তিরিশ বসন্ত পেরিয়ে
-জয়া গুহ (তিস্তা)
কেউ কারো হাত ছুঁতে পারিনি অথচ আমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে তিরিশটা বসন্ত
আঙুলে আঙুল ছোঁয়ার আগেই নির্ধারিত হল বিচ্ছেদ
গাঢ় জমাট অক্ষরে মুক্তোর মত লেখা অভিশাপ"ভালোবাসা"
আমার রক্তাক্ত ক্ষত ঢাকে যেহাত
তাকে খুঁজে চলেছি এই তিরিশটা বসন্ত
বুটের আঁচড়ে খোলা ট্রেন লাইনের ধারে থেঁতলে ফেলা আব্রু
শিলাবৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে সাফ সেদিন
কনকনে ঠান্ডায় কুঁকড়ে ওঠা শরীরে মৃত্যুর পরিমাপ সাড়ে তিন হাত
মিনিটগুলোর সাথে পাল্লা দিতে দিতে তুমিও ক্লান্ত এখন
থিয়েটারে,বিচিত্রানুষ্ঠানে তুমি যাও পাশে কার ছায়া?
সেদিনের অন্তর্ধান নিয়মমাফিক নিরুদ্দেশের পাতায়
অন্তহীন উদ্বেগ পেরিয়ে চুলে পাক,চামড়ায় ভাঁজ
অথচ তোমার হাত দুটো আঢাকা,আজ-ও
বুকের মাপে চিবুক ছোঁয়ানো অহঙ্কার আমার একার
ওড়া চুল,উদ্ধত নারীত্ব পেরিয়ে যে কবিতাগুলো তুমি লিখতে চেয়েছিলে
তারা তরুণী চাঁদের মত ঘুমাতে শিখেছে বরফে-পাহাড়ে
তুমি যা কিছু হারাবে, তার সমস্তই আমি হারিয়েছি তিরিশ বসন্ত আগেই
তোমার হাতের বয়স তখন আঠেরো বিশ মতো
তোমার আঙুল আঁকতে শিখেছে,
কেমন করে সোহাগ করতে হয়,শিখেছে কি?
তুমি যা পার এবং পারোনি তার মধ্যে পেরিয়ে গেল তিরিশটা বসন্ত
আমার হাত, পায়ের আঙুল বলে কিছু নেই
অবয়ব বলে কিছু নেই
আমার থাকা আর না-থাকার মধ্যে কেটে গেল তিরিশটা বসন্ত
অনির্বাণ! পাঁচ উপত্যকার আগুন একা পোহাতে পোহাতে
রেললাইনের লোহার ভাঁজে শেষ বারের মত আদর উপচে উঠেছিল তোমার কথা ভেবেই
কাঁপতে কাঁপতে,ছিঁড়ে খুঁড়ে শেষ হতে হতে বুঝে নিয়েছিল
আদতে প্রিয় পুরুষ শরীর,সদ্য পাওয়া স্বাধীনতার মতই
ঝুরঝুরে নোনা ধরা দেওয়ালের ঘেরাটোপে নিজেকে আদর করতে করতে আজ অন্তত এটুকু আবিষ্কার কোরো
আজ এই দিনে নিরুদ্দেশ হয়েছিল আমাদের তিরিশটা বসন্ত...
(ছবিঃ পাওলো স্যাবোরিও)
No comments:
Post a Comment