Monday, 7 August 2017

নভস্যের কবিতা ১৫

Related image

তারাধূলিপথ
              -হাসান রোবায়েত 



ভাবছি, একদিন খুব গভীর পানিতে তলিয়ে গেলাম—তারপর, ধীরে ধীরে হিম সেই পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছি—আমার চারপাশে, নানান লতাগুল্ম, ফুলের ভেতর ঠোঁট ঢুকিয়ে পাখিরা আমাকে দেখছে—একটু নিচেই মাছ— আমার মৃতশরীরের নিচে সাঁতার কাটছে—

সেই অনেক নদীর দূরে কোথাও একটা অশোক গাছ—সেখানে তারারা নিচে নেমে আসে—উড্ডীন তুলাগুলো আমার সাথে সাথে উড়ে যাচ্ছে ঝরা নদীপারের দেশে—কেউ হয়তো ওপারে আছে যে আমাকে কাঠের গোধূলি দেবে, নদীর মায়াঞ্জন দেবে—

( ছবিঃ দিমিত্রি কুস্তানোভিচ) 

নভস্যের কবিতা ১৪

Image result for abstract painting poland

কীভাবে বিন্দুর সীমানা থেকে ফিরে আসতে হয় জানা নেই (৪)
                                           -পূজা নন্দী


আমি যাতায়াত করি তোমার সকল
সকাল থেকে কুড়িয়ে নিতে পারি দীর্ঘ যৌবন
ঝুল বারান্দায় ছড়িয়ে থাকা রোদ্দুরের সাথে

কোনও এক বসন্ত থেকে জীবনের ভিত্তি অনেক বেশি গভীর
যখন ডানা মেলে উড়তে চাই নৈবেদ্যে
আর কাটা ডানার যন্ত্রণা কুড়ে খায় আমাদের
সশব্দে ছড়ানো অভ্র চোখের ভেতরে ঢুকতে চায়
ডেকে ওঠে কানের মধ্যে...


(ছবিঃ আলেকসান্দ্রা বৌকিলোন)

নভস্যের কবিতা ১৩

Image result for abstract painting poland

না কবিতারা
        -অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় 

১।
একটা মেঘ আসছে। বড়ো কালো মেঘ।
সমস্ত আকাশটাকে গিলে ফেলবে।
বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে মাতন ছড়িয়ে পড়বে।
আমরা কেউ ভিজবো না। ভেজার ভান করবো।
তারপর দামামা বেজে উঠবে অবশিষ্ট আকাশটাতে,
আমরা দেখবো নিজেদের পুড়ে যেতে।
আমরা দেখবো আমরা পুড়ে যাচ্ছি।


২।
একটা গাছ আলোর দিকে হেঁটে যাচ্ছে
আমি দেখতে পাচ্ছি
তার পায়ে ধানের শিষের বেড়ি
ডালপালা গুলো ডানার মতো দেখতে
আমি দেখতে পাচ্ছি
সারি সারি গাছ
একটা নির্দিষ্ট আলোর দিকে
এগিয়ে যাচ্ছে
আর তাদের পাতাগুলো থেকে জন্ম নিচ্ছে
অসংখ্য শিশুর ক্রন্দন।

৩।
একটা আলো ক্ষীণ হয়ে আসছে
শব্দ গুনে গুনে খুজেঁ নিতে চাইছে
নিজের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান।
একটা আলো ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে
আমার বসতবাড়ি, জলের বোতল
আর সদ্যজাত কবিতা গুলোকে।

৪।
একটা ঘর যখন মাঠ হয়ে
উড়ে যেতে থাকে
আকাশের শেষ প্রান্তে
ঠিক তখনই
বঙ্গোপসাগরীয় নিম্নচাপ
আমার সমস্ত জামাকাপড় ভিজিয়ে দেয়।
আমাকে বারান্দায় চলে যেতে হয়।

(ছবিঃ ফিন্টন হোয়েলান)


