Sunday 16 December 2018

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৬

Related image


আঁটো কবিতার ফিলিং 
                               -নীলাব্জ চক্রবর্তী



শোক
তাঁকে অভিজ্ঞান দিয়েছেন
ভাষার ভেতর
মাঝবরাবর পড়ে থাকা
অধিবৃত্তের সমীকরণ আর লোকাস দিয়েছেন
সম্পর্কপ্রবণ
মাংসপ্রতিমার গায়ে এঁটে থাকা
এই এক প্রতিমাংসল ফ্রেম
দেবশর্মণে দেবে দেবান্তে
মৃত শব্দদের পোশাক বদলানো হচ্ছে তখন
আর
সূর্য পড়ছে
পাতাদের চোখে
আঁটো কবিতার সেই ফিলিং পড়ছে...

( ছবিঃ তেলোহ্‌ প্রি-কিউনিফর্ম  মৃৎলিপি, সৌজন্যঃ লুভ্‌র মিউজিয়াম )

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৫

1

দুটি দৃশ্য
             -সুপর্ণা মণ্ডল


১.

কি বলবো আর
সব কথা উবে যাচ্ছে দৃশ্যা খোলা পেয়ে
উবে যাচ্ছে দিন

রক্তিম কিছু স্যান্ডেল আর অনবরত চড়াই
একদিকে ভাঙছে একদিকে গড়ছে কারিগর
ইঁটের উনুনে ভাত টগবগ করে ফুটছে।

অন্ধ হলেও বা কি বলার থাকত
যা অনুভব করছি তা-ই ছাড়া!

২.

কোথায় যাচ্ছি কি করছি
অভ্যােস চালিয়ে নিচ্ছে
আমি চলছি না সবসময়
আমাদের খাওয়া কখন শেষ হয়
কাকেরা তা জেনে যায়
শিশুদের লুকোচুরি খেলার মাঝে
হঠাৎ হারিয়ে যাচ্ছে কেউ
শিউলিফুল মাড়িয়ে
গানের স্কুলের পিছন দিয়ে
একটা ইঁদুর চলে গেছে বলে
এপাড়ায় বিড়ালের গতায়াত বেশি।





( ছবিঃ উত্তর পাইসিন শিলালিপি, সৌজন্যঃ লিস্টভার্স )

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৪






ঘোড়া ও রমণী 
                          -প্রদীপ চক্রবর্তী


এক/

ক্রমশ মিশে যায় রক্ত ...

জগৎ যুগপৎ রক্তের আয়ু নিয়ে
                                 মাখামাখি করে |

মিশে যায় সুযোগের ব্যবহার |
ক্রমশ শূন্য বিস্তৃত , ব্যাপক স্পন্দনে ...

'ক্রমশ ' শব্দটা একটা পথ ,
বহুদূর থেকে অরব হ্রেষায়
শরীর জড়িয়ে ,
স্থবির কুসুমিত |
সরীসৃপ , ঘূর্ণিতে নিরুপদ্রব

একটি মুখের ফোঁটা |
অথবা , শিল্পীদের আদিম গ্যালারিতে
ঘোড়া এঁকেছিল তারা |

একটা পথ | পঙক্তির ভেতরে রাখা |
মনসিজ শ্যামশূন্য বীজ | ভৈরবী জ্বরা |
কে তুমি ? মৃত্যুফুল্ল ?
অরণ্যঘ্রাণের আদিম মৃগমাটি |
হরিৎসন্ধানী ,

নখদন্তহীন ফুল ফোটা শুনতে পাই ...


দুই /

ঘোড়ার ভেতর জন্ম নিচ্ছে বাদা ও জঙ্গল | পিপাসা দৃশ্যত উৎসর্গ | তরঙ্গ - তরণি - পিপাসা প্রাচী বীজের জিভে জড়ানো | ঝরা পাতা দুনিয়ার রঙ

জানি না এর শেষ কোথায় !
জগৎ পরিধি অগণন ঝরাপাতায় |
কত সহজ , কত হাত , খুনির কদরে স্বর্গীয় |
পীতপুষ্পরাগমণি নিয়ে এসো | নিয়ে এসো কৃশকায় রক্ষী |

এমন বিনাশমুখ চক্রবালে রমণী বিন্দু
ধীরে বাতাসে ভর করে তোমাকে জাগিয়ে বলবে -----
' ঈষৎ খেলা | অসংখ্য দেউল | জ্বলছে দ্রুত দূরযায়ী ' !
অহংএর নীচে চোরাবালি সূচনায় চলে |
তার আবছা ,
                 বৈভবে কাঁপে |
নিরুত্তরে | আঘাতে আঘাতে |
নৈঃশব্দে ,
         পরিযায়ী পিঁপড়ের মতো ...



( ছবিঃ লাগুনা তাম্রলেখ, সৌজন্যঃ ফিলিপাইন্স পুরাতত্ত্ব বিভাগ )

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৩

File:Ateshgah door 18 inscription.png

কবিতা,যা কবিতা নয় 
                       -জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী

(১)

অপেক্ষার মতো অবাধ্যতা আর কিছুতে নেই । বড় বেশি একরোখা,যাদের প্রেম ছেড়ে যায় ।

শীত,বরফ,কুয়াশা-এসব শব্দ নিয়ে আমি আর লিখবো না,ভাবি । লিখি খাদ,লিখি গড়াতে গড়াতে ছোট হয়ে আসা ।

প্রিয় প্রিয় ভ্রমণ,তোমায় বসিয়ে রেখে পাইনের বনে,জেনো এবছরও শহরমুখী হবো ।

খোঁজ নিও। গাছেরা তো জানতে দেবে না । আমাকে কি কিনে নেওয়া সহজ ভীষণ,জাদুমণি ?

(২)

চমৎকার কিছু লিখে ফেলবো, এ অহংকারে আমার আর লেখা হয় না । বিকেলের মুখোমুখি বসে ছ আনার দিন গুজরানে টুকে নিই সূর্যাস্ত,আকাশবাতি,পাখিদের ফেরা।

"আলস্য কি অজুহাত!  অজুহাত কি প্রিয় বিষয় নয় ?"

আমাকে পড়তে পেরে সবথেকে খুশি হতো যে,তার চোখে চোখ রেখে এটুকু বলতে চেয়ে দেখি,এক আস্ত জন্মদিন হাত থেকে পড়ে ভেঙে গ্যাছে ।

( ছবিঃ আতেশগাহ শিলালেখ, সৌজন্যঃ উইকি )

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১২

Related image

কমলালেবু রোদবার
                           -সুকল্প দত্ত


ছিঃকথা তুফান তুলে ম‍্যান্ডোলিনি ড‍্যানিয়েলা খাস্তগীর খাস্তা কচুরিপানা
আইব্রো কুশানযুগ,ছাঙ্গুভ‍্যালি সাজ
মিলি মিলি শেয়ারবাজারে
কত রং
নাম্বার ছড়িয়েছি আজতক
ড্রাইভে দুরু দুরু যেতে পারি
হাইওয়ে টলটলে টুল পেতে বসেযেতে
থলে হাতে কমলালেবু রোদবার।

( ছবিঃ পহ্লবী শিলালিপি, সৌজন্যঃ ব্রিটানিকা )

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১১

estampage-senarath-পারানাভিতানা-palumakichchava-শিলালিপি-Anuradhapura-শ্রী-শ্রীলঙ্কা-chandima-ambanwala-পুরাতত্ত্ব-LK-3

শ্বাসাঘাতের সাম্রাজ্য
                                    -হিয়া


ঘমণ্ডীর অঞ্চলে দাঁড়িয়ে প্রত্যাদেশ
দিচ্ছিলাম,
“যাও গিয়ে সৈন্য যোগাড় কর।“
ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলা প্রেমিক
রাগীরূপ ছেড়ে ডিপি বদলাল
ভেলভেটি প্রেমিকার মন গলাতে।
প্রেমিকা ততক্ষণে শীতকালেই চড়ে বসেছে
গ্রীষ্মকালের বাইক-
দ্রবীভূত নোনা জলে প্রেম তখন বিপ্লবী প্রজা
(হে হে, বাকি প্রেমিকেরা মোজা!)
ভুলন্ত মনে সবকিছু শুকোলেও
আঙুর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় না সব শেয়াল!
গৃহযুদ্ধ বাড়লে তুর্কীদের দোষ দেওয়া যায়
কী?


