Friday, 22 September 2017

পুজোর কবিতা ১৮

Image result for goddess abstract painting

মা-মেয়ের ঘর 
                     -ইশরাত তানিয়া

চুমু আমার হুহু মেয়ে
তোর ব্যথায় ফুল লিখি পাতা আঁকি
ওই যে উড়ছে ফোঁটা ফোঁটা ভিজে গেল ঘুড়ি
ছুটে যাচ্ছিস
নাটাই অবোধ হাতে
চাঁদের দিকে জ্যামিতিবক্স ফেলে
এদিক ওদিক লেগে আছে অন্ধকার
প্রতিজীবন কোথায় এতটা চেপে বসেছে
এইটুকু মেয়ে
বৃষ্টি ছুঁলেই কেন নৌকো ঝরে যায়
ঘুমের ভেতর ছায়া উঠে আসে
তোর দুঃখে আলো বুনি ঘাস নিড়ানী দিই
জেনে গেছিস
মা বেশিদূর যেতে পারেনি    
পায়েশান্ন  রেঁধেছে, হয়তো তেমন কিছু না
শুধু রোদ আর হাওয়ায় ভরা জামবাটি

(ছবিঃ বারবারা কার্লসন) 

পুজোর কবিতা ১৭

Image result for goddess abstract painting

প্রেমসংক্রান্ত
                 -অনু সঞ্জনা ঘোষ 

পূর্বাভাসে কোনো নাম লেখা নেই। লেখা নেই মধ্যরাতের জেগে থাকা। গল্পে গল্পে সমস্ত কালো জেনে গেছে ভোর আসন্ন নরম বাতাসে। আমি খুলে দিয়েছি আমার দক্ষিণের জানালা। খিড়কীর ওপারে অনর্গল কথা বলা। মরসুমি বাতাস যত্ন লিখে রাখে টেবিলের কার্নিশে জুড়ে। শব্দের ভেতর শব্দ কথার ভেতর কথা যায় জড়িয়ে। গ্লাসের গায়ে ফুটে ওঠে ছোট ছোট চোখ। অভিমান ছড়িয়ে শুয়ে থাকে ভাঙা কাঁঁচের গ্লাস। তুমি তাদের নাম রাখো অসুখ।

এক পক্ষ জুড়ে বাঁ পাশের অলিগলিতে তুমুল ঝড় । মুহূর্তেরা সমান্তরাল কবির হাত ধরে। না জানার অছিলায় সব জেনে যায় রবি সোম মঙ্গল। আজকাল রবিবার গুলোর আর ছুটি হয় না। খোলা ছাদ। বিষাদের গ্লাসে ডুবে থাকা অবসর। ভোকাট্টা ঘুড়ির টানে চশমা খুঁজে চলা। আচ্ছা বাতাসের কি নাম হয় না?  হয় তো। তবে কি নামে সাজাই আমার বারান্দা। এক মুঠো শরৎ হাতে খোলা আকাশ দিয়ে গেলে তুমি। আমি তোমার নাম রেখেছি প্রেম।

প্রেম ভালো থেকো।

(ছবিঃ প্রাচীন অ্যাজটেক শিলাচিত্র) 

আশ্চর্য্য ধারাবাহিকঃ হারিয়ে যাওয়া নব্বই- দ্বিতীয় পর্ব

Image result for pradip abstract painting


                      প্রদীপজন্মের আলো
                                  -অনিন্দ্য রায়

২০০৬ বর্ধমান থেকে ফিরছি। এক বন্ধু অপেক্ষা করছে দুর্গাপুর স্টেশনে। তার মোটরবাইকে। আমরা দুজন গন্তব্য বেলিয়াতোড়। তারপর দুজনেই যাব আরেকটু পথ, সে যাওয়া আলাদা বেলিয়স্তোড়ে সুদীপ, স্বরূপ অপেক্ষায়। ওদের সাথে খানিক কবিতাসময়ের পরিকল্পনা।
আমাদের গল্পে বাইক এগোয়, পথের পাশে অপার ধানক্ষেতের মাঝে কারখানা,  চিমনি থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে, চকিতে ‘ নিসর্গফ্যাক্টরি থেকে ধোঁয়া উড়ছে আকাশকেতনে’ এরম কথা আসে মনে, দুজনেরই। বাইক বাতাস সরিয়ে এগোয় কিছুটা; তারপর গতি কমে আসে। সে বলে ওঠে,’ এই রে! তেল শেষ, রিজার্ভে ছিল’ ।
 পথ ঢালু, সে গিয়ার নিউট্রাল করে, বন্ধুত্বে যেরম হয়, ততটাই নিউট্রাল। নিজের মোমেন্টামে বাইক  গড়াতে থেকে, যেরম বন্ধুত্ব নিজেরই স্বভাবে গড়িয়ে যায়।
 থামে। হ্যাঁ, একসময় যখন বাইক থামে, দেখি, পেট্রলপাম্প ওই তো, আর মিটার দুশো  
একটা ফুয়েল ফুরিয়ে যাওয়া যান আমদের এতদূর নিয়ে এসেছে।
বন্ধুত্ব এরমই তো পারে। এরমই তো নব্বই। নব্বইয়ের বন্ধুত্ব  নিয়ে যায় ততদূর যেখানে আবার জ্বালানি ভরে নেওয়া যায়, নিয়ে যায় আমাদের ।
আমি আর প্রদীপ হালদার।
 একই সময়ে লেখালেখি শুরু করি । মাঝেমধ্যে দেখা হয়, বইমেলায়, কবিতার অনুষ্ঠানেকথা হয় অল্প।  আলাপ যেটুকু কবিতায়,  বন্ধুত্বও। পরে আমি যখন বর্ধমানে, ও দুর্গাপুরে, একদিন বর্ধমান ইউনিভার্সিটির এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়, পরস্পরকে জড়িয়ে ধরি। ক্রমে সে আলিঙ্গন নিবিড় হয়। ফোনে সে আমার নাম্বারটিকে  বেছে নেয় মিনিমাম কলচার্জের জন্য। তার সুযোগ ছিল এরম দুটি নাম্বার সিলেক্ট করার। তো, সে একটি বাড়ির আর অবশিষ্ট একটি মাত্র শূন্যস্থানে আমাকে রাখে। আমাদের দিন কাটে কথায়, কবিতায়, তর্কে, উল্লাসে। 
 সেই প্রদীপ, শান্ত, দীপ্ত, মৃদুভাষী। এখন আর লেখে না। কবিতা এখন তার লেন্সে। শব্দ, বাংলা অক্ষর  থেকে সে দূরে।
 এই দূরত্ব থেকেই আমি পড়ি তার কবিতার বই।
 ‘প্রানিজন্ম’, তার প্রথম কবিতার বই। এক ফর্মা। ১২টি কবিতা। রচনাকালঃ ১৯৯০-১৯৯৪। প্রকাশকঃ কবিতা দশদিনে।, মুল্যঃ ৫টাকা; বইমেলার মুল্যঃ ২ টাকাপ্রচ্ছদে একটি বায়সের ছবি, না, খণ্ডচিত্র,  কালো, সঞ্জয় রক্ষিত কৃত।  প্রকাশকালের কোনো উল্লেখ নেই।
 একই সাথে সেবছর অংশুমান আর প্রদীপ করের এক ফর্মার কবিতার বই বেরিয়েছিল ‘কবিতা দশদিনে’ থেকে, মনে আছে। 
 প্রাণিজন্ম, বইটি আমি হাতে পাই  প্রকাশের কিছুদিন পর। একেকটি কবিতা প্রদীপের সাথে বোঝাপড়া  আরও দৃঢ় করে।
                             ঋতুবোধ ছিল না বলে বিরহী বিছানা
                             বর্ষায় ছাতা-বুকে একাকী কুমনা
                             সুতরাং গয়ংগচ্ছ, একা একা জলে
                             আঁক কষি দুর্মনে জ্যাট্রিন-দেয়ালে
                             পাশবাড়ি হাসে যেন ঘোর ও প্রদাহে
                             আমি শুধু ভেবে যাই সম্পর্ক বিষয়ে

                             জল পড়ে পাতা নড়ে কাকগুলি ডাকে
                             কলঘরে মনে পড়ে তাকে ও তোমাকে
                             ছয়দিন বাসে ত্রেণে সাড়ে সাত-চার
                             রবিবার প্রাণিজন্ম খোঁচায় অন্ধকার
                                                          ( প্রাণিজন্ম )
নিজস্ব প্রকাশভঙ্গীর খোঁজ তার প্রথম থেকেই। সে এক সময়, আমাদের বেঁচে থাকার সর্বস্ব তখন কবিতা। জাগরণ পেরিয়ে, ঘুম পেরিয়ে, স্বপ্ন পেরিয়ে, বাস্তবতা পেরিয়ে অন্য এক চেতনস্তরে প্রদীপ তখন জ্বলছে।
                             প্রেমকে ওপরে, দশতলায় তুলে দিয়ে
                             স্বপ্ন ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে
                             স্বপ্ন ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে
                             নিচে নেমে এলাম, একাকী নিচে

                             তারপর হঠাৎই অপ্রতিভের মত ঘাড় ঘুরিয়ে
                             বলে উঠলাম ঃ শুভরাত্রি
                             আর এই শব্দে হোটেলের সমস্ত দরোজা
                             একে একে বন্ধ হয়ে গেল .....

