Sunday 13 January 2019

হিমেল মাসের কবিতা ১

Related image



নিশিডাক
                 -সোনালী মিত্র

দেবোত্তম ,তোর বৌটা এত সুন্দর কেন!
তোর কর্কটে ভর সন্ধ্যায় বউকে একা কেন ওষুধ কিনতে পাঠাস!
জানিস না , ওষুধের ভিতরে আস্ত মনখারাপ ভরা থাকে
জানিস না , নিশিহায়নার চোখে রিপুভুত থাকে
খোলা বেণী পেলে অকস্মাৎ জাগ্রত হতে পারে  !
#
মাৎসর্য সরোবরে ঝমঝম ঢেউ উঠলে , তোর বউয়ের
শাঁখাপলা পরা নরমহাত দুটো অযথাই মোম হয়ে গ'লে পড়ে
পুরুষশঙ্খে , উত্তাপে বেজে ওঠে অনাদি শঙ্খ ,
ভদ্রতা-টদ্রতা লাথি মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে
অথচ , ওষুধ নিয়ে ঘরে ফেরাটুকুই তোর সান্ত্বনা ।
#
বিছানায় পড়ে থাকা তোর শরীরটাকে ক্ষমা করি বলেই
শূন্যদের ঘরে প্রেমকে পাঠিয়ে আক্রমণাত্মক একটা বৃষ্টি
পাঠাতে চাই তোর বউয়ের বুকে , তোর বউয়ের
শ্বাসের ওঠাপড়া অত্যান্ত জরুরি তোর সুস্থতার কাছে
ওষুধের চেয়ে কার্যকরী উপকরণ নিজের চোখে নিজের পতন দেখা ।
#
তোর সুন্দরী বউকে এখন হিংসা হয় না , করুণাও নয়
ওষুধ নিয়ে ঘরে ফেরা হাত দুটোকে অন্নপূর্ণা মনে হয়
তোকে , ঠিক বিদূরের মতো লাগে , তোর তৈরি নাটকের চরিত্ররা
তোকে অবজ্ঞা করে যে পালাটি করছে , তুই তার শুধুই দর্শক
তোর রোগটিকে নিরোর বেহালার মতো মনে হয়

( ছবিঃ মরিৎজ কর্নেলিস এশার ) 

হিমেল মাসের কবিতা ২

Image result for mathematically impossible images painting

প্রেমের কবিতা
                 -সৌমনা দাশগুপ্ত


আলোপোকা উড়ে যাবে একদিন
সেদিন এঘরে এসে ডানা খুলে দিয়ো
আল্ট্রামেরিন শীতে ডুবে আছে নীল

মাঝেমাঝে মনে হয় আমিই শকুন। সারাদিন ভাগাড় হাঁটকে চলেছি। তবু আনন্দ, তবু তো আমার খুঁটে খাওয়া আছে দিগন্ত। জ্বর মানেই কিছুটা তাপ সংগ্রহ করা, এই তো সবটা নয়, আমি পার্স্পেক্টিভ ভেঙেচুরে দেখি ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার অনায়াস গতায়াত এই ক্যানভাসে। যেন খড়ের ইঙ্গিত থেকে ভেসে উঠছেন প্রতিমা, যেন এই খড়টুকুই সত্য, যেন পাঞ্চজন্য শাঁখ বেজে উঠল খারিফ শস্যের বেদনায়
পূর্বাভাস তেমন কিছু বলেনি
শুধু শুধুই প্যালেটে ঢেলেছি
বার্ন্ট সায়নার বিশুদ্ধ চিৎকার

ক্যারামেলাইজড হতে হতে পুড়ে যাচ্ছে মেঘ। আইসক্যান্ডির এই দীর্ঘ নিঃশ্বাস তুমি শুনতে পাচ্ছ দিগন্ত! হাওয়ার ভেতর লৌকিক আকর ঢুকে গেলে হাওয়ার আর দম ফেলবার মতো স্পেসটুকুও থাকে না। তখন চিরায়ত এক প্রেতের মতো ইয়্যালো অকার লেগে যায় ইজেলের কাঠে। বিষন্নতার কতরকম রং, লিরিকের ভাঁজে ভাঁজে বসে শুয়ে থাকা চোরাগল্পগুলোর জিভ আর গুটিয়ে রাখা যাচ্ছে না


(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )


