Saturday, 17 February 2018

উত্তরায়ণের আশ্চর্য ধারাবাহিকঃ হারিয়ে যাওয়া নব্বই

Image result for abstract painting old indian artist


      ‘গাছের মতো দাঁড়াও, চলতে থাকো বজ্রপাতের দিকে’ 
                                                                                 -অনিন্দ্য রায়

“প্রতিটি গানের পর
পাখী বলে-
বিশুপাগল সর্দার হতে পারতো,
বিশুপাগল রঞ্জন হতে পারতো,”
( সম্ভাবনা /৩)
সম্ভাবনাগুলি নিয়ে, হয়ে ওঠার সম্ভাবনাগুলি মনে পড়ে নব্বই নিয়ে কথা বলতে গেলেই । এবং না-হয়ে ওঠাগুলি, নিরাসক্তি ও বিষণ্ণতাগুলি ।
লেখালেখি, পত্রিকা, হয়তো একটি বই, হইচই, স্বীকৃতি; তারপর হঠাৎ থামিয়ে দেওয়া । বাংলা কবিতা থেকে সরে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া । না, হারায় না কিছুই, রয়ে যায়, বয়ে যায়, বাংলাভাষার স্রোতে সেই উচ্চারণ মিশে যায় ।
এভাবেই তো তৈরি হয় সময়ের ভাষ্য, এভাবেই নব্বই । একক প্রদর্শনীর আড়ালে, প্রতিযোগিতার বাইরে এভাবেই যে কোনো সময়ের কবিতার ক্যানভাস আঁকা হয় । প্রতিটি আঁচড়, প্রতিটি রঙের স্পর্শ আর আলাদা করে চেনা যায় না, কিন্তু সিগনেচার থেকে যায়।
এরকমই অসংখ্য কবির স্বরে আমাদের নব্বই, এরকমই একজন সুরথ মণ্ডল ।
তাঁর একমাত্র কবিতার বই ‘উনি আজকাল বড্ড ঝুঁকে হাঁটছেন’ ।
প্রকাশঃ শরৎ ১৪০১ । রচনাকালঃ ১৯৯২-৯৪ । প্রকাশকঃ ছাতিমতলার পক্ষে কিশোরকান্তি দাস ।
প্রচ্ছদঃ অমিতাভ মণ্ডল ।
অমিতাভ মণ্ডল, আমরা জানি, সুরথেরই ব্যক্তিনাম। তিনি কবিতা লিখতেন সুরথ মণ্ডল নামে ( অমিতাভ মণ্ডল নামে এক অগ্রজ কবির সাথে পরিচিতি-বিভ্রাট এড়াতে ) ।
বইটি ২০ পৃষ্ঠার । শেষ পৃষ্ঠাটি অক্ষরহীন, সাদা । কবিতা ১৯টি । ‘সম্ভাবনা’ কবিতাটি ৩টি অংশে ৫টি কবিতার  শিরোনাম নেই ।
“ মৃত ভাষার শব আজ বাকল হয়েছে, তোমার দেহে
  ফুটে  উঠেছে সুচারু লজ্জা ভঙ্গিমা ; শ্যামল ছায়া দুলিয়ে
  তুমি পাড়ি দিতে চাও কালবোশেখীর ওপারে

আলোকে পেছনে নিয়ে দাঁড়ালে, প্রতিটি মানুষের
দেহগঠন জ্যোতি দিয়ে আঁকা মনে হয় আঁধারে

মৃদু ছায়াপাত টেনে যদি কেউ কোনো প্রশ্ন না করে
মুখের রেখায় চিনে নিও তার নাম একদিন পল্লব ছিল ।”
( অভিমান )
তাঁর লেখা এরকমই, ব্যক্তিগত, অভিমানী ।
সামাজিক ন্যায় ও তার স্খলন তাঁকে ভাবিত  করে। অন্যায়ের ক্ষতচিহ্ন আলোড়িত করে ।

