Thursday, 2 November 2017

দেবদীপাবলীর কবিতা ৯

Image result for light abstract painting

অণুবীক্ষণে লেখা চিঠিগুলি (শেষাংশ) 
         - নীলাদ্রি বাগচী

চ. ধরো
ঘুম ভেঙে উঠে দেখলে
দূরের বাতাস তোমার পর্দা ছুঁয়ে, চোখ ছুঁয়ে, ঘুম ছুঁয়ে তোমাকে
বাংলা বানান নিয়ে ভাবতে বলে গেল....
কি করবে?
আবার বাজার যাবে নাকি
তুড়ি মেরে বাতাসকে উড়িয়ে বলবে,
যা এখন
ফাগুনে আসিস

এখন ঘুমোবো আমি সারাটা শরৎকাল ধরে....

ছ.
কে তুমি বেগুনী ঠিক ফুলের মতো ষষ্ঠী ভোর গুছিয়ে চলেছ? মাঝেমধ্যে মনে হয় জাদু শব্দের উৎসে এরকমই বেগুনী আগুন ছোঁয়া ছিল। আর তাই, ধ্বনির বিরুদ্ধে গিয়ে সারাদিন লড়ে যাচ্ছ একবগ্গা বিচারালয়ের পর বিচারালয় ছুটে ছুটে।
প্রশ্ন হল কি পাবে শেষাবধি? অর্থ, যৌনসুখ, নাকি শুধু  প্রতিবাদ তাই তুমি এই ভোর বেগুনী করেছ? কি পাবে ভেবে দেখো। এবং জানিও তাকে, যে আসছে সকালের প্রথম রৌদ্রে, যার মুখ জনসমাবেশ থেকে তুমি গড়ে দিয়েছিলে। তুমি ভাব বলেই সে আছে।
নইলে ম্যাজিক তাকে এতদূর নিয়ে গেছে যেখানে রাস্তা নেই, পাকদণ্ডী নেই কোনো, আয়ু নেই, পানীয় জলেরও কোনো সংস্থান সেখানে থাকে না....
অণুক্ষণের চিন্তা বোধকে আচ্ছন্ন করে, হয়তো বা আবেশে জড়িয়ে দেয়.... এর অধিক কিছু নেই, কিছু হতে পারেও না, ষষ্ঠী সকাল শুধু হিন্দি গানে বেলায় চড়াও হতে থাকে....

জ.
অকারণে শব্দ আসে, অকারণে শব্দ চলে যায়। দুদিন লিখি নি মানে দুটোদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে গেছি আর আজ আচমকা ঘুম ভেঙে শুনি অকারণে শব্দ যাচ্ছে, শুধু তার নূপুর নিক্কণ রেখে যাচ্ছে বারান্দায়, ঝরা পাতাদের চারপাশে।
দাবী এই, ঘুম হোক। ঝরে যাক অকারণ পাতা। উন্মাদ সুস্থ হোক। জাগো নদী, জাগো বৃষ্টিস্নাত নাচের মুদ্রা। আমাকে বিদেশ দাও। আমি এই পদবীকে আকাশে বদল করে পুনর্বার ফিরে আসব। সে আসবে, অবশ্যই। শুধু সেই মানুষের পকেটে দাবীর বদলে স্নেহ থাকবে, স্বপ্ন থাকবে....
ভালোবাসা শব্দের জন্য এভাবেই বেছে নেব মৃত্যু আর তোমাকে সম্পূর্ণ করবে আমাকে যে ছেড়ে গেছে সেই শব্দ, শব্দভাণ্ডার....
ঝ.
রূপবান শব্দটির বিপরীতে বসে থাকা উন্মাদ ভয় বাধ্য করে ভোরে উঠতে। লোকক্ষয়কারী কাল দিক নির্দেশ করে। যা পূর্ব, যা নির্দিষ্ট, চূড়াবদ্ধ কেশে সে চুপচাপ পাশে এসে বসে। ধীরে ধীরে আলো বাড়ে। দিনের প্রকৃতি স্থির হয়। কৃষ্ণবর্ণ পুরুষের রক্তচক্ষু শান্ত তাকায়।
ঠিক এর বিপরীতে কোনোখানে গভীর গভীর ঘুমে তুমি আলোপথে পা ফেল, পা বাড়াও। আর তো কয়েকটা দিন তারপরই দীপাবলি। সম্ভবত স্বপ্নে তুমি ততদূর আরামে পৌঁছাও। নমস্কার বিনিময়, হাসি ভাগ করে, উল্লাসে পার কর কদিনের স্বদেশ জীবন...
সাবধানে ফিরো আর আরও সাবধানে আগামী জীবনটুকু যত্নে সাজিয়ে তোলো। রঙ আসছে জীবনে; ভালোবাসা, বুঝতে পারছ দূরের পাহাড়ি নদী ক্রমশঃ নিকট হচ্ছে তোমাকে ভিজিয়ে দেবে বলে। সেজে ওঠ সেইভাবে, সাদাকালো অথবা রঙীনে, চরম বৈভবে...
সকাল গড়িয়ে যাক, রক্তচক্ষু স্থির হোক আরও। অনিবার্য বুঝে নিতে আমিও পথেই যাব, প্রান্তরে, অন্তিমে... হারিয়ে যাবার আগে মানুষ যেভাবে হাসে সেরকম সাধারণ হাসি হেসে...

ঞ.
যুগলের ছবি দেখি, কেটে যায় অনেকটা সময়। স্মৃতির মাদুরে এই সব ছাপ আজ বহুদিন ধরে পড়ে আছে। কালো পোশাকের কবিরাজ যেন- এরা আসে সেইভাবে , প্রয়োজনে এরা চলে যায়। নষ্ট করে অনেকটা সময়।
সময়ের দাম নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভেবে যাচ্ছি। দাঁড়িপাল্লা প্রথা নিয়ে। শেষ অবধি নিয়ে এসে হাত ছেড়ে চলে যাওয়া বাতাসের সাথে খাদের কিনারে আমি ধীরে ধীরে মজা পাচ্ছি।
বলতে পারছি, পূর্ণ হও, বদলে যাক ধরণ গঠন, নিজেকে আবার পড়তে কতখানি মজা সেটা ধীরে শোণিতে মেশাও।
ব্যস্ততা কিছু নেই। কারণ যেকোনো বাস সেখানেই নিয়ে যাবে যেখানে পোশাক সহ বৈদ্যুতিক চুল্লি অনায়াস নিয়ে নেয় ... নষ্ট হতে দেয় না কিছুই...

(ছবিঃউটে লাউম)

No comments:

Post a Comment