হিমেল মাসের কবিতা ৩

Related image

তোমার খাঁজে শব্দ ছেড়ে
      -জ্যোতির্ময় মুখার্জি 


এখন লিখতে গেলেই, লেখাগুলো কেমন সপাট হয়ে যাচ্ছে। ইস্ত্রি করা শার্টের মতো। অথচ কুঁচকে যাওয়া জরুরি। অন্তত বারবার নিজের দিকে চেয়ে, ভাঁজ পড়ে যাচ্ছে না তো। এমন ভয় তো থাকে না। নীড়ে ও ভিড়ে। তোমার খাঁজে শব্দ ছেড়ে

(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )

হিমেল মাসের কবিতা ৪

Related image

তুমি চলে যাওয়ার ঠিক আগের মুহুর্তে
                                                     -শিবু মণ্ডল 

তুমিই পারো উত্সবের বিপরীতে
এমন একটি যাত্রায় যেতে
যেখানে কোনো মহাঅষ্টমীর অঞ্জলি নেই
নেই একশআটটি পদ্মে সাজানো কোনো মন্ডপ
তবে যাত্রাপথে তুমি পাবে স্পিড ব্রেকার
পেরোবে গুটি গুটি পায়ে
ডাহুক পেরোনো একটি খোলা রেলগেট

ইচ্ছে হলে থেমে যেও রেললাইনের ধারে
শুকোতে থাকা নয়ানজুলির পাশে
বুকে ভরে নিও ক্রমশ মজে যাওয়া ঘাসের ঘ্রাণ

আমি ছেড়ে দেব তোমাকে নির্জনে

তুমিই পারো যেতে এমন একটি অবৈধ যাত্রাপথে
জামার পকেটে গতরাতের চুপসে যাওয়া বেলুন
কোল জুড়ে কুমারী কন্যার ঘুমন্ত ছোঁয়া

তুমি চুপ করে পেরিয়ে যাবে আমবাড়ি বিটঅফিস
ভালো করে খেয়াল করার আগেই
পেরিয়ে যাবে একটুও শব্দ না করা অবৈধ ট্রাকটি
যাকে তুমি বহুবছর আগেও দেখেছিলে একইরকম

ছায়ালতাপাতামোড়া নির্জনে


(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )


হিমেল মাসের কবিতা ৫

Image result for m c escher


পুনর্জন্মের রিহার্স্যাল 
              -তন্ময় ধর 

ফ্লাশব্যাকে আমিও কিছুটা কাগজ ছুঁড়ে ফেলে দেব
দাহ্য লিপি বেয়ে উঠবে প্রাচীন মাংসে
জমে ওঠা পিঁপড়ের ইঙ্গিত
রক্তপাতের স্বপ্নে কেঁপে ওঠা রাগ চন্দ্রকোষ

এই নিদ্রিত আমিত্বে চন্দ্রদোষ ছিল
তীব্র লেভেল ক্রসিং পেরনো হরিণীর ডাক থেকে
ছায়াপথ ও কশেরুকা, আমার স্নায়ুতন্ত্র সাড়া দিচ্ছে না
ক্রমশ গলে যাচ্ছে নিখিল ব্যানার্জীর সেতার

শাকেভাতে, সোনালী আলোয় কেউ ফেলে গিয়েছে
বিশুদ্ধ অন্তরা, দুধ-মাংসের বিরুদ্ধ খাবার থেকে
আমি ম্যাজিকের শব্দে ঘুমিয়ে পড়ি
তোমার মত অভিনয়ে

(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )


হিমেল মাসের কবিতা ৬

Related image

স্মৃতির  চৌকাঠে 
                        -উমা  মন্ডল


কতখানি  সময়  আড্ডায়  মেতে  আছি  জানিনা
ভাবুক  চোখে  দেখাই  রিস্টওয়াচের  দিকে , একটি  কবিতা  পড়ার  পর
অন্য  কবিতায়  যাওয়ার  এই  সময়কালে
 পান  করে  নি  একান্তের  বিলাপ  ;
তারপরে  চোখ  বুজে  ঘুরপাক  খাই
আহ্নিক  গতিতে  ডিঙিয়ে  যাই  জলকুমারির  বাঁধ ।


তবুও  হাহাকার , দিনে  রাতে  অসহ্য  ক্ষুধায়
  জিভ  থেকে  লালারস  বেরোয় ,
অসুখের  বীজ  শিকড়  তুলে  ডাকে
একটা  গিঁট  খুলতে  গিয়ে  জড়িয়ে  পরি  জাঁতাকলে  ;
তারপর  রক্তারক্তি  কান্ড
ক্ষুধা  বাড়তেই  থাকে , এই  আগুনকে  রুমালে  জড়িয়ে পা  বাড়িয়ে  দিই
যদি  বৈঠা  নিয়ে  আসে  ঈশ্বরী  পাটনী
বোধিবৃক্ষের  তলায়  বিশ্রাম  নেবো .....

