চাপানো রোদের মাংস তুলে
ত্বকহীন সম্পর্কের অগ্নিকোণ ।

(ছবিঃ বেন নিকোলসন) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৬

Franz Kline.

লাল মাটি ও রং 
           -অ নু ঘো ষ 

আমাদের বারান্দার রং এক। মাটির রং আলাদা হলেও দেয়ালে আমরা একই ছবি আঁকি। দূরবীনে লেগে থাকা দূরত্বটুকু একটু একটু করে এগিয়ে আসছে লাল আলোর মতো । যেন ভ্রূকুটি তে জেগে থাকা একটি শান্ত দ্বীপ। আর আমি সেই দ্বীপে শিকড়ে জড়ানো অরন্যা। ঠিক যেমনটা স্বপ্নে
ছিল ঠিক তেমন টাই বাস্তব। সেই বাস্তবকেই আগলে রাখে কাচের জানালা, গভীর চোখ, আর শান্ত দ্বীপে ভোর হয়ে ওঠা নরম সকাল। ইচ্ছে আর মানস সমার্থক বলে আমি রং ছড়াতে পারি। শীত, গ্রীষ্ম বর্ষা ঐ চোখেই আবার ঐ চোখে বসন্তও দেখি প্রতি মুহুর্তে

(ছবিঃ জাঁ লম্বার্ডি) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৫


Battle of the Lights, Coney Island by Joseph Stella

যোগাযোগ বিষয়ে যা কিছু আমি ভাবতাম 
                             - নীলাব্জ চক্রবর্তী



ট্রেনের জানলা থেকে যতদূর দেখছি
গাছে গাছে
ফুরিয়ে ফেলছে
ফ্রি-তে পাওয়া কানেক্টিভিটি
এই অবধি দৃশ্য
তারপর শাটার স্পিড
অর্থাৎ
প্রিয় ত্রিভুজের কোনাকুনি সরে যাওয়া
একটি অফ-শোল্ডার কবিতায়
জোলো
সান্দ্র
স্যাঁতস্যাঁতে
এইসব ভেজা শব্দগুলো স্টিফনেস বাড়িয়ে দিচ্ছে
ফিকে
ক্যালেণ্ডার নামের দাগে
বর্তুল এই ভাষা
স্বাভাবিক কাঁচের পাশেই গড়ে উঠছে
মাল্টি-গ্রেইন স্বাদ...

(ছবিঃ জোসেফ স্টেলা)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৪

Nude Descending a Staircase No.2 by Marcel Duchamp

জরায়ুফুল
         -সোনালী মিত্র



একটা অসমাপ্ত সঙ্গমের মধ্যে রেখে চলে গেলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। কুমারী সাগরের গর্ভে কম্পাসহীন জাহাজ ফেলে পাটাতনের কাঠ ধরে ভেসে গেলেন কোথাও ! হে সামরিক ইউনিফর্ম , চলে গেলেন শিকারি-দ্বীপে অদ্বিতীয় জাহাজ ও আমাকে ফেলে । ভাসমান দ্বীপে বিষাদী সানাইয়ের মধ্যে দীর্ঘ হতে থাকল আমাদের সম্পর্কের অনুশাসন । আপনি ফিরবেন বলে ব্যক্তিগত সৌন্দর্যগুলি দেরাজে গুছিয়ে রাখি; লোকচক্ষুর আড়ালে। সৌন্দর্যরা বড় ভয়ে থাকে । কাজলের মধ্যে লুকিয়ে রাখি ফিরবার প্রত্যাশা ।চিঠিতে লিখেছিলেন, আপনার ফাইটার জেট থেকে মরুভূমির সূক্ষ্ম বালুকণা পর্যন্ত স্পষ্ট দেখতে পান , অথচ , আপনি নাকি এ বাড়ির মাথায় চক্কর দিয়েও বুঝতে পারেন না কোনটা আমাদের বেডরুম। আমি প্রতিটি স্বপ্নে দেখি শত্রুশিবির তছনছ করে এগিয়ে আসছেন আমার ব- দ্বীপে । হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ছেন আমাদের বেডরুমে।যেখানে আমার গোলাপি রঙের খোলওয়ালা ব্রেসিয়ার, টুকরো টুকরো পাপ নিয়ে বিসদৃশভাবে ঝুলছে ! বিদায়ের আগে বারুদের গন্ধ নিয়ে যেবার চুমু খেতে খেতে বলেছিলেন, অল্পতে খুশি হতে পারলে সুখের অস্তিত্ব থাকে না । সুখ রেখে দিও দ্বীপের নির্জনে ।


একাকীত্ব আর নির্জনতা বড় আপন-প্রিয় । আপনার ছোট ভাইটি লজুক বড় । রমণের ঐশ্বর্য নিয়ে যে ফুল ফোটে তার রেণুতে রাখি অতৃপ্তি আত্মাকে ! তার লাজুকঠোঁটে ভেঙে যায় আমার নিষিদ্ধ বাঙ্কারের গুহালিপি । আপনি কি তখন রাইফেলের আশ্চর্য বুলেটের গন্ধ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন গরিলা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী বাঙ্কারের দখল নিতে!স্থান দখলেই লড়াইয়ে গ্রেনেডের মধ্যে গর্জন করে উঠছেন কি স্বভাবতই?এই একবছরের মধ্যে প্রতিটি পত্রের গায়ে বত্রিশ রকম শৃঙ্গার আসনের কথা লিখে প্রলুব্ধ করেছিলেন নারীক্ষেত্র।আপনাকে বলা হয়নি,আসলে আপনাকে বলতে পারিনি,আজকাল স্বপ্নে দেখি বরফ চাদরের ভিতর শক্ত হয়ে যাচ্ছে আপনার গামবুটসুদ্ধ শরীর। আপনাকে বলা হয় না আপনার সমর্পিত অবাধ্য ঈগলটিকে পোষ মানানোয় বিদ্যায় আজকাল আমার চোখের কোলে কালি,আজকাল ওয়াক টানে শরীর ...কেমন করে বলি তিনমাসের গর্ভবতী ...সেই জরায়ুজাতক খুঁজবে না পিতৃপরিচয় !

(ছবিঃ মার্সেল দুশঁ) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৩

Image result for abstract paintings with painter's name

দাগ                                                                                                              
         -সৌমনা দাশগুপ্ত



হাওয়াতে জিভ মেলে দিয়ে দেখি খুসবু লুটানেয়ালি হাওয়াও ছেনালি করে বৃষ্টিকে ধুয়ে দেয়। আসলে এই জানলার ধারণা এক ইউটোপিয়া। বস্তত চারচৌকো এক ফ্রেম নিয়ে আর কতখানি আদিখ্যেতা করবে তুমি, অথবা দখিন হাওয়ার এই আকুলিবিকুলি নিয়ে জাহাজ ভাসিয়ে দেবে রংদরিয়ায়। তুমি সবুজ এক টুকরো রুমাল ফেলে দিতে পার মাঝখানে, মাঠও বসিয়ে দিতে পার, শুধু এই হাইফেনটুকু মুছতে মুছতে তোমার ইরেজার গুঁড়ো হয়ে যেতে যেতে মিলিয়ে যাচ্ছে আকাশের ফ্রেমে, সিপিয়া টোনে আঁকা এই দিকচক্রবালে



নেমে আসছে টুকরো টুকরো আগুন-বরফের ফলা, ফুলকি লেখা হল হলকা লেখা হল। তুমি তো আকাশ খেলতে এসে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার দীর্ণ করে নামিয়ে এনেছ কীট ও অন্ধকারে আচ্ছন্ন সেই ক্যানভাস, যার বুকে পেটে অনভ্যাসের ট্যাটুতে চিহ্নিত করা আছে লৌহ শলাকার দাগ, দাগ নয় আসলে কারাগারের বিস্তার লেখা হচ্ছে আহির-ভৈরবে ঘোষিত হচ্ছে এক একটা দিনের শুরুয়াৎ

(ছবিঃ ম্যাথিউ অ্যাবট) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ২

Image result for abstract paintings with painter's name

দুটি কবিতা
         -সুপর্ণা মণ্ডল

১.
আমি কি কি বিষয় নিয়ে লিখতে পারি তা সবাই জেনে গেছে
এরপর আর কেউ কি আমার লেখা পড়বে?
কেউ না পড়লেও দুজন পাঠক আমার চিরকাল বাঁধা
একজন ভালোবাসা
একজন ঈর্ষা

২.
কে বলবে ঈশ্বর সত্য না তুমি?
কে বলবে?
তুমি? না ঈশ্বর?

