Thursday 25 April 2019

চৈত্রের অনুবাদ কবিতাঃ সোমালিয়া থেকে ওয়ার্সন শিরে


Image result for warsan shire images

পশ্চাদমুখী



ঘরের ভিতর পিছন দিকে হেঁটে তাঁর সাথে কবিতা শুরু হতে পারে

তিনি তাঁর জ্যাকেট খুলে ফেলছেন আর বসে পড়ছে্ন বাকি জীবনটার ওপরেই

এভাবেই আমরা বাবাকে ফিরিয়েছি।

    আমিই পারি নাকে রক্ত ফিরিয়ে আনতে, পিঁপড়েরা গর্তের দিকে দৌড়বে

    আমরা বড় হয়ে উঠব ছোটখাট জিনিসের ভেতর, আমার স্তন অদৃশ্য হবে,

    তোমার গাল নরম হবে, দাঁত বসে যাবে মাড়িতে।

    আমি ধরে রাখতে পারব ভালোবাসা, শুধু শব্দগুলো বলতে পারব।

     হাতের বদলে লাঠি থাকুক ওদের কাছে যদিও বিনা সম্মতিতে ওরা ছুঁইয়েছে আমাদের,

     আমি লিখতেই পারি কবিতা এবং তা অদৃশ্য করে দিতে পারি।

     গ্লাসে মদ উগরে দিচ্ছেন পালক-পিতা,

     মায়ের দেহ গড়িয়ে উঠছে সিঁড়ি দিয়ে, হাড় ছড়িয়ে পড়ছে অন্ধকারে

     তখনো সে সন্তানপালনে ব্যস্ত

     আমরা হয়ত নিরাপদ সন্তান!

     আমি তাঁর পুরো জীবনটাই আবার লিখে দেব, আর এবার সর্বত্র শুধু ভালোবাসা

     তুমি তার বাইরে কিছুই দেখতে পাবে না

 তুমি তার বাইরে কিছুই দেখতে পাবে না

 আমি তাঁর পুরো জীবনটাই আবার লিখে দেব, আর এবার সর্বত্র শুধু ভালোবাসা

 তুমি তার বাইরে কিছুই দেখতে পাবে না

তুমি তার বাইরে কিছুই দেখতে পাবে না

আমি তাঁর পুরো জীবনটাই আবার লিখে দেব, আর এবার সর্বত্র শুধু ভালোবাসা

 আমরা হয়ত নিরাপদ সন্তান

 তিনি হয়ত সন্তানপালনে ব্যস্ত

 মায়ের দেহ গড়িয়ে উঠছে সিঁড়ি দিয়ে, হাড় ছড়িয়ে পড়ছে অন্ধকারে

গ্লাসে মদ উগরে দিচ্ছেন পালক-পিতা,

আমি লিখতেই পারি কবিতা এবং তা অদৃশ্য করে দিতে পারি।

হাতের বদলে লাঠি থাকুক ওদের কাছে যদিও বিনা সম্মতিতে ওরা ছুঁইয়েছে আমাদের,


 আমি ধরে রাখতে পারব ভালোবাসা, শুধু শব্দগুলো বলতে পারব।

তোমার গাল নরম হবে, দাঁত বসে যাবে মাড়িতে।

   আমরা বড় হয়ে উঠব ছোটখাট জিনিসের ভেতর, আমার স্তন অদৃশ্য হবে,

আমিই পারি নাকে রক্ত ফিরিয়ে আনতে, পিঁপড়েরা গর্তের দিকে দৌড়বে,

এভাবেই আমরা বাবাকে ফিরিয়ে আনছি।

তিনি জ্যাকেট খুলে ফেলছেন এবং বসছেন বাকি জীবনটার ওপরে

ঘরের ভিতরেই কবিতা শুরু হতে পারে তাঁর সাথে, পিছন দিকে হাঁটতে হাঁটতে।



(ওয়ার্সন শিরের জন্ম ১৯৮৮ সালের ১ অগস্ট কেনিয়ায়। মাতা-পিতা সোমালিয়ার নাগরিক। পরে বৃটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন শিরে। প্রথাগত পড়াশুনা কলা এবং সাহিত্য বিভাগে। 'মাকে সন্তানপ্রসব শেখানো', 'তার নীল শরীর' ইত্যাদি শিরোনামে তাঁর একাধিক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে )



