Tuesday, 10 October 2017

আকাশপ্রদীপের কবিতা ২০

Related image

পর্ণমোচী
            -অনিন্দিতা গুপ্ত রায় 

উদ্দেশ্য বা বিধেয় কোনোকিছুই
বিবেচ্য ছিলোনা সামান্য পথের তফাতে
পৌঁছনোর কথাও ছিলোনা
অনভ্যাসের চিহ্ন ক্রমশঃ সারিয়ে তুলছে
এই মরশুমী অসুখ প্রতিটি জুলাই থেকে
তুলে রাখার ছিল যেসমস্ত একটা জীবনে
কিরকম অগোছালো হয়ে আছে আসক্তিহীন
তাই পাঁজর অবধি গেছে তীর, তার নীচে
পর্ণমোচীর একা পাতা খসবার যত উদাস লিখিত

(ছবিঃ হ্যারি মুডি) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৯

Image result for abstract purple painting

আমাদের ধুলোবালি সংসার
                                  -জয়া গুহ(তিস্তা)

ঘুমিয়ে পড়লে, সে এসে দাঁড়ায় শিয়রে
উঠোন ঝাঁপিয়ে লাউমাচা, জানলায় উঁকি
টুসু ঘুমন্ত মুখে, বুকে মুখ গুঁজে
নাফিজ অজান্তে হাত রাখে সুরক্ষিত স্তনে! মা যে
কতকাল বুকে নিয়ে আছি,এইভাবে
টিনের চাল, ফুটো বেয়ে জল পড়ে দু-চার ফোঁটা
ঈদের চাঁদ আসা লুটোপুটি বিছানা এখন সপসপে
মাথায় ঠান্ডা হাত রাখি
কখনো শরীরের ওমে, কাঁথা বালিশের ভাঁজে জড়িয়ে নিই অপত্যস্নেহ
দুটো কচিমুখ,ঠিক মত ভাত পায়নি কাল থেকে
টানা জ্বরে কাঁপা ঠোঁটে খুব জোর সাবুদানা গরমগরম
আজ ও আসেনি কাঁটাতার পেরিয়ে কোনো খবর
বর্ডারের ওপারে লোক আনানেওয়া, চোরা পথে
নগদে টাকা মেলে, কিছু উপরিও
কানাঘুষো, ফিসফাস খেয়া ঘাটে
কারা যেন নিরুদ্দেশ, চুপচাপ
খবর আটকেছে বড় মানুষের দল
তারা নাকি  ছিল না কোনোখানে,
কোনো গ্রামে, তাই  কেউ হয়নি নিখোঁজ
টুসু,নাফিজের বাপ!
সেও নাকি ছিল না আদৌ
সেই আসে রোজ রাতে চাঁদ হয়ে,জল হয়ে দুচোখে গড়ায়...

(ছবিঃ ক্রিস্টিনা রোলো) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৮

Image result for abstract red painting

গান
     -কস্তুরী সেন

১/
জড়িয়ে ধরা রাত্রিভাষা, বাতাসে তানপুরা
তখন স্নান করার মতই ভোরের শরীর জাগে...
কে কাকে ভেদ করলে এলো অন্তরাতে আলো
বিজলি ঝলক দিলীপকুমার, মন্ মোহন আগে!

২/
বসে যাও আরও, খেয়ে যাও না গো রাতে!
নিতান্ত ক'রে বলা অসাধ্য, সারা সন্ধেটি ভিড়
মলয় আসিয়া কানে কহে গেছে প্রিয় কণ্ঠের নাম ;
আমরা দরদি, মহড়ায় সবে প্রেমে পড়া মেয়েটির...

৩/
এই পথে বৃষ্টি ছাড়া আর কিছু নেই
এই পথে বাড়ি ফিরছে একা ছাতা, আধাআধি লোক
অগাস্ট ছাতার নিচে এপ্রিলের সন্ধেবেলা, কেউ না দেখুক
শোন সখি বলি তোরে, আজ বলি তোরে
এপ্রিলের সন্ধ্যাটির বাকি অর্ধ এইমাত্র এসে নামল
রবীন্দ্র সরোবরে --

৪/
ওরা কিন্তু বন্ধুই দারুণ,
আর ওরা নজরুল, দিলীপকুমার, সাঁইতিরিশ সাল!
'কী সব মানুষ তখন রেডিওতে' এই করে দীর্ঘ রাত,
দুজনের দীর্ঘরাত বয়ে যায়...
জ্বলবার মন্ত্র দিলি, সামান্য মানুষ ওরা, না জ্বলে যাবে বা কোথায়!

(ছবিঃ ক্রিস ভীনেমান) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৭

Image result for abstract red painting

নাপাক 
              -তন্ময় রায়

শোয়ায় মাড় দিতে ভালো লাগে। কথার ঠিক কোথায় ও-কার লাগানো যায় জানতে গিয়ে ভাব হয় তোমার সাথে। রচনা ভেঙে ভেঙে দাম ঠিক হয় আর দরজার অসুখ করে উৎসর্গে ভাবের নাম দিই বলে...

