Thursday 15 June 2017

মেঘদূতের মাসঃ অনুবাদ কবিতা

Image result for abstract rain photo

(কৃষ্ণসাগরের তীরের দেশ বুলগেরিয়ায় ১৯৮১ সালে জন্ম ইভাঙ্কা মোজিলস্কার। তাঁর প্রথাগত পড়াশোনা চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে। নিয়মিত কবিতাচর্চায় ২০০৪ সাল থেকে এযাবৎ তাঁর তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি এবং তাঁর ইংরেজি অনুবাদক অ্যাঞ্জেলা রোডেলের সহায়তায় কবিতাগুলির বঙ্গানুবাদ করা হল)  

Image result for ivanka mogilska

ইভাঙ্কা মোজিলস্কা 

সে দিনটি জলে মিশে যায়

সে দিনটি জলে মিশে যায় 
এক গ্লাস জলের মধ্যে সামান্য ভিটামিনের মতো
যা কেউ ভুল করে টেবিলে রেখে গিয়েছে 

এটা থেকে বুদবুদ ওঠে 
শান্তভাবে গার্গল করে
কাছাকাছি কেউ নেই যে
তার ক্ষুদ্র অভিযোগ শুনবে
তাই সে চুপ 
বুদবুদ ঘোরে-ফেরে
সামান্য নীচে অধঃক্ষেপ জমা হয়

সন্ধ্যায়, গৃহস্থেরা ফিরে আসে 
আর ঠান্ডা জলটুকু ছুঁড়ে ফেলে দেয় ড্রেনে।


সেলাইছেঁড়া একটি আকাশ চায় ও

ও সেলাইছেঁড়া একটি আকাশ চায়
সেলাইছেঁড়া একটি আকাশ চায় ও
যার প্রান্তগুলোও ফেটে উঠেছে
সেই ফাঁকা দিয়ে যাতে 
ও লাফ দিতে পারে
এবং একটি সুতো ধরে
সবকিছু সামাল দিয়ে 
উঠে যেতে পারে 
শীর্ষে

ভাবো ডার্লিং

ভাবো ডার্লিং
একটু বেশী করে ভাবো
আমাদের বয়স হচ্ছে
কুঁচকে যাচ্ছি আমরা
ব্যবহৃত এক পেন্সিলের সীসের মতো
সময় আমাদের ঘাড়ে ঝুলে পড়ে
হ্যাঙারের মতো 
এবং ঝুলন্ত জামার মতো
আমাদের হাতাগুলো ঝাঁকাতে থাকে। 

(ছবিঃ শাটারস্টক এবং অ্যাকসেন্ট পাবলিশিং)



মেঘদূতের মাসের কবিতা ৯

Related image

শিলালিপি ১
       -তন্ময় ধর

তোমার ঠোঁট থেকে বায়োলজি পড়াতে এসেছে কেউ। আমি নিওলিথ ব্যস্ততার আলোয় তার নাম দেখি নি। লুচি ও মিষ্টান্নের সুস্বাদু অন্ধকারে তার চোখ অনেকক্ষণ আমার চোখের ভেতরে থাকে। এরপর সান্ধ্য হরিণীর ডাক থেকে উঁচুনীচু গন্ধ ভেসে আসে।
পৃথিবীর নিয়ম এর চেয়ে অনেক সহজ। হালকা হাসি মাঝপথে ভেঙে গেলে ঈশ্বরী হয়। রুমালের অহঙ্কারে আমিই বাকিটুকু মুছে দিয়ে আসি। ছায়াশস্যের ভিতরে একটু একটু করে তোমার আলো তৈরি হয়। গভীর রাত্রির ভাতে জড়ো হয় জন্মরহস্যের টুকটাক।
সে রঙ অগোছালো করে তুলছো তুমি। আশ্রয়ের সামান্য নীলচে লোভ থেকে ভেঙে যাচ্ছে লালাগ্রন্থি। পায়ের কাছে মৃত সন্তানের রঙ। দ্যাখো, তোমার হাতের নোনতা দাগটায় একটা ডাকনাম তৈরি হচ্ছে পাথরের ওপর। 