“ দাগমুক্ত আমরা কেউ নই । তবু অকারণ
  চরিত্রহনন চলে আজও । শান্ত স্নিগ্ধ জোছনা
  থেকেও আচমকা উঠে আসে শানিত হিম ;
  কেটে ফালা ফালা করে, তারপর –
  রাতের এঁটো পাতা থেকে উঠে,
  ভোরের শিশির দ্যায় নুনের ছিটে ।,

ভালো লাগে না, ধুঃতোর এই বিষদাঁত
বিষবাষ্প নিয়ে বাঁচা । মরার পরেও বিশেষণ ও বিশ্লেষণ
-এই দ্যাখো শক্তি, এই দ্যাখো যশ
কোথায় যাই;
চলে গেলে পলায়নপটু, থাকলে নির্লজ্জ ।”
( দাগ )
তবু লেখার থেকে সরে যান তিনি, কোনো অন্য কাব্যকুহকতায় ?
আমার সাথে সামান্যই পরিচয় । বাঁকুড়া খ্রিষ্টান কলেজের মিচেল হস্টেলে একবার আমাদের কমন বন্ধু প্রদীপ সিংহের সাথে বেড়াতে এল সে। হস্টেলের বারান্দার একেবারে শেষ মাথায় রেলিঙে হাঁটু ঠেকিয়ে এক সকালে আমরা কথা বলেছিলাম কিছুক্ষণ । পরিচয় সেরকম গাঢ় হয়নি ।
“ স্থির হয়ে দাঁড়াও সময়
 
  বৃহন্নলা চুলে
  মাছি এসে মধু ঢেলে দেয়

আত্মপরিচয়-
গোপন থাক আজ”
( সম্ভাবনা /১)
এক সম্ভাবনার সামনে আমাদের নিয়ে এসেছিল তাঁর কবিতা।
যেখানে মূল টেক্সটিই সব, কিছু লেখার তো শিরোনাম অব্দি রাখেন নি তিনি, কেবল ‘কবিতা’ একটি পৃষ্ঠায়, আর কিচ্ছু নেই, নামও নেই।


“বৃষ্টি এসে ধুইয়ে দিল পা
কলাগাছ গণেশের মতো মাথানেড়ে ‘না’ বলে
উঠল । জোনাকীরা একসাথে জ্বলে উঠে বলল, এই যে,
এই দিকে । তারপর হঠাৎ নিভে গিয়ে বলল, আমরা
আর যাবো না । এইভাবে বুড়ো ব্যাঙ, ফিরিয়ে
দিলো । এমন দিনে কোথায় যাওয়া যায়
এমন দিনে মাছেরাও পথ ভুল করে, অন্যজনের
গন্ধ নিতে যায়, চলে যায়, কোথায় –
পনসপত্রের মতো অঞ্জলি নয়, আকাশের দিকে
তর্জনী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো । শরীর দিয়ে বাজাও সুর,
রুদ্রবীণা
গাছের মতো দাঁড়াও, চলতে থাকো বজ্রপাতের
দিকে ”
( শিরোনামহীন / পৃষ্ঠাঃ ১৯ )
 আত্মধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায় তাঁর লেখালেখি। আর লেখেন না । লেখেন না কি ?
এই কবিতার পরের পৃষ্ঠাটি তো শূন্য, পুরণ করবে কে? সুরথ, আপনি ছাড়া ।
আমরা জানি, শিরদাঁড়া সোজা রেখে হেঁটে যাচ্ছেন আপনি ।
আমরা তো আবার বলতে চাই, ‘উনি আজকাল বড্ড ঝুঁকে হাঁটছেন’ ।


( ছবিঃ অনিতা তিওয়ারি )