১.
থার্ড পার্টটা ভালো করতে পারি না
প্রথমে তাড়াতাড়ি বলি
বুকে বসে থাকে সার্কাস
ঘন মাধ্যম লঘু মাধ্যম
প্রবল হবার দিকে এলেই
                পাল্টি খাই কাচগুঁড়ো সমেত

২.
উবু হয়ে রই
গণনা ভাগ হতে হতে
                          দুর্বল লাগে কভারে
এটা তোমার স্টাইলের জলসা
ফুটোমাথার খেল্
             সিলিকা ওড়াচ্ছে

(ছবিঃ ওরেস্ট জ্যিওমকো) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৬

Image result for abstract firework painting

মরচে পড়া খড়গ্
                         -স্বাগতা সিংহরায়


দেবতাকে উৎসর্গ করেছি যে উদ্যত খড়গ্
আমার বিশ্বাস-
সে আনন্দমঠ শোনেনি।
বিশেষ কোনো ঘরে -
  রাষ্ট্রীয় অহংকারে শোনা যায় তার হাহা..
কৃষ্ণবর্না দেবীর হাতে সুসজ্জিত
একের পর এক দুষ্টমুন্ড
  হাঁ করা শেয়াল গেলে রক্তের স্রোত..

আমি তার চরণ ছুঁয়েছি
পরীক্ষাদিনের প্রসাদী ফুলে কপালতিলক

মা...মা   গো...
এতযুগ পরে খড়গে কেন বিষ!
কে মাখালো গরলরহস্য!
মায়ের হাতে তবে কীসের বরাভয়
দুষ্টদমনে খড়গে্র চিরবিদায়।

অবসন্ন শিশুটি মাতৃপিতৃহীন-
ঘুমিয়ে পড়ে ক্ষুধার জঠরে
জন্মদিন থেকে তার যে শাক্যধর্ম!

(ছবিঃ নোয়া ইয়েরুশাল্মি)


আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৫

Image result for red light abstract painting

শকুন
     -পাপড়ি গুহ নিয়োগী



আমি ও অশ্বত্থ দিব্যি তো আছি
কয়েক মাইল দূরে শুধু কথা... উৎসব
আহ্লাদের ডাকগুলো বুড়ো হয়
ভারী হয় নিঃশ্বাস, দীর্ঘ

 তারপর
গভীর ঘুমের মধ্যে দেখি
শত লোভী চোখ, খোঁজে
শকুন
আমারই শবদেহ

(ছবিঃ নেস্টর তোরো)  

আকাশপ্রদীপের অনুবাদ কবিতাঃ আলবানিয়া থেকে লিন্দিতা আরাপি

Image result for lindita arapi photo

গভীর জল
         -লিন্দিতা আরাপি

ঠিক  এইখানে একটা সেতুর দীঘল খিলান
এক দক্ষ শিল্পীর
 জলরঙের মতো
এর রঙ এখনো টাটকা।
এর অনেক নীচে, গভীরে
জল ডাকছে
নতুন আয়নার মতো লোভ আর উজ্জ্বলতা
যাতে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমায়
আমি দেখছি, আগন্তুকের মতো প্রবল পিপাসা নিয়ে
সেটা ছুঁয়ে ফেলছে আমায়
আমি কেঁপে উঠছি
শ্বাস টেনে নিচ্ছি তার আত্মার অন্ধকারের ভিতর।
হে মৃত্যুর গভীরতা!
আমি আসছি। আমি আসছি
মধ্যবর্তী বাতাসে
ফেটে পড়া
গুলির মতো
আমি শুধু এই মুহুর্তটার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করেছি
বাতাসের শেষ বুদবুদের ওপর দুলে ওঠার জন্য
তোমার জেগে ওঠার ভেতর ডুবে যাওয়ার জন্য
আর আমার দিনের নতুন অর্থের জন্য


....................................................................................................................................

লিন্দিতা আরাপির জন্ম ১৯৭২ সালে। আলবানিয়ার লুশজেঁ শহরে। নব্বই দশক থেকে কর্মসূত্রে জার্মানিতে বসবাস। সে সময় থেকেই জার্মান ভাষায় লেখালেখির শুরু। মার্কিন অনুবাদক ক্যারোলিন ব্রাউনের ইংরেজি অনুবাদের মধ্যস্থতায় তাঁর কবিতার বঙ্গানুবাদ করা হল।

(ছবিঃ Heinrich Boll Stiftung)


















আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৪

Image result for light abstract painting

গর্ভবতী রাত 
                 -অনির্বাণ পাল

দারকেশ্বর নদীর ধারে বসে চারুশিল্পী জলের           কান্না আঁকছে
শরীরে ঘাম ,চোখে খেলা করছে চাবুক মাছ!
জিহীর্ষা মন খেয়ে ফেলছে জনপদের নকশা
তালগাছের সারি মাটির দেওয়াল খড়ের, ভালোবাসা নিয়ে ডায়ারি লেখে জীবনের

নটকান নটিনী হয়ে নাচে
বাউল সকালের গান ধরে পুজো সারে মা
সকল আলাপ শেষ হলে বিবাহ হয়
অপত্যর টানে নারীর শরীর কামিনী গাছ
পাগল রাতের ভিতর জল উথলে ওঠে

চারুশিল্পী কাঁদে,জারথানে লোকগান গায়
রাত দেবী হয় পেটের ভিতর আগমনি যার!

