আমি
-কৃপা বসু
মা, বাবা আর আমি খিদের ভেতর কাঠের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে হাঁটু মুড়ে বসতাম ভ্যাপসা দোকানের সামনে। পেটের মধ্যিখান চিরে কত্ত প্লেন ওড়াওড়ি করেছে ছেলেবেলায়।
স্কুলশিবিরে ট্রেনিং নেবার সময় ডালিম গাছের গায়ে ইউনিফর্ম ঝুলিয়ে রাখতাম। সব্বোনেশে হাওয়ার পায়ে জোনাকি গুঁজতাম ময়লা ময়লা পালকে ফুঁ দিয়ে দিয়ে।
ক্রিম মাখামাখির বয়সে মাছ ধোয়া জল গায়ে মেখে বন্ধুদের সাথে স্নান করেছি বহুবার দিঘি পাল্টে পাল্টে। প্রতিবার প্রজাপতির সংসার মরে যাবার পর চিঠির বাক্সে বিঁধিয়ে রাখা মাংসের শরীর জমিয়েছি।
রাত বাড়লেই মৌতাত বিলোনোর চাকরি করতাম সেলফোনে। কতবার চুষে চুষে ছিবড়ে করে ফেলেছি ল্যাংটো বালিশ। পুরষ প্রেমিকের বীর্য মেখে মুঠোর ভেতর ঝড়ের দিন ভরে রাখতাম।
নতুন পদবী গায়ে সেঁটে নির্দিষ্ট অ্যাকোরিয়ামে নির্ভুল সঙ্গম সেরেছি। খিদে মিটে গেলে মেঝের ওপর থুক করে ছুঁড়ে ফেলেছে মালিকপক্ষ। এক পা চলার লোক ছিলনা যে, তাকে নিয়ে ঝাঁচকচকে পলাশের দিন গিলে খেয়েছি।
বন্ধ্যা দেহে বাচ্চা ধরেছি তিন তিনটে। নাড়ি কেটে দুধ দিয়েছি ওদের জিভে। ছাদ ভেঙে আস্ত চাঁদ কুচোকুচো করে কেটে পুরে দিয়েছি জ্যান্ত মুখে। ছেলে মেয়ের দল স্কলার পেয়ে তারা এখন আমেরিকা, লন্ডন।
তারপর থেকেই চিৎ হয়ে শুয়ে আছি হসপিটালের বেডে। সময় পেরোলে ম্যাড়ম্যাড়ে সুতির শাড়িরা যেভাবে একলা হয় একটু একটু করে,সেভাবেই উল্টোদিকের ফাঁকা সিটে চুপচাপ বসি। জাগরণী সন্ধের পাশেই শ্মশান সাজিয়ে বসে থাকে সর্বগ্রাসী ডোম।
এতগুলো বছর নিজেকে কেটে টুকরো টুকরো করে প্লেটে প্লেটে পরিবেশিত করার শেষে, আলটিমেটলি বুঝলাম এক বিন্দু বালির দানা ছাড়া আর কিচ্ছু হতে পারিনি, কিচ্ছুনা।
( ছবিঃ সেভারিনি গিনো)
No comments:
Post a Comment