Friday 9 March 2018

কুসুমাগমের আশ্চর্য ধারাবাহিকঃ হারিয়ে যাওয়া নব্বই- পর্ব ৮

Image result for abstract painting estonia

‘ফিরে পাওয়া মানে আবার হারানো শেষমেষ’
প্রলয় থেকে প্রলয়ে 
  - অনিন্দ্য রায়


বন্ধুত্ব হারায় না, নব্বই হারায় না ।
তবু, কেউ কেউ আজ আর আমাদের মধ্যে নেই । নব্বইয়ে কবিতাবন্ধু হারানোর যন্ত্রণা আমি প্রথম পাই তার কাছ থেকে ।
“ বিষণ্ণতা, ফিরে পাওয়া রুদ্রদিন
  আপনাকে যোগভাগের সরল নিয়ম
  শেখানো হলে শুরু থেকে  নষ্টামো
  সংক্রান্ত স্কুলিং-এর হাল হকিকত
  হানাদার বিশ্বাসগুচ্ছ হাতে নিয়ে
  মশারি গোটানোর প্রতিযোগিতায়
  বোনাসসমেত আইফেল প্রচ্ছদে
  জেগে থাকা আটজোড়া সিলভার দণ্ড
ও যাদুকরের আটরঙের কোমরবন্ধ
এবার আপনাকে শেখানো হবে
চিমনিবিহীন উড়ে যাওয়া এবং সরল
থেকে জটিলীকরণ, ফিরে পাওয়া মানে
আবার হারানো শেষমেষ
লাশঘরের দিবারাত্রি”
( ফ্রেম )
‘ফিরে পাওয়া মানে আবার হারানো শেষমেষ’, কিন্তু হারিয়ে যাওয়া মানে ফিরে পাওয়া নয়; জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে চলে যাওয়া তার ।
ছিল কিডনির অসুখ, গ্লোমেরুলো নিফ্রাইট্রিস আর শরীরময় ছিল অভিমান, ভালোবাসা, বিরহ ।
একটা সময় এই শহরেই থাকত সে, আমাদের একই বন্ধুবৃত্ত, সাইকেলে ঘোরাঘুরি, হইচই । তখন কলকাতা মাঠের স্টার স্ট্রাইকার সঞ্জয় মাজীও তার বন্ধু । অথচ সে নিজে কোনো আক্রমণভাগেই নেই । নির্জনতার ব্যাধি একটু একটু করে গ্রাস করছে তাকে ।
“ প্রতিদিন কিছুটা ছায়ার লোভে সকাল সাড়ে ন’টা
   প্রতিদিন কিছুটা সুগন্ধের লোভে
  নাক উঁচিয়ে সকাল সাড়ে ন’টা ।

আমাদের হাজার বছরের পুরনো সম্পর্কহীনতায়
বার বার ফিরে আসে সকাল সাড়ে ন’টার ডকুমেন্টারি
সকাল সাড়ে ন’টা মানে আলতো করে
মুখ নামিয়ে শিশুপাঠ থেকে বিরতি
সকাল সাড়ে ন’টা মানে যাবতীয় ফাইমরমাস
সকাল সাড়ে ন’টা মানে নির্দিষ্ট জনের
চিন্তা জড়ো হয়ে থাকা একটা গোটা হৃদপিণ্ড
সকাল সাড়ে ন’টা মানে পদক্ষেপের হিসেবে ।

আমাদের সবার জন্য আবার কোন সুগন্ধ
উড়ে এলে সাজিয়ে ভরিয়ে রাখব
সবকটি আলো হাওয়াময় আসবাব

