Monday 20 January 2020

হিমেল মাসের কবিতা ১০

Related image


শিরোনামহীন
                      -বল্লরী সেন

কাল রাতে
যে তোমার ডাকঘর ছুঁয়ে বসেছিল
ঘুমিয়ে পড়া মনোনিবেশ, আলসেমির ছায়া, খর প্রলুব্ধতা
যে তোমার শরীর ছুঁয়ে
চেখেছিল প্রতিটা সন্নাটা,তাকে
তার বেপরিচয়ে কিরকম হয়ে পড়ছো আজ
একটা একটা করে মাঠা তোলা দুধের মতো সে পেয়েছে
স্বর্গ| সে মেপেছে জলের হিসেব, কতদূর সাড় নেই
কোনখানে শাঁখের করাত, লাগে, ব্যথা লাগে| এইমাত্র কথা |
কোজাগর শাঁস ভাঙা ডিমের সাদায়
সে সব দাগ ধুয়ে ফেলো| খুচরো কোরো না |
দুরন্ত ষাঁড়ের সামনে জাল্লিকাট্টু পরবের দিন একা বয়ে যায়, সে অন্ধ বধির
কানে তালা |
বরফ পড়ছে বলে কাল সব জানলার দেহে ঘুমের ভেতর থেকে কে যেন কেঁদেছে ,
দুপুরের চাঁদ বোঝে এ ও এক মুখ বুজে
থাকা

( ছবিঃ আন্দ্রে ম্যাসন )

হিমেল মাসের কবিতা ৯

Image result for war painting surreal


দিনলিপি
       -জয়শীলা গুহ বাগচী 
                     
 কতদিন পর হাতে সাদা পাতা, খুলে যাওয়া আমৃত্যু মেঘ। অদম্য অক্ষরের পিছুটান, হাত... হাতের পাতায় পাখির স্রোত। এইসব হঠাত ঘটে। প্রতিদিন তো আলোচালের ভাঁজে ভাঁজে সত্যিই মোরগ ডাকে না। অথবা কোন এক সাদামাটা ডাল...ভাত... অমোঘ যুক্তির মতো প্রকান্ড লাফ হয় না। প্রতিদিনের লেখালেখিকে কেজো জামা পরতে দেখলে নিজেকে উপবাসী জীভ বলে ভাবি। অথচ নিজেকে লিখতে গিয়ে আমাকে ছিঁড়ে খায় পুড়তে থাকা মেয়ের দল, মাথা ফুঁড়ে উপছে পড়ে রক্ত-গন্ধ। মস্ত মস্ত দাঁত বসে যায় হাতের আঙুলে । কী লিখবো ভাবি , বিশ্বাস পুড়ে গেলে আত্মের কী থাকে? সেইসব গন্ডির? যা কিনা গড়া হয়েছিল কাঠামো রক্ষায়? তারা কি চেপে বসে? নাকি ধোঁয়ার বিশ্লেষণে হারিয়ে যায় রূপ অরূপ দুইই। ধোঁয়া ওড়ে, আত্মপোড়া ছাই আবার পোড়ে, পুড়তে পুড়তে শুদ্ধ, শুদ্ধতম কোনটাই হয় না। রাস্তার কোণে সামান্য ধূলো হয়ে উড়ে যায়। অনন্ত শূন্যতার মাঝে, অনন্ত জীবনের মাঝে রক্ত মুছতে মুছতে আমার আর লেখা হয় না। লেখার জন্য লেখা হয় না কিছুই।

(ছবিঃ পল ন্যাশ)

হিমেল মাসের কবিতা ৮

Image result for war painting surreal

শীতের চিঠি
             -সুমনা দত্ত


দূকূল ভাসিয়ে শীত নামে এই পাড়ায়।
সাদা হিমে ভরে যায় ছাদের কোন।
নিম্নচাপ হয়, জলপ্রবাহ।

সব্জিওয়ালা বসে না।
খালি ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসে মিনুদি।
চিঠি লিখে।
কাটাকুটি হয়।
আবার লেখে।

তোমার ঘরে শীত নেমেছে, রঙ্গন?
উপচিয়ে চোখ ভিজেছে?


