Tuesday, 16 June 2020

প্রাবৃষার অনুবাদ কবিতাঃ তাজা ক্রমবার্গারঃ স্লোভেনিয়া

Taja Kramberger: Pesmi univerzitetne umorjenke | Dnevnik

মানুষের উৎস হিসেবে থাকার জন্য 

আলোর উৎস হিসেবে থাকা, যখন ওরা তোমায় অবজ্ঞা করে চলেছে
আর দ্রবীভূত করে দিচ্ছে স্বাধীন শৃঙ্খলের ভারী শব্দে
মিষ্টি জলের সম্পদে।
আলোর উৎস হিসেবে থাকা, যখন ওরা তোমায় গিলে ফেলার চেষ্টা করছে
গহন রঞ্জন-রশ্মির সাহায্যে তুমি দেখতে পাচ্ছো ক্ষুধার্ত পিরানহা মাছেদের ব্লাডার
স্রোতের ভিতর তাদের গভীর চলাচল।
আলোর উৎস হিসেবে থাকা, যখন ওরা তোমায় শূন্যতায় ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করছে
রাত্রির সমস্ত আলোকস্তম্ভে ওই অন্ধকার প্রচ্ছায়া, যখন
স্থিতিশীল বাম অংশে থেমে গিয়েছে গোচারণ
ডানে পূর্ণ রাত্রির অন্ধকার।
আর মধ্যভাগের কালো একটি রঙ
তাড়া করেছে আমাদের নতুন কাজের স্রোতকে
যাতে ওরা আলোর দিকে স্বার্থপরভাবে যেতে পারে।
একটি ভরন্ত ঘরে বোধগম্য এক ফাটল হিসেবে থেকে যাওয়া
মানুষের সামান্য ছোঁয়া-লাগা সামান্যতর এক শক্তিপ্রবাহে।


( তাজা ক্রমবার্গারের জন্ম স্লোভেনিয়ার লিউব্লিয়ানা নগরীতে, ১৯৭০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। গত শতাব্দীর নয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে জড়িত রয়েছেন স্লোভেনীয় সাহিত্যের সমস্ত শাখার সাথে। )

(ছবিঃ Dnevnik) 

প্রাবৃষার কবিতা ১৬


Abstract Water Dragon Painting by Michelle Pier

উপশম
          -পারমিতা চক্রবর্ত্তী

যে ঠোঁটে ছুঁয়েছে ঈশ্বর
তারই মধ্যে কোন বিপন্নতা নেই

ইদানিং সব কিছুর মধ্যে  কেমন যেন আবেশ লেগে থাকে
জ্যোৎস্নাদাগ চুলের বিনুনিতে হাত বুলোয়
মেহেদী শরম এসে লাগে চিবুকে

ম্রিয়মান মুখখানি তুলে কেউ বলে
আরো এগিয়ে এসো , সঁপে দাও দেহখানি

তোমার চুলের গন্ধ আর বৃষ্টির জলের মাঝে কোন তফাৎখুঁজে পাই না
বুকের পশমে জমে থাকা অঙ্গীকার আলগোছে সরিয়ে রাখি  দাম্পত্য যত্নে

হাতে হাত রাখা মানেই দাম্পত্য নয়
চূড়ান্ত উপশমের নির্যাস

( ছবিঃ মিশেল পায়ার)

প্রাবৃষার কবিতা ১৫

Rain Reflection MEDIUM ABSTRACT #38 Painting by Lia Bobrovskaya ...





      -রাজেশ শর্মা 


যে কবিতা ভাতে বাড়ছে
তার পাশ দিয়ে চলে হাওয়াই খুশবু
আর মধ্যখিদের দ্বিপ্রহরে

ক্রমে দীর্ঘ হচ্ছে তোর ব্যঞ্জনধর্মিতা

(ছবিঃ লিয়া বভ্রবস্কায়া)


প্রাবৃষার কবিতা ১৪


Happiness 2 by artist Jai Srivastava – Abstract, Painting ...

খাঁচা
    -পিয়াল রায়

আড়ালে আড়ালে আমরা খোঁজ নিচ্ছি সবার
 নাড়াচাড়া করছি
আর কেঁপে যাচ্ছি ভিতর পর্যন্ত

কাঁপতে কাঁপতে
জমা দিচ্ছি খাতা
খাতায় আঁকা ফাঁকা মাঠ
ঝুলে ঝুলে দুলতে থাকা
ফাঁকা বিলকুল ফাঁকা প্রাচীন এক ঘন্টা

ঘন্টার গায়ে নালিশ
নালিশের গায়ে শীত ও বর্ষা
তরল গরল
একই ভাবে বাজে

লোকজন শোনে
মানে, যারা শুনতে চায়

কিছু মানুষ তবু এসব থেকে
দূরে ভেজা জমি নিংড়ে শুকোতে দেয়
ভোরের রোদ

 ঘন্টা বাড়ে, ঘোষণা বাড়তে থাকে
পরিচিত ভাবভঙ্গি মতোই

কোন্ এক অনতিক্রম বোধে
আড়ালে আড়ালে
পৃথিবী হয়ে ওঠে  ইস্পাতের খাঁচা

( ছবিঃ জয় শ্রীবাস্তব )

প্রাবৃষার কবিতা ১৩

Rain" Painting by Yuri Skrinnikov | Artmajeur


প্লে-ব্যাক
         -নীলিমা দেব

পাখি কচলে কচলে আকাশ মাটি

গলির মোড়ে আমাদের অর্ধনিমিত শুক্রবার
কালো রোদের গন্ধে বিবশ স্নান চুপ ভাঙে না জলের

ঘুমে নড়ে ওঠে না রাস্তার ডুয়েট
উড়ন্ত আগুনে থেঁৎলে যায় স্ক্রিপ্ট ও অন্যান্য

শব্দের আরাম নাগাল অব্দি সাহারা

ঘরে খালি পায়ে হেঁটে যাওয়া রাত-----ফুলস্টপ
রি-প্লে
জুম
রি-প্লে


তারপর জল খুঁটেখুঁটে খাই একা

রাস্তায় রাস্তায় মশারি
ভিতরে বেলা, বাইরে কলম্বাস






(ছবিঃ ইউরি স্ক্রিনিকভ) 

প্রাবৃষার কবিতা ১২

Exhibitions — Joan Mitchell The Last Paintings - Hauser & Wirth

গ্রামোফোন
               -মৌমিতা পাল

পথেরই নাবালক সন্তান
একরাশ অনুশোচনা
কৃশ বালকের ইচ্ছেতেই
একরাশ ভুল ইচ্ছে-অনুবাদ।

লণ্ডনে ছেলেটা অফিসফেরত পাবে যায়।
মাঝরাতে বাড়ন্ত ঘরে নিদ্রায় জলভ্রম
দেহ মনের সাধনে পেগের পর পেগ,
আনইনস্টলড হোয়াটসঅ্যাপে
কলের দেহাতি ধাঙ্গড়।
দশ বছরের চুরমার-দাম্পত্যের বোনের সাথে ঝগড়ায় পলি রেখে যায় নেশার নিদ্রা।

শুধু সে জানেনা ওর মুখ দেখবে বলে
এত মৃত্যু পার করেও বেঁচে থাকে জীবন,
বেঁচে থাকে মেঘের জঠরে গেরস্ত গোছের
গ্রামোফোন

(ছবিঃ জোয়ান মিশেল)



প্রাবৃষার কবিতা ১১

Death Of A Salesman Painting by Edward Paul


বরফ বৃক্ষের উচ্চারণ
                   - শিবু মণ্ডল    
১১।

এখন আমার অঢেল সময়

ঘরের সবটা জুড়ে শুধু পুতুল আর পুতুল

তাদের নড়াচড়া কথাবলা সুখদুঃখ

সব বেরিয়ে আসে সেলাই ফেটে সাদা তুলো



এত ফাটল আগে কেন নজরে আসেনি?



সুতোর মায়া ও সুচের যত্ন দিয়ে আমি তাদের সেলাই করে দিই

(ছবিঃ এডওয়ার্ড পল)

প্রাবৃষার কবিতা ১০


Large Floral Painting "From Pain to Pleasure" | LittleLeloo Art

অভ্রান্ত পাতায় লেখা
                    -বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় 

কুয়াশার সমগ্রতা  নিয়ে 
কেউ যেন ঝাপসা হল এইমাত্র 

রক্তাল্পতায় ক্ষয়ে যাচ্ছে দৃশ্যের গৌরব 

তবু কিছু খুঁজছি আমরা 
যা নেই তেমন কিছু নয় 
যা ছিল তেমন কিছুও নয় 
যা আছে তা থাক 
ফিরেও তাকাচ্ছি না সেদিকে 

অভ্রান্ত  পাতায় লেখা কিছু শব্দ  ঝুড়িতে ভরে নিচ্ছে কেউ 

কুয়াশায় তাকে দেখা যাচ্ছে না এখনও ...

