Tuesday, 19 December 2017

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৭

Related image

অনায়াস, তোমাকে... 
            -পূজা নন্দী 

প্রতিটি প্রেমের আখ্যানে জ্বলে যায় নারীর চরিত্র। এই কাঁপা অক্ষর বোঝে,  যে, পথ ফুরোয় না। কেবল রাস্তা মাপে পাহাড়িয়া বাতাস- তার পিছু  ছুটে মরি আমরা। হাত ধরো, ফেলে আসা দিনের অপেক্ষায়...অাঘ্রান জমাও...
এ অাঘ্রান জমা কুয়াশার, এ অাঘ্রান সেই সব শীতের যার মাঝে সময় একা ফেলে চলে যায় নিজের মত, যেন বন থেকে বনান্তে ছুটে চলে একাকী পাখি... উত্তুরে বাতাস জানে তার ছটফটানি...

(ছবিঃ অ্যাইমি হেরমান) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৬

Image result for abstract black painting

জাদু করা বাস্তব... 
                           -নীলাদ্রি বাগচী 

সব সকালের সুর এক তারে বাঁধা থাকে না। তোমার লাঠির মাথায় তুমি ঘুরিয়ে নাও আলো  আর রেশ প্রান্ত থেকে প্রান্ত চলে যায়...

বৃষ্টিদিনে ঝলমল করে ওঠে পুকুর। দৃশ্যের ব্যাবধানে ভুলে যাওয়া ত্রিভুজের রান্নাঘরে পরিপাটি তৈরি হয় মাখনের সুস্বাদ। তৈরি হয় ক্লান্তি বিনাশক একটি সন্ধ্যে। আপেক্ষিকে আবহাওয়ার ঘোরে ডুবে যাওয়া রেলফলকের পাশে জলে নামা কিশোরী দেখে, বহু দেরী করে যাচ্ছে স্থানীয় ট্রেনটি। সে নিজেকে জলে ঢেকে রাখে আর জল ঝলমল... উচ্চকিতে বর্ণনে যায় আসন্ন বৃষ্টি সন্ধ্যার...

হরিণী, মায়াবনবিহারিণী, তাকে ধরবার জন্য বিষণ্ণ এগিয়ে যায় দীর্ঘ হুইসেল দিয়ে স্থানীয় ট্রেনটি। চরাচর লুপ্ত হয় টানা বৃষ্টি শব্দে। নামানো শার্সিতে জলের আঙুল লেখে দূরত্বের প্রতিশব্দগুলি...

আমি শব্দ ধাবমান। অস্তিত্ব স্থির আর আসন্ন সন্ধ্যের জন্য মাখনের তীব্র শ্বাস... হকারের ছোটো কফি কাপ...

                                     ###

নেমে জল। নেমে আঙুল ডুবিয়ে পার প্লাস্টিক মোড়ানো রিক্সা রঙ। টোটোর প্রস্থের মতো অসীম দূরত্বে সুখ, শহর শরীরে জল বসন্তের চিহ্নগুলি দেয়। তবে তা নিয়নে, বড়জোর এল ই ডি মেধায় এইসব শহুরে দ্যুতিকে অনায়াস পার করে শান্ত বর্ষা সন্ধ্যে; জল চোখের গভীরে খোঁজে নিকট অতীত। ভাবে, ক্লান্তি একটি প্রতিশব্দ, পথপ্রান্তে সেজে থাকা পানগুমটির বয়ামে বয়ামে যেরকম স্মৃতি...

স্মৃতি এক কারিগর যার নির্মাণের ত্রুটি যানবাহনের শব্দ অনায়াস ঢেকে দিতে পারে। ঢেকে দিতে পারে যতি, চিহ্নগুলি লুপ্ত ক’রে হাতের ভেতর থেকে হ টুকু তুলে এনে মোড়কে ছড়িয়ে দেয় মোহ... দেয় সপ্ত ঋষি গল্প, অন্তরজাত কোনও সুস্বাদু পরিবেশনের দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে অতিরিক্তে আরও কিছু দেয়...

সম্ভবত, গোপন বিরহ। ফলে, দোর খুলে যায় সেই দীর্ঘ লাঠির গল্পে আর হ্রস্বে কাছে আসা বোধ...
বোধ যার অন্যনাম প্রস্তাব পেরিয়ে আসা অনাস্থার প্রান্তবিন্দু... শহরের প্রান্তদেশে ভেজা মৌরির সুঘ্রাণ...


(ছবিঃ ক্যাথেরিন জেল্টেস) 

মৃগশিরার মাসঃ অনুবাদ কবিতাঃ পোল্যান্ড থেকে জোয়ান্না লেক

Related image


















ফাটল 

নীরবতা। লক্ষ্য ধারালো ছিল, কিন্তু ছেলেরা ছিটকে গিয়েছে বাইরে। দুধ এবং বিড়ালের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাশুল দিতে ইতিমধ্যে দেরী হয়ে গিয়েছে তাদের। তারা সেরকমই থাকুক, ছুরির জন্য খালি হোক সেট, প্রশিক্ষকদের ঘাস-কাটাকাটি। 
এসময় কেউই প্রতিসৃত করে না সূর্যকে। সেই মুহুর্ত, সূর্যাস্ত এবং নদীতটের নারী ধুয়ে ফেলেছে। সমস্ত বর্জ্যে শুকনো রক্তের দাগ। ধরা যাক, এসব রাখা হয়েছে সূর্যাস্তের বিবরণে, সবকিছুর পরিবর্তে।   
কাছাকাছি, মেয়েরা খেলছে ‘তাসের ঘর’, ছোট্ট রাজকন্যাদের শাদা পোষাক উড়িয়ে। যে খেলা তুমি খেলতে চাও, শুরু করো, তারা ভয়ে বিবর্ণ হোক। আমি অন্য রূপকথা থেকে জাদুকরী হয়েই ছিলাম।  ওরকমই থাকতে দাও, ছবি পরিষ্কার হোক।  
স্পর্শের জায়গায়। ওটাই থাকতে দাও। আর্মচেয়ারে থাকা শিশুটি পাতা উলটে চলেছে। শিশুকন্যাটি পিতাকে বলছে ‘এটা হাতি, এটা জিরাফ’। যদিও বইটি উগরে দিচ্ছে বিষাক্ত মাশরুম। তুমি কিন্তু আটকাতে পারবে না ক্ষয় এবং ডানার ফিসফাস। 
সে ফিসফাস রাত্রিচর পতঙ্গের। যখন আলো বদলে যায়, আমি নিজেকে চিনতে পারি না। দুয়ারে আঙুল রেখে চলি আমি। থাকুক, পৃথিবী শীর্ণ হোক চোখের সামনে- ফাঁদ পাতাই আছে, আর আমি এমন কিছু শুনতে পাচ্ছি যাতে মনে হচ্ছে বেড়ালে জিহ্বা আটকে গিয়েছে একটি ব্লেডে।

(জোয়ান্না লেকের জন্ম ১৯৮৪ সালের ২৫ জানুয়ারি, পোল্যান্ডের ‘রেশোয়া’ শহরে। এযাবৎ চারটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি উপন্যাস লিখেছেন। ২০১১ সালে পেয়েছেন Nike Literary Award। মূল পোলিশ থেকে মারেক কাজমিয়েরস্কির ইংরেজি অনুবাদের মধ্যস্থতায় এই অনুবাদ করা হল) 

(ছবিঃ মিওয়াশ সাহিত্য উৎসবের সৌজন্যে) 




আশ্চর্য্য ধারাবাহিকঃ হারিয়ে যাওয়া নব্বইঃ পর্ব ৫

modern art paintings artist Bianchini


“খালিহাতে নিখুঁত বৃত্ত আঁকার কৌশল” 
                          -অনিন্দ্য রায়

“ ...and  I  too play a  guitar -  but sometimes I play the  fool” প্রথম কথা এই ছিল আমাদের,হ্যাঁ, লেনন ছিলেন আমাদের পরিচয়ে । কিছুদিন হল  বিটলসের কিশোরবেলার গানের অ্যালবাম ‘Live at BBC’, তাতে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে এই কথাগুলি বলেহিলেন জন লেনন । মধ্যনব্বইয়ের এক দুপুরে এক কবিতার আসরে তার সাথে আমার আলাপ, বাঁকুড়ায় ।ছিল এপ্রিল, ভিড় থেকে সরে গেশ্টহাউসের নিঃসীম বারান্দায়, যেন গেরিলা-স্ট্র্যাটেজি বোঝাচ্ছে এরকমই গোপনীয়তায়,সে আমাকে কবিতা শুনিয়েছিল , যা পরে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
 আর কোনোদিন দেখা হয়নি আমাদের, এক দুপুরের দেখা, তবু কেন জানি না আজও তাকে বন্ধু মনে হয়, খুঁজতে খুঁজতে যখন তার সেদিনে শোনানো কবিতাগুলির কিছু পেয়ে যাই পত্রিকার পাতায়।  আমাদের নব্বই এমনই তো, এমনই তো বন্ধুত্ব আমাদের, কবিতা আমাদের। ফোন নাম্বার দেওয়ানেওয়া ছিল না, ফেসবুক ছিল না, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ছিল না, কিন্তু আমরা বন্ধু হয়ে যেতাম, সে বন্ধুত্ব কবিতার । 
শেষরাত্রে সমস্ত ঢেউ এসে থামে এই স্বাস্থ্যানাসের গোলবারান্দার নিচে। সম্পূর্ণ সকলটা
ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে কুয়াশায় ঢাকা নরম, গভীরে এক দ্বীপ । তার উষ্ণ স্রোতের পাশে
লুকিয়েছে সেইসব গাছ । যারা
সরুসরু লম্বা পাতা ঝুঁকে পড়ে বালির ওপর উড়ে আসে কোনো দূরের শহরের থেকে
বৃদ্ধ ব্যান্ডবাজিয়ের পালকবিহীন
নীল টুপি । কাল সারারাত, বাতিঘর ঘিরে যেন নেচে গেলো পশমী চাদরঢাকা শীত
নক্ষত্রেরা ... সংখ্যায় ছয় ; ভেসে ওঠা নৌকার শব্দগুলি ছুঁয়ে, ভাঙা
ব্রিজ ঢেকে দেওয়া কুয়াশার স্তর
দু’হাতে সরিয়ে উঠে আসে সারসার চাঁদ পরিত্যক্ত কারখানা চত্র্বর জুড়ে, পুরোন অস্ত্র আর
পিচ্ছিল জলপাই পোষাক শরীরে ;
ওরা জেনেছিলো, রাতের সীমানা আর হলুদ টিলার পাশে খুঁজে পাওয়া যাবে বড়, গোল
তারাটিকে । প্রাচীন গ্রীস্ম-অঞ্চলে সেই গল্প ছুঁয়ে যাবে পাথরের বাড়িঘর, দীর্ঘ
প্রান্তর জুড়ে নেমে আসা
বেঁটে বেঁটে বাদামী ঘোড়ার দল । সন্ধ্যায় হাওয়ালন্ঠন হাতে ঊঠে আসে আলখাল্লা ঢাকা
এক অবয়ব, ঝাউবাংলোর এই
কিন্তু জানলার পাশে । বাইশবছর আগে তবে কি বলেছিলে আলোর সময় ?
বাতাসের ো লবণের স্তর ? জেগে ওঠা নাবিকের বিভিন্ন মানচিত্রে হঠাৎ আলোকবিন্দুগুলি ?
তুমি ? নাকি মোমবাতি ? প্রতিটি জন্মদিন ছুঁয়ে যাও । সন্ধ্যায়
নিচু নিচু কাঠের বেঞ্চিগুলো ভ’রে ওঠে কামিনের ভিড়ে, দিশি মদ, শস্তা কড়া
তামাকের ধোঁয়া তারা প্রেমের গল্প শোনে, ডিসেম্বরের,
গীর্জার চূড়া বেয়ে নেমে আসা রোদের গল্প ... সেই দীর্ঘ হ্রদের পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া
আমার কাঠের গাড়ি, মেয়েটির দিকে শিশুদের দল, দ্যাখো, দস্তানা ভ’রে ছুঁড়ে দিচ্ছে
মুঠোমুঠো খনিশহরের এক শীতের সকাল ...
( গ্রিটিংস কার্ড – ৩ )
এমনই এক আশ্চর্য ভাষ্য, মগ্ন মনোলগ তার কবিতা, পরাবস্তবতা ছুঁয়ে থাকা উচ্চারণ । দীর্ঘ পঙ্‌ক্তি, দীর্ঘতর বাক্যবিন্যাস আর একেবারে তাজা,প্রাণবন্ত বাক্‌শস্যের মুখোমুখি আমরা। এই তো নব্বই, হ্যাঁ, নব্যই, নতুনতর ।
... এরপর দূরে ক্রমশ নিভে আসতে থাকা সেই পাথরের বাড়িঘর ছাড়া আর কিছুই নেই
ঘোরানো লোহার সিঁড়ই উঠে এসেছে ওপরে যেখানে দু’টি
খনিজ হাত ক্রমাগত পিছিয়ে যেতে থাকে এক অলৌকিক
অন্ধকার শীতের সন্ধ্যায় আবছা কাঁচের ওপর ভেসে ওঠে
শেষ নভেম্বরের বৃষ্টিতে আচ্ছন্ন হয়ে আসা মিশনারি স্কুলের
মাঠ আর দুয়েকবিন্দু কবেকার প্রাচীন লণ্ঠনের আলো ঘিরে
অবিকল ফাদার অ’ব্রায়েন-র গ্লায় কারাযেন বলএ ওঠে

“ এ’বছর প্রবালপোকাদের আক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমাদের মানচিত্রে সংযোজিত হলো
আরো ছ’টি নতুন দ্বীপ...”

