Sunday 16 June 2019

উষ্ণিকঃ মেঘদূতের মাস সংখ্যা

Image result for kalidasa meghadootam painting

"ধূমজ্যোতিঃ সলিলমরুতাং সন্নিপাতঃ ক্ব মেঘঃ
     সন্দেশার্থাঃ ক্ক পটুকরণৈঃ প্রাণিভিঃ প্রাপনীয়াঃ"  







উষ্ণিক

মেঘদূতের মাস 



ধূলি-জলকণা-আলোর সমন্বয়ে তৈরি এই যে মেঘ তাকে প্রাণ দাও, তবেই সে প্রাণীর প্রেমের তিয়াসা বয়ে নিয়ে যাবে দূরে

মেঘদূতের মাসের অনুবাদ কবিতাঃ এস্তোনিয়া থেকে উত্তরশূন্যের কবি এডা আহি

Related image

মহাকর্ষের সাথে নাচ শেখা





ওরা নাচে তোমার সাথে, মহাকর্ষের সাথে, সবার সাথেই

কিন্তু কেবল সাহসীরা জানে ওদের নাচের মুদ্রাগুলো

তুমিও হয়ত পেয়েছো নিষ্ঠুর বৈশিষ্ট্যঃ

পাথর আর পালকের তীব্র আকর্ষণ।



তোমার মুকুটের ভার আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে মাটির দিকে,

আমি আবিষ্টের মত হাঁটছি যেদিকে তুমি নিয়ে যেতে চাও

আমি ভালোবাসি তোমার ভার, প্রিয় মহাকর্ষ,

আর তোমাকে পাল্টাতে চাই না, এমনকি ডানার জন্যও নয়। 



(এডা আহির জন্ম ১৯৯০ সালে, এস্তোনিয়ার তালিন শহরে এক রুশ-এস্তোনীয় পরিবারে। তালিন এবং তার্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশ-এস্তোনীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর বর্তমানে ইউক্রেনে কর্মরতা। ২০১২ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'মুখোশ' বেটি-আলভার পুরস্কার পায়। ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা। অ্যাডাম কুল্লেনের ইংরেজি অনুবাদের মধ্যস্থতায় উপরের কবিতাটি অনুবাদ করলেন উষ্ণিকের সম্পাদক)



ছবিঃ লূউলেলেইড

মেঘদূতের মাসের কবিতা ১


চাঁদে ফুঁ দিলেই...
             -নীলিমা দেব

হতে পারে যে আপেলটা দুধের বিচিতে গতিবিদ্যা রিলিজ করে সে আর আলাদা করে বুঝে না নারী ও নৈবেদ্য এর ব্যবধান। আলোজ সংসার বেড়ালের চোখে রচনা করে চাঁদের আহূতি। জ্যোৎস্নার অতীতে ফুঁ দিতেই শত শত যীশুখ্রিষ্টে আবাদ হচ্ছে মায়ের খলিহান।তুমিও তো জানতে এসব আলোদের আলাদা জানালা থাকে।বাচ্চা বাচ্চা মেঘ দরজার পাশে একা ভিজে যায়।আমি তখনো তোমার কপালে ছানবিন করি আষাঢ়ের চাঁদ। 

মেঘদূতের মাসের কবিতা ২

অমলতাস
             -পাপড়ি গুহ নিয়োগী



জারুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি প্রথম তোমায়

সেদিন বেগুনী রঙের উৎসব ছিল আকাশে



আমাদের পরিচয়ের আগে ,মনে থাকার কথা না

       