(ছবিঃ জেসিকা হেনড্রিক্স) 

প্রাবৃষার কবিতা ৯

Space Time Abstract Mother Creation by Maya Britan

মা
    -সুলক্ষণা আঢ্য

আমার মাথার ঠিক উপরে
দেখি ওম খেলা করে
আলোকীট যেমন দীপ খোঁজে
সে আমার কাছে ছুটে আসে
লাবণ্যের কণা সে-

কখনও বা দেখি
মরা প্রেমের চিঠির মতো
সে পড়ে থাকে আমার পাশে

আবার কখনও বা সে মেঘ ভাসিয়ে
অক্ষরের নোঙর ফ্যালে
লিখতে গেলেই ঘুম এসে যায়
লেখা তখন এক পরিযায়ী মেঘ

আজ দেখি দুহাত মেলে সে ডাকছে
সমুদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে দেখি-'কাঁকড়া!'
বুকে খুব ব্যথা আমার
স্তন্যপান করাতে পারবোনা কোনোদিন
কর্কট রোগ ছিঁড়ে নিয়ে গ্যাছে অমৃতভান্ড
'ওম' আমার একমাত্র অজাত সন্তান
মরফিনের ঘুমে সে আমায় 'মা' বলে ডাকে!

আজ আকাশটা এত কালো কেন-
তবে কি শেষে রাত হয়ে গেল!
ওম! ও---ম! আয় বাবা আমরা এবার ঘুমিয়ে পড়ি!

(ছবিঃ মায়া ব্রিটান) 

প্রাবৃষার কবিতা ৮

Manja McCade | Obra, painting abstract expressionism, 2014: "In ...



খাদ্যনালীর ক্রমসঙ্কোচন
                     -তন্ময় ধর 

টাটকা মাংস কাটতে কাটতে গল্পটা বলছো তুমি।
টিভির পর্দায় শিশুর পাশে অপেক্ষা করছে শকুন।
শকুন লুপ্ত হওয়ার পর আমরা একটু বেশী তেল-মশলা-চিজ ব্যবহার করছি।

মিল্ক ক্রিমে অনেকটাই বেশী ডিসকাউন্ট দিচ্ছে স্থানীয় শপিং মল।
মল ত্যাগ করার আগে আমরা দুগ্ধহীন শিশুর মৃত্যুযন্ত্রণার খবর পাচ্ছি।
মদের অতিরিক্ত গেলাসে ভরে উঠছে সহমর্মিতার বুদবুদ।

রোজই রান্না বেশী হচ্ছে।
অবলুপ্ত নরখাদকদের মত চোয়াল নেড়েচেড়ে বাড়তি খাবার ফেলে দিচ্ছি।
মৃত্যুসংবাদে ঠাসা একটা কাগজে মুড়ে খাবার ফেলে দিচ্ছি মানুষের আওতার বাইরে।

(ছবিঃ মাঞ্জা ম্যাককাডে)



প্রাবৃষার কবিতা ৭

Observing Gerhard Richter's Abstract Painting | Ideelart

ভাবমুদ্রা
        -নভোনীল চট্টোপাধ্যায়


শস্যদানার ওই অনন্ত আলোটুকুই আমার।

তাই, মুহূর্তেই আমি হয়ে উঠতে পারি তেজস্ক্রিয়।


ধ্যানের যে ইতিকথা

আমাকে এইসব  জানিয়েছে

তার সকাম থেকেই

জন্ম নিয়েছে প্রবৃত্তি।


স্বপ্ন উপার্জনের রেখা,

আমার হাতে এখনও স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি।

কিন্তু মুখরতা যখন মহার্ঘ লাগে,

তখন শূণ্যে ফেটে ফেটে যেতে দেখেছি

মেঘের নাভি


ধারালো দাঁতের জন্য

ইঁদুরের গর্তে দুধদাঁত ফেলে আসার অনেক পরে,

যখন জেনেছি –

                আমাদের ক্ষুধা আমাদের সমাধি,

তখন অবশিষ্ট অন্ন আর লবণ ব্যবহার করেই

ভয় দেখিয়েছি মৃত্যুকে।


প্রতিটি জন্মদিনে

অপেক্ষা করেছি

কখন পায়েসের বাটি হাতে

সামনে এসে দাঁড়াবে

                             অন্নপূর্ণার কঙ্কাল।

(ছবিঃ গেরহার্ড রিখটার) 

প্রাবৃষার কবিতা ৬

Abstract Painting "Trigger Finger" 20x20" — Katie Jobling

ভালো আছি
            -পাপড়ি গুহ নিয়োগী



টানা দু'ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই ভয় হয়

সেখানে ঘূর্ণিঝড়। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস


মুহূর্তেই ঘর উঠোন হয়ে যায়

শিকড় উপড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গাছ

ক্ষেতে লবণ জল ঢুকে পড়ে

গরু-ছাগল নৌকা পানের বরোজ ধান !


ঝিঙের মাচায় ফুল এসে ছিলো

মেয়েটার সামনের মাসে বিয়ে


কুপিটা দপদপ করে ,তোরা ঘুমিয়ে পড়

সময়, নাড়িভুঁড়ি হাতে তলিয়ে যাচ্ছে

যেন বিদায় নিচ্ছে আমাদের দেশ


মাথা উঁচু করে পলিথিন হাতে দাঁড়িয়ে

মা বলে ভালো আছি আমরা



সমুদ্রের ভেতর সভ্যতার জঞ্জাল

মরুভূমি হয়ে ওঠে


শরীরে গেঁড়ি কেঁচো লাল পিঁপড়ে

ব্যাঙ সাপ শামুকের দল


চিবুক থেকে খসে রোদ

দীর্ঘশ্বাস আঁচলে বেঁধে তবুও ভালো আছি


শুধু ছেলেটা যে হেঁটে আসছে তার কি হবে

(ছবিঃ কেটি জবলিং)

প্রাবৃষার কবিতা ৫


Acrylic Abstract Painting | Buy paintings Online
বনবিড়াল ও বিষাদ সুন্দরীরা
                                     -শীলা বিশ্বাস


ক্রিস্টোফার কলম্বাসের স্ট্যাচু চুঁইয়ে যে রোদ ম্যাগডালেডা নদীতে পড়ছে ঘোড়ামুখো ছোকরার বাঁধা কোনো বিষাদ গণিকার কাছে তার কোনো মূল্য নেই। দূর থেকে অপেরা সঙ্গীত ভেসে আসলেও মনে ও শরীরে কোনো ঝড় তোলে না। পানশালাতে ভিড় করে থাকে আসক্ত অপেক্ষারা। তুরীয় আনন্দের খোঁজে ঢল নেমেছে রাস্তায়। পথচারী খুশী হয়ে তাসা পার্টিকে কয়েন ছুঁড়ে দিচ্ছে। একটি ছোট্ট আওয়াজ মিশে গেল ভিড়ে।  গলায় মুক্তোর টাইপিন পরা বনবিড়ালগুলি ইতিউতি দৌড়াচ্ছে। হাতচিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হল একশো বিষাদ গনিকাকে। সেন্সারের কাঁচি নিয়ে হারিয়ে গেল বনবিড়াল ও বিষাদ সুন্দরীরা। স্মৃতিতে জড়িয়ে নিচ্ছি মার্কেজের কলম।

(ছবিঃতৃপ্তি দে) 

প্রাবৃষার কবিতা ৪


Abstract Cityscape art painting night rainy New York by Debra Hud by Debra Hurd

ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে 
                         -বল্লরী সেন 


এইভাবে বিবাদের মালা আমি তোমায় পরাই
জনান্তিকে ভোর হয়,ছইয়ের ভেতর দিকে সিঁড়িরা ঘুমোয়
তুমি এখানে ওখানে কষ্টবীজ, কুশের শাবক পুঁতে রাখো
আমারি শরীর রস নিষ্ক্রান্ত অসির ফলায়, দা দিয়ে টুকরো করে কাটো

কমিউনিটি হলের পেছনে কখনো হারিয়ে গেছে এক পা জুতো
স্নানের আক্রোশে তাকে আমি একান্ত ভাবিয়ে তুলি
আমার সামনে তার উলঙ্গ অঙ্গীকার বিশ বছরের এপার ওপারে।

নীল প্লাস্টিকের স্যানিটারি ন্যাপকিনব্রত শতাব্দীর সংক্রান্তিপূরণ
শার্টের গারদ থেকে যতক্ষণ খুলে নিই পরাগের রাজদণ্ড অজ্ঞ হাতে
আমাদের দেহভেদ হয় । শাসকের অজস্র তালায় শব্দ ফাটে শঙ্খ-লাগা চাবির
কান্নায় ,খেলনা  বালিশে পুরুষের রোমবৃত্ত নাগকেশরের মতো ফেরে

