Tuesday 19 December 2017

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৭

Related image

অনায়াস, তোমাকে... 
            -পূজা নন্দী 

প্রতিটি প্রেমের আখ্যানে জ্বলে যায় নারীর চরিত্র। এই কাঁপা অক্ষর বোঝে,  যে, পথ ফুরোয় না। কেবল রাস্তা মাপে পাহাড়িয়া বাতাস- তার পিছু  ছুটে মরি আমরা। হাত ধরো, ফেলে আসা দিনের অপেক্ষায়...অাঘ্রান জমাও...
এ অাঘ্রান জমা কুয়াশার, এ অাঘ্রান সেই সব শীতের যার মাঝে সময় একা ফেলে চলে যায় নিজের মত, যেন বন থেকে বনান্তে ছুটে চলে একাকী পাখি... উত্তুরে বাতাস জানে তার ছটফটানি...

(ছবিঃ অ্যাইমি হেরমান) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৬

Image result for abstract black painting

জাদু করা বাস্তব... 
                           -নীলাদ্রি বাগচী 

সব সকালের সুর এক তারে বাঁধা থাকে না। তোমার লাঠির মাথায় তুমি ঘুরিয়ে নাও আলো  আর রেশ প্রান্ত থেকে প্রান্ত চলে যায়...

বৃষ্টিদিনে ঝলমল করে ওঠে পুকুর। দৃশ্যের ব্যাবধানে ভুলে যাওয়া ত্রিভুজের রান্নাঘরে পরিপাটি তৈরি হয় মাখনের সুস্বাদ। তৈরি হয় ক্লান্তি বিনাশক একটি সন্ধ্যে। আপেক্ষিকে আবহাওয়ার ঘোরে ডুবে যাওয়া রেলফলকের পাশে জলে নামা কিশোরী দেখে, বহু দেরী করে যাচ্ছে স্থানীয় ট্রেনটি। সে নিজেকে জলে ঢেকে রাখে আর জল ঝলমল... উচ্চকিতে বর্ণনে যায় আসন্ন বৃষ্টি সন্ধ্যার...

হরিণী, মায়াবনবিহারিণী, তাকে ধরবার জন্য বিষণ্ণ এগিয়ে যায় দীর্ঘ হুইসেল দিয়ে স্থানীয় ট্রেনটি। চরাচর লুপ্ত হয় টানা বৃষ্টি শব্দে। নামানো শার্সিতে জলের আঙুল লেখে দূরত্বের প্রতিশব্দগুলি...

আমি শব্দ ধাবমান। অস্তিত্ব স্থির আর আসন্ন সন্ধ্যের জন্য মাখনের তীব্র শ্বাস... হকারের ছোটো কফি কাপ...

                                     ###

নেমে জল। নেমে আঙুল ডুবিয়ে পার প্লাস্টিক মোড়ানো রিক্সা রঙ। টোটোর প্রস্থের মতো অসীম দূরত্বে সুখ, শহর শরীরে জল বসন্তের চিহ্নগুলি দেয়। তবে তা নিয়নে, বড়জোর এল ই ডি মেধায় এইসব শহুরে দ্যুতিকে অনায়াস পার করে শান্ত বর্ষা সন্ধ্যে; জল চোখের গভীরে খোঁজে নিকট অতীত। ভাবে, ক্লান্তি একটি প্রতিশব্দ, পথপ্রান্তে সেজে থাকা পানগুমটির বয়ামে বয়ামে যেরকম স্মৃতি...

স্মৃতি এক কারিগর যার নির্মাণের ত্রুটি যানবাহনের শব্দ অনায়াস ঢেকে দিতে পারে। ঢেকে দিতে পারে যতি, চিহ্নগুলি লুপ্ত ক’রে হাতের ভেতর থেকে হ টুকু তুলে এনে মোড়কে ছড়িয়ে দেয় মোহ... দেয় সপ্ত ঋষি গল্প, অন্তরজাত কোনও সুস্বাদু পরিবেশনের দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে অতিরিক্তে আরও কিছু দেয়...

সম্ভবত, গোপন বিরহ। ফলে, দোর খুলে যায় সেই দীর্ঘ লাঠির গল্পে আর হ্রস্বে কাছে আসা বোধ...
বোধ যার অন্যনাম প্রস্তাব পেরিয়ে আসা অনাস্থার প্রান্তবিন্দু... শহরের প্রান্তদেশে ভেজা মৌরির সুঘ্রাণ...