(ছবিঃ মেলোডি হাওতিন) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১৩

Image result for light abstract painting

সহজ কবিতার খোঁজে 
      -প্রদীপ চক্রবর্তী

এক /

টুকরো টুকরো নরম
দু  হাতে আঁজলা করে ছড়িয়ে দেওয়া হতো
সেই মনের দখলী বাগানে জরিপ রেখা টেনে
ঘুমিয়ে গেছে সামান্য বিষয়হীন রঙ

কোন শব্দ লিখেই আজ আর সেই রঙের কাছে
যেতে পারছি না ।
পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে একটু একটু করে সরে আসছে অথৈ নোনা জল ।
এই যে সুদূর সম্ভাবনার নীচে
পিরিচের ওপর আমার হৃদপিন্ডটা
ওলনদড়ির টুকরোগুলো ,
ভুলে যাওয়া শব্দের কৌতূহল অব্যর্থ ,
ভ্রু - সন্ধিতে অতিজাগতিক উদ্দেশ্য ...

বৃষ্টিভেজা বর্ণবোধহারা এক অসহায় , সুযোগসন্ধানী

কতো আড়কাঠি টপকে অনন্য জলাশয়ে
লুকোনো গোড়ালি পর্য্যন্ত একটা অন্তহীন
সন্ধের খোঁজে
হাপিত্যেশ করে বসে আছি
যে শরীর ঢেউ থেকে উপড়ে ওঠা
শিশুর ঘুনসিতে বাঁধা ঘুঙুর
তিরতির শব্দদ্রুম
সদ্য মুখের আনুপূর্বিক বেদনা বড় দুরূহ প্রস্তাব

বর্ষার দেশগুলোতে শিশুরা নিঃসঙ্গ হয়ে
উদাস খেলা দেখতে চায়
                           আপেল ও টমি গানের জন্য ...

দুই /

ঈষত্  মালিন্য । ঈষত্ প্রাচীনতম হারেম ।
আর ,কাউকে পরোয়া না করে
                        সময় ফুরানো স্বপ্নে
নিজেকে থামিয়ে রেখেছে ,
ফিনিক্স - গোত্রীয় করণিক ...

কেরানীগঞ্জে এক সুউচ্চ বেড়াল বেরিয়ে এলো ।
ছায়ার মতো অকিঞ্চিত্কর মাছ অনেক অচেনা বেড়ালের ভিড়ে ,
জিভে দাঁতে বর্ণনাতীত ঘষটানি ,
ঊর্ধ্বে শূন্যে বেড়ালের ত্রিনয়ন ,আজ কৌতূহলহীন ...

মাছ খেতে খুব ভালোবাসি ,বলে অলজ্জ অভিলাষে আরোগ্যসন্ধানী কায়াতরু ডালে
ডাকাবুকো করালকামিনী ...
অশনিবরণী  কুঞ্জকামিনী  শিকারীবাহিনী
হা রে -রে -রে -রে ঢুকছে
                            করণিকের পাড়ায় পাড়ায় ...

অবিকল জাগ্রত স্বপ্নে দেখা ঈষত্  হারেম ...
থাকে নিরবধি, অন্নমতী  রঙ্গমতী  অমা নক্ষত্রমালিকা নীরাজনা
শেষে প্রাচীনতম করণিকতো থাকেই ...
নীল জল ,রঙিন উপল ,মায়াবী -মাধুরী এক করণিক দ্বীপ ,
অদ্ভুত পেঁচানো সিঁড়ি অন্তহীন নেমে গেছে
                                   করণিকের পাড়ায় পাড়ায়
(ছবিঃ শিখা তারু) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১২

Image result for aurora abstract painting

নষ্ট হতে চাওয়া কবিতাটা 
                 -নীলাব্জ চক্রবর্তী
(উৎসর্গ – ভ্যালেনটিনা ন্যাপ্পি, লিয়া গোত্তি, নাতালিয়া স্টার)



ব্যাকরণকুমার দ্যাখে
কিছু বাঁকবাগানে নরম হয়ে আসা
জিভ এক হরফী অভিজ্ঞান
নাকেমুখে গুঁজে রাখা
জ্যামিতি, আড়ম্বর, ঊরু-সন্ধি-পূজায়
যখন গাছের চোখে গাছ বিঁধে যাচ্ছে
আর মাংস দিয়ে আঁকা হচ্ছে
দাঁতের বাউণ্ডারী কণ্ডিশন, স্প্রিং ভ্যালু
কার নোনা কথাবার্তায়
বারবার কপি-পেস্ট, বাঁধানো দুপুর
চেরা কাঠে চেরা কাঠ ঘষে ঘষে
আইসক্রীম তখন জ্যান্ত হয়ে ওঠে
কুমারীসম্ভব আয়োজনে
এই রোম একদিনে রাজি হয়নি
ঘরভর্তি উড়তে থাকা রূপমহাদেশ
অথচ
একটা ক্যামেরা আরেকটা ক্যামেরাকেই দেখছে শুধু...