এরপর ঝাপসা হয়ে আসা পার্কের বেঞ্চ সরুসরু লালচে বাদামী
পাতা পড়ার শব্দ ও তার পাশে মদ্যপ যুবকটিকে লক্ষ্য করে
মেয়েদের দল ... অথচ কেউ জানতে পারলো’না খুব ধীর উত্তাপে
বিকিরণ করতে থাকা সবুজ নক্ষত্রটি কখন নেমে পড়েছে শহরের
একপ্রন্তে আর তার আলোয় ক্রমশ দীর্ঘ হ’তে হ’তে একসময়
মিলিয়ে যাওয়া ভিনদেশী নাবিকটির পরিচয় ... যে তাকে শেখায়
খালিহাতে নিখুঁত বৃত্ত আঁকার কৌশল ...

যুবকটির মাথার ভেতর থেকে এখন বেরিয়ে আসছে একের পর এক অসংখ্য সাদা পৃষ্ঠা

আর সে লিখে চলেছে বাইশ বছর পর ফিরে আসা পুরাণ
খনিশহর জুড়ে শুধু করাতকলের শব্দ আর সদ্য গড়ে ওঠা
কফিনকারখানায় কর্মব্যস্ততা দু’একবিন্দু কবেকার প্রাচীন
লণ্ঠনের আলোয় ফুটে ওঠা মিশনারি স্কুলের মাঠ আচ্ছন্ন করা
শেষ নভেম্বরের বৃষ্টি এক শীতের সন্ধ্যায় অলৌকিক অন্ধকারে
পিছিয়ে যেতে থাকা দু’টি খনিজ হাত ওপরে উঠে আসা ঘোরানো
লোহার সিঁড়ি আর সেই পাথরের ঘড়িঘর নিভে আসতে থাকে
আরো দূরে ...

এরপর রেলিঙের ওপাশে তীব্র খাদ আর ভাসমান তরল মেঘে মেঘে আমার ছায়া ।
এ’ছাড়া আর সবকিছু আস্তে আস্তে ঢেকে যাচ্ছে আবছা কাঁচের তরল...
( গ্রিটিংস কার্ড – ৪ )
সেই একবার, আর দেখা হয়নি আমাদের । তবু  তার কথা ,এই কবিতাগুলির কথা মনে রয়ে গেছে। স্বপ্নদৃশ্যের বর্ণনা যেন, এক অন্য পৃথিবীর কথা বলে অথচ সাবলীল, মনে হয় প্রথম শুনছি অথচ খুব চেনা এমনই কবিতা তার।খালিহাতে নিখুঁত বৃত্ত আঁকার কৌশল – সে রপ্ত করেছে তখনই । 
আমার শহরে তবে মৃত্যু বলে আর কিছু নেই ? রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে
ত্রিকোণ আলোর টুকরো আর জানলার নিচ দিয়ে একে, একে হেঁটে গেল সেই
তিনশো পঁইষট্টিখানা উন্মাদ হাতঘড়ি ...
( গ্রিটিংস কার্ড – ৪ )
তার লেখাও যে আর খুব বেশি পড়েছি তা নয়, তবু মনে আছে তার কবিতাকে, তাকে।
পাঠক, সে কি আপনার চেনা? আমার সেই এক-দুপুরের বন্ধু ।
নাম ?
রণজিৎ দাশগুপ্ত ।
কেউ খোঁজ দিতে পারবেন তার?
এই গান অসম্ভব দ্রুততায় শেষ হয় ... যত দ্রুত গোপন আগুন
ঘিরে ফেলে ঘাসবন ও ঘুমন্ত তোমাদের মেধাহীন চোখ, বাসভূমি ।
বাগানের শেষপ্রান্তে, আলোকিত চতুষ্কোণ মাঠে, সারিবদ্ধ পালকেরা
উড়ে আসে । লক্ষ্য ক’রে, কাঠের কেবিন থেকে, জংশনশহরের এ
দিনলিপি লেখার দায়িত্ব থেকে, অব্যাহতি নিয়ে যেতে চাই ...
‘শেষ কবিতা’ এই লেখাটির শিরোনাম, এটিই আমার পড়া তার শেষ কবিতা। অব্যাহতি নিয়ে সে কোথায় যে চলে গেল? কোথায়, রণজিৎ ?
ও, হ্যাঁ, বিটলসের যে ট্র্যাকটির কথা বলছিলাম, ওই যে লেনন , sometimes I play the  fool, হ্যাঁ, তার নাম জানেন কী ? ‘বিটলস গ্রিটিংস’।

আমাদের বন্ধুত্বের জন্য, নব্বইয়ের জন্য এই গ্রিটিংস কার্ড নামিয়ে রাখলাম ।

(ছবিঃ তাসিয়া বিয়াচ্চিনি) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৫

white textures

হেমন্ত
           -জয়শীলা গুহ বাগচী

অর্থাৎ...
আমি যা হেমন্ত তুলি
তা একটি ফেলে যাওয়া আয়না মাত্র
সেই মুহূর্তের পরিপাকজাত আমি বোধ
এই নীল তবে তোমার নয়
অতীতের নয় ভবিষ্যতের নয়
একটা জানালার
যাকে ' আমি ' নাম দেওয়া গেল
জানালা এখন কড়ি মা
জানালা সম্ভাব্য প্রসারতা
জানালায় চেতনা পারাপার...
শুধু সময়ের তুলনা এলেই সে কাঁপে
নাভিশ্বাসের হিম তুলে
ছবি ভাঙে
ভাঙে
ভাঙে


(ছবিঃ মেঘা বালুনি)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৪

"We all know that secrets are sold on the streets" -from the poem, Silverdust

রং ওয়ান
          -তন্ময় ধর


একেকটা রং থেকে আমি তোমার আয়ুশব্দ তুলে আনি। অর্ধেক ভেসে থাকা স্বরভঙ্গের ভিতর তোমার খিদেয় তৈরি হয় বৃহত্তম শূন্যতা। আমি বিপরীত দৌড় শুরু করি তর্জমায়, সূর্যাস্তে, আঙুলে ও নেলপালিশে। পারদ এগিয়ে যায়

দৃশ্যবাতাস নেমে যায়, মাংসের রূপকথা নেমে যায়। যথেষ্ট চিনির দখলে জমতে থাকে দুধ ও বিড়ালের লাফ। লাফ থেকে একটু পারদ তোমার কাহিনি টেনে ফেলে। অন্য অংশে কেউ ধুয়ে ফেলে নিরামিষ প্লেট

প্লেট ভাঙার শব্দ থেকে আমি তোমাকে সরিয়ে আনি অন্য জলবায়ুতে। এত লাল স্পিনিং উইকেট কেউ আশাই করে নি। আউট অফ ফোকাস থেকে আউট কিম্বা রক্তাক্ত হয়ে ওঠে তোমার ব্যাটসম্যান। হালকা হেলমেটের নীচে তখনো প্রেমে হু-হু করে ঢুকছে অভিনয়।  



(ছবিঃ জাস্টিন বেনভেনিউ)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৩

April and May| April and May hearts                              var ultimaFecha = '19.4.13'


বসন্তের বাইরে
              -হাসান রোবায়েত 

সমস্ত পাহাড়-ব্যেপে বৃষ্টি আসছে
আর তুমি
হাসির মাতম থেকে কুড়িয়ে যাচ্ছ নদীতীর
তারাদের অন্ত্রনালী
কীভাবে প্রাচীন রোদের থেকে গাঢ় করে হেম
অশোকের নিঃশব্দ পাতায়
ঐ সম্মুখে
মরণের রুধির কাজল গাভীদের চোখ বেয়ে
নেমে যায় অভিপ্রায়ের দিকে


(ছবিঃ লরা বারম্যান)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১২

Douglas D. Prince  www.lab333.com  www.facebook.com/pages/LAB-STYLE/585086788169863  http://www.lab333style.com  https://instagram.com/lab_333  http://lablikes.tumblr.com  www.pinterest.com/labstyle


একা নহবত
                -সুমনা দত্ত


মেয়েটা একটু গম্ভীর।
স্কুলে পড়ায়।
খুব কম বয়সেই সংসারের হাল ধরেছে।

বন্ধুদের বিয়ে হয়।
চারিদিকে সানাই বাজে।
নহবত।

মেয়েটা ব্যাগ আঁকড়ে ধরে।
নিষ্প্রানভাবে স্কুল যায়।
ফিরেও দেখে না গোলাপ।
লাল টুকটকে কনে বউ।

মেয়েটার গলার স্বর কেউ শোনে না।
শুধু যখন রাত হয়, সব আলো নেভে,
চুপি চুপি তারা খসে বাড়ির ছাদে।

(ছবিঃ ডগলাস ডি প্রিন্স)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১১

Seetal Solanki   www.lab333.com  www.facebook.com/pages/LAB-STYLE/585086788169863  www.lab333style.com  lablikes.tumblr.com  www.pinterest.com/labstyle

লুডোর ছক
             -শিবু মণ্ডল 

সাপ লুডোর উষ্ণতায় সিঁড়িধাপ তৈরি হলে
পুট-পুট পায়ে চাঁদ এগিয়ে যায়
ঘর-মিল জুড়ে ছড়ানো রঙ
উল্টে গড়িয়ে পড়ে দানব করের মত

এই রঙে ছোপ-ছাপ ওই রঙে হুড়োহুড়ি
আলোকবর্ষ ব্যবধান রেখে নক্ষত্রের ভিড়
চৌরাস্তার মোড়ে যেন জ্বলে অনন্ত বাতি
এমন সময়ে ধাক্কা খেলে বাইসনবেগে ‘ময় ফিরে আসে

খেলা হয় জলবাতিতে খেলা হয় বর্ষাতি
নিমেষে দান পাল্টে বৃষ্টি ভারী হয়ে ওঠে
সাপের ছোবলে শান্ত পৃথিবী সিঁড়ি বেয়ে ওঠে
১ নং ২ নং ৩ নং ৪নং ৫ নং ৬ নম্বর ধাপে এসে
খেলা শেষ হয়। আবার খেলা শুরুও হয়...