                             চার দেওয়েলের ভেতর আলোর সাঁতার বিষয়ে
                             ভাবতে ভাবতে অসম্ভব আলোহীনতায়
                             আকাশে তাকিয়ে দেখলাম ঃ একটিও তারা নেই
                             ঘটনা এই ঃ সেই রাত্রে শহরের সমস্ত ল্যাম্পপোস্ট
                             ট্রাফিক পুলিশের মত ঘুষ চেয়েছিল ।
                                      (ট্রাফিক পুলিশের মত ল্যাম্পপোস্ট )
সে কারিগরী শিক্ষা নেয়, কর্মরত দুর্গাপুর স্টিলপ্ল্যান্টে। ছবি তোলে। কবিতা লেখে না। রক্ষণের কোনো অন্য প্রকরণ সে হয়তো আয়ত্ত করেছে।
                             জীবনযাপন থেকে উঠে আসে অ্যান্টিসেপ্‌টিক ক্রীম
                             ক্ষুধায় অবনত দেবদারু গাছে বাতাস লাগে না
                             ত্বকচর্চাই ডিফেন্সের সহজ উপায় ।
                                                                      ( দিনচর্চা / ১)
এই উচ্চারণ নব্বইয়ের সম্মিলিত কবিতাযাপন আর ব্যক্তিগত ভাষাশৈলীর উদাহরণ। খুবই পার্সোনাল কথা কীভাবে কবিতা হতে পারে, পাঠকেরও আপন হতে পারে, রহস্যময় হয়েও কমিউনিকেটিভ হয়ে উঠতে পারে - প্রদীপের কবিতা তা প্রমাণ করে।
                             অপরূপ রূপে রাত আসে আজকাল
                             বিছানা গম্ভীর, মানিব্যাগ পড়ে থাকে অবচেতনভাবে
                             কাকে কি বলব বল? হাতের রেখার পথে
                             ছারপোকা হেঁটে যায় ।

                             গ্র্যান্ডিং মেশিন থেকে ছিটকে আসে স্বপ্নের বাবড়ি
                             কতটুকু মসৃণ হল জীবন ? ঘর্ষণে
                             টের পাই বস্তুগোলক।

                           দুষণ দুষণ আহা উপত্বক পুরু হয় বিপ্রতীপভাবে
                             অশোধিত সূর্যালোকে ঝলসে ওঠে
                             লোহার বাজার ।
                                      (গ্র্যান্ডিং মেশিন ও স্বপ্নের বাবড়ি সমূহ )
 বিজ্ঞানের অনুষঙ্গ সে নিয়ে এসেছে কবিতায়। এনেছে শরীরের কথা, শারীরিক সুখ ও অসুখের কথা। তার পরের বই ‘ মাংসবিলাসিনী’ ।
 কিন্তু তারপর?
 লেখে না সে। সত্যিই কি লেখে না?
 প্রদীপ, আমরা যে শকটে চলেছি তা তো ততদূর নিয়ে যাবে আমাদের যেখানে আবার পরের পথের জন্য রসদ ভরে নিতে পারব। সে রসদ কবিতার।
 আর বাইক, তা তো বন্ধুত্বের।
 জানি, একদিন আমার ফোন বেজে উঠবে, তোমার গলা, ‘ অনিন্দ্য, নতুন কবিতা লিখেছি, শুনবে?”
 আমার তো সেই ফোননাম্বারই আছে, তুমি অ্যাসাইন করেছিলে তোমার দুই নিকটজনের একটি হিসেবে। 
 কতদিন ফোন করোনি ।   তোমার ‘স্বপ্ন সন্ত্রাসকালীন রিপোর্ট’ জানা হয়নি আমার।
ভালো আছ ?
             

                 ( উদ্ধৃত কবিতাগুলির বানান ও যতিচিহ্ন মূল বইটির অনুসারী ) 

(ছবিঃ প্রদীপ রাউত) 


পুজোর কবিতা ১৬

Image result for goddess abstract painting

ভুল
       -অনিন্দিতা গুপ্ত রায় 

ভাঙচুরের শব্দ পৌঁছচ্ছে না এতদূর
যে চিহ্ন লিখে রাখা স্বরলিপির আড়ালে
গতানুগতিক থেকে তফাত বুঝে নিচ্ছে তার সরগম
আর বেসুরে গেয়ে উঠছে আরোহ অবরোহন
সুর ছুঁয়ে থাকা স্বর মসৃণতায় স্পর্শের মত
গাঢ় ও গভীর—তোমার কাছে থাকলে যেমন
বাঁকের সামনে আচমকা মেঘলা হয়ে আসছে যা
তা হয়ত বা চোখের পুরনো অসুখ
উড়ে আসা বিভ্রমে সমস্তই কিছুটা আলাদা মনে হয়, এইমাত্র
দূরের বৃষ্টি শুধু শব্দহীন আর্দ্রতা নিয়ে ফিরে গেল

(ছবিঃ জিওর্জিনা জনস্টোন) 

পুজোর কবিতা ১৫

Image result for goddess abstract painting

বেখেয়ালি লেখা 
           -রিমা দেবশর্মা

একপ্লেট ঘুম ঝাপসা সংসারকে হাঁটুতিন এগিয়ে দেয়।তবু উজ্জ্বল এই চামড়ার জোড়াতালিরা কেবল হলুদের মগডালেই চুমু আঁকে।এদিকে নিরন্ন মাছেরা শরীর এলিয়ে এক এক করে পিতল নক্ষত্রের শোভায় আলোর বোতল জুড়ে ভেঙ্গে ফেলে সাঁতার।আশা করছি গামছাভর্তি নিশ্বাস আরো একবার বাঁক নেবে গ্রামীণকোণে।পাল্কিতে স্তব্ধ হতে থাকে নতজানু রুচির অবতল।এহেন মুদ্রায় সূর্য ঢাকা পড়ে যায়। এভাবে মাছের ক্ষেত্রফল কামড়ে ধরে অসংখ্য সাঁকোর অক্ষরমালা।সুগন্ধি গল্পেরা জমা হয় রাতের কাঁথার সুঁতোর ফাঁসিতে।অবশিষ্ট যা কিছু শুষে নেয় মনগাছের সহমর্মিতা।

(ছবিঃ ম্যাথিউ ফেলিক্স সান)


পুজোর কবিতা ১৪

Image result for goddess abstract painting

শিলালিপি
             -তন্ময় ধর

নাভির গন্ধ থেকে সরে যাচ্ছে তীব্র অক্ষর
আমি রূপমুগ্ধ মাংস থেকে
 ভুলে যাচ্ছি মশলার ভেজা কৌটো, শ্বদন্ত ও জিভ

খিদের নরম আলো থেকে
পূর্বজন্মের চাল-ঘি-শস্য-এলাচের বৃদ্ধিগন্ধের ওপর
চামচের অন্ধকার

শাদা পায়রার শব্দ
দ্রুততর হচ্ছে

মাংস ও পরমান্নের  এই যুদ্ধে
তোমার পেটে মিসক্যারেজ জমা হচ্ছে

( ছবিঃ লুসিয়া অমৃতা) 

অনুবাদ কবিতাঃ এস্তোনিয়া > এলো ভিডিং

Related image

মাতৃ দিবসে প্রতিটি শিশুর গান গাওয়া উচিত
মায়ের হাতে ফুল দিয়ে এবং
প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত
প্রত্যেক মা সম্মানিত হতে চায়
এবং সব প্রধানমন্ত্রীই স্বপ্ন দেখেন যে
যে সমস্ত নারী মা নন তারা নষ্ট
আগের সবকিছুর চেয়ে ঢের নষ্ট
তাই সরকার মায়েদের উদ্দেশ্যে
বিশেষ খোরপোষ দেয়
এবং বিশেষ আইন আনে মায়েদের পারিশ্রমিকে

সমস্ত শিক্ষক বিশ্বাস করেন যে প্রতিটি মাকে বাধ্য করা যেতে পারে
রবিবার সকাল দশটায়
মাদার্স ডে কনসার্টে আসতে
এবং প্রত্যেক মাকে বেঁধে ফেলা যেতে পারে 'মা'-এর তকমা দেওয়া
এক সামাজিক দলে
এবং প্রতিটি মাকে শিশুসুলভ অপমান করা যায় যদি কেউ তার জন্য না গায়
তার সন্তানের স্বার্থপরতা এবং দুর্বলতা নিয়ে একটু ফিসফাস হবে
সুন্দরভাবে সেজে থাকা সেই দুমুখো সমাজের সামনে
বিচলিত স্নায়ুযুদ্ধে তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে সেইসব মায়ের সামনে
শিরোনাম সেজে থাকা সেইসব টুপীওয়ালা মায়ের সামনে
এবং ধাতব তুলির টানে লেগে থাকা সেইসব মায়ের সামনে
এবং নাইলন হাতব্যাগ ধরে থাকা সেইসব মায়ের সামনে
এবং সেন্ট লরেন্টের আইশ্যাডো মাখা মায়ের সামনে
ঈগল-চোখের সিঙ্গল মাদার এবং উটপাখির মতো লম্বা গলা গৃহবধূদের সামনে
এবং পিছনে দাঁড়ানো কয়েকজন চালাকচতুর পিতার সামনে