উত্তরায়ণের কবিতা ১৪

 Image result for abstract painting old indian artist

রুট ম্যাপ ও মেয়েটি
                    -অনু সঞ্জনা ঘোষ 



নির্বাসন লিখছি। ভাঁজ করা শরীর এখন শীতঘুমে। বহুকাল কিছু লেখা হয়নি। শব্দেরাও ফিরে গেছে। একে একে পার করছি মহানন্দা, অজয়, দামোদর। তারপর ভিড়ের মাঝে খুঁজে নেবো একদল সাদা পায়রা। চোখ নামে যে মেয়েটি বসন্ত এঁকে ছিল শেষ ট্রেনে তার ফিরে যাবার কথা। লাল মাটি, আগুন পলাশ, মহুয়ার বন আর অরণ্য পাতায় পাতায়। জানালার ওপারে  রং বেরঙের ঘুড়ি। জানালা আমায় উড়তে শেখায়। আমি ডানা মেলি পাতায় পাতায়। চুরি করা জলে ঈশ্বর লিখি। ঈশ্বর লিখি নিঃশ্বাসে।

পৃথিবীর পায়ে পা রেখে আমি পৃথিবী হাঁটি নিঃশব্দে...

( ছবিঃ হুফ্রিশ দুমাসিয়া )

উত্তরায়ণের কবিতা ১৩

Image result for abstract painting old indian artist


নতুন বাড়িতে 
               -নীলাব্জ চক্রবর্তী


নতুন বাড়িতে
ধীরে
মানচিত্র বড়ো হয়
আর
পাথরের গায়ে পাথর এসে পড়ে
শীতের গায়ে একটা রাস্তা এসে পড়ে
আঙুল ডিঙিয়ে
ফ্রেম অ্যানালিসিস ক’রে পাওয়া কবিতার ভেতরে
খালি পায়ে নেমে যাওয়া শব্দরা
স্থানাংক পাল্টে স্থির হয়ে আছে এখন
ধাতু লেগে থাকা হাতে
সময় খুলে ফেলে
ব্যবহৃত অনেকটা তুলো রাখা হচ্ছে
দিনের যেদিকটা ডিজাইন করতে করতে
পায়রা এসে বসবে
আর কিছুটা হেলে যাবে নতুন কবিতাটার অক্ষ...

( ছবিঃ প্রবীর বেরা )

উত্তরায়ণের কবিতা ১২

Image result for mexican abstract painting


অশ্রুমুকুলে প্রতিবেশী ঈশ্বর
                           -বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

কান্না পেলে চোখ মুছে  হাসি হাসি জানলা খুলে রাখি
ঈশ্বরদা আসবেন
আজ
তার পায়ের শব্দে বর্ণপরিচয়ের উপর আঙুলের  ছায়া  দোলে
অ এ অন্ন
আ এ আকাশ
 ভাঙা জানালায়  আলো  টাঙিয়ে দেয় কেউ

চোখের জলে অক্ষরগুলো  ফুল হয়ে  ফোটে
ঈশ্বরদা আমার প্রতিবেশী
অক্ষরের গায়ে পেন্সিল বুলোতে শেখান
ভালোবাসা ।


(ছবিঃ লেওনার্দো নিয়ের্মান) 

উত্তরায়ণের কবিতা ১১

Emotions by Anna Kowalczyk - view in room


স্বপ্ন

      -সুকল্প দত্ত



আমি তো কাউকে শিখতে দেখিনি এই ড্রাইভিং

ঐ হাওড়া-শিয়ালদা ট্রিপ

এও তো এক জার্নি

অনেকে আবার বলে কুঅভ‍্যাস।



আমি কিন্তু ভয় পেয়েছিলাম

হ‍্যাঁ, উচ্চকিত ভয় 

ক্লেশ,উত্তেজনা

প্রথম হাইপোথ‍্যালামাসের কম্পনে।



মধ‍্যরাতের অগ্ন‍্যুৎপাত দিল সব মাটি করে।
                                                               


(ছবিঃ আনা কোয়ালজিক) 

উত্তরায়ণের কবিতা ১০

" Purple rain ☔️ "   Abstract Painting - 50x60 by Mo Tuncay - view in room

পলাশের মাস

           -জ্যোতির্ময় বিশ্বাস











আমি আগে ভাবতাম, আকাশটা মোমের মতো।

আজ, ভাঙলো ভুল। পাখিটা অনেক উঁচুতে

দূরে উড়ে গেলো, ছটফট করলো পাখিসুলভ

সৌন্দর্য্য নষ্ট ক’রে, নষ্ট ক’রে ক’রে আকাশমাত্রা ভেদ ক’রে দৃষ্টির অতীত হ’ল। অথচ আকাশের তিল অংশও ভাঙলো না। আমি ভেবেছিলাম মোমের আচ্ছাদন, কার যেন মিহি কাজ, আঘাতমাত্র ভাঙবে। কিন্তু, কই...