(ছবিঃ শীতল সোলাঙ্কি)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১০

<p>Whether he’s accurately drawing or painting, Matt Andres is a partisan of abstract art. Feeling comfortable both with traditional and digital art, his works invite to meditation and different

সুইসাইড নোট 
                 -অনু সঞ্জনা ঘোষ



পুড়ে গেছে বালি। ঝরে ঝরে পড়েছে স্তূপ পর্বত। পড়তে পড়তে জমা ক্ষয় এখন আগুন। অরণ্য গভীর হলে বাঁধ ভেঙে ফেলে নদী। ভাঙা বাড়ী, ভাঙা ঘর। পোড়া কাঠে ভেসে যায় শুকনো উনোন। মা বালু গোছায়, বালুতে রাঁধে ভাত। হাসপাতাল হেঁটে চলে যায় বনের কাছে। তুমি জাঁকড়ে ধরো আমায়। স্মৃতি খুলে যায় গভীর ঘ্রাণে। ভাঙা বোতামে জড়িয়ে গেছি । চিৎকার করে বলতে চেয়েছি, হত্যাকারী তুমি। সুই সাইড নোট ভরে গেছে শান্ত বলয়ে। মৃত্যুর পর আবার বেঁচে উঠি আমি।

মা ভাত বেড়েছে বালিতে, একটাও কাকঁড় নেই পাতে....

(ছবিঃ ম্যাট অ্যান্ড্রেস) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৯

Daniel Lindh//   www.lab333.com  www.facebook.com/pages/LAB-STYLE/585086788169863  www.lab333style.com  www.instagram.com/lab_333  lablikes.tumblr.com  www.pinterest.com/labstyle

বিপরীত 
      - শুভঙ্কর পাল 

দেয়ালের মসৃণ বেগুনি রঙ
রং শব্দে বরং শীতের কোলাজ
ফুটপাতে আগুন ও জটলা
বিপরীত সমীকরণে ছেঁড়া কম্বলের ওম
হুইসেল দিয়ে ট্রেন স্টেশনের শেড ছেড়ে যায়
ওর গর্ভে শীত
হামাগুড়ি নেমে আসে পাহাড় দেখার লোভ
ততক্ষণে তিব্বতি লামারা নেমে এসেছে পাইন ভেঙে
বুদ্ধের রাগ নেই
তবুও সীমানায় আগুন জ্বালাচ্ছে কেউ

(ছবিঃ ড্যানিয়েল লিন্ড) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৮

Panos Tsagaris, A passing breath gold leaf, acrylic paint and silkscreen on canvas, 150x100 cm, 2016. Courtesy of the artist and Kalfayan Galleries, Athens-Thessaloniki.   www.lab333.com  www.facebook.com/pages/LAB-STYLE/585086788169863  http://www.lab333style.com  https://instagram.com/lab_333  http://lablikes.tumblr.com  www.pinterest.com/labstyle

বড়াইলবালক
           -রাজেশ শর্মা 


ওয় শাম কুছ অজীব থি, ইয়ে শাম ভী অজীব হে ----///কিশোর

শিল্পের চোখ সরিয়ে রেখেছি স্তোকবাক্যহীন,মুগ্ধতাহীন

যেন সমস্ত বল্কল ফেলে এসেছে জলপ্রপাতে
হরিণি এখন লাজরুণ, ধীর হয়েছে তার পা

নিয়নকুসুম! তোর ভ্রু র সামান্যে যে গভীরা জলপংক্তি

তার তরে
বড়াইল বালক সমস্ত সেচ-প্রকল্প ডিঙিয়ে
অঞ্জলিপুটে
সন্তপর্নে তুলে আনছে ডাহুকমরশুম

একটি আলায়িত ছবির ভিতর শরীর ক্রমশ

ছড়াতেছে....

(ছবিঃ প্যানোস সাগারিস)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৭

Painting by James Nares. He suspends himself over the canvas to create one continuous stroke with a large brush.  Interesting lines and movement!

শর্তসাপেক্ষে এঁটো হাত
                             -জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি


এমনকি সারারাত ডুবখেলায়।জলের ফোঁটার মতো।এমন এক গোপন তারাখসা রাতে।হয়তো বিঁধে থাকে মৃত্যুর আদেশ।ঘন।এলোমেলো।ঝুল বারান্দায়।জীবাশ্মের শুকনো কোষপর্দা বেয়ে।ঢেউহীন খুলির ভিতর।আপাত শান্তি


সুযোগ মতো অনেকটা অবশিষ্ট ইশারায়
পোয়াতির কাঙাল সোহাগ মিশিয়ে
মাংসের শূণ্যতা থেকে শর্তসাপেক্ষে এঁটো হাত

(ছবিঃ জেমস ন্যারেস)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৬

noriko ambe    www.lab333.com  www.lablikes.tumblr.com  www.facebook.com/pages/LABSTYLE-by-LAB/189452871067225  www.pinterest.com/labstyle

 চুম্বক টান 
            -অভিশ্রুতি রায়


যেভাবে জাদু      খেলা হয়ে ওঠে

বিকেলের ঝিমিঝিমি শারীরিক বেয়ে

সেইখানেই লিটমাস ভিজে যায়

লাল থেকে নীল

          অার নীলে নীলে কত বিষের গন্ধ

নিশ্বাস চূড়ান্ত হলে অরন্য ভেদী হব

কত আলেয়া সুখ, নিস্তব্ধ সূর্যাস্ত...

গলা জুড়ে জড়োয়া নেমে অাসবে

অার লেখা পড়বে ব্যক্তিগত চুম্বকটান

(ছবিঃ ন্যারিকো অ্যাম্বে)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৫

Matthew Stone  www.lab333.com  www.facebook.com/pages/LAB-STYLE/585086788169863  www.lab333style.com  lablikes.tumblr.com  www.pinterest.com/labstyle

মাহবুব, দীর্ঘনিঃশ্বাস পাঠিও
                          -জ্যোতির্ময় বিশ্বাস


১.
সাক্ষাৎ মাত্রই চ'লে যেতে যেতে।
যাতায়াতকালে। বৃক্ষপর্বে। ভিক্ষায়...

এইভাবে তোমার জন্মদিন মনে আছে। তোমারও।

২.

পালকে হিম লাগে। ছিন্ন লাগে। তবু পাখিকে ক্ষমা ক’রে দেয়। কিন্তু মন খুব মাংসল একটা ব্যাপার। তাই পালক বললে ভুল হবে।

বাকি সব ঠিক আছে।
বাকি সব ঠিক আছে।
নষ্ট, হিম, ছিন্ন― এই তুলনাগুলি।


৩.

তোমাকে চিঠি লিখবো
আর তোমাকে চিৎকার

লিখবার আগে, খসখস পাঠাচ্ছি।
পাঠানো যায়। এখন তো তেমন পালকি পাওয়া গেছে।


৪.

দুটো চোখের ভিতর কোনো একটা বেশি বাঁশিময়
দু’পায়ের একজন বেশি ঘুঙুর

আর সবাই সমুদ্র হতে রাজি থাকে।


৫.

অভিজ্ঞতার কথা লিখবো
বাড়িয়ে বলবোনা কিচ্ছু।
তুমি অবাক হয়ে যাবে।

মাহবুব, দীর্ঘনিঃশ্বাস পাঠিও।

(ছবিঃ ম্যাথিউ স্টোন) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৪

Image result for abstract texture


বসবাস
          -বেবী সাউ

এক.

তোমার ভেতর আর কোন হইচই নেই। তেমন কোন গানের নাব্যতা কী ছিল কখনও! দৃশ্যের মাঝখান দিয়ে টুপটাপ ঘোর ঝরছে। আর বিড়ালকে পোষা জন্তু ভেবে সারাটা জীবন শুধু মায়া চেয়ে গ্যাল দু'একটি মুহূর্ত। রান্নাঘরে ভাজা মাছ; মিসেস চৌধুরীর দেওয়া দুধের বাটিতে পোষা আরশোলা--- সাঁতার শিখছে। আর এসবের মাঝখান থেকে তুমি বের করে আনছ সবুজ পাঞ্জাবী। ন্যাপথালিনের গন্ধে জেগে উঠছে শতাব্দীর পোষ-মানা আত্মহত্যা। তুমি কী তাদের এবার আসনপিঁড়ি পেতে পাত খাওয়াবে!

দুই.

বৃষ্টির ভেতরে যেসব গাছেরা হেঁটে যাওয়ার পথ শিখে নিতে পেরেছে, তারাই নির্বাচিত রত্নাকর পুরস্কারে। সংবাদ পত্র উত্তাল। প্রেমিকারা সেজে উঠছে ঘন পাতায়। শেকড়হীন জঙ্গল থেকে, নদীর ধার থেকে, ব্যালকনির ছোট টব ভেঙে বেরিয়ে আসা রোদে-রা মুখে মুখে হারাচ্ছে। বৃষ্টি-ফোঁটাতে  নেমে পড়বে অসংখ্য প্রতিযোগী। অথচ, এই মৃত জল আমার ক্ষতি করতে পারে, ভেবে, কৌশলে তোমার হাত আস্ত একটা কংক্রিটের শহর বানিয়ে তুলছে। বোঝো!


(ছবিঃ ওয়র্ক দ্য অ্যাঙ্গল)




মৃগশিরার মাসের কবিতা ৩

Image result for abstract texture

জল জীবন
                -কৃপা বসু

গভীরে নেমে যাও, রয়েছে সুবিশাল দেয়াল...
তাতে ঝুলছে অজস্র রাজনৈতিক শ্লোগান
উত্তাপ ছুঁয়েছে পিচঢালা নাগরিক রাজপথ।

নির্ভার হতে শিখেছে দোয়েল, ফিঙে
চৌরাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালে কেবলই
ব্যস্ততার যোগবিয়োগ,গুন,ভাগের হিসেব হয়,
তারই পাশে মূকাভিনয়ের আদলে নগ্ন ভিখারি।

বিছানায় সাঁতরানো নির্ঘুম রাত,
টেবিলে দগ্ধ প্রেমের মানচিত্র,
ডায়রির পাতা ছুঁয়ে যায় প্রাক্তনী চুম্বন…

বিকেলের জানালায় জমছে পিষে যাওয়া কাঠ গোলাপ,কাটাকুটি ও অনাদেরর গল্প,
শীতবিহীন উল কাঁটার সংগ্রামে জড়িয়ে থাক ভাতঘুমের আয়োজন,
জল জীবনে এত দৃশ্য'র পুনরাবৃত্তি
দেখে ভরিয়ে ফেলছি অপ্রাপ্তির খেরোখাতা...
 মেনে নেওয়াটাই যখন আলটিমেটাম,
মানিয়ে নিয়েছি সবটুকু কষ্ট, অপমান…

(ছবিঃ এস্ত্রিয়াস, ডেভিয়ান আর্ট)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ২

Image result for abstract black painting


কন্সট্রাকশন ওভারলোডেড
      - সুতপা চক্রবর্তী 



আঁচলের সুগন্ধ জমে গিয়ে ক্ষীর হতে
পারে না বলেই এখানে ওখানে পারফিউম ছড়ায়
উড়ালপুল খেয়ে হজম করতে গেলে দম নয়, জলকর লাগে।
রাস্তায় ঠোকা লাগার আগে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে ওঠে যে লোকটা

তার ও একদিন শহর হবে!


