Monday, 9 December 2019

মৃগশিরার মাসের অনুবাদ কবিতাঃ ডেনমার্ক থেকে ওলগা রাবঁ



খোলা 

খোলা: কোন শল্যবিদ ছুরি রেখেছে আমাদের পাত্রে
মেডুসার প্রতিরক্ষার একটি আয়না

কে এখন তার স্তন পুষ্ট করবে ? তোমার সুন্দর মুখ? তোমার কদর্য মুখ?



আমি যে সাপটিকে পুষ্ট করেছি আমার হলুদ, আমার নরম সোয়েটশার্ট, আমার ক্রিমে

আমার মুখে ঠান্ডা ক্রিম লাগছে, ভালোবাসার একই ক্লান্তি দায়।



আমার মুখ অশ্লীল সিনেমা, ভোগ্য পণ্য, নীল ফুল যা দুধে অদৃশ্য হয়ে যায় তা পূর্ণ

আমার মাতৃভূমি, মাইগ্রাস, আমার মাতৃভাষা, আমার জিভ মাংসের সাথে ভারী,

আমি আমার পিতামাতার চিহ্নটি প্রিয়জনের রোগ হিসাবে বহন করি।



সাদা পোশাকে সাদা দাগ, হার্ট-ফিটনেস, ঘরের পিছনে সৈকতের পাশে কুৎসিত বালিতে সামান্য সবুজ পাথর,

পরিচিত সৈকত, আপনার মুখ, ঘুমের অছিলায় বন্ধ,
 এটি কিছুই নয়, কিচ্ছু না



মেডুসা, আমি তার মুখ দেখতে পেলাম দূরের দূরের বালিতে, সূর্যের প্রথম রশ্মির দ্বারা আলোকিত,

অরণ্য এবং শিশুর বিছানা,
এর প্যাটার্নটি বড় হাতের মতো দেখায়,



দিনের প্রথমদিকে ধোঁয়াশা উপকূলের উপর দিয়ে যায়,
পরে সমুদ্রের মহান দেহ তার রাস্তাগুলি আলোকিত করে,

আমরা আমাদের নিজের হাতে হালকা ভাবে রেখেছি, নার্ভাস হয়ে পড়েছি, আমরা সাদা সুতো কেনাকাটা করেছি,



আমরা প্রাচীরের বিরুদ্ধে আমাদের গাল ঠান্ডা করেছি, যত্নশীল, সাদা পাথরগুলিতে প্রচন্ড উত্তপ্ত পর্যটকদের,

একটি একক পোকার উপর হামাগুড়ি দেওয়া একক পাথর



আমি গ্রীষ্মের পরিষ্কার মুখে জেগে উঠি, আমার চোখগুলি আপনার শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি দিয়ে ঢেকে গেছে।

সকালটা পুরনো।



( ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে ১৯৮৬ সালে ওলগা রাবেঁর জন্ম। বড় হওয়া ওই শহরেই। কবিতার পাশাপাশি উপন্যাস এবং অনুবাদেও তিনি সিদ্ধহস্ত। মূল ড্যানিশ থেকে বহু পরিশ্রমে তাঁর কবিতার অনুবাদ করলেন উষ্ণিকের সম্পাদক)

(ছবি ঃ সোফি ম্যাথিয়াসেন)





মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৭

Broadway Boogie Woogie (1943) - Piet Mondrian

প্রাপ্তি 
          -উমা মন্ডল 

জন্মদিনে  পায়েস  হয়না............শুভেচ্ছা  বার্তার  স্তূপ  পড়ে  আছে  বস্তা  ভর্তি  হয়ে
বসে  আছি  মাথাভর্তি  নির্জনতা  নিয়ে ; দেয়ালের  গায়ে  বসা  পোকা  কেটে  দেয়  আস্তরণ
ছাড়া  পাওয়া  বিষাদের  জঙ্গল , সবুজ  কান্না .........বনজের  গর্ভ  থেকে  কোকিলের  গান
শুনি । ভালোবাসি  তানের  নদীতে নৌকা  নিয়ে  ভ্রমণে  বেরাতে............

বেলা  পড়ে  আসে ; দিনের  অর্ধেক  চলে  গেছে , নেশাগ্রস্ত  পথ  চলতে  চলতে
পায়েসের  গন্ধ  পাই ; আজ  জন্মদিন  নয় , কালসর্পের  কাহিনী  মা  কি  ভুলে  গেল........

