Tuesday, 16 June 2020

প্রাবৃষার অনুবাদ কবিতাঃ তাজা ক্রমবার্গারঃ স্লোভেনিয়া

Taja Kramberger: Pesmi univerzitetne umorjenke | Dnevnik

মানুষের উৎস হিসেবে থাকার জন্য 

আলোর উৎস হিসেবে থাকা, যখন ওরা তোমায় অবজ্ঞা করে চলেছে
আর দ্রবীভূত করে দিচ্ছে স্বাধীন শৃঙ্খলের ভারী শব্দে
মিষ্টি জলের সম্পদে।
আলোর উৎস হিসেবে থাকা, যখন ওরা তোমায় গিলে ফেলার চেষ্টা করছে
গহন রঞ্জন-রশ্মির সাহায্যে তুমি দেখতে পাচ্ছো ক্ষুধার্ত পিরানহা মাছেদের ব্লাডার
স্রোতের ভিতর তাদের গভীর চলাচল।
আলোর উৎস হিসেবে থাকা, যখন ওরা তোমায় শূন্যতায় ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করছে
রাত্রির সমস্ত আলোকস্তম্ভে ওই অন্ধকার প্রচ্ছায়া, যখন
স্থিতিশীল বাম অংশে থেমে গিয়েছে গোচারণ
ডানে পূর্ণ রাত্রির অন্ধকার।
আর মধ্যভাগের কালো একটি রঙ
তাড়া করেছে আমাদের নতুন কাজের স্রোতকে
যাতে ওরা আলোর দিকে স্বার্থপরভাবে যেতে পারে।
একটি ভরন্ত ঘরে বোধগম্য এক ফাটল হিসেবে থেকে যাওয়া
মানুষের সামান্য ছোঁয়া-লাগা সামান্যতর এক শক্তিপ্রবাহে।


( তাজা ক্রমবার্গারের জন্ম স্লোভেনিয়ার লিউব্লিয়ানা নগরীতে, ১৯৭০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। গত শতাব্দীর নয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে জড়িত রয়েছেন স্লোভেনীয় সাহিত্যের সমস্ত শাখার সাথে। )

(ছবিঃ Dnevnik) 

প্রাবৃষার কবিতা ১৬


Abstract Water Dragon Painting by Michelle Pier

উপশম
          -পারমিতা চক্রবর্ত্তী

যে ঠোঁটে ছুঁয়েছে ঈশ্বর
তারই মধ্যে কোন বিপন্নতা নেই

ইদানিং সব কিছুর মধ্যে  কেমন যেন আবেশ লেগে থাকে
জ্যোৎস্নাদাগ চুলের বিনুনিতে হাত বুলোয়
মেহেদী শরম এসে লাগে চিবুকে

ম্রিয়মান মুখখানি তুলে কেউ বলে
আরো এগিয়ে এসো , সঁপে দাও দেহখানি

তোমার চুলের গন্ধ আর বৃষ্টির জলের মাঝে কোন তফাৎখুঁজে পাই না
বুকের পশমে জমে থাকা অঙ্গীকার আলগোছে সরিয়ে রাখি  দাম্পত্য যত্নে

হাতে হাত রাখা মানেই দাম্পত্য নয়
চূড়ান্ত উপশমের নির্যাস

( ছবিঃ মিশেল পায়ার)

প্রাবৃষার কবিতা ১৫

Rain Reflection MEDIUM ABSTRACT #38 Painting by Lia Bobrovskaya ...





      -রাজেশ শর্মা 


যে কবিতা ভাতে বাড়ছে
তার পাশ দিয়ে চলে হাওয়াই খুশবু
আর মধ্যখিদের দ্বিপ্রহরে

ক্রমে দীর্ঘ হচ্ছে তোর ব্যঞ্জনধর্মিতা

(ছবিঃ লিয়া বভ্রবস্কায়া)


প্রাবৃষার কবিতা ১৪


Happiness 2 by artist Jai Srivastava – Abstract, Painting ...