(ছবিঃ শ্যারন কামিং )

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১

Related image

সংলাপ 
         -অনিন্দিতা ভৌমিক


দূর কোনো প্রতিবিম্বের ভেতর
হারিয়ে ফেলছি নিজেকে
পরিচিত অবয়ব সরিয়ে হেঁটে যেতে চাইছি
গভীরতম অস্তিত্বের দিকে
যেভাবে একটা তীর্থযাত্রা    একটা ভবিষ্যৎ
কারো পায়ের পাতা লেগে
ছিটকে গেছে অচেনা শহরে
তার পরিব্রাজক লিপির গায়ে শৈত্যের অনুভব
সেই কুয়োতলা অথবা তেরছা আলোয়
কখনও খুঁজে না- পাওয়া ছোট্ট কানের দুল

ইতিহাস তো জীবন্ত পদক্ষেপ আসলে
শিকার ও সূর্যাস্তের ঘুপচিগুলো থেকে
ছুটে যায় ঐক্যবদ্ধতার সূত্রে
প্রাচীন বিদ্রোহের ডগায় পাক খায় উষ্ণ আবহাওয়া
রোদের ফোকর থেকে অজস্র ভাঙা গল্পগাথা

(ছবিঃ ডেভিয়ান আর্ট)

Friday, 3 November 2017

আশ্চর্য্য ধারাবাহিকঃ হারিয়ে যাওয়া নব্বইঃ পর্ব ৪

Image result for light colour cubism painting

সে আলো, লাজুক নয়, সপ্রতিভ দ্যুতি 
                            -অনিন্দ্য রায়

 তখন আমার  শরীর ভালো নেই। সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে গেছি এক গুমোট সন্ধ্যায়। ওষুধ আর বাড়ির শাসনে আস্তে আস্তে রিকভার করছি। উঠতে গেলে মাথা ঘুরে যায়, বাড়ি থেকে বেরোনো মানা, সে এক অসহ্য জুলাই, ১৯৯৫ । সারাদিন বসে থাকি, একা, টুকটাক পড়ি, কনসেনট্রেট করতে পারি না, মাথা ভারী হয়ে আসে। সারাদিন এক অসহনীয় পাথর শরীরে নিয়ে বসে থাকি। বিকেলে ঝাপসা হয়ে এলে সে আসে। সে জয়, আমার আনন্দ। তারপর আমাদের গল্প, বাংলা কবিতা নিয়ে, পাশ্চাত্য সঙ্গীত নিয়ে। ওটুকুই আমার বেঁচে থাকা ওই দিনগুলিতে। জয় ওর ডাকনাম। শুভব্রত দত্তগুপ্ত। আমার  শহর ছেড়ে কলকাতা চলে যায় কিছুদিন পর, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ওর কাজের জায়গা ।এবং বিজ্ঞাপন। হ্যাঁ, কবিতা লেখে।
 ২০০০-এর বইমেলায় বেরোল ওর প্রথম কবিতার বই, লাজুক অন্ধকার।প্রকাশক প্রথম আলো, তরুণ চট্টোপাধ্যায়। দাম : পাঁচ টাকা। এক ফর্মার কাব্যপুস্তিকা ।
 উৎসর্গ : মা ও বাবাকে ।
নদীর গল্প বল... বারান্দায় মোড়া টেনে বসি
লাস্ট ট্রেন চলে গেছে শিবুদের পাঁচিল কাঁপিয়ে
পকেটে নারকেল ভাজা নিয়ে কাকদ্বীপে যেত যে কিশোর
আজকাল
সে রাসেল স্ট্রিটে পাথর ভাঙছে 
আমাদের পশমহীন জীবনে কেবল টায়ারের গন্ধ
শিরীষকাগজে এই অবিরাম মুখ ঘষা, হাড়ের নৃত্য দেখে
শিরদাঁড়া ভিজে যাওয়া মাঝরাত্তিরে
আমরা কি কোনোদিন মুখ তুলে চিল দেখবো না?
নদীর গল্প বল,
যে আমার অভিমানে জলছড়া দেয়। 
( সুজনেষু )
এমনই মায়াময় তার কবিতা। তার বই।প্রতিটি শব্দ পাঠককে আবিষ্ট করে ।  
আমাদের আলোচনায় প্রায়ই উঠে আসত ‘ট্রান্সক্রিয়েশন’ শব্দটি। নিজের চারপাশে দেখা দৃশ্যকে, ঘটনাবলীকে কবিতায়, ভাষায় আবার নতুন করে নির্মাণ করা। আর সে নির্মিতি কবির সম্পাদনায় হয়ে উঠবে এক নতুন দৃশ্য, নতুন ঘটনা, নতুন পৃথিবী – এই, ছিল আমাদের বোঝাপড়া তখন। 
শুধু শিল পড়ার শব্দ ।
জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকছে কড়িবরগাহীন রাত
ডুবে যাচ্ছি অন্ধকার হাত রাখছে কোমরের নীচে
সমস্ত জীবন একটা কফিনের মধ্যে শুয়ে আছি,
শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাচ্ছে লবণাক্ত মেঘ ।

পর্দা সরিয়ে আজ বাইরে তাকাও
সেই রাস্তা খুঁজে নিতে হবেই তোমাকে, যেখানে
রাতের সঙ্গে হোলি খেলছে চতুর্দশী চাঁদ । 
( পুর্বাচলকথা )
 কোথাও হোঁচট খায় না তার উচ্চারণ, সাবলীল। চিত্রকল্প থেকে চিত্রকল্পে অনায়াসে নিয়ে যেতে পারে আমাদের। তার চারপাশের বিনির্মাণ ও নবনির্মাণ এক সুর তৈরি করে, এক আলোছায়ায় প্যাটার্ন তৈরি করে চেতনায়।
তোষকের মধ্যে ঘন পূর্বজীবন 
সুষুম্নাপোকা জানু পেতে আলো ভিক্ষা করে ।
উঠে ডাঁড়ায় আসমানে

কড়িকাঠ ছুঁয়ে আছে সবুজ মিনার । দলবেঁধে
মেছুনীরা আসে
হৃৎপিণ্ড কাদা হয়, জন্মের প্রথম দিক অনেকটা
রুটির মতোন

চাঁদের চর্বি লেগে তৈলাক্ত মুখ । কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে 
অন্ধকার পায়ের আঙুলে ।
শালিখের পাশে দিঘি, হলুদ কুশূল-মেঘ
ভিনিগার ঢালে ঈষদুষ্ণ চুলে 
( তৃণজন্ম )
রিয়েলিটি ও কল্পনা মিলেমিশে যায় তার লেখায়, নীচু স্বরে বর্ণনার মায়ায় সে আমাদের অন্য এক রিয়েলিটির মুখোমুখি দাঁড় করায়। 
দু’সমুদ্র আর্তনাদ ড্রয়ারের নীচে
দুটো পেন পরস্পর মাথা বদল করে । আবছা কিনারে দাঁড়িয়ে জলের কেশরে হাত
দিয়েছি, কখনো প্রহরী রহস্য টের পেয়েছিল। পিরানহা ছেঁকে ধরে নিখিল
কবজি । বুঝি, এক বালিশের হুল অন্য কানে পালক হয়েছে ।

প্রথমে সবুজ ছিল টুপিবোনা উল্‌ । তাঁবু ছেড়ে উঠে আসছে আপৎকালীন চোখ ।
নৌকো চালনায় যুবা দক্ষ নয় বলে গিরগিটি গায়ে ডিম পাড়ে – নিদ্রালু ডিম;
আমিষ শুক্রগন্ধে সন্তপ্ত হরিণপৃথিবী ।
( ডিম )
কলকাতা গেলে আমাদের দেখা হয় মাঝেমধ্যে। 
আমার মা যখন অসুস্থ নিজের কাজ শেষ করে দেখা করতে আসত ঠাকুরপুকুরে। তারপর রাত্রি যখন সান্ত্বনাহীন, ফিরে যেত সল্টলেকে। 
আমার জীবনের দুই চূড়ান্ত অসময়ে সে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, হাত রেখেছে কাঁধে।  
একদিন ক্যুরিয়ার একটা খাম দিয়ে যায়, খুলে দেখি কার্ড, বিয়ের কার্ড, জয়ের ।
তাতে ‘ দুই হাতে দুই মশাল দিও/ শান্তিও চাই অশান্তিও’ এই অমোঘ বার্তা মুদ্রিত।
নিজের কাজের জগতে পরিচিতি বাড়তে থাকে তার। গানে ও বিজ্ঞাপনে সে তখন রীতিমতো নাম, জয় দত্তগুপ্ত। 
আরেকটি কবিতার বই বেরোয় । 
তারপর?
লেখে না আর? পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই না তো। 
কবিতা থেকে সরিয়ে নেয় নিজেকে। 
নব্বইয়ের এ এক প্রবণতা, লেখালেখি থেকে সহসা নিজেকে সরিয়ে নেওয়া। অন্য কোনো মাধ্যমে ব্যস্ত হয়ে পড়া। 
জয়ের স্নগে ফোনে কথা হয়, কবিতার কথা উঠলে বলে, “ শুরু করেছি আবার”। 
হ্যাঁ, আমার বন্ধু আবার কবিতায়, স্বচ্ছন্দে, ঝকঝকে, আদ্যন্ত স্মার্ট শুভব্রত।
বলছি তো, একটুও লাজুক নয়, একটুও অন্ধকার নয়, আলোর আদর লেগে থাকে তার হাসিতে, তার কবিতায়। 

(ছবিঃ জর্জেস ব্র্যাক) 

Thursday, 2 November 2017

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৮

Image result for abstract painting mongolia

অস্তিত্ব
         -অনিন্দিতা ভৌমিক

ঘুরে তাকানোর মতো কিছুই ফেলে যাচ্ছি না আমরা। শুধু বন্ধ আর খোলার মাঝে এই যে কণার স্রোত, সেটুকুই অবিচল পড়ে থাকে। পর্দার আড়ালে চরিত্রের গায়ে থাকে পুনঃপ্রকাশের দৃশ্য। অনেকটা গতিময়।জ্যান্ত।যেভাবে একাত্মবোধের আগে কখনো নিভে যেতে চাইতাম।শীতের ভেতর আঙুল রেখে দেখতাম কতটা রোমকূপ জেগে ওঠে। আলোর ভেতর কতটা পাক খায় এক একটা বিশেষ অনুভূতি।

তবে কি মৃত্যুর কথা বলছি? টকটকে লাল অবসাদের দিকে পা তুলে ভাবছি অন্যভাবে যোগাযোগের কথা। তোমার ঝুঁকে আসা মুখ অথবা ঋতুস্রাবের যন্ত্রণার কথা। 

আর একবারের জন্যে অন্তত দেখা হতে পারতো আমাদের।স্বাভাবিকতায় নিবিষ্ট হতে পারতো কিছু ব্যাখ্যাতীত অংশ।তীব্র আবেদনময়। ঘুরে তাকানোর মতোই দীর্ঘ।

(ছবিঃ ওয়াসিলী ক্যান্ডিনস্কি) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৭

Image result for abstract painting india

লোনলিনেস
         -হাসান রোবায়েত 

বিষন্নতার ভেতর
একটি বাগান কীভাবে উদ্যাপন করে ফল!
এইসব বেঁচে থাকা ভালগার
অন্তিম লুপের সাথে দেখা হয় ভাষাটির
ঘুরে ঘুরে
অবিমিশ্র হাইফেন ফিরে আসে—

গমক্ষেতের পাশে গোলক-সূর্যোদয়
দূরপাল্লার এক সুইসাইডে
রঙ লাগছে
আর মালগাড়িটায় ভিজে যাচ্ছে
আমার লোনলিনেস—

ভাষা—অহেতুক অর্থের দিকে যেতে চায়!