(ছবিঃ মারিয়া হাস্কিন্স)



   (অনুবাদ- সম্পাদক, উষ্ণিক)

চৈত্রের কবিতা ১

Related image


ঘড়ির নাম, ক্রৌঞ্চবক
                               -জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি
                               

এভাবে চেপে ধরবে, ঘাঁটলেই মাথা আমি পছন্দ করছি না। ঘাঁটলেই তুমি মাথা, অভিজ্ঞতা ভাবো

তুমি ভাঙতে পারো, একা আমি কাজ। এভাবে এতটুকুও চিড়ে ভিজবে না। ক্ষেত্র এসবে হাসিঠাট্টাই সম্বল

সম্ভব বললে আমি আলোচনার জঘন্য বুঝি। আমি হাঁটছিলাম। তুমি তাকিয়েছিলে। অসম্ভব বলতে, এইটুকুই এক আশ্চর্য স্পর্ধা

সহ‍্য করাটা আমি আর ছুঁতে চাইছি না। জাস্ট একটা সোফায় বসা বাঘ। সোহাগে শিকলে রাত। গোটা মুখে তুমি আর প্লিজ মিথ্যা বোলো না

আমাকে অন্তরাল পায়। মাঠে পা ঝুলিয়ে বিচরণ করছে সদ‍্য সাদা সম্মত। আমি তুলে রাখি। একে তুমি হাসিল ভাবছ ? বাধ‍্যতা কখনোই বিরক্তি করা নাগর নয়

তোমার সঙ্গে আমার কোনো সারাজীবন নেই। তবু একটা গোটা দিন ও রাত, সাঁতার, আসলে এক ডিঙ্গি নৌকা, যেখানে দুজনে উঠে বসলে অস্পৃশ্য খিলখিল পায়

আচ্ছা বলো তো, ধীর পায়ে হাঁটলে কি পা ঘন হয় ? অবাক, আসলে একটা থামার নাম। জাস্ট পজ্। নীচে দৃশ্য ক্রমে পরিস্কার হল। কাঁটারা ঘড়ি হচ্ছে। ঘড়ির নাম, ক্রৌঞ্চবক। রোদ লেগে ওতে জং ধরে আছে। জলের তো কোনো দোষ নেই

ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি, মনে পড়লে, থাকাটার নামই জ‍্যামিতি। নদীর ধারে একটা বাড়ি করব। ঠিকানাটা মনগড়া, যেখানে জল বিক্রি হবে না



(বর্ণান্ধ শিল্পী আই.জোনাথন)

চৈত্রের কবিতা ২

blind painters jeff hanson colour field flowers grass

একুশ বছরের প্রথম দিন 
                           -রঙ্গন রায় 


প্রতিদিন আমাকেই
 কথা বলা শুরু করতে হয়
আজ তুমি করলে

বসন্তকাল মধ্যভাগে এসে পৌঁছলে
দরজায় কড়া নাড়ে
ফিসফিস করে বলে 'শুভ জন্মদিন'

১৫ই মার্চ এলে বোঝা যায়
মানুষ এখনো ভালোবাসতে জানে
ঠিক ভোরের ফুলে প্রথম সূর্যের মত

কারা এখনো চায়ের কাপে আদানপ্রদান করে প্রেম
ধোঁয়ার সাথে উড়ে যায়
নিশ্চুপ এই তাকিয়ে থাকা

এবং দিন শেষ হয়
টোটোয় চড়ে ফিরে যেতে যেতে
প্রতিটি প্রেমিকা অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে

ক্লান্ত বাবার পাশে এসে বসে থাকা
মায়ের ছোট্ট বাটিতে দেওয়া পায়েস
আমাদের প্রকৃত সম্পর্কের কথা মনে করায়


হুল্লোড় দিনের শেষে
প্রতিটি মানুষ একা হয়
একা হওয়া আসলে মানুষের উদ্দেশ্য

জ্যোৎস্নার রাস্তায় শিশুটির বাবা
একপ্যাকেট পাউরুটি নিয়ে আসে
পিতা পূত্রের হাসি বিনিময় শ্রেষ্ঠ উপহার