(ছবিঃ আলেক্সান্দ্রা রোমানো)

ধারাবাহিকঃ হারিয়ে যাওয়া নব্বই- পর্ব ৩

Image result for abstract aurora painting

 ‘আমাকে জলের কাছে ঋণী রেখে গেছে’
                                    -অনিন্দ্য রায়

তখন আমি বর্ধমানের এক চোখের হাসপাতালে কাজ করি । ২০০৭-০৮ ।  সেইসূত্রে প্রতি শনিবার দেবীপুরে  আউটরিচ ক্লিনিক করতে যেতাম। প্রতিবার যখন স্টেশনে নামতাম মনে পড়ত একটি নাম, একটি ঠিকানা
                                         গৌতম দাস
                                    গ্রাম ও ডাকঃ দেবীপুর
                                      জেলাঃ বর্ধমান
                  পিনঃ ৭১৩১৪৬
 হ্যাঁ, মনে পড়ত, সে এক সময় ছিল আমাদের, এই ঠিকানায় চিঠি লিখেছি, সম্বোধন ,
                            সুজনেষু,
                                      সম্পাদক, নির্যাস ।
 কবিতা পাঠিয়েছি  ব্রাউন খামে ভরে এবং মুদ্রিত হওয়ার পর পত্রিকা ডাকযোগে সেই পত্রিকা পৌঁছে গেছে আমার ঠিকানায় । প্রথম যেদিন স্টেশনে পা দিই মনে হয়, দেবীপুরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কতদিনের পুরোনো । হ্যাঁ এভাবেই চিঠিতে, কবিতায়, পত্রিকায় একেকটা গ্রাম, একেকটা শহর, একেকটা জায়গা চেনা হয়ে যেত আমাদের, আমাদের নব্বইয়ে।
 পরে পত্রিকাটির ঠিকানা বদলে ডায়মন্ডহারবার থেকে প্রকাশিত হতে থাকে। বদলে যায় সম্পাদকের নামও। গৌতম ব্রহ্মর্ষি - এই নামে তখন লিখতে শুরু করেছেন পূর্বোক্ত গৌতম। ' বিষ ও বিস্তার' তাঁর কবিতার বই। বাঁকুড়ায় এক কবিতার অনুষ্ঠানে ১৯৯৫-এর এক নৃশংস এপ্রিলে কবি বইটি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। প্রকাশকঃ পত্রলেখা। প্রথম প্রকাশঃ আশ্বিন ১৪০১, অক্টোবর ১৯৯৪। প্রচ্ছদঃ শ্যামলবরণ সাহা । রচনাকালঃ১৯৯০-৯৩ ।
 টাইটেল পেজসহ মোট ৫৬ পৃষ্ঠা । ৪৩টি কবিতা, তিনটি পর্বে বিভক্ত, যথাক্রমে ‘কুহকের চর’, ‘কুয়াশার জন্মকথা’, ‘বরফের ছেলে’।
               গোপন পিপাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে
               এখন নিঃসঙ্গ মেঘ শুয়ে আছি খোলার ভেতর
               বৃষ্টি ও সবুজ খেয়ে যে পাখিটি উড়ে যায় রোজ
               এ বসন্তে আমি তার পালক ছিঁড়িনি
               বরং সে বর্ণময় আমার ডানায়

               দুলে ওঠে নির্মেষ, দাঁড়ে
               ২৭•১০•৯০
( দাঁড় )
এইটি প্রথম কবিতা বইটির । এই দুলে ওঠা, এই সংকেতময় উচ্চারণ তাঁর আপন মুদ্রা । কুহক, অদ্ভুত আকর্ষণী শক্তি নিয়ে  ভেসে ওঠা এক ভাষার চর, পাঠকের দৃষ্টিতে দেখা যায় কিছুটা, বাইটুকু ব্লার্ড, সেই অংশটুকু কল্পনায় ভরিয়ে নিতে হয়, এই তাঁর কবিতা।
ধুয়ে আছে লাবন্যময় মুখ । থামো ।
আঁকড়ে ধরে । ফিরব না আর । অনন্ত বিস্তার ...

  পাথর ক’রে নেব তোকেও শাপে
               ২১•২•৯৩
( মৃত্যু)
স্বভাবতই মিতকথন এবং পূর্ণতা তাঁর কবিতার বিশিষ্টতা । সেই সময়ের সিরিজ লেখার প্রবণতা থেকে ভিন্ন একেকটি কবিতার নিজস্ব শিরোনাম, তা কবিতাটির মূল ভাবনা, এই তাঁর রীতি, একটি মাত্র কবিতা, বইটিতে, তিনটি পর্বে রচিত, বস্তুত তা একটিই কবিতা।
খেউড়ে কেটেছে বেলা
পোড়াহাড় এবং পানীয়
           জ্বালাতে চেয়েছে আলো
পাঁকজলে অন্ধকার নড়ে ওঠে,
        মহিষের পিঠ
                 ২
জলের করাত ছুঁয়ে তোমাকে চেয়েছি
আরও এক পুঞ্জীভূত আলো
  ধ্বনি থেকে ভেসে যায় প্রধান অক্ষরে