(ছবিঃ ডোনাল্ড ফক্স)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১

Image result for abstract painting

ক্রিসমাস
             -রঙ্গন রায় 

ছেলেটি জোনাকি টিপছে আর আলো ছড়াচ্ছে।  এই দৃশ্যকে বন্দী করার জন্য মোজার ভেতর চকচকে জোনাকি ভরে ফেললাম। বাড়ি নিয়ে যাবো। তারপর অনেক আলো হবে। ছেলেটি জোনাকির মত মিটমিট করে চেয়ে আমাকে দেখলো। কিছু কি ভাবলো?
বাড়ি ফিরতে গিয়ে দেখি জঙ্গলে পথ হারিয়েছি। অন্ধকার। চাঁদ নিভে গেছে। আমি হাসলাম - আমার নিজস্ব আলো রয়েছে হে অন্ধকার অরন্য --- আমি এখন নিজেই নক্ষত্র। মোজার ভেতর থেকে জোনাকি বের করে টিপলাম , একফোঁটা অন্ধকার পিছলে নামলো। আমি পাগলের মত মোজা হাতড়াতে শুরু করলাম --- কিন্ত মোজার সমস্ত জোনাকি ধীরে ধীরে রাত হয়ে গেছে।  এরপর আমি বাড়ি ফিরবো কি করে? সেই ছেলেটিই বা কোথায়?
নদীর ভেতর থেকে জলের ঠোঁট উঠে এলো। শীত লাগলো। গায়ে সোয়েটার পায়ে মোজা থাকা সত্ত্বেও খুব শীত লাগলো। সেই ছেলেটি হয়তো এতক্ষণে ব্যাক্তিগত বড়দিনের ছুটি কাটাচ্ছে জোনাকিদের সাথে

(ছবিঃ রুমেন স্প্যাসভ)

Sunday 16 June 2019

উষ্ণিকঃ মেঘদূতের মাস সংখ্যা

Image result for kalidasa meghadootam painting

"ধূমজ্যোতিঃ সলিলমরুতাং সন্নিপাতঃ ক্ব মেঘঃ
     সন্দেশার্থাঃ ক্ক পটুকরণৈঃ প্রাণিভিঃ প্রাপনীয়াঃ"  







উষ্ণিক

মেঘদূতের মাস 



ধূলি-জলকণা-আলোর সমন্বয়ে তৈরি এই যে মেঘ তাকে প্রাণ দাও, তবেই সে প্রাণীর প্রেমের তিয়াসা বয়ে নিয়ে যাবে দূরে

মেঘদূতের মাসের অনুবাদ কবিতাঃ এস্তোনিয়া থেকে উত্তরশূন্যের কবি এডা আহি

Related image

মহাকর্ষের সাথে নাচ শেখা





ওরা নাচে তোমার সাথে, মহাকর্ষের সাথে, সবার সাথেই

কিন্তু কেবল সাহসীরা জানে ওদের নাচের মুদ্রাগুলো

তুমিও হয়ত পেয়েছো নিষ্ঠুর বৈশিষ্ট্যঃ

পাথর আর পালকের তীব্র আকর্ষণ।



তোমার মুকুটের ভার আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে মাটির দিকে,

আমি আবিষ্টের মত হাঁটছি যেদিকে তুমি নিয়ে যেতে চাও

আমি ভালোবাসি তোমার ভার, প্রিয় মহাকর্ষ,

আর তোমাকে পাল্টাতে চাই না, এমনকি ডানার জন্যও নয়। 



(এডা আহির জন্ম ১৯৯০ সালে, এস্তোনিয়ার তালিন শহরে এক রুশ-এস্তোনীয় পরিবারে। তালিন এবং তার্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশ-এস্তোনীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর বর্তমানে ইউক্রেনে কর্মরতা। ২০১২ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'মুখোশ' বেটি-আলভার পুরস্কার পায়। ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা। অ্যাডাম কুল্লেনের ইংরেজি অনুবাদের মধ্যস্থতায় উপরের কবিতাটি অনুবাদ করলেন উষ্ণিকের সম্পাদক)



ছবিঃ লূউলেলেইড

মেঘদূতের মাসের কবিতা ১


চাঁদে ফুঁ দিলেই...
             -নীলিমা দেব

হতে পারে যে আপেলটা দুধের বিচিতে গতিবিদ্যা রিলিজ করে সে আর আলাদা করে বুঝে না নারী ও নৈবেদ্য এর ব্যবধান। আলোজ সংসার বেড়ালের চোখে রচনা করে চাঁদের আহূতি। জ্যোৎস্নার অতীতে ফুঁ দিতেই শত শত যীশুখ্রিষ্টে আবাদ হচ্ছে মায়ের খলিহান।তুমিও তো জানতে এসব আলোদের আলাদা জানালা থাকে।বাচ্চা বাচ্চা মেঘ দরজার পাশে একা ভিজে যায়।আমি তখনো তোমার কপালে ছানবিন করি আষাঢ়ের চাঁদ। 

মেঘদূতের মাসের কবিতা ২

অমলতাস
             -পাপড়ি গুহ নিয়োগী



জারুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি প্রথম তোমায়

সেদিন বেগুনী রঙের উৎসব ছিল আকাশে



আমাদের পরিচয়ের আগে ,মনে থাকার কথা না

       

তারপর কতবার আঙুল ডুবিয়ে জলের নিচে মুখ আঁকি

উবু হয়ে রোদ  ধুয়ে দেয় আশ্চর্য ভ্রমণ



প্রয়োজন ছিলনা তোমার হয় তো

যেমন আজোও নেই



এখন স্বপ্ন দেখি

বকুল৷ কৃষ্ণচূড়া। হিজল। অমলতাস পেরিয়ে

তোমার কাছে যাবার রাস্তাটা আসলে রেল লাইনের মত দীর্ঘ

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৩


শিরোনামহীন আর একটি
                                 -তন্ময় ধর

ধরা যাক, শিশুকন্যাটির মুন্ডহীন মৃতদেহের ভিতর যেসব মাছিরা ঢুকেছে, তারা আর বেরিয়ে আসতে পারছে না। শুধু একটি মাছির চোখকে আমরা ঐশ্বরিক উপায়ে তুলে আনছি মিকেল্যাঞ্জেলোর প্যালেটে। নানা রঙ মেশানোর মধ্যেই তুমি টের পাচ্ছো মাথাকাটা অজস্র সাপের নড়াচড়া। স্নায়ুবিষ এক নেউল লাফিয়ে উঠছে শব্দ থেকে। মাংসের ভিতর থেকে বিষাক্ত নূপুরের শব্দ উঠে আসছেই। ধর্মতত্ত্ব পড়ছে আমাদের শাদা হাড় ও দুঃস্বপ্ন। বুকের রক্ত চেটে খেতে গিয়ে খুলে যাচ্ছে মাছির অভিনয়

মৃত এক মানুষশাবকের শব্দ ধাক্কা খায় আমাদের অন্নপাত্র ও ছায়াপথে। উরুসন্ধির শাদা হাড় থেকে মাকে চিঠি লিখছেন রেইহানি জাব্বারি, আসিফা, টুইঙ্কল, নির্ভয়া... পোস্টমর্টেমের আগেই কাটা মাথাটা জোগাড় করেছেন তথাগত। পায়েস খেতে খেতে চোখের অনন্ত অন্ধকার ফুটোয় আঙুল ঢুকিয়ে বললেন ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ঘটনা। প্রমাণগুলো সরিয়ে নাও। আমার লাগবে না...’

এক মাংসবিক্রেতা ঢুকে পড়েছেন লিঙ্গপরিচয়ে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় কাশি শুরু হচ্ছে আমাদের। কার্নিশ থেকে একটি সরীসৃপের কঙ্কাল খসে পড়ল খবরের কাগজের ওপর। লিস্কৌ গুহার রঙে হাত রাখলেন হুলিও কোর্তাসার

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৪


পারস্পরিক
              -সুপর্ণা মণ্ডল




আমরা তো একটা গাছেই জল দিই
এক গাছের জল-সারে আরও কত গাছ
জন্ম নেয়।
নেয় না?





পৃথিবীর বরফ গললে মানুষের মৃতদেহ বেরিয়ে আসে
প্রকৃতি যাদের স্পর্ধা সহ‍্য করেনি
অনেক বছর আগেও।

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৫


ভ্রমর
              -অভিশ্রুতি রায় ভট্টাচার্য 


কত ফুলকি দিয়ে ফেঁপে ফেঁপে উঠছি
রোজকার মতো আজ ভ্রমর আসবেনা বলে
তুমি মৌচাক খুলে মধু চুরি করছো
এই অস্থিরতা কোনো পূর্বাভাস হতে পারতো
যে আদর্শলিপি তোমায়
 শব্দবোধ দিয়েছে
তাকে তুমি মধু দিয়ে ফিরো
ধার বেয়ে যত জাদুকর গড়ে উঠবে
সেখানেই সেরে নেবে আলিঙ্গন
জিভে জিভ জড়িয়ে এলে
আরেকবার



 ই
 ঈ

তোমার কাছে এনে দেবে প্রজন্ম

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৬


বিশ্বাস করুন
                - জ্যোতির্ময় মুখার্জি


আমি সবকিছুই জমিয়ে রাখছি আমার হার্ডডিস্কে। জমতে জমতে হার্ডডিস্ক ফাঁকা। তোমাকে কিছু ধার দিয়েছিলাম। তুমি, যা কিছু ধার নিয়েছিলে। এসো ওলোটপালোট করি


হার্ডডিস্ক একটা মেঘের নাম। হার্ডডিস্ক একটা দোয়াতের’ও নাম। কালি বা কলম, যা কিছু তুমি মেঘ গোনো বা বৃষ্টি। আমি জমিয়ে নিয়েছি আমার হার্ডডিস্কে


হার্ডডিস্ক একটা জলযানের নাম। হার্ডডিস্ক একটা নদীর’ও নাম। এসো, নৌকা গড়ি। নৌকা ফাঁকা করি। ধার করি মেঘ। শোধ করি বৃষ্টি। ভেঙে ফেলি দোয়াত। ছড়িয়ে পড়ুক কালি। কমল লিখুক আমাকে। কলমে থেকো তুমি


বিশ্বাস করুন, আমি সবকিছুই জমিয়ে রাখছি আমার কলমে, জমতে জমতে আমার কলম ফাঁকা

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৭


সুইসাইড নোট
                  - অনু সঞ্জনা ঘোষ



পুড়ে গেছে বালি। ঝরে ঝরে পড়েছে স্তূপ পর্বত। পড়তে পড়তে জমা ক্ষয় এখন আগুন। অরণ্য গভীর হলে বাঁধ ভেঙে ফেলে নদী। ভাঙা বাড়ী, ভাঙা ঘর। পোড়া কাঠে ভেসে যায় শুকনো উনোন। মা বালু গোছায়, বালুতে রাঁধে ভাত। হাসপাতাল হেঁটে চলে যায় বনের কাছে। তুমি জাঁকড়ে ধরো আমায়। স্মৃতি খুলে যায় গভীর ঘ্রাণে। ভাঙা বোতামে জড়িয়ে গেছি । চিৎকার করে বলতে চেয়েছি, হত্যাকারী তুমি। সুই সাইড নোট ভরে গেছে শান্ত বলয়ে। মৃত্যুর পর আবার বেঁচে উঠি আমি।

মা ভাত বেড়েছে বালিতে, একটাও কাকঁড় নেই পাতে....