কারণ অপরিচিত ব্যক্তিদের সামনে গাওয়ার জন্যে গানটি সত্যিই ভাল ছিল
তুমি কি সত্যিই মায়ের হৃদয় জানতে
রবিবার সকাল দশটায় পৌষ্টিক রসের বুদবুদ ভরা গুমোট ঘরের ভেতর?
কারণ যদি আমরা মায়েদের জন্য গাইতে না পারি
তারা সবাই মারা যাবে
ঘুমের অভাব বা যৌনক্ষুধার অভাব থেকে নয়
কিন্তু যেহেতু আমরা তাদের জন্য মাতৃদিবস নষ্ট করে ফেলেছি
অন্ধকার বিবেকের ভেতর,
সমাজে ফিরে যাওয়ার রাস্তা নেই

প্রধানমন্ত্রী কিন্তু মনে করেন
সব মায়ের হৃদয় সোনায় ভরা
গলায় বাঁধা আছে সোনার হার
আরো বিশ্বাস করেন
যে প্রত্যেক মা সন্তানের মনোবিজ্ঞান পড়েছেন
যে প্রত্যেক মা ভাল লিঙ্গপরিচয় এবং সন্তানের পিতৃপরিচয় ঠিকঠাক জানেন
যে প্রতিটি মা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে ঠান্ডা-গরম জলের সুবিধাসহ থাকেন
প্রত্যেক মা ব্যাঙ্কের গ্রাহক এবং ঋণ পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন
যে প্রতিটি মা বাড়িতে স্ল্যাকস পরেন এবং রোগা হওয়ার চেষ্টা করেন
প্রত্যেক মা মাতৃত্বের জন্য প্রস্তুত
প্রসবকালীন সব ব্যথা ও বিষন্নতা ঠেলে গাঢ় আইসক্রিমের আনন্দে
এঁকে রাখা বিশ বছর পরের এক দিন যখন জীবন ছ'গুণ দামী হয়ে উঠবে

বিশ্বাস করেন
যে প্রত্যেক মা স্বাস্থ্যবতী, শক্তিশালী এবং চন্দ্রের প্রসন্নতা ছাড়া জীবন পরিচালনা করতে পারেন
যে প্রতিটি মা একটি স্থিতিশীল স্নায়ুতন্ত্র আছে এবং তিনি ইঞ্জেকশন এড়াতে পারেন
যে প্রত্যেক মা ছ'মাসের মধ্যেই জানে যে সে গর্ভবতী
যে প্রতিটি মায়ের বয়স আঠার বছর হয়
যে প্রতিটি মা শিশুদের ভালবাসেন
যে প্রত্যেক মা তার সন্তানদের জন্য একজন ভাল তত্ত্বাবধায়ক
যে প্রত্যেক মা তার সন্তানদের জন্য লাঠি ধরতে প্রস্তুত
যে প্রত্যেক মা তার শিশুদের খেলাধুলো শেখায়
এবং লক্ষ্য রাখে তারা যেন অপরাধীদের সাথে মিশে না যায়
যে প্রতিটি মা তার সন্তানের টিফিনবক্সে ভরে দেয় সবজি ও সুসিদ্ধ মাংস
যে প্রত্যেক মা জীবনের ভাল দিক আছে
যা টেলিভিশনের অন্ধকার থ্রিলার দ্বারা বিকৃত হয় নি
যে প্রত্যেক মায়ের অবসরপ্রাপ্ত পিতামহ এবং পিতামহী আছে যারা
হাঁটুর উপর নাতি-নাতনীকে বসিয়ে গল্প শোনাবে

যে প্রতিটি মা একটি মানুষ এবং তীব্রভাবে একজন নারী

এবং বিশ্বাস করেন
যে প্রতিটি মা স্বপ্ন দেখেন শুধু মা হওয়ার
প্রত্যেক মা পরিবারের জন্য তার সবটুকু দেবে
এবং তারপরেও নিজের সন্তানের জন্য রয়ে যাবে সবটুকু
যে প্রত্যেক মহিলা বাঁচবে অন্যের জন্য, কখনও নিজের জন্য নয়
যে প্রত্যেক মহিলা দেশের এবং অন্যের সেবা করবে নিরন্তর
যে প্রত্যেক মহিলা ঘুম থেকে উঠবে কাকভোরে, সবার আগে
প্রতিটি মহিলা রাতে ছ'বার ঘুম ভেঙে চিন্তা করবে
সে বিবেকের দংশনে ভুগবে যদি না যথেষ্ট দুধ উৎপন্ন করতে পারে
সন্তানের ইমিউন সিস্টেমের জন্য তা জরুরি
বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিরন্তর শ্রেণীবিভাগ করে চলেছে
বুকের দুধ খাওয়ানো  শিশু এবং অসুস্থ শিশুদের মধ্যে

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন
যে প্রত্যেক নারী স্বাভাবিকভাবেই গর্ভধারণ করে এবং প্রত্যেক মহিলা উর্বর হয়
যে প্রত্যেক মহিলা সুপ্রসবা
যে প্রত্যেক মহিলার মাতৃত্বের সাথে কর্মজীবনের ছন্দ মেলাতে পারে সহজেই
যে প্রত্যেক সন্তানহীনা মহিলা তার জীবন খালি এবং অসম্পূর্ণ হিসাবে অনুভব করে
যখন সঠিক সময় আসে, যখন জৈবিক ঘড়ির সংকেত আসে
সে যুক্তিসঙ্গতভাবে নিজের সন্তানের উপযুক্ত বাবাকে খুঁজে নেয়
যে প্রত্যেক মহিলার শুধুমাত্র তার গর্ভাবস্থা সম্পর্কে কথা বলতে চায়
প্রসবের পরে সে শেখাবে গর্ভরোধক বিদ্যা
যে গর্ভকালের তীব্র বেদনাকে স্বাভাবিক অবস্থা হিসেবে মেনে নেবে
যে হরমোনের পরিবর্তন আর মানসিক মেঘরোদ্দুরের খেলাকে উপভোগ করবে

যে প্রত্যেক মহিলা উপভোগ করবে তার জৈব কর্তব্য
যে প্রত্যেক মহিলার আচরণ শাসিত হবে তার প্রাথমিক জৈব কর্তব্যের নিরিখে
যে প্রত্যেক মহিলার অস্তিত্ব তার প্রাথমিক জীববিজ্ঞান দ্বারা শাসিত হবে

যে প্রত্যেক মহিলা একটি  সমস্যা হিসাবে এটি মনে করবে
যদি কেউ মাতৃত্বকে খুব বড় করে দ্যাখে
কেননা সেটা খুবই স্বাভাবিক
প্রত্যেক সমস্যা, আমায় বিশ্বাস করুন,
সরকার এবং মায়েদের দ্বারা সমাধান সম্ভব

প্রতিটি সুপারমার্কেট চায়
যে শিশুরা তাদের মায়ের সম্মান করুক
আর মাকে খুশি করার জন্য
৫০০ টাকার চেয়েও কম খরচ করে কিছু কিনে দিক
কারণ মায়েরা এটি দাবী করে
নিজের জন্য ক্রিম না কিনে শিশুর জন্য  কিনে নেয়
দই, কর্নফ্লেক্স বা মৌসুমি ফলমূল


এবং প্রত্যেক শিশু আপনাকে ধন্যবাদ বলতে চায়
তার অস্তিত্ব জন্য
একটি শিশুসুলভ ভয়ার্ত ধন্যবাদ
এবং বলতে চায়
প্রধানমন্ত্রীর কাছে
'আমি বেঁচে আছি। আপনাকে ধন্যবাদ'

( প্রথমাংশ)

(এরিক ডিকেন্সের ইংরেজি অনুবাদের মধ্যস্থতায় উষ্ণিকের সম্পাদনা বিভাগ কৃত বাংলা অনুবাদ) 

পুজোর কবিতা ১৩

Related image

ভেদ্যতা
               -অনিন্দিতা ভৌমিক 


আমাদের পথ দেওয়া হলো
পালক ছাড়িয়ে
দেওয়া হলো স্বাদের অধিকার
#
তাকে নস্যাৎ করি। সাপ্টে ছুঁড়ে দিই কাঁচা গন্ধ থেকে দূরে। তোমার লোনারক্ত থেকে দূরে। আর নতুন আখ্যান লিখে রাখে কেউ। কষ বেয়ে গড়িয়ে যায় উচ্চতার বিপরীতে।
অথচ স্বাদেরও তীব্রতা আছে। পুরনো অভিজ্ঞতার ভেতর গুঁজে দেওয়া আছে উদ্দীপনা। হয়তো এমনিই একটা দিন। নিষ্ক্রিয় ত্বকের উপর গুছিয়ে নেয় দু’টো ঠোঁট। ওপর পাতায় ফুটে ওঠা বিন্দু বিন্দু ঘাম।