জলেও ভেতরে ঢেউ যেইভাবে
মাছের ভেতরে ঘোরে জল
জলের বঁড়শি মুখে
ছড়িয়ে পড়ছে তার আঁশ
আর সে মেছুড়ে এক অন্য চারে ছিপ টেনে তোলে
দেখি তার সবুজ ফাৎনা জুড়ে
                ভেসে আছে আমাদের অলীক প্রবাস...
                 ৩০•৭•৯৩
                                        ( জল )
 এবং কবিতাগুলি সংহত, আবেগ নিয়ন্ত্রিত ।
 দর্শন তাঁর কবিতার ভিত্তিভূমি।
কায়ার মধ্যে যেমন ছায়া
                  ঘুরতে ঘুরতে শেষ হয়ে যায় জন্মইতর

এখন আমি দাহ্যতরু
উৎস কোথায় ?
জন্মজলে দাঁড়িয়ে দেখি
চারণভুমি ।

                     ১১•৮•৯২
                                                  ( চারণভুমি )

এই তাঁর ভুবন । পাঠককে আকৃষ্ট করে, আবিষ্ট করে।
জলের নিচে উন্মোচন

জলের গ্যাস রাতপচায়
রাতজাগায় বিস্ফোরক
ভবিয্যের গাছ আমি
জীবনরস জীবনরস
জলশিরীষ নিই চুষে
শস্যবিষ এবং তার
অন্ধকার সামগ্রী
পাতার পাতা তস্য পাতায়
পুড়ছে কী ফুটছে কি
খই যেন !
ঝোলঝলে চমৎকার রান্নাঘর তৈরী হয়
     রোগমুখে শব্দভাত
                     ১১•৮•৯২
          ( উন্মোচন)
তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক জড়িয়ে ছিল অনেকদিন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর কবিতা পড়তাম। ‘নির্যাস’-এ লিখতাম নিয়মিত।
কিন্তু আস্তে আস্তে তাঁর কবিতা আর দেখতে পাই না সেভাবে। তাঁর কাগজেও আমার লেখা পাঠানো হয় না।
এখনো কি লেখেন তিনি ? সেই ‘বরফের ছেলে’ এখনো কি লেখে ‘কুয়াশার জন্মকথা’?
দেবীপুরে, প্রতিদিন, ক্লিনিকে ঢোকার সময় ভাবতাম, কেউ এসে বলবেন, ‘ আরে অনিন্দ্য! চিনতে পারছ ? আমি গৌতম ।”
বলে উঠবেন
গর্ভে চাঁদ । সে ঘুমোতে পারে ?
শুধু পাকের ভেতর নড়ে আলো
আলো ঘিরে জল কলরব
একদিন নামে উৎসমুখে
কি অমল কাতরতা
রাত্রির শিয়রে আজ শরীর নিঃসৃত
শ্বাস লোহাজলে ভাসতে ভাসতে
নেমে আসে রূপালী মাছের মতো আলো...
                   ২৩•৯•৯০
                                 ( জন্ম )
আজ আমি আর দেবীপুর যাই না। কিন্তু অপেক্ষাটা রয়ে গেছে।
গৌতমদা, আপনার কবিতা আরও আরও পড়তে চাই ।
গৌতমদা, কেমন আছেন ?
মনে আছে,  একদিন, ‘জলের করাত ছুঁয়ে তোমাকে চেয়েছি’ ?
মনে আছে ?
সর্প দংশন হয়েছিল । সেই থেকে
      বিষ ও বিস্তার
আমাকে জলের কাছে ঋণী রেখে গেছে
( বিভাব কবিতা  / বিষ ও বিস্তার )
বিষ ও বিষ তার, বিষ ও বিস্তার, হ্যাঁ, আমাকেও ঋণী রেখে গেছে, তাঁর কাছে, সময়ের কাছে

(ছবিঃ মরিস সাপিরো)

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১১

Image result for light color  abstract photography

শর্তসাপেক্ষে এঁটো হাত
                           -জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি


এমনকি সারারাত ডুবখেলায়।জলের ফোঁটার মতো।এমন এক গোপন তারাখসা রাতে।হয়তো বিঁধে থাকে মৃত্যুর আদেশ।ঘন।এলোমেলো।ঝুল বারান্দায়।জীবাশ্মের শুকনো কোষপর্দা বেয়ে।ঢেউহীন খুলির ভিতর।আপাত শান্তি


সুযোগ মতো অনেকটা অবশিষ্ট ইশারায়
পোয়াতির কাঙাল সোহাগ মিশিয়ে
মাংসের শূণ্যতা থেকে শর্তসাপেক্ষে এঁটো হাত

(ছবিঃ শিরিন গিল) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১০

Related image

চাতলার দিবা দ্বি-প্রহর ও হাং সন ডুং এর গুপ্ত গুহা
                                     -সুতপা চক্রবর্তী

১.

ঝাড়ফুঁকে বেঁচে ওঠা লোকটার পায়ে ধরা পড়ে জাতকেউটের ছোবল ছাপ

দিবা দ্বি প্রহরে চাতলার
শাপলাপুকুরে নাইতে নামে ওঝাবউ....

২.

সন্দেহের আঁতুড়ঘরে জন্ম হওয়া সমস্ত পাপের
 গায়ে আদরের প্রলেপ লাগে

অমৃতকন্যার বক্ষসরোবরে ফুটে ওঠে নীলপদ্ম...

৩.