(ছবিঃ ক্যাথেরিন জেল্টেস) 

মৃগশিরার মাসঃ অনুবাদ কবিতাঃ পোল্যান্ড থেকে জোয়ান্না লেক

Related image


















ফাটল 

নীরবতা। লক্ষ্য ধারালো ছিল, কিন্তু ছেলেরা ছিটকে গিয়েছে বাইরে। দুধ এবং বিড়ালের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাশুল দিতে ইতিমধ্যে দেরী হয়ে গিয়েছে তাদের। তারা সেরকমই থাকুক, ছুরির জন্য খালি হোক সেট, প্রশিক্ষকদের ঘাস-কাটাকাটি। 
এসময় কেউই প্রতিসৃত করে না সূর্যকে। সেই মুহুর্ত, সূর্যাস্ত এবং নদীতটের নারী ধুয়ে ফেলেছে। সমস্ত বর্জ্যে শুকনো রক্তের দাগ। ধরা যাক, এসব রাখা হয়েছে সূর্যাস্তের বিবরণে, সবকিছুর পরিবর্তে।   
কাছাকাছি, মেয়েরা খেলছে ‘তাসের ঘর’, ছোট্ট রাজকন্যাদের শাদা পোষাক উড়িয়ে। যে খেলা তুমি খেলতে চাও, শুরু করো, তারা ভয়ে বিবর্ণ হোক। আমি অন্য রূপকথা থেকে জাদুকরী হয়েই ছিলাম।  ওরকমই থাকতে দাও, ছবি পরিষ্কার হোক।  
স্পর্শের জায়গায়। ওটাই থাকতে দাও। আর্মচেয়ারে থাকা শিশুটি পাতা উলটে চলেছে। শিশুকন্যাটি পিতাকে বলছে ‘এটা হাতি, এটা জিরাফ’। যদিও বইটি উগরে দিচ্ছে বিষাক্ত মাশরুম। তুমি কিন্তু আটকাতে পারবে না ক্ষয় এবং ডানার ফিসফাস। 
সে ফিসফাস রাত্রিচর পতঙ্গের। যখন আলো বদলে যায়, আমি নিজেকে চিনতে পারি না। দুয়ারে আঙুল রেখে চলি আমি। থাকুক, পৃথিবী শীর্ণ হোক চোখের সামনে- ফাঁদ পাতাই আছে, আর আমি এমন কিছু শুনতে পাচ্ছি যাতে মনে হচ্ছে বেড়ালে জিহ্বা আটকে গিয়েছে একটি ব্লেডে।

(জোয়ান্না লেকের জন্ম ১৯৮৪ সালের ২৫ জানুয়ারি, পোল্যান্ডের ‘রেশোয়া’ শহরে। এযাবৎ চারটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি উপন্যাস লিখেছেন। ২০১১ সালে পেয়েছেন Nike Literary Award। মূল পোলিশ থেকে মারেক কাজমিয়েরস্কির ইংরেজি অনুবাদের মধ্যস্থতায় এই অনুবাদ করা হল) 

(ছবিঃ মিওয়াশ সাহিত্য উৎসবের সৌজন্যে) 