নভস্যের কবিতা ১২

Image result for abstract painting denmark

 হ্যালুসিয়েশন
               -বেবী সাউ 

ড্রইং এ বেঁচে বসে আছি
একা

এন এইচ-এর উপর দিয়ে
চলন্ত মৃত্যুরা ছুটে যাচ্ছে

মাঝে ভেসে উঠছে
ব্লেড,
অ্যালপ্রাজোলাম বিশটি
অথবা
পর্দার ওপাশে শর্তহীন
দড়ির গিঁট

আবছাভাবে মা হেঁটে গেলেন
বান্ধবীরা উৎসবমুখর

একটা মাছ অ্যাকোয়ারিয়ামের ভেতর থেকে,
স্থির, অপলক চোখে

সমস্ত বেঁচে থাকা
উপভোগ করছে


( ছবিঃ এজলার বিলে)

নভস্যের কবিতা ১১

Image result for abstract painting peru


প্লাস্টিকের লেখা
                         -অভিষেক ঘোষ 


প্রতিটি লেখার মুখমণ্ডল জন্ম সময় বাপের নাম ভিটের নাম একহয়ে গেলে তাকে এরম এক ইজিচেয়ারে চাপিয়ে পিছন ধরে বিকেলের পার্কে মৃদু কেশরিত বাতাসের প্রাঙ্গণে ইয়ে মাখাতে মাখাতে ঘুরিয়ে আসি
যদি তাতে একটু পাল্টে যায় ভুরুর লোম যদি তাতে একটু পাল্টে যায় পাকা চুলের লেজ যদি তাতে একটু পাল্টে যায় তিলের মহাশূন্য তবেই তো তাকে আবার ঘরের দোয়াতে এনে রাখব
দোয়াত ভেঙে যদি কেউ কোনদিন বেড়িয়ে থাকে তার পিছন পিছন কিছুদূর যাওয়ার পরেই ট্রামলাইন হারিয়ে যায় ও আকাশের পাখিরা যারা হারিয়ে গেছে,বহু বহু শতাব্দী হারিয়ে আছে তাদের চিনতে পারে...
শুধু বাপের নাম ও জন্ম ভিটে পাল্টে গেছে এখন।

(ছবিঃ মিরেইরা ইজকুইয়ের্দো)


নভস্যের কবিতা ১০

Related image


হোমো সাপিয়েনস
                  -অনির্বাণ পাল

হেলান দিয়ে বসে আছে শহর কাঁদছে ডিহি
নিষ্পত্র গাছে বিলয় কান্না ডুবছে বিরোচন
প্রত্যগ্র সকালের কাছে রেখে আসছি কান্নাঘুম
বেলেল্লা বিকেল হাওয়ায় ভেসে আসছে মোহ

শ্রাবণের বিপরীতে শ্রমিকের ঘাম
খড়ের আদর নিয়ে ঘুমিয়ে আসছে শহর
রাস্তাগুলো চলে যাচ্ছে শিকড়ের প্রদেশে
পাঁজরে জল জমে
সেই জলে চাষ করে পাগল চাষি

শহর কাঁদছে
মিছিল বাড়ছে
হত্যার পাশে ছাঁৎ কফিন

মানুষ ফুল রাখছে মানুষের জন্য!

(ছবিঃ ফিলোমেনা বূথ) 

নভস্যের কবিতা ৯

Image result for abstract painting peru

রূপকথা
      -শৌভিক দে সরকার

একটি দেশ ক্রমশ ছোট হতে হতে নো-ম্যান্স ল্যান্ড হয়ে ওঠে
একটি উধাও জমি ক্রমশ ছোট হতে হতে জলের বারান্দা হয়ে ওঠে
একটি চরাচর ক্রমশ ছোট হতে হতে তিলার্ধ, 
বাষ্পরেণুর আঁচড় হয়ে ওঠে।
পাহাড়ের গোড়ালির কাছে গেঁথে যাওয়া 
কাঁচের টুকরোরা জানে এইসব
ফিকে হয়ে যাওয়া রূপকথা, গাঢ় চোখ, কণ্ঠার হাড়
বিবৃতির পর্বগুলি পার হয়ে যাওয়া নাভিখাত,
জানে নদীটির বুকে আকাঙ্খার মত দাঁড়িয়ে থাকে
অসমাপ্ত সেতু, গীতালদহ জংশন!  