স্বপ্ন যেখানে  বাসা বাঁধে সেই ঘরটা
উইপোকাদের দখলে

ঢিপির বদ্ধদরজায় এসে আজ ঘা দেয়  পিপঁড়েবাহিনী

পোড়ানো নিশিন্ধ্যা পাতার গন্ধে ভুরভুর করে ওঠে ঘুমন্ত সাঁঝবেলা


৪.

ওরাঁও ছেলেটির নেশাধরা চোখ খুঁজে চলেছে কংকালিতলার মেয়েটিকে

 হ্যাং সন ডুং এর গুপ্ত গুহায় বসে পায়ে আলতা পরে ভানুমতী

(ছবিঃ উইন বুলক)

আকাশপ্রদীপের কবিতা ৯

Image result for light abstract photography

নীলগিরি
                -অনুসঞ্জনা ঘোষ


যতটা জল ঠিক ততটা গভীর নয়।শিকড় ছিঁড়ে বয়ে চলা নদী। এই অবধি বিয়াল্লিশটা বাঁক পার করেছি। ধুয়ে গেছে আচঁড়ের কালো গন্ধ। বিভেদের প্রাচীর টপকে নতুন সভ্যতা এখন পাথর। ক্ষয়ে যাওয়ার ভয় নেই। নেই পতন। আক্ষরিক যত শহর ছিল ভাবনায়, তারা সারিবদ্ধ লাল নীল আলোয়। বারান্দার এক প্রান্তে নতুন ভোর। বদলে যাওয়া যাবতীয় কৌশল জানে নরম সকাল। চায়ের কাপে বেড়ে ওঠা সময় মনে করিয়ে দেয় আগামী আসন্ন। যা চলে যায় যা চলে গেছে তাকে ফেরাতে নেই। তুমি সমতল হও অনির্বাণ। নদীও বন্ধুরতা ভুলে সমতলে মিশে যাবে...

(ছবিঃ থমাস বার্গম্যান) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ৮

Related image

বাস্তব
      -বেবী সাউ 

নেই এর শিহরণ  পেরোনেই তোমার অসাধারণত্ব,  মাকান্দার!

শীতকাল জেগে থাকছে
অর্জুনের  বাকলে স্পষ্ট হচ্ছে বিগত

দুরে জ্যান্ত কাঁটা চামচ আর ছুরি চুপ আছে
শব্দের সাথে গা মেলে আছে  ক্ষতচিহ্ন

কেননা,

বিরতির পরেই ওদের সাথে প্যান্থারের
লাইভ শো

(ছবিঃ ফ্রান্সিস ব্রুগিয়েরে) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ৭

Image result for light abstract photography

মুদ্রাদোষ
        -অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় 

হাতের চারপাশে অজস্র রা
গিনির পশ্চিমে তখন ডুবে গেল যে মানুষটা

ওখানেই ছায়াওয়ালা মেঘ
আর জলের আভাসে নিভে যাচ্ছে হাতের রেখাগুলিও

লোকটাকে আমি চিনতাম
তিনি এই রাস্তার কাছে আসিলে

যে চুলে খোপার গন্ধ তার দিক বরাবর প্রোগ্রেসিভ ন্যাওটার দলে লোক সংখ্যা যখন ভারী করিল আমাদের ম্রিয়মান গোধূলির কিতাব পরিসরে আনত প্রবাহ যেন চিহ্ন রাখিয়া যাইতে চায় শরীর বরাবর।
তুমি বোধ করি স্পর্শ করিতে পারো এইসব হ্যাচ্‌কাদের। মূল নদী হইতে সরিয়া যাইতেছে আলতো মুদ্রারেশ। বাহারে আকার পাইতেছে পাথরের প্রজনন। আমরা হাত ধরাধরি করিয়া বিড়াল পুষিলাম।তার গলায় শিকল পড়াইয়া বুঝিতে চাইলাম মেওয়া আসে কিনা।

মানুষ বড় উদার এই সময়। নিজেকে ঘুড়ি ভাবিয়া উড়িতেছে  আস্তাবলে।আর চোখে ফুটো করিয়া দেখিতে চাইতেছে এই দেশ আর কত দূর। কোথায় পৌঁচ্ছাইতে পারিলে তারা দেখিতে পাইবে কিছু ফুল এখনো ফুটিতেছে আরো কিছু ফুলকে মেয়েটার নরম করিবার মন্ত্রণা সব

বিষাদে ভুলিলো যারা তাহাদের কিবা দিন কিবা রাত্রি করিতে করিতে
চালু হইল এই মিশিবার তরে অকুলে ফেলিয়া রাখা কিছু কিছু অভিপ্রায়
শয়নের কিনারে ওই মুখাগ্নি গোকুল।

ট্রেন চলিল। সূর্যও ভাঙিল রেখা গন্ডি ভাবিয়া।
স্টেশন আসিলে কেউ হাঁক দিয়া ডাকিবে আবার।
মাদল হইল শুরু। ম্যাগনোলিয়া দেখিতে দেখিতেই জানা যাইবে
এই পথে কত কত গাছ মরণের আগে কি কি বলিয়া গিয়াছে। কিকি জানিত তারা পরত বিষয়ে।

(ছবিঃ উইলিয়াম ক্লেইন ব্ল্যাক)

আকাশপ্রদীপের কবিতা ৬

Image result for light abstract photography

বিভ্রান্ত
      -অভিশ্রুতি রায়

আমার নেশায়
তোমার সেই বিষাক্ত ক্লোরোফিল
হাত ফসকে গলে পড়ছে সব এক এক করে
তুমি মোড়ক বানিয়ে নিচ্ছো
মুখে মুখে ফুরিয়ে আসা
 সংশ্লেষ
কিছুটা জ্বরে কেঁপে ওঠার মতো করেই...
একটা অতিবেগুনীর ইমেজ দেখতে পাচ্ছি
আলপিন
আর
জ্বলে ওঠা মেগাপিক্সেলে...