পড়ে  আছে  খোলসের  কঙ্কাল , রক্তাক্ত । ছুরি  দিয়ে  কেটে  দিচ্ছে  ভাণ্ড  নিয়ে  শক্তিরূপা
ভস্মের  প্রকোপে  অন্ধ  হয়ে  গেছি  একেবারে। আমার  পুরোনো  মাকে  দেখলাম  কতদিন
পর জীবাশ্মের  মায়াচিত্র  থেকে  উঠে  আসতে

(ছবিঃ পিয়েঁ মঁদ্রা)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৬

Related image


নদী
       -পাপড়ি গুহ নিয়োগী




অন্ধ রাক্ষস ড্রেজিং এর কাজ পেয়েছে



পচা গলা রক্তে শকুনের নগ্ন নাচ

আত্মহত্যা চিৎকার করে তল চায়



তুমি রাষ্ট্র পরিচালিত নরকের কথা বলো

আমি অসুখের হাত ধরে সাঁকো হই



অবশেষে ঘুমিয়ে পড়ে নদী, কান্নার দাগ রেখে





রক্ত নিয়ে খেলা এদের জন্মগত অধিকার



প্রত্যক্ষদর্শী ভয়ের ভেতর দাঁড়িয়ে

নিজের মৃতদেহের সাথে নিজস্বী তুলছে



এখন আর নদীর ভেতর ডুবে মরা যায় না

(ছবিঃ জেরেমি ইওর্ডানোফ) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৫

Arshile Gorky famous abstract artist Orphism

একা
         -দীপায়ন পাঠক



শ্যাওলার সাথে

কেমন যেন বন্ধুত্ব হয়ে গেছে



সূর্য্যের আলো কমে এলেও

ডাকে না কোন মুখ



হঠাৎ করে সন্ধ্যা নেমে এলে আর

নতুন করে হাওয়া ওঠে না



হেমন্ত বিকেলে কালো নৌকায়

ভাটিয়ালী গায় না মাঝি



শুকনো কাশফুলে পিঁপড়ের বাসার

অন্ধকার, ভাবায় না আর



এবার হয়তো একা থাকাও শিখে যাব

(ছবিঃ আর্শাইল গোর্কি) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৪

Related image
স্নায়ুগাছ
            -রাজেশ শর্মা


এমন উপলব্ধির ভিতর

একটি গাছ হয়

মায়াময় একটি গাছ


তার শিকড় ছড়িয়ে পড়ে স্নায়ুতে

বিকেল ঘনিয়ে আসে


যে পাখি সারাদিন রৌদ্র খুঁটে খেয়েছিল

সে এসে বসেছে কোলায়


রাত্রি হচ্ছে


খিদে পাচ্ছে জলের মতন


তোমার ডানার ভিতর

ঘাপটি মেরে শুয়েছে ঘুম!

(ছবিঃ ব্যাসিলী ক্যান্ডিনস্কি) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১৩

Related image

দুলাল পাল : রাষ্ট্রহীন পিতার মাংস ; আসাম প্রদেশ
                                                                                -সু চক্রবর্তী 


সম্পর্ক গাঢ় হলে একধরনের দাগ পড়ে।সে দাগের চারপাশে ঘুরঘুর করে ওঠে তেমাথা সেলুন, ঐশ্বর্যহীন নাভিমূল। চুপিসারে এসে বসে পড়ে লাশ।আহার।আমরা দিন দৈনতায় ভুগি, অবুঝ সেলামি ফুঁড়ে ভেসে যান সন্তানেরা....তাঁদের হাতে মুখাগ্নির সামান; নুন, মরাভাত আর শকুন হয়ে যাওয়া পুরুষটি।



তুমি জেগে থেকো না বরং কিছুটা সময় কাকতালীয় ভাবে অপব্যয় করে যাও।একটা হাত ক্রমশ গ্রাস করছে তোমার বিস্মৃতি ও তার অতলে থাকা যাবতীয় রাষ্ট্রয়াক্ত শোকভোগ !  গুনে গুনে রাখো তাকে।  মাংস পচে উঠলে স্বীকৃতি  অন্তঃস্বত্বা যুবতীর  মতোই দেখায়। তোমার দেহজপুকুর ; নিমেষে ছাইভাত....আক্কেলসেলামি !   জলভরা শ্বাসে আটকে যায় কাঁটাওয়ালা মাছ, তাদের টুকরো দেহে আটকে থাকে অশ্রুমায়াপ্রেম। চোখ জুড়ে ত্রিবেণীসংগম.....




