Thursday, 28 March 2019

কুসুমের মাসের অনুবাদ কবিতাঃ বটসোয়ানা থেকে ৎজবঙ্গোবা ডেমা

Image result for tj dema

ওভারিয়া

১।
যখন মধ্যরাত আসে
আমি দেখি, অনেক দূরে রয়েছি অনেকক্ষণ
আমার উপুড় হওয়া অন্তস্তল ভেসে আছে
ছাতার মত
বিশ্বাস করতে চেয়ে শশব্যস্ত
স্বপ্নে
সেই জাদুর ভেতর নিজেকে খুঁজে পেতে
ইঁদুরে কামড়ানো শশার মধ্যে

এবং সময়সাপেক্ষ পুরুষেরা

এবং তাদের হাতে অনেক অস্বচ্ছ চামড়া

২।

নারীরা শেখে,
কোনো একটা সময় তা নিছকই রক্ত
মৃত্যু নয়
তারা লুকোতে শেখে জরায়ু এবং স্তন
কোনটা হারাতে হবে, সেটা বেছে নেওয়া
সুস্বাদু কেক দিয়ে সাজিয়ে রাখা টেবিল
তারা শেখে, ছুরি ধরার কৌশল
ব্লেডের সামনে বন্ধকী হাড়-পাঁজরা

আর একটা শূন্যতার সামনে কাপ খালি করে দেওয়া


(আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে বটসোয়ানার গ্যাবোরোনে জনপদে ১৯৮১ সালের ১৪ অগস্ট ৎজবঙ্গোবা ডেমার জন্ম। তাঁর নিজস্ব ভাষার রূপ-রহস্য-আলো-অন্ধকারের মধ্য দিয়েই গনগনে আফ্রিকীয় উত্তাপ ছড়িয়েছেন ডেমা। একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা)


(অনুবাদ- সম্পাদক, উষ্ণিক)

(ছবিঃ Botswana Youth Magazine)




কুসুমের মাসের কবিতা ১১

Image result for cubist abstract paintings

সাঁকো, নদী, সিগারেট ও একটি গল্প
                                                   -সুপর্ণা মন্ডল




ব্রিজের উপর দিয়ে একটার পর একটা বালির ট্রাক
চলে যাচ্ছে, ঝাঁকুনিতে বালি পড়ে যায় অনেকটা।
“পড়ে যাবে বলেই ওরা বেশি করে ভরে আনে।”



এই নদী, জলজ বাতাস, তোর এড়িয়ে যাওয়ার দৃষ্টি
কোন দাবী করে না তো। যে কেউ এসব ফেলে
চলে যেতে পারে।



“এখানে সিগারেট খেতে ভালো লাগে।”
টান শব্দটাও ওই দু’-আঙুলের ফাঁকে।



গল্পটা মামুলি। একটা মেঘ ঘনিয়ে এলো।
বৃষ্টি কিন্তু হ’ল না শেষ অব্দি।

(ছবিঃবেরালীন বিলানুয়েভা)

কুসুমের মাসের কবিতা ১০

Related image


বসন্ত
         -তন্ময় ধর 


মিথ্যে বলতে গিয়ে আমাদের আলজিভ থেকে
আবার লাফিয়ে ওঠে অন্ধকার

তোমাকে-আমাকে দেখতেই পায় না

মৃত একটা শব্দ থেকে বহ্নি-উৎসবের পোড়া আলু তুলে নেয়
নুন-মরিচের স্বাদে

অভিনয়ের চুক্তি অনুযায়ী
একের পর এক রঙের ভিতর দিয়ে আমরা হাঁটতে থাকি

জ্যামিতিক লোভে ও বিষুবচ্ছেদে

(ছবিঃ কার্ল ফস্টার)


কুসুমের মাসের কবিতা ৯

Related image

রজপদ্ম
            -সু চক্রবর্তী


তাঁবু

আঙুলে জড়িয়ে গেল গোছা গোছা


মাটিতে গাড়ো খুঁটি
হিংসা আমাদের পরবর্তী

শব্দবন্ধে চুঁইয়ে পড়া রস

ডুব খায়

এখন রজপদ্মে লালন হয়

গৃহস্থ

দুপুরের প্রসবটুকুর মতো

দিবারাত কাঁসরঘন্টা বেজে ওঠে

অতর্কিত শালিকের ব্যস্ততায়


(ছবিঃ জুয়ান গ্রিস)








কুসুমের মাসের কবিতা ৮



Related image


চারিদিকে এত রক্ত কেন প্রকাশিত 
                                        -শিবু মণ্ডল

ঋতুরাজ তোমার হাতের নখে একটি আঁচড় কেটে দাও
এই নিহিত ব্যাথার বুকে!

