Friday, 3 November 2017

আশ্চর্য্য ধারাবাহিকঃ হারিয়ে যাওয়া নব্বইঃ পর্ব ৪

Image result for light colour cubism painting

সে আলো, লাজুক নয়, সপ্রতিভ দ্যুতি 
                            -অনিন্দ্য রায়

 তখন আমার  শরীর ভালো নেই। সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে গেছি এক গুমোট সন্ধ্যায়। ওষুধ আর বাড়ির শাসনে আস্তে আস্তে রিকভার করছি। উঠতে গেলে মাথা ঘুরে যায়, বাড়ি থেকে বেরোনো মানা, সে এক অসহ্য জুলাই, ১৯৯৫ । সারাদিন বসে থাকি, একা, টুকটাক পড়ি, কনসেনট্রেট করতে পারি না, মাথা ভারী হয়ে আসে। সারাদিন এক অসহনীয় পাথর শরীরে নিয়ে বসে থাকি। বিকেলে ঝাপসা হয়ে এলে সে আসে। সে জয়, আমার আনন্দ। তারপর আমাদের গল্প, বাংলা কবিতা নিয়ে, পাশ্চাত্য সঙ্গীত নিয়ে। ওটুকুই আমার বেঁচে থাকা ওই দিনগুলিতে। জয় ওর ডাকনাম। শুভব্রত দত্তগুপ্ত। আমার  শহর ছেড়ে কলকাতা চলে যায় কিছুদিন পর, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ওর কাজের জায়গা ।এবং বিজ্ঞাপন। হ্যাঁ, কবিতা লেখে।
 ২০০০-এর বইমেলায় বেরোল ওর প্রথম কবিতার বই, লাজুক অন্ধকার।প্রকাশক প্রথম আলো, তরুণ চট্টোপাধ্যায়। দাম : পাঁচ টাকা। এক ফর্মার কাব্যপুস্তিকা ।
 উৎসর্গ : মা ও বাবাকে ।
নদীর গল্প বল... বারান্দায় মোড়া টেনে বসি
লাস্ট ট্রেন চলে গেছে শিবুদের পাঁচিল কাঁপিয়ে
পকেটে নারকেল ভাজা নিয়ে কাকদ্বীপে যেত যে কিশোর
আজকাল
সে রাসেল স্ট্রিটে পাথর ভাঙছে 
আমাদের পশমহীন জীবনে কেবল টায়ারের গন্ধ
শিরীষকাগজে এই অবিরাম মুখ ঘষা, হাড়ের নৃত্য দেখে
শিরদাঁড়া ভিজে যাওয়া মাঝরাত্তিরে
আমরা কি কোনোদিন মুখ তুলে চিল দেখবো না?
নদীর গল্প বল,
যে আমার অভিমানে জলছড়া দেয়। 
( সুজনেষু )
এমনই মায়াময় তার কবিতা। তার বই।প্রতিটি শব্দ পাঠককে আবিষ্ট করে ।  
আমাদের আলোচনায় প্রায়ই উঠে আসত ‘ট্রান্সক্রিয়েশন’ শব্দটি। নিজের চারপাশে দেখা দৃশ্যকে, ঘটনাবলীকে কবিতায়, ভাষায় আবার নতুন করে নির্মাণ করা। আর সে নির্মিতি কবির সম্পাদনায় হয়ে উঠবে এক নতুন দৃশ্য, নতুন ঘটনা, নতুন পৃথিবী – এই, ছিল আমাদের বোঝাপড়া তখন। 
শুধু শিল পড়ার শব্দ ।
জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকছে কড়িবরগাহীন রাত
ডুবে যাচ্ছি অন্ধকার হাত রাখছে কোমরের নীচে
সমস্ত জীবন একটা কফিনের মধ্যে শুয়ে আছি,
শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাচ্ছে লবণাক্ত মেঘ ।

পর্দা সরিয়ে আজ বাইরে তাকাও
সেই রাস্তা খুঁজে নিতে হবেই তোমাকে, যেখানে
রাতের সঙ্গে হোলি খেলছে চতুর্দশী চাঁদ । 
( পুর্বাচলকথা )
 কোথাও হোঁচট খায় না তার উচ্চারণ, সাবলীল। চিত্রকল্প থেকে চিত্রকল্পে অনায়াসে নিয়ে যেতে পারে আমাদের। তার চারপাশের বিনির্মাণ ও নবনির্মাণ এক সুর তৈরি করে, এক আলোছায়ায় প্যাটার্ন তৈরি করে চেতনায়।
তোষকের মধ্যে ঘন পূর্বজীবন 
সুষুম্নাপোকা জানু পেতে আলো ভিক্ষা করে ।
উঠে ডাঁড়ায় আসমানে