(ছবিঃ এলিনা কোতলিয়ার্কার)

পুজোর কবিতা ১২



ডালিমফুলের প্রস্তাব
 
                          অরবিন্দ বর্মন

এই অব্দি ডালিমফুলের প্রস্তাব হয়েছিল--যে
প্রেত-প্ররোচনায়
টমেটোর লালে ডুবে আছে সামাজিক ওষধি
শুধু পত্রলেখার নাম আজ মানুষের
আমার যত সাম্য ঐখানে নীল শাখাপ্রশাখা
ঐখানে শাদা বরফের বাগানে
অতি-লৌকিক পাখির ঝাঁঝরা নলের ভেতর
অহেতু এই বিষহরী ভাষা যেন একটি ক্রিয়ারূপ
সাফল্য বলতে ভারত সরকার অধ্যুষিত এই রেলডাক
এখনো বুনোবীজ ও মেয়ে অনেকটাই বিস্ময় ভারী করে
অথচ মেয়েদের বাসিমুখে সমতুল
লম্ফমান যুবকের ঘাম ঝরে পড়ে
অতিরিক্ত কাঠের বাদাম এসে টোকা দিয়ে যায়
লোকাল ট্রেনের মতো শিশুদের চোখ

(ছবিঃ মার্তা বাদানো) 

পুজোর কবিতা ১১

Image result for abstract goddess painting

জ্যামিতি 
           -বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় 

যা চলছে  তা শুধু  চলচ্চিত্র নয়
আনাড়ি হাতে গাড়িও মাঝে মাঝে ঠিক পথে চলে
কিছুই থেমে পড়ার কথা নয়
ভুল কক্ষপথে যদি তোমার ভাবনাগুলো সরে যায়  তবু তা গতিশীল

 কারণ পৃথিবী ঘুরছে
পৃ  থি বী   ঘু  র  ছে
আমার পা থেকে ছিটকে যাচ্ছে জ্যামিতি

(ছবিঃ সুসান শ্যাভেলিয়ার)

পুজোর কবিতা ১০

Image result for abstract goddess painting

দেবীস্তোত্র
               -আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

১)
অন্ধকার গাড়িবারান্দা দিয়ে
নামতে নামতে পৌঁছে যাচ্ছ দরজায়।
যেকোনো ঝড়ের আগে যে নিশ্চুপ শান্তভাব
ঘিরে ধরে আমাদের, তারই সূত্র টেনে তুমি আওয়াজ করে হাঁটছ চটিতে,

যারা ভীষণ একা
এই পা ঘষার শব্দ কখনও সঙ্গ ছাড়ে না তাদের

২)
মণ্ডপ অন্ধকার, এদিক ওদিক পেরেক ছড়িয়ে…
তোমায় ভাবাচ্ছে শুধু এখনও তো প্রতিমা এলো না

প্রবল বৃষ্টিপাত
ঘরবাড়ি
বন্যায় ডুবেছে

দেরিতে আসবেন মা
পথ খুঁজে
অন্য পথ দিয়ে…

৩)
শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে চোখে পড়ে ক্ষেত…
দিগন্ত ছুঁয়ে আছে ধানের শিষ। ক্রমশ রঙিন
বদলাচ্ছে শিষের রঙ
সবুজ-হলুদ-বাদামি থেকে কালো

চাষার ক্লান্ত মেয়ে জল ছেঁচে ফিরে যাচ্ছে ঘর
আলো তার
চতুর্দিকে কী প্রচন্ড আলো…

৪)
চেতনা গভীর স্নেহ বাহুডোরে আজও তার ঘ্রাণ
মুঠোয় পুষ্প ভরে পাশে এসে দাঁড়ালেন দেবী
এ দেবী ফিজিক্স ব্যাচ, বুধবার সকালে শোনান
আমারই পাশের বেঞ্চ, দেবীপক্ষে বাড়ি ফিরে আসে

আকাশে অস্থিরতা; ঢেলে দেয় সিঁদুরে মেঘের
মৃদু কণ্ঠ কাঁপে তার তিরতির, বোধনের বাণী
এপাড়ে মানুষ সত্য প্রতারণা পর্দার ওপাড়ে
অথচ জন্ম থেকে ওকেই ঈশ্বর বলে মানি

(ছবিঃ জ্যাক ভ্যাঞ্চেট) 

পুজোর কবিতা ৯

Related image

আধো রঙ 
              -সম্পিতা সাহা

চোখে আগুন দেখেছি...
উড়তে দেখেছি মন, গেরস্থালির বায়না
আতঙ্কে উষ্ণতা বাড়তে দেখেছি...

দুটো হাত ঘেমে উঠেছে।
বরফসুমারি ঠোঁট, চিবুক...
চা'য়ের থেকেও ছলাৎ!

এখন সবটাই সাংসারিক।

আচ্ছা খুব স্বাভাবিক জীবনে ঋণ থাকে, না... স্নেহ?

(ছবিঃ এরিন লরী)

পুজোর কবিতা ৮

Image result for abstract goddess painting

বিহুস্বর
          -রাজেশ শর্মা 

এমন তার মৃদু বৈভব
জুড়ে দিচ্ছে স্বরে অ স্বরে আ
ঘন করে তুলো

তাহাকে মুগ্ধতা দাও
ফুলেল গামোছায় অভিবাদন কর

কপৌফুল! গোষ্ঠে গিয়ে ভুলে যাও তাকেই...

(ছবিঃ কার্লা গোল্ডবার্গ) 

পুজোর কবিতা ৭

Image result for abstract goddess painting


এবড়োখেবড়ো শব্দগুলো 
                               - নীলাব্জ চক্রবর্তী



ডিফেন্স-মেকানিজমের কথায়
ভারী হয়ে আপেলের ছায়া আসা
এইত্তো ভাষাটা
তখন এই বাষ্প তোমার ছিলো না তো কি
একবার শরীরকে সকাল ভাবো
ব্যবহার ভাবো
আর দেখো
জল-হাওয়া-স্মৃতির ভেতর
পাখিদের গাছজন্ম হচ্ছে
আঠা আঠা সহাবস্থান হচ্ছে
সংখ্যাদের কাছে লেগে থাকা যত দূরে
সবাই মিলে একটাই বোতাম খুঁজছিলাম
তপতপে লো-কাট কবিতায়
এবড়োখেবড়ো
দুয়েকটা শব্দ তবু
খাড়া খাড়া
দাঁড়িয়ে আছে এখনও...

(ছবিঃ রনি বিকার্ড)

পুজোর কবিতা ৬

Image result for durga abstract cubism

বোরোলীন
           -স্বাগতা সিংহ রায়

মনে হলো কেউ যেন ডাকছে-

ঘেমেনেয়ে অন্ধকার বাড়ি
পৃথিবীময় বিষন্নতা,নিঃশব্দ গুটি পায়ে

চুপে চুপে গেলাম;ওরা কাঁদছে!

চৌকাঠে ইঁদুরগর্ত,রঙচটা দেওয়াল
ড্রেসিংটেবিলের কোণটা ভাঙা

ওরা শক্তকরে ফোঁপাচ্ছে!

লালেঝোলে মেয়েটি গলে যায়
সবুজ টিউবে নরম চিকিৎসা।

সবুজটিউবে বোরোলিন গন্ধ,
ক্ষত শুকাচ্ছে-
             গর্ত বুজিয়ে গজিয়ে ওঠা রঙীন দেওয়াল।

(ছবি ঃ  হুয়ান গ্রিস) 

পুজোর কবিতা ৫

Image result for mother goddess abstract painting

ক্ষয়
           -পাপড়ি গুহ নিয়োগী

বহুজন্ম আগে আমরা ছিলাম সমান্তরাল
উপচে পড়া নোনা ঢেউ ধুয়ে ধুয়ে
ইদানিং সমস্ত সমুদ্রস্নান.
                        একা
                                নগ্ন
                                       গোপন

বিষন্ন স্বপ্ন... অদৃশ্য হয়ে যায়
                                                    এক সময়

ঘুমভাঙা মাঝরাতের  ভেতর শরীর ঘষে ঘষে
 জল বেয়ে বিছানায় গোলাপ বাগান তৈরী হয়
তারপর অগ্নিময় আঙুল পোয়াতি হয়ে ওঠে.....
 নেই,
                                         পুরুষ
                                                    প্রসবে রক্তপাত
                                                                   সন্তান জন্মও

শুধু যুদ্ধে ক্ষয় আর হাহাকারের সাদা স্রাব খসে পড়ে ......