(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )

                                                     

হিমেল মাসের কবিতা ৭

Image result for M.C. Escher


নভেম্বর , এসো 
                      -রঙ্গন রায় 

দেখো অনেক দিন পর আমি ক্লিন শেভ করেছি
এখন আমি সভ্য ভীষণ , তুমি বলো এমন দিনেই আমাকে রোমান্টিক লাগে -
বারান্দায় বৃষ্টি শেষ হয়ে গেছে গত বর্ষায় , তবুও স্বপ্নে তুমি খুব বৃষ্টি দেখো
বৃষ্টিতে ভেজার জন্য তোমার একটি পুরুষ দরকার , খুব মন খারাপ হলেও -
তোমার হাতে মশা কামড়ালে ফুলে ওঠা জায়গায় আঙুল দিয়ে  নক্সা আঁকো
আমি সত্যিই ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ি -
বান্ধবীরা আমায় কাপুরুষ বলে চলে যায় , আমি কালপুরুষ শুনি
কোমড়ে অসি নিয়ে তারকা খচিত এক দুর্দান্ত পুরুষ!
শিউলি ফুলের মত অক্টোবর  ঝরে পড়ে ,
তোমার শুকনো ঠোঁটের মত শীত আসে
এখনও তুমি প্রতিদিন শ্যাম্পু করবে , আর আমি গন্ধ খুঁজে পাবো আমার পাড়ায়!
এখনো তুমি শাসন করবে রাত করে বাড়ি ফিরলে , ঠান্ডা লাগালে -
আর আমি চিৎকার করে তোমায় ডাকলেই মায়ের মত বলবে , 'এই তো আমি'
অথচ চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ভালবাসার কথা বলা হলোনা কোনোদিন -
তুমি জানো , ভোরের প্রথম আলোর গন্ধ ফুঁটে উঠলেই
আমি ফিসফিস করি , গালে হাত বুলাই , তারপর ফের পাশ ফিরে শুয়ে পড়ি

(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )

হিমেল মাসের কবিতা ৮

Image result for M.C. Escher

শীতের চিঠি 
                    -দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী

গায়ে কমলার গন্ধ শীত বসে আছে বারান্দায়
পায়ে তার আঁকিবুকি ছায়া কাটে সোহাগ রোদ্দুর
এমন বেয়াড়া সে যে বেলা করে বাজারের পথে
যেখানে ছড়ায় মায়া লাল বিট , সবুজ পালং
মাছভাজা দ্বিপ্রহর , দ্বিপ্রহর ভুনি খিচুড়িতে
পাতে বেড়ে মনে পড়ে আহা কত ভালোবেসে খেত
দরজায় দেখো তো কে , পোস্টম্যান কার চিঠি নিয়ে
বহুদিন দেখিনিতো তুমি কি আসবে এই মাঘে ?
চুলে শালিমার গন্ধ , উল বোনে রিনরিনে আঙ্গুল
তার ছোঁয়া পাবে বলে বসে আছে সাধের বেড়াল

(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )


হিমেল মাসের কবিতা ৯

Image result for M.C. Escher

তসবির 
            - সম্পিতা সাহা

আলো ফেলে গেছে পাখি
আর মঞ্চের সামনে তহমৎ এসে থেমেছে
প্রশস্ত হাসির মতো।
ঠিক এসময়ই তছনছের দাবি নিয়ে আসে চরিত্ররা...

বিকল্প কোনো ইন্তেজার গেঁথে নিচ্ছে ঘুঙুর,
মহড়া শুরুর আগে
আলগা নিঃশ্বাস বৈধ হয়ে উঠবে আরেকবার...

মুখোমুখি ঋণ ও জানালায় ভেসে আসা অমেয় অসুখ
ফিরে যাওয়ায় দায়ী হয়ে থাকে।

তীব্র নিয়তি ফেলে
প্রজাপতি এসে বসে সঙ্গমে...