তারপর কতবার আঙুল ডুবিয়ে জলের নিচে মুখ আঁকি

উবু হয়ে রোদ  ধুয়ে দেয় আশ্চর্য ভ্রমণ



প্রয়োজন ছিলনা তোমার হয় তো

যেমন আজোও নেই



এখন স্বপ্ন দেখি

বকুল৷ কৃষ্ণচূড়া। হিজল। অমলতাস পেরিয়ে

তোমার কাছে যাবার রাস্তাটা আসলে রেল লাইনের মত দীর্ঘ

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৩


শিরোনামহীন আর একটি
                                 -তন্ময় ধর

ধরা যাক, শিশুকন্যাটির মুন্ডহীন মৃতদেহের ভিতর যেসব মাছিরা ঢুকেছে, তারা আর বেরিয়ে আসতে পারছে না। শুধু একটি মাছির চোখকে আমরা ঐশ্বরিক উপায়ে তুলে আনছি মিকেল্যাঞ্জেলোর প্যালেটে। নানা রঙ মেশানোর মধ্যেই তুমি টের পাচ্ছো মাথাকাটা অজস্র সাপের নড়াচড়া। স্নায়ুবিষ এক নেউল লাফিয়ে উঠছে শব্দ থেকে। মাংসের ভিতর থেকে বিষাক্ত নূপুরের শব্দ উঠে আসছেই। ধর্মতত্ত্ব পড়ছে আমাদের শাদা হাড় ও দুঃস্বপ্ন। বুকের রক্ত চেটে খেতে গিয়ে খুলে যাচ্ছে মাছির অভিনয়

মৃত এক মানুষশাবকের শব্দ ধাক্কা খায় আমাদের অন্নপাত্র ও ছায়াপথে। উরুসন্ধির শাদা হাড় থেকে মাকে চিঠি লিখছেন রেইহানি জাব্বারি, আসিফা, টুইঙ্কল, নির্ভয়া... পোস্টমর্টেমের আগেই কাটা মাথাটা জোগাড় করেছেন তথাগত। পায়েস খেতে খেতে চোখের অনন্ত অন্ধকার ফুটোয় আঙুল ঢুকিয়ে বললেন ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ঘটনা। প্রমাণগুলো সরিয়ে নাও। আমার লাগবে না...’

এক মাংসবিক্রেতা ঢুকে পড়েছেন লিঙ্গপরিচয়ে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় কাশি শুরু হচ্ছে আমাদের। কার্নিশ থেকে একটি সরীসৃপের কঙ্কাল খসে পড়ল খবরের কাগজের ওপর। লিস্কৌ গুহার রঙে হাত রাখলেন হুলিও কোর্তাসার

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৪


পারস্পরিক
              -সুপর্ণা মণ্ডল




আমরা তো একটা গাছেই জল দিই
এক গাছের জল-সারে আরও কত গাছ
জন্ম নেয়।
নেয় না?





পৃথিবীর বরফ গললে মানুষের মৃতদেহ বেরিয়ে আসে
প্রকৃতি যাদের স্পর্ধা সহ‍্য করেনি
অনেক বছর আগেও।

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৫


ভ্রমর
              -অভিশ্রুতি রায় ভট্টাচার্য 


কত ফুলকি দিয়ে ফেঁপে ফেঁপে উঠছি
রোজকার মতো আজ ভ্রমর আসবেনা বলে
তুমি মৌচাক খুলে মধু চুরি করছো
এই অস্থিরতা কোনো পূর্বাভাস হতে পারতো
যে আদর্শলিপি তোমায়
 শব্দবোধ দিয়েছে
তাকে তুমি মধু দিয়ে ফিরো
ধার বেয়ে যত জাদুকর গড়ে উঠবে
সেখানেই সেরে নেবে আলিঙ্গন
জিভে জিভ জড়িয়ে এলে
আরেকবার



 ই
 ঈ

তোমার কাছে এনে দেবে প্রজন্ম

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৬


বিশ্বাস করুন
                - জ্যোতির্ময় মুখার্জি


আমি সবকিছুই জমিয়ে রাখছি আমার হার্ডডিস্কে। জমতে জমতে হার্ডডিস্ক ফাঁকা। তোমাকে কিছু ধার দিয়েছিলাম। তুমি, যা কিছু ধার নিয়েছিলে। এসো ওলোটপালোট করি


