Monday 20 April 2020

বৈশাখের অনুবাদ কবিতাঃ পোল্যন্ড-আর্মেনিয়া থেকে তাতেভ চাখিয়ান



এক অচেনা মানুষের মৃত্যু
                       -তাতেভ চাখিয়ান 



একটি বিবর্ণ ছবি
যার এক সারিতে রয়েছে: একটি শিশু,
দুই মধ্যবয়স্ক পুরুষ এবং একজন প্রবীণ,
বলিরেখাঙ্কিত এক বৃদ্ধা
এবং একটি যুবতী মহিলা একটি শিশুকে অন্য হাতে চেপে ধরে আছে।
প্রতিদিনের দায়িত্ব নিয়ে ক্লান্ত, মৃতদেহগুলি
ছুটির পোশাকে মোড়া
একটি ব্লিচ সুগন্ধযুক্ত আঙুলে একটি বিবাহের রিং,
বাচ্চাদের মাথাভর্তি চুল
জীর্ণ পোশাক পরিষ্কারভাবে বাঁধা
আঁচড়ানো চুল এবং কাটা দাগ
আমি এই ফটোতে কাউকে চিনতে পারি না,
এগুলির যে কোনও একটির নাক আমার মতো।
জীবন - এটি তাদের যৌথ চুক্তি,
একটি ক্যামেরার সামনে একসাথে দাঁড়ানো।

মৃত্যু - আমার ব্যক্তিগত ফটো অ্যালবামে এই ছবির অস্তিত্ব।


(অনুবাদ- সম্পাদক)



বৈশাখের কবিতা ১১

Birbhum In Summer- Benode Behari Mukherjee - Bengal School Indian ...


জড়ো করা দিন
                  -নীলাব্জ চক্রবর্তী



মাংসের বাগানে আমি গান ভেবে
একটার পর একটা
বাদামী ক্যালেণ্ডারের ওড়াউড়ি
হরফ অর্থে খুব উদাস যা কিছু দৃশ্য হচ্ছে
ঘ্রাণ হচ্ছে
স্মৃতির বাইরে যেটুকু
পড়ে থাকা
শরীরের ভেতর একটা জড়ো করা দিন
মানে
ঠাণ্ডা একটা হাতল
শুধু জরিপ অবধি
এই যে আঙুলের ঘুম
নড়ে উঠছে
একটা চলমান কবিতায়...

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ১০

Benode Behari Mukherjee: Light and Shadows of an Artist's Life


অনুশাসন পর্ব : দুই
                         -নভোনীল চট্টোপাধ্যায় 
             
ঋণ করে রেখে যাই শব্দ, সংসার, সংলাপ
অন্দরমহলে বাজে এত সুর আর এত গান,
কার মতো এই সুখ? নির্ভীক পাতার চিৎকার
বোঝাতে না পেরে তুমি ভিজে পলিমাটিতে আঁচড়

হলুদ আর নিমপাতা হয়ে আমি জীবাণুনাশক,
এই দেশে শুয়ে আছি দাম্পত্য চর্চার আগে থেকে
তবু আমি বনাঞ্চলে মানুষ এনেছি প্রতিবাদে
সক্ষম, শিক্ষিত হাত বার বার ধুয়ে নিচ্ছি সাবানের জলে।

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ৯

Benode Behari Mukherjee - JungleKey.in Image


অসুখের দিনে
             -গৌরাঙ্গ মন্ডল



চিমটে কেটে দেখে নিই
আমি ঠিক মৃত না নিভৃত

মলিন কুয়াশ যেন ঈশ্বরের
নিজ হাতে বিছানো কফিন

ভেতরে কী ঝড় উঠেছিল?

বালিকা শহর কার আঙুলের ভয়ে
শামুকের মতো তার বুক ঢেকে নিল?