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৮


কাঁটাঝোপ 
             -সুমনা দত্ত

মৃত্যু শোক বোঝে না।
গাছ থেকে মন্ত্র খসে পড়ে অন্ধকারের মতো।

অগ্নিজলময় শশ্মানে এসে দাঁড়িয়েছি।
কাঁটাঝোপ সরিয়ে মুখ বাড়াছে হলুদ দাঁতের দাগ।

বাবা তুমিও বুঝি অন্ধকার ভালবাসতে?

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৯



জেগে আছি...  বেঁচে আছি 
                                             -পিয়াল রায়


পোকাটা আমাকে গ্রাস করতে চাইছে
ওর গুঁড়ি মেরে এগিয়ে আসা টের পাচ্ছি
মাথার ভিতরটা অসম্ভব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে
 টের পাচ্ছি অথচ চোখ খুলতে পারছি না পোকাটার রোমশ কন্টকিত শুঁড়,
দেহের সামনে পিছনে কর্ষিকা...
 উফফ কী বিভৎস থলথলে !
দুটো চোখে একটুও খোলা জায়গা নেই
যেখান দিয়ে আলো আসতে পারে যেতে পারে
 পোকাটার মনের অবিরাম অস্থিরতা তাকে
 টেনে নিয়ে যাচ্ছে কোনো অচেনা দুর্যোগের দিকে
আমি বুঝতে পারছি কিন্তু আগামী থেকে
 ভেসে আসা কোনো বার্তা যা জীবনকে
 গুনেগেঁথে নিতে অভ্যস্ত, তাকে বোঝাতে পারছি না
চোখ খুলতে না পারার অসহায়তা আমাকে ডুবিয়ে মারছে
মৃত্যুতে আমি ভীত নই
 আমি ভয় পাচ্ছি, এই বোধটাই আমাকে শেষ
 করে দিতে চাইছে ভিতরে ভিতরে

 পোকাটা বিষাক্ত
 তারচেয়েও ভয়াবহ হল ও বিষের অস্তিত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল
 এতটাই যে ওর শরীর থেকে বেরিয়ে আসা
 বদগন্ধ একটু উঁচুতে তুলে ধরলেই নাশ হতে
 পারে লৌহগোলোকও
 এসব নিখুঁত পরিকল্পনা
 আমি জানতাম ওর অস্তিত্বকে অস্বীকার
 করাটাই একমাত্র মেরে ফেলতে পারে ওকে
 আসন্ন এই সময়ে দাঁড়িয়ে জপ করতে থাকি
 আমার যুগ যুগ ধরে বহমান আস্থার
 ধ্বনিটিকে
 আমার সমগ্র জীবন, আমার স্বেচ্ছাকৃত
 আনন্দপ্লাবন আমি সমর্পণ করি নিভৃত এক ছায়ার
 কাছে
ধ্যানমৌন সে বুদ্ধের নামে উৎসর্গ করি আমার উচ্চারণসকল
সুতোর মতো জড়িয়ে নিতে থাকি পায়ের নিচের সজীব দূর্বাদল
 আরো একটু শ্বাস নিই খোলা আকাশের
 মেঘ,ধান, প্রজাপতির গন্ধে ঢাকা পড়ে যায়
 অর্থহীন খোঁয়াড়ি

মেঘদূতের মাসের কবিতা ১০



প্রেম পর্যায়ের কবিতা 
                            -রঙ্গন রায়

রবি ঠাকুরের গানের কাছে এসে মাতালেরা অ্যাশট্রে ঝেড়ে ফেললে
 রাস্তায় হাঁটা মাতালের পুরোনো সেই দিনের কথা মনে পড়ে  ;
কী তফাৎ দুজনের ভেতর? কী তফাৎ ওদের সাথে আমার ?
রোজ রাতে ক্রমশ ঘোরের মধ্যে চলে যাই , ছাই পড়ে থাকে লেখার খাতায় -
কেন এখনো প্রতিটি পুরুষ কাঁদতে এত লজ্জা পায়?
কেন এখনো রাত সাড়ে দশটায় মোবাইল খুলে বসে থাকি রোজ !
প্রেম তো বুঝে গেছি নিজের মত করে , আর কিসের প্রয়োজন হে!
কিসেরই বা অপেক্ষা!
অভ্যাস বশে কেউ  বৃষ্টির রাস্তায় নৌকা ভাসিয়ে দিলে কেন এখনো
আমার উঠোনে জল দাঁড়িয়ে যায়?  

মেঘদূতের মাসের কবিতা ১১



স্নান
       -পায়েলী ধর

খুলে রাখো ঝঞ্ঝা ও ঝড়
রোদসেঁকা বেপথু পালক
আমাদের সব দরজারা
যুগপৎ নদী ও আগুন
শেকলের ধার মেপেজুকে
সেইখানে নিভে আসে স্বর
ডাকনাম তার জানি শোক
আহৃদয় আঁচড়ের দাগ
সমস্ত উপশমে লিখো
আকাশ  : ধোঁয়াশা আর মিথ
দেখো চোখ প্রগলভ হবে
স্বাদু জল নোনারঙা হ্রদ
সে'রঙের বিশেষণ-আলো
অতলের মাটি খুঁড়ে রাখে
অসহায় জ্বরে পোড়ে বাড়ি
ঘুড়ির সুতোর মতো একা
এখনই তো অবসর ভেঙে
একঘর ঘড়ি ভিজে যাবে
হেরে যাই তবু লেগে থাকে
ঠোঁটে-ঠোঁটে মুক্তোচুমুক...

                             

Saturday 25 May 2019

অনুবাদঃ আসামের ডিমাসা কবিতা

Image result for may day in painting

কুলেন্দ্র ডাউলাগুফু


সিপাহি পত্নীর ব্যথা  : একটি পত্র 


আজ মেঘলা দিনে
ভীষণ  মনে পড়ছে তোমাকে আমার
ডিয়ুং-এর এই উজান থেকে।
ডিয়ুং নদী পেরিয়ে,  হায়ুং পাহাড় ডিঙিয়ে
পৌছবে কি পৌছবে না
আমার চিন্তার বার্তা এখান থেকে?
আমি কোথায় তুমি কোথায় -
এমন হল কিসের জন্য?


পিছনে তাকালে
মনে পড়ে, নিঃশেষিত হাওয়া
আনন্দে গাওয়া সে দিনগুলো,
শেষ -হয়ে -যাওয়া
হাসিখুশিতে নাচা সে রাতগুলো!
হৃদয় ব্যথায় ভরে যায় সেদিনকার কথাগুলো ভাবলে
বড় দুঃখ হয় সেদিনকার স্মৃতিগুলো স্মরণ করলে!

ওয়াকু গ্রামের তুমি যুবকদের নেতা আমি যুবতীদের নেত্রী
থাকার দিনে
আমরা
হরিণের মত ছিলাম, নেচে দৌড়ে
ছিলাম,প্রজাপতির মত উড়ে- উড়ে
খেটে খাবো বলে হয়েছিল ভালোবাসা
কাপড় বুনে পরব বলে বেঁধেছিলাম ঘর ও।
তবুও
সময় যায় বদলে—ভাবার মত হয় না এ পৃথিবীতে।
জুম ক্ষেতে ফলে না ফসল
জাল ফেলে মেলে না মাছ
হরিণ শিকারে মেলে না হরিণ
শ্রমের বিনিময়ে মেলে না শ্রম
পেট ভরে ভাত খেতে পাই না, আমাদের এই রাজ্যে।
একদিন
সংসারের মাঝদরিয়ায় আমাকে একা রেখে,
দূরের পথে গেলে চলে তুমি সিপাহি হয়ে
সোনালী দিন আসবে ভেবে, রুপোলী রাত আনবে বলে,


তুমি চলে গেলে রণাঙ্গনে
আমি রইলাম চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে!


তুমি চলে গেলে
আর এখন, তোমার গ্রাম পড়ছে মরছে
আমাদের ঘরের ছোট বাগান
গেছে ভরে কাঁটা ঝোপঝাড়ে।
রোজই ভাত খাবার সময় একটি থাল থেকে যায় অতিরিক্ত
চুল আঁচড়ানোর সময় চিরুনির সংগে লেগে আসা পাকা চুল
তুমি নেই
আমার পৃথিবী অন্ধকার—রাত, দিন ও রাত—চাঁদকে দেখিনা রাতে ও
নিজের ছায়াই হচ্ছে আমার সাথী, থাকার জন্য একা রোজ।
ঘুমেও কাটাতে পারিনা রাত, কাজেও শেষ হয়না দিন—
কী ভাগ্য নিয়ে এসেছি আমরা
জানিনা আমি।


আজ ভোরে
শরীর ভীষণ শিরশির করে ওঠে
গ্রামের বাড়িতে পেঁচার ডাক শুনে,
আমার চোখ ফুলে উঠছে তোমার কথা ভেবে ভেবে!
দূরদেশে গিয়েছ রণাঙ্গনে- খারাপ কিছু কি যায় ঘটে
ভয়ে বিহ্বল আমার হৃদয়— কোনো বিপদ হবে না তো!