(ছবিঃপলুমুকাতুকা শিলালিপি, সৌজন্যঃ শ্রীলঙ্কা পুরাতত্ত্ব বিভাগ)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১০

Image result for old tibetan inscription


অগ্রহায়ণ
                 -তন্ময় ধর

তোমার শ্বাসকষ্টের মতো অল্প শীত
হাঁটতে থাকে

জাতিস্মর এক গন্ধের ভেতরে
অপ্রয়োজনীয় আলোর মুখোশে
মৃদ্‌ভেদী এক মৃত অঙ্কুরোদ্গম

এত জাফরানরঙা
   স্মৃতিকাতরতা থেকে
পায়ের ধানের গন্ধ তুলে নিচ্ছে শূন্যতা

এতই ঊর্ণনাভ-সুখ
দেহের আবাদি শিখছে গর্ভফসলের ওপারে

আমি গিলে ফেলি কালপুরুষ-অভ্যেস





(ছবিঃ সারদা লিপি, সৌজন্যঃ উইকি) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৯

Related image

আরো একটা শিরোনামে ডাকা যেত
                                           -শুভঙ্কর পাল

আমি সভ্যতার কাছে নুন ভিক্ষে চাই
শিল্পিত আদলের
শীত গাছেদের সেই নতজানু মুখগুলি
ওদের বরফ ভাঙছে নুনের পরকীয়া প্রেমে!
অংশত রোদেদের বারোয়ারী পরবে জানালা কাহাতক খুলগায়ি
সেই বিরাম এঁকে দেবার ঈশ্বরের সেনারা পালিয়ে যাচ্ছে যাহাতক আঁখে
চলতি...।

( ছবিঃ অ্যাসীরিয় কিউনিফর্ম লিপি, সৌজন্যঃউইকি)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৮

Image result for cuneiform script

নির্বাসন 
             -পিয়ালী বসু ঘোষ 


নির্বাসন থেকে ফিরে আমি কি করবো !
ছোট ছোট শহরে বিষন্ন গিটার বাজলেও
ম্যাজিকাল কিছু ঘটবে না

বুকের ভিতরে যে আশ্চর্য ম্যাজিক দেখে,একটা আস্ত যাদুঘর বানিয়েছিলে কখনও
এসো এবছর সেখানে শীত জড়ো করি

এরপর, কখনও বসন্ত আসবে না জেনে
বোকাসোকা আয়নায় তাক করে
একটি মেয়াদোত্তীর্ণ পিস্তল থেকে অবিরাম আক্ষেপ ছুঁড়ি

(ছবিঃ কিউনিফর্ম লিপি, সৌজন্যঃ উইকি)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৭



রোদঘড়ি এবং ছায়ার কিংবদন্তি 
                                           -বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়  

বর্ধিষ্ণু  বেলার দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে  ভাতঘুম 
আলস্য  ঠিকরে প্রশান্তি  এনে দিচ্ছে জন্মান্তর
তার কোন হাতঘড়ি  নেই
সময়ের ফিতে দিয়ে কেউ বাঁধবে না তাকে এই অবেলায়

তবু পৃথিবী  ঘুরছে
রোদ পুড়তে পুড়তে
ছায়ার কিংবদন্তি  ইতিহাসে ঢুকে যায় নিভৃতে

ঘুম
এক পশলা ঘুমের ভেতরেও ছড়ি ঘোরাচ্ছে জাতিস্মর  ছায়া

রোদ নিভে আসছে।

( ছবিঃ খরোষ্ঠী লিপি, সৌজন্যঃ অনুশীলন আন্তর্জাল )

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৬



শীতকাল
                -হাসান রোবায়েত



কিভাবে তোমাকে বলি !

শিউলি গাছ বলে কিছু নাই
আদতে সবই ভাষা—

কেশর ফোলা এক লুব্ধক প্রতিদিন আলো ঘষছে এপিটাফে



( ছবিঃ মাইসেনিয়ান শিলালেখ, সৌজন্যঃ আলোর মিছিল আন্তর্জাল )

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৫




বেওকুফ
            -পিয়াল রায়


সবকিছু আমি দেরিতে  বুঝি

যেমন ধরো ছুরি থেকে মাংসের দূরত্ব
অথবা
আকাশ হারিয়ে ফেলা বোকাটে পাখিদের

সঙ্গীদের ছন্নছাড়া পালকের মধ্যেও
কী নিদারুণ নিশ্চিন্তে চোখ বুজে
ঘুমোতে পারে  !

এ বয়সে এসেও প্রাক্তন পাখিদের ফুলো ফুলো ঠোঁট
পুড়তে থাকে তামসিক জ্বরে
আর ঝুড়ির ভিতর চলে সমর্পণের মহরত


ছুরি থেকে মাংসের দূরত্ব ক্ষীণ হয়ে আসে

তবু কী অসীম উচ্ছাস
  পাখিদের সাথে পাখিদের

এসব আমি দেরিতে বুঝি

এমন দেরিতে

যখন আর না বুঝলেও চলে

( ছবিঃ মেরোয়াতিক শিলালেখ, সৌজন্যঃ আলোর মিছিল আন্তর্জাল)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৪




ব্যবধান
        -দেবারতি চক্রবর্তী



আমাদের দূরত্বগুলো

প্রজাপতি না পেয়ে ম্লান হয়ে গেছে

নাম না জানা অস্থির অঞ্চলে

এপার ওপার বেনামি চিঠি

তখনও রাত মেঘলা আকাশ চাঁদ ওঠেনি

ডাকঘর

বন্ধ।

(ছবিঃ প্রাক-এলামাইট শিলালেখ, সৌজন্যঃ আলোর মিছিল আন্তর্জাল) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৩

Related image

হেমন্তের ডাহুক 
                  -শিবু মণ্ডল 


রাতের ঢাকনা খুলে বেরিয়ে আসা ডাহুক
তার আর কী আছে?
অক্ষর ধবনি, মুছে যাওয়া সঙ্গমরীতি
আরমাফলারে ঢাকা শীতসুখ

ঘুম ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা শমন
তার আর কী আছে?
বন্ধ হয়ে থাকা ঘড়ি, তার থেকে বেরিয়ে যাওয়া গান
আর জলহীন নল খুললেই অনন্ত ভ্রমণ !

কার্ত্তিক খুলে বেরিয়ে আসা তারামণ্ডলের মধ্য দিয়েই
একফোঁটা জল হেঁটে যায় শিশিরের পথে
ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠে দীপাবলি আলো
বটগাছের বেদীতল থেকে শুরু হওয়া নগরকীর্তন
ভাঙা ঋতু হাতবদল করে নেয় অবস্থানটুকু

( ছবিঃ ব্রাহ্মী শিলালিপি, সৌজন্যঃ ওয়েবদুনিয়া )

মৃগশিরার মাসের কবিতা ২

Image result for kharosthi lipi

এক টুনটুনি কবিতা
                          -জ্যোতির্ময় বিশ্বাস


একটা সাদা কাগজের-ফুল
দুলের মত
দুপুর নির্ভার ক’রে ঝুলে থাকছে

এখন খুব খুকুভাব মনে
এখন কেন কথা বলতে চাও; অবেলায়।

                                          




(ছবিঃ ব্রাহ্মী শিলালিপি, সৌজন্যঃ রিভোলভি)