(ছবিঃ মণীষা বেদপাঠক) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৬

Related image

প্রতিসরণ
             -তন্ময় ধর 

 আলোকে না জানিয়ে খানিকটা খাবার আমি তুলে রেখে দিই। টাইমলাইনে কেউ এসে লিখে রেখে যায় ‘আমি শিশুর মতো থাকতে চাই’। সত্যিই তার গর্ভাশয়ে জটিলতা বাড়ছে। স্বপ্নের বাঁদিকে অন্যরকম হাঁটা শিখছি আমি
জলের শব্দে, বুদবুদে, বাস্তবতায় আবার পড়ছে আলো। মাংসের টুকরোগুলোয় মশলা মাখাতে মাখাতে তুমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছো। হেমন্তের নতুন ভাতের ফেনা ঢুকে পড়ছে তোমার নষ্ট সংসারের ডি মেজরে
আজীবন যুদ্ধের পর তোমার অপেক্ষায় আলোর পিছু নিয়েছি আমি। আকাশের পুরুষচিহ্ন চোখের যন্ত্রণায় ডবল...ট্রিপল... বেনিয়াসহকলা। আমার সহনসীমায়ও বেনিয়ম ঢুকে যাচ্ছে। আমার হাতে-নখে-চামড়ায়-মুখগহ্বরে ক্রমাগত সুর বদলে দিচ্ছে আলো 

(ছবিঃ ড্যান ওয়েলিংটন)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৫

Related image

প্রতিক্রিয়া
           -অভিশ্রুতি রায়

তবুও বিকেল
বৃষ্টি নামার তাগিদ দিয়ে যেত
কত হাত ফসকানো মাছের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ হতে পারতাম
স্ট্রিট লাইটের নিজস্বতা
আর নিজের খনিজসম্পদ
কতটা রঙিন...
একটা চারাগাছ চেয়েছিলাম ঘুমের কাছে
অথচ স্তব্ধ আমায় পৃথিবী কিনে দিল

(ছবিঃ সের্গ উইয়াডার্নি) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৪

Image result for wildfire abstract painting

লাহা ডুংরি
              -শৌভিক দে সরকার


একটি পা লিখলাম
পা-এর সমাহিত অর্থ লিখলাম
পা-এর জড়ো করা অধৈর্য, ছদ্ম পলাশ লিখলাম

মেঘের তির্যক লিখলাম
বসন্ত বিহীন মাটির সংঘাত লিখলাম
প্রতিস্থাপনের পর কীভাবে অতিক্রমণের
রাস্তাটি পাল্টে ফেলে চোখ
কীভাবে খুঁটে দ্যাখে অশ্রুসজল
মেঘগুলির নিচে উড়ে যাওয়া নশ্বর কাক

মেঘের বর্ণ লিখলাম
ফেরতযোগ্য একটি দিন
নখের আলস্যে গেঁথে যাওয়া ম্যাজিক ভ্যান

আগামী বছর আরও নিচে
নেমে আসবে মেঘ
পাহাড়ের গোড়ালির কাছে
আখের ক্ষেত আর নিয়ন্ত্রিত সেচখালের ভূমিকায়

(ছবিঃ ডেবরা হুর্ড)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৩

Image result for wildfire abstract painting

সমুদ্র
       -স্বাগতা সিংহ রায়

১।
উন্মাদ যার আছড়ানো
ফাঁদ পেতে ফ্যানা ধরা
দিলাম ঢেউ তার নামে-
পথ জুড়ে কত ভ্রমণ।

২।
জলজ দেহে এত কম্পন
ফাটল বুজিয়ে পরিবর্তন
তিমির টানে ট্রলার ডোবে
মৎসকন্যার মৃতদেহ ভরাট


৩।
বালু আঁচড়ে এত অস্থির
নোনা বাতাসে জীবিত স্বপ্ন
কিনারে এসে স্তব্ধ হয়
ঢিউ -এ যার লাশ হারিয়েছিল

৪।
হৃদ থেকে কয়েকটা ঢেউ
যে যাও,ফিরে এসো
যেমন করে জোয়ার ভাঁটা-
দুকলমে সমুদ্র বুনে ফিরে আসে।

(ছবিঃ উইলিয়াম অলিভার)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১২

Related image

অনৃতভাষণ
             -অনিন্দিতা গুপ্ত রায়

সকালের রঙবদল টের পেতে পেতে
একদিন কিভাবে যেন ফুরিয়ে আসবে তুমি
ফাটলের কোনো শব্দ নেই অথচ
গূঢ় মৃদু প্রতিশোধ আছে পাপবোধ আছে
শিকড়ের অন্যমনস্ক চলাচল
আচমকা উপড়ে ফেলায় সংকেতহীন
এই যে জ্যামিতি এই যে পুতুলের ভিড়
লোফালুফি খেলতে খেলতে আকাশের দিকে
উড়িয়ে দিলে হাওয়াভর্তি সমস্ত সঙ্গীত
তুমি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারবে না আর

(ছবিঃ লিন্ডা রিয়ান)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১১

Related image

মেরুদণ্ড ও যাবতীয় সকাল
                    -অ নু স ঞ্জ না ঘো ষ

আমার শহর পেরিয়ে তোমার বাইপাস। ভাঙা রোদ্দুর, কাঁচা গাছ আর অর্ধবৃত্তীয় আবর্তন। নিয়মিত পার করছো উঠোন, উঠোনের যাবতীয় রং। প্রজাপতি জানে গতিবেগ যাই হোক না কেনো, দূরত্ব  কয়েকটা সংখ্যা মাত্র।

ক্ষয়ে যাওয়া মেরুদণ্ড এখন ঈশ্বর মুখীন। হেলে থাকে স্রোত, স্রোতের উপাচার। মন্ত্রমুগ্ধ ফানুস। তুমি দীপাবলি ওড়াও শোক পালনে। বারুদের গন্ধে ভিজে থাকা আঙুল জ্বলে ওঠে পুরোনো শহরের কাছে এলে। গোছানো রাস্তা, বাইপাসে সাজানো জোনাকি এলোমেলো করে দেয় সমস্ত ভুল। দূর হতে থাকে নক্ষত্রের আলো। তুমি হয়ে ওঠো অমাবস্যা, গ্রহণ, আরও আরও আরও অনেক বেশী কালো.....

(ছবিঃ জ্যাক ভ্যানজেট)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১০

Related image

পোষ্ট মেনোপজ
           -সুতপা চক্রবর্তী 

 আপোষ এর বাসন ঝন ঝন করে
মেজাজ খামচি দেয়
ঋতুবদল হতে গিয়ে  ঋতুস্রাব হয়
পুরুষ তোমার ও
কষ্ট হয় খুউউব....
ঘুটঘুটে আধাঁরে আলো ফোটাতে হাত পা ছড়ে
ইনসমেনিয়াক পাখি রাতজাগা শেখায়


                                    র

প্রতিটা জন্ম ব্যর্থ হলে

গৃহী পাখিরা অন্য কোন ঘরে

সাজায় ঋতুকাল

(ছবিঃ কিম ওয়েস্ট) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ৯

Image result for light abstract painting

অণুবীক্ষণে লেখা চিঠিগুলি (শেষাংশ) 
         - নীলাদ্রি বাগচী

চ. ধরো
ঘুম ভেঙে উঠে দেখলে
দূরের বাতাস তোমার পর্দা ছুঁয়ে, চোখ ছুঁয়ে, ঘুম ছুঁয়ে তোমাকে
বাংলা বানান নিয়ে ভাবতে বলে গেল....
কি করবে?
আবার বাজার যাবে নাকি
তুড়ি মেরে বাতাসকে উড়িয়ে বলবে,
যা এখন
ফাগুনে আসিস

এখন ঘুমোবো আমি সারাটা শরৎকাল ধরে....

ছ.
কে তুমি বেগুনী ঠিক ফুলের মতো ষষ্ঠী ভোর গুছিয়ে চলেছ? মাঝেমধ্যে মনে হয় জাদু শব্দের উৎসে এরকমই বেগুনী আগুন ছোঁয়া ছিল। আর তাই, ধ্বনির বিরুদ্ধে গিয়ে সারাদিন লড়ে যাচ্ছ একবগ্গা বিচারালয়ের পর বিচারালয় ছুটে ছুটে।
প্রশ্ন হল কি পাবে শেষাবধি? অর্থ, যৌনসুখ, নাকি শুধু  প্রতিবাদ তাই তুমি এই ভোর বেগুনী করেছ? কি পাবে ভেবে দেখো। এবং জানিও তাকে, যে আসছে সকালের প্রথম রৌদ্রে, যার মুখ জনসমাবেশ থেকে তুমি গড়ে দিয়েছিলে। তুমি ভাব বলেই সে আছে।
নইলে ম্যাজিক তাকে এতদূর নিয়ে গেছে যেখানে রাস্তা নেই, পাকদণ্ডী নেই কোনো, আয়ু নেই, পানীয় জলেরও কোনো সংস্থান সেখানে থাকে না....
অণুক্ষণের চিন্তা বোধকে আচ্ছন্ন করে, হয়তো বা আবেশে জড়িয়ে দেয়.... এর অধিক কিছু নেই, কিছু হতে পারেও না, ষষ্ঠী সকাল শুধু হিন্দি গানে বেলায় চড়াও হতে থাকে....

জ.
অকারণে শব্দ আসে, অকারণে শব্দ চলে যায়। দুদিন লিখি নি মানে দুটোদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে গেছি আর আজ আচমকা ঘুম ভেঙে শুনি অকারণে শব্দ যাচ্ছে, শুধু তার নূপুর নিক্কণ রেখে যাচ্ছে বারান্দায়, ঝরা পাতাদের চারপাশে।
দাবী এই, ঘুম হোক। ঝরে যাক অকারণ পাতা। উন্মাদ সুস্থ হোক। জাগো নদী, জাগো বৃষ্টিস্নাত নাচের মুদ্রা। আমাকে বিদেশ দাও। আমি এই পদবীকে আকাশে বদল করে পুনর্বার ফিরে আসব। সে আসবে, অবশ্যই। শুধু সেই মানুষের পকেটে দাবীর বদলে স্নেহ থাকবে, স্বপ্ন থাকবে....
ভালোবাসা শব্দের জন্য এভাবেই বেছে নেব মৃত্যু আর তোমাকে সম্পূর্ণ করবে আমাকে যে ছেড়ে গেছে সেই শব্দ, শব্দভাণ্ডার....
ঝ.
রূপবান শব্দটির বিপরীতে বসে থাকা উন্মাদ ভয় বাধ্য করে ভোরে উঠতে। লোকক্ষয়কারী কাল দিক নির্দেশ করে। যা পূর্ব, যা নির্দিষ্ট, চূড়াবদ্ধ কেশে সে চুপচাপ পাশে এসে বসে। ধীরে ধীরে আলো বাড়ে। দিনের প্রকৃতি স্থির হয়। কৃষ্ণবর্ণ পুরুষের রক্তচক্ষু শান্ত তাকায়।
ঠিক এর বিপরীতে কোনোখানে গভীর গভীর ঘুমে তুমি আলোপথে পা ফেল, পা বাড়াও। আর তো কয়েকটা দিন তারপরই দীপাবলি। সম্ভবত স্বপ্নে তুমি ততদূর আরামে পৌঁছাও। নমস্কার বিনিময়, হাসি ভাগ করে, উল্লাসে পার কর কদিনের স্বদেশ জীবন...
সাবধানে ফিরো আর আরও সাবধানে আগামী জীবনটুকু যত্নে সাজিয়ে তোলো। রঙ আসছে জীবনে; ভালোবাসা, বুঝতে পারছ দূরের পাহাড়ি নদী ক্রমশঃ নিকট হচ্ছে তোমাকে ভিজিয়ে দেবে বলে। সেজে ওঠ সেইভাবে, সাদাকালো অথবা রঙীনে, চরম বৈভবে...
সকাল গড়িয়ে যাক, রক্তচক্ষু স্থির হোক আরও। অনিবার্য বুঝে নিতে আমিও পথেই যাব, প্রান্তরে, অন্তিমে... হারিয়ে যাবার আগে মানুষ যেভাবে হাসে সেরকম সাধারণ হাসি হেসে...

ঞ.
যুগলের ছবি দেখি, কেটে যায় অনেকটা সময়। স্মৃতির মাদুরে এই সব ছাপ আজ বহুদিন ধরে পড়ে আছে। কালো পোশাকের কবিরাজ যেন- এরা আসে সেইভাবে , প্রয়োজনে এরা চলে যায়। নষ্ট করে অনেকটা সময়।
সময়ের দাম নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভেবে যাচ্ছি। দাঁড়িপাল্লা প্রথা নিয়ে। শেষ অবধি নিয়ে এসে হাত ছেড়ে চলে যাওয়া বাতাসের সাথে খাদের কিনারে আমি ধীরে ধীরে মজা পাচ্ছি।
বলতে পারছি, পূর্ণ হও, বদলে যাক ধরণ গঠন, নিজেকে আবার পড়তে কতখানি মজা সেটা ধীরে শোণিতে মেশাও।
ব্যস্ততা কিছু নেই। কারণ যেকোনো বাস সেখানেই নিয়ে যাবে যেখানে পোশাক সহ বৈদ্যুতিক চুল্লি অনায়াস নিয়ে নেয় ... নষ্ট হতে দেয় না কিছুই...