কড়িকাঠ ছুঁয়ে আছে সবুজ মিনার । দলবেঁধে
মেছুনীরা আসে
হৃৎপিণ্ড কাদা হয়, জন্মের প্রথম দিক অনেকটা
রুটির মতোন

চাঁদের চর্বি লেগে তৈলাক্ত মুখ । কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে 
অন্ধকার পায়ের আঙুলে ।
শালিখের পাশে দিঘি, হলুদ কুশূল-মেঘ
ভিনিগার ঢালে ঈষদুষ্ণ চুলে 
( তৃণজন্ম )
রিয়েলিটি ও কল্পনা মিলেমিশে যায় তার লেখায়, নীচু স্বরে বর্ণনার মায়ায় সে আমাদের অন্য এক রিয়েলিটির মুখোমুখি দাঁড় করায়। 
দু’সমুদ্র আর্তনাদ ড্রয়ারের নীচে
দুটো পেন পরস্পর মাথা বদল করে । আবছা কিনারে দাঁড়িয়ে জলের কেশরে হাত
দিয়েছি, কখনো প্রহরী রহস্য টের পেয়েছিল। পিরানহা ছেঁকে ধরে নিখিল
কবজি । বুঝি, এক বালিশের হুল অন্য কানে পালক হয়েছে ।

প্রথমে সবুজ ছিল টুপিবোনা উল্‌ । তাঁবু ছেড়ে উঠে আসছে আপৎকালীন চোখ ।
নৌকো চালনায় যুবা দক্ষ নয় বলে গিরগিটি গায়ে ডিম পাড়ে – নিদ্রালু ডিম;
আমিষ শুক্রগন্ধে সন্তপ্ত হরিণপৃথিবী ।
( ডিম )
কলকাতা গেলে আমাদের দেখা হয় মাঝেমধ্যে। 
আমার মা যখন অসুস্থ নিজের কাজ শেষ করে দেখা করতে আসত ঠাকুরপুকুরে। তারপর রাত্রি যখন সান্ত্বনাহীন, ফিরে যেত সল্টলেকে। 
আমার জীবনের দুই চূড়ান্ত অসময়ে সে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, হাত রেখেছে কাঁধে।  
একদিন ক্যুরিয়ার একটা খাম দিয়ে যায়, খুলে দেখি কার্ড, বিয়ের কার্ড, জয়ের ।
তাতে ‘ দুই হাতে দুই মশাল দিও/ শান্তিও চাই অশান্তিও’ এই অমোঘ বার্তা মুদ্রিত।
নিজের কাজের জগতে পরিচিতি বাড়তে থাকে তার। গানে ও বিজ্ঞাপনে সে তখন রীতিমতো নাম, জয় দত্তগুপ্ত। 
আরেকটি কবিতার বই বেরোয় । 
তারপর?
লেখে না আর? পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই না তো। 
কবিতা থেকে সরিয়ে নেয় নিজেকে। 
নব্বইয়ের এ এক প্রবণতা, লেখালেখি থেকে সহসা নিজেকে সরিয়ে নেওয়া। অন্য কোনো মাধ্যমে ব্যস্ত হয়ে পড়া। 
জয়ের স্নগে ফোনে কথা হয়, কবিতার কথা উঠলে বলে, “ শুরু করেছি আবার”। 
হ্যাঁ, আমার বন্ধু আবার কবিতায়, স্বচ্ছন্দে, ঝকঝকে, আদ্যন্ত স্মার্ট শুভব্রত।
বলছি তো, একটুও লাজুক নয়, একটুও অন্ধকার নয়, আলোর আদর লেগে থাকে তার হাসিতে, তার কবিতায়। 

(ছবিঃ জর্জেস ব্র্যাক) 

Thursday, 2 November 2017

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৮

Image result for abstract painting mongolia

অস্তিত্ব
         -অনিন্দিতা ভৌমিক

ঘুরে তাকানোর মতো কিছুই ফেলে যাচ্ছি না আমরা। শুধু বন্ধ আর খোলার মাঝে এই যে কণার স্রোত, সেটুকুই অবিচল পড়ে থাকে। পর্দার আড়ালে চরিত্রের গায়ে থাকে পুনঃপ্রকাশের দৃশ্য। অনেকটা গতিময়।জ্যান্ত।যেভাবে একাত্মবোধের আগে কখনো নিভে যেতে চাইতাম।শীতের ভেতর আঙুল রেখে দেখতাম কতটা রোমকূপ জেগে ওঠে। আলোর ভেতর কতটা পাক খায় এক একটা বিশেষ অনুভূতি।