গোটা একটা গোষ্ঠ...থরে থরে সাজানো আছে জরাশোকমৃত্যু। ইট,পাথর, বালু, সিমেন্ট দিয়ে তৈরী হচ্ছে এক একটা  সুদৃশ্য শেকলঘর । সামনে পার্ক, জলের সুবন্দোবস্ত!  এতটুকু সব ঠিকঠাক, ঠাকঠমকীয় ! ভেতরের হাওয়া,  হিম! সারি সারি লাশ পড়ে আছে.....নিভৃতে.. একা, দারাপুত্রহীন!



অনেকটা ঘোরের মধ্যে হেঁটে চলেছে পুরুষ। তার দু হাতে বাজারের থলে,ভরতি.... নিয়মমাফিক । চাল ডাল আর আনাজপাতির আড়ালে উঁকি দিচ্ছে লাল হয়ে যাওয়া পিতার মাংস! এবার মুখাগ্নি হবে।

(ছবিঃ গেরার্ড রিখটার) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১২

Related image

দেখা হোক আরো একবার
                               -পিয়াল রায়

এদিকে শীতটা একটু কমতেই
                হঠাৎ  খানিকটা বসন্ত
                     জিরোতে এলো আমার বাড়ি

হেমবর্ণ মুখ
তেল চকচক গালে  ঠিকরে নামছে
মন কেমন হাওয়া

গান বেজে উঠল অকারণ

সামনের যুবক গাছটায় একটা
           লেজঝোলা রঙিন পাখি
কার যেন নাম করে ডেকে যাচ্ছে একটানা
                                             সঞ্জয় সঞ্জয়

রোদের দরজা হাট করে খোলা
            ধীরেধীরে জমে উঠছে শৃঙ্গার

ভেতরে ভেতরে কোথাও প্রবল শব্দে
ভেঙে পড়ছে জল

সে এক অনন্ত পরম্পরা... অশেষ বিস্ময়

অন্ধকার উজিয়ে উন্মাদ কোনো অদৃশ্য তরঙ্গের দিকে
             
 প্রতিধ্বনিত হল

' আবার দেখা হোক
         আমাদের আবার দেখা হোক '

(ছবিঃ জ্যাকসন পোলক) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১১

Related image

মাংস
         -তন্ময় ধর

মাংস খুব ছোট করে কাটতে বলেছিলে তুমি।
আমার হাত থেকে ছুরিটা পড়ে গেল।
আর হঠাৎ অন্ধকারে চেঁচিয়ে উঠল কেউ।
শাদা একটা মাছি উড়ল এনকাউন্টারের সামনে

মাংসের দাম ওঠানামা করতে শুরু করল।
তেল-নুন-মশলার ভেতর থেকে
কেউ পুড়িয়ে ফেলল আমার তীব্র জিভ।




(ছবিঃ ব্রুস গ্রে) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১০

Image result for abstract paintings by famous artists

ঘাতক 
          -নিলীমা দেব

দৃশ্য আমাকে দেখছে
যেমন করে আমি তোমাকেও দেখিনা নিখুঁত

শহরের  শরীর বেয়ে নেমে যায় আঙুল

 বেহুঁশ খেয়া

যে আমাকে গাইত সে  এখন গোধূলি গেয়ে কাত করে দেয় আগামীর ইতিহাস

খেয়া ঘুরালেই নাজেহাল রাজপথ চৌকো হয়ে ঢুকে যেতে চায় দাবাখানায়
মেহগিনির লোকাল পেরিয়ে  স্টেশনে আমাদের ঘর
যাকে আমরা খিদে ব’লে জানতাম…

জন্মের পা থেকে কুয়াশা ভাঙে ঈশ্বর

(ছবিঃ সামান্থা লেসলী)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৯

Related image

প্রশ্ন 
          -প্রদীপ চক্রবর্তী

নেশাতুর তুমি | অপরিহার্য নেশার মতো
জলের মৃত ইনকাদের সভ্যতায়
এখনো লেগে আছে অতীত শীৎকার |
নেশাতুর কুহেলি পৃথিবীতে ,
সব কিছু ছায়াছায়া |
ঘন দেহান্তর ঘটেছে নেশার লালায়
তোমার আমার সূক্ষ্ম দ্রবণে ...


