“পৃথিবীর যাবতীয় অধর্ম থেকে উৎপন্ন, সকল পাঠ্যপুস্তক থেকে দূরে, আমি রয়ে গেছি”
অনিন্দ্য রায়
( ... দেবরাজ চ্যটার্জি, আবার )
বাংলা কবিতা এই দুই দশকে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে, পাখি কি সেই খবর রাখে না ?
আমরা এক নতুন মিলেনিয়ামে বসবাস করছি, বেঁচে আছি ডিজিটাল সময়ে; সুকুমার প্রবৃত্তিগুলো স্মার্টনেসে ঢাকা পড়ছে, পাখি জানে নিশ্চয়ই, তার নাগরিক জীবনে ক্রিকেট আর বিনোদন মিশে যাচ্ছে, ধ্রুপদীয়ানার দিন শেষ হয়ে লাফিয়ে উঠছেন চিয়ার লিডার; কবিতা, হ্যাঁ, কবিতা কি আর নিরাময় হতে পারে এই সময়ের, এই যাপনের ক্ষতগুলির ?
“এখন সব বিশ্বাস নদীতে রাখি
কোম্পানির গভীর জলবায়ুতে বাঁধি
নক্ষত্রের ডিম ফেটে অলৌকিক ঘোড়াগুলো
ভিজে যায় কালো জ্যোৎস্নায় –
আমাদের ভুলে যাওয়া ডানার মুচড়ে দেওয়া ব্লেডের গায়ে
যদি একবার হাত রাখা যেত
যদি বলা যেত মানুষের বয়স হলে
তার রক্ত কিভাবে, ধীরে ধীরে
ক্রমে, অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায় ।”
( আধার কার্ড )
কিন্তু বয়স হলেও একজন কবির কাছে প্রাসঙ্গিকই থেকে যায় শব্দমালা ।
যেমন দেব্রাজ চ্যাটার্জি, আমাদের নব্বইয়ের পাখি, এতদিন পর তার বই বেরোনোর প্রস্তুতি, তার কবিতার বই ‘কলকাতা ২০/২০’ পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া হবে বিনামূল্যেই। আগ্রহীরা যোগাযোগ করবেন কবির সঙ্গে সরাসরি অথবা আমার সঙ্গে ।
ইতিমধ্যে আমরা পড়ে নিই দেবারাজের আরও কিছু কবিতা
“ এইখানে লিখে রাখি ধুলো, ঝড়
আর ফূটপাথের ঘাস থেকে লাফিয়ে ওঠা প্রাণ
শহরের বুক জুড়ে এওখন গোলাপ উপত্যকা
আর গোলাপি মেঘেদের ঢালাও সংঘটন ।”
( গোলাপি বিপ্লব )
“ মানুষ মারা গেলে
পরদিন ভোরবেলা –
তার চশমা আর ট্রুথব্রাশ –
ভীষণ একলা হয়ে যায় ।”
( বন্ধুবান্ধব )
“ আকাশে উড়ছে ঘুড়ি, এখন কার্ত্তিকমাস
কমলালেবুর গাছের মাথায় ফোটে নক্ষত্রের ঝাঁক
আমি বেশ কয়েকটা গণহত্যার আয়োজন গুছিয়ে ফেলি অনেকদূর ।
যেমন এই প্রজাতন্ত্রের অন্তর্গত যাবতীয় স্বরবর্ন, ব্যঞ্জনবর্ণদের
এক জায়গায় জরো করে, একে একে পুঁতে ফেলি, আমি এই পৃথিবীর
ঢোল, উঁচুনিচু, মাতৃতান্ত্রিক পেটের ভেতর। ”
( জেনোসাইড )
“ কাকে দিয়ে যাব প্রিয় ?
ক্ষমাহীন ক্রোধ দেব কাকে ?
অঢেল অশুভ রক্তের ভেতর আমাদের দেখা হল
ভালোবাসার কথা কি আর আমায় মানে ?”
( সাতশো তারার তিমিরে )
“ আমি বৃষ্টি, ঝড়, ঘুম, স্বমেহন, দিন, সফলতা, শস্য, মানুষ শয়তান দেবতাকে চুরমার
করে রয়ে গেছি । পৃথিবীর যাবতীয় অধর্ম থেকে উৎপন্ন, সকল পাঠ্যপুস্তক থেকে দূরে, আমি
রয়ে গেছি । আমি । আমি ।
এবার পূজাভ্রমণে তুমি কতদূর যাবে আমি কেবল বনভূমি দেখালাম ।আমি কেবল
অন্ধকার দেখাব ।”
( আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় )
ওই অন্ধকার দেখার জন্য আমরা অপেক্ষা করে আছি ।
বইটি প্রকাশের জন্য দেবরাজকে শুভেচ্ছে ।
জানি, সে ‘পৃথিবীর যাবতীয় অধর্ম থেকে উৎপন্ন, সকল পাঠ্যপুস্তক থেকে দূরে’ রয়ে গেছে । কবি । পাখি ।
( ছবিঃ ক্রিস্তান বাজ্ঞালে)