Thursday 18 July 2013

শ্রাবণের কবিতা ৯



অনামিকা
      -গৌরব চক্রবর্তী

অদ্ভুত বাড়িয়ে রাখি বিকেলের জন্মদিন
কেমন নীচু হঠাৎ-- রোদের বিছানা
আর গ্রহণের মাথার অদূরে উঁকি দিচ্ছে রাহু
কড়মড় করছে দাঁত আলোকিত মাংসের ওপরে-নীচে
দীর্ঘ ক্ষয়িষ্ণু অথচ নেশাতুর, জং-ধরা আলো
আমাদের উদাস পাঠিয়ে দিচ্ছে মৃত ডাকবাক্সে
ধরো, সমুদ্রপাড়ের সূত্রগুলো এখন উধাও
ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে ক্ষুধার্ত চিন্তারেখা, ধূমায়িত স্মৃতিচিহ্ন
কে তুমি আলোর পাশ দিয়ে ফিরে এলে স্তব্ধ জানলার পাশে?
কে তুমি বয়ঃসন্ধিতে ছুঁড়ে দিয়েছ গানের মৃদু রোশনাই?
এক এক করে খামে ভরে নিয়েছ সমস্ত রাত্রি

কে তুমি? মরে যেতে যেতে বন্ধ করে দিচ্ছ হৃদয়ের হঠাৎ

শ্রাবণের কবিতা ৮




শাওনহরিণীর স্ক্র্যাপছুট
-      তন্ময় ধর

মেঘালোকে ভবতি সুখিনোহপ্যন্যথাবৃত্তি চেতঃ
কন্ঠাশ্লেষপ্রণয়িনি জনে কিং পুনর্দূরসংস্থে
                   -মেঘদূতম

সেই হাসিতে
 তিলফুলের অসময়

ঈশ্বরীরঙের আইসক্রিমের ঘুম ঘুম

অবুঝ বালকের রোদ্দুরের টুকরোয়
  জারুল জারুল সিল্ক শুকিয়ে যাচ্ছে কান্নায়

বাদামী এক বিবাহের যন্ত্রণাকে
তুই
কাঠামোয় শুশ্রূষা দিস

তোর শস্যাভিমানী বন্ধুরা হাঁটা শিখবে কবে ?

শ্রাবণের কবিতা ৭



তার পরের কবিতা
          -সম্বিত বসু

নতুন প্রেমিক তোমাকে খুব ভালবাসে
হেসে চাঁদ এনে দেয়
গভীর রাতে সিনেমা এনে বলে, দেখো
দেখেছ কী যুদ্ধ, কী প্রেম
আইসক্রীম এনে বলে
ছূটিতে সুমেরু ঘুরে আসি?
বলে, ওষুধ খেয়েছ?
তোমার পুরনো বাঁশির কথা সে জানে না
সে জানেও না, তোমাকে আদর করছে যখন
বাড়ির সামনে দিয়ে শিস দিতে দিতে
তোমাকে অন্যমনস্ক করে দিচ্ছি আমি

শ্রাবণের কবিতা ৬




প্রিয় জিম করবেট......
-      নীলাদ্রি বাগচী

।।সেবার বসন্তে তুমি ফিরে এসেছিলে

তখন পাতায় পুল, দড়িতে শুকিয়ে যাচ্ছে রোদ
মন্দাকিনী শীর্ণা তার পাথুরে ফেনায় কুয়াশা মলিন এক হত্যাদৃশ্য

মড়া গরু আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি মানুষ
তার পাথরের বাড়ি- খোলা উঠানের ছেঁড়া দড়ি- ঘরে জানালা নেই
বাতাসের জন্য শুধু দরজা

শুধু শুকনো পাতায় রাতভর থাবার আওয়াজ

অলকানন্দা কাছে গঙ্গার জন্মে মিশে আছে আর
তুমি ফিরে এসেছিলে

সহ্যশক্তি
খড়ের গাদায় ঝোঁকা ময়না গাছের আশ্বাসে......