তবে কি মৃত্যুর কথা বলছি? টকটকে লাল অবসাদের দিকে পা তুলে ভাবছি অন্যভাবে যোগাযোগের কথা। তোমার ঝুঁকে আসা মুখ অথবা ঋতুস্রাবের যন্ত্রণার কথা। 

আর একবারের জন্যে অন্তত দেখা হতে পারতো আমাদের।স্বাভাবিকতায় নিবিষ্ট হতে পারতো কিছু ব্যাখ্যাতীত অংশ।তীব্র আবেদনময়। ঘুরে তাকানোর মতোই দীর্ঘ।

(ছবিঃ ওয়াসিলী ক্যান্ডিনস্কি) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৭

Image result for abstract painting india

লোনলিনেস
         -হাসান রোবায়েত 

বিষন্নতার ভেতর
একটি বাগান কীভাবে উদ্যাপন করে ফল!
এইসব বেঁচে থাকা ভালগার
অন্তিম লুপের সাথে দেখা হয় ভাষাটির
ঘুরে ঘুরে
অবিমিশ্র হাইফেন ফিরে আসে—

গমক্ষেতের পাশে গোলক-সূর্যোদয়
দূরপাল্লার এক সুইসাইডে
রঙ লাগছে
আর মালগাড়িটায় ভিজে যাচ্ছে
আমার লোনলিনেস—

ভাষা—অহেতুক অর্থের দিকে যেতে চায়!

(ছবিঃ মণীষা বেদপাঠক) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৬

Related image

প্রতিসরণ
             -তন্ময় ধর 

 আলোকে না জানিয়ে খানিকটা খাবার আমি তুলে রেখে দিই। টাইমলাইনে কেউ এসে লিখে রেখে যায় ‘আমি শিশুর মতো থাকতে চাই’। সত্যিই তার গর্ভাশয়ে জটিলতা বাড়ছে। স্বপ্নের বাঁদিকে অন্যরকম হাঁটা শিখছি আমি
জলের শব্দে, বুদবুদে, বাস্তবতায় আবার পড়ছে আলো। মাংসের টুকরোগুলোয় মশলা মাখাতে মাখাতে তুমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছো। হেমন্তের নতুন ভাতের ফেনা ঢুকে পড়ছে তোমার নষ্ট সংসারের ডি মেজরে
আজীবন যুদ্ধের পর তোমার অপেক্ষায় আলোর পিছু নিয়েছি আমি। আকাশের পুরুষচিহ্ন চোখের যন্ত্রণায় ডবল...ট্রিপল... বেনিয়াসহকলা। আমার সহনসীমায়ও বেনিয়ম ঢুকে যাচ্ছে। আমার হাতে-নখে-চামড়ায়-মুখগহ্বরে ক্রমাগত সুর বদলে দিচ্ছে আলো 

(ছবিঃ ড্যান ওয়েলিংটন)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৫

Related image

প্রতিক্রিয়া
           -অভিশ্রুতি রায়

তবুও বিকেল
বৃষ্টি নামার তাগিদ দিয়ে যেত
কত হাত ফসকানো মাছের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ হতে পারতাম
স্ট্রিট লাইটের নিজস্বতা
আর নিজের খনিজসম্পদ
কতটা রঙিন...
একটা চারাগাছ চেয়েছিলাম ঘুমের কাছে
অথচ স্তব্ধ আমায় পৃথিবী কিনে দিল

(ছবিঃ সের্গ উইয়াডার্নি) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৪

Image result for wildfire abstract painting

লাহা ডুংরি
              -শৌভিক দে সরকার


একটি পা লিখলাম
পা-এর সমাহিত অর্থ লিখলাম
পা-এর জড়ো করা অধৈর্য, ছদ্ম পলাশ লিখলাম

মেঘের তির্যক লিখলাম
বসন্ত বিহীন মাটির সংঘাত লিখলাম
প্রতিস্থাপনের পর কীভাবে অতিক্রমণের
রাস্তাটি পাল্টে ফেলে চোখ
কীভাবে খুঁটে দ্যাখে অশ্রুসজল
মেঘগুলির নিচে উড়ে যাওয়া নশ্বর কাক