এখন থেকে সময়কে সাজিয়ে রেখে শুরু
করব সকাল সাড়ে ন’টা থেকে
সকাল সাড়ে ন’টায় আরেকটা দিনের দেহগন্ধ
সকাল সাড়ে ন’টায় আরেকবার সমস্ত কিছুর জন্য
মনখারাপের ছড়াছড়ি ।”
( মৌমিতার জন্য প্রথম কবিতা )
 সে প্রলয় মুখোপাধ্যায় ।
‘দুঃখ যন্ত্রণার কাটুম-কুটুম’ প্রকাশিত হয় ১৯শে জানুয়ারি ২০০২-এ, সে তখন আমাদের মধ্যে নেই। বইটি প্রকাশ করেন ‘কবিতা দশদিনে’র পক্ষ থেকে রাজকল্যাণ চেল। প্রচ্ছদ- ভারতের গুহাচিত্র অনুসরণে স্বরূপ চক্রবর্তী ।
এই তো কদিন আগে আরেক প্রয়াত কবির স্মরণসভা থেকে ফেরার সময় আমি রাজকল্যানদার বাড়ি থেকে বইটি সংগ্রহ করি। প্রলয়কে, কবি প্রলয়কে যেভাবে আগলে রাখতেন রাজদা আজও প্রলয়ের বই সেভাবেই যত্নে রেখেছেন । যেন এক প্রলয় থেকে অন্য প্রলয় অব্দি ।কেয়ামত সে কেয়ামত তক - এই রসিকতা ছিল তার সাথে আমার দেখা হলে, তারপর ছিল জড়িয়ে ধরা ।
“ পরিচ্ছন্নতা গিলে খায় সবকটি আতরসন্ধ্যা
  অক্‌টোপ্যাডে নৃত্যরত সৌন্দর্যসকল
  চাবিখোলা থেকে বৌখেলা মধ্যরাত্রির কনসার্ট
  অ্যাকাটিং  জোন থেকে বোতলঘর ও
মাইক্রোস্কোপিক ছিটকলে ঠাণ্ডামেশিন
বিশ্বনাগরিকের ফিতোমুক্ত ছুরি
  ঘুম নাস ধরলে আপনিই বিশ্ববাউল একসাথে বলুন
‘উই আর নট অ্যালোন’ ।”
( সেলিব্রেট )
এতদিন পর তার কথা মনে পড়ে; মনে পড়ে তাহার কথা । কোন সে প্রলয়ে চলে গেল !
হারানো বন্ধুকে নিয়ে সবকথা একবারে বলা যায় না, হয়ত কখনোই যায় না, তবু পরের সংখ্যায় আবার প্রলয় ।

(ছবিঃ অ্যান্ড্রেস সুতেবাকা) 

কুসুমাগমের কবিতা ১৮

Image result for abstract painting new zealand

পর্যটন
         -দেবারতি চক্রবর্তী


বড় রাস্তা হেঁটে শেষ করেছি
এবার পাহাড়ের দিকে
ধোঁয়া ধোঁয়া চোখ আর সবুজের ছোঁয়া

এবড়ো খেবড়ো গ্রাম ছেড়ে সমান্তরাল বাস
পাখির সঙ্গি হয়ে আকাশ পাড়ি
মাছের চোখে জল দেখা।
যা বলেছিলে

কথায় এড়িয়ে গিয়ে
গল্পে কৃত্রিমভাবে
চিঠিতে আমাকে ধরা দেয়।

(ছবিঃ টিমোথি জোন্স )

কুসুমাগমের কবিতা ১৭

Image result for abstract painting syrian artist

রাগ
       -সুতপা চক্রবর্তী 


১.

অভিশাপের আরাম কেদারায় বসে মেয়েটি ধরে বৃন্দাবনী সারঙ

বাদী রে সমবাদী পা এর চোখে তখন ও ঘুমঘোর...

২.
জোছনা বৃক্ষের পাতায় জল পড়ে আপেলের জন্ম হয়

হিজল নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ইভ অপেক্ষা করে সূর্যাস্তের


(ছবিঃ সান্দ্রা বুসিচেভিক )

কুসুমাগমের কবিতা ১৬

 Related image


একটাই সাদা দৃশ্য 
           -নীলাব্জ চক্রবর্তী



মাংসের ভেতর পুঁতে রাখা গানের টুকরো
কৌতূহলের টুকরো
ঠাণ্ডা একটা অভ্যেসের দিকে
গড়িয়ে
মেলা থেকে একটা বাস মেলার দিকে
বাসের মতো
কবিতার মতো একটা কিছু
দীর্ঘ কথাবার্তায়
আয়নায় জল ফিরে যাচ্ছে
হ্যালো স্তন
ভাষার দিকে চলে যাওয়া একটা লাল গাড়ি
ভাঙা ভাঙা ছায়ার দিকে চলে যাওয়া
চৌকো একটা দিন
এই তো ফ্রেম অর্থে
একটা সরল গাণিতিক প্রস্তাবনা
সরে যাচ্ছে
ভোজসভায় উড়তে থাকা চাদরের সাথে
একটাই সাদা দৃশ্য
টেনে নিয়ে আসছে অক্ষরেখা বরাবর...