।। আজ সারাদিন আমি কমললতার পাগলামি দেখেছি। সেটা বড় কথা নয়। আসলে দরজার সামনে যেই মোবাইল বন্ধ হয়ে গেল ওমনি বাইরে ডাস্টবিন ওলটানোর শব্দ।। ডাস্টবিন ছড়িয়ে পড়ার আওয়াজ শুনতেই বন্দুক হাতে সোজা বাইরে। আর বন্দুক যখন রয়েছে তখন চিতাবাঘ থাকবে না এ কোনও কথা? তাই সামনে গজিয়ে উঠলো পাহাড়ি জঙ্গল, ঝরঝর ঝোরা আর লাফিয়ে বার হল চিতাবাঘ। হৈহৈরৈরৈ একেবারে। কিন্তু চিতাবাঘ আছে আর মড়ি নেই? তাই জঙ্গলের ধারে ঝোপে একটা আধখাওয়া মৃতা। আর মৃতার বাড়ি বনবস্তি, পাহাড়ি এলাকা। ডুবুডুবু নতুন চাঁদ। ছাগলের ঘরের পাশে ধাপ জমি। নরখাদকের পায়ের ছাপ। ছড়ান ছিটানো আবর্জনা। ওলটানো আবর্জনার গামলা। বন্দুক হাতে অন্যমনস্ক একজন চিতার বিষয়ে শুনছে। এক পা পাথরে তুলে। ধোঁয়া ছাড়ছে হাল্কা। তার মোবাইলে ব্যাটারি নিয়মমতো ফুরিয়েছে।

আর সামনেই বনতুলসি, সরলবর্গীয়র ফাঁকে ফাঁকে হলুদ কালো ডোরাকাটা চন্দ্রবোড়া ফুল তুলছেপদাবলী গাইতে গাইতে। আর একটু ক্ষণ। এরপরেই অলকানন্দা মন্দাকিনী মন্দাকিনী অলকানন্দা একাকারে ফুসে উঠবে।

উত্তরাখণ্ড যাবে মধুমেহ, প্রদাহে, প্রবাহে ......


।। ওক পাইনের নীচে ঘাস জমি আর নীচে ঝোপ- জঙ্গল
তারও নীচে ভারতবর্ষ
এই রৌদ্রস্নাত চিত্রনাট্যে এক শতকের স্থির ছবি
খাড়াই ঢালের ঘেসোজমি
ভাঙা কাস্তে, তীব্র ইচ্ছে,  লাঙলে ফলানো শীত
লাফ দিচ্ছে অনির্দিষ্টে লাফ দিচ্ছে শূন্যতার ঘ্রাণে
পাহাড়ি রমণী জাগছে
লন্ঠন ও জোনাকি আবহ
তুমি জেগে আছ রাত্রি, সারারাত কাঠ পিঁপড়ের বিষ
রাইফেলে নিশ্চুপ

শ্রাবণের কবিতা ৫



 ঘুম
     -অনিন্দিতা গুপ্ত রায়

বর্ণমালার ভেতর মাথা তুলছে ভোর
  আলোদের অবাধ্য স্পর্শ

 বেঁচেথাকাগুলো স্পষ্ট বিন্দুমুখী হলে
 শিকড়বাকড় থেকে ধূলো ওড়ে
 ধূসরের দিকে যায় গানের খাতারা

এবার প্রথম থেকে লেখা শুরু

চৌহদ্দি পেরিয়ে ওই দূরে
অনতিক্রম্য থেকে ঘষে তুলছি আরম্ভ
আলজিভের মধুমঞ্জরী ছুঁয়ে এঁকে রাখা পটচিত্র
সারি সারি টাঙিয়ে রেখেছি ঘুমের আলগোছে

এ যদি স্বপ্ন হয়, জাগরণে কিবা সুখ বলো   





শ্রাবণের কবিতা ৪



নদীজন্মের কথা
-      শতাব্দী চক্রবর্তী

লোহার সিঁড়ির যেখানে আলো
আয়না দিয়ে সেই সিঁড়ি, হলুদ আলো
দেখতে দেখতে তার মায়ের শাড়ি
মনে পড়ে
নদীপাড়ের তাঁতিদের
মাকুর অস্থিরতাময় জীবন
সে দেখে কত জড়ি, রঙিন সুতো মিলে
তৈরি করল লতা, পাতা, নৌকো আর ঘোড়া
লতা বলতে মাধবী
পাতা লজ্জা
নৌকো পেটে নিয়ে বয়ে বেড়ায়
এই টান, লজ্জা দিয়ে জন্ম হয় ঘোড়ার
খুরের আওয়াজ বালিশে মাখিয়ে
দেখে নদী কাঁপছে
ঘোড়া ছুটছে আয়না ভাঙা কাঁচের ওপর
যেখানে দৃশ্যে জমছে মায়ের হলুদ শাড়ি পরা

শ্রাবণের কবিতা ৩



মোটা পর্দার মতো মেঘটা দুলছে
                  -ঊষসী কাজলী

মাঝে মাঝে দেখতে পাচ্ছি
তোমার বাহু.. ভেসে আসছে নৈঃশব্দ
হয়তো তুমিও, আমার অকারণ পায়চারি
অংশত দেখে পিয়ানোর কথা ভাবছ
আমাদের কলেজস্ট্রিট, শিয়ালদা, যাদবপুর
ভগ্নপ্রায় সেতুর মতো দুলছে