আশ্চর্য্য ধারাবাহিকঃ হারিয়ে যাওয়া নব্বইঃ পর্ব ৫

modern art paintings artist Bianchini


“খালিহাতে নিখুঁত বৃত্ত আঁকার কৌশল” 
                          -অনিন্দ্য রায়

“ ...and  I  too play a  guitar -  but sometimes I play the  fool” প্রথম কথা এই ছিল আমাদের,হ্যাঁ, লেনন ছিলেন আমাদের পরিচয়ে । কিছুদিন হল  বিটলসের কিশোরবেলার গানের অ্যালবাম ‘Live at BBC’, তাতে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে এই কথাগুলি বলেহিলেন জন লেনন । মধ্যনব্বইয়ের এক দুপুরে এক কবিতার আসরে তার সাথে আমার আলাপ, বাঁকুড়ায় ।ছিল এপ্রিল, ভিড় থেকে সরে গেশ্টহাউসের নিঃসীম বারান্দায়, যেন গেরিলা-স্ট্র্যাটেজি বোঝাচ্ছে এরকমই গোপনীয়তায়,সে আমাকে কবিতা শুনিয়েছিল , যা পরে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
 আর কোনোদিন দেখা হয়নি আমাদের, এক দুপুরের দেখা, তবু কেন জানি না আজও তাকে বন্ধু মনে হয়, খুঁজতে খুঁজতে যখন তার সেদিনে শোনানো কবিতাগুলির কিছু পেয়ে যাই পত্রিকার পাতায়।  আমাদের নব্বই এমনই তো, এমনই তো বন্ধুত্ব আমাদের, কবিতা আমাদের। ফোন নাম্বার দেওয়ানেওয়া ছিল না, ফেসবুক ছিল না, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ছিল না, কিন্তু আমরা বন্ধু হয়ে যেতাম, সে বন্ধুত্ব কবিতার । 
শেষরাত্রে সমস্ত ঢেউ এসে থামে এই স্বাস্থ্যানাসের গোলবারান্দার নিচে। সম্পূর্ণ সকলটা
ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে কুয়াশায় ঢাকা নরম, গভীরে এক দ্বীপ । তার উষ্ণ স্রোতের পাশে
লুকিয়েছে সেইসব গাছ । যারা
সরুসরু লম্বা পাতা ঝুঁকে পড়ে বালির ওপর উড়ে আসে কোনো দূরের শহরের থেকে
বৃদ্ধ ব্যান্ডবাজিয়ের পালকবিহীন
নীল টুপি । কাল সারারাত, বাতিঘর ঘিরে যেন নেচে গেলো পশমী চাদরঢাকা শীত
নক্ষত্রেরা ... সংখ্যায় ছয় ; ভেসে ওঠা নৌকার শব্দগুলি ছুঁয়ে, ভাঙা
ব্রিজ ঢেকে দেওয়া কুয়াশার স্তর
দু’হাতে সরিয়ে উঠে আসে সারসার চাঁদ পরিত্যক্ত কারখানা চত্র্বর জুড়ে, পুরোন অস্ত্র আর
পিচ্ছিল জলপাই পোষাক শরীরে ;
ওরা জেনেছিলো, রাতের সীমানা আর হলুদ টিলার পাশে খুঁজে পাওয়া যাবে বড়, গোল
তারাটিকে । প্রাচীন গ্রীস্ম-অঞ্চলে সেই গল্প ছুঁয়ে যাবে পাথরের বাড়িঘর, দীর্ঘ
প্রান্তর জুড়ে নেমে আসা
বেঁটে বেঁটে বাদামী ঘোড়ার দল । সন্ধ্যায় হাওয়ালন্ঠন হাতে ঊঠে আসে আলখাল্লা ঢাকা
এক অবয়ব, ঝাউবাংলোর এই
কিন্তু জানলার পাশে । বাইশবছর আগে তবে কি বলেছিলে আলোর সময় ?
বাতাসের ো লবণের স্তর ? জেগে ওঠা নাবিকের বিভিন্ন মানচিত্রে হঠাৎ আলোকবিন্দুগুলি ?
তুমি ? নাকি মোমবাতি ? প্রতিটি জন্মদিন ছুঁয়ে যাও । সন্ধ্যায়
নিচু নিচু কাঠের বেঞ্চিগুলো ভ’রে ওঠে কামিনের ভিড়ে, দিশি মদ, শস্তা কড়া
তামাকের ধোঁয়া তারা প্রেমের গল্প শোনে, ডিসেম্বরের,
গীর্জার চূড়া বেয়ে নেমে আসা রোদের গল্প ... সেই দীর্ঘ হ্রদের পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া
আমার কাঠের গাড়ি, মেয়েটির দিকে শিশুদের দল, দ্যাখো, দস্তানা ভ’রে ছুঁড়ে দিচ্ছে
মুঠোমুঠো খনিশহরের এক শীতের সকাল ...
( গ্রিটিংস কার্ড – ৩ )
এমনই এক আশ্চর্য ভাষ্য, মগ্ন মনোলগ তার কবিতা, পরাবস্তবতা ছুঁয়ে থাকা উচ্চারণ । দীর্ঘ পঙ্‌ক্তি, দীর্ঘতর বাক্যবিন্যাস আর একেবারে তাজা,প্রাণবন্ত বাক্‌শস্যের মুখোমুখি আমরা। এই তো নব্বই, হ্যাঁ, নব্যই, নতুনতর ।
... এরপর দূরে ক্রমশ নিভে আসতে থাকা সেই পাথরের বাড়িঘর ছাড়া আর কিছুই নেই
ঘোরানো লোহার সিঁড়ই উঠে এসেছে ওপরে যেখানে দু’টি
খনিজ হাত ক্রমাগত পিছিয়ে যেতে থাকে এক অলৌকিক
অন্ধকার শীতের সন্ধ্যায় আবছা কাঁচের ওপর ভেসে ওঠে
শেষ নভেম্বরের বৃষ্টিতে আচ্ছন্ন হয়ে আসা মিশনারি স্কুলের
মাঠ আর দুয়েকবিন্দু কবেকার প্রাচীন লণ্ঠনের আলো ঘিরে
অবিকল ফাদার অ’ব্রায়েন-র গ্লায় কারাযেন বলএ ওঠে

“ এ’বছর প্রবালপোকাদের আক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমাদের মানচিত্রে সংযোজিত হলো
আরো ছ’টি নতুন দ্বীপ...”