ঘ্রাণের টঙ্কারে অববাহিকায় একদিন ভোররাত্রে তার শিয়রের ভিতে
বিনিময় ধান রেখে আসি

( ছবিঃ ডেবরা হুর্ড ) 

প্রাবৃষার কবিতা ৩

Abstract Rain Painting by Shweta Muddebihal

প্রলাপ
    -সোনালী মিত্র 


আজকাল সুখ নিয়ে কিছু লিখতে ভালো লাগে না,প্রেম নিয়েও না
যথার্থ সুস্থতা নিয়ে লেখা চিঠিগুলো একলাই হেঁটে গ্যাছে দাবানলে।
ভাদুরে উত্তাপ মাথায় নিয়ে লালা ও ঘামে যেসব প্রেমিকেরা
এসেছিলেন , লীলাগন্ধ গন্ধ নাকে টেনে তারাও ফিরে গ্যাছেন যেযার ঘরে।
#
প্রতিদিনের সুস্থতা পেতে চেয়ে যাবতীয় পর্দা টেনে রাখে চোখ,
দীর্ঘ সাবান-জলের বুদবুদে  ডুবে থাকে এ পোড়া শরীর।
ডাক্তার বলে গ্যাছেন,
বারংবার এই আত্মহত্যা প্রবণতা ধীরে ধীরে উন্মাদের দিকে গড়ায়।
তার'চে গান শুনুন,গীতা অথবা আত্মাশুদ্ধিকরণ টাইপ বইটই
কিছু পড়ুন,ঘুরে আসতে পারেন পাহাড়ে বা সমুদ্রে,তবে জঙ্গল
আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই সুখকর নয়।
প্রতারণামূলক গল্পগুলো আপাতত নির্বাসনে পাঠিয়ে দিন।
#
লাল-নীল ক্যাপসুলে ঢেকে যায় বৃষ্টিদিন
ওষুধের ধারাভাষ্যে আত্মহত্যা অথবা উন্মাদ কোন একটা সুর
নিশ্চয়ই বাজাবে আমায়,
ধন্বন্তরি কবিতাগুলোও একদিন সাইকো হয়ে উঠবে
সঞ্জীবনী বর্ণমালার ভিতরে জেগে উঠবে এসাইলাম
শুনে রাখুন প্রিয় পাঠক, প্রলয়ের আগে
এ ভুলভাল লেখনীর অস্থি বিসর্জনটুকু অন্তত দিন।

( ছবিঃ শ্বেতা মুদ্দেবিহাল )

প্রাবৃষার কবিতা ২

Abstract Rainy Evening Painting by Dan Haraga

কৃষ্ণ
   -অনিমেষ সিংহ


তুমি বৈষ্ণব পদাবলী। সাঁঝের তারায় আঁকি তোমাকে।
বাহুডোর ছড়িয়ে, আবৃত করো তুমি,
আমার গ্রাম্য নদী ও তার, ডিঙিনৌকোগুলোকে।

বাতাসে, বেলেফুল ভাসে, চিকন শরীরে  থমকে দাঁড়ায়,
চর্যাপদ

একতারা নিয়ে, ভাবি, বৈষ্ণবীর দুয়ারে যাব।

যাত্রাগুলো ফুরোয় না। সব্জীর দোকান, রেশান, অফিস, চুম্বন, সবুজ ও লালবাতি
- সবই, এগিয়ে চলে।

সার বেঁধে নৌকো চলেছে, জলের শব্দে ভাঙছে রাত
প্রাচীনতম শ্যাওলার গন্ধে ভরে উঠেছে আমার শরীর

চাঁদ খাচ্ছে আমাকে
রাত খাচ্ছে
নিস্তব্ধতা খাচ্ছে আমাকে

বেহেড মাতালের মতো, রাজপথ চলেছে
পাশে কেউ নেই
তাই একটিও ছবি আঁকিনি
হরপ্পা থেকে এসেছিলো, যে নারী

আজ সেও ত্রিধা বিভক্ত

জল জমি জঙ্গল।

কারো ওপর অধিকার নেই, আমার।
সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্যে একটি ঘোড়া এবং নিজস্ব মহাকাব্য প্রয়োজন

কোনোটাই আমার ছিলো না। বৈষ্ণবী, বুকের ক্ষত, তোমাকেই দেখাতে পারি
চন্দনের প্রলেপ দিও

এতো কালো আমি, কৃষ্ণ হতে পারি

(ছবিঃ ড্যান হারাগা)


প্রাবৃষার কবিতা ১

Rain of ashes Villens death ballad I 2 works by Rico Lebrun on artnet


দিদিমা , তোমাকে 
                 -রঙ্গন রায়


এভাবে প্রতিদিন কষ্ট পেতে ভালোলাগেনা। এভাবে প্রতিবার ফেরার সময় 
তুমি হাত জড়িয়ে ধরো , বলিরেখার কাছে হেরে যাওয়ার আতঙ্ক 
ফুটে ওঠে চোখে। কীভাবে রোজ আমি লম্বা হয়ে গেছি আর তুমি ছোট ... 
চোখের সামনে চোখ এনেও বলো "আমি তোকে একদম দেখতে পাচ্ছিনা" - 
ঐ দূরে কাঞ্চন গাছটার মতই ঝাপসা হয়ে গেছি আমরা 
ঠিক যেন উল্টোভাবে রামকৃষ্ণের কথা মনে পরে -
উঠোনে অধীর হয়ে আমাদের অপেক্ষায় এখনো তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পাই 
জ্যোৎস্না রাতে হঠাৎ পঞ্জিকা হাতে  তুমি  নেমে  যাও চাঁদের কাছাকাছি 
আমরা সকলে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছি তোমার কাছে ... এভাবে প্রতিদিন আসে , প্রতিদিন চলে যায় 
চা বাগানের সব কোয়ার্টার ফাঁকা হয়ে যায় , নতুন মানুষ কেউ আসেনা 
ভাঙা বাড়ি আর ভাঙা চশমার ভেতর মেয়েদের ব্রতকথার জীর্ণ পাতা পড়ে থাকে।

(ছবিঃ লিকো লেবরান) 

Saturday, 30 May 2020

দহনকালের কবিতা ৯


Fire Study 1 | Rob Pointon


নিন্দিয়া
          -রা জে শ  শ র্মা 


একটি লোকের ভিতর আরেকটি প্রায়

অপসৃয়মাণ ভীতু লোক কিভাবে মারা যায়

ভাবতে ভাবতে অলীকবাবু এসে দাঁড়ালেন নাগরিকচাতালে
তখন উড়ালপুলশোভিত সন্ধ্যা নামছে সালাংকারা
পথিপার্শ্বে পড়ে রইল রোহানি আলো

আর কলম এর দেহলিজ্ পেরিয়ে বাজতে লাগলেন বড়ে গোলাম আলি খাঁ!



(ছবিঃ বব পয়েন্টন) 

দহনকালের কবিতা ৮


The Forest Fire by artist Suman Choudhury – Abstract, Painting ...


এভাবেই সকাল নামবে
                           -সুপ্রিয়া সু চক্রবর্তী

চলো বেরিয়ে পড়ি। আকাশ আরও গভীর হোক। রাত বাড়ুক রাস্তা দূর্গম হোক। সমস্যা নেই। বেরিয়ে পড়ার উদ্দেশ্যটাই সফল হোক। ওরা যে যা বলুক। যে যা করছে করুক। আমাদের ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়া দরকার। ভয় পেও না। লজ্জা পেও না। ওদের মারমুখের সামনে বেরিয়ে আসাটা জরুরী। তুমি বলো ইচ্ছেটাই আসল রাজা। দ্যাখো শহরের সব ল্যাম্পপোস্ট নিভে আছে, গাছেদের মতো চুপ -- ওদের দেখে ভাবো অরণ্যের গভীরে আছো তুমি। এসময়েই গুপ্তহত্যা করে পুঁতে দাও মাটির নীচে আমাদের ভিতরের যত বয়ে চলা ভয়ের ঢেউ। ঘরের আশ্রয় আমাদের এই দস্যুবৃত্তির আরাম দেবে না।

চলো তবে অন্ধকার খুবলে খেয়ে বেরিয়ে আসা যাক। হাতের মুঠোয় আয়না রেখো। ভ্রুমুদ্রায় অভয়। এ যাত্রা সফল করতে শয়ে শয়ে শব পেরিয়ে হলেও রক্তমাখা সড়ক ছেড়ে আগুন মাখা যাক। দাঁতে নখে শান দেওয়ার তাড়নায় রাজা উলঙ্গ হয়েছে অনেককাল আগেই, এখন বারুদ চুরির আগে চলো, বেরিয়ে পড়া যাক।