(ছবিঃহেলেন আব্বাস ) 

কুসুমাগমের কবিতা ১৫

Image result for abstract painting turkey artist

জাতিস্মর 
            - অ নু স ঞ্জ না ঘোষ

তোমার উঠোন পেরিয়ে আমার এই জানালা।
জানালা অর্থে গোটা পৃথিবী। জানালা আমায় ঘুম পাড়ায়। গোটা রাত আগলে রাখে নরম আলোতে। চোখ ভিজে যায় আকাশ দেখতে দেখতে। তরপর এক সময় পুরোনো সুর আমায় গ্রাস করে। কখন যে আমি ভূগোল হয়ে পড়ি শহরের কোলে মাথা রেখে জানতেই পারি না। ধীরে ধীরে আবার কাছে চলে আসে পূর্ব। আর একদল তুলতুলে বাতাস আমায় জড়িয়ে ধরে । ভোর, তবু ভোরের আলো মাখিনি তখনও। চাদরে মুখ গুজে পুরোনো শহর মাখছি, ব্যস্ততা মাপছি পায়ের পাতায়। এখানে এখন কোকিল ডাকছে, বসন্ত কোকিল। কাকগুলো বাবার মত, ঘুম থেকে ডেকে তুলছে। শত ব্যস্ততা নিয়েও আমায় আগলে রেখেছে এই শহর। সিমলা স্ট্রীটের পুরোনো এই বাড়ীতে আমার পুনর্জন্ম লেখা।

জাতিস্মরের মতো খুঁজে বেড়াই আমার গতজন্ম।


(ছবিঃ শ্রীকান্ত কদম)

কুসুমাগমের কবিতা ১৪

Image result for abstract painting turkey artist


মধুচন্দ্রিমা
           -অভিশ্রুতি রায়


এই জন্মজ্বর খুঁড়ে খুঁড়ে
পালক থেকে যেভাবে আবিষ্ট
কেড়ে আনছো
তার জল, তার নাভিকোশ
অনন্ত থেকে কালের বিরাম দিচ্ছে
অস্বস্তি জুড়িয়ে দিয়ে
আরও ভান, আরও দেহ যাপন দীর্ঘ হয়ে বেড়ায়
যেভাবে ললাটকে আরও রক্তপূর্ন ভালো লাগে
সেই লাল, সেই করজোড়ে
রাত্রিবাস করবে পলাতকেরা
স্পর্শ কামড়ানোর মতো করে
এই পাঁজর নতজানু হবে
কত আবছায়া অস্থিরতা গিলে
গোপন করবে অন্তঃসত্ত্বার মধুচন্দ্রিমা

(ছবিঃঅ্যালেনা শ্যামকোনাক ) 

কুসুমাগমের কবিতা ১৩

Whirling Dervish 2 -- #Turkish #Painter #Artist #Gonul #Akin

প্রেম, তোমার কবিতাসকল-১
                   -জ্যোতির্ময় বিশ্বাস


গালের ওপর স্নায়ুর অসুখ নিয়ে আমি
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি এখন। আর
ভাবছি, এ মধ্যরাত এই সাম্রাজ্য এহেন
সৈন্যদল একটিবার তোমাকে দেয়া যেত
যদি।



(ছবিঃ গোনুল অ্যাকিন )

কুসুমাগমের কবিতা ১২

Related image

বসন্তচর
             -অভ্রদীপ গোস্বামী

হাওয়ার ভেতরে খুঁজি সংরাগ। বসন্তকোলাহল।
হাওয়া ভেঙে যায় ভেঙে যায় শিমূলে পলাশে
যেভাবে গালের ওপর থেকে একদিন সরে পড়ে
প্রথম বান্ধবী র দোল। প্রথম বান্ধবের চড়।

হাওয়া নেই। কথাকলি নেই। মল্লার নেই।
বসন্ত আছে। আর আছে হইচই। বসন্তকোলাহল
বসন্ত আছে জরায় জরায় আর দীর্ঘ প্রত্যাখানে
বসন্ত নেই। আছে কিছু ফাঁদে পড়া কোকিলের বিবর্ণ
আওয়াজ। আর হাওয়াদের নুয়ে পড়া পলাশে আবীরে।