মেঘের বর্ণ লিখলাম
ফেরতযোগ্য একটি দিন
নখের আলস্যে গেঁথে যাওয়া ম্যাজিক ভ্যান

আগামী বছর আরও নিচে
নেমে আসবে মেঘ
পাহাড়ের গোড়ালির কাছে
আখের ক্ষেত আর নিয়ন্ত্রিত সেচখালের ভূমিকায়

(ছবিঃ ডেবরা হুর্ড)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১৩

Image result for wildfire abstract painting

সমুদ্র
       -স্বাগতা সিংহ রায়

১।
উন্মাদ যার আছড়ানো
ফাঁদ পেতে ফ্যানা ধরা
দিলাম ঢেউ তার নামে-
পথ জুড়ে কত ভ্রমণ।

২।
জলজ দেহে এত কম্পন
ফাটল বুজিয়ে পরিবর্তন
তিমির টানে ট্রলার ডোবে
মৎসকন্যার মৃতদেহ ভরাট


৩।
বালু আঁচড়ে এত অস্থির
নোনা বাতাসে জীবিত স্বপ্ন
কিনারে এসে স্তব্ধ হয়
ঢিউ -এ যার লাশ হারিয়েছিল

৪।
হৃদ থেকে কয়েকটা ঢেউ
যে যাও,ফিরে এসো
যেমন করে জোয়ার ভাঁটা-
দুকলমে সমুদ্র বুনে ফিরে আসে।

(ছবিঃ উইলিয়াম অলিভার)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১২

Related image

অনৃতভাষণ
             -অনিন্দিতা গুপ্ত রায়

সকালের রঙবদল টের পেতে পেতে
একদিন কিভাবে যেন ফুরিয়ে আসবে তুমি
ফাটলের কোনো শব্দ নেই অথচ
গূঢ় মৃদু প্রতিশোধ আছে পাপবোধ আছে
শিকড়ের অন্যমনস্ক চলাচল
আচমকা উপড়ে ফেলায় সংকেতহীন
এই যে জ্যামিতি এই যে পুতুলের ভিড়
লোফালুফি খেলতে খেলতে আকাশের দিকে
উড়িয়ে দিলে হাওয়াভর্তি সমস্ত সঙ্গীত
তুমি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারবে না আর

(ছবিঃ লিন্ডা রিয়ান)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১১

Related image

মেরুদণ্ড ও যাবতীয় সকাল
                    -অ নু স ঞ্জ না ঘো ষ

আমার শহর পেরিয়ে তোমার বাইপাস। ভাঙা রোদ্দুর, কাঁচা গাছ আর অর্ধবৃত্তীয় আবর্তন। নিয়মিত পার করছো উঠোন, উঠোনের যাবতীয় রং। প্রজাপতি জানে গতিবেগ যাই হোক না কেনো, দূরত্ব  কয়েকটা সংখ্যা মাত্র।

ক্ষয়ে যাওয়া মেরুদণ্ড এখন ঈশ্বর মুখীন। হেলে থাকে স্রোত, স্রোতের উপাচার। মন্ত্রমুগ্ধ ফানুস। তুমি দীপাবলি ওড়াও শোক পালনে। বারুদের গন্ধে ভিজে থাকা আঙুল জ্বলে ওঠে পুরোনো শহরের কাছে এলে। গোছানো রাস্তা, বাইপাসে সাজানো জোনাকি এলোমেলো করে দেয় সমস্ত ভুল। দূর হতে থাকে নক্ষত্রের আলো। তুমি হয়ে ওঠো অমাবস্যা, গ্রহণ, আরও আরও আরও অনেক বেশী কালো.....

(ছবিঃ জ্যাক ভ্যানজেট)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১০

Related image

পোষ্ট মেনোপজ
           -সুতপা চক্রবর্তী 

 আপোষ এর বাসন ঝন ঝন করে
মেজাজ খামচি দেয়
ঋতুবদল হতে গিয়ে  ঋতুস্রাব হয়
পুরুষ তোমার ও
কষ্ট হয় খুউউব....
ঘুটঘুটে আধাঁরে আলো ফোটাতে হাত পা ছড়ে
ইনসমেনিয়াক পাখি রাতজাগা শেখায়


                                    র

প্রতিটা জন্ম ব্যর্থ হলে

গৃহী পাখিরা অন্য কোন ঘরে

সাজায় ঋতুকাল

(ছবিঃ কিম ওয়েস্ট) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ৯

Image result for light abstract painting

অণুবীক্ষণে লেখা চিঠিগুলি (শেষাংশ) 
         - নীলাদ্রি বাগচী

চ. ধরো
ঘুম ভেঙে উঠে দেখলে
দূরের বাতাস তোমার পর্দা ছুঁয়ে, চোখ ছুঁয়ে, ঘুম ছুঁয়ে তোমাকে
বাংলা বানান নিয়ে ভাবতে বলে গেল....
কি করবে?
আবার বাজার যাবে নাকি
তুড়ি মেরে বাতাসকে উড়িয়ে বলবে,
যা এখন
ফাগুনে আসিস

এখন ঘুমোবো আমি সারাটা শরৎকাল ধরে....