(ছবিঃ সুমন চৌধুরি) 

দহনকালের কবিতা ৭

Temple Of Fire Oil Painting By Nina Polunina | absolutearts.com


একটি বিভ্রান্তির কবিতা
                               -শতানীক রায় 

এই পৃথিবী জন্মানোর ঠিক কতদিন পর আমি জন্মেছি
এরকম কথা মনে হতেই উঠে বসেছি।

অনেক রাত তখন।
কিছুদিন আগেই একজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল
গীতার বিশ্বরূপদর্শন যোগ নিয়ে

সেদিন কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
তারপর বালির স্বপ্ন দেখি।
আওয়াজের শরীর দেখি
বালিহাঁসের ঘুরে বেড়ানো লম্বা উঠোন
লম্বা মানুষের গল্প
তারা কী করে উপন্যাস পড়তে পড়তে ভাসে
তাদের শরীরে কখন খাঁজ খাঁজ অন্ধকার জমে
উড়ে যায় হামাগুড়ি দিতে থাকি দেখি
ফুল ফলে মূল্য হারিয়ে ফেলেছি আমি,
আমার কোনো চিহ্নবাসনা নেই
চিকিৎসাও নেই
সবুজসাপ নেই
চাল-ডাল-শস্য-পৃথিবী রং কিছুই নেই।

হাওয়ার শরীর
হওয়া আছে
উড়তে দেখি
আবার বানরের ঘুম দেখি
থালা বাসনের গন্ধ ঠুকে ঠুকে কোনো গল্পহীন
ঐতিহ্যে ঢুকে পড়ি।

এরকম বারবার হয়
কারিগর আসে
কারিগর যায়
ভুলে যাই বদলে যেতে
কথা ভুলে যাই
আওয়াজ হারিয়ে ফেলি

একইসঙ্গে ঘৃণা ভালোবাসা পেয়ে বসে
আলো অন্ধকার
আকার নিরাকার পেয়ে বসে
জল পেয়ে বসে
পুকুরের গাছ পেয়ে বসে
সাপের চলন পেয়ে বসে
'খুব' শব্দটা পেয়ে বসে
ফিরে ফিরে আসে কিছু
ফিরে আসে শরীর
ফিরে আসে তারা খসা রাত
ফিরে আসে বিদেহী তান্ত্রিক 
গভীর থেকে আরও গভীরে যাই
আমার জন্মানো কোনো এককের দিকে যায় কী,
কোনো শূন্য অগোচর
প্রাচীন মহাসাপের দিকে?       


(ছবিঃ নিনা পলুনিনা)

দহনকালের কবিতা ৬


Otto Piene: Fire Paintings 1965- 2009 | Wall Street International ...

বার্তা 
      – উমা মণ্ডল

চৈত্রের   দুপুর । হলুদ  পাতার  অভিমান  দেখি  না  , দেখি  না  তার  ঠোঁট  থেকে  খসে  পড়া  রক্ত , কান্না.........খরা  বায়ু  ছিঁড়ে  নেয়  শিকড় -বন্ধন ; পড়ে  থাকা  ছাল  ওঠা  ছাদ , একাকী  ঢেকেছে  মুখ  কার্নিশের  কুঁড়েঘরে ।


প্রলেপ  লাগাই  ওষুধের.........মমি  বিছানায়  শুয়ে  থাকে  মৃত  গাছ  । বাহকের  দল  ফিরে
যায় । হাতে  পাখা  নিয়ে  বসে  থাকি  যখ  হয়ে । নীলকণ্ঠ  দেখে  যায় , উড়ে  যায়  মিশরীয়  কাব্যের  পাতায় ; হিব্রু  মুক্তি  পেয়েছে  আদিম  শিকলের  খাঁচা  থেকে । লুপ্তপ্রায়  সভ্যতার সাথে  চিঠি  প্রণালীর  সূচনা  হয়েছে । নীলনদ  খুলে  দেয়  অববাহিকার  পথ । বিষাদের  অক্ষরবৃত্ত  বার্তা  পাঠিয়েছে ; চিঠি  নিয়ে  দরজায়  তুতানখামেনের  যখ............

(ছবিঃ ওটো পিয়েন)
                             

দহনকালের কবিতা ৫

Russian Artist Eduard Grossman Art For Sale - 9 Listings

মেঘ, এক, দুই
                  -জয়ীতা ব্যানার্জী

(১)

মেঘের অনেক নীচে তার ছায়াখানি পড়েছে এমন
যেন কোনও বিরহীর খোঁপা, আপাত বিষণ্ন
তবু আলোকসম্ভব

আমি এই বৃষ্টির দিন ভালোবাসি

হাড়ের মতো বিবর্ণ, অথচ সমুজ্জ্বল এই ভালোবাসা

(২)

ভোরের সমুখে বসে পাখিদের ব্যস্ততা দেখি
দেখি পিঁপড়ের হেঁটে চলা, পতঙ্গদ্বয়ের অভিসারও
পাতা সরানোর শব্দে মনে পড়ে গতরাতে ঝড় হয়েছিল
হাওয়া এখনও শীতল তাই। দূরে একফালি মেঘ
বৃষ্টির গৌরবে আলো হয়ে আছে
ভাবি সমস্ত জীবন এই একই কাজে তারা
পারদর্শী। অথচ কী নিরুত্তাপ
রাত্রির শোকেও কেউ অঝোরে কাঁদে না

(ছবিঃ এদুয়ার্দ গ্রসমান)

দহনকালের কবিতা ৪


Van Gogh inspires Jason Brooks - Van Gogh Museum



একান্ন পিঠ– বিষ, ২০২০
           -সু ত পা  চ ক্র ব র্তী 


সংসার সুস্থির
বয়স্থা স্বামী এসে খেয়ে যান অন্ন

তাঁর দুচোখে  জ্বলজ্বল করতে
থাকে আলস্য, বালিশ

স্ত্রী বৃদ্ধাটি তখনও  জীবিত
পাশের হারে সবেমাত্র গোল্লাছুটের
বয়স পেরিয়েছে

ডানপক্ষ অবশ!

স্বামীসঙ্গ করে, চিৎকারে

আজানে, গানে মাঝেমাঝেই সুর
তুলে একান্ন জীবন

অকলঙ্ক দেহ,দেখিতে দেখিতে পরবর্তী জন্মান্তরে সেঁধিয়ে যায়

(ছবিঃ জ্যাসন ব্রুকস)

দহনকালের কবিতা ৩

Textured Fire Sunflower" by Nadine Rippelmeyer | Sunflower art ...

একটি নিওলিথিক লেখা
                                -পায়েলী ধর

পাথরও আঘাত বোঝে
ক্ষত বোঝে, হননও সে জানে
তথাপি আঙুলে তার
গূঢ় নখ, বেগতিক ঘৃণা
বুকের আকাশ খুলে
বেলাগাম থুতু ছুঁড়ে মারে
চাবুকে চাবুকে যেন
তুলে নেয় যাবতীয় শোধ—

আমি ওর দু'হাতের মাঝে
আরও কিছু জড়ো হই রোজ
দেখি কোনও নিচুগামী জলে
ঝুঁকে আছে বাঁশি ও বিহান
পাথর আহত ছিল একা
এই ঠিক আমরা যেমন


(ছবিঃ নাদিন রিপেলমায়ার) 

দহনকালের কবিতা ২

Elements. Fire Painting by Elena Genkin | Artmajeur



হাড়ের নির্যাস 
               -সৌমনা দাশগুপ্ত 



মহতী ঝরনাজলে ফেলে রেখে আসি আদি নাভি



দেখছি আলোকরেখা, তার ক্ষীণ অনুপ্রাস

ভোরবর্ণ শালগাছ একটু একটু করে ফুটে ওঠে



ঐশী ধ্বনির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে ডানার বিস্তার

জন্মছক খুলে বসে আঁক কষছেন মেঘের ঈশ্বর



কাত হয়ে পড়ে আছে ছবি

ছবির মেয়েটি শুয়ে, লাল



এখানে সমাসবদ্ধ জল, এইখানে অঙ্গার শীতল

রক্তাক্ত হয়েছে ছায়া, হাতে তার নিবিড় আয়না

আর্শিতে বসত করে রূহদার এক



আত্মঅভিলাষী আমি ময়নাতদন্ত করে দেখে নিই

অগ্নিমন্থনের শেষে পড়ে আছে সোরা ও গন্ধক

হাড়ের নির্যাস আর ঝুঁকে পড়া বিশেষণগুলি



জংধরা দেহের কপাট



বেহেশত দোজক কাঁপে, জ্বলে ওঠে


(ছবিঃ এলেনা জেনকিন)