নেশাতুর তুমি |
দুমুঠো ভাতের গন্ধে আকাশেও দ্যাখো
খিদের অভিসার |
অথৈকে  অনল কোরকে রেখেছো |
নিজেকে পোড়ানোর ধোঁয়াময়  তূরীয়তা ...


এই বুঝি মনের প্রকোষ্ঠে কাটাছেঁড়া ...
তল থেকে ভেসে উঠে আসছে ,
মহাপৃথিবীর টানা ও পোড়েনে আছে
রকমপাড় নকশা , ডুরে , সহজাত কবিত্ব কুন্ডল !
যতবার তুমি  তাদের কাছে নিজেকে মেলে ধরেছো ,
 তারা তোমাকে নিঃস্ব করেছে স্বরচিত টাটকা রক্তের ধারায় ...


তুমি তো শেখোনি  ব্যবহারবিধি |  বহুদূরের বীজবোনা ,
জল দেওয়া ফসল আগলে রাখা মন |
দেশের রোদে হাঁটেন রাজরানী |
বেনেতির হরেক জিনিস |
একদিকে যখন এরকম কথা হয়
আবার অন্যদিকে তোমার আড়ালে তুমিই নিজেকে বিকিয়ে দাও ফের |
 অবিক্রিত নেশার পাচন তো দিয়েছে মন !


তবু আপৎকালে তরতাজা মেয়েটিকে কূটনোর মতো খন্ড খন্ড কুটলে কেন বাংলা কবিতার  মৃৎপাত্রে ,  দিশি রাজা অয়দিপাউস ?

(ছবিঃ মাইকেল করিন্নে) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৮


কমপ্লেক্স
            -দেবারতি চক্রবর্তী

একটা ভুল হয়ে যায় বারে বারেই
কেন জানি অজান্তেই
আমরা সবটা জেনে যাই
জানি বলেই,
এই সমস্ত চুপ করে থাকারা আসকারা পায়
কি দারুণ সব ভাঙা ভাঙা কথা লিখে ফেলি
আর আকিঁবুকি সারা ঘর
টেবিলে মনখারাপ বাড়ে
চায়ের কাপে রাত্রি,
এই ভাবে জলচোখে
আমাকে দেখেনি কেউ

(ছবিঃ সাই ত্বোম্বলি) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৭



সংসার 
        -নীলাদ্রি ভট্টাচার্য   
           
বিনষ্ট হলেও অতগুলো শীতের নীচে
খড় বাঁধা ভারহীন সুদূর  ...
বনাঁচল ঘেঁষে ওঠে

ঘর সংসার অফলা উনুন
নিয়মের অতর্কিত স্তূপ আসবাব
পরিচয় দিতে চায়

অভাবে চাপানো রোদের মাংস তুলে
ত্বকহীন সম্পর্কের অগ্নিকোণ ।

(ছবিঃ বেন নিকোলসন) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৬

Franz Kline.

লাল মাটি ও রং 
           -অ নু ঘো ষ 

আমাদের বারান্দার রং এক। মাটির রং আলাদা হলেও দেয়ালে আমরা একই ছবি আঁকি। দূরবীনে লেগে থাকা দূরত্বটুকু একটু একটু করে এগিয়ে আসছে লাল আলোর মতো । যেন ভ্রূকুটি তে জেগে থাকা একটি শান্ত দ্বীপ। আর আমি সেই দ্বীপে শিকড়ে জড়ানো অরন্যা। ঠিক যেমনটা স্বপ্নে
ছিল ঠিক তেমন টাই বাস্তব। সেই বাস্তবকেই আগলে রাখে কাচের জানালা, গভীর চোখ, আর শান্ত দ্বীপে ভোর হয়ে ওঠা নরম সকাল। ইচ্ছে আর মানস সমার্থক বলে আমি রং ছড়াতে পারি। শীত, গ্রীষ্ম বর্ষা ঐ চোখেই আবার ঐ চোখে বসন্তও দেখি প্রতি মুহুর্তে

(ছবিঃ জাঁ লম্বার্ডি) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৫


Battle of the Lights, Coney Island by Joseph Stella

যোগাযোগ বিষয়ে যা কিছু আমি ভাবতাম 
                             - নীলাব্জ চক্রবর্তী



ট্রেনের জানলা থেকে যতদূর দেখছি
গাছে গাছে
ফুরিয়ে ফেলছে
ফ্রি-তে পাওয়া কানেক্টিভিটি
এই অবধি দৃশ্য
তারপর শাটার স্পিড
অর্থাৎ
প্রিয় ত্রিভুজের কোনাকুনি সরে যাওয়া
একটি অফ-শোল্ডার কবিতায়
জোলো
সান্দ্র
স্যাঁতস্যাঁতে
এইসব ভেজা শব্দগুলো স্টিফনেস বাড়িয়ে দিচ্ছে
ফিকে
ক্যালেণ্ডার নামের দাগে
বর্তুল এই ভাষা
স্বাভাবিক কাঁচের পাশেই গড়ে উঠছে
মাল্টি-গ্রেইন স্বাদ...