পুরনো উপহার গুলো থেকে
শৈশবের গন্ধ ভেসে আসে
ফেলে আসা কুড়িটা বছর আমাকে জীবন দেখতে শেখায়
১০
অথচ কত কিছু কথা ছিল বাবা মা-কে বলার
প্রতিদিন বড় হয়ে উঠি
ভালোবাসার কথা বলা হয়না





(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী জেফ হ্যানসন)

চৈত্রের কবিতা ৩

keith salmon blind painter art abstract landscape orange

ছায়া
       -রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

শ্মশান তাপে অগ্রন্থিত বাল্যখেলা
রাতের পরিযায়ী কামুক জ্যোৎস্নায়
মাখামাখি স্বপ্ন আর ব্যর্থতা

নেমে আসা মাটির দিনগুলো
যেন জ্যামিতিক প্রতারণা
স্মৃতিছায়ায় ভাসে দীর্ঘ সংলাপ



(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী কীথ স্যালমন)

চৈত্রের কবিতা ৪

blind artist painting

শুভ লাল
         -ঈশানী বসাক

ফেরার পথে দেখি একটা মৃতদেহ। খাটে শোয়ানো। দুটো পা লাল টুকটুকে আলতা রঙে রঙিন। মুখ ঢাকা। দাঁড়িয়ে রয়েছি যদি মুখ থেকে ঢাকা সরে। স্ট্রেচার থেকে নামাবার সময় সরলো চাদর। বয়স হবে আমাদের মতো কিংবা সামান্য বছর তিনেক বড়। এক পাশে একটি ছেলে বসে আছে। হাতে কাগজ। মাথা নীচু করে সে ছাপ নিচ্ছে পায়ের। ধরে রাখার বড়ো চেষ্টা মানুষের জীবনকে। তবু সাড়া দিতে পারে না শরীর। ফুল , তেল, ধূপ জুড়ে মৃতেরা ঈশ্বর হয়ে যায়। মেয়েটার ঠোঁটের কাছে সামান্য হাসি। এমন ছোঁয়াচে রোগের কাছে ফিরতে চাই আমি। মনে হয় গিয়ে পাশে বসি। তবুও তো চলে যেতে পারবে না কেউ। বলতে তো পারবে না যে আমার যাবার কারণ ছিল কিছু। আলতার ছাপ কাগজে। বহুবছর বাদে সেই পায়ের ছাপ দেখে অক্ষমতার কাছে গিয়ে চোখ বুজবো আমরা। চিরকাল আলতা দেখলে চোখ ফেরাই। আলতা বড়ো মনে করায় ...





(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী ম্যারী সেমৌর)

চৈত্রের কবিতা ৫

Image result for sargy mann painting



এমন বিচ্ছেদ
                      -তমালিকা চক্রবর্তী

বিচ্ছেদ চেয়েছিলে তুমি। দিয়েছিলাম। সেদিনের পর থেকে আমাদের আর কোনোদিন কথা হয়নি। দেখা হয়নি। হয়ত কোনোদিন দেখা হবেও না। তবুও আজ জানতে ইচ্ছা করছে, বলতে ইচ্ছা করছে কানে কানে, যে বিচ্ছেদ চেয়েছিলে, আদৌ কি তুমি তা পেয়েছ? এই ক বছরে কি একবারও মনে মনে আমার কথা ভাবনি।

মিথ্যে বলব না। ভেবেছি আমি আরেকবার। যতবার নৌকায় উঠি। ততবার মনে হয় পাশে বসে আছি তুমি। এবার বলবে,  দেখো দেখো সূর্যের আলো জলে পরে কেমন মায়াবী হয়ে উঠেছে।

যতবার প্রেমিক-প্রেমিকাদের হাত ধরে যেতে দেখি। মনে হয়  পাশ থেকে বলবে তুমি, এই ন্যাকা ন্যাকা প্রেম পোষায় না। ইনফ্যাক্ট প্রেমটাই ঠিক পোশায় না। নেহাৎ তোকে ভালোবেসে ফেলেছি।

বিশ্বাস কর আমার একবারও জানতে ইচ্ছা করে না, তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো। সত্যি বলছি, তুমি  বিয়ে করেছ কি না সেটা জানতেও ইচ্ছা করে না আমার।

শুধু জানতে ইচ্ছা করে, এই ক'বছরে একবার আমার কথা ভেবেছ?

