কুলেন্দ্র ডাউলাগুফু
সিপাহি পত্নীর ব্যথা : একটি পত্র
আজ মেঘলা দিনে
ভীষণ মনে পড়ছে তোমাকে আমার
ডিয়ুং-এর এই উজান থেকে।
ডিয়ুং নদী পেরিয়ে, হায়ুং পাহাড় ডিঙিয়ে
পৌছবে কি পৌছবে না
আমার চিন্তার বার্তা এখান থেকে?
আমি কোথায় তুমি কোথায় -
এমন হল কিসের জন্য?
পিছনে তাকালে
মনে পড়ে, নিঃশেষিত হাওয়া
আনন্দে গাওয়া সে দিনগুলো,
শেষ -হয়ে -যাওয়া
হাসিখুশিতে নাচা সে রাতগুলো!
হৃদয় ব্যথায় ভরে যায় সেদিনকার কথাগুলো ভাবলে
বড় দুঃখ হয় সেদিনকার স্মৃতিগুলো স্মরণ করলে!
ওয়াকু গ্রামের তুমি যুবকদের নেতা আমি যুবতীদের নেত্রী
থাকার দিনে
আমরা
হরিণের মত ছিলাম, নেচে দৌড়ে
ছিলাম,প্রজাপতির মত উড়ে- উড়ে
খেটে খাবো বলে হয়েছিল ভালোবাসা
কাপড় বুনে পরব বলে বেঁধেছিলাম ঘর ও।
তবুও
সময় যায় বদলে—ভাবার মত হয় না এ পৃথিবীতে।
জুম ক্ষেতে ফলে না ফসল
জাল ফেলে মেলে না মাছ
হরিণ শিকারে মেলে না হরিণ
শ্রমের বিনিময়ে মেলে না শ্রম
পেট ভরে ভাত খেতে পাই না, আমাদের এই রাজ্যে।
একদিন
সংসারের মাঝদরিয়ায় আমাকে একা রেখে,
দূরের পথে গেলে চলে তুমি সিপাহি হয়ে
সোনালী দিন আসবে ভেবে, রুপোলী রাত আনবে বলে,
তুমি চলে গেলে রণাঙ্গনে
আমি রইলাম চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে!
তুমি চলে গেলে
আর এখন, তোমার গ্রাম পড়ছে মরছে
আমাদের ঘরের ছোট বাগান
গেছে ভরে কাঁটা ঝোপঝাড়ে।
রোজই ভাত খাবার সময় একটি থাল থেকে যায় অতিরিক্ত
চুল আঁচড়ানোর সময় চিরুনির সংগে লেগে আসা পাকা চুল
তুমি নেই
আমার পৃথিবী অন্ধকার—রাত, দিন ও রাত—চাঁদকে দেখিনা রাতে ও
নিজের ছায়াই হচ্ছে আমার সাথী, থাকার জন্য একা রোজ।
ঘুমেও কাটাতে পারিনা রাত, কাজেও শেষ হয়না দিন—
কী ভাগ্য নিয়ে এসেছি আমরা
জানিনা আমি।
আজ ভোরে
শরীর ভীষণ শিরশির করে ওঠে
গ্রামের বাড়িতে পেঁচার ডাক শুনে,
আমার চোখ ফুলে উঠছে তোমার কথা ভেবে ভেবে!
দূরদেশে গিয়েছ রণাঙ্গনে- খারাপ কিছু কি যায় ঘটে
ভয়ে বিহ্বল আমার হৃদয়— কোনো বিপদ হবে না তো!
তুমি এস ফিরে, তাড়াতাড়ি!
তুমিই মাঝদরিয়ায় মহাপাথর
তুমিই মাঝপথের মহাগাছ,
চাইনে আমার সোনার বালা,চাইনে রুপোর মালা,
তুমি নেই আমি ও নেই, তুমি থাকলেই আমি ও থাকব
শীঘ্র ফিরে এস, ধানের বীজ বপন করবে এসে— পৃথিবী গোল
মূল ডিমাসা থেকে অনুবাদ- বিশ্বজ্যোতি বর্মণ
ছবিঃ কাসান্দ্রা তন্দ্রো
No comments:
Post a Comment