এরপর ঝাপসা হয়ে আসা পার্কের বেঞ্চ সরুসরু লালচে বাদামী
পাতা পড়ার শব্দ ও তার পাশে মদ্যপ যুবকটিকে লক্ষ্য করে
মেয়েদের দল ... অথচ কেউ জানতে পারলো’না খুব ধীর উত্তাপে
বিকিরণ করতে থাকা সবুজ নক্ষত্রটি কখন নেমে পড়েছে শহরের
একপ্রন্তে আর তার আলোয় ক্রমশ দীর্ঘ হ’তে হ’তে একসময়
মিলিয়ে যাওয়া ভিনদেশী নাবিকটির পরিচয় ... যে তাকে শেখায়
খালিহাতে নিখুঁত বৃত্ত আঁকার কৌশল ...

যুবকটির মাথার ভেতর থেকে এখন বেরিয়ে আসছে একের পর এক অসংখ্য সাদা পৃষ্ঠা

আর সে লিখে চলেছে বাইশ বছর পর ফিরে আসা পুরাণ
খনিশহর জুড়ে শুধু করাতকলের শব্দ আর সদ্য গড়ে ওঠা
কফিনকারখানায় কর্মব্যস্ততা দু’একবিন্দু কবেকার প্রাচীন
লণ্ঠনের আলোয় ফুটে ওঠা মিশনারি স্কুলের মাঠ আচ্ছন্ন করা
শেষ নভেম্বরের বৃষ্টি এক শীতের সন্ধ্যায় অলৌকিক অন্ধকারে
পিছিয়ে যেতে থাকা দু’টি খনিজ হাত ওপরে উঠে আসা ঘোরানো
লোহার সিঁড়ি আর সেই পাথরের ঘড়িঘর নিভে আসতে থাকে
আরো দূরে ...

এরপর রেলিঙের ওপাশে তীব্র খাদ আর ভাসমান তরল মেঘে মেঘে আমার ছায়া ।
এ’ছাড়া আর সবকিছু আস্তে আস্তে ঢেকে যাচ্ছে আবছা কাঁচের তরল...
( গ্রিটিংস কার্ড – ৪ )
সেই একবার, আর দেখা হয়নি আমাদের । তবু  তার কথা ,এই কবিতাগুলির কথা মনে রয়ে গেছে। স্বপ্নদৃশ্যের বর্ণনা যেন, এক অন্য পৃথিবীর কথা বলে অথচ সাবলীল, মনে হয় প্রথম শুনছি অথচ খুব চেনা এমনই কবিতা তার।খালিহাতে নিখুঁত বৃত্ত আঁকার কৌশল – সে রপ্ত করেছে তখনই । 
আমার শহরে তবে মৃত্যু বলে আর কিছু নেই ? রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে
ত্রিকোণ আলোর টুকরো আর জানলার নিচ দিয়ে একে, একে হেঁটে গেল সেই
তিনশো পঁইষট্টিখানা উন্মাদ হাতঘড়ি ...
( গ্রিটিংস কার্ড – ৪ )
তার লেখাও যে আর খুব বেশি পড়েছি তা নয়, তবু মনে আছে তার কবিতাকে, তাকে।
পাঠক, সে কি আপনার চেনা? আমার সেই এক-দুপুরের বন্ধু ।
নাম ?
রণজিৎ দাশগুপ্ত ।
কেউ খোঁজ দিতে পারবেন তার?
এই গান অসম্ভব দ্রুততায় শেষ হয় ... যত দ্রুত গোপন আগুন
ঘিরে ফেলে ঘাসবন ও ঘুমন্ত তোমাদের মেধাহীন চোখ, বাসভূমি ।
বাগানের শেষপ্রান্তে, আলোকিত চতুষ্কোণ মাঠে, সারিবদ্ধ পালকেরা
উড়ে আসে । লক্ষ্য ক’রে, কাঠের কেবিন থেকে, জংশনশহরের এ
দিনলিপি লেখার দায়িত্ব থেকে, অব্যাহতি নিয়ে যেতে চাই ...
‘শেষ কবিতা’ এই লেখাটির শিরোনাম, এটিই আমার পড়া তার শেষ কবিতা। অব্যাহতি নিয়ে সে কোথায় যে চলে গেল? কোথায়, রণজিৎ ?
ও, হ্যাঁ, বিটলসের যে ট্র্যাকটির কথা বলছিলাম, ওই যে লেনন , sometimes I play the  fool, হ্যাঁ, তার নাম জানেন কী ? ‘বিটলস গ্রিটিংস’।