( ছবিঃ নেজাদ মেলিহ দেবরিম) 

কুসুমাগমের কবিতা ১১

Image result for abstract painting turkey artist

পশমিনা 
       -শিবু মন্ডল

পুণ্যার্জনে সমুদ্রের নদীতে গমন। সমুদ্রই বটে,
ষ্টেশন থেকে হর-কি-পৌড়ি সারাবছর একই রকম ।
ব্যারিকেড ডিঙিয়ে যায় বাইক চড়া বাবাজী
মহেশ্বর ভিড় সামলায়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে।

গেরুয়া রঙ মেখে বাসনার মেঘ জমতে শুরু করেছে
পথের ওপারে পাহাড়ের উপর যেদিকে ভিড় গেছে।
নিচে ঘুমিয়ে আছে পশমিনা, ভেজা আদর মাখা গায়ে।

ভিজবে তুমি জানি, এ মেঘ তোমায় ছুঁতে চাইবেই
ছলে বলে কৌশলে।
দোকানদার বুড়ো অন্তর্যামী জেনে যায় – সেই
পশমিনার খোঁজে অন্য দোকানেও ঢুঁ মেরে ছিলাম আমি,পাইনি।
খাদি-বুড়ো গুদাম খুলে দেখায় একটার পর একটা
দামি দামি পশমিনা । রঙে তারাযে বাহারি নয় অথচ
হাতের সুক্ষ্ম কাজে কত দামি! মন ভেজে না
আমি খুঁজি তোমার সেই অভিমানে ভেজা একমাত্র পিস্‌টি-যার
গায়ে তুমি নিজে হাতে ফুটিয়ে তুলেছ ব্যথাদিন আর
ব্যথারাত্রির পল্‌ গুলি।আমি ফিরে আসি। জানি তা
কোনো দোকানে পাওয়া যাবে না।
তোমার রিংটোন বাজে ! কথা দাও তুমি, আসবে!
তুমি আসবে সেই মেঘ কেটে গেলে ।



(ছবিঃ মাইক উইলিয়ামস) 

কুসুমাগমের কবিতা ১০

Image result for abstract painting tibetan artist

ধরুন , ঘোড়ায় চড়া  লোকটির নাম রেবন্ত ...
                                            -প্রদীপ চক্রবর্তী 

এক/

খনন ...
ভেতরে ভেতরে চড়ুইয়ের খুঁটে খাওয়া |
হিমশৈল ঠেলে ধূপধুনো নীল কথাগুলো
এঘর ওঘর ঘুরে কার শরীর ,
কার বন্দুক ,
কার বাঁধাগৎ ,
                         তাঁবেদার ...

  কন্টিকারির জঙ্গল ঠেলে
প্রশ্ন অনেক ...
ফুটন্ত হরিণা মাংসের পাকা রাঁধুনি সে
সওদা চাই | দক্ষ রাজমিস্ত্রি পাতিলেবু কাটে ...

সহবাস ভানতে শিবের কারা গাইছে হেমগীত
পরিযায়ী ঘোড়াদের আস্তাবলে লালা ঝরে
                                               ক্রিয়াপদের পর


দুই /

অববাহিকায় কত জল
খাঁড়িপথে বিধ্বস্ত বনের ছোঁয়া লেগে
অসংশোধিত নষ্টতা |
এতো চন্দ্র সম্পদ | তেজ ধাতু |
গূঢ় মলিনতার রাজপাট থেকে সতীর্থরা
একে একে নিয়েছে বিদায় ...

ছায়ার মুখোমুখি নিজের খেলনা যেন সব |
ছায়া - খোচর | পাহাড় স্যিলুয়েট |
বনবাসী কাঠুরের বৃষ্টি বাদল |
মনকে পাঠিয়ে দিচ্ছ ধোপার বাড়ি
রঙ টেকানোর জন্য ,
হরিদাসের গুপ্তকথা মনে পড়ে ...

প্রেম কি এসেছিলো কায়াতরু ডালে ?
ধুম্রকেশী শবরীর পেটের শত্তুর
এক শিশ্নোদর ভরে এনেছিলো কঠোর আগুনে
এক বালক কিম্পুরুষ
                  ভল্ল তুলে বেঁধে নি কি তাকে ?
জীবন বিজন আততায়ী
           এক ধাক্কায়  খুলে দিলো নগর ...