(ছবিঃউটে লাউম)

দেবদীপাবলীর কবিতা ৮

Image result for light abstract painting

এলোমেলো কয়েকটি লেখা
             -সত্যম ভট্টাচার্য

এক

অনেকটা পথ বেয়ে আজ উঠে আসা ছিল।তারপর ঢুকে পড়া এই অনন্ত চুপচাপের ভেতর।কথা বলছে বৃষ্টি।কথা বলছে বৃষ্টির পর পাতা খসার জল।যেন হাত বাড়ালে ছুয়ে দিতে পারে ঐ পাহাড়ের ঝর্ণাকে।এখানে কোন আবহের দরকার হবে না।এতো,এতো সহজ এই ঢুকে পড়া।সহজ...গড়ানো সময়।

দুই

এভাবেই চোখের সামনে উঠে যাচ্ছে একটা পর্দা।তুমি দেখছ ব্যস্ত মানুষজন কিভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিমুলবাড়ির হাটে।রক্সি,পুরো রক্সিময় রবিবারটা সোজা উলটে আছে।আর ঠিক তখনই আলো,লো ওয়েস্ট জিন্‌স্‌।একবার ছুয়ে দিয়েই সরে সরে যাওয়া কতকিছুর।শুধু লেগে থাকা ডেনিম...কাজলে।

তিন

দূরে ক্রমে বড় হয়ে উঠছে ছেলেবেলারা।কুয়াশার ভেতর পাশ ফেরা ট্রেনলাইন।লাইন বরাবর চলে যাওয়া।আজ সারাদিন বা পাশে কাঞ্চন।সারাদিন অকারণ।কত নুড়ি কুড়োনো সকাল কাটছে এভাবেই।আর সকালের চিঠিরা বন্ধ,কেমন হঠাতই চলে গেল লেটারবক্সে।প্রতিদিনের বাসের জানালা থেকে তুমি ছুড়ে ফেলতে চাইছো আক্টা একঘেঁইয়ে টিকিট।তোমার মনখারাপ।

(ছবিঃ মিশেল আর্মাস)

দেবদীপাবলীর কবিতা ৭

Image result for light abstract painting

নির্বাসন
    -টিপ্ লু বসু


জানি উত্তর পাবোনা
জানি কোনো প্রশ্নও করবেনা তুমি
ছায়াপথে দুধসাদা কুয়াশারা গাঢ়তর
নক্ষত্র হারিয়ে যায় নিজস্ব ব্ল্যাকহোলে;
ভালোবাসা মানে যদি জানো প্রশ্নহীন আনুগত্য
বিতর্করহিত অনুমোদন বা
বন্ধুহীন একক স্বজন -----
জলের গভীরে মালভূমি জেগে ওঠে
মাথা তোলে অচেনা পাহাড় !
ঘটে যেতে পারে জলবিভাজন।
গন্ডোয়ানা ও লাওরেশিয়ার মিলনে
যেভাবে তৈরি হয়েছে ভারতবর্ষ
সব ভুল ভেঙে দিয়ে গড়ে দাও অমল উপদ্বীপ
ভালোবাসা নামে
অথবা দ্বীপান্তরে নিয়ে যাও
দাও স্বজনহীন নির্বাসন !
উত্তর দিওনা   নিরর্থক প্রশ্ন কোরোনা
শুধু জেনো , নির্বাসন মানে এক প্রয়োজনহীন নির্লিপ্তি
নয়নাভিরাম প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে ফেলা জীবন
কালো জলের অতল আহ্বান

(ছবিঃএরিন ওয়ার্ড) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ৬

Image result for light abstract painting

পরনের শূন্যথান
    -অনন্যা ব্যানার্জী

অপেক্ষা করে আছি কখন আঁধারের গায়ে ছড় লাগবে বেহালাবাদক,বেদনার ধুন চিরে লাগবে আখের শ্বাস সজল।
আহত প্রতিবর্তে শিশির ধুয়ে ফেলবে রাতের কপাল, ছড়ে ছড়ে লাল হয়ে আসবে আঁচড়দাগ…যে কপাল করে এসেছি ভাবলে আমার সীমন্ত নাম পাবে সকালবতী….যার চোখের ডানা ছুঁয়ে উড়ান ফেলে যাবে সহস্র মরাল,একটি পক্ষীরাজ।

দুহাতের ভালে তার আশাবতী জন্ম নেবে আড়াইটি কোকনদ…অর্ধেক,ইজারা আমার।
মেঝেতে আমার মানুষ ঘষলে আশ্চর্য জ্বলে মণিবন্ধে,
যে শব্দের গ্রহণে নিভে আসে অঙ্গারের শাবক,তাকে খাক..খাক গিলে নিক সরলগরল,গ্রীবাটি প্রভাবতী।

এমত বিহ্বলে ঝালে শিস দিলেও গালিবের দৌত্য বেজে ওঠে…বিব্রত আমি মরা নাইটিঙ্গেল রাখি,অযুত অযুত,অস্তনাভ দানে।

(ছবিঃ ক্যারেন সালুপ)

দেবদীপাবলীর কবিতা ৫


Image result for abstract painting china

সোহাগির _সংসার
       -জয়া গুহ(তিস্তা)

শুকিয়ে আসা ঠোঁট জিভ বোলাতে বোলাতে অস্ফুট উচ্চারণে জানাল''জল''
টিনের চালে হেমন্তের হিম জাঁকিয়ে বসে এসময়ে
হ্যারিকেনের নিভু আলো,
জলের ফোঁটায় চিড় খাওয়া কাঁচের দাগ সুস্পষ্ট
ঠিক যেমন সোহাগির পাতা সংসার
বাপ মায়ের দেওয়া দু-গাছা চুড়ি আর পিতলের কলসির সাথে বেপাত্তা 'সে'
তিনমাস পেরিয়ে চার মাসে পা
ভেবেছিল কলকাতায় রুটিরুজির খোঁজে
'সাথে শাঁখাপলা পরা ফরসা মত মেয়েমানুষ,
শ্যামবাজারের গলিতে'
নেপালের বউ পরশু গল্প করছিল ঘাটে
কাছে যেতেই ফিসফাস!  তামাসা!বিদ্রূপ কিছু

গত বর্ষায় জলপটি! একটানা তিনরাত জাগা
পিলসুজ বাঁধা রেখে হরলিক্স,ওষুধের শিশি
''এ জীবন আর আগামী একশ জন্মের মালিকানা তোর, বউ''

অসময়ের বর্ষা!টিনের চালের ফুটো চুইয়ে সোহাগির মুখে
টুপটাপ!টুপটাপ
"আহা!সাক্ষাৎ মা লক্ষী গো,নয়ত বাগদী বেটি হয়ে শাঁখা সিদুর পরে লক্ষীবারে গত হল?"

(ছবিঃ চেন পিং ) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ৪

Related image

বাতাস জানান দিচ্ছে
             -কস্তুরী সেন

কী যেন লেখার মত মনে পড়ছে,
হাতে লিখে গত জন্মদিনে ;
দিন কিংবা জন্মই, ভেসে আসছে রাজগীরে যেতে
অস্থির মাঘের জ্যোৎস্না, ভেসে যাচ্ছে রাজগীরে রাত...

এবারও কাছেই ছুটি,
বাতাস জানান দিচ্ছে, খুঁজে মরছে চটিবই,
 নাম লেখা কবে এককোণে --
'পড়েছি' 'পড়ব' ব'লে জানাচ্ছিই,
হে মার্জনা স্মরণম্...ত্বমহি স্মরণম্...

সেবারেই খাঁ খাঁ রাতে, তিনকাল ভোলানো জ্যোচ্ছনায়,
বুকের নিবিড় ওমে জমে উঠল বিন্দু বিন্দু মধু,
বাঁশিতে পান্নালাল, কে যেন কাছেই, খুব কাছে এসে শুধোবেও ঠিক ছিল -
'হি ইজ দ্য লাকি ওয়ান?' ব'লে!

স্বপ্নে এত ভাগ্য আসে! জ্যোৎস্নায় জড়িয়ে নিচ্ছি থইহীন শাড়ি
এবার জানান দিচ্ছে স্বপ্নে পাওয়া দরদালান, বুকে সেই চন্দ্রমুখ ক্ষত
প'ড়ে নেব হস্তাক্ষর, চটিবই সূত্রে এসো,
বঁধু মোর, কীসে অসম্মত?!..

(ছবিঃ সামান্থা কেলি স্মিথ)

দেবদীপাবলীর কবিতা ৩

Image result for light abstract painting

 আহত আকাঙ্ক্ষায় 
  -বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় 

ভাঙা আয়নার পাশে চলতে চলতে
সে দেখল ছায়া ছায়া মেঘ
আকৃতি বদল হচ্ছে
এই যে হাতের কাছে যা দেখছে
পড়ছে  শব্দ শব্দ অক্ষরপ্রতিমা
বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন
হাতে হাতে
আঘাতে আঘাতে

আবার তুলে আনছে ঝুলে থাকা প্রত্যয়ী ইশারা ।

আহত আকাঙ্ক্ষা তবু নড়ে ওঠে
ভাঙাচোরা ছায়াটির পাশে ।

(ছবিঃ ন্যান্সি একল)

দেবদীপাবলীর কবিতা ২

Image result for light abstract painting


কার্তিক জোনাকি
            -শিবু মণ্ডল 

কোনো এক গৃহকর্তার বাড়িতে শরতের পর শরত রান্না হচ্ছে
বছরের পর বছর আমরা টিপে টিপে দেখছি তার ফুটন্ত ভাত
হাঁড়ির ধোঁয়া ওঠা ষড়যন্ত্রের গন্ধে পাখিরা উড়ে যায়
হেমন্তের দিকে। বুকখোলা রাত আয়োজনের অন্ধকারে থাকে কেউ কেউ
হাতের মুঠোয় এক-দুই-তিন-চার-পাঁচকড়ি নিয়ে !

রাত মেপে মেপে উড়ে যায় কার্তিক-জোনাকি শীতের দিকে
যেতে যেতে বলে যায় সামলে রেখো তুমি আকাশটিরে
কুয়াশায় কুঞ্চিত ভোরের মত ভারী হয়ে আসে মন
শরীর শুধু সামলে নেয় লম্বিত রাতের শরীরে ভেসে...

(ছবিঃ সারা শেরউড)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১

Image result for light abstract painting

শিরোনামহীন
            -রঙ্গন রায়

জয়েন্টে টান দেওয়ার প্রতি এই যে আমাদের ভালোবাসা , অথচ প্রতিদিন মানুষ এড়িয়ে হাঁটি। এইজন্যই রাস্তার ওপারে চলে গেছি , আনন্দ ও সংশয় জমতে শুরু করেছে মনে।

'একটা মেয়ে পোষা যে কত ঝক্কির'
হ্যাঁ , ঠিক এরকমই কথাটা বলেছিল সে , এরকমই ভাষা। আমি দুদিন চুপ করে গেছিলাম। বাড়ির বেড়ালকে খেতে দিইনি। পোষাক খুলে ফেলেছি নগ্নতার গোপনে - তোমায় টেক্সট করিনি - ফোন করিনি , নেশার আভাস টুকু গলায় ছড়িয়ে ছিল শুধু ...   বন্ধুকে মিনতি করি , এ ভাষার বুকে চাবুক বসানোর। তীব্র ভাবে এ আমার প্রার্থনা ...  যারা নিজেকেই পোষ মানাতে পারিনি
হা প্রেয়সী ,                                                                                                                                                         তুমি দেবীর মত এদের পোষাক পড়া শিখিয়েছো                                                                                                অথচ পোষাকের ধারণা সহজলভ্য করনি

(ছবিঃ ন্যান্সি মার্কলে)

Tuesday, 10 October 2017

আকাশপ্রদীপের কবিতা ২০

Related image

পর্ণমোচী
            -অনিন্দিতা গুপ্ত রায় 

উদ্দেশ্য বা বিধেয় কোনোকিছুই
বিবেচ্য ছিলোনা সামান্য পথের তফাতে
পৌঁছনোর কথাও ছিলোনা
অনভ্যাসের চিহ্ন ক্রমশঃ সারিয়ে তুলছে
এই মরশুমী অসুখ প্রতিটি জুলাই থেকে
তুলে রাখার ছিল যেসমস্ত একটা জীবনে
কিরকম অগোছালো হয়ে আছে আসক্তিহীন
তাই পাঁজর অবধি গেছে তীর, তার নীচে
পর্ণমোচীর একা পাতা খসবার যত উদাস লিখিত