(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )



হিমেল মাসের কবিতা ১০

Related image

কনফেশন
               -পাপড়ি গুহ নিয়োগী



পুরোনো ঘরটায় স্বর্গীয় আলো



ঘাপটি মেরে নিঃশব্দে বসে

চাপা শব্দে জল গোছাই   

তারপর অপেক্ষা



চাঁদ পেতে

          নির্জনে দাঁড়ালে মনে হয়

বরাবরের মত আয়নায়

                  দেখছো আমার সাজ

ইদানীং

গোপনে সমর্পণ করি...আরো

একসময় দীর্ঘ হেঁটে

                দাঁড়াই, গাছের পাশে

(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )

হিমেল মাসের কবিতা ১১

Image result for M.C. Escher

বইমেলা
           -সুমনা দত্ত 


কবির কাছে অটোগ্রাফ চায় মেয়ে।
কবি মুচকি হেসে নাম লেখেন।
খাতা ফেরত দিয়ে জিজ্ঞেস করেন,

'কিসে পড়ো?'

মেয়ের কপালে ঘাম।

কবি রুমালের খবর রাখেন না।


প্রচ্ছদ থেকে ভূমিকার দূরত্ব?

ঠিক যতটা পাখির দুঠোঁটে খড়কুটো জমে।

আর সেই প্রচ্ছদ যখন নিয়নে মুখ লুকোয়?

ভিড়ের মাঝে 'আবোল তাবোল' খুঁজে নেয় অটিস্টিক শিশু।



(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )

হিমেল মাসের কবিতা ১২

Image result for M.C. Escher

গ্রাফ শীট
              -অনু সঞ্জনা সোম

সারি সারি বাঁশের থাক। এলোমেলো কিছু জল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মন খারাপগুলো এখন পাখি। বাঁপাশে লেখা শ্মশান। কিছুক্ষন আগেই খুব হেসেছি। আগুনের ফুল্কিগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছে স্টাফ রুম জুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাসির সেই সব মুহুর্ত। রেলিং ছুঁয়ে শীত। রোদে ধুয়ে যাচ্ছে গোটা মাঠ। কখনো কমলালেবু কখনো বাদামের খোসায় আমরা অবসর জড়ো করছি। ক্রমশ কমে আসছে চায়ের কাপের উষ্ণতা বাড়ছে হাসির গভীরতা।এখন শীত কাল। এক্সাম শেষে এই স্কুলবেলা যেন হাসির ঋতু। আজ স্টাফরুমেরও মন খারাপ নেই। কেউ আজ ছুটিতে নেই যে। নম্বর বাড়ছে কখনো কমছে, ভুল প্রশ্নের উত্তরে গ্রাফ শীটে উঁকি দিচ্ছে ছেলেবেলা।

হাসছি,হাসতে হাসতেই ফিরছি পুরনো ঠিকানায়।

(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )

হিমেল মাসের কবিতা ১৩

Image result for M.C. Escher

ভুল
     -রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

পোড়া পাতায় বিচ্ছিন্ন রাতের কলপ
জম্পুইয়ে জ্যামিতিক বায়নায় উড়ে আসে
ঝরনার কলকলানি

বায়বীয় ভুলে খুঁতে নিচ্ছে একাগ্রতা
সবকিছু অতীত ভাবনার প্রতিরূপ

(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )

হিমেল মাসের কবিতা ১৪

Image result for M.C. Escher

জলের থিয়োরি থেকে
                           -নীলিমা দেব


এই যে আলোর নবান্নে জলের  ফুঁ
আর ফ্রি হচ্ছে অজানার বিশেষ
আমি তাকে রোজ ধারণ করি
আল্টিমেট !
জমিন টেনে আনি  বুকের কাছে ,
নাদুসনুদুস আমাদের বিয়ানো আমানত
তুমি হয়তো নদীর গায়ে জল মুছে মুছে গোল করে ফেলো হেঁয়ালির আসল,
 ভুল ভুল নিঃশব্দের সবটুকু নির্ভুল
নাব্যতার ফ্রেমে সবাক ভালোবাসারা  এভাবেই তো
ক্রমশঃ ...