মৃগশিরার মাসের কবিতা ১


Related image

হে বেওয়ারিশ
                 -জ্যোতির্ময় মুখার্জি

#
এইসব চাঁদমারি রাতে
মারিব মরিব। দুজনেই ভিনদেশি

ঢুকে পড়ছে খোলা জিভ। বেইমান
ওরাও মাদল হতে জানে


ওপারে যাবার ছলে ঠোঁটগুলো সব চুমু হয়ে গেল


#
ঢেউ দিয়েছে নদী
ক্ষমা করো। ক্ষমা করো। হে বেওয়ারিশ
এলোমেলো। স্তন খোলো। পালক রেখো না


#
তোমারো কি মনে হয়?
প্রতিটা দরজাই আদতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঈশ্বর?

আদতে ভাসমান। বাড়ন্ত হা


ক্ষতটুকু মুছে নিলে
মাপজোক। কায়া-ছায়া। বেঢপ আয়না

( ছবিঃ হায়ারোগ্লিফিক লিপি, সৌজন্যঃ পিন্টারেস্ট ) 

মৃগশিরার মাসের অনুবাদ কবিতাঃ আইসল্যন্ড থেকে গের্ডার ক্রিস্টনি

Related image


উত্তর

স্পার্ম তিমির মত ধীর
আমরা ভাসছি বিষন্নতার ভেতর দিয়ে
যেটা শাদা
এখানে ঊষর প্রান্তরের উপরে

এটা নিজেকেই ধরে রেখেছে
শুধুমাত্র
এক অলখ নিক্ষেপে

এক মুহুর্তের জন্য তারা ঝলকানি দিচ্ছে
পথের ধারে
যেন ছোট্ট কিশোরীর দেশলাই
রূপকথার ভেতর
আমাদের আলোকিত করছে 
যতক্ষণ না আমরা ফিরে আসি 
এই বরফের গর্তে
একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য 

( সুদূর মেরুবৃত্তের দেশ আইসল্যন্ডের নব্বই দশকের কবি গের্ডার ক্রিস্টনি। ১৯৭০ সালের ১০ জুন রেইকজাভিক শহরে তাঁর জন্ম। কবিতা, গল্প, নাটক -সব মিলিয়ে এযাবৎ কুড়িটি বই প্রকাশিত হয়েছে গের্ডারের। বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা। ভিক্টোরিয়া ক্রিব কৃত ইংরেজি অনুবাদের মধ্যস্থতায় কবির "NORÐUR" কবিতাটির অনুবাদ করলেন উষ্ণিকের সম্পাদক )

(   ছবিঃ Bókadeildin)

মৃগশিরার মাসের কবিতা

এই মাস মৃগশিরা নক্ষত্রের মাস। পুবের আকাশে ভাসছে কালপুরুষের আলো। প্রথম শস্যের গন্ধে উজ্জ্বল হচ্ছে ভোরের শুকতারা। কুয়াশার আবছা চাদর সরিয়ে এই গাঢ় সময়ে বাউলরঙা আলোয় কবিতা লিখলেন পিয়াল রায়, নীলাব্জ চক্রবর্তী, পিয়ালী বসু ঘোষ, প্রদীপ চক্রবর্তী, তন্ময় ধর, জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী, জ্যোতির্ময় মুখার্জী, হাসান রোবায়েত, বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়, শিবু মন্ডল, দেবারতি চক্রবর্তী, হিয়া, জ্যোতির্ময় বিশ্বাস, সুকল্প দত্ত, সুপর্ণা মন্ডল এবং শুভঙ্কর পাল। সুদূর মেরুবৃত্তের তুষাররাজ্য আইসল্যন্ড থেকে নব্বই দশকের কবি গের্ডার ক্রিস্টনি রইলেন অনুবাদে। 
                             
Related image




Wednesday 28 November 2018

আকাশপ্রদীপের অনুবাদ কবিতাঃ বুলগেরিয়া থেকে একাতেরিনা কারাবাশেভা

Related image

এই হল সেটা
     
যেটা আমরা বর্ণনা করতে পারি না-
এটা টাইল-ঢাকা ছাদে অলস বৃষ্টির মতো
ফুলে ওঠা রাতে একটি প্রাণিত শিখার মতো
কাব্যময় এক বাতাসের মতো, আবৃত্তি চলছেই
ইন্দ্রধনুর এক ঝলকের মতো, এই জগতের এক প্রান্ত থেকে অন্য জগতে

এতটাই সহজ এবং এতটাই জটিল।
আকাশে তারাগুলোর মতো জ্বলন্ত,
ঝড়ের ভেতর চঞ্চল বিদ্যুৎশিখার মতো
পাহাড়ের শীর্ষে একটি পরিচিত ফুলের মতো
সূর্যাস্তকালীন সৈকতে একমুঠো অপরিচিত বালির মতো।

এতটাই পরিষ্কার এবং এতটাই অস্পষ্ট।
তোমার বুকপকেটের লেডিবার্ডের মতো,
স্বচ্ছ সমুদ্রের গুঞ্জনরত তরঙ্গের মতো,
অন্ধকার বনের মধ্যে তোমার স্মৃতির প্রতিধ্বনির মতো
যেন পৌরাণিক কাহিনী, তুমিই যেন বৃক্ষকথিত মৌনতা।

এতটাই চমৎকার এবং এতটাই বাস্তব।
সূর্যের গোপন আঁখিপাতের মতো
চাঁদের আয়ুর সাথে তোমার কথোপকথনের মতো,
দুধ-ছায়াপথ থেকে একমুঠো নক্ষত্রের স্বপ্নের মতো,
ঠিক ওই নক্ষত্রগুলোকে তুমি যেমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছো।
এইই হল।
প্রকৃতি।

( বুলগেরিয়ার সোফিয়া শহরে একাতেরিনা কারাবাশেভার জন্ম ১৯৮৯ সালের ১৯ অগস্ট। শৈশব থেকেই বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ, পুরস্কারপ্রাপ্তি এবং খ্যাতির পাশাপাশি নিজের কবিতার উৎকর্ষকে এক অনন্য মানে নিয়ে গিয়েছেন একাতেরিনা। ইংরেজি-জার্মান-রুশিয়ান-রোমানিয়ান সহ অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা। 'কাসেলোদুইনোপোয়েসিয়া'র ওয়েবপাতার ইংরেজি অনুবাদের মধ্যস্থতায় বঙ্গানুবাদ করলেন উষ্ণিকের সম্পাদক)

আকাশপ্রদীপের মাসের কবিতা ১

Image result for evening fog

ক্ষয়িষ্ণু
         -অভ্রদীপ গোস্বামী

বারুদে প্রভুর হাত ছিল
যোনিতে প্রভুর হাত ছিল
আমার কলমে ছিল নুন আর খর তরকারি


এ বিশ্ব প্রভুর নির্মাণ
তোমার স্তনদুটি মায় বৃন্ত সৃষ্টিকর্তা প্রভু
আমার সমর্পনে রয়ে যায় ছায়া আর পাতাঝরার     আকুতি


প্রভুকে বারুদ দাও
প্রভুকে যোনিগন্ধ দাও
আমার জন্য রাখো দাওদাও আগুন
জলে জলে নেভানো ছাইয়ের দই


আমাকে সৃষ্টি করো স্তনবৃন্ত আঁকো
আমাকে নস্যাৎ করো জড়িবুটি বশীকরণে
আমাকে ত্যাজ্য করো বিধর্মী ইমারত করো
প্রভু আর আমি মিলে বারুদের ভেতর শুঁকি যোনিগন্ধ
যোনির ভেতর খুজি নুন আর খর তরকারি...