(ছবি: ফ্রেড রাদারফোর্ড )

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৮

Image result for abstract rain painting

কাঠের পুতুল
             -সব্যসাচী সান্যাল

পুতুল তোমার শেষ যে না পাই
প্রহর হল শেষ—
             --রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রহর শেষ হল আর আমি বৃষ্টির
ফাঁকে অসম্ভবকে দেখতে পাচ্ছি
সে ভিজতে ভিজতে গাড়িতে পেট্রোল
ভরে নিচ্ছে, এরপর লং জার্নি এর পর
তার না থাকা ভেজা বাতাসের মধ্যে মৃদু একটা
আকার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, প্রহর হল শেষ
অথচ কেউ গান গাইছে, গানের জামা নীল
গানের প্যান্টি কালো, গান তার বুক আমার
উদলা পিঠে...আমি আর গান দুজনেই উত্তেজনা
পার করে এসে, শুধু স্পর্শ, শুধু স্পর্শ, চেয়ে
আছি জানলার বাইরে, ওখানে পুতুলের বাড়ি
ওর অনন্তবাগান, ঘাটশিলা, অগাধপিয়ানো...
##
পুতুলের হাতখানি দেখে যাও
পুতুলের রান্নাঘরে সোনালি বৌলে
জেগে ওঠে মাছ। পুতুলই কেটেছে তাকে
আঁশের বাইরে এনে কবিতা করেছে।
ক্ষতখানি দেখে যাও যার জন্য
পুতুল বুনেছে আজ নতুন আঘাত

(ছবি: গিলিয়ান সারা )

Wednesday 14 June 2017

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৭

Image result for abstract rain painting

রাত্রিকালীন -১
            -রাজা

রাতকে উন্মদ জেনে যারা দূরে সরে গেছে দক্ষ জাদুকরের পোশাকে একদিন তাদের বিস্মৃতিতে ফিরে আসব। কেননা প্রতিশোধ ভীষণ ছোঁয়াচে অসুখ...

আপাতত এই নিসঙ্গতা আমাকে নিয়ে এসেছে এক স্পষ্ট অন্ধকারে। এখানে হস্তমৈথুনরত পাগলকে বুদ্ধের মত লাগে। পাঁড় মাতালের বিলাপকে মনে হয় যুদ্ধ শেষে ঈশ্বরের সংলাপ। এখানে হাওয়ায় ভেসে বেরানো গাঁজা গন্ধ আর বেশ্যার অভিশাপ আমাকেও কিছুটা ধার্মিক করে যাচ্ছে

(ছবি: জুলিয়া আপস্তলোভা )

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৬

Image result for abstract rain painting

 বহুধা
        -মণিজিঞ্জির সান্যাল

  আমার অনেক অনেক টুকরো
        সব টুকরো গুলিই আমি
          অথবা কোনো একটি ,
        প্রতিটি টুকরোই আমাকে
             স্পর্শ করে যায় নীরবে
    অখণ্ড থেকে খন্ড
       ভাবনাগুলো নিয়ে খেলা করে
     কখনো বা দুটো ভাগ হয়ে যায়
        খন্ড আর অখণ্ডের মধ্যে
               তীব্র প্রতিযোগিতা
        মূল্যবান খন্ডটা বারবার
           ফিরে আসে আমার কাছে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে
            অমূল্য টুকরোগুলো
ক্রমাগত অবিশ্বাস জন্মাতে থাকে
কতটা কষ্টকর নিজেকে নিজের কাছে
অবিশ্বাস করাটা .........