(ছবিঃ উইলেম দে কুনিং)  

নভস্যের কবিতা ৮

Image result for abstract painting norway

নাটক
        -জ্যোতির্ময় বিশ্বাস


কোনো কোনো দৃশ্যে এমন হয় -
ভালো আছি ব'লে মানুষটা চলে যায়
আর তারপর সেই দৃশ্যে শুধু
                              বাঁশি বাজে
           বাজতেই থাকে

কেঁদে দুঃখ দেখানোর পদ্ধতি পুরোনো
হয়ে গেছে ব'লে।

( ছবিঃ বিয়র্নার আসলুন্ড )

নভস্যের কবিতা ৭

Image result for abstract painting norway

বরফ
      -শমীক ষান্নিগ্রাহী

হাসিগুলো ছড়িয়ে পড়ছে
সেদিকে তুমি তাকিয়ে ছিলেনা

প্রার্থনা সেরে কুয়াশা নামছে . . .

রাত বাড়ে ছুটির মেজাজে
বাড়তে বাড়তে দরজা ধাক্কা দেয়
পতনের শব্দ

(ছবিঃ ইঙ্গার সিটার)

নভস্যের কবিতা ৬

Image result for abstract painting japan

 মেঘ-বৃষ্টি
           -অভিশ্রুতি রায়

কিছু ফিরে যাওয়া ডাক আর চেনা নিশ্বাসের উষ্ণতায় বার বার
ডুবে যাচ্ছি এক বিস্তীর্ন জনপথে।

চেনা সাইকেল গুলো রিং দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে আমার বিন্দু বিন্দু রক্ত জমানো উর্দ্ধ মহাশিরা।

শরীর জুড়ে মেখে থাকা পোড়া পেট্রোলিয়ামের বাস্পে তুমি পরিপূর্ণ হচ্ছো।

বাসস্টপে আধ ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরী রমণী যখন তোমায় এক পশলা বৃষ্টি মাখিয়েছিল,
 সেই বৃষ্টিতেও ধুয়ে যায়নি আমার প্রেমের প্রথম আতর মাখানো চিঠিটা।

যেখানে প্রেমটাও ছিল ফুলের কুড়ির মতো পবিত্র অক্ষরে।
আজ কলেজস্ট্রিটে সন্ধা নামলেও,,,
আমার আড়ষ্ট তোমার কাঁধে মাথা রাখে সেই পুরোনো গঙ্গার ধারে।

যেখানে ব্যাগ ভরতি কুয়াশা এসে আড়াল করে আমার ভবিতব্য কে আর
তোমার পরিত্যক্ত নিশ্বাসের চাপে চাপা পড়া বিন্দু বিন্দু জলীয়বাষ্প কেটে দিচ্ছে গায়ে জ্বলে ওঠা পেট্রোলিয়ামের শিকড়।
যাকে তুমি বৃষ্টি বলে চেনো...

(ছবিঃ মায়াকো নাকামুরা) 

নভস্যের কবিতা ৫

Image result for abstract painting mexico

প্রতীক
     - নীলাব্জ চক্রবর্তী




ক্রমে ইঙ্গিতগুলো ছাড়িয়ে ফেললে বেরিয়ে আসতে থাকে ভাষার হাড়গোড়। সম্পর্ক নামের একটা আয়নার ভেতর দিয়ে পর্দা গাঢ় হয়একটা পর্বের নাম স্খলন রাখছে কোথাও। রোল করছে। ভালবাসতে-বাসতে বড়জোর গাছ। কখনো স্মৃতি অবধি সরলরেখা হচ্ছে কেউ। পোশাকের ভেতর ছেড়ে আসা ঋতুবোধ যতদূর। কোলের ওপর ফেলে রাখা ওই সময়টা কুঁকড়ে যাচ্ছে আর বৃষ্টি আসার আগেই বাসা থেকে দলে দলে বেরিয়ে পড়ছে পুরনো হরফসারারাত ধ’রে তামাকক্ষেতের ওপর বৈধ প্রতীকগুলো এভাবে ওড়ে। আরও কিছুটা লম্বা হয়ে ওঠে দিন। আমি খুব সাদা জামা সিভিলিয়ান লক্ষ করি দরজা-জানলার মাপ, সবুজরঙা ছাউনি, কংক্রীট পিলার থেকে বেরিয়ে আসা এবড়োখেবড়ো রিইনফোর্সমেন্ট রডের জং...