মিছে দোষ দাও, মিছে
ভর্ৎসনা করেছিলে তাকে

যাকে অপরাধ ভাবো, ভাবো
যার আশরীর নখ

মুখোশ সরিয়ে, দেখো, আমারই মতন
আসলে সে ভীতু এক লোক



ভয় খামচে ধরে আছে পৃথিবীকে

ওল্টানো জাহাজ থেকে যারা ফিরে গেল
তাদের ঘুমের মধ্যে বিষাদের সাথে
চোখ থেকে উঠে আসবে লবণ কণাও

অভয়, তুমিই নার্স
তাহাদের শুশ্রূষা শোনাও

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ৮


Benode BehariMukherjee | Untitled | MutualArt

সম্পর্ক
       -সম্পিতা সাহা

একটা যন্ত্রণা, প্রলুব্ধ বিকেলের মতো
বহুক্ষণ পেটের নীচে আটকে ছিল।
হাত দিচ্ছিলাম যতবার,
ততবারই কেমন তরল হয়ে
লেগে যাচ্ছিলো উলটোদিকের মানুষটার চোখেমুখে।

কাউন্টারে ভিড় জমছে ক্রমশ।
সিনেমাটা বড্ড ভালো হয়েছে শুনলাম।
নিজেদের সাথে মিলে গেলেই বুঝি
পর্দার রঙ উপাচার হয়ে যায়!

দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে গ্রীবা ভারি হয়ে ওঠে।
ঠাণ্ডা লাগে কানে।
মোহিনী মাছের মতো দেহ
শিহরণ থামিয়ে মন দেয় তলিয়ে যাওয়াতে।
হলের ভিতর সবার চোখে মুখে
একটা ধুসর গোলাপি রঙ...
এরমধ্যে তোমার হাসিটা
পুরোনো বাড়ির গোলমরিচ গাছের মতো
ভস্মসবুজ হয়ে
ফুরিয়ে যাচ্ছে না বদলে যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছেনা...

যন্ত্রণা বহুক্ষণ একজায়গায় থাকলে,
শরীরেরই একটা অংশ মনে হয়।
সেরে যাক পুরোপুরি তেমনটা চাইলেও,
সেরে গেলে ফাঁকা লাগে কিছুদিন।
বিবর্ণ, ত্রিকালসিদ্ধ
আগামীজন্মগুলোয় যাতে একটা মহাসাগর
শুকিয়ে যায় চিরতরে
এইটুকু অন্ধত্ব বাঁচিয়ে রেখো মহাকাল...

মানুষে ঈশ্বরে সংসার নয়,
শুধু বোঝাপড়া হয়ে এসেছে সুনিবিড়।

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)


বৈশাখের কবিতা ৭

Benode Behari Mukherjee: Light and Shadows of an Artist's Life


অমরত্বের ভিতর মানুষ 
             -তন্ময় ধর 


যেখান থেকে অমরত্ব শুরু হয়, তার ঠিক পাশেই পড়ে আছে কয়েকটি কঙ্কাল
আমরা দেড় হাজার কিলোমিটার হাঁটব বলে নিজেদের সাজিয়ে-গুছিয়ে নিচ্ছি
উপবাস করছে এক দীর্ঘ গর্ভকালের আগুন
সাতটি জিহ্বার উপর ভর করে
পুড়িয়ে দিচ্ছে শিশুর খেলনা, মিছিমিছি দুধ, রক্তের দাগ

ঠিক যেখান থেকে অমরত্ব শুরু তার নীচে শুকিয়ে যাওয়া বাদামী মৃতদেহগুলোর উপর দিয়ে
পার হচ্ছে রঙবেরঙের চেরী, কাজু, চীজ, ক্ষীর, শাহি জাফরান মাখানো রেসিপির ভিডিও
পার হচ্ছে তীব্র হাসি, গনগনে লাল মাংসের যৌন সংলাপের অদৃশ্য তরঙ্গ
অতিরিক্ত আহার ও ফেসিয়ালের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে
কেউ অশুদ্ধ মা লাগিয়ে দিচ্ছে সন্তানের ঠোঁটে 'আনন্দধারা বহিছে ভুবনে'