(ছবি ঃ টেরী স্মিথ) 

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৫

Image result for abstract rain painting



জন্মান্তর
            -বেবী সাউ

এইবার শেষ মরাটা মরবো

                            ভাবলাম 
বিলিয়ে দিতে দিতে সব খতম 
যখন 

বৃষ্টি নামল জোরে 
চারিদিকে মেঘের জ্বর 
চারিদিকে হলুদ বসন্ত 
বাজ-চোখ

জ্বরের ঘোরে ওঠে আসছে হলহলে সাপ 
জ্বলন্ত শলাকায় আঁকা হচ্ছে 
জন্মের শোক 

আহা জন্ম ! 

কোথায় কোন নিষেধের রঙ 
লেগে আছে 
কোথায় কোন পঞ্জিকার পাতা

( ছবিঃ যোয়া) 

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৪

Image result for abstract rain


আশ্বাস
      - সন্দীপন দত্ত

কী দেব তোমায়? কী যায় দেওয়া?

নদীর দিকে কখনও তর্পণ লিখতে নেই
বৃষ্টিকে দিও না কান্না রঙের রোদ
গাছেদের প্রত্যাশা নেই কারও ছায়া
আর গুম বসে থাকা মেঘকে তুমি
গান শুনিও না ভুলে

কী পারি আর আশ্বাস ছাড়া
কাল থেকে সিগারেট ছেড়ে দেব
পরশু থেকে রাত করে ফিরব না আর
আজ শেষ মদচুমুক সত্যি

এরকম টুকরোটাকরা গুছিয়ে
তোমার দিকে তাকাই
ব্যর্থ অভিশাপের মতো মুখ করে
টেনে নিই বুকে আর ভালোবেসে ফেলি
শান্ত হাহাকারের মতো চুমু আঁকি চুমু আঁকি
কপাল বদলে দেব মধ্যবিত্ত কপাল

তোমার অতীত বদলে দেব
তোমায় তছনছ জীবন দেব
একশ আটতম পদ্মের বীজ খুলে
পুঁতে দেব বুকে আর বাগান হবে
তোমার বেহায়া ক্লান্ত দুখ

আমাদের নেই নেই মাঝে কুদরতের মতো
নামবে কোনও রাতে অকালবৈশাখী
ভেসে যেতে যেতে বলে যাব
সব ঠিক হয়ে যাবে শেষ পর্যন্ত

সব ঠিক না হলে আমার তো কিছুই
থাকবে না আর তোমায় দেওয়ার

(ছবি: বারবারা হার্মস )

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৩

Image result for abstract rain


ভুল মরশুমে দেবতাকেও যা শুনতে হয়েছিল
                                            -  অভিষেক ঘোষ

আজ আমায় এতটা ফাঁকা করে দাও যাতে আমি পূর্ণ না হতে পারি।আজ আমার জানলায় তুমি রোদ দিয়ে যেও না...আমার অন্ধকারে তুমি প্রদীপ দিয়ে যেও না...আমার তুলশি মঞ্চে তুমি হরিণ শিশুর কান্না দিয়ে যেও...
আমি সেই কান্না খেয়ে খেয়ে বেঁচে ওঠার বহু পূর্বে সহস্র বিসর্জনের মত জলে ডুবে যাওয়ার প্রস্তুতি পর্বের আগে তোমার কাঁধে চেপে ঘুরেছি.
সবাই আজ খুব নেচেছে,আমি কাদছি বলে...সবাই আজ খুব খুশি আমি ভাবছি বলে...সবাই আজ খুব রাগি আমি লিখছি বলে,
তাই আমাকে আর কিছুক্ষণ পরেই জলে ফেলে দেওয়া হবে,আমার মাংস উঠে যাবে,আমার চোখ উঠে যাবে,আমার রং ধুয়ে যাবে...
আমি কাঠামো হয়ে পরে থাকব আরও মাসচার এই পুকুরের ধারে...একদিন কেউ এসে আমায় আবার তুলে নিয়ে গিয়ে মাংস দেবে,রং দেবে,চোখ দেবে...
আমি বলব—প্রাণটা দাও এবার...
সে বিড়ি খেতে খেতে আমার ঠোঁটে হাত বুলাতে বুলাতে বলবে পেরান?সে আবার কি জিনিসরে ভাই?  