ছ.
কে তুমি বেগুনী ঠিক ফুলের মতো ষষ্ঠী ভোর গুছিয়ে চলেছ? মাঝেমধ্যে মনে হয় জাদু শব্দের উৎসে এরকমই বেগুনী আগুন ছোঁয়া ছিল। আর তাই, ধ্বনির বিরুদ্ধে গিয়ে সারাদিন লড়ে যাচ্ছ একবগ্গা বিচারালয়ের পর বিচারালয় ছুটে ছুটে।
প্রশ্ন হল কি পাবে শেষাবধি? অর্থ, যৌনসুখ, নাকি শুধু  প্রতিবাদ তাই তুমি এই ভোর বেগুনী করেছ? কি পাবে ভেবে দেখো। এবং জানিও তাকে, যে আসছে সকালের প্রথম রৌদ্রে, যার মুখ জনসমাবেশ থেকে তুমি গড়ে দিয়েছিলে। তুমি ভাব বলেই সে আছে।
নইলে ম্যাজিক তাকে এতদূর নিয়ে গেছে যেখানে রাস্তা নেই, পাকদণ্ডী নেই কোনো, আয়ু নেই, পানীয় জলেরও কোনো সংস্থান সেখানে থাকে না....
অণুক্ষণের চিন্তা বোধকে আচ্ছন্ন করে, হয়তো বা আবেশে জড়িয়ে দেয়.... এর অধিক কিছু নেই, কিছু হতে পারেও না, ষষ্ঠী সকাল শুধু হিন্দি গানে বেলায় চড়াও হতে থাকে....

জ.
অকারণে শব্দ আসে, অকারণে শব্দ চলে যায়। দুদিন লিখি নি মানে দুটোদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে গেছি আর আজ আচমকা ঘুম ভেঙে শুনি অকারণে শব্দ যাচ্ছে, শুধু তার নূপুর নিক্কণ রেখে যাচ্ছে বারান্দায়, ঝরা পাতাদের চারপাশে।
দাবী এই, ঘুম হোক। ঝরে যাক অকারণ পাতা। উন্মাদ সুস্থ হোক। জাগো নদী, জাগো বৃষ্টিস্নাত নাচের মুদ্রা। আমাকে বিদেশ দাও। আমি এই পদবীকে আকাশে বদল করে পুনর্বার ফিরে আসব। সে আসবে, অবশ্যই। শুধু সেই মানুষের পকেটে দাবীর বদলে স্নেহ থাকবে, স্বপ্ন থাকবে....
ভালোবাসা শব্দের জন্য এভাবেই বেছে নেব মৃত্যু আর তোমাকে সম্পূর্ণ করবে আমাকে যে ছেড়ে গেছে সেই শব্দ, শব্দভাণ্ডার....
ঝ.
রূপবান শব্দটির বিপরীতে বসে থাকা উন্মাদ ভয় বাধ্য করে ভোরে উঠতে। লোকক্ষয়কারী কাল দিক নির্দেশ করে। যা পূর্ব, যা নির্দিষ্ট, চূড়াবদ্ধ কেশে সে চুপচাপ পাশে এসে বসে। ধীরে ধীরে আলো বাড়ে। দিনের প্রকৃতি স্থির হয়। কৃষ্ণবর্ণ পুরুষের রক্তচক্ষু শান্ত তাকায়।
ঠিক এর বিপরীতে কোনোখানে গভীর গভীর ঘুমে তুমি আলোপথে পা ফেল, পা বাড়াও। আর তো কয়েকটা দিন তারপরই দীপাবলি। সম্ভবত স্বপ্নে তুমি ততদূর আরামে পৌঁছাও। নমস্কার বিনিময়, হাসি ভাগ করে, উল্লাসে পার কর কদিনের স্বদেশ জীবন...
সাবধানে ফিরো আর আরও সাবধানে আগামী জীবনটুকু যত্নে সাজিয়ে তোলো। রঙ আসছে জীবনে; ভালোবাসা, বুঝতে পারছ দূরের পাহাড়ি নদী ক্রমশঃ নিকট হচ্ছে তোমাকে ভিজিয়ে দেবে বলে। সেজে ওঠ সেইভাবে, সাদাকালো অথবা রঙীনে, চরম বৈভবে...
সকাল গড়িয়ে যাক, রক্তচক্ষু স্থির হোক আরও। অনিবার্য বুঝে নিতে আমিও পথেই যাব, প্রান্তরে, অন্তিমে... হারিয়ে যাবার আগে মানুষ যেভাবে হাসে সেরকম সাধারণ হাসি হেসে...