(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ৬

Benode Behari Mukherjee: Light and Shadows of an Artist's Life

সেবায়েৎ
           - বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়

নিত্যদিন ভারি হয়ে যাচ্ছেন, আপনাকে আর
একা একা বওয়া যাচ্ছে না
হে গোপন, আপনাকে নামিয়ে রাখাও যাচ্ছে না
হাঁপানোও যাচ্ছে না, ফোঁপানোও যাচ্ছে না
একা রাস্তায়
প্রিয় বাহুবন্ধের হার
আলগা করা যাচ্ছে না
চায়ের দোকানে
ভাঁড়ে বক্র ওষ্ঠ রেখে চুমুক দিচ্ছেন
মায়ের ওখানে
পরিপাটি বিছানায় তুলোর বালিশে
আসছেন, আসছেনও না
হে প্রাচীন
প্রাগিতিহাসিক কামনার
খেতে খেতে আপনাকে মাছের টুকরো ধরে দিই
আচমন করিয়ে দিই আমি মুখ আঁচাতে আঁচাতে
চাঁদের যে মই নামে জানলার থেকে বিছানায়
তার কাছে আগুয়ান করিয়ে দিই ঘাড়ে হাত রেখে
নিত্যদিন ভারি
একান্তের নিত্যসেবা নিয়ে


(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)




বৈশাখের কবিতা ৫


Between Sight and Insight: Glimpses of Benode Behari Mukherjee at ...

ম্যুরাল
      -পার্থজিৎ চন্দ

কমলালেবুর খোসা ছিঁড়ে ফেলবার আবার সময় হল, আমিও আনচান করে উঠি। স্নায়ুর ভেতর কালো মদ চলকে উঠেছে; যেন ভোররাতে দুধের ভেতর থেকে উঠে আসা মহিষের ছায়া। মদের ভেতর প্রত্ন-পোকাদের মতো কিলবিল করা স্নায়ু… বহুদূরে পড়ে থাকা স্মৃতি-শর্করার দিকে ভেসে যায়। আমি জানি এরপর তুমি নিটোল কমলালেবুর আভা নিয়ে চেয়ারে বসবে। অভিজাত চকচকে নখে খোসা ছাড়িয়ে রাখবে সুগোল টেবিলে। মাত্র একবিন্দু অসতর্ক রস লাফিয়ে উঠবে শূন্যে (ও তোমার প্রসারিত জিভে আশ্রয় পাবে)। একে একে পুরুষ্টু হলুদ কোয়াগুলি মাটির থালায় পাশাপাশি শুয়ে… যেন সহদর… যেন সূর্যমুখী নার্সিং-হোমের প্রসব জগত। এ সময়ে তোমার অঙ্গুল চুষে কমললেবুর স্বাদ পাই। তোমার পায়ের কাছে পড়ে থাকা খোসা। পাগলের মতো বুড়ো আঙ্গুলের নধর শরীর মুখে টেনে নিয়ে পাই বাগানের দিকে হেলে পড়া পাইন-গন্ধ ও ছায়ার আগুন

তোমার কমলালেবুর প্রতিবিন্দুতে অবাক যৌনতা তীব্র ইশারা ও অজানা ভাষার লুপ্ত ব্যকরণ। খোসা হাতে নিয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখি নিখুঁত মুর্যাুল, দূর পাহাড়ের থেকে নেমে আসা আদিম মুখের বলিরেখাগুলি… ধকধক করা

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ৪

Postcards from Benode Behari Mukherjee |

ঘৃণা পরম ধর্ম
               -সুপর্ণা মণ্ডল


১.

জীবিতদের আদালতে সব দোষ
মৃতদের উপরেই বর্তায়
মৃত্যুর পর তুমি কোন বিচারের অপেক্ষা করছো?

২.

কাকে আঘাত করতে চাও?
ভেঙে চুরমার হল আয়না।

৩.

একটি শিশু কাঁদছে
শিশুরা তো চিরকাল কেঁদেই থাকে
কান্নাই ওদের ভাষা
কিন্তু আর একটি শিশুকে দেখো
সে কিন্তু কাঁদছে না একেবারে

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ৩

A Family Living Road side BENODE BEHARI MUKHERJEE Oil Color 20th ...