(ছবিঃ হ্যারি মুডি) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৯

Image result for abstract purple painting

আমাদের ধুলোবালি সংসার
                                  -জয়া গুহ(তিস্তা)

ঘুমিয়ে পড়লে, সে এসে দাঁড়ায় শিয়রে
উঠোন ঝাঁপিয়ে লাউমাচা, জানলায় উঁকি
টুসু ঘুমন্ত মুখে, বুকে মুখ গুঁজে
নাফিজ অজান্তে হাত রাখে সুরক্ষিত স্তনে! মা যে
কতকাল বুকে নিয়ে আছি,এইভাবে
টিনের চাল, ফুটো বেয়ে জল পড়ে দু-চার ফোঁটা
ঈদের চাঁদ আসা লুটোপুটি বিছানা এখন সপসপে
মাথায় ঠান্ডা হাত রাখি
কখনো শরীরের ওমে, কাঁথা বালিশের ভাঁজে জড়িয়ে নিই অপত্যস্নেহ
দুটো কচিমুখ,ঠিক মত ভাত পায়নি কাল থেকে
টানা জ্বরে কাঁপা ঠোঁটে খুব জোর সাবুদানা গরমগরম
আজ ও আসেনি কাঁটাতার পেরিয়ে কোনো খবর
বর্ডারের ওপারে লোক আনানেওয়া, চোরা পথে
নগদে টাকা মেলে, কিছু উপরিও
কানাঘুষো, ফিসফাস খেয়া ঘাটে
কারা যেন নিরুদ্দেশ, চুপচাপ
খবর আটকেছে বড় মানুষের দল
তারা নাকি  ছিল না কোনোখানে,
কোনো গ্রামে, তাই  কেউ হয়নি নিখোঁজ
টুসু,নাফিজের বাপ!
সেও নাকি ছিল না আদৌ
সেই আসে রোজ রাতে চাঁদ হয়ে,জল হয়ে দুচোখে গড়ায়...

(ছবিঃ ক্রিস্টিনা রোলো) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৮

Image result for abstract red painting

গান
     -কস্তুরী সেন

১/
জড়িয়ে ধরা রাত্রিভাষা, বাতাসে তানপুরা
তখন স্নান করার মতই ভোরের শরীর জাগে...
কে কাকে ভেদ করলে এলো অন্তরাতে আলো
বিজলি ঝলক দিলীপকুমার, মন্ মোহন আগে!

২/
বসে যাও আরও, খেয়ে যাও না গো রাতে!
নিতান্ত ক'রে বলা অসাধ্য, সারা সন্ধেটি ভিড়
মলয় আসিয়া কানে কহে গেছে প্রিয় কণ্ঠের নাম ;
আমরা দরদি, মহড়ায় সবে প্রেমে পড়া মেয়েটির...

৩/
এই পথে বৃষ্টি ছাড়া আর কিছু নেই
এই পথে বাড়ি ফিরছে একা ছাতা, আধাআধি লোক
অগাস্ট ছাতার নিচে এপ্রিলের সন্ধেবেলা, কেউ না দেখুক
শোন সখি বলি তোরে, আজ বলি তোরে
এপ্রিলের সন্ধ্যাটির বাকি অর্ধ এইমাত্র এসে নামল
রবীন্দ্র সরোবরে --

৪/
ওরা কিন্তু বন্ধুই দারুণ,
আর ওরা নজরুল, দিলীপকুমার, সাঁইতিরিশ সাল!
'কী সব মানুষ তখন রেডিওতে' এই করে দীর্ঘ রাত,
দুজনের দীর্ঘরাত বয়ে যায়...
জ্বলবার মন্ত্র দিলি, সামান্য মানুষ ওরা, না জ্বলে যাবে বা কোথায়!

(ছবিঃ ক্রিস ভীনেমান) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৭

Image result for abstract red painting

নাপাক 
              -তন্ময় রায়

শোয়ায় মাড় দিতে ভালো লাগে। কথার ঠিক কোথায় ও-কার লাগানো যায় জানতে গিয়ে ভাব হয় তোমার সাথে। রচনা ভেঙে ভেঙে দাম ঠিক হয় আর দরজার অসুখ করে উৎসর্গে ভাবের নাম দিই বলে...

১.
থার্ড পার্টটা ভালো করতে পারি না
প্রথমে তাড়াতাড়ি বলি
বুকে বসে থাকে সার্কাস
ঘন মাধ্যম লঘু মাধ্যম
প্রবল হবার দিকে এলেই
                পাল্টি খাই কাচগুঁড়ো সমেত

২.
উবু হয়ে রই
গণনা ভাগ হতে হতে
                          দুর্বল লাগে কভারে
এটা তোমার স্টাইলের জলসা
ফুটোমাথার খেল্
             সিলিকা ওড়াচ্ছে

(ছবিঃ ওরেস্ট জ্যিওমকো) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৬

Image result for abstract firework painting

মরচে পড়া খড়গ্
                         -স্বাগতা সিংহরায়


দেবতাকে উৎসর্গ করেছি যে উদ্যত খড়গ্
আমার বিশ্বাস-
সে আনন্দমঠ শোনেনি।
বিশেষ কোনো ঘরে -
  রাষ্ট্রীয় অহংকারে শোনা যায় তার হাহা..
কৃষ্ণবর্না দেবীর হাতে সুসজ্জিত
একের পর এক দুষ্টমুন্ড
  হাঁ করা শেয়াল গেলে রক্তের স্রোত..

আমি তার চরণ ছুঁয়েছি
পরীক্ষাদিনের প্রসাদী ফুলে কপালতিলক

মা...মা   গো...
এতযুগ পরে খড়গে কেন বিষ!
কে মাখালো গরলরহস্য!
মায়ের হাতে তবে কীসের বরাভয়
দুষ্টদমনে খড়গে্র চিরবিদায়।

অবসন্ন শিশুটি মাতৃপিতৃহীন-
ঘুমিয়ে পড়ে ক্ষুধার জঠরে
জন্মদিন থেকে তার যে শাক্যধর্ম!

(ছবিঃ নোয়া ইয়েরুশাল্মি)


আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৫

Image result for red light abstract painting

শকুন
     -পাপড়ি গুহ নিয়োগী



আমি ও অশ্বত্থ দিব্যি তো আছি
কয়েক মাইল দূরে শুধু কথা... উৎসব
আহ্লাদের ডাকগুলো বুড়ো হয়
ভারী হয় নিঃশ্বাস, দীর্ঘ

 তারপর
গভীর ঘুমের মধ্যে দেখি
শত লোভী চোখ, খোঁজে
শকুন
আমারই শবদেহ

(ছবিঃ নেস্টর তোরো)  

আকাশপ্রদীপের অনুবাদ কবিতাঃ আলবানিয়া থেকে লিন্দিতা আরাপি

Image result for lindita arapi photo

গভীর জল
         -লিন্দিতা আরাপি

ঠিক  এইখানে একটা সেতুর দীঘল খিলান
এক দক্ষ শিল্পীর
 জলরঙের মতো
এর রঙ এখনো টাটকা।
এর অনেক নীচে, গভীরে
জল ডাকছে
নতুন আয়নার মতো লোভ আর উজ্জ্বলতা
যাতে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমায়
আমি দেখছি, আগন্তুকের মতো প্রবল পিপাসা নিয়ে
সেটা ছুঁয়ে ফেলছে আমায়
আমি কেঁপে উঠছি
শ্বাস টেনে নিচ্ছি তার আত্মার অন্ধকারের ভিতর।
হে মৃত্যুর গভীরতা!
আমি আসছি। আমি আসছি
মধ্যবর্তী বাতাসে
ফেটে পড়া
গুলির মতো
আমি শুধু এই মুহুর্তটার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করেছি
বাতাসের শেষ বুদবুদের ওপর দুলে ওঠার জন্য
তোমার জেগে ওঠার ভেতর ডুবে যাওয়ার জন্য
আর আমার দিনের নতুন অর্থের জন্য


....................................................................................................................................

লিন্দিতা আরাপির জন্ম ১৯৭২ সালে। আলবানিয়ার লুশজেঁ শহরে। নব্বই দশক থেকে কর্মসূত্রে জার্মানিতে বসবাস। সে সময় থেকেই জার্মান ভাষায় লেখালেখির শুরু। মার্কিন অনুবাদক ক্যারোলিন ব্রাউনের ইংরেজি অনুবাদের মধ্যস্থতায় তাঁর কবিতার বঙ্গানুবাদ করা হল।

(ছবিঃ Heinrich Boll Stiftung)


















আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৪

Image result for light abstract painting

গর্ভবতী রাত 
                 -অনির্বাণ পাল

দারকেশ্বর নদীর ধারে বসে চারুশিল্পী জলের           কান্না আঁকছে
শরীরে ঘাম ,চোখে খেলা করছে চাবুক মাছ!
জিহীর্ষা মন খেয়ে ফেলছে জনপদের নকশা
তালগাছের সারি মাটির দেওয়াল খড়ের, ভালোবাসা নিয়ে ডায়ারি লেখে জীবনের

নটকান নটিনী হয়ে নাচে
বাউল সকালের গান ধরে পুজো সারে মা
সকল আলাপ শেষ হলে বিবাহ হয়
অপত্যর টানে নারীর শরীর কামিনী গাছ
পাগল রাতের ভিতর জল উথলে ওঠে

চারুশিল্পী কাঁদে,জারথানে লোকগান গায়
রাত দেবী হয় পেটের ভিতর আগমনি যার!

(ছবিঃ মেলোডি হাওতিন) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৩

Image result for light abstract painting

সহজ কবিতার খোঁজে 
      -প্রদীপ চক্রবর্তী

এক /

টুকরো টুকরো নরম
দু  হাতে আঁজলা করে ছড়িয়ে দেওয়া হতো
সেই মনের দখলী বাগানে জরিপ রেখা টেনে
ঘুমিয়ে গেছে সামান্য বিষয়হীন রঙ

কোন শব্দ লিখেই আজ আর সেই রঙের কাছে
যেতে পারছি না ।
পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে একটু একটু করে সরে আসছে অথৈ নোনা জল ।
এই যে সুদূর সম্ভাবনার নীচে
পিরিচের ওপর আমার হৃদপিন্ডটা
ওলনদড়ির টুকরোগুলো ,
ভুলে যাওয়া শব্দের কৌতূহল অব্যর্থ ,
ভ্রু - সন্ধিতে অতিজাগতিক উদ্দেশ্য ...

বৃষ্টিভেজা বর্ণবোধহারা এক অসহায় , সুযোগসন্ধানী

কতো আড়কাঠি টপকে অনন্য জলাশয়ে
লুকোনো গোড়ালি পর্য্যন্ত একটা অন্তহীন
সন্ধের খোঁজে
হাপিত্যেশ করে বসে আছি
যে শরীর ঢেউ থেকে উপড়ে ওঠা
শিশুর ঘুনসিতে বাঁধা ঘুঙুর
তিরতির শব্দদ্রুম
সদ্য মুখের আনুপূর্বিক বেদনা বড় দুরূহ প্রস্তাব

বর্ষার দেশগুলোতে শিশুরা নিঃসঙ্গ হয়ে
উদাস খেলা দেখতে চায়
                           আপেল ও টমি গানের জন্য ...

দুই /

ঈষত্  মালিন্য । ঈষত্ প্রাচীনতম হারেম ।
আর ,কাউকে পরোয়া না করে
                        সময় ফুরানো স্বপ্নে
নিজেকে থামিয়ে রেখেছে ,
ফিনিক্স - গোত্রীয় করণিক ...

কেরানীগঞ্জে এক সুউচ্চ বেড়াল বেরিয়ে এলো ।
ছায়ার মতো অকিঞ্চিত্কর মাছ অনেক অচেনা বেড়ালের ভিড়ে ,
জিভে দাঁতে বর্ণনাতীত ঘষটানি ,
ঊর্ধ্বে শূন্যে বেড়ালের ত্রিনয়ন ,আজ কৌতূহলহীন ...