ঞ.
যুগলের ছবি দেখি, কেটে যায় অনেকটা সময়। স্মৃতির মাদুরে এই সব ছাপ আজ বহুদিন ধরে পড়ে আছে। কালো পোশাকের কবিরাজ যেন- এরা আসে সেইভাবে , প্রয়োজনে এরা চলে যায়। নষ্ট করে অনেকটা সময়।
সময়ের দাম নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভেবে যাচ্ছি। দাঁড়িপাল্লা প্রথা নিয়ে। শেষ অবধি নিয়ে এসে হাত ছেড়ে চলে যাওয়া বাতাসের সাথে খাদের কিনারে আমি ধীরে ধীরে মজা পাচ্ছি।
বলতে পারছি, পূর্ণ হও, বদলে যাক ধরণ গঠন, নিজেকে আবার পড়তে কতখানি মজা সেটা ধীরে শোণিতে মেশাও।
ব্যস্ততা কিছু নেই। কারণ যেকোনো বাস সেখানেই নিয়ে যাবে যেখানে পোশাক সহ বৈদ্যুতিক চুল্লি অনায়াস নিয়ে নেয় ... নষ্ট হতে দেয় না কিছুই...

(ছবিঃউটে লাউম)

দেবদীপাবলীর কবিতা ৮

Image result for light abstract painting

এলোমেলো কয়েকটি লেখা
             -সত্যম ভট্টাচার্য

এক

অনেকটা পথ বেয়ে আজ উঠে আসা ছিল।তারপর ঢুকে পড়া এই অনন্ত চুপচাপের ভেতর।কথা বলছে বৃষ্টি।কথা বলছে বৃষ্টির পর পাতা খসার জল।যেন হাত বাড়ালে ছুয়ে দিতে পারে ঐ পাহাড়ের ঝর্ণাকে।এখানে কোন আবহের দরকার হবে না।এতো,এতো সহজ এই ঢুকে পড়া।সহজ...গড়ানো সময়।

দুই

এভাবেই চোখের সামনে উঠে যাচ্ছে একটা পর্দা।তুমি দেখছ ব্যস্ত মানুষজন কিভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিমুলবাড়ির হাটে।রক্সি,পুরো রক্সিময় রবিবারটা সোজা উলটে আছে।আর ঠিক তখনই আলো,লো ওয়েস্ট জিন্‌স্‌।একবার ছুয়ে দিয়েই সরে সরে যাওয়া কতকিছুর।শুধু লেগে থাকা ডেনিম...কাজলে।

তিন

দূরে ক্রমে বড় হয়ে উঠছে ছেলেবেলারা।কুয়াশার ভেতর পাশ ফেরা ট্রেনলাইন।লাইন বরাবর চলে যাওয়া।আজ সারাদিন বা পাশে কাঞ্চন।সারাদিন অকারণ।কত নুড়ি কুড়োনো সকাল কাটছে এভাবেই।আর সকালের চিঠিরা বন্ধ,কেমন হঠাতই চলে গেল লেটারবক্সে।প্রতিদিনের বাসের জানালা থেকে তুমি ছুড়ে ফেলতে চাইছো আক্টা একঘেঁইয়ে টিকিট।তোমার মনখারাপ।

(ছবিঃ মিশেল আর্মাস)

দেবদীপাবলীর কবিতা ৭

Image result for light abstract painting

নির্বাসন
    -টিপ্ লু বসু


জানি উত্তর পাবোনা
জানি কোনো প্রশ্নও করবেনা তুমি
ছায়াপথে দুধসাদা কুয়াশারা গাঢ়তর
নক্ষত্র হারিয়ে যায় নিজস্ব ব্ল্যাকহোলে;
ভালোবাসা মানে যদি জানো প্রশ্নহীন আনুগত্য
বিতর্করহিত অনুমোদন বা
বন্ধুহীন একক স্বজন -----
জলের গভীরে মালভূমি জেগে ওঠে
মাথা তোলে অচেনা পাহাড় !
ঘটে যেতে পারে জলবিভাজন।
গন্ডোয়ানা ও লাওরেশিয়ার মিলনে
যেভাবে তৈরি হয়েছে ভারতবর্ষ
সব ভুল ভেঙে দিয়ে গড়ে দাও অমল উপদ্বীপ
ভালোবাসা নামে
অথবা দ্বীপান্তরে নিয়ে যাও
দাও স্বজনহীন নির্বাসন !
উত্তর দিওনা   নিরর্থক প্রশ্ন কোরোনা
শুধু জেনো , নির্বাসন মানে এক প্রয়োজনহীন নির্লিপ্তি
নয়নাভিরাম প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে ফেলা জীবন
কালো জলের অতল আহ্বান