খাঁচা
    -পিয়াল রায়

আড়ালে আড়ালে আমরা খোঁজ নিচ্ছি সবার
 নাড়াচাড়া করছি
আর কেঁপে যাচ্ছি ভিতর পর্যন্ত

কাঁপতে কাঁপতে
জমা দিচ্ছি খাতা
খাতায় আঁকা ফাঁকা মাঠ
ঝুলে ঝুলে দুলতে থাকা
ফাঁকা বিলকুল ফাঁকা প্রাচীন এক ঘন্টা

ঘন্টার গায়ে নালিশ
নালিশের গায়ে শীত ও বর্ষা
তরল গরল
একই ভাবে বাজে

লোকজন শোনে
মানে, যারা শুনতে চায়

কিছু মানুষ তবু এসব থেকে
দূরে ভেজা জমি নিংড়ে শুকোতে দেয়
ভোরের রোদ

 ঘন্টা বাড়ে, ঘোষণা বাড়তে থাকে
পরিচিত ভাবভঙ্গি মতোই

কোন্ এক অনতিক্রম বোধে
আড়ালে আড়ালে
পৃথিবী হয়ে ওঠে  ইস্পাতের খাঁচা

( ছবিঃ জয় শ্রীবাস্তব )

প্রাবৃষার কবিতা ১৩

Rain" Painting by Yuri Skrinnikov | Artmajeur


প্লে-ব্যাক
         -নীলিমা দেব

পাখি কচলে কচলে আকাশ মাটি

গলির মোড়ে আমাদের অর্ধনিমিত শুক্রবার
কালো রোদের গন্ধে বিবশ স্নান চুপ ভাঙে না জলের

ঘুমে নড়ে ওঠে না রাস্তার ডুয়েট
উড়ন্ত আগুনে থেঁৎলে যায় স্ক্রিপ্ট ও অন্যান্য

শব্দের আরাম নাগাল অব্দি সাহারা

ঘরে খালি পায়ে হেঁটে যাওয়া রাত-----ফুলস্টপ
রি-প্লে
জুম
রি-প্লে


তারপর জল খুঁটেখুঁটে খাই একা

রাস্তায় রাস্তায় মশারি
ভিতরে বেলা, বাইরে কলম্বাস






(ছবিঃ ইউরি স্ক্রিনিকভ) 

প্রাবৃষার কবিতা ১২

Exhibitions — Joan Mitchell The Last Paintings - Hauser & Wirth

গ্রামোফোন
               -মৌমিতা পাল

পথেরই নাবালক সন্তান
একরাশ অনুশোচনা
কৃশ বালকের ইচ্ছেতেই
একরাশ ভুল ইচ্ছে-অনুবাদ।

লণ্ডনে ছেলেটা অফিসফেরত পাবে যায়।
মাঝরাতে বাড়ন্ত ঘরে নিদ্রায় জলভ্রম
দেহ মনের সাধনে পেগের পর পেগ,
আনইনস্টলড হোয়াটসঅ্যাপে
কলের দেহাতি ধাঙ্গড়।
দশ বছরের চুরমার-দাম্পত্যের বোনের সাথে ঝগড়ায় পলি রেখে যায় নেশার নিদ্রা।

শুধু সে জানেনা ওর মুখ দেখবে বলে
এত মৃত্যু পার করেও বেঁচে থাকে জীবন,
বেঁচে থাকে মেঘের জঠরে গেরস্ত গোছের
গ্রামোফোন

(ছবিঃ জোয়ান মিশেল)



প্রাবৃষার কবিতা ১১

Death Of A Salesman Painting by Edward Paul


বরফ বৃক্ষের উচ্চারণ
                   - শিবু মণ্ডল    
১১।

এখন আমার অঢেল সময়

ঘরের সবটা জুড়ে শুধু পুতুল আর পুতুল

তাদের নড়াচড়া কথাবলা সুখদুঃখ

সব বেরিয়ে আসে সেলাই ফেটে সাদা তুলো



এত ফাটল আগে কেন নজরে আসেনি?