( ছবিঃ স্যাগি ওয়াগন ট্রেইল) 

আকাশপ্রদীপের মাসের কবিতা ২

Image result for evening fog

কনসেনট্রেশন ক‍্যাম্প
                       -জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি

জানলার ধারে বসেছিলাম। একটা বিরক্ত সকাল থেকেই। মেয়েটার শরীর খারাপ। কান্নার সাথে আড়িপাতা মেয়েটা হঠাৎ ভাব করে ফেলেছে কান্নার সাথেই। সাথে খাওয়া দাওয়া বন্ধ অথচ খেতে খুব ভালোবাসে

সময়টা এভাবেই কেটে যাচ্ছিল বা কাটছিল না। জানলায় মুখ রেখে বা জানলা থেকে অনেক দূরে একটা ঘুড়ি উড়ছিল। আপন মনেই। অথচ কিছু কুচো বাতাস ঘুড়িটাকে কিছুতেই আপন হতে দিচ্ছিল না

জানলা জুড়ে একগোছা সবুজ। তন্বী কুলগাছ। শরীর স্বাস্থ্য বেশ ভালোই। যুবতীর শরীর বেয়ে উঠে এসেছে কিছু দামাল লতা। ওরা হয়তো আমাকে দেখছিল বা নিজেরা মশগুল। তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না। ওদেরও

মানকচু ঝোঁপ আর কচুরিপানার ভিড় ঠেলে হাঁসেরা কিন্তু বেশ জমিয়ে ফেলেছিল ওদের বিরতিকালীন প‍্যাঁকর্ প‍্যাঁক্। ধ‍্যুস্ বিরক্তিকর। এরচেয়ে পানাজলে ঢেউ ঠেলে আধেক বিরতি অনেক আলো

ফড়িংটা তখনও উড়ছিল। বাতাস মনেই। আমি একটু আগেই ওকে ঘুড়ি ভেবেছিলাম। অবশ্য হেলিকপ্টার ভাবলেও খুব একটা ক্ষতি ছিল না। এসব পোকামাকড়দের ডিসিপ্লিনে সদ‍্য প্রেমিকাকে কামড়ে দিলেও রক্ত ঝরে না

আফটার অল্ আমরা যারা মুখ লুকানোর মতো জঙ্গল খুঁজি বা শরীর ভিজবে বলে জল। তাদের কখনো স্লোগান হতে নেই। রিপিটেশন্ ইজ্ আ তীব্র অসহ্য কনসেনট্রেশন ক‍্যাম্প। প‍্যান্ট ভিজবে জেনেও যেভাবে ডেসপারেট হয় তলপেট

সেইভাবেই মোবাইলটা প‍্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে উঠে গেলাম বাথরুমে। জানলা নেই। দরজা বন্ধ। আধোআধোআলোকালো। ঝাঁঝালো গন্ধ

এসব নাস্তিকের সংসারে ঈশ্বর কখনো আদল বদলায় না






(ছবিঃ মিরিয়াডনা গ্যালারি) 

আকাশপ্রদীপের মাসের কবিতা ৩


Image result for fog photography


দাঁড়ি টানা যাচ্ছে না 
         -সৌমনা দাশগুপ্ত 
                               


এই ছায়াকে তুমি আর ছুঁতে পারছ না। আর ফাঁকফোকর দিয়ে যেটুকু রোদ্দুর এই ঘরে এসে পড়ছে তাকেও বুজিয়ে না দেওয়া অব্দি তোমার আর স্বস্তি হচ্ছে না। কয়েকটা অব্যয় আর কিছু প্রশ্নচিহ্ন এইমাত্র ঢুকে পড়ল প্রচ্ছদে। হাড়গোড় ভাঙা এইসব শব্দ দিয়ে তুমি আর কীভাবে সমাস তৈরি করবে। শুধু ক্রিয়াপদে ভরে উঠছে এই গল্প। এত যে ভেজানো হল তোমার চায়ের কাপ শুধু কালো তরলে ভরে উঠল। গন্ধ বিষয়ক তোমার পুরনো উদ্বেগ আবার ফিরে এসেছে দেখ। এই দেয়ালে আর পলেস্তারা দিয়ে উঠতে পারবে না। শুধু অবান্তর দু একটা বট অশ্বত্থের গাছ ইটের হাঁমুখ বেয়ে উঠে দাঁড়াবে। উল্টোদিকে দৌড়ে চলা এই সময়কে তুমি কি কোনও জিন বা লাগাম পরিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। কেবল সরলরেখা আঁকা হয়ে যাচ্ছে। আর কম্পাস ভেঙে দেওয়ার পর দিক সম্পর্কে তো আর কোনও দ্বিধাই থাকছে না




( ছবিঃ  প্যাট্রিক জেফায়ার ) 

আকাশপ্রদীপের মাসের কবিতা ৪

Related image

আলো বিষয়ক 
                 -নীলিমা দেব 


নদীটা দুলছে! ছায়া নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে  জলের বেসিক। কৌটোর ভিতরে দহনের বর্ণমালা। কালো বাড়ি। সাদা-কালো ঘর। ঘরেরভিতর উল্টে যায় সূর্য। বেশরম পাখীরাও ! আলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে বিছানায় পিকনিক .....


এই যে রং দিয়ে মেখে দিয়েছো সন্ধ্যার ওম
তাকে ম্যাচুউআর বললেই গোলাপি হয়ে উঠে চোখের ফিলিংস 
অদৃশ্য আঁকি
বেগুনী
টিপ থেকে গড়িয়ে পড়ছে  আষাঢ়
রিভার্স আলোর স্নান
এবারে আয়না ধরো ...


(ছবিঃ টোকামাচি) 

আকাশপ্রদীপের মাসের কবিতা ৫

Related image


বাদামওলা
           -পিয়াল রায়

ওকে তো দেখেছি
   কীভাবে সারাদিন চার্চে বসে বসে ঢুলত
কীভাবে সারারাত
      ওকে একটু একটু গিলে নিত
সন্তানের আগুনসুপ্ত মুখ
আর চারপাশ থেকে
     কীভাবে রগুড়ে বাতাস হেসে হেসে
গড়িয়ে পড়ত এ ওর গায়ে

ভেতরে ভেতরে সবার গল্পই এক
সাদাকালো আর কালোসাদা

এত এত নেই-এর মধ্যে শুধু
হাবুডুবু আর কান্নাকাটি
কান্নাকাটি আর বন্ধ হয়ে ওঠা
অথচ মুখেচোখে জল দেবে এমন কেউ নেই

কেউ নেই জীবনের ভিতর দিয়ে যাবে চৌষট্টি আদর

অনেকদিন পর আজ আবার
ভিজে যাচ্ছে বাদামওলা
বাদামের ঝুড়ি থেকে খসে পড়ছে জল

এসো, বাক্স বদল করে আনন্দ হয়ে উঠি আজ

(ছবিঃ জন স্যামসেন )

আকাশপ্রদীপের মাসের কবিতা ৬

Image result for river fog

ছা-বাল

             - সু চক্রবর্তী


আমাদের জমাজলে আনুগত্য
চোখ পাকায়

রন্ধ্রে পোড়া ঢিবি ; হা ইশ্বর

ন্যাংটোছাবাল

খাপ খোলে!

নুয়ে পড়া গন্ধে দেহ হয়
দেশকার টোড়ি
ললাটের বলিরেখার মতো

পড়ে রই

উই

নিরাশ্রয়হীনতার প্রগলম্বে

(ছবিঃ কেন লোরেন্টজেন) 

আকাশপ্রদীপের মাসের কবিতা ৭

Related image


 জনারণ্যে একা
                          -নিবেদিতা মজুমদার



"সত্যি চলে যাচ্ছি..."
শেষ কথা ছিল তোমার-

তারপর
কিঙ্কিণী শব্দের শব এ যাবৎ
ঢিল ছোড়া দূরত্ব পেরোতে পারেনি ;

অথচ পঞ্চমীর রোশনাই
মানুষের ঢল
জহুরী চোখের আলগোছ
পিছু ছাড়েনা প্রজন্মান্তরেও!-

স্তব্ধ হয়ে দেখি
আমিই এগিয়ে আসছি,
নিজের দিকে
মিশে যেতে এগিয়ে আসছি
আমিই...