(ছবিঃএরিন ওয়ার্ড) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ৬

Image result for light abstract painting

পরনের শূন্যথান
    -অনন্যা ব্যানার্জী

অপেক্ষা করে আছি কখন আঁধারের গায়ে ছড় লাগবে বেহালাবাদক,বেদনার ধুন চিরে লাগবে আখের শ্বাস সজল।
আহত প্রতিবর্তে শিশির ধুয়ে ফেলবে রাতের কপাল, ছড়ে ছড়ে লাল হয়ে আসবে আঁচড়দাগ…যে কপাল করে এসেছি ভাবলে আমার সীমন্ত নাম পাবে সকালবতী….যার চোখের ডানা ছুঁয়ে উড়ান ফেলে যাবে সহস্র মরাল,একটি পক্ষীরাজ।

দুহাতের ভালে তার আশাবতী জন্ম নেবে আড়াইটি কোকনদ…অর্ধেক,ইজারা আমার।
মেঝেতে আমার মানুষ ঘষলে আশ্চর্য জ্বলে মণিবন্ধে,
যে শব্দের গ্রহণে নিভে আসে অঙ্গারের শাবক,তাকে খাক..খাক গিলে নিক সরলগরল,গ্রীবাটি প্রভাবতী।

এমত বিহ্বলে ঝালে শিস দিলেও গালিবের দৌত্য বেজে ওঠে…বিব্রত আমি মরা নাইটিঙ্গেল রাখি,অযুত অযুত,অস্তনাভ দানে।

(ছবিঃ ক্যারেন সালুপ)

দেবদীপাবলীর কবিতা ৫


Image result for abstract painting china

সোহাগির _সংসার
       -জয়া গুহ(তিস্তা)

শুকিয়ে আসা ঠোঁট জিভ বোলাতে বোলাতে অস্ফুট উচ্চারণে জানাল''জল''
টিনের চালে হেমন্তের হিম জাঁকিয়ে বসে এসময়ে
হ্যারিকেনের নিভু আলো,
জলের ফোঁটায় চিড় খাওয়া কাঁচের দাগ সুস্পষ্ট
ঠিক যেমন সোহাগির পাতা সংসার
বাপ মায়ের দেওয়া দু-গাছা চুড়ি আর পিতলের কলসির সাথে বেপাত্তা 'সে'
তিনমাস পেরিয়ে চার মাসে পা
ভেবেছিল কলকাতায় রুটিরুজির খোঁজে
'সাথে শাঁখাপলা পরা ফরসা মত মেয়েমানুষ,
শ্যামবাজারের গলিতে'
নেপালের বউ পরশু গল্প করছিল ঘাটে
কাছে যেতেই ফিসফাস!  তামাসা!বিদ্রূপ কিছু

গত বর্ষায় জলপটি! একটানা তিনরাত জাগা
পিলসুজ বাঁধা রেখে হরলিক্স,ওষুধের শিশি
''এ জীবন আর আগামী একশ জন্মের মালিকানা তোর, বউ''

অসময়ের বর্ষা!টিনের চালের ফুটো চুইয়ে সোহাগির মুখে
টুপটাপ!টুপটাপ
"আহা!সাক্ষাৎ মা লক্ষী গো,নয়ত বাগদী বেটি হয়ে শাঁখা সিদুর পরে লক্ষীবারে গত হল?"

(ছবিঃ চেন পিং ) 

দেবদীপাবলীর কবিতা ৪

Related image

বাতাস জানান দিচ্ছে
             -কস্তুরী সেন

কী যেন লেখার মত মনে পড়ছে,
হাতে লিখে গত জন্মদিনে ;
দিন কিংবা জন্মই, ভেসে আসছে রাজগীরে যেতে
অস্থির মাঘের জ্যোৎস্না, ভেসে যাচ্ছে রাজগীরে রাত...