সুতোর মায়া ও সুচের যত্ন দিয়ে আমি তাদের সেলাই করে দিই

(ছবিঃ এডওয়ার্ড পল)

প্রাবৃষার কবিতা ১০


Large Floral Painting "From Pain to Pleasure" | LittleLeloo Art

অভ্রান্ত পাতায় লেখা
                    -বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় 

কুয়াশার সমগ্রতা  নিয়ে 
কেউ যেন ঝাপসা হল এইমাত্র 

রক্তাল্পতায় ক্ষয়ে যাচ্ছে দৃশ্যের গৌরব 

তবু কিছু খুঁজছি আমরা 
যা নেই তেমন কিছু নয় 
যা ছিল তেমন কিছুও নয় 
যা আছে তা থাক 
ফিরেও তাকাচ্ছি না সেদিকে 

অভ্রান্ত  পাতায় লেখা কিছু শব্দ  ঝুড়িতে ভরে নিচ্ছে কেউ 

কুয়াশায় তাকে দেখা যাচ্ছে না এখনও ...

(ছবিঃ জেসিকা হেনড্রিক্স) 

প্রাবৃষার কবিতা ৯

Space Time Abstract Mother Creation by Maya Britan

মা
    -সুলক্ষণা আঢ্য

আমার মাথার ঠিক উপরে
দেখি ওম খেলা করে
আলোকীট যেমন দীপ খোঁজে
সে আমার কাছে ছুটে আসে
লাবণ্যের কণা সে-

কখনও বা দেখি
মরা প্রেমের চিঠির মতো
সে পড়ে থাকে আমার পাশে

আবার কখনও বা সে মেঘ ভাসিয়ে
অক্ষরের নোঙর ফ্যালে
লিখতে গেলেই ঘুম এসে যায়
লেখা তখন এক পরিযায়ী মেঘ

আজ দেখি দুহাত মেলে সে ডাকছে
সমুদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে দেখি-'কাঁকড়া!'
বুকে খুব ব্যথা আমার
স্তন্যপান করাতে পারবোনা কোনোদিন
কর্কট রোগ ছিঁড়ে নিয়ে গ্যাছে অমৃতভান্ড
'ওম' আমার একমাত্র অজাত সন্তান
মরফিনের ঘুমে সে আমায় 'মা' বলে ডাকে!

আজ আকাশটা এত কালো কেন-
তবে কি শেষে রাত হয়ে গেল!
ওম! ও---ম! আয় বাবা আমরা এবার ঘুমিয়ে পড়ি!

(ছবিঃ মায়া ব্রিটান) 

প্রাবৃষার কবিতা ৮

Manja McCade | Obra, painting abstract expressionism, 2014: "In ...



খাদ্যনালীর ক্রমসঙ্কোচন
                     -তন্ময় ধর 

টাটকা মাংস কাটতে কাটতে গল্পটা বলছো তুমি।
টিভির পর্দায় শিশুর পাশে অপেক্ষা করছে শকুন।
শকুন লুপ্ত হওয়ার পর আমরা একটু বেশী তেল-মশলা-চিজ ব্যবহার করছি।

মিল্ক ক্রিমে অনেকটাই বেশী ডিসকাউন্ট দিচ্ছে স্থানীয় শপিং মল।
মল ত্যাগ করার আগে আমরা দুগ্ধহীন শিশুর মৃত্যুযন্ত্রণার খবর পাচ্ছি।
মদের অতিরিক্ত গেলাসে ভরে উঠছে সহমর্মিতার বুদবুদ।

রোজই রান্না বেশী হচ্ছে।
অবলুপ্ত নরখাদকদের মত চোয়াল নেড়েচেড়ে বাড়তি খাবার ফেলে দিচ্ছি।
মৃত্যুসংবাদে ঠাসা একটা কাগজে মুড়ে খাবার ফেলে দিচ্ছি মানুষের আওতার বাইরে।

(ছবিঃ মাঞ্জা ম্যাককাডে)