দহনকালের কবিতা ১

Tsherin Sherpa's 'All Things Considered' (2015) is one of the lots to be auctioned at the Asia House Benefit Auction

শম্ভু দা 
                -পাপড়ি গুহ নিয়োগী

আমরা  প্রত্যেকে একেকটা তরমুজ
এই সময় আপনিও চলে গেলেন

ভালবাসতে পারলাম কই আপনাকে
রাষ্ট্রশিবিরে আঁশটে গন্ধ। অন্ধকারও ভিজে যাচ্ছে

আপনার মহাপৃথিবী গোঙায় যন্ত্রণায়
মরা চোখে মা বলে শম্ভুও চলে গেলো

অথচ পরিচ্ছন মুখোশ পড়ে
ন্যাংটো শিশুর মৃত মায়ের আঁচল টানার  দৃশ্য দেখছি






(ছবিঃ ৎশেরিন শেরপা)

হারিয়ে যাওয়া কবিঃ অমরশঙ্কর দত্ত













অমরশঙ্কর দত্ত 

(২০/১০/১৯৩৮ — ১৫/০৯/১৯৯৮)

 [অমরশঙ্কর দত্ত থাকতেন পুরুলিয়া জেলার মানবাজারে। সম্পাদনা করেছেন ‘জঙ্গলমহল’ পত্রিকা। প্রকাশিত বই ‘দিনকাল’ (‘তিন ভুবন’ সংকলেনের অংশ), ‘ভোটরঙ্গ’ (ছড়া), ‘নির্বাচিত কবিতা’।
 কবিপুত্র সন্দীপ দত্তর সহায়তায় অমর শঙ্কর দত্তর কয়েকটি কবিতা প্রকাশিত হল।
             : অনিন্দ্য রায়]

নাম

শুধু নাম মনে পড়ে
অঙ্কুরিত বীজ
চেয়েছিল রৌদ্র মাটি জল
পরিবর্তে
পেলো শুধু খ্যাত ও অখ্যাত কিছু নাম
নাম মনে পড়ে।

ডায়না

ডায়না বিষাদগ্রস্তা তাই পৃথিবীর শোক
ঝরে পড়ে
ডায়না বিষাদগ্রস্তা কুঁড়ি আর পাঁপড়ি মেলে না
রাজহংসীর মতো শুভ্র তবু শৃঙ্খলিত স্রোতধারা
সংবাদপত্র জানায় বলে, সকলেই জানি
ডায়না আজ ভালো নেই।
রাজপ্রাসাদের থামে কালোছায়া- শোকগাথা
গির্জার ঘণ্টায়
ডায়না কি নেপাল যাবে কিংবা গ্রীস
সমুদ্রবিহার চাই- নির্জনতম দ্বীপের
অঞ্জাতবাসের শুশ্রুষায়
পুনঃ সংস্থাপিত হবে তাঁর পূর্বরাগ, প্রেম?
ডায়না একান্তে আজ একা- একদিকে রাজপ্রাসাদের উঁচু থাম
গৌরবগাথা ধ্বজা আভিজাত্য
বিষাদসিন্ধুর মধ্যবর্তী তৃষ্ণার্ত মীন সাঁতার জানে না
সংবাদমাধ্যম আমাদের
শুধুমাত্র উপহার দেয়
কুন্তলঢাকা ডায়নার আধেক মুখ
নিপাট স্তন নাভি
ডুবন্ত নাবিক আমরা
তা থেকেই সমুদ্ভাসিত
আমাদের
সন্ধান সন্ধান।

দাহ

উপরে সুস্থির জল, নিচে ঘূর্ণি
দাম্পত্য কলহ।
বিস্তৃত উদ্যান পড়ে থাকে দূরে- পুষ্পহীন
উদয়াস্ত পরিশ্রমে জীবিকা সংস্থান
তবু অবাঞ্ছিত ঝড়- হিংসা ও সন্দেহ
শুন্য করে দিয়ে যায় পূর্ণ কলস
গুহাবাঘ, তাও কেন অরণ্যসঙ্কুল
ঘরে ঘরে স্বতঃস্ফূর্ত
একটি দাবদাহ
দাম্পত্য কলহ!

বীজ

অক্ষয়রানী খেজুরজুপি ভাসামানিক কেরলাসুন্দরী
কতো না বীজের নাম
কতো জাতি ও প্রজাতি
  তবু জাতিদাঙ্গা হয়না সেখানে।

অনুরূপ শিমুল ও পলাশ শাল পিয়াশাল
মহুয়া অর্জুন দেবদারু
পাশাপাশি, একই মাটি ও বৃষ্টিধারায়
বসবাস
জাতিদাঙ্গা সেখানেও নয়।

ভুমি থেকে অঙ্কুরিত হয় না বলে
মানুষেরা অন্যরকম।।

গাছ ও মানুষ

চেনা-শোনা-জানা জীবনের ভিতরে
আমরা বহন করি অন্যজীবন।

চেনার অন্তরালে অচেনা, মানুষের
অন্তরালে অন্য মানুষ
আত্মগোপনকারী মানুষের
অতর্কিত ও এলোমেলো আত্মপ্রকাশ

গাছেরা সে রকম নয়।
গাছের ভিতরে
রামের মধ্যে রহিম
আত্মগোপন করে থাকেনা

তাদের অযোধ্যা নেই-
রামজন্মভুমি নেই

গাছ প্রকৃত ঝড়ের মর্ম বোঝে
বোঝে বলে-
ঝড়ের পর বৃষ্টি
ধারাস্নান!

তোলা

আজকাল বিড়ালের মতো অনেক কিশোর কিশোরীকে
লাফালাফি করতে দেখি।
এর কোলে ও, ওর কোলে এ।

স্কুল বারান্দায় হাসপাতাল চত্বরে
ফাঁক-ফোকরে।

আবার অর্থ শিকারীর চোখ লক্ষ রাখে
আনাচে-কানাচে

পাকড়াও করতে পারলে, তোলা
আদায় করা যায়
হায় প্রেম, হায় শারীরিক অবাধ্যতা
শেষঅব্দি
তুমিও তোলার খপ্পরে।

Monday, 20 April 2020

বৈশাখের অনুবাদ কবিতাঃ পোল্যন্ড-আর্মেনিয়া থেকে তাতেভ চাখিয়ান



এক অচেনা মানুষের মৃত্যু
                       -তাতেভ চাখিয়ান 



একটি বিবর্ণ ছবি
যার এক সারিতে রয়েছে: একটি শিশু,
দুই মধ্যবয়স্ক পুরুষ এবং একজন প্রবীণ,
বলিরেখাঙ্কিত এক বৃদ্ধা
এবং একটি যুবতী মহিলা একটি শিশুকে অন্য হাতে চেপে ধরে আছে।
প্রতিদিনের দায়িত্ব নিয়ে ক্লান্ত, মৃতদেহগুলি
ছুটির পোশাকে মোড়া
একটি ব্লিচ সুগন্ধযুক্ত আঙুলে একটি বিবাহের রিং,
বাচ্চাদের মাথাভর্তি চুল
জীর্ণ পোশাক পরিষ্কারভাবে বাঁধা
আঁচড়ানো চুল এবং কাটা দাগ
আমি এই ফটোতে কাউকে চিনতে পারি না,
এগুলির যে কোনও একটির নাক আমার মতো।
জীবন - এটি তাদের যৌথ চুক্তি,
একটি ক্যামেরার সামনে একসাথে দাঁড়ানো।

মৃত্যু - আমার ব্যক্তিগত ফটো অ্যালবামে এই ছবির অস্তিত্ব।


(অনুবাদ- সম্পাদক)



বৈশাখের কবিতা ১১

Birbhum In Summer- Benode Behari Mukherjee - Bengal School Indian ...


জড়ো করা দিন
                  -নীলাব্জ চক্রবর্তী



মাংসের বাগানে আমি গান ভেবে
একটার পর একটা
বাদামী ক্যালেণ্ডারের ওড়াউড়ি
হরফ অর্থে খুব উদাস যা কিছু দৃশ্য হচ্ছে
ঘ্রাণ হচ্ছে
স্মৃতির বাইরে যেটুকু
পড়ে থাকা
শরীরের ভেতর একটা জড়ো করা দিন
মানে
ঠাণ্ডা একটা হাতল
শুধু জরিপ অবধি
এই যে আঙুলের ঘুম
নড়ে উঠছে
একটা চলমান কবিতায়...