দুপুর আর বিকেলের মাঝ বরাবর
যে বৃষ্টিটা আধভেজা করে গেল শহরটাকে
সেখানেই আমরা
একটা ট্রাফিক সিগন্যাল খুঁজছি। 

শ্রাবণের কবিতা ২



মিতাসু-৩
         -পার্থসারথি

পাও-এর পা-ও টপকাচ্ছে
        এসরাজ-বিয়োগ

ঘুম ভেঙে আসা জিরাফ-এরা
ট্রেনলাইন-এ মাপন্ত, অসমিয়া মিনি জানে এ তুরুপের জমানো নীল

হাত ফস্‌কে জলজ অভিযোজনে তামাম মনচুর
জল পড়লেও কোনো পাতায় ঝড়ে না সুমি
              ওড়নায় মাঞ্জা লাগানো বৃত্তঘুড়ি
উড়িয়েছ                        যেখানে
কোন স্থানাঙ্ক নেই মাথা-বুক-পেট নামক দাসত্বের

রোমকূপের পঞ্চম ফেব্রুয়ারীতে শিশুবদল হলেও
সূর্যের ওঠারা আমিতে চুরমার
শুধু চাঁদ আর আসামের ব্যবধানে স্কুলপালানো

শ্রাবণের কবিতা ১




মুখরিত
      - রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়

অন্ধ একজনের সঙ্গে ধূপকাঠি ফিরির যে সম্পর্ক
ঠিক তেমনই বৃষ্টির সাথে আমার
চোখের পাতা বুঁজে যায়
বাসে প্রতিবন্ধীর জন্য বরাদ্দ জানলার ধার থেকে
বেদম হাওয়া আসে
ছাঁট আসে
কেউ তখন মুখোমুখি বসে
ভিজে যাচ্ছি বললেই
আমি তার মুখে ধরা ক্যাডবেরির
রঙিন মলাটের মধ্যে ঢুকে পড়ি
আমার সারা শরীরে চাকা চাকা দাগ ফুটে ওঠে
বর্গীর বদলে এরাই তখন পাড়াময় দাপায়
এক-দুমুঠো ধানও ধরা থাকে
আমাদের অভিধানে
বৃষ্টির মানে বুলবুলি লেখা হয়...

Saturday 6 July 2013

বর্ষার কবিতা ১০




যব
-শৌভিক দে সরকার


এই ক্রন্দনরীতিটিও আমাদের

বৈকল্যবিধি,ধাতুকল্প মেঘ আর ব্লেড
মেঘের শেষদিকে শ্লেষ ও যমক
ডানা উপড়ে নেওয়ার পর দুজন
লিঙ্গহীন মানুষ নিজেদের মুখোমুখি বসে ছিল
অতিক্রান্ত ভাষা আর চামড়ার পুনর্বিন্যাস
চৈত্র সংহারের পর অন্য একটি ত্রাণশিবির

আসলে ঐ উপজীবিকাটিও আমাদের ছিল
ভগ্ন হাওয়ার আড়ালে আমরা শুধু একটি
অতিরঞ্জিত দেওয়ালের কথা বলেছিলাম

বর্ষার কবিতা ৯




ইউফ্রেটিস

           -অনুপম মুখোপাধ্যায়



বাহু থেকে ধুলো ঝাড়ছি
চোখে এসে পড়ছে

ভেসে আসছে নিষ্প্রদীপ সম্ভাবনার সুর

ভেসে আসছে
সন্ধের উজ্জ্বল আজান

আরবআমীরশাহি থেকে এই জ্যামিতির শহর এই ২০১৩
এই সন্দেহ থেকে

কুয়েত ... নাকি ইরাণের মতো নয়
ইরাণ ... সে তো আয়নার মতো নয়  

?

ওই সুর
এই সুর হয়ে উঠছে

আর উড়ে যাচ্ছে মফসসলি বাদুড়ের ঝাঁক
ছুটে যাচ্ছে গেঁথে যাচ্ছে বিদিকের বুকে

এলোমেলো
লোমেলোএ

বাদুড়ের কি সংঘ থাকছে এই সন্ধেবেলায়
যখন

দিক থেকে ধুলো ঝাড়ছি ... ধর্মে এসে পড়ছে
ছুঁয়ে যাচ্ছে আমার লেখাকে

ধুলো আমার লেখাকে অভিষিক্ত করছে

আমার সংশয় আমার দেশ হয়ে উঠছে

আমার

লেখা

অসুখে আর ওষুধে ০ হয়ে উঠছে