তুমি এস ফিরে, তাড়াতাড়ি!
তুমিই মাঝদরিয়ায় মহাপাথর
তুমিই মাঝপথের মহাগাছ,
চাইনে আমার সোনার বালা,চাইনে রুপোর মালা,
তুমি নেই আমি ও নেই, তুমি থাকলেই আমি ও থাকব
শীঘ্র ফিরে এস, ধানের বীজ বপন করবে এসে— পৃথিবী গোল


মূল ডিমাসা থেকে অনুবাদ- বিশ্বজ্যোতি বর্মণ


ছবিঃ কাসান্দ্রা তন্দ্রো 

বৈশাখের কবিতা ৯

মেঘলাকলোনি
                      -সৌমনা দাশগুপ্ত

যতদূর যাও না কেন
এই কাফিলা তোমার
পেছন পেছন যাবে

এই হাওয়াভর্তি শ্যালো পাম্প, এই একফসলি জমিন নিয়ে আর কতটা কৃষিকাজ হবে! জলখেলা মাটিখেলা আবোদা বালক। ফুল ছিঁড়ে উড়িয়ে দিচ্ছি, ইচ্ছে ধরে টান মারছি, পিঁপড়ের হাঁটার পথে চিনি ঢেলে, পরক্ষণেই ঢেলে দিচ্ছি জল। ইচ্ছে আমার বিষগোখরো দিগন্ত। ইচ্ছে আমার ভলকানিক স্রাব, কতটা পুড়লে পরে ছাই, আমি তার হদিশ রাখি না। শুধু জানি শ্যামাপোকা বারবার আলো দেখে ছুটে যায়, শুধু জানি পিঁপড়ের পাখা। মিছিমিছিই একটা আকাশ এনে টাঙিয়ে দিলে। আর শোনো হে গোঁসাই, কথা শুধু তোমার নয়, আমারও দু একখানা বাখান আছে, আছে তিন তিন সপ্তক জুড়ে সুর। আকাশকে সারফেস ভেবে নিয়ে আমি যে এই ছ ছখানা প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখছি, তুমি কী খবর রাখো তার, তুমি কী সেই আলোর নিচে খুলে ধরছ তোমার প্রথম প্যাপিরাস! এই যে এত এত ভরে দিলাম গানপাউডার, তবুও কাগজের এই হাওয়াইজাহাজ আর উড়ছে না

বৈশাখের কবিতা ৮

দেওয়াল-লিখন 
                     - নীলাব্জ চক্রবর্তী



দেওয়াল-লিখন বরাবর একটা লোক হেঁটে
একটা রাস্তাই তো
একটা দিক
তোমার মুদ্রায়
আঙুলছাপের মতো
পোলিটিক্যাল একটা সকাল
তেকোনা
ভাঁজ-খোলা ঠাণ্ডা মাংসের পাশে
অসঙ্গতিগুলো ভাবতে ভাবতে
এইখানে ভাষাটা
পরিণত হয়ে ওঠা
একটা তেষ্টার দৃশ্যে
ভিজে যাচ্ছে
স্রেফ যৌনতা অবধি
একটা ফিকে ক্যালেণ্ডার
গড়িয়ে...

বৈশাখের কবিতা ৭

প্রয়াত ভোরের স্মৃতিতে
                                      -পিয়াস মজিদ

প্রয়াত কুয়াশাময় এক ভোরের চিতা
মিহিমধু জ্বলে আছে এই বিষবুকে।
পৃথিবীতে প্রেমের কবিতা সব
ফিকে হয়ে আসে,
তবু ফিরে ফিরে কেন ফিঙে ডাকে!
গুচ্ছ গাছের সবুজে
আমাদের আমূল অন্ধতার অনুবাদ,
তুমি কি মরচে পড়া চোখ খুলে
কখনও পড়বে
ইন্দ্রজাল-ব্রেইলে?

যখন জলরুদ্ধ নদীতে
মরুভূমি শাখা মেলে,
শীতকালও একদিন
শেষ হয়ে আসে,
শুধু এক হিমপাখি
ঊষর মরুতে বসে,
উড্ডীন ভাষার বইয়ে
ত্রস্ত চঞ্চুর
কাতর কলমে
কুয়াশামাখা সেই
প্রেমের কবিতাই লেখে...

বৈশাখের কবিতা ৬


দহন
      -সম্পিতা সাহা

মুলাকাত আসলে একটা আস্তরণ।
অবনত ভাষা পুষে রেখে গাঢ় হয় নিস্তব্ধতা,
আর মনমতো কথা না পেয়ে
ফের অস্থির হয়ে উঠি ভেতর ভেতর।

একটা অন্তর্বর্তী বিস্মৃতি
আলোসাম্পান থেকে দূরে
ঈশ্বর জন্মের অপেক্ষা নিয়ে
আরও কয়েকমাস প্রচ্ছন্ন ব্যথা মেখে থাকে...

অথচ দেখো,
স্পর্শের চেয়ে স্বচ্ছ কিছু হয়না জেনেও
আমরা সেই জলকেই সহজলভ্য করে তুলেছি...



বৈশাখের কবিতা ৫

এ শহরে শুধু গ্রীষ্মের ক্যালেন্ডার বিক্রি হয়
                                                      -জয়ীতা ব্যানার্জী

(১)

ডায়রির ভাঁজে নামা চিঠির বিকেল
এ কথা যখনকার, ফুটপাথে রিলের ক্যাসেট কিনতাম

আমাদের গ্রীষ্ম মানে জমা-খরচের মেঘ
রৌদ্র থেকে রোদ্দুর হতে চাওয়া অমলকান্তিদাদা

ছুটির দুপুর, মুর্শেদ চাচার হাঁক
আর তার দানবের মতো সাইকেলে,খাঁচায়
স্কেচ পেন-এ লেখা 'হরেক মাল ৩০/-'

লোহার রডের ঘায়ে অদ্ভুত শব্দ তুলে তিনি পেরিয়ে যেতেন
ছাতিমের সারি,বারোয়ারি আমের উঠোন

এ কথা তখনকার, লোডশেডিংয়ের রাতে
মাদ্রাসার মাঠ জুড়ে তারাদের সার্কাস হত

(২)

এ শহরে পয়লায় শুধু গ্রীষ্মের ক্যালেন্ডার বিক্রি হয়

অমলতাসের বেলা। ঝুলি ভরে এসেছে আমারও
বিকেল ফুরোতে এত দেরি হল বলেই তো
পিচরাস্তা বেয়ে নেমে পড়া গ্যালো । চা-গুমটি আলোয় সাজাতে
কোন সুদূরের থেকে ঝুঁকে আছে কৃষ্ণচূড়ারা
বাঁয়ে ' মা অন্নপূর্ণা ভান্ডার'- দুদন্ড বসার ঠিকানা
এসে দেখি আমিই প্রথম । ধার-বাকি লেখা সেই ছোট্ট খাতাটি
এখন আমার হাতে । গাঁদাফুলে মোড়া চারিধার
আমার কি দোকানি-কে ঝুলি খানি দেখানো উচিত
এই ভাবনার মাঝে কে যেন রুক্ষ মুখে শরবত নামিয়ে গেলেন

মেঘ-বৃষ্টির কথা ছিল না কোথাও। অথচ কীসের তাড়া
ভুল,যথেচ্ছ ভুল এক ঢোঁকে গিলে ফের রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম


বৈশাখের কবিতা ৪


মৃত্যুভক্ষ্য রক্তিম আপেল  ...
                                -প্রদীপ চক্রবর্তী

এক /

পুরোনো অথবা পুরোনো নয়
স্বল্প পাখির দূর দিকচক্র | ততটা ক্ষিপ্র নয় দেহাতি ফকিরচাঁদ , করুণ ভাঁটির গঞ্জে |
যেন কুহকের জন্ম দেবে শহরের পথ ,
আসমানি রঙ ধুয়ে বৃষ্টির গোলকধাঁধা |
ঈষৎ সর্বস্বে সে - ই ফিরিয়ে আনে
অখিল যৌনভবনকে গর্ভ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে | হয়তো ভুল করেই গায়ে বসালো মধ্যস্থতাকারী প্রজাপতি |

পুরোনো ভাঙন অথবা পুরোনো নয়
নৈঃশব্দ্য - শৈলী বয়ে তোমার অবিকল
কলঙ্কভোগের রাসস্থ মন্ডল

কে পুরোনো ? কেনই বা সংশয় এই শব্দের
স্নায়ু  - কাঠ কুঁদে রচনা কাল ! তাদের কুঞ্জ নেই
প্রজাপতি নেই ,
পুরোনো প্রবাদের মতো প্রেমের দু - একটা বিকল্প হাইকু | নেই একটা আবর্ত | ক্ষুরধার রাস্তাটি কেবল জিভ দিয়ে চাটে ভুবনমনমোহিনী
স্নায়ুর বহুযুগ অপসারিত অধরা |
নদীর নতুন অশোকস্তম্ভ | সরল তরল আঁধার আলোর ছানারা , দূরে খেলাঘর দূরবাসের জলে দোল খাচ্ছে ফকিরা | হয়তো ভুল করেই গায়ে বসলো পৃথিবী নামক বাড়ি | পৃথিবী নামক চন্দ্রবিন্দু ...


দুই /

তুমি অথবা কারুকাঠ | দুজনের সৌন্দর্য্য মধ্যবয়সের এক পুরুষ | বিনির্মাণের রাস্তায় দাঁড়াও | একাকী দাহ্য কান্নাকুসুম | দশচক্রের
দেশগাঁয়ে পঞ্চমবর্জিত ধৈবতে বাজে এতো বৃষ্টির নীল তাঁত |

তার মসৃণ কলা , অমসৃণ রঙ ফুরাবে এতো স্বল্পবাসা কিশোরীর ঘুম - ফ্রকের বোতাম খোলা স্তনে | আতপ্তকাঞ্চনরঙা পৃথিবীর পারদ ও জল ভাসছে | শ্রমে ও মেধায় পৃথিবীর শেষ অতসী গাছের চেয়ে কিছু বড়ো নদী | অতিকায় ঘোড়াদের স্বতোৎসারিত ক্রম রেশমি কেশর থেকে কয়েকফোঁটা মুক্তো নিষিক্ত করে | সিক্ত সেলাই শেষে প্রান্তবাসিনীর নৈর্ব্যক্তিক আঁচল উড়িয়ে উন্মত্ত ঢেউ দুটো নিয়ে থিতোয় জিরোয় জান্তব প্রত্নছায়ার মতো আদিম ভূগৰ্ভলীন
মানুষ | মুনলাইট গ্রোভে আকরিক পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যাই | চিহ্নহীন নখর দাঁত পিপাসা আর পুরুষাঙ্গ | তাদের স্বত্বাধিকারী আজো কেউ নেই | ব্যাঙের গা থেকে অল্প কিছুক্ষণ পাকের গন্ধ ভেসে আসে | মিলিয়ে যায় পৃথিবীর অনাবিষ্কৃত  প্রাথমিক তেলে ...