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ১০

Benode Behari Mukherjee: Light and Shadows of an Artist's Life


অনুশাসন পর্ব : দুই
                         -নভোনীল চট্টোপাধ্যায় 
             
ঋণ করে রেখে যাই শব্দ, সংসার, সংলাপ
অন্দরমহলে বাজে এত সুর আর এত গান,
কার মতো এই সুখ? নির্ভীক পাতার চিৎকার
বোঝাতে না পেরে তুমি ভিজে পলিমাটিতে আঁচড়

হলুদ আর নিমপাতা হয়ে আমি জীবাণুনাশক,
এই দেশে শুয়ে আছি দাম্পত্য চর্চার আগে থেকে
তবু আমি বনাঞ্চলে মানুষ এনেছি প্রতিবাদে
সক্ষম, শিক্ষিত হাত বার বার ধুয়ে নিচ্ছি সাবানের জলে।

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ৯

Benode Behari Mukherjee - JungleKey.in Image


অসুখের দিনে
             -গৌরাঙ্গ মন্ডল



চিমটে কেটে দেখে নিই
আমি ঠিক মৃত না নিভৃত

মলিন কুয়াশ যেন ঈশ্বরের
নিজ হাতে বিছানো কফিন

ভেতরে কী ঝড় উঠেছিল?

বালিকা শহর কার আঙুলের ভয়ে
শামুকের মতো তার বুক ঢেকে নিল?






মিছে দোষ দাও, মিছে
ভর্ৎসনা করেছিলে তাকে

যাকে অপরাধ ভাবো, ভাবো
যার আশরীর নখ

মুখোশ সরিয়ে, দেখো, আমারই মতন
আসলে সে ভীতু এক লোক



ভয় খামচে ধরে আছে পৃথিবীকে

ওল্টানো জাহাজ থেকে যারা ফিরে গেল
তাদের ঘুমের মধ্যে বিষাদের সাথে
চোখ থেকে উঠে আসবে লবণ কণাও

অভয়, তুমিই নার্স
তাহাদের শুশ্রূষা শোনাও

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ৮


Benode BehariMukherjee | Untitled | MutualArt

সম্পর্ক
       -সম্পিতা সাহা

একটা যন্ত্রণা, প্রলুব্ধ বিকেলের মতো
বহুক্ষণ পেটের নীচে আটকে ছিল।
হাত দিচ্ছিলাম যতবার,
ততবারই কেমন তরল হয়ে
লেগে যাচ্ছিলো উলটোদিকের মানুষটার চোখেমুখে।

কাউন্টারে ভিড় জমছে ক্রমশ।
সিনেমাটা বড্ড ভালো হয়েছে শুনলাম।
নিজেদের সাথে মিলে গেলেই বুঝি
পর্দার রঙ উপাচার হয়ে যায়!

দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে গ্রীবা ভারি হয়ে ওঠে।
ঠাণ্ডা লাগে কানে।
মোহিনী মাছের মতো দেহ
শিহরণ থামিয়ে মন দেয় তলিয়ে যাওয়াতে।
হলের ভিতর সবার চোখে মুখে
একটা ধুসর গোলাপি রঙ...
এরমধ্যে তোমার হাসিটা
পুরোনো বাড়ির গোলমরিচ গাছের মতো
ভস্মসবুজ হয়ে
ফুরিয়ে যাচ্ছে না বদলে যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছেনা...

যন্ত্রণা বহুক্ষণ একজায়গায় থাকলে,
শরীরেরই একটা অংশ মনে হয়।
সেরে যাক পুরোপুরি তেমনটা চাইলেও,
সেরে গেলে ফাঁকা লাগে কিছুদিন।
বিবর্ণ, ত্রিকালসিদ্ধ
আগামীজন্মগুলোয় যাতে একটা মহাসাগর
শুকিয়ে যায় চিরতরে
এইটুকু অন্ধত্ব বাঁচিয়ে রেখো মহাকাল...

মানুষে ঈশ্বরে সংসার নয়,
শুধু বোঝাপড়া হয়ে এসেছে সুনিবিড়।

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)


বৈশাখের কবিতা ৭

Benode Behari Mukherjee: Light and Shadows of an Artist's Life


অমরত্বের ভিতর মানুষ 
             -তন্ময় ধর 


যেখান থেকে অমরত্ব শুরু হয়, তার ঠিক পাশেই পড়ে আছে কয়েকটি কঙ্কাল
আমরা দেড় হাজার কিলোমিটার হাঁটব বলে নিজেদের সাজিয়ে-গুছিয়ে নিচ্ছি
উপবাস করছে এক দীর্ঘ গর্ভকালের আগুন
সাতটি জিহ্বার উপর ভর করে
পুড়িয়ে দিচ্ছে শিশুর খেলনা, মিছিমিছি দুধ, রক্তের দাগ

ঠিক যেখান থেকে অমরত্ব শুরু তার নীচে শুকিয়ে যাওয়া বাদামী মৃতদেহগুলোর উপর দিয়ে
পার হচ্ছে রঙবেরঙের চেরী, কাজু, চীজ, ক্ষীর, শাহি জাফরান মাখানো রেসিপির ভিডিও
পার হচ্ছে তীব্র হাসি, গনগনে লাল মাংসের যৌন সংলাপের অদৃশ্য তরঙ্গ
অতিরিক্ত আহার ও ফেসিয়ালের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে
কেউ অশুদ্ধ মা লাগিয়ে দিচ্ছে সন্তানের ঠোঁটে 'আনন্দধারা বহিছে ভুবনে'




(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ৬

Benode Behari Mukherjee: Light and Shadows of an Artist's Life

সেবায়েৎ
           - বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়

নিত্যদিন ভারি হয়ে যাচ্ছেন, আপনাকে আর
একা একা বওয়া যাচ্ছে না
হে গোপন, আপনাকে নামিয়ে রাখাও যাচ্ছে না
হাঁপানোও যাচ্ছে না, ফোঁপানোও যাচ্ছে না
একা রাস্তায়
প্রিয় বাহুবন্ধের হার
আলগা করা যাচ্ছে না
চায়ের দোকানে
ভাঁড়ে বক্র ওষ্ঠ রেখে চুমুক দিচ্ছেন
মায়ের ওখানে
পরিপাটি বিছানায় তুলোর বালিশে
আসছেন, আসছেনও না
হে প্রাচীন
প্রাগিতিহাসিক কামনার
খেতে খেতে আপনাকে মাছের টুকরো ধরে দিই
আচমন করিয়ে দিই আমি মুখ আঁচাতে আঁচাতে
চাঁদের যে মই নামে জানলার থেকে বিছানায়
তার কাছে আগুয়ান করিয়ে দিই ঘাড়ে হাত রেখে
নিত্যদিন ভারি
একান্তের নিত্যসেবা নিয়ে


(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)




বৈশাখের কবিতা ৫


Between Sight and Insight: Glimpses of Benode Behari Mukherjee at ...

ম্যুরাল
      -পার্থজিৎ চন্দ

কমলালেবুর খোসা ছিঁড়ে ফেলবার আবার সময় হল, আমিও আনচান করে উঠি। স্নায়ুর ভেতর কালো মদ চলকে উঠেছে; যেন ভোররাতে দুধের ভেতর থেকে উঠে আসা মহিষের ছায়া। মদের ভেতর প্রত্ন-পোকাদের মতো কিলবিল করা স্নায়ু… বহুদূরে পড়ে থাকা স্মৃতি-শর্করার দিকে ভেসে যায়। আমি জানি এরপর তুমি নিটোল কমলালেবুর আভা নিয়ে চেয়ারে বসবে। অভিজাত চকচকে নখে খোসা ছাড়িয়ে রাখবে সুগোল টেবিলে। মাত্র একবিন্দু অসতর্ক রস লাফিয়ে উঠবে শূন্যে (ও তোমার প্রসারিত জিভে আশ্রয় পাবে)। একে একে পুরুষ্টু হলুদ কোয়াগুলি মাটির থালায় পাশাপাশি শুয়ে… যেন সহদর… যেন সূর্যমুখী নার্সিং-হোমের প্রসব জগত। এ সময়ে তোমার অঙ্গুল চুষে কমললেবুর স্বাদ পাই। তোমার পায়ের কাছে পড়ে থাকা খোসা। পাগলের মতো বুড়ো আঙ্গুলের নধর শরীর মুখে টেনে নিয়ে পাই বাগানের দিকে হেলে পড়া পাইন-গন্ধ ও ছায়ার আগুন

তোমার কমলালেবুর প্রতিবিন্দুতে অবাক যৌনতা তীব্র ইশারা ও অজানা ভাষার লুপ্ত ব্যকরণ। খোসা হাতে নিয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখি নিখুঁত মুর্যাুল, দূর পাহাড়ের থেকে নেমে আসা আদিম মুখের বলিরেখাগুলি… ধকধক করা

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ৪

Postcards from Benode Behari Mukherjee |

ঘৃণা পরম ধর্ম
               -সুপর্ণা মণ্ডল


১.

জীবিতদের আদালতে সব দোষ
মৃতদের উপরেই বর্তায়
মৃত্যুর পর তুমি কোন বিচারের অপেক্ষা করছো?