প্রাবৃষার কবিতা ৭

Observing Gerhard Richter's Abstract Painting | Ideelart

ভাবমুদ্রা
        -নভোনীল চট্টোপাধ্যায়


শস্যদানার ওই অনন্ত আলোটুকুই আমার।

তাই, মুহূর্তেই আমি হয়ে উঠতে পারি তেজস্ক্রিয়।


ধ্যানের যে ইতিকথা

আমাকে এইসব  জানিয়েছে

তার সকাম থেকেই

জন্ম নিয়েছে প্রবৃত্তি।


স্বপ্ন উপার্জনের রেখা,

আমার হাতে এখনও স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি।

কিন্তু মুখরতা যখন মহার্ঘ লাগে,

তখন শূণ্যে ফেটে ফেটে যেতে দেখেছি

মেঘের নাভি


ধারালো দাঁতের জন্য

ইঁদুরের গর্তে দুধদাঁত ফেলে আসার অনেক পরে,

যখন জেনেছি –

                আমাদের ক্ষুধা আমাদের সমাধি,

তখন অবশিষ্ট অন্ন আর লবণ ব্যবহার করেই

ভয় দেখিয়েছি মৃত্যুকে।


প্রতিটি জন্মদিনে

অপেক্ষা করেছি

কখন পায়েসের বাটি হাতে

সামনে এসে দাঁড়াবে

                             অন্নপূর্ণার কঙ্কাল।

(ছবিঃ গেরহার্ড রিখটার) 

প্রাবৃষার কবিতা ৬

Abstract Painting "Trigger Finger" 20x20" — Katie Jobling

ভালো আছি
            -পাপড়ি গুহ নিয়োগী



টানা দু'ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই ভয় হয়

সেখানে ঘূর্ণিঝড়। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস


মুহূর্তেই ঘর উঠোন হয়ে যায়

শিকড় উপড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গাছ

ক্ষেতে লবণ জল ঢুকে পড়ে

গরু-ছাগল নৌকা পানের বরোজ ধান !


ঝিঙের মাচায় ফুল এসে ছিলো

মেয়েটার সামনের মাসে বিয়ে


কুপিটা দপদপ করে ,তোরা ঘুমিয়ে পড়

সময়, নাড়িভুঁড়ি হাতে তলিয়ে যাচ্ছে

যেন বিদায় নিচ্ছে আমাদের দেশ


মাথা উঁচু করে পলিথিন হাতে দাঁড়িয়ে

মা বলে ভালো আছি আমরা



সমুদ্রের ভেতর সভ্যতার জঞ্জাল

মরুভূমি হয়ে ওঠে


শরীরে গেঁড়ি কেঁচো লাল পিঁপড়ে

ব্যাঙ সাপ শামুকের দল


চিবুক থেকে খসে রোদ

দীর্ঘশ্বাস আঁচলে বেঁধে তবুও ভালো আছি


শুধু ছেলেটা যে হেঁটে আসছে তার কি হবে

(ছবিঃ কেটি জবলিং)

প্রাবৃষার কবিতা ৫


Acrylic Abstract Painting | Buy paintings Online
বনবিড়াল ও বিষাদ সুন্দরীরা
                                     -শীলা বিশ্বাস


ক্রিস্টোফার কলম্বাসের স্ট্যাচু চুঁইয়ে যে রোদ ম্যাগডালেডা নদীতে পড়ছে ঘোড়ামুখো ছোকরার বাঁধা কোনো বিষাদ গণিকার কাছে তার কোনো মূল্য নেই। দূর থেকে অপেরা সঙ্গীত ভেসে আসলেও মনে ও শরীরে কোনো ঝড় তোলে না। পানশালাতে ভিড় করে থাকে আসক্ত অপেক্ষারা। তুরীয় আনন্দের খোঁজে ঢল নেমেছে রাস্তায়। পথচারী খুশী হয়ে তাসা পার্টিকে কয়েন ছুঁড়ে দিচ্ছে। একটি ছোট্ট আওয়াজ মিশে গেল ভিড়ে।  গলায় মুক্তোর টাইপিন পরা বনবিড়ালগুলি ইতিউতি দৌড়াচ্ছে। হাতচিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হল একশো বিষাদ গনিকাকে। সেন্সারের কাঁচি নিয়ে হারিয়ে গেল বনবিড়াল ও বিষাদ সুন্দরীরা। স্মৃতিতে জড়িয়ে নিচ্ছি মার্কেজের কলম।