এবারও কাছেই ছুটি,
বাতাস জানান দিচ্ছে, খুঁজে মরছে চটিবই,
 নাম লেখা কবে এককোণে --
'পড়েছি' 'পড়ব' ব'লে জানাচ্ছিই,
হে মার্জনা স্মরণম্...ত্বমহি স্মরণম্...

সেবারেই খাঁ খাঁ রাতে, তিনকাল ভোলানো জ্যোচ্ছনায়,
বুকের নিবিড় ওমে জমে উঠল বিন্দু বিন্দু মধু,
বাঁশিতে পান্নালাল, কে যেন কাছেই, খুব কাছে এসে শুধোবেও ঠিক ছিল -
'হি ইজ দ্য লাকি ওয়ান?' ব'লে!

স্বপ্নে এত ভাগ্য আসে! জ্যোৎস্নায় জড়িয়ে নিচ্ছি থইহীন শাড়ি
এবার জানান দিচ্ছে স্বপ্নে পাওয়া দরদালান, বুকে সেই চন্দ্রমুখ ক্ষত
প'ড়ে নেব হস্তাক্ষর, চটিবই সূত্রে এসো,
বঁধু মোর, কীসে অসম্মত?!..

(ছবিঃ সামান্থা কেলি স্মিথ)

দেবদীপাবলীর কবিতা ৩

Image result for light abstract painting

 আহত আকাঙ্ক্ষায় 
  -বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় 

ভাঙা আয়নার পাশে চলতে চলতে
সে দেখল ছায়া ছায়া মেঘ
আকৃতি বদল হচ্ছে
এই যে হাতের কাছে যা দেখছে
পড়ছে  শব্দ শব্দ অক্ষরপ্রতিমা
বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন
হাতে হাতে
আঘাতে আঘাতে

আবার তুলে আনছে ঝুলে থাকা প্রত্যয়ী ইশারা ।

আহত আকাঙ্ক্ষা তবু নড়ে ওঠে
ভাঙাচোরা ছায়াটির পাশে ।

(ছবিঃ ন্যান্সি একল)

দেবদীপাবলীর কবিতা ২

Image result for light abstract painting


কার্তিক জোনাকি
            -শিবু মণ্ডল 

কোনো এক গৃহকর্তার বাড়িতে শরতের পর শরত রান্না হচ্ছে
বছরের পর বছর আমরা টিপে টিপে দেখছি তার ফুটন্ত ভাত
হাঁড়ির ধোঁয়া ওঠা ষড়যন্ত্রের গন্ধে পাখিরা উড়ে যায়
হেমন্তের দিকে। বুকখোলা রাত আয়োজনের অন্ধকারে থাকে কেউ কেউ
হাতের মুঠোয় এক-দুই-তিন-চার-পাঁচকড়ি নিয়ে !

রাত মেপে মেপে উড়ে যায় কার্তিক-জোনাকি শীতের দিকে
যেতে যেতে বলে যায় সামলে রেখো তুমি আকাশটিরে
কুয়াশায় কুঞ্চিত ভোরের মত ভারী হয়ে আসে মন
শরীর শুধু সামলে নেয় লম্বিত রাতের শরীরে ভেসে...

(ছবিঃ সারা শেরউড)

দেবদীপাবলীর কবিতা ১

Image result for light abstract painting

শিরোনামহীন
            -রঙ্গন রায়

জয়েন্টে টান দেওয়ার প্রতি এই যে আমাদের ভালোবাসা , অথচ প্রতিদিন মানুষ এড়িয়ে হাঁটি। এইজন্যই রাস্তার ওপারে চলে গেছি , আনন্দ ও সংশয় জমতে শুরু করেছে মনে।

'একটা মেয়ে পোষা যে কত ঝক্কির'
হ্যাঁ , ঠিক এরকমই কথাটা বলেছিল সে , এরকমই ভাষা। আমি দুদিন চুপ করে গেছিলাম। বাড়ির বেড়ালকে খেতে দিইনি। পোষাক খুলে ফেলেছি নগ্নতার গোপনে - তোমায় টেক্সট করিনি - ফোন করিনি , নেশার আভাস টুকু গলায় ছড়িয়ে ছিল শুধু ...   বন্ধুকে মিনতি করি , এ ভাষার বুকে চাবুক বসানোর। তীব্র ভাবে এ আমার প্রার্থনা ...  যারা নিজেকেই পোষ মানাতে পারিনি
হা প্রেয়সী ,                                                                                                                                                         তুমি দেবীর মত এদের পোষাক পড়া শিখিয়েছো                                                                                                অথচ পোষাকের ধারণা সহজলভ্য করনি

(ছবিঃ ন্যান্সি মার্কলে)