মেঘদূতের মাসের কবিতা ২




ভ্রূণ
       - পাপড়ি গুহ নিয়োগী

যে শহরে তুমি মাংসবিক্রেতা ছিলে
সে শহর আজ তোমায় তাড়া করছে

তুমি কালো ধোঁয়ার ভেতর ছুটছো
আঠালো জলের ভ্রূণেরা ভুলে গেছে
তুমি ওদের শব্দ পিতা ছিলে

ডুয়ার্সের জঙ্গল সত্যিই সুন্দর নিরাপদ
এখন কান্না এলে পরের জন্মের কথা ভাব

(আলোকচিত্র : উইলিয়াম গ্রিনফিল্ড) 

মেঘদূতের মাসের কবিতা ১






ভূ খুঁজে 
      - জয়শীলা গুহ বাগচী 

রাস্তা নেমে গেছে ভাবতরঙ্গে
যে সব স্রোতের বুকে পিঠে বিন্দুবাসিনী
সেখানেই মরালীর কিতাবমার্কা গল্পগুজব
ভাব তার চকিতে চকিতে
সুগন্ধি সাজ
ছমক ছমক রাস্তা
আঁচলে ঘড়ির কাঁটা
জামদানী টিকটিক
রাস্তায় পুনশ্চ লেখেনি কেউ
ছুটি ছাটা রা ঘাড় বাঁধছে
মাসল বাঁধছে
জল গুছোতে গুছোতে
নিজেরাই নিভন্ত ব্যাগ
রাস্তা নয়
ভাব গেছে তরঙ্গের ভাব রূপে
আলুর শর্করা বিকেল নিচ্ছে
বিশ্রাম নিচ্ছে
এই বিশ্রাম বিকেল
এমত সংকেত ছিল
তারপর সাদাটে সাদা
প্রজাপতির উড়ন্ত... ওড়া ওড়া

                             
(ছবি: সিনথিয়া লীগেরো )

Sunday 4 June 2017

প্রাবৃষার কবিতা ১২

Related image


ধাতু 

-নীলাব্জ চক্রবর্তী


উড়ে যাওয়ার একেকটা ভঙ্গি
স্থির হয়ে আছে
এভাবে
জলকে আঙুল ব’লে ডাকি আর
উষ্ণতার সবটা লেখা হয়ে গেলে
চিহ্নের ভেতর থেকে
খুলে ফেলি টুকরো দিন
ভাবি
পুরনো রাস্তার কথায় কথায়
সময় একটা রঙ হয়
তার পোশাক সম্বন্ধে তার নগ্নতা সম্বন্ধে
যা কিছু আমরা জানতে চাইনি কখনো
সাদা দেওয়ালের গায়ে
তবুও
আপেল বদল ক’রে কীই বা হোলো আমাদের
ধাতু বদল ক’রে কীই বা হোলো...

( ছবি- হ্যারি মুডি) 

প্রাবৃষার কবিতা ১১

Image result for abstract painting italy

জাগো গ্রাম
-অনির্বাণ পাল

হলদিনালার পাড়ে দেখা হওয়ার কথা ছিল 
কি? যেখানে শ্রাবণ বলে কোন মেয়ে নেচে
বেড়ায়। এখনো পুকুরের জলে হাঁস সন্ধ্যা আলো
জ্বালে। প্রত্যেকটি ঘরের আনাচে-কানাচে ভালোবাসার
বাস। হাওয়া মাতাল হয়ে গান ধরে। মাঠের,
আলু, সবজি, প্রভাতী আলো জেগে থাকে।
মেঠো পোকামাকড় কোরাস ধরে। টিনের
চালার ঘর- গর্ভবতী মায়েরা দিন গুনে।
গান ধরে বিকেলের মাঠ- ওগো প্রিয়তমা গ্রাম
জেগে ওঠো নদীটির তীরে...