(ছবিঃজিনসেং ইয়্যু )

কুসুমাগমের কবিতা ৯

Image result for abstract painting chinese  artist

ফাল্গুন
              -পিয়াল রায়

কাছে এসো,
খুব কাছাকাছি এলে পাখিদের গান
বেজে ওঠে সমতট জুড়ে
তুমি তো নিশ্চয়ই এটুকু বুঝেছো
নেই বললেও অনেককিছু তখনো থেকে যায়
যেমন ঝরা পাতার দিনেও লুকিয়ে থাকে
আসন্ন কিশলয় যুবতীবৃৃক্ষের

 কাছে এসো,
 খুব কাছে এলে  ভাষার আমূল অর্থ
স্পষ্ট হয়ে ওঠে
তুমি তো জানো
অবুঝ ভাষার ভিতরেও থেকে যায় অন্যকথাটি
যেমন খরতাপের দিনেও
মরুভূমি বুকে থাকে ফল্গুস্রোতা নদী

এসো তবে,
উদযাপন করি ঘরে ফেরা
নইলে উৎসবের এ আয়োজন বৃথা
যেভাবে বৃথা হয়
প্রতিমায় প্রাণদান চক্ষুদান ছাড়া



(ছবিঃ জুচেং হান )

কুসুমাগমের কবিতা ৮

Related image

নিয়নকুসুম 
                 -রাজেশ শর্মা


গ্রহণের দিন শেষে ছায়াপথ নয়ানজুলি থেকে স্নান সেরে উঠল যে ফসফরাস মেয়েটি

আতসকাচের বৃষ্টি ঝরতে লাগল তার পশম পশম চরাচরে...





(ছবিঃ গেরহার্ড রিখটার ) 

কুসুমাগমের কবিতা ৭



বিকেলের সেলুন 
                        -রঙ্গন রায়


কথা হচ্ছিল কিউবা নিয়ে , ভোরের আলো
হৃদপিণ্ড রংএর ভিতর থেকে ছিটকে আসছে
জন্মান্তর ... আমাদের কথা হচ্ছিল
সেলুনের ভেতরে বসে। আফটার সেভ
লোশনের গন্ধ ... পাখি উড়ে যাচ্ছে
অনন্ত আকাশ দিয়ে
সবুজ পাতার সাথে ব্লেডের দূরত্ব
মাখানো ফেনা , কুচিকুচি চুল
গেঁথে আছে নরম স্পঞ্জের গায়ে -
ডায়েরি ফেলে রেখে ধীরে ধীরে
ফিরে যাচ্ছেন বিকেলের পরের আলো গায়ে নিয়ে
স্পেস বেড়ে যাচ্ছে ট্রামলাইনের পাশে


 


(ছবিঃ নিকোলাস পেগু)

কুসুমাগমের কবিতা ৬

Image result for abstract painting bangladeshi painter

সম্পর্ক
     -সুপর্ণা মণ্ডল


সমস্ত অরণ্য ঠেলে ধরছে একটি নদীকে
সমস্ত নদী ঠেলে ধরছে একটি আঙুলকে
আঙুলের মুক্তাখণ্ড নদীর কেউ নয়, অরণ্যে র কেউ নয়
তার সঙ্গে সমুদ্রের সম্পর্ক।

সমস্ত অরণ্য ঠেলে ধরছে একটি নদীকে
নদীতে ভাসছে কার এলোচুল
সমস্ত চুল যেন তারকাখচিত
তারাগুলো নদীর কেউ নয়, অরণ্যেীর  কেউ  নয়।
তাদের সঙ্গে মহাকাশের সম্পর্ক।


(ছবিঃ এমিল বিস্টট্রাম) 

কুসুমাগমের কবিতা ৫

Image result for abstract painting bangladeshi painter

বসন্তের অভিনয়
                -তন্ময় ধর

নির্ধারিত মহড়ার পরিবর্তে আমরা কথা বলেছিলাম
সেখানে ফুলের নামে বানান ভুল ছিল

চিহ্ন ও আলোর জাদু পেরোলেই
আমি গুহাচিত্রের শেষ রক্ত

ব্লাড রিপোর্টের দুর্বোধ্য অংশ থেকে
বসন্তের দেবী রক্তপলাশ তুলছেন

ভ্রূণহত্যার ভ্রূ থেকেও তাঁর হাসিতে
এখন বসন্তবৌরি উড়ছে

অডিটোরিয়াম নিভিয়ে রেখেছে চান্দ্র দেবীপক্ষ

এখনো ব্লিডিং শুরু হয় নি।।








(ছবিঃ লী রেনল্ডস)