বৈশাখের কবিতা ৩


ফেমিনিস্ট
               -গৌরাঙ্গ মন্ডল


প্রতিটি ভালো লাগা স্ত্রীলোক ঘটমান
পুরুষ আয়ুটুকু, নাসিকাময়

একথা ভেবে নিও --- শরীর, ঘোড়া বলে
পেরোতে যাওয়া নেই মাটির ঘেরাটোপ


প্রিয় নখ উপড়ে ফেলার আগে
যতটুকু দুঃখ

পুরুষ পেল না

তেমন দৃশ্যের পর, মন্থন প্রেমিক, তুমি

আজীবন শূদ্র থেকে গেলে

বৈশাখের কবিতা ২


বাঁধনহারা
            -দেবারতি চক্রবর্তী


লেখার কিছু নেই
 
       সব ছিঁড়ে গেছে

যা বাঁধাই ছিল না

  সেসব
   
      ছিঁড়ে যাওয়ায়

দুঃখ পেতে নেই

বৈশাখের কবিতা ১

অ্যাসাইলাম
                 -পিয়ালী বসু ঘোষ 

যাবার আগে মায়ের সাথে একবার দেখা করতে এসেছি
এসে অবধি দেখছি কি যেন একটা গলদ
আমার মা আর আমার মা নেই

কেমন স্বার্থপর, পাখি হয়ে যেতে চাইছে
কখনো হলুদবসন্ত, কখনো মাঠচড়ুই
কখনো ঠা ঠা রোদ্দুরে আহ্লাদ খুঁজছে
কখনো আগুনে পুড়ে কড়াইয়ের রঙে মিশে যাচ্ছে
হয়ে যাচ্ছে লেজঝোলা ফিঙে

আমি বোকা সন্তান মাকে খুঁজছি
কিছুতেই পাচ্ছিনা
রাগছি,কামড়াচ্ছি, উপড়ে ফেলছি শরীর গজিয়ে ওঠা ঘন বন

ওইতো,
মা ঘাসের পালকিতে এদিকেই আসছে এবার
আমি প্রস্তুতি নিয়েছি
পরিচয় দেব 'মা,আমি তোমার প্রথম সন্তান'

কিন্তু, জাপটে ধরতে গেলেই
মা একবার আকাশ, একবার ডানা হয়ে যাচ্ছে
পাখি হতে পারছেনা
কেবল বেহারা বিহীন পালকিটা শূন্যে ভাসছে

Thursday 25 April 2019

চৈত্রের অনুবাদ কবিতাঃ সোমালিয়া থেকে ওয়ার্সন শিরে


Image result for warsan shire images

পশ্চাদমুখী



ঘরের ভিতর পিছন দিকে হেঁটে তাঁর সাথে কবিতা শুরু হতে পারে

তিনি তাঁর জ্যাকেট খুলে ফেলছেন আর বসে পড়ছে্ন বাকি জীবনটার ওপরেই

এভাবেই আমরা বাবাকে ফিরিয়েছি।

    আমিই পারি নাকে রক্ত ফিরিয়ে আনতে, পিঁপড়েরা গর্তের দিকে দৌড়বে

    আমরা বড় হয়ে উঠব ছোটখাট জিনিসের ভেতর, আমার স্তন অদৃশ্য হবে,

    তোমার গাল নরম হবে, দাঁত বসে যাবে মাড়িতে।

    আমি ধরে রাখতে পারব ভালোবাসা, শুধু শব্দগুলো বলতে পারব।

     হাতের বদলে লাঠি থাকুক ওদের কাছে যদিও বিনা সম্মতিতে ওরা ছুঁইয়েছে আমাদের,

     আমি লিখতেই পারি কবিতা এবং তা অদৃশ্য করে দিতে পারি।

     গ্লাসে মদ উগরে দিচ্ছেন পালক-পিতা,

     মায়ের দেহ গড়িয়ে উঠছে সিঁড়ি দিয়ে, হাড় ছড়িয়ে পড়ছে অন্ধকারে

     তখনো সে সন্তানপালনে ব্যস্ত

     আমরা হয়ত নিরাপদ সন্তান!

     আমি তাঁর পুরো জীবনটাই আবার লিখে দেব, আর এবার সর্বত্র শুধু ভালোবাসা

     তুমি তার বাইরে কিছুই দেখতে পাবে না

 তুমি তার বাইরে কিছুই দেখতে পাবে না

 আমি তাঁর পুরো জীবনটাই আবার লিখে দেব, আর এবার সর্বত্র শুধু ভালোবাসা

 তুমি তার বাইরে কিছুই দেখতে পাবে না

তুমি তার বাইরে কিছুই দেখতে পাবে না

আমি তাঁর পুরো জীবনটাই আবার লিখে দেব, আর এবার সর্বত্র শুধু ভালোবাসা

 আমরা হয়ত নিরাপদ সন্তান

 তিনি হয়ত সন্তানপালনে ব্যস্ত

 মায়ের দেহ গড়িয়ে উঠছে সিঁড়ি দিয়ে, হাড় ছড়িয়ে পড়ছে অন্ধকারে

গ্লাসে মদ উগরে দিচ্ছেন পালক-পিতা,

আমি লিখতেই পারি কবিতা এবং তা অদৃশ্য করে দিতে পারি।

হাতের বদলে লাঠি থাকুক ওদের কাছে যদিও বিনা সম্মতিতে ওরা ছুঁইয়েছে আমাদের,


 আমি ধরে রাখতে পারব ভালোবাসা, শুধু শব্দগুলো বলতে পারব।

তোমার গাল নরম হবে, দাঁত বসে যাবে মাড়িতে।

   আমরা বড় হয়ে উঠব ছোটখাট জিনিসের ভেতর, আমার স্তন অদৃশ্য হবে,

আমিই পারি নাকে রক্ত ফিরিয়ে আনতে, পিঁপড়েরা গর্তের দিকে দৌড়বে,

এভাবেই আমরা বাবাকে ফিরিয়ে আনছি।

তিনি জ্যাকেট খুলে ফেলছেন এবং বসছেন বাকি জীবনটার ওপরে

ঘরের ভিতরেই কবিতা শুরু হতে পারে তাঁর সাথে, পিছন দিকে হাঁটতে হাঁটতে।



(ওয়ার্সন শিরের জন্ম ১৯৮৮ সালের ১ অগস্ট কেনিয়ায়। মাতা-পিতা সোমালিয়ার নাগরিক। পরে বৃটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন শিরে। প্রথাগত পড়াশুনা কলা এবং সাহিত্য বিভাগে। 'মাকে সন্তানপ্রসব শেখানো', 'তার নীল শরীর' ইত্যাদি শিরোনামে তাঁর একাধিক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে )



(ছবিঃ মারিয়া হাস্কিন্স)



   (অনুবাদ- সম্পাদক, উষ্ণিক)

চৈত্রের কবিতা ১

Related image


ঘড়ির নাম, ক্রৌঞ্চবক
                               -জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি
                               

এভাবে চেপে ধরবে, ঘাঁটলেই মাথা আমি পছন্দ করছি না। ঘাঁটলেই তুমি মাথা, অভিজ্ঞতা ভাবো

তুমি ভাঙতে পারো, একা আমি কাজ। এভাবে এতটুকুও চিড়ে ভিজবে না। ক্ষেত্র এসবে হাসিঠাট্টাই সম্বল

সম্ভব বললে আমি আলোচনার জঘন্য বুঝি। আমি হাঁটছিলাম। তুমি তাকিয়েছিলে। অসম্ভব বলতে, এইটুকুই এক আশ্চর্য স্পর্ধা

সহ‍্য করাটা আমি আর ছুঁতে চাইছি না। জাস্ট একটা সোফায় বসা বাঘ। সোহাগে শিকলে রাত। গোটা মুখে তুমি আর প্লিজ মিথ্যা বোলো না

আমাকে অন্তরাল পায়। মাঠে পা ঝুলিয়ে বিচরণ করছে সদ‍্য সাদা সম্মত। আমি তুলে রাখি। একে তুমি হাসিল ভাবছ ? বাধ‍্যতা কখনোই বিরক্তি করা নাগর নয়

তোমার সঙ্গে আমার কোনো সারাজীবন নেই। তবু একটা গোটা দিন ও রাত, সাঁতার, আসলে এক ডিঙ্গি নৌকা, যেখানে দুজনে উঠে বসলে অস্পৃশ্য খিলখিল পায়

আচ্ছা বলো তো, ধীর পায়ে হাঁটলে কি পা ঘন হয় ? অবাক, আসলে একটা থামার নাম। জাস্ট পজ্। নীচে দৃশ্য ক্রমে পরিস্কার হল। কাঁটারা ঘড়ি হচ্ছে। ঘড়ির নাম, ক্রৌঞ্চবক। রোদ লেগে ওতে জং ধরে আছে। জলের তো কোনো দোষ নেই

ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি, মনে পড়লে, থাকাটার নামই জ‍্যামিতি। নদীর ধারে একটা বাড়ি করব। ঠিকানাটা মনগড়া, যেখানে জল বিক্রি হবে না



(বর্ণান্ধ শিল্পী আই.জোনাথন)

চৈত্রের কবিতা ২

blind painters jeff hanson colour field flowers grass

একুশ বছরের প্রথম দিন 
                           -রঙ্গন রায় 


প্রতিদিন আমাকেই
 কথা বলা শুরু করতে হয়
আজ তুমি করলে

বসন্তকাল মধ্যভাগে এসে পৌঁছলে
দরজায় কড়া নাড়ে
ফিসফিস করে বলে 'শুভ জন্মদিন'

১৫ই মার্চ এলে বোঝা যায়
মানুষ এখনো ভালোবাসতে জানে
ঠিক ভোরের ফুলে প্রথম সূর্যের মত