(ছবিঃ বেথ ওয়ালশ)

আকাশপ্রদীপের কবিতা ৫

Related image

অনামিক
             -অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়


 একটা নিরুদ্দেশ মেঘ দেখতে পাই
ঘরে ফেরা আলো যার আনাচে কানাচে স্বপ্নেরা জ্বলে ওঠে, কালো কালো সব বাড়ি ঠিক যেন মৃত্যুর পূর্ববর্তী আবহাওয়া, লীন হয়ে যাওয়া মৃতদেহের চোখ আকাশে ঘুরে বেড়ায়...
বৃষ্টির শব্দেরা ঘৃণ্য কোনো সুর তোলে, আবহাওয়া যেন তীক্ষ্ণ গলায় চিতকার করে ওঠে, মৃত্যু কোনো আলো দিতে পারেনা অথচ মৃত্যুই সমস্ত আলোর খোঁজ জানে, ভালোবাসা জানে। যে দেহ চিরকাল ভার বয়, আকাশ বাতাস বয়, সে বড়ো ক্ষীন হয়ে মিটিমিটি জ্বলে,
 চিতাখানি উতসব হয়েওঠে পৃথিবীর কোলে, সহস্র মানুষের কান্না একটা গাছের পাতার মতো গভীরে, মাটির আরও গভীরে চলে যায়...
মেঘডাকে দৈববানীর মতো শোনায়...
আমি ভেসে থাকি দেখি বেচেঁথাকা আমার পাশে ভেসে আছে।
আমি আলো খুজিঁ দেখি বেচেঁথাকা
মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে।

(ছবিঃ ডেভ অ্যালেন)
   

আকাশপ্রদীপের কবিতা ৪

Image result for light abstract painting

অণুবীক্ষণে লেখা চিঠিগুলি
                                  -নীলাদ্রি বাগচী

ক.
কার্গো গাড়ির শব্দে পিচ ঢালা সকাল আসে। ছটা বাজতে এখনও বহু বাকি। তবে যে পরিমাণ মানুষ রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছেন তাতে মনে হতেই পারে ছটা বেজে গেছে। বেশীরভাগই সৌম্য, সুন্দর মানুষ। কেবল এদের মধ্যে এক আধজনকে দেখতে পাচ্ছি যারা হতোদ্যম, যারা পাখী হতে চায় - ডাহুক কি ঘাড় গোঁজা বক। যারা অবিরত হেরে চলেছে। কুড়িয়ে চলেছে প্রত্যাখ্যান।
প্রত্যাখ্যানের চেয়ে প্রিয় আর কি হতে পারে ঘুম, শীত, প্রিয়সাধনের চেষ্টা ছাড়া? অসুয়া, দ্রোহ, মোহ, অলজ্জা ও ঘুম-প্রিয় ঘুম- নদী অরণ্য ছুঁয়ে ছুঁয়ে শেষবার ডেকে আনা শীতঘুম.... অনন্ত ও অনর্গল, এর বেশি কি লাগে? কিছু কি লাগে? আদপেই?

খ.
ভ্রমর আলোর শব্দ। দূরে কেউ অন্যমনে আছে। দূরে বলতে কতদূরে এই প্রশ্নে ঝাপটায় ডানা। আর আমি পালক গুণি। দেখি অগণন ফেনা শ্যাম্পু সেরে উঠে আসা দুপুরের প্রথম বর্ষায় পালকে নির্ভার জাগে। পরা ও পড়ার মধ্যে সূক্ষ্ম এক ফেলে আসা দিন দূরবীনে চোখ রাখে এবং অনেকদিন বন্ধ আছে আলাপচারিতা....
ভবিষ্যৎ রোমানের। প্রাদেশিকতার প্রশ্নে আজ এই সমাধান পাই- সাম্রাজ্যবাদের কাছে প্রিয় নদী এভাবে হারিয়ে যেও না....

গ.
অফিস আসার পথে কোনোখানে দেবীপক্ষ শুরু হয়ে যায়। প্যান্ডেল ছাপিয়ে নদী, পিঠ থেকে উড়ে আসে প্রজাপতিদের ঝাঁক। এখন অবেলা। হয়ত তুমি ব্যাস্ত আছ দৈনন্দিনে। হয়ত একাই আছ। হয়ত খুব ভিড় তোমাকে রয়েছে ঘিরে। আমি শুধু দেখে যাচ্ছি চতুর্দিক প্রজাপতি। রাত্রিগুলো শব্দ ছুঁয়ে কিভাবে যেন ভোর হচ্ছে প্রতিদিন।
যদি ভুলে যাও মোরে প্রকৃতই কোনো অভিমান আমি তোমাকে শোনাব না। কারণ আমাকে তুমি অগনিত প্রজাপতি অনায়াসে দিয়ে গেছ...
ভোরের ঈশ্বর হয়ে অবহেলে দিয়ে গেছ পুনর্জীবন....