( ছবি- মিরিয়াম দি পেন্টা )


প্রাবৃষার কবিতা ১০

Related image

অস্তের কনফিউশন
-অস্তনির্জন দত্ত



এইখানে সন্ধ্যা বড় দেরি করে আসে ,এই জুন , দিল্লিবোর্ড , জলবিহার
আমি অপেক্ষা করি , ধৈর্যশীল হই, প্রার্থনা করি,
আর ,
এই সব সন্ধেয় আমায় কিছু দীর্ঘ চুল জড়িয়ে রাখে, 
স্নানসারা , ইতস্তত , কারো বুকে
ফুটে থাকা ইস্ত্রি র দাগ , শুকন পাতার মত , যেন খুঁটে খুঁটে খুঁটে
নেওয়া যাবে , আমি বসি
চায়ের দোকান এক ক্লান্ত হওয়ার জায়গা, চা হাতে , বিস্কুট হাতে
আমার মাথা নুয়ে যায় , একে নাব্যতা ভাবি ,ভাবি
বার্চ দিয়ে এই মন মাপা যাবে, খারাপের অংশগুলি , আর বৃষ্টি শুরু হয়
চাট্টান বাঁ পাশে রেখে চলে যাই...উঁচু পাথরের উপর উঁচু উঁচু
বার্চ গুলি ,বৃষ্টি থামে ,তাদের ঈষৎ কষাটে গায়ে ইস্ত্রির দাগ লেগে থাকে, ধৈর্যশীল , প্রার্থনারত...
উঁচু উঁচু বার্চ , বৃষ্টি থামার পর আমার ভিজে যাওয়ার উচ্চতা মনে হয়...

( ছবি- গিয়াকোমো বল্লা) 

প্রাবৃষার কবিতা ৯

Related image

ফলস্

-অভ্রদীপ গোস্বামী

সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছি আজকাল
অথচ লুকোচুরি খেলতে খেলতে তুমি 
অভ্যস্ত চোখেও খুঁজে পাচ্ছ না আমায়
জলদাগ ফুলরেণু প্রজাপতিটির চলে যাওয়া 
দেখেও না দেখার ভান করছ 
ফুল নদী সহজ সঙ্গমের সোজাপথ 

এবার বিবর হও 
গর্ত খুঁড়ে ঢুকে যাই প্রাকৃতজনের জঠরে 
মৃত কিছু খাদ্যের দানা খাই 
আর জেনে বুঝে আসি 
সেই 
প্রকৃত সঙ্গম। 

(  ছবি- মার্ক ওয়েবস্টার )

প্রাবৃষার কবিতা ৮

Related image

যে সময় গুলো আর ধরা যায়না

-অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় 

একাঘরে বসে থাকি
তোমার ছায়া দেখে শান্ত করি নিজেকে
সময় এগোয় 
আমি বুঝতে পারি 
আমাদের দুজনেরই হৃদপিন্ড চিরে গ্যাছে
আমরা দুজনেই ছিড়ে যাওয়া দুটো মৃতদেহ
আমাদের যা যা চলে গ্যাছে
সেগুলোর অবস্থান ছিলো রংপেনসিলের মতো
আমাদের যা যা চলে গ্যাছে সেগুলোর
উষ্ণতা ছিলো পুড়িয়ে ফ্যালা 
সেই খাতাটার মতোই যার 
ছবিগুলো চিরকাল তোমার ভেতর সতেজ হয়ে থাকবে। 

এখন
একা ঘরে বসে 
তোমার ছায়ায় নিজেকে দেখতে পাচ্ছি
আমি বুঝতে পারছি
পৃথিবী নিভে আসছে
আর আমরা দুজনেই
ক্রমশ
ঢুকে পড়ছি ভূগর্ভের তলে... 
আরও তলে...