(ছবিঃতৃপ্তি দে) 

প্রাবৃষার কবিতা ৪


Abstract Cityscape art painting night rainy New York by Debra Hud by Debra Hurd

ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে 
                         -বল্লরী সেন 


এইভাবে বিবাদের মালা আমি তোমায় পরাই
জনান্তিকে ভোর হয়,ছইয়ের ভেতর দিকে সিঁড়িরা ঘুমোয়
তুমি এখানে ওখানে কষ্টবীজ, কুশের শাবক পুঁতে রাখো
আমারি শরীর রস নিষ্ক্রান্ত অসির ফলায়, দা দিয়ে টুকরো করে কাটো

কমিউনিটি হলের পেছনে কখনো হারিয়ে গেছে এক পা জুতো
স্নানের আক্রোশে তাকে আমি একান্ত ভাবিয়ে তুলি
আমার সামনে তার উলঙ্গ অঙ্গীকার বিশ বছরের এপার ওপারে।

নীল প্লাস্টিকের স্যানিটারি ন্যাপকিনব্রত শতাব্দীর সংক্রান্তিপূরণ
শার্টের গারদ থেকে যতক্ষণ খুলে নিই পরাগের রাজদণ্ড অজ্ঞ হাতে
আমাদের দেহভেদ হয় । শাসকের অজস্র তালায় শব্দ ফাটে শঙ্খ-লাগা চাবির
কান্নায় ,খেলনা  বালিশে পুরুষের রোমবৃত্ত নাগকেশরের মতো ফেরে

ঘ্রাণের টঙ্কারে অববাহিকায় একদিন ভোররাত্রে তার শিয়রের ভিতে
বিনিময় ধান রেখে আসি

( ছবিঃ ডেবরা হুর্ড ) 

প্রাবৃষার কবিতা ৩

Abstract Rain Painting by Shweta Muddebihal

প্রলাপ
    -সোনালী মিত্র 


আজকাল সুখ নিয়ে কিছু লিখতে ভালো লাগে না,প্রেম নিয়েও না
যথার্থ সুস্থতা নিয়ে লেখা চিঠিগুলো একলাই হেঁটে গ্যাছে দাবানলে।
ভাদুরে উত্তাপ মাথায় নিয়ে লালা ও ঘামে যেসব প্রেমিকেরা
এসেছিলেন , লীলাগন্ধ গন্ধ নাকে টেনে তারাও ফিরে গ্যাছেন যেযার ঘরে।
#
প্রতিদিনের সুস্থতা পেতে চেয়ে যাবতীয় পর্দা টেনে রাখে চোখ,
দীর্ঘ সাবান-জলের বুদবুদে  ডুবে থাকে এ পোড়া শরীর।
ডাক্তার বলে গ্যাছেন,
বারংবার এই আত্মহত্যা প্রবণতা ধীরে ধীরে উন্মাদের দিকে গড়ায়।
তার'চে গান শুনুন,গীতা অথবা আত্মাশুদ্ধিকরণ টাইপ বইটই
কিছু পড়ুন,ঘুরে আসতে পারেন পাহাড়ে বা সমুদ্রে,তবে জঙ্গল
আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই সুখকর নয়।
প্রতারণামূলক গল্পগুলো আপাতত নির্বাসনে পাঠিয়ে দিন।
#
লাল-নীল ক্যাপসুলে ঢেকে যায় বৃষ্টিদিন
ওষুধের ধারাভাষ্যে আত্মহত্যা অথবা উন্মাদ কোন একটা সুর
নিশ্চয়ই বাজাবে আমায়,
ধন্বন্তরি কবিতাগুলোও একদিন সাইকো হয়ে উঠবে
সঞ্জীবনী বর্ণমালার ভিতরে জেগে উঠবে এসাইলাম
শুনে রাখুন প্রিয় পাঠক, প্রলয়ের আগে
এ ভুলভাল লেখনীর অস্থি বিসর্জনটুকু অন্তত দিন।