২.

কাকে আঘাত করতে চাও?
ভেঙে চুরমার হল আয়না।

৩.

একটি শিশু কাঁদছে
শিশুরা তো চিরকাল কেঁদেই থাকে
কান্নাই ওদের ভাষা
কিন্তু আর একটি শিশুকে দেখো
সে কিন্তু কাঁদছে না একেবারে

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ৩

A Family Living Road side BENODE BEHARI MUKHERJEE Oil Color 20th ...

বরফ বৃক্ষের উচ্চারণ 
                           -শিবু মণ্ডল 

এই তো মৃত্যুর বেতবন থেকে ঘুরে এলাম

সেখানে উদ্দেশ্য ছিল, রাস্তা ছিল না, আবার ছিলও

সেখানে শুয়ে শুয়ে যাওয়া যায় বসে বসেও

সেখানে হাতে করে কেউ বোতাম বুনে দেয় জামার গায়ে



তারপর গর্ভবতী নারীর ফুলে ওঠা নাভির দিকে তাকিয়ে বসে থাকি

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)

বৈশাখের কবিতা ২

Benode Behari Mukherjee: Light and Shadows of an Artist's Life

 মুক্তক
      -মৌমিতা পাল

জলের ওপারে যাবার জন্য একখানা নৌকা
পাঠিয়ো তো সাধনসঙ্গিনী;
একটু একটু করে
   বদলে যাচ্ছে সম্পর্ক।
 কথামতো ডিপি না বদলালে অভিমান হয় তোমার,
ভোর পাঁচটায়
   নতুন বাঁধা গান শুনিয়ে
ঘুমোতে যাই আমি।
পাখিরা দেদার ওড়ে
মায়াবী শ্রম শেষে।
সাধনসঙ্গিনী তোমার দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গী হয় তখন
দুচারখান মানুষপ্রধান সম্পর্ক।
তোমাকে মেসেজে লিখি
-'এবার ঘুমা'।
ভুলের আমদানীতে
      ছলছলাচ্ছে বুক,
আতঙ্কআকাশকে
   তাজ্জব বানিয়ে
সাধনসঙ্গিনী বলে ওঠো
-"তোর তো অনেকের প্রতি প্রেম
আমাকে নিয়ে
খামোখা ভাবতে হবে না"।
টুপিটুপিয়ে গড়িয়ে পড়ে বুকে
 এ কেমন নিক্কন!
হেসে টাইপ করি -
"এর থেকেই বোঝা যায়
কতটা ভালোবাসিস!"

আতঙ্কআকাশকে
তাজ্জব বানিয়ে
 অভিমান অভিমান খেলছিলাম শব্দের মহল্লায়।
মানুষের খাঁচাগুলোতে
         শব্দাবলী নয় , স্বকালপাঠক নয়
আমাকে একমাত্র ত্রাণ করতে পারে তোমার মস্করা

(ছবিঃ বিনোদবিহারী মুখার্জি)



বৈশাখের কবিতা ১

Exhibition in London to focus on works by Indian modernist Benode ...

হোম কোয়ারেন্টাইন
                   -পাপড়ি গুহ নিয়োগী

আর কিছুদিন অপেক্ষা কর
দীর্ঘ হলুদ ভোর হবে
ধীরে ধীরে ধুয়ে যাবে কালো রং

আমাদের একান্নবর্তী স্কুল খুলবে
পাড়ার চায়ের দোকান
আবার দায়িত্ব বাড়বে জুতোর

আমরা আলোর গল্প করবো
জলরঙা হবে আমাদের জন্মদিন
পেরেক তুলে নেবো মানচিত্রের পা থেকে

দেখিস
রাস্তাটা হঠাৎ বাঁক নেবে
আনন্দ বাজারের দিকে

বিশ্বাস রাখ,দূরত্ব কমে যাবে
ঘরে ফিরবে পরিযায়ী শ্রমিকরা
এসব অপেক্ষা আর থাকবে না

শিশুরা দুধ পাবে
আমরা সবাই থালাভর্তি গরম ভাত
প্রতিমুহূর্তে আর মৃত্যু খেতে হবে না

মুখোশহীন মুখ দেখবো আবার
রবিবারের আঁকার স্কুল খুলবে
কারণে অকারণে হাসবো

দমবন্ধ জীবন মুক্ত হবে
কৃষকের অবুঝ ফসল
পড়ে  থাকবে না মাঠে

আমরা বুনোফুল । নদী। অরণ্য
সমুদ্র। পাহাড়ের কাছে  যাবো
আবার  ঠোঁট  পাবে আশ্রয়

বিপদ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে
ধর্মস্থান  আসলে
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের  পিছনেই  থাকে

( ছবিঃ বিনোদবিহারী মূখার্জি) 

Tuesday, 25 February 2020

কুসুমের মাসের কবিতা ১২


Joseph Stella: Battle of Lights, Coney Island, Mardi Gras (1913-14)

মুলতুবি দেওয়াল বরাবর
                    -সম্পিতা সাহা


হাহাকারের মতো প্রেতঘুম।
জেগে উঠে দেখি গর্ভদণ্ডছায়া খুলে গেছে।
তুমি ঠোঁট খুলে ঘুমাও।
গিলে নাও, কস্তুরিমেঘ নিজের বুকে।
জানালা বেয়ে গতরাতের বৃষ্টি ঝরে পড়ছে... এসো এখন।
এসে দেখো, কত যত্নে বাড়িয়ে তুলছি দাগের কাছে সাম্যতা...

আরোপ থেকে সরে গিয়ে,
সাদা প্লেটে সাজিয়ে আনি প্রাতঃরাশ।
তুমুল যন্ত্রণায় গিলে নিতে পারিনা
মনোহারি পাখির মাংস।

ডুবন্তছায়া...

ঘেমে ওঠে প্ররোচনা।
সমস্ত দরজার মুখে একটা করে
ঘন্টা ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে কেউ।
আসতে যেতে আওয়াজ হয়।
ভাবি ছুটি হয়ে গেছে।
প্রক্ষালনে জাদুপায়রার হাতছানি...
সম্ভবত এখনই মোহ কাটিয়ে উঠবে শরীর।

অতঃপর...

তোমার বিশ্বাসের কাছে এসে দাঁড়াই।
স্বপ্নবৎডিঙা আর আঁধার থেকে
কুড়িয়ে পাওয়া ঘ্রাণ,
তুমি গিঁট মেরে রাখো।
আমার প্রশ্বাস কমে আসে।

তৃণখণ্ডদ্যুতি...

তোমার মায়া হয় না।

হাতে রত্ন পরেও টের পাও না,
আঙুল অসার হয়ে যাচ্ছে দোষারোপের ভ্রমে।

(ছবিঃ যোসেফ স্টেলা )

কুসুমের মাসের কবিতা ১১

Gino Severini: Dancer at Pigalle (1912)

একুশকে বলা
             -পিয়াল রায়

আমার লেখনী ভেসে যাচ্ছে রক্তবমনে
দারিদ্রসীমার বিপজ্জনক নিচে দিয়ে বইছে
আমার অক্ষর
তাদের না আছে ভুত না ভবিষ্যৎ
কাগজ জুড়ে কেবলই হাহাকার
সারাদিনে লক্ষকোটিবার হারানোর গল্প শুধু

এই বাড়িঘর, এই পথ, ওই দরজা ঘুমন্ত দুপুরের
কমলা প্রকৃতির অতীব লাস্যমায়ায়
ত্রস্ত বিজন আমার মগজ-জঠর
জানি না কতদিন আর এইভাবে উপোসী কাটাবে
কতদিন আর ঘাসের ডগায় আঙুল পাকাতে পাকাতে
কর্কশ জল ঘুলিয়ে উঠে আসবে শোক
কানাকড়ি সম্বলহীন ডুবোমানুষের মতো

অভিমানী কাগজে তাই পাক খায় নীলসাদা ধোঁয়া
মস্ত শূন্যতায় নড়েচড়ে
শীর্ণ আয়ুস্রাবী আমার শোণিত তলিয়ে যায়
তলিয়ে যায় বিশদ ক্লান্তির দেশে

এতসব পড়ে পাওয়া নিয়ে আমি
কবিতা পারি না আর
ভণ্ডামি সাধি সাধকের বেশে

(ছবিঃ গিনো সেভেরিনি )

কুসুমের মাসের কবিতা ১০

Umberto Boccioni: The City Rises (1910)

বিয়োগ
        -অভিশ্রুতি রায় ভট্টাচার্য 


একটু একটু করে

ভালো দাও

বাসা দিওনা

বাসা নিজের কাছে রাখো

ওরা বাসা চায় না

শুধু ভালো চায়

ওরা তোমাকে চায়না

শুধু ভালো চায়

ওদের ভালো টুকুই দাও

হাসি দাও

ফল দাও

পরে যাওয়া ফলে দাগ হলে

 গাছও জানতে পারেনা কোনোদিন

(ছবিঃ উমবের্তো বোক্কিওনি) 