(ছবিঃ রিকি অ্যাঞ্জেল)

পুজোর কবিতা ৪

Image result for mother goddess abstract painting

সুপারিকিলার
                      -অভ্রদীপ গোস্বামী



আজ থাক বলে লাফিয়ে নেমেছি জলে
কাদার স্নায়ু ও সন্তরনে
ভিজে গেল মন
প্রতিক্রিয়াহীন

আজ দূরে আছি কংক্রিটে ইঁটের পাঁজরে
জল নেই স্থল নেই
কেবল সামান্য আকুতি
ত্রানতহবিলে



এসো আজ একলা নাবিক
ওই তো তোমার ডিঙি নাও
জলথইথই এপার বাংলায়
যত খুশি আর্ত ও খর্ব মানুষ
জমা করো
জমা জলে ভেসে যাক
মশার লার্ভা কিম্বা অসুন্দর
ময়লা প্রকাশ



এসো ধান খাও চাল খাও
খাওয়া শেষে তাকাও আকাশে
বৃহত্তর পর্বত গহ্বরে
এতলাসের মানচিত্রে
আঁকা হোক ঝুলকালি
সঙ্গমের ফ্লাইং সসার।
মানবের জন্মদাগে লেখা ছিল
গতজনমের সুপারিকিলার।

(ছবিঃ অ্যালিসন জনসন) 

পুজোর কবিতা ৩

Related image

যদি বুঝে থাকো
                          -জ্যোতির্ময় বিশ্বাস


কোথায় কি রাখবে তুমি, সমস্ত এ'জায়গার। যদি বুঝে থাকো, যেহেতু ব্যথিত সবাই, সবারই রক্ত ঝরে, কমবেশি আততায়ী সবাই সংগোপনে―তাহলে ফিরতে রপ্ত হও। তোমার যদি এক কালজানি থাকে, তনুস্থান ধুয়ে রাখো। জেনো অবান্ধবের গন্ধ আগলে রাখতে নেই। খেয়াল রেখো চিনিনা বলেও কারা কারা অপূর্ব দাগ দিয়ে রাখে। কার কার চোখের বহুত থৈ, তারায় তারায় মিথ্যে। এখানে অপেক্ষা সম্ভব নয় আর, যদি বুঝে থাকো...

(ছবিঃ ফাল্গুনী দাশগুপ্ত)

পুজোর কবিতা ২

Image result for durga abstract painting

পুতুল সিরিজ
                   -সব্যসাচী সান্যাল


ঘুমিয়ে পোড়ো না, তা’হলেই তোমার ভেতর
জেগে উঠবে পৃথিবী, তার ফিনফিনে উপগ্রহ
ফুটবলমাঠ, আর্মস্ট্রং, টেকো পাদ্রী, দালাল, ফতুর
এ’কথাই পুতুলকে বলেছি—
‘পুতুল! জলের শব্দ! দেবী তুমি! ন্যুব্জতা সবার’
--বলেছে নবম বসু উৎপলকুমার
অথচ পুতুলের কোনো হেলদোল নেই
দ্বিধা বা সংকট, সে শুধু নিস্পলক...
তার বুকেই টকে ওঠে গাজলা গাজলা দুধ, তিনপুরু সর
###
ঘুমের মধ্যে পুতুল বুঝেছে--
যা হারিয়ে ফেলতে পারো, চোরের আওতায় রেখে দিতে পারো
অনায়াস, ওটুকুই জীবন। বাকীটুকু অপেক্ষা, জানলার সটান
গরাদ যে’ভাবে পাশাপাশি অপেক্ষা করে যায় অপর গরাদের...

(ছবিঃ ভাবনা চৌধুরী) 

পুজোর কবিতা ১

Image result for durga abstract painting

সংশপ্তক
            -নীলাদ্রি বাগচী

জুতো কোম্পানির জন্য খুঁজে পাওয়া পায়ের আরাম
মেঘ হয়ে এসেছে এখানে...

আজ সমস্ত দিন পাহাড়ের গল্প শুনে কেটে গেছে। অসংলগ্ন ঝাউ আর নানান রকম অর্কিডে দিনটাকে বিন্যস্ত করছি এখন। কারণ এখন মেঘ। প্রাকৃতিক জলসেচে সমস্ত দিন আজ বেড়ে উঠবে শস্যের সবুজে....

কমনীয় শব্দবন্ধে নিজেকে ভূষিত করি। এইদিন এরকমই হয়। প্রাচুর্য্য ও প্রলোভনে নিজেকে তছনচ করি। শালগ্রাম ছুঁয়ে আসা বাতাসের কানে কানে বলি, ভালো রাখো। পাম্পঘরে পৌঁছে যায় এইসব কানাকানি। হয়তো বা আরও দূর যায়...

জাতীয় পতাকা মোহে নষ্ট হয়ে গিয়েছে যে দেশ তার জন্য তর্পণের দিন এইভাবে সকাল পেরোয়।

বর্ণনা দীর্ঘ হলে বাহারী পাতায় রোদ আসে। অবসাদ প্রতিশব্দে নিজের আঙুল দেখি। দীর্ঘ, ক্ষীণ, আপেক্ষিকে সমস্ত অসুস্থ ধরে আছে। ভাবি দিন, সাধারণ, নিশ্চয় পার হবে। হয়তো শব্দ ফিরে আসবে, হয়তো নয়... তন্দ্রাতীত মোহের নিগড় ভেঙে হয়তো যতিচিহ্ন পরবে...
হয়তো অন্তিম পড়বে সমস্ত শ্বাসাঘাত স্তব্ধ করে দিয়ে.......

(ছবিঃ ফাল্গুনী দাশগুপ্ত) 

Sunday, 10 September 2017

আশ্চর্য্য ধারাবাহিকঃ হারিয়ে যাওয়া নব্বই - প্রথম পর্ব

Image result for hide and seek abstract painting



প্রান্তিক রুদ্র পতি
                                                         -অনিন্দ্য রায় 

তখন নব্বই, আমাদের নব্বই দশক। আমরা কজন লিখতে শুরু করেছি, কজন বন্ধু । যেই কবিতা লেখে, বাংলা কবিতা লেখে তখন সেই আমাদের বন্ধু;  স্বরূপ, উজ্জ্বল, শুভব্রত, জয়দীপ, আমি, প্রদীপ – কত যে নাম, এই শহরে বন্ধুত্বের, কবিতার এক ভিন্নতর যাপন তখন একটা নেশার মতো আমাদের চোখেমুখে।
 তো, একটা ছেলে পাশের জেলা পুরুলিয়া থেকে একদিন এল স্বরূপের বাড়ি। বাঁকুড়ারই এক কলেজে পড়ে। লাজুক, মুখ নামিয়ে কথা বলে। রুদ্র,  ও লেখে রুদ্র পতি নামে। আরে, এ সেই রুদ্র পতি, পত্রিকা খুললেই, যে কোনো বাংলা কবিতার কাগজ খুললেই তো এর কবিতা, হ্যাঁ, থাকবেই। একেবারে নিজস্ব এক লেখার ভঙ্গি, একেবারে নিজের ভাবনা লেখাগুলিতে।
 ওর গ্রামের নাম রখেড়া, আমাদের জেলার সীমান্তে। সেই গ্রামজীবনের কথা, গ্রামের মানুষগুলির কথা, তাঁদের বেঁচে থাকা, চাষবাস, দুঃখ-সুখ, এক আশ্চর্য পৃথিবী ফুটে ওঠে ওর কবিতায়। আর এক সরল অথচ গভীর, আবেগতাড়িত অথচ প্রশান্ত, আবহমান অথচ নতুন উচ্চারণে বাংলা কবিতার পাঠক তখন আক্রান্ত।
 সেই রুদ্র পতি, এত লেখে, এত বেশি বেশি লেখে, এত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জীবনকে দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই। প্রতিনিয়ত কবিতায় ভোগা সেই রুদ্র আমাদের বন্ধু হয়ে উঠল।
 প্রকাশ পেল তার কবিতার বই, প্রথম কবিতার বই ‘প্রান্তিক চাষা’। ২টি টাইটেল পেজ সহ ১৮পৃষ্টার। সিন্ধুসারস প্রকাশন। দাম ঃ লেখা নেই। হ্যাঁ, বইটিতে দাম ও প্রকাশকালের কোনো উল্লেখ নেই।
 কি বলতে চাইল সে? কোনো অর্থমূল্য ও সময়চৌহদ্দি হয় না কবিতার! ( যদিও জানি যে বইটি বেরিয়েছিল ১৯৯৩-এ )
রচনাকাল ঃ ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ ।
উৎসর্গ ঃ নারায়ণ মুখোপাধ্যায়
  অনির্বাণ লাহিড়ী
এই দুটি নাম বাংলা কবিতার কোন্‌ ঘরনার প্রতি তার আকর্ষণ তা বুঝিয়ে দেয়।
দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় বিভাব কবিতায় সে লেখে
“ ওই তো কপাল দ্যাখো
 দারিদ্রের রেখাগুলি আঁকে আর বাঁকে

 আহা ! ওই রেখাগুলি যদি নদী হতো

আজও তোর চোখে মুখে গ্রামের ছায়া পড়ে বলে
ধানফুল জড়ানো
চিঠি আসে – যার ভেতর বাহির একাকার ।