আমাদের বন্ধুত্বের জন্য, নব্বইয়ের জন্য এই গ্রিটিংস কার্ড নামিয়ে রাখলাম ।

(ছবিঃ তাসিয়া বিয়াচ্চিনি) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৫

white textures

হেমন্ত
           -জয়শীলা গুহ বাগচী

অর্থাৎ...
আমি যা হেমন্ত তুলি
তা একটি ফেলে যাওয়া আয়না মাত্র
সেই মুহূর্তের পরিপাকজাত আমি বোধ
এই নীল তবে তোমার নয়
অতীতের নয় ভবিষ্যতের নয়
একটা জানালার
যাকে ' আমি ' নাম দেওয়া গেল
জানালা এখন কড়ি মা
জানালা সম্ভাব্য প্রসারতা
জানালায় চেতনা পারাপার...
শুধু সময়ের তুলনা এলেই সে কাঁপে
নাভিশ্বাসের হিম তুলে
ছবি ভাঙে
ভাঙে
ভাঙে


(ছবিঃ মেঘা বালুনি)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৪

"We all know that secrets are sold on the streets" -from the poem, Silverdust

রং ওয়ান
          -তন্ময় ধর


একেকটা রং থেকে আমি তোমার আয়ুশব্দ তুলে আনি। অর্ধেক ভেসে থাকা স্বরভঙ্গের ভিতর তোমার খিদেয় তৈরি হয় বৃহত্তম শূন্যতা। আমি বিপরীত দৌড় শুরু করি তর্জমায়, সূর্যাস্তে, আঙুলে ও নেলপালিশে। পারদ এগিয়ে যায়

দৃশ্যবাতাস নেমে যায়, মাংসের রূপকথা নেমে যায়। যথেষ্ট চিনির দখলে জমতে থাকে দুধ ও বিড়ালের লাফ। লাফ থেকে একটু পারদ তোমার কাহিনি টেনে ফেলে। অন্য অংশে কেউ ধুয়ে ফেলে নিরামিষ প্লেট

প্লেট ভাঙার শব্দ থেকে আমি তোমাকে সরিয়ে আনি অন্য জলবায়ুতে। এত লাল স্পিনিং উইকেট কেউ আশাই করে নি। আউট অফ ফোকাস থেকে আউট কিম্বা রক্তাক্ত হয়ে ওঠে তোমার ব্যাটসম্যান। হালকা হেলমেটের নীচে তখনো প্রেমে হু-হু করে ঢুকছে অভিনয়।  



(ছবিঃ জাস্টিন বেনভেনিউ)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৩

April and May| April and May hearts                              var ultimaFecha = '19.4.13'


বসন্তের বাইরে
              -হাসান রোবায়েত 

সমস্ত পাহাড়-ব্যেপে বৃষ্টি আসছে
আর তুমি
হাসির মাতম থেকে কুড়িয়ে যাচ্ছ নদীতীর
তারাদের অন্ত্রনালী
কীভাবে প্রাচীন রোদের থেকে গাঢ় করে হেম
অশোকের নিঃশব্দ পাতায়
ঐ সম্মুখে
মরণের রুধির কাজল গাভীদের চোখ বেয়ে
নেমে যায় অভিপ্রায়ের দিকে


(ছবিঃ লরা বারম্যান)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১২

Douglas D. Prince  www.lab333.com  www.facebook.com/pages/LAB-STYLE/585086788169863  http://www.lab333style.com  https://instagram.com/lab_333  http://lablikes.tumblr.com  www.pinterest.com/labstyle


একা নহবত
                -সুমনা দত্ত


মেয়েটা একটু গম্ভীর।
স্কুলে পড়ায়।
খুব কম বয়সেই সংসারের হাল ধরেছে।

বন্ধুদের বিয়ে হয়।
চারিদিকে সানাই বাজে।
নহবত।

মেয়েটা ব্যাগ আঁকড়ে ধরে।
নিষ্প্রানভাবে স্কুল যায়।
ফিরেও দেখে না গোলাপ।
লাল টুকটকে কনে বউ।

মেয়েটার গলার স্বর কেউ শোনে না।
শুধু যখন রাত হয়, সব আলো নেভে,
চুপি চুপি তারা খসে বাড়ির ছাদে।

(ছবিঃ ডগলাস ডি প্রিন্স)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১১

Seetal Solanki   www.lab333.com  www.facebook.com/pages/LAB-STYLE/585086788169863  www.lab333style.com  lablikes.tumblr.com  www.pinterest.com/labstyle