ইঞ্জেকশন নেয়ায় একটা বোধ থাকে

কিছু সেরে উঠবে, ভালোর জন্যই তো...



আর কিছু কিছু সূচ, শুধু শুধু ব্যথা দেয়।









যে স্পন্দন ধরতে শিখিনি,

তা'ও প্রাণ। বিনিশ্বাসের।

অমৃত সংস্পর্শ বয়ে যায়।









আমি আর ক্রুদ্ধ নই। শুধু দুঃখিত।

আমার গানের সমস্ত ভুল রবীন্দ্রনাথের

গানে শুধরানো আছে।









যেদিন সব জেনে যাবো। প্রাণ। নির্বাক হবে। এত দৌড় তৈরি হবেনা। এত দূর তৈরি হবেনা। হু হু থাকবে, কিন্তু বহু থাকবেনা। একমাত্র হব।





(ছবিঃ মো টুনকে) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৯

Related image


আশ্চর্য ফুঁ 
              -সুতপা চক্রবর্তী 


পুরো শরীরে
একটা মুখ চোখহীন যৌনবোধ
রতিক্রীড়ার পাড়া জুড়ে ঝুলছে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা
যেন এইমাত্র গমগমা আগুনে বুদবুদ ওঠা বাষ্প
অথচ কী আশ্চর্য ফুঁ দিলে তারা নিভছে না  বরং ছড়িয়ে পড়ছে এদেশ ওদেশ
যোনিলিঙ্গচিতায়।

বহুকালব্যাপী কোনো উৎসব হয় না

আমরা বহুকাল ধরে অযৌনস্পর্শা


(ছবিঃ ওলেগ লিপচেঙ্কো) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৮

Image result for uzbekistan abstract painting


অনন্তর ফুটছে জারুল
                 -হাসান রোবায়েত 

আমার সংকটে শোভায়, আমি বারবার তাকিয়েছি বাড়িটার দিকে—তুমি বলতে, 'পাখিদের সমস্ত ডিম ফোটার আগেই সেরে যাবে তারাদের ক্ষত'—না হলে, এই সমুদ্রসয়লাব পানিতে কী করে ফেরা যায় বাড়ি—!

এমন কি গোলাপের ঝাড়েই এখনো আটকে আছে আমার পৈতৃক ভিটা—ওই যে পেয়ারার বাতাস উড়ে আসছে আর পরিত্যক্ত আকাশের নিচে হাটখুড়ে গরুটা জাবর কাটছে শ্লেষ—

আত্মহত্যার দিকে তাকিয়ে অনন্তর ফুটছে জারুল—!



(ছবিঃ ভিক্টর পাঞ্চেঙ্কো)

উত্তরায়ণের কবিতা ৭

Image result for palestine abstract painting


বোধিপর্ব
         -বেবী সাউ 

এক।

শীতাবসানে কি কি পড়ে থাকে?--- কিছু ভাঙাচোরা গল্প, হলুদাভ পাতা আর কয়েকটি দৃষ্টি এড়ানো লাল শাকের চারা। ততদিনে আমাদের সমস্ত ক্ষুধা আবার জেগে উঠেছে, সমস্ত চোখ ঢুকে পড়ছে মুরগীর ক্ষেতে। আর এই বসন্ত- প্রাক্কালের হৃদয় দগদগে মেরুদণ্ড চুরির প্রসঙ্গ ভাবছে। যাতে সহজেই শিকার করায়ত্ত করা যায়। যাতে ঝলসে নেওয়া যায় সুস্বাদু সম্পর্ক।