কারা এখনো চায়ের কাপে আদানপ্রদান করে প্রেম
ধোঁয়ার সাথে উড়ে যায়
নিশ্চুপ এই তাকিয়ে থাকা

এবং দিন শেষ হয়
টোটোয় চড়ে ফিরে যেতে যেতে
প্রতিটি প্রেমিকা অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে

ক্লান্ত বাবার পাশে এসে বসে থাকা
মায়ের ছোট্ট বাটিতে দেওয়া পায়েস
আমাদের প্রকৃত সম্পর্কের কথা মনে করায়


হুল্লোড় দিনের শেষে
প্রতিটি মানুষ একা হয়
একা হওয়া আসলে মানুষের উদ্দেশ্য

জ্যোৎস্নার রাস্তায় শিশুটির বাবা
একপ্যাকেট পাউরুটি নিয়ে আসে
পিতা পূত্রের হাসি বিনিময় শ্রেষ্ঠ উপহার

পুরনো উপহার গুলো থেকে
শৈশবের গন্ধ ভেসে আসে
ফেলে আসা কুড়িটা বছর আমাকে জীবন দেখতে শেখায়
১০
অথচ কত কিছু কথা ছিল বাবা মা-কে বলার
প্রতিদিন বড় হয়ে উঠি
ভালোবাসার কথা বলা হয়না





(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী জেফ হ্যানসন)

চৈত্রের কবিতা ৩

keith salmon blind painter art abstract landscape orange

ছায়া
       -রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

শ্মশান তাপে অগ্রন্থিত বাল্যখেলা
রাতের পরিযায়ী কামুক জ্যোৎস্নায়
মাখামাখি স্বপ্ন আর ব্যর্থতা

নেমে আসা মাটির দিনগুলো
যেন জ্যামিতিক প্রতারণা
স্মৃতিছায়ায় ভাসে দীর্ঘ সংলাপ



(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী কীথ স্যালমন)

চৈত্রের কবিতা ৪

blind artist painting

শুভ লাল
         -ঈশানী বসাক

ফেরার পথে দেখি একটা মৃতদেহ। খাটে শোয়ানো। দুটো পা লাল টুকটুকে আলতা রঙে রঙিন। মুখ ঢাকা। দাঁড়িয়ে রয়েছি যদি মুখ থেকে ঢাকা সরে। স্ট্রেচার থেকে নামাবার সময় সরলো চাদর। বয়স হবে আমাদের মতো কিংবা সামান্য বছর তিনেক বড়। এক পাশে একটি ছেলে বসে আছে। হাতে কাগজ। মাথা নীচু করে সে ছাপ নিচ্ছে পায়ের। ধরে রাখার বড়ো চেষ্টা মানুষের জীবনকে। তবু সাড়া দিতে পারে না শরীর। ফুল , তেল, ধূপ জুড়ে মৃতেরা ঈশ্বর হয়ে যায়। মেয়েটার ঠোঁটের কাছে সামান্য হাসি। এমন ছোঁয়াচে রোগের কাছে ফিরতে চাই আমি। মনে হয় গিয়ে পাশে বসি। তবুও তো চলে যেতে পারবে না কেউ। বলতে তো পারবে না যে আমার যাবার কারণ ছিল কিছু। আলতার ছাপ কাগজে। বহুবছর বাদে সেই পায়ের ছাপ দেখে অক্ষমতার কাছে গিয়ে চোখ বুজবো আমরা। চিরকাল আলতা দেখলে চোখ ফেরাই। আলতা বড়ো মনে করায় ...





(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী ম্যারী সেমৌর)

চৈত্রের কবিতা ৫

Image result for sargy mann painting



এমন বিচ্ছেদ
                      -তমালিকা চক্রবর্তী

বিচ্ছেদ চেয়েছিলে তুমি। দিয়েছিলাম। সেদিনের পর থেকে আমাদের আর কোনোদিন কথা হয়নি। দেখা হয়নি। হয়ত কোনোদিন দেখা হবেও না। তবুও আজ জানতে ইচ্ছা করছে, বলতে ইচ্ছা করছে কানে কানে, যে বিচ্ছেদ চেয়েছিলে, আদৌ কি তুমি তা পেয়েছ? এই ক বছরে কি একবারও মনে মনে আমার কথা ভাবনি।

মিথ্যে বলব না। ভেবেছি আমি আরেকবার। যতবার নৌকায় উঠি। ততবার মনে হয় পাশে বসে আছি তুমি। এবার বলবে,  দেখো দেখো সূর্যের আলো জলে পরে কেমন মায়াবী হয়ে উঠেছে।

যতবার প্রেমিক-প্রেমিকাদের হাত ধরে যেতে দেখি। মনে হয়  পাশ থেকে বলবে তুমি, এই ন্যাকা ন্যাকা প্রেম পোষায় না। ইনফ্যাক্ট প্রেমটাই ঠিক পোশায় না। নেহাৎ তোকে ভালোবেসে ফেলেছি।

বিশ্বাস কর আমার একবারও জানতে ইচ্ছা করে না, তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো। সত্যি বলছি, তুমি  বিয়ে করেছ কি না সেটা জানতেও ইচ্ছা করে না আমার।

শুধু জানতে ইচ্ছা করে, এই ক'বছরে একবার আমার কথা ভেবেছ?

(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী সার্গী মান) 

চৈত্রের কবিতা ৬

Image result for sergej popolsin painting


শেষ কথা
            -পিয়াল রায়

কথা একটাই
'শেষ কথা'
ধুলোর আঁধারে এই একটিমাত্র 'শেষ কথা'

গায়ে দামি শাল, জমিজিরেত, গোয়াল ভরে ওঠে
গির্জার ঘন্টাধ্বনি, আজানের সুর আসে ভেসে

মাটির বাড়ি
দোতলার জানলা খোলা
বাইরে ও ভিতরে দেদার কথা
তুলোর মতো হাওয়ার গায়ে লুটোপুটি
একটা দুটো কামরা কেবল ফাঁকা পড়ে থাকে

কথার বাড়ি ভরে ওঠে
বড় হয়, আরো বড়
শেষ নেই তার

ধীরেধীরে দেখা যায় কিছু কিছু কথা
আলোয় চলে গেছে
বেশিরভাগ কথা থেকে গেছে কালো কালো ছায়ার মতোন
ছড়িয়ে গেছে বাতাসের ভিতর, আগুনের ভিতর, মরণের ভিতর

বাদুর এসে বসে, চামচিকে ওড়ে,মাথার ভিতর একটা দুটো ইঁদুর
কোনো শব্দ নেই

সমস্ত ছেড়ে যাওয়ার আগে জীবন কথা বলে ওঠে
'শেষ কথা'
যার আয়োজনেই গোঁজামিল চলে সমস্ত জীবন


(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী সের্গেই পোপোলসিন)

চৈত্রের কবিতা ৭

Image result for binod behari mukherjee painting

মৃতদেহ ও রোদচশমা
                                -তন্ময় ধর 

অনুভূতিহীন একটা রঙ
   চমকে ওঠে
     দৃশ্য হতে থাকা একটি হাত ও অক্ষরেখায়

কাটা-ফলের ভিতর ঢুকে পড়া তোমার সুখ ও অন্ধকার

কোথায়, কিভাবে
হারিয়ে ফেলেছো রক্ত, ছায়াপথ, দুধ ও নির্জনতা?


একটি তাপপ্রবাহ চোখ সরিয়ে নিচ্ছে আমাদের অভিনয় থেকে

ভুল আলো-শব্দ ছিঁড়ে
আমাদের রঙিন অংশ
তুলে নিচ্ছে একটি আকাশ ও পাখি




(ছবিঃ আংশিক অন্ধ শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়)

চৈত্রের কবিতা ৮

Image result for hal lasko painting



অতিবৃষ্টি
               -সুকল্প দত্ত

কিছু খেত পোওয়াই রাতে
নির্ঝঞ্ঝাটে কত দাগ
গুঁড়ো গুঁড়ো মেঘে
মিয়ানো সিরাপ
আশরীর নখবালিশ
ঝরোখার মন
সে তোমার বৌবহর
কিলমিশ এই হিটারে
ধানডিহি বিষাদ মরাল।





(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী হ্যাল লাস্কো)

চৈত্রের কবিতা ৯

Related image


অভিমানও একটি মৃতশহর
                             -শিবু মণ্ডল 

মৃতদের কোনো নাম ধরে ডাকতে নেই
তারা পূর্ণিমার ভোরের চাঁদের মতো
ভীষণ একলা; অপেক্ষায় থাকে
কখন ছাদে এসে তাঁকে দেখবে তুমি
ভিড় থেকে সরে এসে কখন ডাকবে তাঁকে।

যে নদী শিয়রে রেখে শুয়েছিলে, তাকে
ডিঙিয়ে চলেও যাবে ছাদের কার্নিস ধরে

তুমি মৃত শহরের কাছে যাবে,
আপন করতে চাইবে।তবু ভয়ে আটকে যাবে
পা; পাছে তুমিও সেই শহরের মতো হয়ে যাও!




