পরকীয়া
-কৃপা বসু
"পরকীয়া" জঘন্য শব্দ। বড্ড আপত্তি আছে, কেমন একটা ন্যাকা ন্যাকা, বোকা বোকা শব্দ, যার আদতে কোনো অস্তিত্ব নেই। আমার চোখে সব প্রেমই সুন্দর, সব প্রেমই পবিত্র। যতক্ষণনা ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে, জেদাজেদির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। প্রেম কখনো ইগোইস্টিক হতে পারেনা।
আত্মসম্মানবোধ ও ইগোর পার্থক্যটা বোঝো, বোঝো। আর কবে বুঝবে?
মানুষ একটা সময়ে স্রেফ দুজনকে সবথেকে বেশি প্রায়োরিটি দিতে পারে, সবচেয়ে বেশি...একজন মননে গুরুত্ব পায়, একজন যাপনে। হ্যাঁ একি সময়ে ছটফোটানো মানুষগুলো একজনের প্রেমে পড়তে পারে, আর একজনকে উজাড় করে ভালোবাসতে পারে।
একজনের কাছে ছুটকো খিদে জমা রাখতে পারে, আর একজনের নিরীহ খিদে মেটাতে পারে...
তোমার বর ফিরলে বাড়ি, হলুদচিনিমাসকাবারির হিসেব সারো নিয়ম করে, কোঁচার গিঁটে আমৃত্যুকাল বেঁধেছো গাঁটছড়া। চায়ের জলে সন্ধেসকাল ফুটতে থাকে নরম পলা। তুমি যে লক্ষ্মীমন্ত নারী, মুখের আদল ছুঁলেও মাটি, দায়িত্বভরা বালতি হয়না ফুটো, বরং কিছুটা ছলকে পড়ে জলের ফোটা, সবটা জানি...
কিংবা "দায়িত্ববান" পুরুষ সেজে অফিসঝোলাদিন পেরিয়ে ডাকটিকিটেই ফিরবে তুমি, রান্নাবাড়িশাঁখার কাছে। ঘুপচি পাঁচিল, লোডশেডিং এর চাদর মুড়ে তোমার সোহাগ গিলবে তোমার পোয়াতি বউ। সেটাও বুঝি...
ধুর রাখোতো তুমি রেস্পন্সিবিলিটির বেকার বেকার গল্পকথা।
শোনো, শরীর থেকে পালক গেছে খসেই অনেক, এবার বরং অফিসট্রামমশলাঘামের ফোসকাজিভে একবিনুনি লংকাচপের গন্ধ মাখো...
আলগা কাঁটায় ছাড়াতে গিয়ে চুলের জট যার কথা ভাবতে বসো খুব নিবিড়ে। কিংবা বোরিং ফাইল থেকে চোখ উঠিয়ে মুখবইয়ে ঘাটতে থাকো যার প্রোফাইল।
অথচ সে টের পায়না কি তাইতো! তুমি সিঁটিয়ে ওঠো অভিমানে, রাগের রসদ রাখছো জমা নখের ডগায়।
সে কিন্তু অবুঝ সাজার ভানটা বেশ ভালোই করে, রিং করলেই সাফ কথা তার...
ডার্লিং, সমস্ত দিন আদর খেলে পেট ভরে কি বলো! কাজে আছি, ব্যস্ত আছি, ব্যাস...
তাপ্পর দড়াম করে ফোন কেটে দেয় মুখের উপর।
তুমিও নাছোড়বান্দা ভীষণ। যতই ছিটকে লাগুক রাগের নুন টেলিফোনের তারে।
তবুও তাকে ছাড়বেনা একটুও। সে যে তোমার দায়িত্ব নয় দুর্বলতা, বুঝি বুঝি সমস্তটা।
চুপ চুপ! কেউ যেন না বুঝতে পারে, শোনো শোনো, জানলাখোলা রোদের তুমি ধর্ম জানো? ওরা মনের গোপন জানে, জানেনা ওষুধ কোনো। ওদের যায়না ধরা কোনোভাবেই, ইম্পসিবল! শুধু রাতের মতো ভোর নামলে, ঝলমলানো আলো হয়েই ফুটবে ওরা তোমার মুখেই। সামলে নিও কেমন সোনা!
এত কেন ভাবছো তুমি, হাতটা তোমার বীর্যে ভিজুক, কিংবা লাগুক রক্তস্রাব, সে আঙুলেই কুড়িয়ে নিও জবার ফুল, কেউ বুঝবেনা কক্ষনো।
রাখো, রাখো বিশ্বাস রাখো নিজের উপর,
অধিকারের স্ট্যাম্পপেপারে নাই বা হলো সই, ক্ষতি কি! সে তোমার শরীর নয়, শুধু মনটা ছোঁবে।
দিনের শেষে, সব মানুষই আলোর পোশাক জড়ানো তাসের ঘর, প্রতিটা "আমাদের" ভেতর লুকোনো "আমিটা" কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জোরসে ধাক্কা মারা একটা ব্যথার দরকার।
"বেঁচে আছি" বলার অভ্যেস করার জন্য নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্য দায়িত্বজ্ঞানএক্সপেকক্টেশনের মুখে কুলুপ আঁটা একটা প্রেমের দরকার,খুব দরকার।
আসলে কিছু কিছু সময় চার আনার খুচরো শোক আর আট আনার ফিচকে হাসি, শুদ্ধ দুটোই, দুটোই ভালো... কি বলো!!
( ছবিঃ শঙ্ক নীহারিকা, কৃতজ্ঞতা- দ্য গার্ডিয়ান)
No comments:
Post a Comment