দুই।

রঙে রঙে ভরে উঠছে চোখের সংসার। আড়মোড়া ভেঙে ওঠে আসছে পলাশের বন। বন্ধুর সমতলে ঘুরে বেড়ানো ঘোড়েল, ভাবছে শুয়োপোকা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, তোমার ঘৃণার কাছে যতটা জেগে থাকে জন্মমৃতশোক।



(ছবিঃ সামিয়া হালাবি) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৬

Image result for abstract painting armenia

লাভ-জেহাদ  
                   -শিবু মণ্ডল

সময়ের শূন্যতাবোধ জানা নেই, তাই
সমবেত উলুধ্বনির মত সন্ধ্যা ভেসে আসে
যে-দিনরাত মানুষ জয় করে ধরে রাখে
শঙ্খের ভিতর, থেকে থেকে তার ফুঁ বের হয়ে আসে
কেতন ওড়ায় বাতাসে আলো আর ছায়ার সীমানায়

মহাকাশে উড়ে যেতে যেতে এক বালিহাঁস দেখে ঋতরঙ ! দেখে
মার খাওয়া প্রেমিকের মত কিছুটা লজ্জা কিছুটা কুণ্ঠায়
পৃথিবী ঘুরছে অবিরত! তার কোনও জয় নেই
তার কোনও পরাজয় নেই , শুধু আছে ঘূর্ণনে নম্রতাবোধ
আছে ভালোবেসে পতন অভিমুখী এক নিশ্চিত যাত্রা
তার যাত্রাপথেই যত জীবনের জয়, আর আপেলের পরাজয় 



(ছবিঃ আর্শাইল গোর্কি) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৫

Image result for abstract painting victor hugo


নিভৃতচারিণী'র আত্মকথা

                                      -পারমিতা চক্রবর্ত্তী


১)

মনের গোপন ভাঁজে জেগে ওঠে
 বনভোজনের শব্দ
ফিরে আসে পৌষে'র চুমুকে'র  আমন্ত্রণে


হে প্রিয়তম
শুরু হোক কলরব
বটের সারি জুড়ে নোনা জলের স্রোতে ভেসে যাক অতীতে'র ভিসুভিয়াস



২)


পৃথিবীর বুকে বয়ে যাওয়া
 সাহসা বাতাস লেপে যায় পলাশ মুকুলে
যা কিছু স্বাভাবিক , নিয়মিত হোক
পেরেকের ছিদ্র'র মধ্যে



৩)


জাপানী ভাষায় কথা বলা'র মত
 সাবধানে ঢুকিয়ে রাখি
তোমার চোখের ভাষা


বড় নিসঙ্গ বোধ করি আজকাল
মহাশূন্যে তাকিয়ে থাকা জোনাকী জ্বলে থাক
এই নিভৃতচারিণী'র আত্মকথায়



(ছবিঃ ভিক্টর হ্যুগো) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৪



জন্মভূমি
          -জয়া গুহ (তিস্তা)

মৃত্যু যখন মিথ্যে মতন ব্যথার নীচে ক্ষয় পাবে অক্ষরে
তখন তুমি, তখন আমি নিত্যনতুন স্বপ্ন বোনার ছলে
এদিকওদিক ঝর্ণা ফোটায়, এখানওখান উড়ন-বাজির-ছুট
কেউ কখনো বুনছে শরীর,কেউ তখনো পেরোচ্ছে রং-রুট
শত্রুদের ও দন্ড হবে,দুচার কলম প্রেমের কবিতার
লেখার পরে ছাপ রাখা ভুল
ঠোঁট কিনারে অসুখ-অপেক্ষার
ভুল ছেড়ে ভুল অন্য কোথাও জন্ম নেবে
নষ্ট কোনো রাতে
শুদ্ধ হবেই সেদিন সবাই অন্য অন্য শরীর-সর্বনাশে
সভা ও হবে উচ্চস্বরে,মদের পিপেয় উপচানো সুর, আর
গ্যালারিতে ধর্মযাজক! কোরান-শরীফ মাইক্রোফোনে তার
জলের নীচে মেঘ দেখা যায়,আমার বুকে তেমনি আছ তুমি
শাশ্বত প্রেম,রক্ষাকবচ! বুকের ভাঁজে
আমার জন্মভূমি।