( ছবি-  ইগর স্নেগিউর)

প্রাবৃষার কবিতা ৭

Image result for abstract painting serbia



অপরাহ্ণ 
-হাসান রোবায়েত


প্রতিটি বসন্তের দাগে ফুটে আছে পাইরেট ফুল

জ্বলে জ্যান্ত একটা রোদ—আপামর চিতা 
লাফিয়ে পার হচ্ছে চৌচির হাওয়া

একা রাস্তার জানালায় এই পিলুবিশ্রাম—

কখনো বন্ধুর ভেতর টলমল করে
সমগ্র মুদিদোকানের ঘ্রাণ

( ছবি- বেহশাদ আর্জোমান্দি) 

প্রাবৃষার কবিতা ৬

Related image


ছায়া মোড়

-শৌভিক দে সরকার


ছায়াহীন হয়ে ওঠার মুহূর্ত, 
একটি সামান্য বাড়ি ভিজে যাচ্ছে
তোমার অন্ধত্বের খবরে।
মেঘের গোড়ালি অবধি
দাঁড়িয়ে থাকা একটি দরজা..
ছায়া আর ছায়াঘন বাড়ির সীমানা
মেহেদি পাতার কাঁচা বেড়া, রেড়ির সহজপাঠ
স্বল্পালোকিত কয়েকটি শর্ত
হাত ডিঙ্গিয়ে আঙুল
আঙুল ডিঙ্গিয়ে দূরের অমলতাস
অর্থহীন কয়েকটি পিঁপড়ের সারি
খুব নিচু হয়ে আসছে আলো,
এগিয়ে আসছে বর্ষাপ্রকল্পের পরিচিত মাসগুলি
নির্ধারিত ভুল আর অন্য গ্রহের বাতাস।

( ছবি- মাউরিসিও পাস ভিওলা) 

প্রাবৃষার কবিতা ৫

Image result for abstract painting serbia



সাদা চাদর
- অভিশ্রুতি রায়

নিষ্পাপ অথবা পাপে মুড়ে আছে
           এক অপার্থিব।
সাদা ধোঁয়ায় বিলীন হচ্ছে জ্ঞানেন্দ্রিয়
চাদরটা একটা জীবাশ্ম।

সাদায় আর শূন্যস্থান নেই......
ইতিহাসবিদেরা বাস করেন। 

(ছবি- ওগ্নিয়ান কাউজমানভ)

প্রাবৃষার কবিতা ৪

Related image




তোমাকে, ভলক্যান 
-অনিন্দ্য রায় 

কামারের হাতুড়ি, হে অগ্নি, সৌরচুল্লির এত নৈকট্য তোমার,সেঁকে দিও রুটি আর আহারের শেষে
( তুমি তো নিজেই ক্ষুধা ) ঢেঁকুরে মার্কারি কাঁপে; এত জ্বর, ধাতু না তরল হলে যৌন হয় না,ছুরি 
কঠোর হয় না, আঘাতমনিব ও গো, তোমার জিহ্বার তিন, ছোবলের ভস্ম সশরীর, তবু কেন দর্শন 
পাই না; না, তোমার সত্তা নাই, শুধুশুধু গুণাগুণ আছে, সূর্যের আত্মভর তোমার বিভ্রম তোলে,সকল দাহ্যে,তেজে, আমাদের লালনপালনে,নাস্তি হে, তোমার উদ্গার আজ পরাণের ক্লেশ মনে হয় 


( ছবি- গেরহার্ড রিখটার)