লুডোর ছক
             -শিবু মণ্ডল 

সাপ লুডোর উষ্ণতায় সিঁড়িধাপ তৈরি হলে
পুট-পুট পায়ে চাঁদ এগিয়ে যায়
ঘর-মিল জুড়ে ছড়ানো রঙ
উল্টে গড়িয়ে পড়ে দানব করের মত

এই রঙে ছোপ-ছাপ ওই রঙে হুড়োহুড়ি
আলোকবর্ষ ব্যবধান রেখে নক্ষত্রের ভিড়
চৌরাস্তার মোড়ে যেন জ্বলে অনন্ত বাতি
এমন সময়ে ধাক্কা খেলে বাইসনবেগে ‘ময় ফিরে আসে

খেলা হয় জলবাতিতে খেলা হয় বর্ষাতি
নিমেষে দান পাল্টে বৃষ্টি ভারী হয়ে ওঠে
সাপের ছোবলে শান্ত পৃথিবী সিঁড়ি বেয়ে ওঠে
১ নং ২ নং ৩ নং ৪নং ৫ নং ৬ নম্বর ধাপে এসে
খেলা শেষ হয়। আবার খেলা শুরুও হয়...

(ছবিঃ শীতল সোলাঙ্কি)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১০

<p>Whether he’s accurately drawing or painting, Matt Andres is a partisan of abstract art. Feeling comfortable both with traditional and digital art, his works invite to meditation and different

সুইসাইড নোট 
                 -অনু সঞ্জনা ঘোষ



পুড়ে গেছে বালি। ঝরে ঝরে পড়েছে স্তূপ পর্বত। পড়তে পড়তে জমা ক্ষয় এখন আগুন। অরণ্য গভীর হলে বাঁধ ভেঙে ফেলে নদী। ভাঙা বাড়ী, ভাঙা ঘর। পোড়া কাঠে ভেসে যায় শুকনো উনোন। মা বালু গোছায়, বালুতে রাঁধে ভাত। হাসপাতাল হেঁটে চলে যায় বনের কাছে। তুমি জাঁকড়ে ধরো আমায়। স্মৃতি খুলে যায় গভীর ঘ্রাণে। ভাঙা বোতামে জড়িয়ে গেছি । চিৎকার করে বলতে চেয়েছি, হত্যাকারী তুমি। সুই সাইড নোট ভরে গেছে শান্ত বলয়ে। মৃত্যুর পর আবার বেঁচে উঠি আমি।

মা ভাত বেড়েছে বালিতে, একটাও কাকঁড় নেই পাতে....

(ছবিঃ ম্যাট অ্যান্ড্রেস) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৯

Daniel Lindh//   www.lab333.com  www.facebook.com/pages/LAB-STYLE/585086788169863  www.lab333style.com  www.instagram.com/lab_333  lablikes.tumblr.com  www.pinterest.com/labstyle

বিপরীত 
      - শুভঙ্কর পাল 

দেয়ালের মসৃণ বেগুনি রঙ
রং শব্দে বরং শীতের কোলাজ
ফুটপাতে আগুন ও জটলা
বিপরীত সমীকরণে ছেঁড়া কম্বলের ওম
হুইসেল দিয়ে ট্রেন স্টেশনের শেড ছেড়ে যায়
ওর গর্ভে শীত
হামাগুড়ি নেমে আসে পাহাড় দেখার লোভ
ততক্ষণে তিব্বতি লামারা নেমে এসেছে পাইন ভেঙে
বুদ্ধের রাগ নেই
তবুও সীমানায় আগুন জ্বালাচ্ছে কেউ

(ছবিঃ ড্যানিয়েল লিন্ড) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৮

Panos Tsagaris, A passing breath gold leaf, acrylic paint and silkscreen on canvas, 150x100 cm, 2016. Courtesy of the artist and Kalfayan Galleries, Athens-Thessaloniki.   www.lab333.com  www.facebook.com/pages/LAB-STYLE/585086788169863  http://www.lab333style.com  https://instagram.com/lab_333  http://lablikes.tumblr.com  www.pinterest.com/labstyle

বড়াইলবালক
           -রাজেশ শর্মা 


ওয় শাম কুছ অজীব থি, ইয়ে শাম ভী অজীব হে ----///কিশোর

শিল্পের চোখ সরিয়ে রেখেছি স্তোকবাক্যহীন,মুগ্ধতাহীন

যেন সমস্ত বল্কল ফেলে এসেছে জলপ্রপাতে
হরিণি এখন লাজরুণ, ধীর হয়েছে তার পা

নিয়নকুসুম! তোর ভ্রু র সামান্যে যে গভীরা জলপংক্তি

তার তরে
বড়াইল বালক সমস্ত সেচ-প্রকল্প ডিঙিয়ে
অঞ্জলিপুটে
সন্তপর্নে তুলে আনছে ডাহুকমরশুম

একটি আলায়িত ছবির ভিতর শরীর ক্রমশ

ছড়াতেছে....