আফ্রিকার জামা পরে আসে পোস্টম্যান।
নীল সাইকেল দেয়ালে ঠেস দেয়।

কুয়াশায় ভরে যায় তার টুপি।
আণ্টার্টিকার চশমা।

ব্যাগ থেকে শীতের চিঠি বের করে।
ছুঁড়ে দেয় উদ্ধৃত সারণিতে।

শব্দ কি বোঝে,
কত জন্মান্তর পেরিয়ে গাছের একটা করে শীতজন্ম হয়?

(ছবিঃ আন্দ্রে দলুহোস) 

হিমেল মাসের কবিতা ৭



পাখিবেশ
             -শিবু মণ্ডল

তুমিও পাখির বেশে ডানা মেলাকে মুক্তির সমার্থক ভেবে নিলে!

গাছের ডালে কোনও ডাক নেই, বাসার বাঁধনে কোনও গ্রন্থি

ওড়াকে ধ্রুবক ধরে ব্যক্তিগত ক্ষুধা বাতাসে ঘুরে ফেরে



শিকড়ে কোনোকালে রং ছিল না। তবু নিজস্ব ভ্রমকে

বালির উপর হেঁটে চলা পাখি ভেবে নিলে



স্বপ্নে কখনো কখনো ডাহুক হাঁটে অভ্যাসে

পরিযায়ী সংসর্গে লিপ্ত হয় প্রিয় শিল্পীর গড়া তাঁবু ও রাত্রি

কথা হয় এলোমেলো নিজের সাথে মাটির পাখির

(ছবিঃউইফ্রেদো ল্যাম) 

হিমেল মাসের কবিতা ৬

Related image

শিলালিপি 
             -বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

অপমান থেকে কেউ ফিরে আসছে ওই
তার চোখে দীঘিটির ছায়া
যে দীঘি শান্ত কিন্তু নিরুত্তেজ নয়
জলভারে ঢেউ দুলে উঠে
গরম বাতাস এসে ছুঁয়ে যায় ঠোঁট  জিভ চোখের উত্তাপ

ঝড় হয়
সোল্লাসে  লাফিয়ে ওঠে তামাদি আক্রোশ
কিন্তু কী শুদ্ধ  তার হজমক্ষমতা
সমস্ত চিবিয়ে নেয় মতিচ্ছন্ন সব  বিরুদ্ধতা

 তবু কোন শিলালিপি  লিখে রাখে উপেক্ষার হিসেব নিকেশ।

(ছবিঃ আলবের্ত গ্লেইজেস) 

হিমেল মাসের কবিতা ৫

Image result for war painting surreal

আঁধারশীলা
                       -পিয়াস মজিদ

আঁধার-
কৃষ্ণজাতিকা
অাঁধারই আমার সাজবাহার

আলো-
তুমি অন্ধকার হলে গন্ধরাজ,
সে আঁধার অধিক আলোর

আঁধার-
তুমি দিবাবতী
আমি সন্ধ্যার সওয়ারি

আলো-
উজিয়ে তোমার কালো বীণাপাহাড়
জমা আছে যা কিছু বলার আমার

আঁধার-
তোমার গীতবাস্তবে
আমার স্বপ্নও মেলায় অসুরে

আলো-
তবু কেন টের পাই স্পর্শের স্পর্শ!
অন্ধের স্পর্শের মতো...

আঁধার-
সব অন্ধকার ফুলগাছ
আমার জীবন তোমার
মরণের অনুপ্রাস

আলো-
শূন্য সব আমার
তবু তুমি
শূন্যের কৃষ্ণতায় ভরাট

আঁধার-
আলো আসবেই
দিকে দিকে
বৃদ্ধ মৃত্যুরও চলে নবীনবরণ

আলো-
এসো আঁধার এসো
জাগিয়ে জাও জীবন কালকৃষ্ণ...

