‘ফিরে পাওয়া মানে আবার হারানো শেষমেষ’
প্রলয় থেকে প্রলয়ে
- অনিন্দ্য রায়
বন্ধুত্ব হারায় না, নব্বই হারায় না ।
তবু, কেউ কেউ আজ আর আমাদের মধ্যে নেই । নব্বইয়ে কবিতাবন্ধু হারানোর যন্ত্রণা আমি প্রথম পাই তার কাছ থেকে ।
“ বিষণ্ণতা, ফিরে পাওয়া রুদ্রদিন
আপনাকে যোগভাগের সরল নিয়ম
শেখানো হলে শুরু থেকে নষ্টামো
সংক্রান্ত স্কুলিং-এর হাল হকিকত
হানাদার বিশ্বাসগুচ্ছ হাতে নিয়ে
মশারি গোটানোর প্রতিযোগিতায়
বোনাসসমেত আইফেল প্রচ্ছদে
জেগে থাকা আটজোড়া সিলভার দণ্ড
ও যাদুকরের আটরঙের কোমরবন্ধ
এবার আপনাকে শেখানো হবে
চিমনিবিহীন উড়ে যাওয়া এবং সরল
থেকে জটিলীকরণ, ফিরে পাওয়া মানে
আবার হারানো শেষমেষ
লাশঘরের দিবারাত্রি”
( ফ্রেম )
‘ফিরে পাওয়া মানে আবার হারানো শেষমেষ’, কিন্তু হারিয়ে যাওয়া মানে ফিরে পাওয়া নয়; জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে চলে যাওয়া তার ।
ছিল কিডনির অসুখ, গ্লোমেরুলো নিফ্রাইট্রিস আর শরীরময় ছিল অভিমান, ভালোবাসা, বিরহ ।
একটা সময় এই শহরেই থাকত সে, আমাদের একই বন্ধুবৃত্ত, সাইকেলে ঘোরাঘুরি, হইচই । তখন কলকাতা মাঠের স্টার স্ট্রাইকার সঞ্জয় মাজীও তার বন্ধু । অথচ সে নিজে কোনো আক্রমণভাগেই নেই । নির্জনতার ব্যাধি একটু একটু করে গ্রাস করছে তাকে ।
“ প্রতিদিন কিছুটা ছায়ার লোভে সকাল সাড়ে ন’টা
প্রতিদিন কিছুটা সুগন্ধের লোভে
নাক উঁচিয়ে সকাল সাড়ে ন’টা ।
আমাদের হাজার বছরের পুরনো সম্পর্কহীনতায়
বার বার ফিরে আসে সকাল সাড়ে ন’টার ডকুমেন্টারি
সকাল সাড়ে ন’টা মানে আলতো করে
মুখ নামিয়ে শিশুপাঠ থেকে বিরতি
সকাল সাড়ে ন’টা মানে যাবতীয় ফাইমরমাস
সকাল সাড়ে ন’টা মানে নির্দিষ্ট জনের
চিন্তা জড়ো হয়ে থাকা একটা গোটা হৃদপিণ্ড
সকাল সাড়ে ন’টা মানে পদক্ষেপের হিসেবে ।
আমাদের সবার জন্য আবার কোন সুগন্ধ
উড়ে এলে সাজিয়ে ভরিয়ে রাখব
সবকটি আলো হাওয়াময় আসবাব
এখন থেকে সময়কে সাজিয়ে রেখে শুরু
করব সকাল সাড়ে ন’টা থেকে
সকাল সাড়ে ন’টায় আরেকটা দিনের দেহগন্ধ
সকাল সাড়ে ন’টায় আরেকবার সমস্ত কিছুর জন্য
মনখারাপের ছড়াছড়ি ।”
( মৌমিতার জন্য প্রথম কবিতা )
সে প্রলয় মুখোপাধ্যায় ।
‘দুঃখ যন্ত্রণার কাটুম-কুটুম’ প্রকাশিত হয় ১৯শে জানুয়ারি ২০০২-এ, সে তখন আমাদের মধ্যে নেই। বইটি প্রকাশ করেন ‘কবিতা দশদিনে’র পক্ষ থেকে রাজকল্যাণ চেল। প্রচ্ছদ- ভারতের গুহাচিত্র অনুসরণে স্বরূপ চক্রবর্তী ।
এই তো কদিন আগে আরেক প্রয়াত কবির স্মরণসভা থেকে ফেরার সময় আমি রাজকল্যানদার বাড়ি থেকে বইটি সংগ্রহ করি। প্রলয়কে, কবি প্রলয়কে যেভাবে আগলে রাখতেন রাজদা আজও প্রলয়ের বই সেভাবেই যত্নে রেখেছেন । যেন এক প্রলয় থেকে অন্য প্রলয় অব্দি ।কেয়ামত সে কেয়ামত তক - এই রসিকতা ছিল তার সাথে আমার দেখা হলে, তারপর ছিল জড়িয়ে ধরা ।
“ পরিচ্ছন্নতা গিলে খায় সবকটি আতরসন্ধ্যা
অক্টোপ্যাডে নৃত্যরত সৌন্দর্যসকল
চাবিখোলা থেকে বৌখেলা মধ্যরাত্রির কনসার্ট
অ্যাকাটিং জোন থেকে বোতলঘর ও
মাইক্রোস্কোপিক ছিটকলে ঠাণ্ডামেশিন
বিশ্বনাগরিকের ফিতোমুক্ত ছুরি
ঘুম নাস ধরলে আপনিই বিশ্ববাউল একসাথে বলুন
‘উই আর নট অ্যালোন’ ।”
( সেলিব্রেট )
এতদিন পর তার কথা মনে পড়ে; মনে পড়ে তাহার কথা । কোন সে প্রলয়ে চলে গেল !
হারানো বন্ধুকে নিয়ে সবকথা একবারে বলা যায় না, হয়ত কখনোই যায় না, তবু পরের সংখ্যায় আবার প্রলয় ।
No comments:
Post a Comment