বরফ বৃক্ষের উচ্চারণ 
                           -শিবু মণ্ডল 

এই তো মৃত্যুর বেতবন থেকে ঘুরে এলাম

সেখানে উদ্দেশ্য ছিল, রাস্তা ছিল না, আবার ছিলও

সেখানে শুয়ে শুয়ে যাওয়া যায় বসে বসেও

সেখানে হাতে করে কেউ বোতাম বুনে দেয় জামার গায়ে



তারপর গর্ভবতী নারীর ফুলে ওঠা নাভির দিকে তাকিয়ে বসে থাকি

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ২

Benode Behari Mukherjee: Light and Shadows of an Artist's Life

 মুক্তক
      -মৌমিতা পাল

জলের ওপারে যাবার জন্য একখানা নৌকা
পাঠিয়ো তো সাধনসঙ্গিনী;
একটু একটু করে
   বদলে যাচ্ছে সম্পর্ক।
 কথামতো ডিপি না বদলালে অভিমান হয় তোমার,
ভোর পাঁচটায়
   নতুন বাঁধা গান শুনিয়ে
ঘুমোতে যাই আমি।
পাখিরা দেদার ওড়ে
মায়াবী শ্রম শেষে।
সাধনসঙ্গিনী তোমার দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গী হয় তখন
দুচারখান মানুষপ্রধান সম্পর্ক।
তোমাকে মেসেজে লিখি
-'এবার ঘুমা'।
ভুলের আমদানীতে
      ছলছলাচ্ছে বুক,
আতঙ্কআকাশকে
   তাজ্জব বানিয়ে
সাধনসঙ্গিনী বলে ওঠো
-"তোর তো অনেকের প্রতি প্রেম
আমাকে নিয়ে
খামোখা ভাবতে হবে না"।
টুপিটুপিয়ে গড়িয়ে পড়ে বুকে
 এ কেমন নিক্কন!
হেসে টাইপ করি -
"এর থেকেই বোঝা যায়
কতটা ভালোবাসিস!"

আতঙ্কআকাশকে
তাজ্জব বানিয়ে
 অভিমান অভিমান খেলছিলাম শব্দের মহল্লায়।
মানুষের খাঁচাগুলোতে
         শব্দাবলী নয় , স্বকালপাঠক নয়
আমাকে একমাত্র ত্রাণ করতে পারে তোমার মস্করা

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)



বৈশাখের কবিতা ১

Exhibition in London to focus on works by Indian modernist Benode ...

হোম কোয়ারেন্টাইন
                   -পাপড়ি গুহ নিয়োগী

আর কিছুদিন অপেক্ষা কর
দীর্ঘ হলুদ ভোর হবে
ধীরে ধীরে ধুয়ে যাবে কালো রং

আমাদের একান্নবর্তী স্কুল খুলবে
পাড়ার চায়ের দোকান
আবার দায়িত্ব বাড়বে জুতোর

আমরা আলোর গল্প করবো
জলরঙা হবে আমাদের জন্মদিন
পেরেক তুলে নেবো মানচিত্রের পা থেকে

দেখিস
রাস্তাটা হঠাৎ বাঁক নেবে
আনন্দ বাজারের দিকে

বিশ্বাস রাখ,দূরত্ব কমে যাবে
ঘরে ফিরবে পরিযায়ী শ্রমিকরা
এসব অপেক্ষা আর থাকবে না

শিশুরা দুধ পাবে
আমরা সবাই থালাভর্তি গরম ভাত
প্রতিমুহূর্তে আর মৃত্যু খেতে হবে না

মুখোশহীন মুখ দেখবো আবার
রবিবারের আঁকার স্কুল খুলবে
কারণে অকারণে হাসবো

দমবন্ধ জীবন মুক্ত হবে
কৃষকের অবুঝ ফসল
পড়ে  থাকবে না মাঠে

আমরা বুনোফুল । নদী। অরণ্য
সমুদ্র। পাহাড়ের কাছে  যাবো
আবার  ঠোঁট  পাবে আশ্রয়

বিপদ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে
ধর্মস্থান  আসলে
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের  পিছনেই  থাকে

( ছবিঃ বিনোদবিহারী মূখার্জি)