(ছবিঃ জোয়া মিরো) 

হিমেল মাসের কবিতা ৪

Related image

কৃষক
              -জ্যোতির্ময় বিশ্বাস


কবিতা জড়িয়ে একরকম মাটি শেখা হল
অংক, যা পারতাম না, সেই ভয় কেটে গেল। যা এখন
অসহায়ভাবে পারি, সেই
কল্পনা করার জন্য পা ছড়িয়ে টানটান
হয়ে বসতে হয় না।
মাথার ভিতর জায়গা জুটে যায়। জায়গাভরা
অতিনিচু জলাটির মতো সময় রোয়া ঋতুটি সেখানে।
আমি যে কৃষক হবো, সেও যে কৃষক ছিল, কেউ যে
অন্য নয়…
কবিতা জড়িয়ে কিছু কৃষিকাজ শেখা হল।

(ছবিঃ কুর্ট সেলিগমান)

হিমেল মাসের কবিতা ৩

Related image

খুচরো না দিয়ে
                -বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়

এমন প্রশান্তি পেতে বড় বেশী দাম দিতে হয় !
শেষ হতে হতে শেষ দাঁতের শিকড়-
বেদনার নেই আর ভয়।
এখন দিনের পরে দিন যাবে,
ফেরত চাইলে-
উদাসীন জীবনের মুদী,
খুচরো না দিয়ে কিছু লজেন্স বাড়াবে !

(ছবিঃ জুলিয়ান গর্ডন মিশেল )


হিমেল মাসের কবিতা ২

Related image

কার্ল মার্ক্স
              -অনিমেষ সিংহ

রাষ্ট্র যদি মানুষকে, ভালোবাসা দিতো,
তবে, কার্ল মার্কস, শুধু সনেট-ই লিখতেন, সারা জীবন।

মানুষকে বাঁচার অধিকার দিলে, লেনিন একজন ঔপন্যাসিক হতেন।
মাও সে তুং, হতেন, খুব ভালো খেলোয়াড়।

ধর্ম যদি, মানুষকে মর্যাদা দিত
-কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে,
একটি শিবমন্দির নির্মাণ করতেন
নকশালবাড়ির লোকেরা;

মানুষকে স্বাধীনতা দিলে, চে,
তোমার প্রয়োজন ছিলো না পৃথিবীতে।
আমিও হিন্দুর গান গাইতাম
আমিও মুসলমানের গান গাইতাম

আমিও, ইহুদি বা খ্রিস্টান হয়ে যেতাম।

আজও, ছুঁড়ে দেওয়া রুটির টুকরো মুখে তোলার থেকে
আমি পছন্দ করি, বিপ্লব।

আজও কার্ল মার্ক্স, ভীষণ প্রাসঙ্গিক

(ছবিঃ ভ্লাদিমির কুশ )


হিমেল মাসের কবিতা ১

Related image

পরবর্তী
              -নিবেদিতা নাগ মজুমদার


আমি আসব বলেই এতদিন-

রেল লাইনের পাশে
ঝুপড়ি গুলোর পিছনে হারিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে
এগিয়ে চলেছ তুমি,

শতযোজন মাঠ-ঘাট, গাছ-পালা
বাড়ি গুলো পিছনের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে..

আকাশের মেঘ, ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে
তোমার এগিয়ে যাওয়া দেখবে বলে
ভীড় জমিয়েছে অনন্তে,

কি আশ্চর্য! স্টেশনে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে আমিয়ো পিছিয়ে গেছি অবিরত।

ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলে
একঝলক দেখতে পাই!

প্রতিবারের মত
এবারেও আমার ট্রেইন মিস হয়ে গেছে।

(ছবিঃ ওলেগ কোরোলেভ )