আজো গ্রাম আছে তাই সরলতা ।”
এমনই তার কবিতা, এমনই তার ধানফুল, তার চিঠি, তার গ্রাম, তার সরলতা।
তার কবিতা।


“ পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছো ;
 পুকুর আয়না হয়ে গেছে, অই দ্যাখো
 তোমার প্রতিফলিত ছায়া বাঁশবনের পাতায় পাতায়

 চাঁদ উঠেছে অই, গোল থালার মতো চাঁদ
 আজ আলোড়ন ... পূর্ণিমা রাত্রি
 দেখি, পুকুর ফিরিয়ে দিচ্ছে চাঁদের বিম্ব
তোমার সিঁথি ও কপালে ।

 তোমার আজ পুরুষের কথা মনে পড়ে, পড়ে ?”
        ( বিরহ )
এই তার কাব্যভাষা। এক অচঞ্চল চিত্রকল্পের মুখোমুখি দাঁড় করায় পাঠককে। কোলাহলহীন, স্তব্ধ ।
কৃষিভিত্তিক গ্রামগুলি, আমাদের দেশে, নিতান্তই প্রকৃতি নির্ভর। চাষআবাদের জন্য আকাশের বৃষ্টির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। আর গ্রীষ্মের রুক্ষতা, শ্রাবণের ঝরঝর মানুষের শরীরের যেন মিশে যায়, ঝড় বা দাবদাহ, বন্যা বা খরা তার দেহের ভাষা হয়ে যায়।
“ অথচ আজ শ্রাবণ যায়
 এই মাঠ হল না পিচ্ছল

শুধু দেখি আমাদের চোখগুলি
হয়েছে পিচ্ছল”
( অনাবৃষ্টি )
দেহতত্ত্ব, এই মাটির, মানুষের অন্যতম সম্পদ তার লেখায় এভাবে মিশে যায়। লোকায়তের ঘরেই তো তার বসত ।
“ টুসুর গানে আজ স্রোত ছেড়ে দিচ্ছি
 মানুষের স্রোতে আজ
মাঠ ছেড়ে মেলাতে চলেছি ।

নদীর ওপারে মেলা, কাঁসাই নদীতে
আজ হাসি, সমস্ত বিষণ্ণতাগুলি
 ভেঙে গেছে ... ; মেলায় মহুয়া খাবে
 গরম জিলিপি খাবে তামাটে মানুষ ।

আজ স্রোত, জাগরণ এবং বেঁচে থাকার আনন্দগুলি
হঠাৎ কীভাবে যে মেলায় গড়ালো !

পৌষের শেষ দিন, আজ শুধু মেলায় অবগাহন ।”
সে সন্ধান করে তার শেকড়ের, লেখালেখি তার কাছে তাই নিজেকে খুঁজে পাওয়ার মাধ্যম। নিজের সাথে কথা বলার আড়ালটুকুই কবিতা। সে ভনিতাহীন, সে অকপট, অন্তর্মুখী ।



“চাষ করি কেটে খাই ।  এ বছর শ্রাবণ বিমুখ
তাই দারিদ্র রেখার ওপর দিয়ে হেঁটে যাই
শহরে জন খাটি, এ জনমে নিজ কর্ম করি ।

গত বছর ধান বিক্রি করে শহর থেকে
বাবার ধুতি মায়ের কাপড়
কিনে এনেছিলাম

এ বছর স্বপ্নে বহ্নি, তবু বেঁচে থাকি । স্বপ্নে সপ্‌নে”
( প্রান্তিক চাষার ছেলে )
 কবিতা মঞ্চের আলোকবৃত্ত থেকে দূরে এক প্রান্তিকে, নাগরিক জটিলতার রৌদ্র থেকে দূরে এক সারল্য ছায়া্য, সফলতার বিকৃত  উল্লাসের বিপরীতে এক চুপকথায় নিজেকে, নিজের অবস্থানকে চিহ্নিত করে সে। হ্যাঁ, প্রন্তিক চাষা, এই পরিচয়ে সে কবিতাকে স্পর্শ করে।
 প্রান্তিক যাপনের ভেতরে যে ব্যপ্ত গভীরতা তাতে মগ্ন থাকে সে।
এত এত লিখে হঠাৎ সে কবিতা থেকে সরে যায়। ফিরে আসে। আবার এক নিশ্চুপ আঁধারে ডুবে যায়। কোন অভিমান তাকে ডেকে নিয়ে গেল !
 আই টি আইতে কারিগরি শিক্ষা নিয়েছে সে পরবর্তীতে। এবং শিক্ষকতা তার পেশা।  প্রকাশিত হয়েছে আরও কাব্যগ্রন্থ, ‘লেদ অথবা অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন’ ( ১৯৯৩), এ বছর শ্রাবণ ভালো ( ২০০৪), বেকারের কবিতা ( ২০০৪ ) ।
 কিন্তু তার এই প্রথম কবিতার বইটি, কৃশ ও তীক্ষ্ণ কবিতার বইটি তার আইডেন্টিটি হয়ে রয়ে গেছে আমার কাছে।
 আমার সাথে তার যোগাযোগ রয়ে গেছে, বন্ধুত্ব রয়ে গেছে। এক বছর, দু বছর পর দেখা হয় কখনো, কথা হয় কখনো।
 শুধু কেউ কাউকে চিঠি লিখি না আর।
 তার ঠিকানা, সেই পঁচিশ বছর আগের মতোই মনে আছে আমার।
রুদ্র পতি
গ্রাম ও পোস্ট ঃ রখেড়া
জেলা ঃ পুরুলিয়া
 ডাক সূচকঃ ৭৩২১৩০
আপনি, পাঠক, এই ঠিকানায় চিঠি লেখেন যদি, প্লিজ, একটু বলবেন সে যেন কবিতায় ফিরে আসে।


(ক্রমশ)

ছবিঃ স্টালমান

আশ্বিনের কবিতা ১৬

Image result for abstract painting latvia

নিশাদল 
            - তন্ময় রায়

লুকিয়ে ছাই করার মত দিলে এই চ্যাপ্টারে। গদির নিচে গায়ের গন্ধ তোলা আছে। পিন ফুটিয়ে তাকে ছায়া দেওয়ার ধ্রুবক দিনক্ষণ, সামনে এলো। তার নীচে দাঁড়িয়েছি...

১.
ঠায় তোমার গানের লিস্টে পরে আছি
বোতল উড়ে যাচ্ছে
                  পরে থাকার ভেতর
ঝামা বেঁধে দিই গানের খুঁটে
কালসিটে আমাকে অন্ধ করে

২.
আমার অন্ধের বুড়ো আঙুল
সেই ছায়ায় পাকছে
প্রিয় শব্দের মতো তাকে মুখে নিই
বৃষ্টিমাপক তেল
চাটসমগ্র খুলে ধরে

(ছবিঃ গেরহার্ড রিখটার) 

আশ্বিনের কবিতা ১৫

Image result for abstract painting latvia

খোঁজ 
        -জয়শীলা গুহ বাগচী

 এবার তো খেলা নয়
 দিনকাল অগুন্তি হলে
 তরফ ভাগাভাগি হয়
 একের ভেতর
 স্ব এর মধুর
 মধুর মানে দিনআনা ভায়োলিন
 একটা আচমকা শুধু
 রক্তের ভেতর কেঁপে ওঠে
 স্পষ্ট হয়ে ওঠে
 আমি মেজর হই
 বাজতে থাকে সন্ধ্যা
 বাজতে থাকে জীবনভর
 ওকে বলি তীব্রতার গল্প
 ওকে বলি কলম ডুবিয়ে নেওয়া
 এক আকাশ মাথার গল্প
 ও অজস্র কে ঢেলে দেয়
 আমি নিজস্ব হতে চেয়ে
 এক পরিয়ে দিই গলায়

একের চেয়ে উচ্চতা নেই
তাই কেমন ভয়ের মধ্যিখানে
একের বেশীকে খুঁজি
কোটি বছরের একলাটি
শান্ত নিরুদ্বেগ ঘুরে চলেছে
তাহলে একের ঘরে
যে একলাটির গুনগুন
তাকে আড়াল কেন
কেন সেইসব দিনে
ঠাণ্ডা প্রপিতামহ
ফাঁসের কারুকাজে জমাট হন
আমার এক নেই বলে
আমিকে আমরা বলি
আমরা জল হই
স্থল মরুত ইত্যাদির মাঝে
বাহুল্যের বাসর ঘনাই

(ছবিঃ যুরি পাইসার) 

আশ্বিনের কবিতা ১৪

Image result for abstract painting latvia

তবুও তো ছিলে 
                    -মণিজিঞ্জির সান্যাল 

        তবুও তো ছিলে
 দেখা হোক বা না হোক,   কথা হোক বা না হোক
  তবুও......
মনে  হতো এই তো তুমি আছো, আমার কাছেই
আজ তুমি অনেক দূরে, বহু দূরে
চেনা গন্ডীর পথ ছাড়িয়ে আমার চোখের আড়ালে
কোনোদিন আর বলবে কি 'কেমন আছো ?'
 ' তোমায়  কি মিষ্টি দেখাচ্ছে ! '
জানি আর বলবে না কোনোদিন
তোমার স্বর ওই দূরে বহু দূরে,
সেই মেঘের দেশে
যেখানে তুমি ভাসতে চেয়েছিলে,
আমায় বলতে  ' পাহাড় আমার খুব ভাল লাগে জানো ?কিম্বা বৃষ্টির কথা শুনেই বলতে
' আঃ ভেসে চলে গেলাম তোমার  বৃষ্টির কাছে '
আমি বলতাম ' মেঘ হয়ে উড়ে এসো আমার কাছে ,
বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দাও আমার অভিমান '
তুমি বলতে 'এই তো আমি, তোমার পাশেই '
কার কাছে আর এসব কথা বলি বলতো ?
এই বৃষ্টির কথা,
আমার পাগলামোর কথা,
তুমি তো সব অভিমান জড়ো করে চলে গেলে অনেক দূরে
বহু  দূরে ...............