হার্ডডিস্ক একটা মেঘের নাম। হার্ডডিস্ক একটা দোয়াতের’ও নাম। কালি বা কলম, যা কিছু তুমি মেঘ গোনো বা বৃষ্টি। আমি জমিয়ে নিয়েছি আমার হার্ডডিস্কে


হার্ডডিস্ক একটা জলযানের নাম। হার্ডডিস্ক একটা নদীর’ও নাম। এসো, নৌকা গড়ি। নৌকা ফাঁকা করি। ধার করি মেঘ। শোধ করি বৃষ্টি। ভেঙে ফেলি দোয়াত। ছড়িয়ে পড়ুক কালি। কমল লিখুক আমাকে। কলমে থেকো তুমি


বিশ্বাস করুন, আমি সবকিছুই জমিয়ে রাখছি আমার কলমে, জমতে জমতে আমার কলম ফাঁকা

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৭


সুইসাইড নোট
                  - অনু সঞ্জনা ঘোষ



পুড়ে গেছে বালি। ঝরে ঝরে পড়েছে স্তূপ পর্বত। পড়তে পড়তে জমা ক্ষয় এখন আগুন। অরণ্য গভীর হলে বাঁধ ভেঙে ফেলে নদী। ভাঙা বাড়ী, ভাঙা ঘর। পোড়া কাঠে ভেসে যায় শুকনো উনোন। মা বালু গোছায়, বালুতে রাঁধে ভাত। হাসপাতাল হেঁটে চলে যায় বনের কাছে। তুমি জাঁকড়ে ধরো আমায়। স্মৃতি খুলে যায় গভীর ঘ্রাণে। ভাঙা বোতামে জড়িয়ে গেছি । চিৎকার করে বলতে চেয়েছি, হত্যাকারী তুমি। সুই সাইড নোট ভরে গেছে শান্ত বলয়ে। মৃত্যুর পর আবার বেঁচে উঠি আমি।

মা ভাত বেড়েছে বালিতে, একটাও কাকঁড় নেই পাতে....

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৮


কাঁটাঝোপ 
             -সুমনা দত্ত

মৃত্যু শোক বোঝে না।
গাছ থেকে মন্ত্র খসে পড়ে অন্ধকারের মতো।

অগ্নিজলময় শশ্মানে এসে দাঁড়িয়েছি।
কাঁটাঝোপ সরিয়ে মুখ বাড়াছে হলুদ দাঁতের দাগ।

বাবা তুমিও বুঝি অন্ধকার ভালবাসতে?

মেঘদূতের মাসের কবিতা ৯



জেগে আছি...  বেঁচে আছি 
                                             -পিয়াল রায়


পোকাটা আমাকে গ্রাস করতে চাইছে
ওর গুঁড়ি মেরে এগিয়ে আসা টের পাচ্ছি
মাথার ভিতরটা অসম্ভব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে
 টের পাচ্ছি অথচ চোখ খুলতে পারছি না পোকাটার রোমশ কন্টকিত শুঁড়,
দেহের সামনে পিছনে কর্ষিকা...
 উফফ কী বিভৎস থলথলে !
দুটো চোখে একটুও খোলা জায়গা নেই
যেখান দিয়ে আলো আসতে পারে যেতে পারে
 পোকাটার মনের অবিরাম অস্থিরতা তাকে
 টেনে নিয়ে যাচ্ছে কোনো অচেনা দুর্যোগের দিকে
আমি বুঝতে পারছি কিন্তু আগামী থেকে
 ভেসে আসা কোনো বার্তা যা জীবনকে
 গুনেগেঁথে নিতে অভ্যস্ত, তাকে বোঝাতে পারছি না
চোখ খুলতে না পারার অসহায়তা আমাকে ডুবিয়ে মারছে
মৃত্যুতে আমি ভীত নই
 আমি ভয় পাচ্ছি, এই বোধটাই আমাকে শেষ
 করে দিতে চাইছে ভিতরে ভিতরে

