Friday 18 October 2013

কোজাগরী কবিতা ৭


আবাহন
-অনিন্দিতা গুপ্তরায়

প্রত্যহ মানে তো একেকটা দিনযাপনের আলোকথা
ছিটকে ওঠা গোল হোঁচট, পাথুরে
টপকে যেতে ব্যথাময় আঙুলের নূব্জ্যতা
কিরকম কাঠিন্য সরে যায় এইমাত্র নরমে
কতদিন পর পাশ ফিরলো শ্রুতিগ্রাহ্য বিনিময়গুলি

ডানা ঝাপটানো এঁকে নিতে প্রভূত আয়োজন
বিভাবরী হয়ে ওঠা রাত্রি, পর্দার নড়ে ওঠা লক্ষ্য করে
কাঠামোয় মাটি আর তুলকালাম নামছে কোমল নিষাদে
ডোবানো জিভ ছেঁকে তুলছে স র গ ম এর স্পর্শস্বর

ক্ষতস্থান ছুঁয়ে ফেলে মধ্যরাতের ট্রেন
দুই চোখের মাঝামাঝি ফাঁকা
মানে ভ্রুমধ্য কালপুরুষ সাজিয়ে
ফুরিয়ে আসা সময়ের মুখোমুখি কেঁপে কেঁপে ওঠে

আবাহনে জৈব মাটিরা বড়ো ম্লান, অপ্রতুল
এই আমি মস্তক পাতি
তোমার তৃতীয় চরণখানি রাখো

কোজাগরী কবিতা ৬


প্রথম ভোগ
-তন্ময় ধর



ঠোঁটের ওপর একটি অপেক্ষার আকাশ তৈরি হয়
প্রাণাগ্নি
মধ্যরাত্রির ভাতে গভীর দারুচিনি

পৌরুষের স্টিকার আমি খুঁটে ফেলি প্লেটে

দেবীর জিভ থেকে একটু হাসিই ওমলেট হয়ে যায়
আর
ভাতের অহঙ্কার পেরিয়ে
আরেকটু গরম আলো

স্বাদের মতো
খুঁজতে থাকে
স্মৃতিহীন

হাত ধুয়ে ফেলি,
গহন প্লাসেন্টাল নখে ঘুম আসে না

হাতের গন্ধের ওপরেই
ভোরের বয়স কমিয়ে দেয় কেউ

এই অনূর্দ্ধ চব্বিশ
আর

ওই অনূর্দ্ধ চব্বিশ



কোজাগরী কবিতা ৫


গ্রন্থি
-    শৌভিক দে সরকার

অবলোকিত মাসগুলি গেল

চিহ্নধারণের স্বর ও উপক্রমণিকা
দৃষ্টির নৈরাজ্য পার হয়ে ফুটে উঠল
শয্যার বিভঙ্গ আর প্রোথিত মেঘ
স্বাচ্ছন্দ্যের অন্যপ্রান্তে আমরাও
উলটে দেখলাম একটি অসংলগ্ন ঘ্রাণ
ব্যাহত কারুকাজ, যৌনতার সকাল

অযুত বৃষ্টি

বৃষ্টি গড়িয়ে গেল জলবিভাজিকার দিকে
সন্তাপের শেষদিকে ভারি হয়ে উঠল
কন্ঠার হাড়, শ্বাসনালীর দায়ভার

গাঢ় আঁচড়

নিমিত্তের পাশে পূর্বাপর নীল
অশ্রুগ্রন্থির পাশে উড্ডীন চাদর
সংসার, যাবতীয় পেন্সিলের দাগগুলি
মুছে দেওয়ার পর আমরাও দেখলাম
রোদের জরদ, অপসৃত মেঘের নীচে
হস্তান্তরিত অলৌকিক, অশ্রু ও রক্তকণিকা

কোজাগরী কবিতা ৪


ডানা
-সুবীর সরকার

ভ্রমবশত ভ্রমণ ও ভ্রমণের গানগুলি
অবস্থান পালটানোর চিরায়তে
ঋতুগুলি আসে যায়,
ঘুম আসবার আগে তন্দ্রা
সাদা রঙের ডানায় আদ্যন্ত
মশগুল

কোজাগরী কবিতা ৩

শিয়ালকাঁটা 
-দুর্জয় দাস

মাথায় লেগে আছে কাঁচারঙ
হাওয়ায় মাথা নাড়ালে
দিন ভাঙতে ভাঙতে   রোদ্দুর তোমার কাছে এলো
তোমার সোনামুখ দেখে       একা দাঁড়িয়ে আছে শহরপথ
এভাবেই কারোর পাশে রাত থেমে যায়
রাতের গভীরে কেমন শূন্য থেমে যায় 

কোজাগরী কবিতা ২

আয়নামহলের টেক্সটগুচ্ছ
-সোমতীর্থ নন্দী


এক বিস্তীর্ণ নানুকের মত আমার জুতো পড়ে থাকে ভালোবাসার ধারে
তোমার প্রাজ্ঞ্যতা আমার সমস্ত নিবিড় জুড়ে
সাত সওদাগরের মৃত্যমুখ দেখিয়ে থাকে,
আট রাস্তার পথ হেঁটে যাই আমি, আমার একেলা ছায়া
পড়ে থাকে তোমার অনন্ত আসবাবে...


নীল আলো শুধু তোমার ঘরে
রাত ভোলানো ওগো বন্দনাগান,
কুদরতী খিদের স্বপ্ন
শেকল বাঁধার সেইসব নীল আলো ফুটে থাকে
তোমার আলো, বেঁকে যাওয়া সেইসব
নাভির আয়না...

কোজাগরী কবিতা ১


সভ্যতা থেকে হারিয়ে যাওয়ার পূর্বে যে গানগুলি গাওয়া হয়েছিল
       -অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়

ছাদ #

শেখ মুজিবের চোখ পরিপাটি ছিল
দেবদারু পাতার গন্ধ চশমার কাঁচে
মোজার তলা দিয়ে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র
কার্নিশে রেডিও আর ছাদে রাখা সামার অফ সিক্সটি নাইন

স্বাধীনতা ঘোষণার পরদিন থেকে ওপারের সমস্ত গাছগুলোও বাঙালি হয়ে উঠেছিল এপারের বাতাস নতুন সন্দেশ নিয়ে দিনে দুবার করে পূর্বনির্ধারিত স্থানে সংঘর্ষ সেজে উঠছিল যেমন বীরেন্দ্র ভদ্র ; সর্ষে বাটার রঙ থেকে তৈরি হচ্ছিল আগ্নেয়াস্ত্র ঘরে ঘরে নোড়ার শব্দ ছাপিয়ে গেছিল বিউগল
পাজামার ঘের ছোট করে তৈরি হচ্ছিল দৌড়
ডাঁসা পেয়ারার সবুজ নিয়ে পতাকা উড্ডীন
দুর্গম স্থানে জলের ওপর তৈল দিয়ে সেতু নির্মাণ
রণক্লান্ত আমিকে উঠিয়ে পাশের বাড়ির আরেকটা আমি,
জবাফুলের বাগানে শিবির :
পরদিন ভোর ভোর না কাটা নখের ভিতর মাটি নিয়ে
উড়ে যাচ্ছিলাম অনেক অনেক আমি :
যারা সবাই পরশুদিন পান্তাভাত থেকে উঠে
মাথা উঁচু করে কাঁধে তুলে নিয়েছিলাম আস্ত ব্রহ্মপুত্র