প্রাবৃষার কবিতা ৩

Image result for abstract painting



কোনো শিরোনাম নেই 
-অনিন্দিতা ভৌমিক

ঠান্ডা চোখের বয়স
আর ক্রমে তোমার প্রিয় হয়ে উঠছি  
কাঠামোর উপর বিষয়কে দাঁড় করিয়ে
বুঝে নিচ্ছি যে, কোনো ধারণাই
উচ্চতার পক্ষে যথেষ্ট নয়             
    মেধা ও স্পর্শের মান
তাকে সাবলীল করে তোলে
প্রতিটি ঘরে আরোপ করে ন্যূনতম আয়ু

অচেনা ডাক এখানে আঙুল ধরে থাকছে
শিরা বেয়ে হাঁটু বেয়ে গুমোট বাতাস বেয়ে        
উঠে আসছে চিত হয়ে
শুয়ে থাকার মতো অভিজ্ঞতা

খোলা জুতোর সামনে             
তার প্রভাব অল্প বিনীত করে রাখা
একাগ্র করে রাখা ত্বকের সুশীতল বোধে


(ছবি - ক্যাথেরিন জোন্স) 

Saturday 3 June 2017

প্রাবৃষার কবিতা ২

Related image




প্রাপ্তবয়স্কতার পূর্বদিক
-রঙ্গন রায়

বান্ধবী তো ছিলনা কখনো , সবাই জোনাকির মত
কুলকুচির শব্দেরা ঘরে ফিরে আসে শুধু ,
প্রতিটি ভোরবেলা নিখুঁত সাজানোর জন্য
শকুন্তলার পায়ে পায়ে হরিণ ছানা
আমাদের দেওয়ালে ঘুরে বেড়ায় , নির্ভয়ে
ইদানীং দুষ্মন্তের ওপর আমার ভয়ানক রাগ হয়,
প্রকৃত প্রস্তাবে সে হারিয়ে গেছে
বাবার লুঙ্গির সেই দুর্দান্ত কোলের মত

এখনো ঘুমিয়ে পড়ি আমি আলগোছে
                        দেওয়ালের এপার হতে

চুল কাটাতে প্রতিটি শিশুই যেরকম ভয় পায়
যতটুকু চিৎকার ,
আমার চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা , রাজদূতের শব্দ
কোন হর্ণ লাগতোনা বলে অল্প অল্প করে
সেলুনের কাছে সরে এসেছি
নন্টে - ফন্টের সাথে তখন কি মধুর বন্ধুত্ব;
কি এক অসম্ভব টান থেকে আফটার শেভ লোশনের গন্ধ

ছড়িয়ে পড়ছে গালে , প্রতিদিন একটু একটু -




(ছবি: রবার্তো ক্রিপা )

প্রাবৃষার কবিতা ১

Image result for hilbert space

যৌথ কবিতা 
-পারমিতা চক্রবর্তী

"কাল আসবো " বলে পালিয়ে এসেছো বৃত্তের আড্ডা থেকে 
অনিকেত এভাবে গল্প সাজালে চরিত্রের মুখবন্ধ পরিবর্তিত হয় 
যার প্রতিকৃতিতে মাল্য দান করে যৌথ কবিতা

আজকাল অনেক পরিবর্তন দেখি 
যে চোখে বৈধব্য দেখতাম 
তাতে অসূচী চারু'র ঠোঁটে'র স্পর্শ দেখি 

তারপর 

গল্প বিদেশী হয়
ভোরে'র চুমু শীত চোখে লাগে 
আমি তো শীত হতে চেয়ে শিবালিক
হয়ে গেলাম 
অন্তর্ধান হল গতিবেগ 

সত্যি 

তোমার শীতকাতু'রে মাংসে ফায়ারপ্লেস বড় কম 
সময়ে'র পরিধি সংক্ষিপ্ত হলে
জন্মের চিতায় বাল্যচাঁদের 
সতীদাহ হয় 

এ মৃতপৃথিবী মীরজাফর দেখেছে 
যৌথ কবি দেখে ...