(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী আর্থার এলিস)

Thursday 28 March 2019

কুসুমের মাসের অনুবাদ কবিতাঃ বটসোয়ানা থেকে ৎজবঙ্গোবা ডেমা

Image result for tj dema

ওভারিয়া

১।
যখন মধ্যরাত আসে
আমি দেখি, অনেক দূরে রয়েছি অনেকক্ষণ
আমার উপুড় হওয়া অন্তস্তল ভেসে আছে
ছাতার মত
বিশ্বাস করতে চেয়ে শশব্যস্ত
স্বপ্নে
সেই জাদুর ভেতর নিজেকে খুঁজে পেতে
ইঁদুরে কামড়ানো শশার মধ্যে

এবং সময়সাপেক্ষ পুরুষেরা

এবং তাদের হাতে অনেক অস্বচ্ছ চামড়া

২।

নারীরা শেখে,
কোনো একটা সময় তা নিছকই রক্ত
মৃত্যু নয়
তারা লুকোতে শেখে জরায়ু এবং স্তন
কোনটা হারাতে হবে, সেটা বেছে নেওয়া
সুস্বাদু কেক দিয়ে সাজিয়ে রাখা টেবিল
তারা শেখে, ছুরি ধরার কৌশল
ব্লেডের সামনে বন্ধকী হাড়-পাঁজরা

আর একটা শূন্যতার সামনে কাপ খালি করে দেওয়া


(আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে বটসোয়ানার গ্যাবোরোনে জনপদে ১৯৮১ সালের ১৪ অগস্ট ৎজবঙ্গোবা ডেমার জন্ম। তাঁর নিজস্ব ভাষার রূপ-রহস্য-আলো-অন্ধকারের মধ্য দিয়েই গনগনে আফ্রিকীয় উত্তাপ ছড়িয়েছেন ডেমা। একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা)


(অনুবাদ- সম্পাদক, উষ্ণিক)

(ছবিঃ Botswana Youth Magazine)




কুসুমের মাসের কবিতা ১১

Image result for cubist abstract paintings

সাঁকো, নদী, সিগারেট ও একটি গল্প
                                                   -সুপর্ণা মন্ডল




ব্রিজের উপর দিয়ে একটার পর একটা বালির ট্রাক
চলে যাচ্ছে, ঝাঁকুনিতে বালি পড়ে যায় অনেকটা।
“পড়ে যাবে বলেই ওরা বেশি করে ভরে আনে।”



এই নদী, জলজ বাতাস, তোর এড়িয়ে যাওয়ার দৃষ্টি
কোন দাবী করে না তো। যে কেউ এসব ফেলে
চলে যেতে পারে।



“এখানে সিগারেট খেতে ভালো লাগে।”
টান শব্দটাও ওই দু’-আঙুলের ফাঁকে।



গল্পটা মামুলি। একটা মেঘ ঘনিয়ে এলো।
বৃষ্টি কিন্তু হ’ল না শেষ অব্দি।

(ছবিঃবেরালীন বিলানুয়েভা)

কুসুমের মাসের কবিতা ১০

Related image


বসন্ত
         -তন্ময় ধর 


মিথ্যে বলতে গিয়ে আমাদের আলজিভ থেকে
আবার লাফিয়ে ওঠে অন্ধকার

তোমাকে-আমাকে দেখতেই পায় না

মৃত একটা শব্দ থেকে বহ্নি-উৎসবের পোড়া আলু তুলে নেয়
নুন-মরিচের স্বাদে

অভিনয়ের চুক্তি অনুযায়ী
একের পর এক রঙের ভিতর দিয়ে আমরা হাঁটতে থাকি

জ্যামিতিক লোভে ও বিষুবচ্ছেদে

(ছবিঃ কার্ল ফস্টার)


কুসুমের মাসের কবিতা ৯

Related image

রজপদ্ম
            -সু চক্রবর্তী


তাঁবু

আঙুলে জড়িয়ে গেল গোছা গোছা


মাটিতে গাড়ো খুঁটি
হিংসা আমাদের পরবর্তী

শব্দবন্ধে চুঁইয়ে পড়া রস

ডুব খায়

এখন রজপদ্মে লালন হয়

গৃহস্থ

দুপুরের প্রসবটুকুর মতো

দিবারাত কাঁসরঘন্টা বেজে ওঠে

অতর্কিত শালিকের ব্যস্ততায়


(ছবিঃ জুয়ান গ্রিস)








কুসুমের মাসের কবিতা ৮



Related image


চারিদিকে এত রক্ত কেন প্রকাশিত 
                                        -শিবু মণ্ডল

ঋতুরাজ তোমার হাতের নখে একটি আঁচড় কেটে দাও
এই নিহিত ব্যাথার বুকে!

রঞ্জিত বসন্ত মাপার তালগোল পাকানো হিম
ধরে মেপে মেপে যে পলাশতুমি সাজিয়েছ তা কি
তোমাকে মানায়?

চারিদিকে এত রক্ত কেন প্রকাশিত!

কেউ জ্বলে গেলে পাখিরালয় থেকে উড়ে যাবে পাখি
কেউ নিভে গেলে পরিযায়ী পাখিরা আসবে না আর
কিছু ফিনিক্স ডানা মেখে নেবে অক্ষরে
ফায়ারিং বসন্তে দাঁড়িয়ে।

চারিদিকে এত রক্ত কেন প্রকাশিত!

এসো, ঝুলে থাকা ভালোবাসা ধীরে ধীরে
নেমে এসো, দাঁড়াও একই পংক্তিতে!

(ছবিঃ ট্যামারা দ্য লেম্পিকা)

কুসুমের মাসের কবিতা ৭

The gray tree - Piet Mondrian


সাঁতার 
      -নীলিমা দেব

কুচকে গেলো যে নদীর অন্ধকার
 তার অহঙ্কারে পাখি জল ভাঙ্গে
        অস্পষ্ট!
              বৃত্ত বুনে বুনে ডুবে যাচ্ছে সাঁতার
         হাতে হাতে বড় হতে থাকা রাত আজিজ হলে
         শরীর থেকেও সরল হয়ে ওঠে নোঙর
          ঘটি ঘটি মেঘ-বাউল ...

(ছবিঃ পিয়েঁ মঁদ্রিয়ান)

কুসুমের মাসের কবিতা ৬


Composition VII (1913) - Kandinsky Wassily

যদি
         -নিবেদিতা মজুমদার


যদি এমন হত
বসন্ত বলেছে, পলাশে রাঙাবোনা বন,
ভুলে যেয়ো রঙের রেখা সমঝে অযতন!

যদি এমন হত
হলুদ বিলাপ চৈত্র বোঝেনা আর,
মন নেবেনা প্রেমের ব্যয়ভার।

যদি এমন হত
তোমাকে বুঝেও বুঝিনি ভাবছ,
আসলে কতবা খবরাখবর রাখছ?

যদি এমন হত
ঢেউ ছুঁয়ে গাঙচিল সুখে
একা সাঁঝে ফিরেছি বিমুখে-

যাই হত, তাই হত কন্সপিরেসি
আমরা আসলে আমাদিগকেই ভিড়েছি!

(ছবিঃ ভাসিলি ক্যান্ডিনস্কি)

কুসুমের মাসের কবিতা ৫


Black Iris III (1926) - Georgia O’Keeffe

যুদ্ধক্ষেত্র থেকে
            -অনিমেষ সিংহ

আমি নেই বলে আক্ষেপ করিনা।
আমি অনেক কিছুতে নেই-
যেমন ককপিটে আমি নেই

যুদ্ধের বৃত্তে নেই, পরাবৃত্তে নেই,
কোমর জড়িয়ে তেমন নাচের রাতেও ছিলাম না আমি

সারি সারি চেয়ারের স্নিগ্ধ সুষমায়,
মার্জিত নক্ষত্রের ভিড়ে আমি নেই

-- আমি নেই বলে আক্ষেপ করি না।

শুধু তোমাকে জানাতে চাই,
যুদ্ধের রাতে তোমার কাছে নাও ফিরতে পারি

তবে ভেবোনা আমি যুদ্ধে গেছি
অথবা আমার জেটপ্লেন ভেঙে গেছে গোলাপ বাগানে।
যেদিন ফিরবনা তোমার কাছে,
মনে করবে-
সেদিন যুদ্ধের রাত,
 এপার ওপার সমস্ত মৃতদেহে আমি শুয়ে আছি

(ছবিঃজর্জিয়া ও'কীফ)


কুসুমের মাসের কবিতা ৪

Black Nebula - Clint Fulkerson

আশ্রয়
            -নীলাদ্রি ভট্টাচার্য
       

দুমুঠো আশ্রয় গন্ধে উতলে ওঠা জল
ভাসমান তন্ডুল
তারপর আধভেজা শব্দভার
                 অতলস্পর্শী পিঁপড়ে বৃষ্টি।

কাগজের উঠোন পিচ্ছিল ঢেউ চোখ
উড়ে প্রেক্ষাপটহীন পুরোনো বাতাস
আতপ এঁটেল বসন্ত ঘাস
অপরিচিত স্যাঁতসেঁতে অনুগল্পের ঘাটমাঝি ।

সময় গার্হস্থ্য মাটির মাপকাঠি
বিকেলে চিৎকার পুড়িয়ে
গুঁড়ো গুঁড়ো কষ্টার্জিত ভাতের মুগ্ধতায়
দাঁড়িয়ে থাকে আলপথের খালি পা।



(ছবিঃ অ্যালিস হাম্ফ্রে) 

কুসুমের মাসের কবিতা ৩

শূন্য দশক
             -সৌমনা দাশগুপ্ত

আমাদের তটিনী হৃদয় পড়ে থাকে
মাংসের  দোকানের পাশে, নর্দমায়
কীটকবলিত
আমাদের শূন্য অংকের খাতায় রোদ
রোদ নয়, সে ত এক সূর্যের সন্ত্রাস
নড়ছে সংখ্যা, সংখ্যাগুলি নড়িতেছে
যেন ঝুলন্ত শাবক কিছু, গিলোটিনে 
মাপা হবে তাদের রক্তের স্বচ্ছ অস্বচ্ছ
কণাগুলি বয়ে যাবে আমাদের
খামারবাড়ির পাশে বিষণ্ণ সোঁতায়
গান হয়ে ভেসে যায় শকুন আর 
শেয়ালের হাহাকার
আমাদের গল্পগুলি ধীরে ধীরে
কিংসাহেবের ঘাটে
অতিমরা নদী যেন
তার কোনও কথা নেই
তার কোনও কথা নেই
ঘুম শুধু ঘুম শুধু ঘুম 


সমস্ত লবণ আমি হারিয়ে ফেলেছি
কীভাবে তোমাকে লিখি বাংলাভাষা
তার চোখ চামড়ায় মোড়া, বোবা
শব্দের থেকে উঠে আসে নেই রং
মণি নয়, সংকেতও নয়, হাহাকার নয়
বালির লিপিতে লেখা দিনরাত
অন্ধ বাউল এক বসেছে বিদ্যুতে
তার একতারা থেকে
গোঙানির রব
অস্থি মজ্জা থেকে
কালো এক রক্তের স্রোত নেমে আসে

(ছবিঃ রিম্মা ঝাকারোভা) 

কুসুমের মাসের কবিতা ২

The Black Square (1915)


ও পলাশ....
        -সুমনা দত্ত

আরেকটা করে বসন্ত আসে
আর যৌবনের সব রঙ বিবর্ণ আবছায়ায়
লীন হয়ে যায় মোহগ্রস্ত মরীচিকার মতো।

ফোঁটা ফোঁটা দুপুর গড়ায় জানালায়।
ক্লান্ত চোখ বুজতে গিয়েও দাঁড়িয়ে থাকে সূর্য,
হলুদ পাতার অভিসার এলোমেলো করে দেয় কালো পিঁপড়েদের সারি।

নির্জনতা রাস্তায় বসে
এবং ভাবে,

তোমার ঘাড় হেলানো সম্মতির জন্য বাড়ি ফেরা হল না যার,
তার জন্য শাখা আলো করে লালচে ফুল ফুটিয়েছ পলাশ?