ভীর ঠেলে পাশ কাটিয়ে
চলে যাওয়ারা
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে
আমার পাথর খোদাই শরীরের দিকে চেয়ে

ছেনী  হাতুড়ী তোমার হাত থেকে
খসে পড়ে -

সে যাওয়ার বুঝি শেষ দিন হয়না

পাশে থাকবে বলেও
যে বার বার চলে যায়।

(ছবিঃলোরেঞ্জো মন্টেজোমোলো)

আকাশপ্রদীপের মাসের কবিতা ৮


Image result for fog bridge photography by dave allen

স্রোত
               -পাপড়ি গুহ নিয়োগী


--এভাবে যেও না পাপড়ি

 তুমি স্রোতের বিপরীতে হাঁটছো আরো সাবধানে!

 হাতটা দাও ? হঠাৎ মরা নদী জেগে উঠছে

--আরে, আমি নদী বলতে বুঝি ভালবাসা

--সাবধানে, চোরাবালি আছে, কথা শোনো...

--উফ, নদী জানে আমার আর ওর খুনসুটির কথা প্লিজ, একটু নিজের মত

   পায়ে পায়ে জল খেলতে দাও

--এতো বছরের বন্ধু, তবু তুমি বারণ শোন না।

   এবার বুঝবে ….

(ছবিঃ ডেভ অ্যালেন)

আকাশপ্রদীপের মাসের কবিতা ৯

Image result for fog tree photography by


কজ ওয়ে
                   -অ নু স ঞ্জ না ঘো ষ 

লিলিথ জানেই না কখন ভোর পাখি হয়ে উঠলো। আজানের সকাল যেন একমুঠো শিউলি। টুপ টাপ শ্রাবণ আর ভিজে যাওয়া পায়রার গান। সবটাই তুমি। ঢেউ এর ওপর ঢেউ তুলছে নদী। আমরা  অপেক্ষা করছি একটা বড় ঢেউ এসে আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে যাবে। একটাও পাল তোলা নেই। বাতাসের কাজ এখন জলের সঙ্গে লুকোচুরি। বহুদূর পার করে শিকড় ছুঁয়েছে নদী। কে যেন বলেছিল বসন্ত আসবেনা একটাও। সেই থেকে শুরু হল পাতা ঝরার মরসুম, রং মাখা আগুন। প্রতিটা ঋতুই ফাগুনে মিশে গেল। এই বর্ষাতেও ভিজেছি পাশাপাশি কখনো ইউটার্ণে কখনো শুনশান গাছেদের ভিরে।

আমি 'তুমি' লিখে রাখি আমার সবটা অন্ধকার জুড়ে...




(ছবিঃ পিয়ের পেলেগ্রিনি)









আকাশপ্রদীপের মাসের কবিতা ১০

Image result for river fog

সমান্তরাল 
             -উমা মন্ডল

রক্ত  চোষা  বাদুরের  ডানার  ওপর
দেহটি  ঘুমিয়ে , সাদা  পোশাকের  মতো
রং  তুলে  নিয়ে  গেছে  বিধাতা  লেখনী ,
বৈধব্য  তারায়  গিলে  খায়  আকাশের  নীল  মেঘ।

কালবৈশাখীর অভিশাপ ?  তুলে  নেবে ঠোঁট  দিয়ে
কমন্ডুল  থেকে  ছুঁড়ে  দিয়েছিলো  আর্য,
ভাত  ছড়ানোর  মতো  করে  ;
খুঁটে  খেয়ে  নেয়  অনার্যের  পক্ষী-মাতা
সেই  থেকে  পিঠে  বয়  সিসিফাস -জ্বর, বৈশাখীর  কালাশৌচ ।

অ্যানিমিয়া  জীবাণুর  ঘর  ভালোবাসে
কালি  দিয়ে  দাগ  কাটে  সাদা  ক্ষেতে ,
বৈধব্য -পাতায় ।
জলা-শোক  খরা  দুঃখ  তৈরি  করে  কুমোরের
চাকা  দিয়ে , দেবী  জল  পাবে  না  ধর্মে  সইবে
কলসি  কাঁখে  সাদা  কাপড়ের  পুঁটলির পোড়াখই  ;

কন্যা  জল  তুলে  দেয়  দেবী-মুখে , পুরোহিত  ধর্ম
ভাসায়  গঙ্গার  সাদা  জলে .........

(ছবিঃ অ্যান্ড্রিউ উয়েইথ) 

আকাশপ্রদীপের মাসের কবিতা ১১

 Image result for fog tree photography by


তিতলি সভ্যতার কথা 
                            -রঙ্গন রায়

তিতলি একটি নদীর নাম। নদী একটি সভ্যতার নাম। আর একথাটা তো সবাই জানে যে সভ্যতার সৃষ্টি হয় নারী থেকে। অতএব এটা বলাই যায় যে তিতলি নদীর ধারে নদী নামে একটি সভ্যতা ছিল। তাতে বসবাস কারী প্রত্যেক নারীর নাম তিতলি। যেহেতু নদী একটি তিতলিমাতৃক সভ্যতা তাই সকল পুরুষ সেখানে প্রেমিক ছিল। প্রতিবছর তিতলির হাসিতে নদীর জমি উর্বর হত। চাষবাস ও ফলন  ভালো হত খুব। 
কিন্তু তিতলিরাও বৃদ্ধা হয়। তিতলির স্রোত হঠাৎ করে যেন হারিয়ে গেলো দূর বনতলে কোনো মরুভূমির ভেতর। প্রেমিকা না থাকলে প্রতিটি পুরুষের গভীর অসুখ হয়। নদী সভ্যতা যাযাবর হয়ে যায়। কত অজানাকে খুঁজে দেখার নেশায় তারা বেরিয়ে পরে পথে। হাঁটার সময় যত নদীই তারা দেখে সবার নাম দিয়ে বেরায় তিতলি। গোটা পৃথিবীর যতটা তারা হেঁটেছিলো সেসবই তিতলি সভ্যতা নামে পরিচিত হয়।
আর সেদিন থেকেই আজও প্রকৃত পুরুষেরা তিতলিকে খুঁজে বেরায়। তিতলি সমগ্র সভ্যতার নাম হলেও সেই যে তিতলি হারিয়ে গেছিলো প্রাগৈতিহাসিক যুগে , সেটা কে খুঁজে বের করবে? 
সন্ধান জারি আছে। সন্ধান সর্বদা জারি থাকে। আর তাই প্রতিটি পুরুষ এখনো প্রেমিক হয়ে উঠতে চায়। আর প্রতিটি নারী , তিতলি। 

(ছবিঃকীথ ডটসন)

Wednesday 10 October 2018

উষ্ণিকঃ কাশফুল সংখ্যা

Image result for kashful in shadow bw

উষ্ণিক 
কাশফুল সংখ্যা 

কাশফুল ছোঁয়া ভরা পৃথিবীর বাতাসে শরতের আলোকমঞ্জীর
 পুজোর আলো-মাখা কবিতারা ছুঁয়ে ফেলুক দূর আকাশের ছায়াপথ

কাশফুলের মাসের কবিতা ১

Related image

নিরালায়
               -অভিশ্রুতি রায়

কতটা চলার পর
তুমি আসো?
আরও কতটায়
 তুমি আঁধার হয়ে যাও?
এই বাঁশিতে ফুঁ এর জোর ফুরিয়ে এলে
আমি বাঁশ হয়ে পরে থাকি
একহাত মাপা
শীর্ণ...
যে বিন্দু আমার আঙুল ধারণ করেছে
তাতেই জোর খাটিয়েছি চিরকাল
এই ঠোঁটে নরম তোমার হেঁটে চলার শব্দগুলো
এখন নিঃশব্দে আমার স্বরলিপি হয়ে আছে

( ছবিঃ অ্যালেক্স চার্নি) 

কাশফুলের মাসের কবিতা ২

Related image

স্বভাবচরিত্র
             - নীলাব্জ চক্রবর্তী



সে এক গানরঙ
জানলা বলতে বলতে ফেলে যাওয়া আঙুলের দিন
মাংসের সহজ ভেতরে চলে যাচ্ছে
আমাদের ভাঁজ করা বিকেল
মোনোলগ
মানে
নিয়ন্ত্রিত সব কাঁচ
আর বাতাসে ফুলে ওঠা স্নায়ু ও যোজনা
জলের মতো মানুষ দেখতে দেখতে
দরজা একটা দৃশ্য খুলে যাওয়া
সিনট্যাক্স খুলে যাওয়া
ছবিতে ছবি মিলছে না এখন আর
তবু
টার্নিং রেডিয়াস বরাবর
এঁকে বেঁকে
যেভাবে চরিত্ররা
স্বভাব থেকে দূরে চলে গেল...