 পোকাটা বিষাক্ত
 তারচেয়েও ভয়াবহ হল ও বিষের অস্তিত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল
 এতটাই যে ওর শরীর থেকে বেরিয়ে আসা
 বদগন্ধ একটু উঁচুতে তুলে ধরলেই নাশ হতে
 পারে লৌহগোলোকও
 এসব নিখুঁত পরিকল্পনা
 আমি জানতাম ওর অস্তিত্বকে অস্বীকার
 করাটাই একমাত্র মেরে ফেলতে পারে ওকে
 আসন্ন এই সময়ে দাঁড়িয়ে জপ করতে থাকি
 আমার যুগ যুগ ধরে বহমান আস্থার
 ধ্বনিটিকে
 আমার সমগ্র জীবন, আমার স্বেচ্ছাকৃত
 আনন্দপ্লাবন আমি সমর্পণ করি নিভৃত এক ছায়ার
 কাছে
ধ্যানমৌন সে বুদ্ধের নামে উৎসর্গ করি আমার উচ্চারণসকল
সুতোর মতো জড়িয়ে নিতে থাকি পায়ের নিচের সজীব দূর্বাদল
 আরো একটু শ্বাস নিই খোলা আকাশের
 মেঘ,ধান, প্রজাপতির গন্ধে ঢাকা পড়ে যায়
 অর্থহীন খোঁয়াড়ি

মেঘদূতের মাসের কবিতা ১০



প্রেম পর্যায়ের কবিতা 
                            -রঙ্গন রায়

রবি ঠাকুরের গানের কাছে এসে মাতালেরা অ্যাশট্রে ঝেড়ে ফেললে
 রাস্তায় হাঁটা মাতালের পুরোনো সেই দিনের কথা মনে পড়ে  ;
কী তফাৎ দুজনের ভেতর? কী তফাৎ ওদের সাথে আমার ?
রোজ রাতে ক্রমশ ঘোরের মধ্যে চলে যাই , ছাই পড়ে থাকে লেখার খাতায় -
কেন এখনো প্রতিটি পুরুষ কাঁদতে এত লজ্জা পায়?
কেন এখনো রাত সাড়ে দশটায় মোবাইল খুলে বসে থাকি রোজ !
প্রেম তো বুঝে গেছি নিজের মত করে , আর কিসের প্রয়োজন হে!
কিসেরই বা অপেক্ষা!
অভ্যাস বশে কেউ  বৃষ্টির রাস্তায় নৌকা ভাসিয়ে দিলে কেন এখনো
আমার উঠোনে জল দাঁড়িয়ে যায়?  

মেঘদূতের মাসের কবিতা ১১



স্নান
       -পায়েলী ধর

খুলে রাখো ঝঞ্ঝা ও ঝড়
রোদসেঁকা বেপথু পালক
আমাদের সব দরজারা
যুগপৎ নদী ও আগুন
শেকলের ধার মেপেজুকে
সেইখানে নিভে আসে স্বর
ডাকনাম তার জানি শোক
আহৃদয় আঁচড়ের দাগ
সমস্ত উপশমে লিখো
আকাশ  : ধোঁয়াশা আর মিথ
দেখো চোখ প্রগলভ হবে
স্বাদু জল নোনারঙা হ্রদ
সে'রঙের বিশেষণ-আলো
অতলের মাটি খুঁড়ে রাখে
অসহায় জ্বরে পোড়ে বাড়ি
ঘুড়ির সুতোর মতো একা
এখনই তো অবসর ভেঙে
একঘর ঘড়ি ভিজে যাবে
হেরে যাই তবু লেগে থাকে
ঠোঁটে-ঠোঁটে মুক্তোচুমুক...