(ছবিঃ কাজিমির ম্যালেভিক)

কুসুমের মাসের কবিতা ১

Image result for russian b/w abstract painting

প্রত্যাবর্তন,যেমন যেটুকু
                               -পিয়ালী বসু ঘোষ 

আধপেটা স্বপ্ন বেঁচে দিনশেষে ঘরে ফিরি
শুকনো ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে
সরিয়ে নিই হু হু ক্ষত

সন্ধ্যা বয়ে গেছে
মেটে সিঁদুর পরিয়ে ঘরে এনেছিলাম যে কমলাকামিনীকে
তার পরনের শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে রাখি
অশ্রুসিক্ত সঞ্চয়

শেষ প্রহরের কুয়াশা কাটলে
বিরহী চাঁদ ঢলে পড়ে রুদ্রদেবের ফাটলে
এসময়ে শরীর মাত্রাহীন ঠান্ডা
তুমুল আলোড়নেও শান্ত অকেজো কিম্বা মৃত

কালঘাম ফেলেও পাথর জাগেনা
সাঁই সাঁই চাবুকের শব্দের ভিতরেই
আবার তলিয়ে যাই ঘুমে

স্বপ্নে আসে সময়, শোক, বিলাস
মানবিক যা কিছু আভরণ খুলে
প্রাগৈতিহাসিক এক আলোর ভিতরে
হেঁটে যাই অপেক্ষমান আগন্তুকের খোঁজে
একজীবন গোধূলি নিয়ে সম্বল

(ছবিঃ মার্শেই দুশঁ)


Thursday 14 February 2019

উত্তরায়ণের কবিতা ১

Related image


প্রেমের কবিতা 
                 -রঙ্গন রায়


প্রতিটি প্রেমিকা আসে , কবিতা উপহার দেয় , তারপর চলে যায়। 
আমি নিজের লেখা সব কবিতা গুলো বারবার পড়ি , অক্ষর হাতড়াই 
খুঁজে দেখি প্রেমিকাদের অস্তিত্বের সুন্দরী গন্ধ 
এসব দিনেই আমি সুস্থ থাকি ভীষণ 
আসলে কেউ সারাজীবন থাকেনা বলে 
একা থাকা শিখি , রাস্তায় বেরোই , চায়ের দোকানে চা খাই 
চাওয়ালা জানায় , ওই মেয়েটি তোমায় ঝাড়ি মারছিল এতক্ষণ 
নিজেকে সন্দেহ করি , সেই মেয়েটি কোনোদিন জানবেই না 
এতক্ষণ আমিও তাকেই দেখছিলাম - 
প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক কীভাবে যেন ঝিমিয়ে আসে 
ভালো লাগেনা , জীবন দেখা যায় , উপলব্ধি করা যায়না। 
তবু ফিরে আসি , সাইকেল চেপে ফিরে আসি , 
ঝুড়িতে পাউরুটি নিয়ে ফিরে আসি - 
রাত বাড়ে তাকিয়ে থাকি খাতার দিকে 
কে লিখবে কাকে এই প্রশ্ন চিহ্নের মাঝে এসে দাঁড়াই 
প্রশ্নচিহ্নের তলে থাকা কালো বিন্দুটা বুলেটের মত গেঁথে থাকে বুকে 
পাউরুটির গুড়ো মুখে সারিবদ্ধ পিপড়েদের সাথে আমিও হাঁটতে থাকি 
সারিবদ্ধভাবে হাঁটি , মিছিলের কথা মনে পরে ...

(ফোটোঃ জেমস ওয়েলিং) 

উত্তরায়ণের কবিতা ২

Image result for abstract photography


পাঁজরের কাছাকাছি‌
                            -জ্যোতির্ময় মুখার্জি 



আঙুলগুলোকে কিছুতেই ধরতে পারছি না। পিছলে পিছলে যাচ্ছে আঙুলের তলা দিয়ে। অথচ ধরতে সুবিধা হবে বলেই তো কাটা চামচ সরিয়ে রেখেছিলাম পাশে


কে যেন বলেছিল, ওরে কাটা চামচ রাখ। হাত দিয়ে খা। অতো স্টাইল্ মারিস না দিকি। আর আমি তখন সবেমাত্র চামচটাকে বসিয়ে ফেলেছি পাঁজরের কাছাকাছি‌। আস্ত একটা বুক মুখে ঢুকবে কি ঢুকবে না এমন সময়…


এই যে আঙুল। তার তলা। তার’ও তলায় মস্ত একটা হাত। কাঁধ থেকে ঝুলে। ঘুমিয়ে বা ঘুমের ভান করে মটকা মেরে পড়ে আছে, তাকে জাগাতে এতো চামচের আয়োজন কেন?




(ছবিঃ শ্যারন কামিং) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৩

Image result for abstract photography

ধুলোমেঘ
             -পিয়াল রায়

ধরা যাক একটা আলো
এগিয়ে আসছে তোমার দিকে
আর তুমি
দাঁড়িয়ে আছ দু'হাত মেলে

ধরা যাক এখানে
শূন্য নামে কোনো মাধ্যম নেই
নীলচেরঙা চামড়াও গায়েব
তাহলে কি তুমি পানি হবে?
অথবা মাছরাঙা, পানকৌড়ি

একবার নিজের দিকে তাকাও
দেখো সেখানে কোনো নিঝুম দুপুর
মুঠো মুঠো ভিজে বাতাস ছড়িয়ে রেখেছে কিনা

যদি বাতাসের গন্ধ তোমাকে
চিনিয়ে দেয় কোনো একদিন
বৃষ্টির পর গোলাকার চিহ্নের মতো
বিদ্যুৎ জ্বলেছিল গাছেদের মাথায়

তাহলে জেনো,
সমস্ত আলোই এরপর তোমাকে
ছুঁতে চাইবে

যদিও তুমি তখন অশরীরী এক

ধুলোগন্ধভরা মেঘের ভিতর

(ফোটোঃ হোলী ম্যার্টলিউ )

উত্তরায়ণের কবিতা ৪

Image result for high contrast abstract photography

সম্বল
      -গৌরাঙ্গ মন্ডল


যেহেতু মুদ্রণ ছিল বঞ্চনার একমাত্র সহায়

শোকের প্রেরণাবৃত্তে
মগজ ঘেরাও হল, ধীর
এ-যেন মৃতের পায়ে অনাত্মীয় পাপ
অপারে কী! জানার মোহে ভেঙে পড়ছে নিঁখুত ঈর্ষায়

দুঃখেরা অলীক আর
প্রকাশও যথাযথ নয়

তেমন মুহূর্তে কষ্ট জেগে ওঠা পূর্ণ নিরাময়

(ফোটোঃ বেরী ব্লগ) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৫


Image result for abstract art black and white

আরশি
        -দেবারতি চক্রবর্তী


সময়ের নদী আছে একটা

যেতে হলে চোখ বন্ধ করতে হয়

সেখানে অনেক স্বপ্ন

তুমি আমি আমরা চরিত্রসব বিলুপ্ত

( ফোটোঃ নাতালি কিন্নিয়ার)

উত্তরায়ণের কবিতা ৬

Related image

বেলাশেষে
             -অভিশ্রুতি রায় ভট্টাচার্য 


তুমি প্রতিবার লিখে রাখছ আঙিনা

এই শহুরে রাস্তা কোনো ইস্তফা দিতে শেখেনি

তাই  প্রত্যেকটি বেড়ে ওঠা জড়ুলে সূর্যাস্ত নেমে এসেছে

এই সবকিছু মেখে নিলে

বাকিটা শুধু ঘামঘাম ভিজে ওঠা

আমাকে নিয়ে যায় আরও অনেক পশ্চিমে

আরও অনেক মেরুতে

সেখানে আজ অবধি কোনো শ্যাওলা ধরেনি

কোনো রং বলে ওঠেনি
আজ আমার জন্মদিন

(ফোটোঃ ডেভিড জি পল )

উত্তরায়ণের কবিতা ৭

Image result for abstract art black and white

ক্ষত
    -নীলাব্জ চক্রবর্তী



এডিটেড স্মৃতির ভেতর যে ফোকাস
নড়ে উঠছে
স্পর্শে
আমি খুব স্বাভাবিক আঙুল
শুধু ছায়াতেই
দৃশ্যমানতায় রেখেছি যা যা এলিমেন্টস
ক্ষত হয়
স্ফূরিত এক কমলা অভ্যাস তার নুন
খুলে রাখা সেতু
এই যে নতুন মাংসের দিনে পাউটিং
ঘুরে আসা রোদ
জল হয়
এক বৃক্ষ সারফেস হয় কার পালকে
দেওয়াল থেকে দেওয়ালে
উঁচু শব্দ অথচ...

(ফোটোঃ রজার কোয়েনিগ)