(ছবিঃ গ্যালপ দ্য কাবালোস) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৩

Image result for abstract painting assamese artist

প্রেম - ১
        -নীলাদ্রি বাগচী

যখন প্রথম প্রেমের গল্প কয়েক অক্ষরে এসে থামে তখন দীর্ঘ হয় আতশবাজির রাত । সাপের খোলস ওড়ে শুকনো বাতাসে। মশা বাড়ে। ঘুম বেড়ে যায়। শেষ মাঘ পর্দায় ঘন করে ভোর রাত। সকাল বসন্ত। এই প্রথম দুপুরে রোদ। বাদবাকি সব কয়েক অক্ষরে এসে নামে।

সুরঙ্গম অন্তরালে দিন গোনা হয় বিপরীতে। কৌমার্য্য রূপকথা পথে আঘাটায় ঘোরে। শোনে লোকে। জিইয়ে রাখা স্মৃতি পায় মেথির জলের সম্পদ।

অসুস্থ প্রত্যক্ষ হয়। পাটাতনে পাটাতন ঠুকে ইমারত নির্মাণ চলে। কাঁটা চামচের মতো সরল বিন্যাস কাটাছেঁড়া করে যায়। চারপাশ বদলায় । বাংলা ভাষার মতো অবধারিত অযত্নে ফুরিয়ে আসে। পড়ে থাকে কয়েক অক্ষর....



(ছবিঃ মাধুরী কাথে) 

উত্তরায়ণের কবিতা ২

Image result for ramakinkar abstract painting

এটুকু
      -কস্তুরী সেন

দিন আসে
দীর্ণ যায় সদাব্যস্ত বসন্তের দিন
কতজন ভালো নেই
অথচ তাদের কাছে গিয়ে, তারা ভালো কিনা জানবার দিন এসে ফিরে চলে যায়
ভালো থাকো, এটুকু তো কথা
এটুকু কথার বুকে বৃন্দগান,  আলোর আরতি কত মণিকর্ণিকার
ভালোবাসো, এটুকু জানাও
প্রখর মেয়ের মুখে সে কথার আলোটুকু আসুক বিকেলে
ভালোবাসো, আকুল জানাও
যেভাবে পুরুষবুকে অপরার ঘ্রাণ পেয়ে
তখনই দু চোখ ভরে আরও আরও বলে যায় ভালোবাসি, যুবতিটি ফের...
ভালোবাসো, সেভাবে জানাও।


(ছবিঃ গুলাম মহম্মদ শেখ) 

উত্তরায়ণের কবিতা ১

Image result for ramakinkar abstract painting


অন্য ভুবন
           -পিয়াল রায়



হারিয়ে যাওয়ার আগে
   হারানোর জরুরী ইচ্ছে থাকা দরকার


যে কবি অভুক্ত বেদনা ভুলতে পারে নি বলে
শেষপর্যন্ত বেছে নিলো ছায়ার শরীর
প্রচন্ড গ্রীষ্মে শিরিষের ডালে ঝুলে ঝুলে
দোল খেলো, কবিতা পোড়ালো ছেলেবেলার

গোপন করেনি সে কোনো কথা

পুকুরের জলে চাল ফেলে ভাত ফুটতে দেখেছিল সে
 ভাতের গন্ধ এমনই উতলা করেছিল তাকে

শালুকের ডাটায় শিরিষ ফুল গেঁথে
চিনেছিল প্রাচীন বর্ষা

আমরা তাকে অনুমতি দিই বা না দিই
                                     সে হারিয়ে যেতই


এক জন্ম থেকে অন্য জন্মে প্রবেশের টানে

(ছবিঃ রামকিঙ্কর বেইজ)