কুসুমাগমের কবিতা ৪

Image result for abstract painting bangladeshi painter

প্রেম - ২
       -নীলাদ্রি বাগচী

যে দূরত্ব মফস্বল
আমি তাকে মোমবাতি বানিয়ে ফেলেছি

 জ্বলে যাচ্ছে,
যেন হিন্দি গান...
পা নামানো দুর্বলতা ঝুঁকে আছে রেলিং কিনারে...

 মৃতের বন্ধুত্ব নিয়ে ফিরে আসছে ত্রস্ত সৈনিক....

(ছবিঃ হাশেম খান) 

কুসুমাগমের কবিতা ৩

Image result for abstract painting abanindranath thakur

নাড়ির টান
      -উমা মন্ডল

আজ সূর্যটা ভিজে জল থেকে উঠে এসেছে ,
কৃষ্ণচুড়ার পাতায় ড্যাম্পের দাগ
চোখ রাঙায়।
কালো চশমা কি দুঃখতারণ মধুসূদন
তাহলে তুলসী দেবো পায়ের পাতায়।
তবুও টান এগিয়ে চলে জলের মতো ,
প্রায় মুছে যাওয়া পা
 নাড়ির সুতো ধরে এসে বসে।
 কলার পেটোর ওপর ঝুরো গাঁদা
 স্তব পাঠ করে ,
থালা ভর্তি মিষ্টান্ন আসে
 ঋণ শোধ করার ছলে,
তবুও কেঁদে ওঠে!
  নেহাতই নতুন অভিনেতা
মঞ্চের অন্ধকারকে জয় করতে শেখেনি।
আরও স্রোত আসে অকাল-বেলায়,
চোরাস্রোতে ডুবে যাওয়া ডিঙি নৌকা যে হারিয়ে যাবে এ লিখন চিরন্তন।
ঘষে ঘষে তুলে দিতে চায় সাদা বরফ,
রক্ত যদি জমাট বাঁধে
 তাই চেপে ধরে।
কালচে অধ্যায়ের জীবন-পঞ্জিকা আরও কঠিন
জটিলতা বেড়ে যায়।
 বহুভূজে প্রত্যেকদিন নতুন একটা ক্ষেত্রফল উড়ে আসে,
গায়ে লেখা লুপ্তপ্রায় কিছু শব্দ
এখন অশৌচ সমাপ্ত করতে বাধা নেই,
জন্মান্তরের পাঠ পড়া হয়ে গেছে।
তবুও যদি আকস্মিক-
 বন্ধ্যা আগ্নেয়গিরিথেকে উঠে আসে,
তার আগেই সমস্ত চিত্র অঙ্কণ করে রাখেন
ভ্যান গঘ....

                       



(ছবিঃ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর )

কুসুমাগমের কবিতা ২

Related image

বর্ণপরিচয়
            -কৃপা বসু

হলুদ

   অপেক্ষার বাড়িরা শীতের রঙ মেখে বরফ হওয়ার আগেই, ফিনাইল গন্ধে ভরে যায় ঘর।জানলা খুলে চুল মেলে দিই কার্নিশে। মাগরিবের ধুলো ছুঁয়ে পুতুলঘর থেকে উড়ে আসে ঝিমধরানো আলো। ঠোঁটে,মুখে,চোখে মেখে নিই আলোর পবিত্র স্নান।

  অ্যাসফোডেলের চিবুক বেয়ে ঝরে পড়ে ঘাম।মৌনতার ভেতর ঘুরতে থাকে হলদে স্মৃতির আর্মেচার।

লাল

   টার্টারাসের পাশে জেগে ওঠে অন্ধকারের সিংহদুয়ার। মেঝেতে শুয়ে থাকা মৃতদেহের সারি,বারবার টিমটিমে লাল আলো ভেবে ছুঁয়ে ফেলি ভুল করে। শিয়রে চুপিচুপি বসে নিরামিষ আয়না।