(ছবিঃ জোসেফ স্টেলা)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৪

Nude Descending a Staircase No.2 by Marcel Duchamp

জরায়ুফুল
         -সোনালী মিত্র



একটা অসমাপ্ত সঙ্গমের মধ্যে রেখে চলে গেলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। কুমারী সাগরের গর্ভে কম্পাসহীন জাহাজ ফেলে পাটাতনের কাঠ ধরে ভেসে গেলেন কোথাও ! হে সামরিক ইউনিফর্ম , চলে গেলেন শিকারি-দ্বীপে অদ্বিতীয় জাহাজ ও আমাকে ফেলে । ভাসমান দ্বীপে বিষাদী সানাইয়ের মধ্যে দীর্ঘ হতে থাকল আমাদের সম্পর্কের অনুশাসন । আপনি ফিরবেন বলে ব্যক্তিগত সৌন্দর্যগুলি দেরাজে গুছিয়ে রাখি; লোকচক্ষুর আড়ালে। সৌন্দর্যরা বড় ভয়ে থাকে । কাজলের মধ্যে লুকিয়ে রাখি ফিরবার প্রত্যাশা ।চিঠিতে লিখেছিলেন, আপনার ফাইটার জেট থেকে মরুভূমির সূক্ষ্ম বালুকণা পর্যন্ত স্পষ্ট দেখতে পান , অথচ , আপনি নাকি এ বাড়ির মাথায় চক্কর দিয়েও বুঝতে পারেন না কোনটা আমাদের বেডরুম। আমি প্রতিটি স্বপ্নে দেখি শত্রুশিবির তছনছ করে এগিয়ে আসছেন আমার ব- দ্বীপে । হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ছেন আমাদের বেডরুমে।যেখানে আমার গোলাপি রঙের খোলওয়ালা ব্রেসিয়ার, টুকরো টুকরো পাপ নিয়ে বিসদৃশভাবে ঝুলছে ! বিদায়ের আগে বারুদের গন্ধ নিয়ে যেবার চুমু খেতে খেতে বলেছিলেন, অল্পতে খুশি হতে পারলে সুখের অস্তিত্ব থাকে না । সুখ রেখে দিও দ্বীপের নির্জনে ।


একাকীত্ব আর নির্জনতা বড় আপন-প্রিয় । আপনার ছোট ভাইটি লজুক বড় । রমণের ঐশ্বর্য নিয়ে যে ফুল ফোটে তার রেণুতে রাখি অতৃপ্তি আত্মাকে ! তার লাজুকঠোঁটে ভেঙে যায় আমার নিষিদ্ধ বাঙ্কারের গুহালিপি । আপনি কি তখন রাইফেলের আশ্চর্য বুলেটের গন্ধ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন গরিলা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী বাঙ্কারের দখল নিতে!স্থান দখলেই লড়াইয়ে গ্রেনেডের মধ্যে গর্জন করে উঠছেন কি স্বভাবতই?এই একবছরের মধ্যে প্রতিটি পত্রের গায়ে বত্রিশ রকম শৃঙ্গার আসনের কথা লিখে প্রলুব্ধ করেছিলেন নারীক্ষেত্র।আপনাকে বলা হয়নি,আসলে আপনাকে বলতে পারিনি,আজকাল স্বপ্নে দেখি বরফ চাদরের ভিতর শক্ত হয়ে যাচ্ছে আপনার গামবুটসুদ্ধ শরীর। আপনাকে বলা হয় না আপনার সমর্পিত অবাধ্য ঈগলটিকে পোষ মানানোয় বিদ্যায় আজকাল আমার চোখের কোলে কালি,আজকাল ওয়াক টানে শরীর ...কেমন করে বলি তিনমাসের গর্ভবতী ...সেই জরায়ুজাতক খুঁজবে না পিতৃপরিচয় !