(ছবিঃ গ্যারী হার্ট)

কাশফুলের মাসের কবিতা ৩

Image result for milky way best photos

এক টুকরো পৃথিবী 
                      -প্রদীপ চক্রবর্তী

এক /

সাপের ফণার মুখে চ্যুত শব্দ |
 উদভ্রান্ত পিঞ্জর ,
প্রসারণশীল সফেন তৃষ্ণায়
নুড়ির মতন বেজে উঠলো পাখিটার মাতৃভাষা

রসময় সূক্ষ্ম দেশে
       পুলক পাখি গাইছে মৃত্যুপূর্ব , গৌড়সারং

নিজেরই ছায়ার সঙ্গে একাকারে বোনা পাখিটাকে আত্মস্থ করতে নেমেছে
অনাদি এক অনাপ্ত যৌতুক ...

মনের প্রত্যন্ত ভোরে
          অবিন্যস্ত মহাসমুদ্র বিশেষ্যমাত্র

বিষ
       মৃদঙ্গ ধ্বনি ,
এক টুকরো ঢিল
                    এক টুকরো পৃথিবী ...


দুই /

একটা ওল্টানো পাখির ওপর ঝরে
কোন জলপিপি
কোন স্ফটিক নির্মিত গন্ধ
ললিতা থেকে শরীর পর্যন্ত

এই প্রীতিগুলি ,
এই সাঁকোটুকুর এরকম গাঁও

পিলুর যত শীত
খামার
জঙ্গল
জল
ভয় ভয় কুসুমের বাড়ি

সেই উপেক্ষা ...
উঠেআসা নিঃশব্দ ভুরুর ওপর
অফুরো খড়কুটো দিয়ে বাসা বাঁধা

শরীরী শ্রাবণের বোঝাপড়া পার ...

মিথোজীবী একবার খুলে যাচ্ছে ,
শব্দ না করে
একবারই রক্তে শুধু মাংসমিশ্রন ,
মুখের পাতায়
                     শিশিরের নিচে
স্খলিত পাখির জলঘন্টা
                  রাখতে চেয়েছো গতকাল ...

(ছবিঃ ডেভিড কিং হ্যাম)

কাশফুলের মাসের কবিতা ৪

Image result for milky way galaxy by amateur photographer


রুজা
      -হাসান রোবায়েত
 


নির্ভূগোলের দেশ— কেন অন্ধ ভেড়ার সাথে
কথা বলে জানালার শিক
অনর্থক গুল্মলতা অন্ন-শান্তির কাছে বহুকাল
অন্য বাদল কী ভীষণ সহজিয়া
রোজ উড়ে যায় লক্ষহীন ক্রিয়াকার্পাসে

ইস্পাতের কত কাছে মানুষও নপুংসক দেয়াল
কে যেন আসবে বলে
চড়ুই-দূরত্বের কথা জমে ওঠে নাকফুলটির পাশে—


(ছবিঃ মিক্কো ল্যাগারস্টেড)

কাশফুলের মাসের কবিতা ৫

Image result for milky way galaxy by amateur photographer


সিক্ত 
      -নিবেদিতা মজুমদার

বৃষ্টি হবে হবে করে না হলে
বুকের ভিতর এক পদ্ম জল জমে যায়।

ব্যাগের ভিতর দুমড়ে থাকা
রেনকোটের শব্দ হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে
জুড়োতে থাকে লাস্ট বেঞ্চে,
খুলে ঘুমিয়ে পড়া ইংরেজি বইয়ের
একুশতম  ভিজে বর্ণের লাল হলুদে।

সবুজ হারানোর  অবগুণ্ঠন খুলে
খানিক বিদেশী ছন্দে মাটি স্পর্শ করার আঘাত
বুকের পদ্মে আবার জল ছিটিয়ে দেয়,
যেখানে হলুদ রঙ অযাচিত।

একেকদিন বৃষ্টি না এলে বীজতলার
খুব জলতেষ্টা পায়, তারপর  আগলে রাখা
একটি রঙিন ছাতার মত চোয়া-রং
চার প্রহরে বৃষ্টিপাত ডেকে আনে-

অথচ
তৃষ্ণার্ত পদ্মনাভ জল ছেড়ে ছেড়ে
শুকিয়ে চাতক।

(ছবিঃ ইয়ান নর্ম্যান)

কাশফুলের মাসের অনুবাদ কবিতাঃ রোমানিয়া থেকে ড্যান সোশিউ

Image result for dan sociu


খিড়কি

আমি পেনের জন্য পকেট হাতড়ালুম, আর হাতে উঠে এল একটা টুথব্রাশ
এটাও শহর-দখলের একটা উপায়
রোজ রাতে নতুন নতুন বিছানায় ঘুমানো
এই যেমন, দু'দিন আগেই আমি এক সুরক্ষাকর্মীর বদান্যতায়
এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের অফিসে ঘুমিয়েছি
শাদা কোট, ছুরি-কাঁচি-সিরিঞ্জের মাঝখানে!
টেবিলের পায়ায়!
তার চাইনিজ নরম পাদু'টো টেবিলের পায়ার পাশে ঝুলছে
সে শিশুবিভাগ থেকে জুতো কিনছে
বিপর্যস্ত হচ্ছে এমন এক মানুষের হাতে
যার অঙ্গভঙ্গি অত্যন্ত পেশাদার
আমার চূড়ান্ত বিপরীত
আমার নিষ্ক্রিয় ভাবমূর্তিতে হাত বুলিয়ে
যন্ত্রণা খুঁজে আনে

আমি এক বান্ডিল কাগজ খুঁজতে গিয়ে কেবল একটুকরো কাগজ পেলাম
আর সিদ্ধান্ত নিলাম, ওটা পশ্চাদ্দেশে গুঁজতে হবে, কেননা রাস্তাঘাট বড় ঠান্ডা
আমি বড় ক্লান্ত, দাঁড়িয়ে একটু পান-আহারের উপযুক্ত নই
যেটা আমি লিখতে চাইছি
টেবিলের পায়া আর ভালোবাসা নিয়ে একটা পংক্তি
আমার মনে হয়, কোথাও পড়েছিলাম, জানিনা কতবার
কিন্তু ওই সুন্দর পংক্তিটা নিয়ে আমি রোমন্থন করতে শুরু করেছি
যেন একটা মিছরির টুকরো যা আমার পরিবর্তনের সাপেক্ষে দেওয়া হয়েছে
২৪X৭ ভদকার বোতলের প্রান্তে
যা ট্যাক্সি ড্রাইভারদের রঙিন বাক্সে ঘুমিয়েছে
আর সেই বাজনাদার মানুষটি অভিশাপ দিয়ে গেছে আমায়
আমি তাকে শেষবার সেই গানটির সুরই বাজাতে বলেছি
সেই একটিমাত্র গানই সে জানে, যা আদতে
সে ঘন্টাখানেক আগে শিখেছে
আমি তাকে ব্যাখ্যা করি যে, আমি ঘুমোই নি


(কবিকৃত ইংরেজি অনুবাদের মধ্যস্থতায় অনুবাদ করেছেন উষ্ণিকের সম্পাদক)

ড্যান সোশিউ-এর জন্ম ১৯৭৮ সালে, রোমানিয়ার বোতোসানি শহরে। শূন্য দশকের একেবারে গোড়াতে সোশিউ এবং তাঁর কবি-বন্ধুরা 'মিসারেবিলিজম্‌' নামে এক কবিতা আন্দোলন শুরু করেন। ইউরোপের একাধিক ভাষাতে অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা। 

কাশফুলের মাসের কবিতা ৬

Related image

ঈশ্বরমূল
            -তন্ময় ধর 

তোমার নাভি থেকে ঈশ্বর নামক এক শূন্যতাকে আমি ভেঙে ফেলি
সামনে বিষাক্ত ছায়াপথ, জল, মৃত ছাতিম

শব্দের পর শব্দের পারফিউম থেকে
তোমার রক্তচন্দন ফুরিয়ে আসছে

অর্ধেক শস্যের মতো প্রেম
লিখতে লিখতে আলো

মূর্তি ভারী হয় শাকভাত, পরজন্ম ও প্রদীপে
নদী ও স্প্যামে ফেলে রাখা কোন ঝিনুক

আমিও ঈশ্বরের মতো উত্তপ্ত হয়ে উঠি
আকাশমন্ডলে কি আর একটু বৈখরী নেই ?