ঘ.
ভরে ওঠ। পূর্ণ হও। শরতের স্রোতে দূরে আরও দূরে বয়ে যাও। একদিন সমস্ত কিছু ঠিক হয়ে গেলে পত্রপাঠ কুশল জানিও। জানিও যে ভালো আছো। ছবি দিও। আনন্দে বাঁচার। আজ শরতের মেঘে সেই মুখ মনে পড়ছে। যে আসছে। যে আসবেই। তোমাকে বাঁচার অর্থ অন্যভাবে শিখিয়ে দেবার জন্য।
আপাতত চোখের যত্ন নিও। নিজেরও। আর ভালো থাকা শব্দের সংজ্ঞা বদল করে নিজেকে বসিয়ে দাও সবখানে। যত্নে থাকো। অসাধারণ থাকো।

ঙ.
ভেজো
অমৃতে যেভাবে ভিজে উঠে এসেছিল তিলোত্তমা
জ্বর ভেদ করে মায়া হও
আমাকে উজ্জ্বল কর
যুগ যুগ ধরে আমি অন্ধকার রাত হয়ে আছি
আমাকে রূপোর মতো রূপরেখা পার কর
আঙুল ছুঁইয়ে তুমি আমাকে ঈশ্বর কর আর
পদতলে ঠাঁই দাও
 লালপদ্মে ডুবে আমি গভীর গভীর ঘুমে পৌঁছে যেতে চাই....

(ছবিঃ সিন্থিয়া লিগেরোজ) 

আকাশপ্রদীপের কবিতা ৩

Image result for light abstract painting

দু'টি কবিতা
              -শমীক ষান্নিগ্রাহী


মাধ্যাকর্ষণ সুত্র

গাছটার নুয়ে পড়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম

তারপর একে একে
বাবা
পিতামহ
প্রপিতামহ নুয়ে পড়ছে গাছটার দিকে



ভারসাম্য

ছাপোষা গল্পের কথা কাটাকাটি বাড়ছে
তারপর দুইজনে দুই দিকে চলে যায়

একফালি  বারান্দা
খালি খালি হেসে উঠছে মাঝখানে

(ছবিঃ ক্লোস্কা ওভিডিউ)

আকাশপ্রদীপের কবিতা ২

Image result for light abstract painting

অনেক দিন পর যখন কবিতা লিখি
                           -রঙ্গন রায়
    
                        (উৎসর্গঃ আঁধার )

বুড়ো আঙুল আর তর্জনীর মাথায় ধরে আছি কয়েন
টাঙ্ শব্দে উঠে পড়বে , সাঁই সাঁই করে ঘুরবে
প্রতিটি ঘুর্ণনে শব্দ , তারপর -
পুরনো ভালবাসার মত নেমে আসবে
এই যে স্রেফ এটুকু ঘটনা
তারমধ্যে রিপিট্ হচ্ছে গল্প।
পা যেমন অনেক কথা বলে
হেঁটে হেঁটে শান্তিপাড়া থেকে কদমতলা
আমাদের একসাথে বিখ্যাত হাঁটা ...
আমি তখন দিব্যি ফুরফুরে , ঠিক তোমার মতন-
মনে হলো সত্যিই কতদিন হাঁটার মত হাঁটা হয়নি ...
পা'য়ের সাথে কথা বলা হয়নি।
অথচ দূর্গাপূজা চলে এলো
আমাদের গন্তব্য চা'য়ের দোকানের মত।
বসে চা খাবো - পা দুলবে -
মৌমাছির মত সন্ধ্যার শব্দ শুনবো
গরমে পাঞ্জাবির বোতাম খুলবো ,
'খুট' শব্দটা  শুধুই আমার ...
জানোতো সেই কয়েনটি এখনো ঘুরছে
চা শেষ হলে তুমি চলে যাবে
তাই কি কৃপনের মত চা খাচ্ছি ,
পুরনো রাস্তা থেকে সেই গত শীতের মত
আগেকার হাওয়া ...
আমাদের বিলম্ব টুকু শুধু কয়েনের ওঠানামায়

(ছবিঃ জিবেদো)

আকাশপ্রদীপের কবিতা ১

Related image

মাধুডাঙাতীরে
                 -হাসান রোবায়েত

মাটিতে এলিয়ে পড়ে রাত
বীতভাব জানালার শিকে
গানের অর্থ ভুলে কেউ
মনে রাখে প্রিয় মুখটিকে—
ঝরে গেছে ঋষভের সুরে
জারুল ফুলের মঞ্জরী
পাতার উপর সরলতা
তোমাকেও সন্দেহ করি—
এই রাত নুয়ে পড়ে ব্রিজে
গরাদে প্রবল এক নীল
মাছরাঙাদের খালি ঠোঁটে
ফোঁটা ফোঁটা উড়ে গেল বিল
মৃত্যুর কিছু দূরে, দেখি
প্রশান্ত নৌকাটি বাঁধা
তুমি এক ফাঁকা দেহরূপ
চিরকাল ওপারের ধাঁধা

(ছবিঃ ভ্যান টেম)