মাছ খেতে খুব ভালোবাসি ,বলে অলজ্জ অভিলাষে আরোগ্যসন্ধানী কায়াতরু ডালে
ডাকাবুকো করালকামিনী ...
অশনিবরণী  কুঞ্জকামিনী  শিকারীবাহিনী
হা রে -রে -রে -রে ঢুকছে
                            করণিকের পাড়ায় পাড়ায় ...

অবিকল জাগ্রত স্বপ্নে দেখা ঈষত্  হারেম ...
থাকে নিরবধি, অন্নমতী  রঙ্গমতী  অমা নক্ষত্রমালিকা নীরাজনা
শেষে প্রাচীনতম করণিকতো থাকেই ...
নীল জল ,রঙিন উপল ,মায়াবী -মাধুরী এক করণিক দ্বীপ ,
অদ্ভুত পেঁচানো সিঁড়ি অন্তহীন নেমে গেছে
                                   করণিকের পাড়ায় পাড়ায়
(ছবিঃ শিখা তারু) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১২

Image result for aurora abstract painting

নষ্ট হতে চাওয়া কবিতাটা 
                 -নীলাব্জ চক্রবর্তী
(উৎসর্গ – ভ্যালেনটিনা ন্যাপ্পি, লিয়া গোত্তি, নাতালিয়া স্টার)



ব্যাকরণকুমার দ্যাখে
কিছু বাঁকবাগানে নরম হয়ে আসা
জিভ এক হরফী অভিজ্ঞান
নাকেমুখে গুঁজে রাখা
জ্যামিতি, আড়ম্বর, ঊরু-সন্ধি-পূজায়
যখন গাছের চোখে গাছ বিঁধে যাচ্ছে
আর মাংস দিয়ে আঁকা হচ্ছে
দাঁতের বাউণ্ডারী কণ্ডিশন, স্প্রিং ভ্যালু
কার নোনা কথাবার্তায়
বারবার কপি-পেস্ট, বাঁধানো দুপুর
চেরা কাঠে চেরা কাঠ ঘষে ঘষে
আইসক্রীম তখন জ্যান্ত হয়ে ওঠে
কুমারীসম্ভব আয়োজনে
এই রোম একদিনে রাজি হয়নি
ঘরভর্তি উড়তে থাকা রূপমহাদেশ
অথচ
একটা ক্যামেরা আরেকটা ক্যামেরাকেই দেখছে শুধু...

(ছবিঃ আলেক্সান্দ্রা রোমানো)

ধারাবাহিকঃ হারিয়ে যাওয়া নব্বই- পর্ব ৩

Image result for abstract aurora painting

 ‘আমাকে জলের কাছে ঋণী রেখে গেছে’
                                    -অনিন্দ্য রায়

তখন আমি বর্ধমানের এক চোখের হাসপাতালে কাজ করি । ২০০৭-০৮ ।  সেইসূত্রে প্রতি শনিবার দেবীপুরে  আউটরিচ ক্লিনিক করতে যেতাম। প্রতিবার যখন স্টেশনে নামতাম মনে পড়ত একটি নাম, একটি ঠিকানা
                                         গৌতম দাস
                                    গ্রাম ও ডাকঃ দেবীপুর
                                      জেলাঃ বর্ধমান
                  পিনঃ ৭১৩১৪৬
 হ্যাঁ, মনে পড়ত, সে এক সময় ছিল আমাদের, এই ঠিকানায় চিঠি লিখেছি, সম্বোধন ,
                            সুজনেষু,
                                      সম্পাদক, নির্যাস ।
 কবিতা পাঠিয়েছি  ব্রাউন খামে ভরে এবং মুদ্রিত হওয়ার পর পত্রিকা ডাকযোগে সেই পত্রিকা পৌঁছে গেছে আমার ঠিকানায় । প্রথম যেদিন স্টেশনে পা দিই মনে হয়, দেবীপুরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কতদিনের পুরোনো । হ্যাঁ এভাবেই চিঠিতে, কবিতায়, পত্রিকায় একেকটা গ্রাম, একেকটা শহর, একেকটা জায়গা চেনা হয়ে যেত আমাদের, আমাদের নব্বইয়ে।
 পরে পত্রিকাটির ঠিকানা বদলে ডায়মন্ডহারবার থেকে প্রকাশিত হতে থাকে। বদলে যায় সম্পাদকের নামও। গৌতম ব্রহ্মর্ষি - এই নামে তখন লিখতে শুরু করেছেন পূর্বোক্ত গৌতম। ' বিষ ও বিস্তার' তাঁর কবিতার বই। বাঁকুড়ায় এক কবিতার অনুষ্ঠানে ১৯৯৫-এর এক নৃশংস এপ্রিলে কবি বইটি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। প্রকাশকঃ পত্রলেখা। প্রথম প্রকাশঃ আশ্বিন ১৪০১, অক্টোবর ১৯৯৪। প্রচ্ছদঃ শ্যামলবরণ সাহা । রচনাকালঃ১৯৯০-৯৩ ।
 টাইটেল পেজসহ মোট ৫৬ পৃষ্ঠা । ৪৩টি কবিতা, তিনটি পর্বে বিভক্ত, যথাক্রমে ‘কুহকের চর’, ‘কুয়াশার জন্মকথা’, ‘বরফের ছেলে’।
               গোপন পিপাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে
               এখন নিঃসঙ্গ মেঘ শুয়ে আছি খোলার ভেতর
               বৃষ্টি ও সবুজ খেয়ে যে পাখিটি উড়ে যায় রোজ
               এ বসন্তে আমি তার পালক ছিঁড়িনি
               বরং সে বর্ণময় আমার ডানায়

               দুলে ওঠে নির্মেষ, দাঁড়ে
               ২৭•১০•৯০
( দাঁড় )
এইটি প্রথম কবিতা বইটির । এই দুলে ওঠা, এই সংকেতময় উচ্চারণ তাঁর আপন মুদ্রা । কুহক, অদ্ভুত আকর্ষণী শক্তি নিয়ে  ভেসে ওঠা এক ভাষার চর, পাঠকের দৃষ্টিতে দেখা যায় কিছুটা, বাইটুকু ব্লার্ড, সেই অংশটুকু কল্পনায় ভরিয়ে নিতে হয়, এই তাঁর কবিতা।
ধুয়ে আছে লাবন্যময় মুখ । থামো ।
আঁকড়ে ধরে । ফিরব না আর । অনন্ত বিস্তার ...

  পাথর ক’রে নেব তোকেও শাপে
               ২১•২•৯৩
( মৃত্যু)
স্বভাবতই মিতকথন এবং পূর্ণতা তাঁর কবিতার বিশিষ্টতা । সেই সময়ের সিরিজ লেখার প্রবণতা থেকে ভিন্ন একেকটি কবিতার নিজস্ব শিরোনাম, তা কবিতাটির মূল ভাবনা, এই তাঁর রীতি, একটি মাত্র কবিতা, বইটিতে, তিনটি পর্বে রচিত, বস্তুত তা একটিই কবিতা।
খেউড়ে কেটেছে বেলা
পোড়াহাড় এবং পানীয়
           জ্বালাতে চেয়েছে আলো
পাঁকজলে অন্ধকার নড়ে ওঠে,
        মহিষের পিঠ
                 ২
জলের করাত ছুঁয়ে তোমাকে চেয়েছি
আরও এক পুঞ্জীভূত আলো
  ধ্বনি থেকে ভেসে যায় প্রধান অক্ষরে

জলেও ভেতরে ঢেউ যেইভাবে
মাছের ভেতরে ঘোরে জল
জলের বঁড়শি মুখে
ছড়িয়ে পড়ছে তার আঁশ
আর সে মেছুড়ে এক অন্য চারে ছিপ টেনে তোলে
দেখি তার সবুজ ফাৎনা জুড়ে
                ভেসে আছে আমাদের অলীক প্রবাস...
                 ৩০•৭•৯৩
                                        ( জল )
 এবং কবিতাগুলি সংহত, আবেগ নিয়ন্ত্রিত ।
 দর্শন তাঁর কবিতার ভিত্তিভূমি।
কায়ার মধ্যে যেমন ছায়া
                  ঘুরতে ঘুরতে শেষ হয়ে যায় জন্মইতর

এখন আমি দাহ্যতরু
উৎস কোথায় ?
জন্মজলে দাঁড়িয়ে দেখি
চারণভুমি ।

                     ১১•৮•৯২
                                                  ( চারণভুমি )

এই তাঁর ভুবন । পাঠককে আকৃষ্ট করে, আবিষ্ট করে।
জলের নিচে উন্মোচন

জলের গ্যাস রাতপচায়
রাতজাগায় বিস্ফোরক
ভবিয্যের গাছ আমি
জীবনরস জীবনরস
জলশিরীষ নিই চুষে
শস্যবিষ এবং তার
অন্ধকার সামগ্রী
পাতার পাতা তস্য পাতায়
পুড়ছে কী ফুটছে কি
খই যেন !
ঝোলঝলে চমৎকার রান্নাঘর তৈরী হয়
     রোগমুখে শব্দভাত
                     ১১•৮•৯২
          ( উন্মোচন)
তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক জড়িয়ে ছিল অনেকদিন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর কবিতা পড়তাম। ‘নির্যাস’-এ লিখতাম নিয়মিত।
কিন্তু আস্তে আস্তে তাঁর কবিতা আর দেখতে পাই না সেভাবে। তাঁর কাগজেও আমার লেখা পাঠানো হয় না।
এখনো কি লেখেন তিনি ? সেই ‘বরফের ছেলে’ এখনো কি লেখে ‘কুয়াশার জন্মকথা’?
দেবীপুরে, প্রতিদিন, ক্লিনিকে ঢোকার সময় ভাবতাম, কেউ এসে বলবেন, ‘ আরে অনিন্দ্য! চিনতে পারছ ? আমি গৌতম ।”
বলে উঠবেন
গর্ভে চাঁদ । সে ঘুমোতে পারে ?
শুধু পাকের ভেতর নড়ে আলো
আলো ঘিরে জল কলরব
একদিন নামে উৎসমুখে
কি অমল কাতরতা
রাত্রির শিয়রে আজ শরীর নিঃসৃত
শ্বাস লোহাজলে ভাসতে ভাসতে
নেমে আসে রূপালী মাছের মতো আলো...
                   ২৩•৯•৯০
                                 ( জন্ম )
আজ আমি আর দেবীপুর যাই না। কিন্তু অপেক্ষাটা রয়ে গেছে।
গৌতমদা, আপনার কবিতা আরও আরও পড়তে চাই ।
গৌতমদা, কেমন আছেন ?
মনে আছে,  একদিন, ‘জলের করাত ছুঁয়ে তোমাকে চেয়েছি’ ?
মনে আছে ?
সর্প দংশন হয়েছিল । সেই থেকে
      বিষ ও বিস্তার
আমাকে জলের কাছে ঋণী রেখে গেছে
( বিভাব কবিতা  / বিষ ও বিস্তার )
বিষ ও বিষ তার, বিষ ও বিস্তার, হ্যাঁ, আমাকেও ঋণী রেখে গেছে, তাঁর কাছে, সময়ের কাছে

(ছবিঃ মরিস সাপিরো)

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১১

Image result for light color  abstract photography

শর্তসাপেক্ষে এঁটো হাত
                           -জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি


এমনকি সারারাত ডুবখেলায়।জলের ফোঁটার মতো।এমন এক গোপন তারাখসা রাতে।হয়তো বিঁধে থাকে মৃত্যুর আদেশ।ঘন।এলোমেলো।ঝুল বারান্দায়।জীবাশ্মের শুকনো কোষপর্দা বেয়ে।ঢেউহীন খুলির ভিতর।আপাত শান্তি


সুযোগ মতো অনেকটা অবশিষ্ট ইশারায়
পোয়াতির কাঙাল সোহাগ মিশিয়ে
মাংসের শূণ্যতা থেকে শর্তসাপেক্ষে এঁটো হাত

(ছবিঃ শিরিন গিল)