( ছবিঃ শ্বেতা মুদ্দেবিহাল )

প্রাবৃষার কবিতা ২

Abstract Rainy Evening Painting by Dan Haraga

কৃষ্ণ
   -অনিমেষ সিংহ


তুমি বৈষ্ণব পদাবলী। সাঁঝের তারায় আঁকি তোমাকে।
বাহুডোর ছড়িয়ে, আবৃত করো তুমি,
আমার গ্রাম্য নদী ও তার, ডিঙিনৌকোগুলোকে।

বাতাসে, বেলেফুল ভাসে, চিকন শরীরে  থমকে দাঁড়ায়,
চর্যাপদ

একতারা নিয়ে, ভাবি, বৈষ্ণবীর দুয়ারে যাব।

যাত্রাগুলো ফুরোয় না। সব্জীর দোকান, রেশান, অফিস, চুম্বন, সবুজ ও লালবাতি
- সবই, এগিয়ে চলে।

সার বেঁধে নৌকো চলেছে, জলের শব্দে ভাঙছে রাত
প্রাচীনতম শ্যাওলার গন্ধে ভরে উঠেছে আমার শরীর

চাঁদ খাচ্ছে আমাকে
রাত খাচ্ছে
নিস্তব্ধতা খাচ্ছে আমাকে

বেহেড মাতালের মতো, রাজপথ চলেছে
পাশে কেউ নেই
তাই একটিও ছবি আঁকিনি
হরপ্পা থেকে এসেছিলো, যে নারী

আজ সেও ত্রিধা বিভক্ত

জল জমি জঙ্গল।

কারো ওপর অধিকার নেই, আমার।
সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্যে একটি ঘোড়া এবং নিজস্ব মহাকাব্য প্রয়োজন

কোনোটাই আমার ছিলো না। বৈষ্ণবী, বুকের ক্ষত, তোমাকেই দেখাতে পারি
চন্দনের প্রলেপ দিও

এতো কালো আমি, কৃষ্ণ হতে পারি

(ছবিঃ ড্যান হারাগা)


প্রাবৃষার কবিতা ১

Rain of ashes Villens death ballad I 2 works by Rico Lebrun on artnet


দিদিমা , তোমাকে 
                 -রঙ্গন রায়


এভাবে প্রতিদিন কষ্ট পেতে ভালোলাগেনা। এভাবে প্রতিবার ফেরার সময় 
তুমি হাত জড়িয়ে ধরো , বলিরেখার কাছে হেরে যাওয়ার আতঙ্ক 
ফুটে ওঠে চোখে। কীভাবে রোজ আমি লম্বা হয়ে গেছি আর তুমি ছোট ... 
চোখের সামনে চোখ এনেও বলো "আমি তোকে একদম দেখতে পাচ্ছিনা" - 
ঐ দূরে কাঞ্চন গাছটার মতই ঝাপসা হয়ে গেছি আমরা 
ঠিক যেন উল্টোভাবে রামকৃষ্ণের কথা মনে পরে -
উঠোনে অধীর হয়ে আমাদের অপেক্ষায় এখনো তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পাই 
জ্যোৎস্না রাতে হঠাৎ পঞ্জিকা হাতে  তুমি  নেমে  যাও চাঁদের কাছাকাছি 
আমরা সকলে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছি তোমার কাছে ... এভাবে প্রতিদিন আসে , প্রতিদিন চলে যায় 
চা বাগানের সব কোয়ার্টার ফাঁকা হয়ে যায় , নতুন মানুষ কেউ আসেনা 
ভাঙা বাড়ি আর ভাঙা চশমার ভেতর মেয়েদের ব্রতকথার জীর্ণ পাতা পড়ে থাকে।

(ছবিঃ লিকো লেবরান)