(ছবিঃ আইয়ান পামার) 

নভস্যের কবিতা ৪

Related image

বাদামি অংশ থেকে
                        -অনিন্দিতা ভৌমিক

এভাবেই প্রত্যেক সিদ্ধান্তের শেষে
নিজের মুখ বুড়িয়ে যেতে দেখি
চিবুকের উপর গালের দাগের উপর
ছিটকে আসতে দেখি রোজের নির্দেশ
পায়ের দিকে যে শরীর গুটিয়ে রাখে
বুক থেকে খুলে রাখে ঘোলাটে নীল চোখ
#
অকারণ এই ভ্রমণ
ঘরে ঢোকার শব্দ নিভিয়ে দেয়
মাথা কাত করে দেয় ঘুমন্ত কফির কাপে
আমি তার পেটে হাত ঘষে দিচ্ছি
বিদেশি ভাষার কাছে ফেরত চাইছি
তার প্রকাশ্য ক্ষত
#
আমার পাতলা স্মৃতি
লেগে থাকছে মগজের কোষে
আমার গোস্তের টুকরো শুকিয়ে চড়চড় করে

(ছবিঃ পল জেনকিন্স)


নভস্যের কবিতা ৩

Image result for abstract painting mexico

স্টেশনে সকাল থেকে আড্ডা দিচ্ছে যে যুবক
                                                      -অনিন্দ্য রায়  

ট্রেন অপরিচিতের মতো চলে যায়, স্টেশনে দাঁড়ায়
টিকিট এখন আর আগে থেকে ছাপা নয়
           যেন সব সম্পর্ক, সব যাতায়াত এইমাত্র রচিত হচ্ছে
কোনোদিন ছিল মোটা হলুদ কাগজে সামাজিক, পূর্বনির্ধারিত
মনে পড়ে, সেই রোগা টিকিট চেকার
চা-অলা, ওই ধূপ বিক্রেতা প্রকৃত অন্ধ কিনা
এবং প্রতিটি ভিখারির নাম নিশ্চিত কানাই
                  সবাই কমবেশি চেনা, না হলেও চিনে নেওয়া যায়
শুধু এতগুলি চাকা, জানলায় এত এত অবিশ্বাসী মুখ
একখানি আস্ত রেলগাড়ি চেনার প্রতিভা নেই আমাদের, নেই  
 #
ট্রেন ছাড়বার আগে হুইসল দেয়, প্রাণপণে
আগে কোথায় শুনেছি যেন
#
কোথাও কি দেখা হয়েছিল

(ছবিঃ ট্রেসি বোনিন)

নভস্যের কবিতা ২

Image result for abstract painting mexico

বাতিল  অসুখ 
                -বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় 

নিজেকে দেখার জন্য উৎসুক হয়ে আছে  বন্ধ জানলা
তবু দরজা তালাবন্দী  অপারগ ভাঙার অভ্যাসে
চৌকাঠ নড়ে উঠল অচেতন  বিধ্বস্ত আলোয়
ফিনফিনে অন্ধকার  মিহি  চোখে চেয়ে আছে
গাঢ়  লালসায়
বিক্ষুদ্ধ চিরকুটে  তোমার কৈফিয়ত

 আয়নায় মেলে দিচ্ছে অবয়ব  কার ?
এপার ওপার ফেরিঘাট
নিজেই নিজের শব বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সময়
বাতিল অসুখগুলি  মাঝে মাঝে  আলো পায় , জল পায়  ভালোবাসা পায় ।

(ছবিঃ সান মিগুয়েল দে আলেন্দে)

নভস্যের কবিতা ১

Image result for abstract painting mexico


স্তবক

       -অভ্রদীপ গোস্বামী 



আমার স্তবকগুলি বৃষ্টিফোঁটার মত ঝরে পড়ছে
দুলতে থাকা পাতার সরু শিরা বেয়ে
গড়িয়ে পড়ছে
একটি স্তবক নামছে পাহাড়ি জানালায়
মেয়েটির খুলে রাখা খুলে রাখা কোথায় যেন
একটি স্তবক খুঁজছে ছন্দ যতি ললিতকলায় গভীরতা
একটি স্তবক স্কন্দকাটার মত কেটে আনছে রস অলংকার
সবকটি জমা হচ্ছে একটি সাদা খাতায়


আমার কৈশোরের আরাধ্য নৌকাটি
আঁকছি শেষ স্তবকে
ভেসে যাব
যেমন ভেসে গেছে আমার স্তবক স্তাবকের
বৃষ্টিফোঁটায়।
কোথায় যেন কোথায় যেন
পাহাড়ি গাছগাছড়া আর তোমার জানলায়

(ছবিঃ মাইকেল জেমস)