(ছবিঃ পল উইলসন) 

কাশফুলের মাসের কবিতা ৭

The triangular glow of the zodiacal light taken from the European Space Agency's La Silla Observatory in Chile in September 2009 only minutes after sunset.


আর্তি
             -বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

যে ভেজার কোন উপমা নেই
উপশম গন্ধ নিয়ে  গড়িয়ে যাচ্ছে একটি বিকেল
তার গায়ে সুর্যাস্ত লটিকে দেওয়ার আগে  একবার স্থির হয়ে বসি

ছবিও সাঁতরে যাচ্ছে দূরত্বের  খেলাঘর
 একটু চীৎকার নিয়ে প্রাণপণ শব্দভেদী আশ্রয়ের আশ্চর্য আকাশ
ফালাফালা করে এই আত্মঘাতী দিন

কীরকম ভাবে এই ধ্বনিগুচ্ছ  আমাকেই অতিক্রম করে ।

(ছবিঃ ইউরোপীয় দক্ষিণী পর্যবেক্ষণাগার) 

কাশফুলের মাসের কবিতা ৮

The Milky Way over the Elbe Sandstone Mountains in Germany.

জানালার ওপারে
                   -শিবু মণ্ডল  

তৈরি হতে থাকা একটা জানলা
অনেকগুলো দৃশ্য গড়ে তোলে
অভিমানে পড়ে থাকা মন্দির
অহং-এ বেঁকে যাওয়া হাওয়া
ক্ষুধার মতো অসম লড়াই

বিবিধ দানাসশ্যে সাজানো কথা
তুলে ধরে কাঁঠালফুলের স্মৃতি

কারা যেন চেপে ধরে রথের চাকা

(ছবিঃ ফিলিপ জাইগার)

কাশফুলের মাসের কবিতা ৯

Astronomy Photography of the Year shortlist Milky Way photo

রুতবা
            -নীলিমা দেব

১.
কুমারী রাত
মথ এর মতো চুইয়ে পড়ে কুয়াশা
কে যেন এক কাপড়ে ঢেকে দিচ্ছে শহর
জায়গাটা , সময়টা একেবারে ফুঁ
ভাবছি হারিয়ে যাওয়াটাই আবিষ্কার
নাও শাসন করো ঘর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া বারান্দার রুতবা

২.
মাঝেমাঝে এভাবেই তুমি
আলাপ ছেড়ে ইঙ্গিতে
হতে পারতো কোন উৎস বিসর্জন আগলে
উজার করে দেয় স্রোত
আর ভাসতে ভাসতে একাকী হয়ে ওঠে আরও বাসী আলো
তারপর যা কিছু অকারন
সেটুকুই ফিরে দেখা
মিথ থেকে মিথস্ক্রিয়ায় টপকে টপকে পড়ে অন্ধকার তরল ...

(ছবিঃ যেজ হিউজেস)

কাশফুলের মাসের কবিতা ১০

Astronomy Photography of the Year shortlist panorama of 8 photos

সাধ
           -রাজেশ শর্মা



নিয়নের অসংখ্য ডানা
প্রহরে প্রহরে তারা নিয়নলগ্ন

হাওয়াছাতিম এক
জংলা কইতরের মত দানা দান ভুখ

পিঁড়ি পেতেছি
গরাস গরাস ইচ্ছে

রিনটিন চুড়ির শব্দে
স্বাদ স্বাদ ভাব

(ছবিঃ কার্লোস তুরিয়েঞ্জো)

কাশফুলের মাসের কবিতা ১১

Astronomy Photography of the Year shortlist Cable Bay photo

ধাইর*
              -সু চক্রবর্তী


তোষকের তফাতে চলে

কানাঘুষো।

তঞ্চকের শিয়রে

কুলুঙ্গির ফাঁকসমান  চুলা,
আমাদের লংকার মতো
তারও
গাঁটে গাঁটে ইটমাটি ভাঙা বাঁশ।

মালোই*
জুড়ে অযোধ্যা!

সীতাহরণ ;ব্যসন বালিশের

বিছানায়
----

বি.দ্র-

ধাইর- বারান্দা
মালোই- নারকেল মালা
-------------------------------------
(ছবিঃ মার্ক জী) 

কাশফুলের মাসের কবিতা ১২


Astronomy Photography of the Year shortlist Florida photo

হেমন্ত কুলীন ঋতু
                          -জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী

হেমন্ত কুলীন ঋতু,কুয়াশাকে বলতে শুনেছি
ছাতিমের ঘোর আর গুটিকয় ভাসানের আলো
জানালায় এর বেশি কোলাহল রাখেনি কখনও
গোপনে ভেঙেছে শুধু শীতকাল গড়ে দেবে বলে

ধূসর উঠোনে তার কেটে যায় অসুখের দিন
"এই বেলা ভালো আছি ,সেরে উঠবোই দেখে নিও"-
চিঠি লিখবার ছলে নিজেকে নিজেই ছোঁড়ে ভ্রমে
ও কি সেরে ওঠে? কই প্রতিবার অজুহাত খাটে  !
     
নির্বিকার তবু তাকে ঘিরে বাঁচে সবুজের নামে
একেকটি ভোর আর প্রেমিকার ফেলে যাওয়া ফুল
কখনও ফিরতি পথে যদি খোঁজ নিতে আসে কেউ
উঠোনে দেখেই যেন ," ঘরে এসো",বলে দিতে পারে

হেমন্ত কুলীন বড় । অপেক্ষা সাজাতে ভালোবাসে
আতপের ঘ্রাণে লেখে নবান্ন ও ফসলের মাস

(ছবিঃ তিয়ান্যুয়ান জিয়াও)

কাশফুলের মাসের কবিতা ১৩

Related image

পাহাড়ের এই বাতিঘরে 
          -সৌমনা দাশগুপ্ত


ভেসে যাওয়া পাতাদের ছায়ার ভেতর থেকে আলোহীন মানুষেরা তোমাকে “উল্লাস” বলে স্বাগত জানাল। আর উচ্চকিত অন্ধকারে গলার স্বরের মতো ডেকে উঠল একদল নেকড়ে। রাসায়নিকের এই ঝাঁঝালো  বাষ্প অব্দিই তোমার চোখ পৌঁছোতে পারছে। তারপর আর কোনও পাহাড়ই থাকছে না প্রচ্ছদে যার ওপর  ঠেস দিয়ে তোমার সূর্যটাকে দাঁড় করিয়ে দিতে পার।  গলে যাওয়ার পর শেষ বা শুরু বলে তো আর কিছুই নেই। ছায়া খুলে রেখে একা একাই চলে যাচ্ছে গল্প। মাংসের এই বাগানে তুমি আর ঢুকতেই পারছ না। জমাট পাথরের কুয়াশা কোনও যাদুদন্ড দিয়েই কেটে ফেলা যাবে না। আর আকার ভেঙে ফেলার পর রেখা এবং বিন্দু বিষয়ক কোনও অধ্যায়ের তো প্রশ্নই নেই। শুধু এবং শুধুমাত্র বাতাস আঁকড়ে ধরে তুমি পৌঁছে যাচ্ছ সেই চূড়ায়, যেখান থেকে নেমে এসেছিল এই গল্প