(ছবিঃ প্যানোস সাগারিস)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৭

Painting by James Nares. He suspends himself over the canvas to create one continuous stroke with a large brush.  Interesting lines and movement!

শর্তসাপেক্ষে এঁটো হাত
                             -জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি


এমনকি সারারাত ডুবখেলায়।জলের ফোঁটার মতো।এমন এক গোপন তারাখসা রাতে।হয়তো বিঁধে থাকে মৃত্যুর আদেশ।ঘন।এলোমেলো।ঝুল বারান্দায়।জীবাশ্মের শুকনো কোষপর্দা বেয়ে।ঢেউহীন খুলির ভিতর।আপাত শান্তি


সুযোগ মতো অনেকটা অবশিষ্ট ইশারায়
পোয়াতির কাঙাল সোহাগ মিশিয়ে
মাংসের শূণ্যতা থেকে শর্তসাপেক্ষে এঁটো হাত

(ছবিঃ জেমস ন্যারেস)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৬

noriko ambe    www.lab333.com  www.lablikes.tumblr.com  www.facebook.com/pages/LABSTYLE-by-LAB/189452871067225  www.pinterest.com/labstyle

 চুম্বক টান 
            -অভিশ্রুতি রায়


যেভাবে জাদু      খেলা হয়ে ওঠে

বিকেলের ঝিমিঝিমি শারীরিক বেয়ে

সেইখানেই লিটমাস ভিজে যায়

লাল থেকে নীল

          অার নীলে নীলে কত বিষের গন্ধ

নিশ্বাস চূড়ান্ত হলে অরন্য ভেদী হব

কত আলেয়া সুখ, নিস্তব্ধ সূর্যাস্ত...

গলা জুড়ে জড়োয়া নেমে অাসবে

অার লেখা পড়বে ব্যক্তিগত চুম্বকটান

(ছবিঃ ন্যারিকো অ্যাম্বে)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৫

Matthew Stone  www.lab333.com  www.facebook.com/pages/LAB-STYLE/585086788169863  www.lab333style.com  lablikes.tumblr.com  www.pinterest.com/labstyle

মাহবুব, দীর্ঘনিঃশ্বাস পাঠিও
                          -জ্যোতির্ময় বিশ্বাস


১.
সাক্ষাৎ মাত্রই চ'লে যেতে যেতে।
যাতায়াতকালে। বৃক্ষপর্বে। ভিক্ষায়...

এইভাবে তোমার জন্মদিন মনে আছে। তোমারও।

২.

পালকে হিম লাগে। ছিন্ন লাগে। তবু পাখিকে ক্ষমা ক’রে দেয়। কিন্তু মন খুব মাংসল একটা ব্যাপার। তাই পালক বললে ভুল হবে।

বাকি সব ঠিক আছে।
বাকি সব ঠিক আছে।
নষ্ট, হিম, ছিন্ন― এই তুলনাগুলি।


৩.

তোমাকে চিঠি লিখবো
আর তোমাকে চিৎকার

লিখবার আগে, খসখস পাঠাচ্ছি।
পাঠানো যায়। এখন তো তেমন পালকি পাওয়া গেছে।


৪.

দুটো চোখের ভিতর কোনো একটা বেশি বাঁশিময়
দু’পায়ের একজন বেশি ঘুঙুর

আর সবাই সমুদ্র হতে রাজি থাকে।


৫.

অভিজ্ঞতার কথা লিখবো
বাড়িয়ে বলবোনা কিচ্ছু।
তুমি অবাক হয়ে যাবে।

মাহবুব, দীর্ঘনিঃশ্বাস পাঠিও।

(ছবিঃ ম্যাথিউ স্টোন) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৪

Image result for abstract texture


বসবাস
          -বেবী সাউ

এক.

তোমার ভেতর আর কোন হইচই নেই। তেমন কোন গানের নাব্যতা কী ছিল কখনও! দৃশ্যের মাঝখান দিয়ে টুপটাপ ঘোর ঝরছে। আর বিড়ালকে পোষা জন্তু ভেবে সারাটা জীবন শুধু মায়া চেয়ে গ্যাল দু'একটি মুহূর্ত। রান্নাঘরে ভাজা মাছ; মিসেস চৌধুরীর দেওয়া দুধের বাটিতে পোষা আরশোলা--- সাঁতার শিখছে। আর এসবের মাঝখান থেকে তুমি বের করে আনছ সবুজ পাঞ্জাবী। ন্যাপথালিনের গন্ধে জেগে উঠছে শতাব্দীর পোষ-মানা আত্মহত্যা। তুমি কী তাদের এবার আসনপিঁড়ি পেতে পাত খাওয়াবে!