(ছবিঃ মার্সেল দুশঁ) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ৩

Image result for abstract paintings with painter's name

দাগ                                                                                                              
         -সৌমনা দাশগুপ্ত



হাওয়াতে জিভ মেলে দিয়ে দেখি খুসবু লুটানেয়ালি হাওয়াও ছেনালি করে বৃষ্টিকে ধুয়ে দেয়। আসলে এই জানলার ধারণা এক ইউটোপিয়া। বস্তত চারচৌকো এক ফ্রেম নিয়ে আর কতখানি আদিখ্যেতা করবে তুমি, অথবা দখিন হাওয়ার এই আকুলিবিকুলি নিয়ে জাহাজ ভাসিয়ে দেবে রংদরিয়ায়। তুমি সবুজ এক টুকরো রুমাল ফেলে দিতে পার মাঝখানে, মাঠও বসিয়ে দিতে পার, শুধু এই হাইফেনটুকু মুছতে মুছতে তোমার ইরেজার গুঁড়ো হয়ে যেতে যেতে মিলিয়ে যাচ্ছে আকাশের ফ্রেমে, সিপিয়া টোনে আঁকা এই দিকচক্রবালে



নেমে আসছে টুকরো টুকরো আগুন-বরফের ফলা, ফুলকি লেখা হল হলকা লেখা হল। তুমি তো আকাশ খেলতে এসে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার দীর্ণ করে নামিয়ে এনেছ কীট ও অন্ধকারে আচ্ছন্ন সেই ক্যানভাস, যার বুকে পেটে অনভ্যাসের ট্যাটুতে চিহ্নিত করা আছে লৌহ শলাকার দাগ, দাগ নয় আসলে কারাগারের বিস্তার লেখা হচ্ছে আহির-ভৈরবে ঘোষিত হচ্ছে এক একটা দিনের শুরুয়াৎ

(ছবিঃ ম্যাথিউ অ্যাবট) 

মৃগশিরার মাসের কবিতা ২

Image result for abstract paintings with painter's name

দুটি কবিতা
         -সুপর্ণা মণ্ডল

১.
আমি কি কি বিষয় নিয়ে লিখতে পারি তা সবাই জেনে গেছে
এরপর আর কেউ কি আমার লেখা পড়বে?
কেউ না পড়লেও দুজন পাঠক আমার চিরকাল বাঁধা
একজন ভালোবাসা
একজন ঈর্ষা

২.
কে বলবে ঈশ্বর সত্য না তুমি?
কে বলবে?
তুমি? না ঈশ্বর?

(ছবিঃ ডোনাল্ড ফক্স)

মৃগশিরার মাসের কবিতা ১

Image result for abstract painting

ক্রিসমাস
             -রঙ্গন রায় 

ছেলেটি জোনাকি টিপছে আর আলো ছড়াচ্ছে।  এই দৃশ্যকে বন্দী করার জন্য মোজার ভেতর চকচকে জোনাকি ভরে ফেললাম। বাড়ি নিয়ে যাবো। তারপর অনেক আলো হবে। ছেলেটি জোনাকির মত মিটমিট করে চেয়ে আমাকে দেখলো। কিছু কি ভাবলো?
বাড়ি ফিরতে গিয়ে দেখি জঙ্গলে পথ হারিয়েছি। অন্ধকার। চাঁদ নিভে গেছে। আমি হাসলাম - আমার নিজস্ব আলো রয়েছে হে অন্ধকার অরন্য --- আমি এখন নিজেই নক্ষত্র। মোজার ভেতর থেকে জোনাকি বের করে টিপলাম , একফোঁটা অন্ধকার পিছলে নামলো। আমি পাগলের মত মোজা হাতড়াতে শুরু করলাম --- কিন্ত মোজার সমস্ত জোনাকি ধীরে ধীরে রাত হয়ে গেছে।  এরপর আমি বাড়ি ফিরবো কি করে? সেই ছেলেটিই বা কোথায়?
নদীর ভেতর থেকে জলের ঠোঁট উঠে এলো। শীত লাগলো। গায়ে সোয়েটার পায়ে মোজা থাকা সত্ত্বেও খুব শীত লাগলো। সেই ছেলেটি হয়তো এতক্ষণে ব্যাক্তিগত বড়দিনের ছুটি কাটাচ্ছে জোনাকিদের সাথে

(ছবিঃ রুমেন স্প্যাসভ)