(ছবিঃ বার্কেহান বেন্ডিভার) 

কাশফুলের মাসের কবিতা ১৪


Related image

বনদহনের ঘাস
                     -জ্যোতির্ময় মুখার্জি         



এভাবে তোমাতে বনদহনের ঘাস

উদ্বাস্তু হোক। উদ্বাস্তু হোক

                              শরীরী গুম্ফা


কোনো কথা নেই। নেই কোনো মনোরম অসুখ

ওসব ছড়ানো পথ। ওসব জড়ানো পা

কী যেন তার নাম

খেলতে খেলতে দৃশ্য কাঁকন কুমারী মাঠ


চুরি গেলে ব‍্যবধান

চাঁদেরাও হেলেদুলে এসে চিবুক চেঁটেছিল

(ছবিঃ ফ্রেড উইলসন)

কাশফুলের মাসের কবিতা ১৫


Image result for milky way galaxy painting

পরিস্থিতি
             -পিয়াল রায়

ঢাকনা খুলে দিতেই একপাল হিম
জল নিতে এল পাড়ায় পাড়ায়

ওরা তো জানে না
এতদিনে কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে
ওদের কুকীর্তিগুলি

যতদিন শক্ত ছিল
     রোদও ছিল ততদিন নরম

গলে যেতেই মাছেদের সাম্রাজ্য
   ভেঙে পড়ল অববাহিকার উপর
ছিটকে গেল ভীরু কাপুরুষ অঙ্গহেলন

আমি বরাবরই তার পায়ের কাছে নত

আজ বা কাল যেভাবেই হোক
     আমি জানতাম ফিরে আসাটাই
 সবচেয়ে সহজ

সবচেয়ে সহজ নিজের ভিতর অক্লেশে দিনাতিপাত

(ছবিঃ ভেরোনিকা মিনোজি)

Sunday 16 September 2018

নভস্যের অনুবাদ কবিতাঃ ক্রোয়েশিয়া থেকে ইভানা বোদ্রোজিচ



ইভানা বোদ্রোজিচের জন্ম ক্রোয়েশিয়ার বোকুবার শহরে, ১৯৮২ সালে। ক্রোয়েশিয়ার যুদ্ধের সময় কুখ্যাত বোকুবার গণহত্যায় ইভানার পিতার মৃত্যু হয়। মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে পালিয়ে বেঁচে ইভানা আশ্রয় নেন শরণার্থী শিবিরে। সেই দগদগে স্মৃতির অন্ধকার ইভানার কলমকে আলোকিত করে জন্ম দিয়ে চলেছে কবিতা, গল্প, উপন্যাসের। ইতোমধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে ইভানার গল্প, কবিতা, উপন্যাস।



মনে করিয়ে দিও আমায়



যা আমি করতে পারি

তা হল রাতের বাতাস সম্পর্কে লেখা



যখন আমি জ্যাকেট খুলে ফেলি হলঘরে

আমার কাঁধ থেকে, পকেট থেকে

তা গড়িয়ে পড়ে

ক্রিসমাস-ইভের সুগন্ধের মতো

আমার চুলে-মুখে-দৃষ্টিতে আটকে যায়



এবং আমি চাপা পড়ি তোমার ছায়ায়

তোমার গালে আমার গাল

যাতে তুমি শীতের তীব্রতা টের পাও

যাতে তুমি হেসে ওঠো এবং নীচু হও

যেন কিছুই পছন্দ নয়



যা আমি করতে পারি

তা হল একটি স্নো-বল সম্পর্কে লিখে ফেলা



কিম্বা তা শুরু হওয়ার আগেই

ভোরের আলো ফোটার সময়

যখন এটি পূর্ণ হয়ে ওঠে এবং আমি চিন্তা করি

কিভাবে তোমার কাছে এনে দেব

একটুও না ভেঙে

তোমাকে এর কাছে, অথবা একে তোমার কাছে





এরপর আমার যা করণীয়, তা হল

গ্রীষ্মের দানিয়ুব নদী নিয়ে লিখে ফেলা

এবং সেই সময়, যখন আমি ভেবেছিলাম, সবকিছু সম্ভব



কারণ আমি তখন সপ্তমবর্ষীয়া

এবং আমার নীল দুগ্ধপাত্রে

তখন লাফিয়ে উঠেছে মাছ

ভরভরন্ত আমি গড়িয়ে যাচ্ছি বাড়ির দিকে

নিংড়ে ফেলা পানীয়ের ভিতর



এসবই মনে রাখার মতো



(ইংরেজি অনুবাদের মধ্যস্থতায় অনুবাদ করেছেন উষ্ণিকের সম্পাদক)



(ছবিঃ গুগল)

নভস্যের কবিতা ১৩


Image result for convective clouds(


প্রলাপ#১২
             -সোনালী মিত্র 

আজকাল সুখ নিয়ে কিছু লিখতে ভালো লাগে না,প্রেম নিয়েও না।যথার্থ সুস্থতা নিয়ে লেখা চিঠিগুলো একলাই হেঁটে গ্যাছে দাবানলে।ভাদুরে উত্তাপ মাথায় নিয়ে লালা ও ঘামে যেসব প্রেমিকেরা এসেছিলেন,আঁশটে গন্ধ নাকে টেনে তারাও ফিরে গ্যাছেন যে যার ঘরে।

#
প্রতিদিনের সুস্থতা পেতে চেয়ে যাবতীয় পর্দা টেনে রাখে চোখ।দীর্ঘ বুদবুদ্ সাবানজলে ডুবে থাকে এ পোড়া শরীর।
ডাক্তার বলে গ্যাছেন,বারংবার এই আত্মহত্যা প্রবণতা ধীরে ধীরে উন্মাদের দিকে গড়ায়।তার'চে গান শুনুন,গীতা অথবা আত্মাশুদ্ধিকরণ টাইপ বই টই কিছু পড়ুন,ঘুরে আসতে পারেন পাহাড়ে বা সমুদ্রে।তবে জঙ্গল আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই সুখকর নয়।
প্রতারণামূলক গল্পগুলো আপাতত নির্বাসনে পাঠিয়ে দিন।
#
লাল-নীল ক্যাপসুলে ঢেকে যায় বৃষ্টিদিন।ওষুধের ধারাভাষ্যে আত্মহত্যা অথবা উন্মাদ কোন একটা সুর নিশ্চয়ই বাজাবে আমায়।ধন্বন্তরি কবিতাগুলোও একদিন সাইকো হয়ে উঠবে।সঞ্জীবনী বর্ণমালার ভিতরে জেগে উঠবে অ্যাসাইলাম।

শুনে রাখুন প্রিয় পাঠক,সুতীব্র প্রলয়ের আগেএ ভুলভাল লেখনীর অস্থি বিসর্জনটুকু অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ।
(ছবিঃ উটা বিশ্ববিদ্যালয়)

নভস্যের কবিতা ১২

Related image



অসময়
           -তন্ময় ধর



সময় হাসছে
আর
ঝিনুকের গল্পের ঠোঁট ফুলে আলো পড়ছে সমুদ্রে
এত ফেনা
প্রত্ন জাভা ম্যানের পায়ের হাড় থেকে রক্ত পড়ছে ইতিহাসে

তুমি একটু বেশী রাতে বাড়ি ফিরেছো

আগুনের অভিনয়ে
পুড়ে উঠছে আমাদের রান্নার জন্মান্তর

আমরা হাঁটছি
নক্ষত্রের ঘুমের ভিতর দিয়ে

আকাশপ্রদীপের ঠোঁট থেকে রক্ত পড়ছে
আমাদের খেলাধুলোয়

ঝিনুক-খাওয়া দীর্ঘ পাখির ডানার ওপর দিয়ে
সময় সামান্য হাসছে


(ছবিঃ উইকি)