(ছবিঃ কাও তুয়ান)

আশ্বিনের কবিতা ১৩

Image result for abstract painting latvia

প্রিজম
            -পাপড়ি গুহ নিয়োগী

মাঝ রাতে শব্দ যখন আগুন লাগায় আমার মানচিত্রে। তখন শূন্যতা জন্ম দেয় কলম ঘষে ঘষে। গোপনে চলন্ত ট্রেন হয়ে ছুটতে থাকি খোলা শব্দের মাঠে।যেখানে নৈঃশব্দ স্নাত হয়ে যায় তোমার নামের ভেতর।শুধু ব্যারিকেড সাজিয়ে বসে থাকি, তবুও খাতার বুকে কোন শব্দযান নেই।

অথচ জীবনের অন্য প্রান্তে অনায়াসে চোখ আটকে যায় নীলে।

(ছবিঃ মার্ক রোঠকো)

আশ্বিনের কবিতা ১২

Image result for fernando torterolo

জিনের আত্মকথা
                          -অভিজিৎ মহন্ত


তবু যেতে চাই ফিরে আসা দরজায়
শরীর জাপ্টে বেঁধে থাকে সরীসৃপ
রাত বারোটায় এক্সেল ভাঙে ঘরে
তুমি গিরগিটি হলে শুধুই বদলে জিন...

শুধু জাত – প্রতিবাদ ভিন্ন যুগের চাকা
রাতের পথে  তারাদের উকি উকি
আমার চিবুক ভেজে ঘামের অজস্র স্রোত
টুকিটাকি গল্প হয়নি রাতের শেষে |

শূন্য আমি শূন্য চৌকাঠ
একলা বসে আমার মা রাঁধে
তারপাশে যদি মেঘের মত ছাতা
পারবে তুমি বৃষ্টি হয়ে সাথে ,

আমার বাড়ি আমার মাটির পাশে
শূন্য একতারা ...বাউল নিত্য দিন
কেশব মজুমদার ফিরে আসুক একবার
ল্যাম্পপোস্ট থেকে ছিটকে আসে জিন

আমরা শুনেছি উদজান পথের ভাষা
একটি ঘড়ি অসময়ে ঢং ঢং !!
আমরা সাইড ব্যালেন্স গুলি হারিয়ে ফেলেছি কবে
শুধু  বৃষ্টি আসে শরীর লোমের পাশে |

একটি কাঠ ধোঁয়াশা হয়ে ওড়ে
একটি নদী বাষ্পে নিরাকার
কবর ফেটে একটি দেহ যদি
ব্যাপন প্রক্রিয়ায় উড়ে যেতো মহাকাশ

( ছবি ঃ জো সুযি) 

আশ্বিনের কবিতা ১১

Image result for abstract painting bolivia

পদক্ষেপ 
               -অনিন্দিতা ভৌমিক


তার কথা ঘিরে থাকছে আমাকে
বিঁধে থাকছে আঠারো মিনিট সময়
#
অথচ ভবিতব্য তো একটু হতেই পারতো। হতে পারতো একটা গোল বারান্দার অজুহাত। এলোমেলো চলনে ছিটকে আসা ঘন চটির কাদা। ভাষার গোড়া খুঁচিয়ে লক্ষ করি, তার বেগুনি পাতায় ক্ষিপ্রতা। তার ঘেমো গায়ে জল, তার জলের গায়ে দু’মুঠো বচন ভাসে। বুদবুদ শব্দে মিলিয়ে যায় বাহিরে অন্তরে...
আলগা গল্পে এসে কমতে থাকে বাতাসের অনুপাত। চোখ সয়ে সয়ে তার অবজ্ঞা মনে পড়ে। সারাবছর মনে পড়ে তার ভঙ্গি, তার পেশাদারিত্বের কথা। যেখানে ওষ্ঠদ্বয় মিলিত। যেখানে এক হাতে ছুরি আর অন্য হাত বরফকুচির ভেতর।
মৃদু আদেশে ঘাপটি মেরে থাকে।

( ছবিঃ উইলেম দে কুনিং)

আশ্বিনের কবিতা ১০

Image result for abstract painting estonia



হয়তো  রোববার 
                            -প্রদীপ চক্রবর্তী

এক /

বৃষ্টি মিশেল....

দুপুরে রসুই  গন্ধ
সেদিন  কিছু   অন্য রকম       বরখা...
         
############

তার মেঘলা  মুহূর্ত -   পহর  ঘ্রাণ
লাউপাতা মুড়ে  নারকেল  কোৱা অল্প  চিনি  নুন  হলুদ  গুঁড়ো
রাইসর্ষে ইলিশ  যেন পোয়াতি পেটের সোহাগ  মাখানো

#############

শব্দে   এটুকুই  ধরতাই ...এটুকুই  শ্বাশত  বাসনা  কুসুম
কেয়ূর  -  চন্দন  কিরণমত্ত তিমিরে  গাঢ়  স্বাদ  -  বিলাসিনী
ফি  রোববার দুপুরে তপন  থিয়েটার  কিংবা   বিলকিশ বেগম  ...

############

কোথায়  সেই হারানো মুহূর্ত  শঙ্খলাগা ,
                                            কাঙাল  মালসাট ?
আদবে ছলনাময়
প্রসাধনে  দেহটি  শোয়ানো  ছিলো...

সেদিন বৃষ্টি মিশেল পঞ্চশির নাগদেবতার শব্দ, ব্রহ্ম  নির্যাস
কলাই করা থালা থেকে একটু একটু চুমুক  দিয়ে খাও
দেশ বলো নদী কিংবা গ্রাম  ...
লহমায়  আজ ভিজিয়ে  দেয় অলৌকিক  বৃষ্টি উৎসবে
গহ্বরে  মিলিয়ে  যায় স্বর  ..., স্তব্ধ শ্বাস ,
                               নিমেষের আদিখ্যেতা...
কুহকিনী পটুবাক ...বিনষ্ট বিষের  লিবিডোকে
নাশকতায় বাজাবে  না আর ...
            মৃদু অর্গানে  বাজাবে না কেন  ?...

দুই/

শবরী জমে  গেলো আগেকার | শুধু  শবরী নামের  রকমারি  গন্ধ   রটে যাচ্ছে...

############

ধ্বংসের  প্রক্রিয়া  শুরু  | পীড়ন  হলো    রৌদ্রকণা |  আওপাতালি ভরা  দূর পরাহত  পরকীয় ডানার নস্যাৎ

############

পেছনে  গোলাপীবালা  বাড়ি | রোববারের  গ্রামোফোন আঁকা দরজা  |   মশলাধোয়া জল  | যৌনস্বাদ সে ইশারা  চেটে  নিতো  জিভ  ...

#############

ও  কেবলই জ্বরাতুর  | জলে অধীর  অথির নয়ন রুচি  চক্র  | তোমাকেই  দেখবে  বলে হঠাৎ  ভীষণ  ফাঁকা  পরিত্যক্ত  রাস্তার  উপর  আজ দাঁড়িয়ে  আছে

#############

হাতের  বাঁধটুকু আলগা  হয়ে পড়ে অসাড়ে  ...
টের পাই আরেকবার ,
কায়া সাধো কায়া সাধো মাদল  বাজছে
             আর রোববার হতে  চাইছে  না ...