(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )


হিমেল মাসের কবিতা ১৫

Image result for M.C. Escher

খর-জিভ
               - সু চক্রবর্তী


প্রতিটি বাড়িতে আঁচড় কাটার পর
অদ্ভুত কিছু ঝুল জমা হয়

বোয়েমে; তালপাখায় পিঁড়ি
বসিয়ে নখ খুঁটে সে।

জিভে মচকে ওঠে নীরবতা

ডগায় চুন
খসে পড়ে
বেইন্তাহহ

না-দেখার পা বাজতে থাকে

(ছবিঃ মরিৎস কর্নেলিস এশার )


হিমেল মাসের অনুবাদ কবিতাঃ সুদান থেকে স্যাফিয়া এলহিলো


Image result for safia elhillo


"যে বালিকারা কখনো মরে না" তাদের থেকে
                               -স্যাফিয়া এলহিলো

একটি বালিকা   বুক পর্যন্ত কবরে চাপা
লাল মাটিতে           তার মণিবন্ধ

মাটির নীচে বন্দী হওয়া
দড়ির ফাঁস  জনতা ভীড় করে

পিতৃত্বের মতো  এর অসীম
হাত   এঁকে ফেলে আলগা বক্ররেখা

একটা পাথর  একেবারেই ক্ষুদ্র
একটি নিক্ষেপে  নাম নিয়ে ফেলে

মৃত্যুর     একক কারণ
নেই  রক্তপাতের জন্য দায়ী

বালিকাটি     অকন্যা         অনামিকা
মুখহীন           কোথাও বংশপরিচয়ও নেই

তার ফোটোগ্রাফ           নামানো হয়েছে
বুকশেলফ থেকে      দেওয়াল থেকে    আর     তার বাবা


ওই হাতগুলোর মধ্যেই     পুরুষ প্রস্তর
কোয়ার্টজ খচিত   প্রথম নিক্ষেপের জন্য তৈরি

হাওয়ায় বৃত্তচাপ তৈরির জন্য   বালিকাদের দিকে
শিকড়হীন এক গাছ       মুখ নেই, ঋজু

এবং সম্ভবত পাথরটি       পালটি খায়
আতশবাজির মত               বালিকাটি

তাদের কুসুম-নিউক্লিয়াস     ওঠে
কালের অলখ দাগে      বৃষ্টির বিপ্রতীপে

শিলাবৃষ্টি ও নীরবতার বিপরীতে
একটু বেশীই লম্বা         এবং অন্যরকম

অন্যরকম      এবং ডানার মর্মরধ্বনি
বালিকার মাথার ওপরে

একঝাঁক     ঘন মেঘের মিশেল
উদ্বিগ্ন পাখিকূল     তিতির আর রাতচরা

এবং সোনালী চড়ুই    আর জলপিপি
আর টিট্টিভ   আর সব জাতের

আইবিস, সারস, গাঙচিল
যদিও সমুদ্র ঢের দূরে     ঢের উত্তরে

এবং মুহূর্ত চলে যায়       অস্পৃষ্ট বালিকা
এবং প্রতিটি পাখির ঠোঁটে   উচ্চারিত হয় একটি পাথর


।। ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম স্যাফিয়া এলহিলোর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম এবং পড়াশোনা। কিন্তু তাঁর রক্তে-বোধে-চেতনায়-উত্তরাধিকারে গৃহযুদ্ধ-বিধ্বস্ত সুদানের বুকের ব্যথা। এযাবৎ চারটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।।

অনুবাদ- সম্পাদক, উষ্ণিক

ছবিঃ WGN Radio

উষ্ণিকঃ হিমেল মাসের কবিতা

Image result for winter sunrise b/w bengal

হিমেল হাওয়া আর মিঠেল রোদ্দুরের সাথে এসে গেল উষ্ণিকের নতুন সংখ্যা। আফ্রিকার সুদান থেকে অনুবাদে এলেন শূন্য দশকের কবি স্যাফিয়া এলহিলো। নিয়মিত কবিতায় রইলেন সোনালী মিত্র রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ, পাপড়ি গুহ নিয়োগী, নীলিমা দেব, রঙ্গন রায়, সু চক্রবর্তী, তন্ময় ধর, সুমনা দত্ত, দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী, সম্পিতা সাহা, শিবু মন্ডল, জ্যোতির্ময় মুখার্জি, উমা মন্ডল, অনু সঞ্জনা ঘোষ এবং সৌমনা দাশগুপ্ত। প্রচ্ছদের ছবি পিন্টারেস্টের সৌজন্যে।