  শিশিরের নাভি চিরে ছুটে চলে রাতের ট্রেন।

সাদা

গঙ্গাস্নান সেরে ফেরা থান পরিহিত স্ত্রীলোক দেখলে, বোগেনভেলিয়ার চূড়ায় ভেঙে পড়া মেয়েলি চাঁদের কথা মনে পড়ে।

মধুক্ষরা জোছনা বিলিয়ে নিঃস্ব হতে শেখায় সে আলো।

বিধবা ভাতের গায়ে জমাটবদ্ধ মাখনের স্তর।

লজ্জাবস্ত্র ছিঁড়ে কেউ কেউ
প্রিয় বসন্তের খোঁজ করে এখনও বিষভান্ড ভেঙে।

আসলে সাময়িক ঢেউয়ের সাদা সুতোয় ঘর নয় গোটা সংসার বুনে ফেলে অনেকে নির্দ্বিধায়।


কালো

 শঙ্খমেঘে ঢেকে যায় বিবিক্ত আকাশ।
পাথরে পাথরে গাঁথা জীবাশ্মের প্রিয় ভাষা।

সরসীকোলে নিভে আসে সোমগন্ধী প্রদীপ।


  বাইরে ঝরে পড়ে হিমের কুঁড়ি লুকিংগ্লাসের গায়ে।
ভিতরে সাপের পোশাক বোনা হয় পুরুষ্ট শীতের উলে।

তিলং রাগ সন্ধ্যাকালীন এক অসুখের নাম।


  জানলার কাঁচে জমা টাটকা স্মৃতিফুল।
লেবেল সাঁটা দুধের দামে জলের প্যাকেট কেনে কৃষাণি।

দূরে কোনও এক চিলকন্যা নো ম্যান্স আইল্যান্ড দেখবে বলে ছোঁকছোঁক করে।

(ছবিঃ সুরেশ তালোর )

কুসুমাগমের কবিতা ১

 Image result for abstract painting gaganendranath thakur

ব্যক্তিগত তৃণগুলি 
                      -পিয়ালী বসু ঘোষ 

শেষ কবে রাতের ভিতর রাত দেখেছি মনে নেই ।মনে নেই আমার শরীরের ভিতর অপেক্ষার পয়গমগুলো শেষ কবে চাদরে ঢেকে ঘুমিয়ে পড়েছি অবশেষে ।শেষ কবে কবিতা গদ্যের শরীরি বিভাজিকা মুছে নতুন সন্তানের স্পর্শসুখ পেয়েছি.....মনে নেই। মনে নেই,কিচ্ছুটি মনে নেই ।

ব্রিফকেস ভর্তি সোনার বিস্কুটের মত টুকরো টুকরো মন চিকচিক করছে লোভে,স্পৃহায় আর আদর নামক আশ্চর্য মোহের দাগে । একটা মেঘলা বারান্দায় আজন্ম বসে আছি নিমগ্ন ।সেই নিমগ্নতার গায়ে ছোট ছোট ফ্রিল করা সাদা লেস বাতাস লেগে দুলছে । এমন গল্পগুচ্ছের বিকালে মুঠোভর্তি অসুখ কবিতা হয়ে উঠতে চেয়েও পারেনা ।একক আত্মনিষ্ঠ মৌল এক ভাষাদেহ কপট চিত্র আঁকে ।মুছে যায় বেলা অবেলার নির্বিকল্প প্রহরা ।নিদ্রাহীনতার চেয়ে গাঢ় কিছু, কুচফলের মত বাটোয়ারী জীবনে গা-ধোয়া জলের রঙে নেমে আসে । মুছে যায় ছলাকলা,প্রহরা।

গত রাতের তিন পেগ ম্যাজিক সীমান্তরেখা মুছে হুশ করে ঘুরে আসে পৌষের ভাঙা মেলার দাগ খুঁজে । বাঁশি পড়ে থাকে ধুলায়....ডাঁট ভেঙে যায় কলমের। হাতফেরতা ছলটুকু আশিরনখ রোমাঞ্চ আনে ।বন্যা নামে অসময়ে....ভেসে যায় প্রগাঢ় কিছু অসুখ ..ভেসে যায়  কুচফল সুখ ।

(ছবিঃ গণেশ হালুই )