কুসুমের মাসের কবিতা ৯



অহন আমরার গায়ে হুদাই 
                              -নীলাব্জ চক্রবর্তী



অহন আমরার গায়ে
হুদাই এই ঢিলাঢালা শব্দগুলি কেম্নে ফিট অইব
ভাষা ফালাইতে ফালাইতে
হেরা গাছ হইয়া উঠতেসে কেম্নে
শাটার অবধি লিখতেসে
যারা মাংসের ভিত্রে গান রাইখা
ভুইল্যা গ্যাসে কাগজের এক একখান দিন
আলো কারখানার পাশেই
বসায়ে রাখসে বুজায়ে ফালান পুকুর
হাওয়ার ভিত্রে
তোমাগো ভাব উড়তেসে দেইখ্যা
ফিজিক্স পড়তে বইসা
পিঠ চুলকানের মস্ত একখান লাঠি দিয়া
ভ্যানোপ্রসাদ আমারে গুলি করনের ভাব করলে
পইড়া যাওনের ভাব করতে করতে
এহানে বইসা বইসা
এই কবিতাডাই লেইখ্যা যাইতে থাকুম
যতক্ষণ না
আমরার পাও আমরার বাপের পাওয়ের লাকান ফুইল্যা ওঠতাসে...

(ছবিঃ গিনো সেভেরিনি )

কুসুমের মাসের কবিতা ৮

Carlo Carrà: Funeral of the Anarchist Galli (1910-11)

সাং 
              -রাজেশ শর্মা 


'মম আঁখি হইতে পয়দা, আসমান জমিন।
আর পয়দা করিল যে, শুনিবারে যত।
সবদ, সাবদ, আওয়াজ ইত্যাদি যে কত।।'

           ----হাসন রাজা


বাড়িতে ফিরে এলে উৎসব হয়। জীবিত অথবা মৃত
দু'রকম উৎসব

মৎস স্পর্শ  হবে বলে  বুড়া লোহিত ডিম ভরে পেটে


বাড়িতে ফিরে এলে। উৎসব হবে। জীবিত অথবা মৃত


দেশি, বিদেশি অথবা ডিটেনশনতাড়িত।

(ছবিঃ কার্লোস কাররা) 

কুসুমের মাসের কবিতা ৭

Image result for futurism painting

সংশ্লেষ
             -মীনাক্ষী  মুখোপাধ্যায়

সন্ধ্যা নেশাতুর হলে জোনাকি উড়ে যায়
 চোখ মুখস্থ করে ঠোঁটের তিল
ঈশান কোণের জরুল

বাস্তুসাপ শিকারে তখন নিশাচর
জিভ থেকে খসতে থাকে লালা

গা পুড়ে যাচ্ছে ধুম তাপে
অথচ জ্বর শূন্য থার্মোমিটার

 খুব ভোরে ডুব দিই পুকুরে
কোচল ভরা কাঁকড়া তুলে আনি
উনুনে নতুন মাটি নিকাই
চুলের জলে ভিজতে থাকে পিঠ

বৃষ্টি পড়ে ...

হাঁড়িতে ফুটতে থাকে ভাত
উথলে ওঠে - ঢাকনা  কাপে
পোড়া কাঁকড়ায় ঘোষতে থাকি নুন লেবু লংকা

হাওয়ায় গামছা উড়লে
আঁশটে ও ঘামের গন্ধ  নাকে এসে লাগে
 মোচড়  দেয় তলপেট

ছাতার নীচে জমে ওঠে কাদা

তাপ পরিমাপের একক ভুলে

এখন

পারদ দেখি থার্মোমিটারের চূড়ান্ত ডিগ্রীতে

( ছবিঃ কাজিমির ম্যালেভিচ )

কুসুমের মাসের কবিতা ৬



মেছো থালা
       -সুতপা চক্রবর্তী


ভালোবাসার বেড়াল হয়ে বুকের মধ্যে
থাকা হয় না
নধর বালকের বাঁশিমুখো ঠোঁটে
বাজে তোর কীর্তনীয়া প্রলাপ
আমার প্রসন্ন বিকেল বল্কলপ্রেম জুড়ে ঝড় বয়
অক্ষরে অক্ষরে স্নান চলে
বারুনিঘাটের

আমরা ভীরুহটি
                   পশ্চিমকোণে

 বেড়ালের আদরমাখা  মেছো থালাটির মতো

(ছবিঃ উমবের্তো বোক্কিওনি )

কুসুমের মাসের কবিতা ৫



প্রলাপ
            -রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

যুদ্ধ শেষে ধ্যানমগ্ন দৃশ্যে
চৌচির একছত্র বিষণ্ণ টোপ...

বিপণন শর্করা রাতে
হেঁটে যায় ছায়ার প্রলাপ।

(ছবিঃ নাতালিয়া গোঞ্চারোভা )

কুসুমের মাসের কবিতা ৪




ট্রাম্পেট
           -মৌমিতা পাল

'চললুম ', কথাটা কম করে হলেও
সত্তরবার বললাম।

তাকে ভালোবাসি বলে গুলি করব না এমন দিব্যি খাইনি কখনো,পিস্তল উঁচিয়ে ফালা ফালা করে দেব খুলি ,ধুত্তোর গুলি!তেষ্টা মেটাই আগে !
বুকের কোণে বিপন্নতা ঝনকে ওঠে,
তাকে দেখিনি কয়েকশো দিন ।
এক একটা দিন হাজার সমান ,মরেই যাব !
মরেই যাব ,মেরেই যাব ,
যাহোক কিছু করেই যাব!

বুকের কোণে বিপন্নতা ঝনকে ওঠে,
তাকে দেখিনি কয়েকশো দিন ।

একটা লোক ছবিলাল
একটা লোক বাজপাখি
একটা লোক নাবালক
একটা লোক জলভাত
একটা লোক রাজহাঁস
একটা লোক বিষণ্ণ
একটা লোক জঘন্য

এসব চিনতে প্রেম শিখিনি
বুকের কোণে বিপন্নতা ঝনকে ওঠে,
তাকে দেখিনি কয়েকশো দিন ।

চেয়েচিন্তে খুবলে খাব
ভেবেচিন্তে একলা হব
মালবাবুর বউকে বিছানায় তুলব
দেখেই যাব দেখেই যাব
ধরতে দিলে ভোর ফাটাব
অকস্মাৎ পৌছে যাব
                                তার বাড়ী!

নির্ভুল তাক করে ,'চললুম' বলে ফিরে আসব!

(ছবিঃ জুলে শোম্যালৎজিগগ )

কুসুমের মাসের কবিতা ৩



দেখে দেখে লেখা
                 -জ্যোতির্ময় বিশ্বাস



২৯
এই জানুয়ারিতে তিনটি মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে গেলাম
তারাদের ব্যবহৃত রোদ
পড়ে থাকবে নীহারিকা মেডিকেলে। বসার জায়গায়।

৩০
এই জানুয়ারিতে ক'জন নতুন পরিচয়
মালদা থেকে বীরভূম থেকে শিলিগুড়ি থেকে...
জগতের বন্ধু দিয়ে জীবন ভরে যাক।

৩১
দুটি কাজের তুল্য কাজ নেই
দুই, নিখুঁত থাবায় খামচে টেনে লম্পটের মুখোশ খুলে
ফেলা। এক, বাঁধাকপি কাটা।

(ছবিঃ যোসেফ স্টেলা )

কুসুমের মাসের কবিতা ২

Speeding Motorboat - Benedetta Cappa


সাঁতার উদযাপন
                 -শিবু মণ্ডল 


প্রস্তাবিত ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করার পরেই আমরা সাঁতার শিখব
জলাশয়ের বার্ষিক উদযাপনে হাঁড়ি চড়বে নক্ষত্রলোকে 
আমাদের জলজ সন্তানেরা পিঠে সৌরআলো ধরে হামাগুড়ি দেবে

সাতবছর ধরে ঢেকে রাখা বিরিয়ানির গন্ধে ম ম আজ তুলে রাখা ছুটিবেলা
তুমি কবুল কর আর একবার!তুমি কবুল কর আর একবার!
তুমি কবুল কর আর একবার!

যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তুলে আনা মমি উপত্যকায় পৌরাণিক পরম্পরার ভিড়
আমরা এক সৈনিক ও এক সন্ন্যাসীর মৌন মুহূর্তের সাক্ষী হবো
ধ্যানের নির্জনতায় বারুদের শব্দ ভেঙে দিয়ে

(ছবিঃ বেনেডেট্টা কাপ্পা )