(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী সার্গী মান) 

চৈত্রের কবিতা ৬

Image result for sergej popolsin painting


শেষ কথা
            -পিয়াল রায়

কথা একটাই
'শেষ কথা'
ধুলোর আঁধারে এই একটিমাত্র 'শেষ কথা'

গায়ে দামি শাল, জমিজিরেত, গোয়াল ভরে ওঠে
গির্জার ঘন্টাধ্বনি, আজানের সুর আসে ভেসে

মাটির বাড়ি
দোতলার জানলা খোলা
বাইরে ও ভিতরে দেদার কথা
তুলোর মতো হাওয়ার গায়ে লুটোপুটি
একটা দুটো কামরা কেবল ফাঁকা পড়ে থাকে

কথার বাড়ি ভরে ওঠে
বড় হয়, আরো বড়
শেষ নেই তার

ধীরেধীরে দেখা যায় কিছু কিছু কথা
আলোয় চলে গেছে
বেশিরভাগ কথা থেকে গেছে কালো কালো ছায়ার মতোন
ছড়িয়ে গেছে বাতাসের ভিতর, আগুনের ভিতর, মরণের ভিতর

বাদুর এসে বসে, চামচিকে ওড়ে,মাথার ভিতর একটা দুটো ইঁদুর
কোনো শব্দ নেই

সমস্ত ছেড়ে যাওয়ার আগে জীবন কথা বলে ওঠে
'শেষ কথা'
যার আয়োজনেই গোঁজামিল চলে সমস্ত জীবন


(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী সের্গেই পোপোলসিন)

চৈত্রের কবিতা ৭

Image result for binod behari mukherjee painting

মৃতদেহ ও রোদচশমা
                                -তন্ময় ধর 

অনুভূতিহীন একটা রঙ
   চমকে ওঠে
     দৃশ্য হতে থাকা একটি হাত ও অক্ষরেখায়

কাটা-ফলের ভিতর ঢুকে পড়া তোমার সুখ ও অন্ধকার

কোথায়, কিভাবে
হারিয়ে ফেলেছো রক্ত, ছায়াপথ, দুধ ও নির্জনতা?


একটি তাপপ্রবাহ চোখ সরিয়ে নিচ্ছে আমাদের অভিনয় থেকে

ভুল আলো-শব্দ ছিঁড়ে
আমাদের রঙিন অংশ
তুলে নিচ্ছে একটি আকাশ ও পাখি




(ছবিঃ আংশিক অন্ধ শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়)

চৈত্রের কবিতা ৮

Image result for hal lasko painting



অতিবৃষ্টি
               -সুকল্প দত্ত

কিছু খেত পোওয়াই রাতে
নির্ঝঞ্ঝাটে কত দাগ
গুঁড়ো গুঁড়ো মেঘে
মিয়ানো সিরাপ
আশরীর নখবালিশ
ঝরোখার মন
সে তোমার বৌবহর
কিলমিশ এই হিটারে
ধানডিহি বিষাদ মরাল।





(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী হ্যাল লাস্কো)

চৈত্রের কবিতা ৯

Related image


অভিমানও একটি মৃতশহর
                             -শিবু মণ্ডল 

মৃতদের কোনো নাম ধরে ডাকতে নেই
তারা পূর্ণিমার ভোরের চাঁদের মতো
ভীষণ একলা; অপেক্ষায় থাকে
কখন ছাদে এসে তাঁকে দেখবে তুমি
ভিড় থেকে সরে এসে কখন ডাকবে তাঁকে।

যে নদী শিয়রে রেখে শুয়েছিলে, তাকে
ডিঙিয়ে চলেও যাবে ছাদের কার্নিস ধরে

তুমি মৃত শহরের কাছে যাবে,
আপন করতে চাইবে।তবু ভয়ে আটকে যাবে
পা; পাছে তুমিও সেই শহরের মতো হয়ে যাও!




(ছবিঃ অন্ধ শিল্পী আর্থার এলিস)