দুই.

বৃষ্টির ভেতরে যেসব গাছেরা হেঁটে যাওয়ার পথ শিখে নিতে পেরেছে, তারাই নির্বাচিত রত্নাকর পুরস্কারে। সংবাদ পত্র উত্তাল। প্রেমিকারা সেজে উঠছে ঘন পাতায়। শেকড়হীন জঙ্গল থেকে, নদীর ধার থেকে, ব্যালকনির ছোট টব ভেঙে বেরিয়ে আসা রোদে-রা মুখে মুখে হারাচ্ছে। বৃষ্টি-ফোঁটাতে  নেমে পড়বে অসংখ্য প্রতিযোগী। অথচ, এই মৃত জল আমার ক্ষতি করতে পারে, ভেবে, কৌশলে তোমার হাত আস্ত একটা কংক্রিটের শহর বানিয়ে তুলছে। বোঝো!


(ছবিঃ ওয়র্ক দ্য অ্যাঙ্গল)




মৃগশিরার মাসের কবিতা ৩

Image result for abstract texture

জল জীবন
                -কৃপা বসু

গভীরে নেমে যাও, রয়েছে সুবিশাল দেয়াল...
তাতে ঝুলছে অজস্র রাজনৈতিক শ্লোগান
উত্তাপ ছুঁয়েছে পিচঢালা নাগরিক রাজপথ।

নির্ভার হতে শিখেছে দোয়েল, ফিঙে
চৌরাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালে কেবলই
ব্যস্ততার যোগবিয়োগ,গুন,ভাগের হিসেব হয়,
তারই পাশে মূকাভিনয়ের আদলে নগ্ন ভিখারি।

বিছানায় সাঁতরানো নির্ঘুম রাত,
টেবিলে দগ্ধ প্রেমের মানচিত্র,
ডায়রির পাতা ছুঁয়ে যায় প্রাক্তনী চুম্বন…

বিকেলের জানালায় জমছে পিষে যাওয়া কাঠ গোলাপ,কাটাকুটি ও অনাদেরর গল্প,
শীতবিহীন উল কাঁটার সংগ্রামে জড়িয়ে থাক ভাতঘুমের আয়োজন,
জল জীবনে এত দৃশ্য'র পুনরাবৃত্তি
দেখে ভরিয়ে ফেলছি অপ্রাপ্তির খেরোখাতা...
 মেনে নেওয়াটাই যখন আলটিমেটাম,
মানিয়ে নিয়েছি সবটুকু কষ্ট, অপমান…

(ছবিঃ এস্ত্রিয়াস, ডেভিয়ান আর্ট)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ২

Image result for abstract black painting


কন্সট্রাকশন ওভারলোডেড
      - সুতপা চক্রবর্তী 



আঁচলের সুগন্ধ জমে গিয়ে ক্ষীর হতে
পারে না বলেই এখানে ওখানে পারফিউম ছড়ায়
উড়ালপুল খেয়ে হজম করতে গেলে দম নয়, জলকর লাগে।
রাস্তায় ঠোকা লাগার আগে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে ওঠে যে লোকটা

তার ও একদিন শহর হবে!


(ছবিঃ শ্যারন কামিং )

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১

Related image

সংলাপ 
         -অনিন্দিতা ভৌমিক


দূর কোনো প্রতিবিম্বের ভেতর
হারিয়ে ফেলছি নিজেকে
পরিচিত অবয়ব সরিয়ে হেঁটে যেতে চাইছি
গভীরতম অস্তিত্বের দিকে
যেভাবে একটা তীর্থযাত্রা    একটা ভবিষ্যৎ
কারো পায়ের পাতা লেগে
ছিটকে গেছে অচেনা শহরে
তার পরিব্রাজক লিপির গায়ে শৈত্যের অনুভব
সেই কুয়োতলা অথবা তেরছা আলোয়
কখনও খুঁজে না- পাওয়া ছোট্ট কানের দুল

ইতিহাস তো জীবন্ত পদক্ষেপ আসলে
শিকার ও সূর্যাস্তের ঘুপচিগুলো থেকে
ছুটে যায় ঐক্যবদ্ধতার সূত্রে
প্রাচীন বিদ্রোহের ডগায় পাক খায় উষ্ণ আবহাওয়া
রোদের ফোকর থেকে অজস্র ভাঙা গল্পগাথা

(ছবিঃ ডেভিয়ান আর্ট)