(ছবিঃ মার্ক চ্যাডউইক) 

আশ্বিনের কবিতা ৯

Image result for abstract painting estonia

শিলালিপি
                 -তন্ময় ধর              

সে উত্তাপে ঈশ্বর খুব আস্তে আস্তে হাঁটছেন। শব্দের শুকনো পিপাসার ভেতর ফেনার মতো তুমি প্রতিবিম্ব ভেঙে ফেলছো। জলের ভঙ্গিমা থেকে খুলে যাচ্ছে ভুলে যাওয়া জীবাশ্মের রঙ। স্বাভাবিক মাংসের শূন্যতা থেকে পর্যটকের গোলাপী ভাষা খুলে ফেলছো তুমি।

ঈশ্বরের লাফ থেকে বর্ণপরিচয় শিখছে জল। স্বরবর্ণে বড় দীর্ঘ নদী ও বালিহাঁস। আর ব্যঞ্জনবর্ণের জন্য ছুরি, মশলা ও আগুনের দিকে আমরা একসাথে হাত বাড়িয়েছি। ভূতত্ত্বের নীচে জমা হচ্ছে দুধ, রক্ত, জন্ম ও মৃত্যু। নিঃসন্তান এক গুহার ভেতর ঘুম আসছে আমাদের জন্য। 

ঘুমের ভেতর আমরা ভুলে যাচ্ছি মুখে লেগে থাকা আলো, শাকভাত, মিষ্টান্ন ও ঘষা পাথরের স্বপ্ন। শর্তের কাহিনিতে সতেরো হাজার বছর ধরে স্থির হয়ে আছে চোখ, এঁটো হাত, আলজিভ, কোষপর্দা। আশ্বিনরঙা জলের ওপর অপেক্ষা করে আছে প্রথম শিকলের শব্দ...   

( ছবিঃ ওমর ওবেইদ) 

আশ্বিনের কবিতা ৮

Image result for abstract painting romania

পুতুল সিরিজ ১৪
                 -সব্যসাচী সান্যাল 

সে মৃত্যু, সে ভদ্রমানুষ, তার কালচে সবুজ নেকটাই
সে হাসপাতালের জানলা গ'লে এক ঝলক নুসরত
ফতে আলি খান। মেদিনী তার বৌ, কটা চোখ
ভারী মাই, কোমরের থাকে ডায়নামো...
###
পুতুল অপেক্ষা করে
কে তার ভাতারের হাত ধরে টেনে নেবে
ডাঁটো ও ভালগার জনারের ক্ষেতে, আর সে লম্বা
আঙুলে আঁকড়ে ধরবে বিছানার চাদর
অথচ শান্তি—
রোঁয়ায়, চামড়ায় গেড়ে বসা ফিতেয়, বেল্টের দাগে
খুলির ভেতরে ঢেউহীন জল, জলে চাঁদ
ঠান্ডা ফসফরাসের গোলা...

আর শুধু ঘুম ভেঙ্গে একবার ডেকে ওঠা কাক
#
পুতুল আমাকে ভাঙ্গে
সে'ই মেরামত করে।-- নেহাইয়ে শুয়ে
দেখি আকাশ এক বিপুল হাতুড়ি, পুতুলের
ছোট্ট মুঠিতে তার প্রকান্ড হাতল...

( ছবিঃ রোমুল নুটিউ) 

আশ্বিনের কবিতা ৭

Image result for abstract painting romania

আত্মগোপন
             - অভিশ্রুতি রায় 

 পুরোটা গড়ে তোলার আগেই
হেরে যাচ্ছি দেওয়ালের খসে
 পড়া থেকেও বেশি করে

ওঠার চেষ্টায় বালির গন্ধটা ভারী হয়ে উঠছে ক্রমশ

আমি আটকে থাকতে পারছিনা কেরোসিনের অবাধ্য গলনাঙ্ক ধরেও

পিছু পিছু এই পিছলে পড়া

আমি শক্ত হয়ে নেই আর
তাই তরলের রেখা ধরেই এই আত্মগোপন

আমি জীবন্ত হতে পারবোনা
তাই  জীবাশ্ম নামেই বেঁচে আছি তোমার পাললিকে

(ছবি ঃ কনস্তান্তিন ফ্লোন্দর )


আশ্বিনের কবিতা ৬

Image result for abstract painting portugal

হঠাৎ আলো নিভিয়ে দিলাম
                  - অনিন্দিতা গুপ্ত রায় 

খুব জ্বরের মধ্যে ক্ষমাপ্রবণ হয়ে ওঠা দুপুর থেকে
গড়িয়ে নামলো এমন এক অবজ্ঞা যে
নেই করে দিতে কোনো কষ্ট হলোনা আর এযাবৎ
মিথ্যে স্তোকবাক্য, পরস্পর বিরোধী যাবতীয় আলোছায়ার চাতুরি
এখন আর কেজো কথায়
জিভ শুকিয়ে বা চোখ ভিজে উঠছে না
একটা রাস্তা এমনভাবে পড়ে ছিল আড়াআড়ি
পাশ কাটিয়ে যাওয়া মানে মৃত্যুস্পর্শ আঁকা মনে হত
সে কি আসলে খোদাই করা হাসিটি
প্রকৃত নিরাসক্তি ঋতুবদলের মধ্যে রঙ ধুয়ে নিচ্ছে
সীমাবদ্ধতার অন্ধকারে অন্যরকম তুমি
যাকে ফেলে যাচ্ছ ভাবছ সে তোমাকে
অনেক তফাতে রেখে হাততালির শব্দে মিশে আছে ভিড়ে

( ছবিঃ হুলিও পোমার ) 

আশ্বিনের কবিতা ৫

Image result for abstract painting thailand


বিশ্রাম-গভীর চোখ 
                      -হাসান রোবায়েত


যদি শস্যের নীলিমায়
তোমার সন্তান-চোখ
ফিরে পায় স্নানঘাট, দুকূল
 শঙ্খের ধ্বনি

ঐ অতিধীর বনে
গুল্মতাড়িত মেঘ উড়ে গেছে
মন্বন্তরে—
যে যায়—অদৃষ্টের হাহাকার
 তাকে ফেরায় জন্মধূলায়!

পথের এতোটা শেষে, আজও
চলে যাওয়া আছে অগ্নি ও
অধিগমনের দিকে—

( ছবিঃ মো টুনকে )

আশ্বিনের কবিতা ৪

Image result for abstract painting thailand

প্রতিবর্ত
         -বেবী সাউ 

অভিমানে খাট ঘুমিয়ে পড়েছে বলে
আলো মৃদু সুরে গুছিয়ে তুলছে
এঁটো বাসন আর খুন্তির টুকিটাকি

দূরে এন এইচের শব্দে গাঢ় হচ্ছে
বিকেলের যাতায়াত
ভুলে যাওয়া লকারের চাবি

স্রোত চিনি না
পাড় চিনি না

কালপেঁচার ডানায় ভরে আছে
জন্মান্তর ক্ষত চিহ্ন

পড়ে আছে

( ছবিঃ এনজো মোদোলো) 

আশ্বিনের কবিতা ৩

Image result for abstract painting thailand


নাট্যরূপ
             -অভ্রদীপ গোস্বামী 

বহুদিন পর দেখা হলে
ঝুঁকে পড়তে শুরু করো তুমি
তোমার শরীরী পোশাক ভুলে যায়
সূতো বানানোর সহজ নিয়ম

আমি তোমাকে দেখি
কাছাকাছি আসি বা আসি না
বহুদিন পর দেখা হলে
কাছাকাছি হাতের তালুরেখায়
খুঁজি বোধহয় খিলি পানের সোহাগ
লিপি ফুলের গন্ধ আদর


বহুদিন পরও যেদিন
তোমার সাথে দেখা হয় না আর
আমি ঘরে ফিরি
বন্ধ করি কাঠের দরজা
দেখা আর হবে না কোনদিনও জেনে
সূতোর বদলে তুলোয় ভর্তি করি
সমূহ গুনাহ। খোলাচুল।

( ছবিঃ প্রাচা যিন্দী)

আশ্বিনের কবিতা ২

Image result for abstract painting iraq

উপাসনা 
           - বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় 

অপেক্ষা খুলতে খুলতে এক সময়
শ্যাওলা ধরা আঙুলে  উঠে আসে  চুড়ির শব্দ
নূপুরের প্রতিবেদন
আর ধুলোট চোখে নদীপথের ইশারা ।

অন্ধকার কাদা হয়ে শুয়ে আছে ঘুমে
তাকে জাগাতেই হবে আজ
সে জাগলে  কয়েকলক্ষ প্রজাপতি উড়ে যাবে বারান্দায়
সে জাগলে স্তব্ধ নিঃশ্বাসের পাশে  একটি নক্ষত্রতিল ফুটে উঠবে
সে জাগলে চোখের সমস্ত দিব্যতায় টুকরো টুকরো হয়ে যাবে
চশমার অব্যর্থ আয়োজন

আমি  অনন্তকাল দাঁড়িয়ে আছি অপলক ।

(  ছবিঃ গাসান গালিব )

আশ্বিনের কবিতা ১

Image result for abstract painting iran


নির্বাক
     -রঙ্গন রায়

চুপ করে বসে আছো পাশে
অনেকক্ষণ কথা বলার পর এমন হয়
কথা খুঁজে পাচ্ছিলামনা আমরা দুজনাই,
নির্বাক এগিয়ে যাচ্ছে বাস -
দুপুরগুলো ঢুকে পড়ছে পাখির ডাক সহকারে ,
দুটি শিশুর কাদামাখা শরীর পেরিয়ে গেলো এইমাত্র
টিউবওয়েলের পাড় ...
একটা - দুটো খুচরো দৃশ্য পেরোতে পেরোতে
ভাদ্রমাসের দূর্গা দেখে
মাটির সাথে কথা বলা শুরু করলাম।

(ছবিঃ তারানে ইব্রাহিমি)