রঞ্জিত বসন্ত মাপার তালগোল পাকানো হিম
ধরে মেপে মেপে যে পলাশতুমি সাজিয়েছ তা কি
তোমাকে মানায়?

চারিদিকে এত রক্ত কেন প্রকাশিত!

কেউ জ্বলে গেলে পাখিরালয় থেকে উড়ে যাবে পাখি
কেউ নিভে গেলে পরিযায়ী পাখিরা আসবে না আর
কিছু ফিনিক্স ডানা মেখে নেবে অক্ষরে
ফায়ারিং বসন্তে দাঁড়িয়ে।

চারিদিকে এত রক্ত কেন প্রকাশিত!

এসো, ঝুলে থাকা ভালোবাসা ধীরে ধীরে
নেমে এসো, দাঁড়াও একই পংক্তিতে!

(ছবিঃ ট্যামারা দ্য লেম্পিকা)

কুসুমের মাসের কবিতা ৭

The gray tree - Piet Mondrian


সাঁতার 
      -নীলিমা দেব

কুচকে গেলো যে নদীর অন্ধকার
 তার অহঙ্কারে পাখি জল ভাঙ্গে
        অস্পষ্ট!
              বৃত্ত বুনে বুনে ডুবে যাচ্ছে সাঁতার
         হাতে হাতে বড় হতে থাকা রাত আজিজ হলে
         শরীর থেকেও সরল হয়ে ওঠে নোঙর
          ঘটি ঘটি মেঘ-বাউল ...

(ছবিঃ পিয়েঁ মঁদ্রিয়ান)

কুসুমের মাসের কবিতা ৬


Composition VII (1913) - Kandinsky Wassily

যদি
         -নিবেদিতা মজুমদার


যদি এমন হত
বসন্ত বলেছে, পলাশে রাঙাবোনা বন,
ভুলে যেয়ো রঙের রেখা সমঝে অযতন!

যদি এমন হত
হলুদ বিলাপ চৈত্র বোঝেনা আর,
মন নেবেনা প্রেমের ব্যয়ভার।

যদি এমন হত
তোমাকে বুঝেও বুঝিনি ভাবছ,
আসলে কতবা খবরাখবর রাখছ?

যদি এমন হত
ঢেউ ছুঁয়ে গাঙচিল সুখে
একা সাঁঝে ফিরেছি বিমুখে-

যাই হত, তাই হত কন্সপিরেসি
আমরা আসলে আমাদিগকেই ভিড়েছি!

(ছবিঃ ভাসিলি ক্যান্ডিনস্কি)

কুসুমের মাসের কবিতা ৫


Black Iris III (1926) - Georgia O’Keeffe

যুদ্ধক্ষেত্র থেকে
            -অনিমেষ সিংহ

আমি নেই বলে আক্ষেপ করিনা।
আমি অনেক কিছুতে নেই-
যেমন ককপিটে আমি নেই

যুদ্ধের বৃত্তে নেই, পরাবৃত্তে নেই,
কোমর জড়িয়ে তেমন নাচের রাতেও ছিলাম না আমি

সারি সারি চেয়ারের স্নিগ্ধ সুষমায়,
মার্জিত নক্ষত্রের ভিড়ে আমি নেই

-- আমি নেই বলে আক্ষেপ করি না।

শুধু তোমাকে জানাতে চাই,
যুদ্ধের রাতে তোমার কাছে নাও ফিরতে পারি

তবে ভেবোনা আমি যুদ্ধে গেছি
অথবা আমার জেটপ্লেন ভেঙে গেছে গোলাপ বাগানে।
যেদিন ফিরবনা তোমার কাছে,
মনে করবে-
সেদিন যুদ্ধের রাত,
 এপার ওপার সমস্ত মৃতদেহে আমি শুয়ে আছি

(ছবিঃজর্জিয়া ও'কীফ)


কুসুমের মাসের কবিতা ৪

Black Nebula - Clint Fulkerson

আশ্রয়
            -নীলাদ্রি ভট্টাচার্য
       

দুমুঠো আশ্রয় গন্ধে উতলে ওঠা জল
ভাসমান তন্ডুল
তারপর আধভেজা শব্দভার
                 অতলস্পর্শী পিঁপড়ে বৃষ্টি।

কাগজের উঠোন পিচ্ছিল ঢেউ চোখ
উড়ে প্রেক্ষাপটহীন পুরোনো বাতাস
আতপ এঁটেল বসন্ত ঘাস
অপরিচিত স্যাঁতসেঁতে অনুগল্পের ঘাটমাঝি ।

সময় গার্হস্থ্য মাটির মাপকাঠি
বিকেলে চিৎকার পুড়িয়ে
গুঁড়ো গুঁড়ো কষ্টার্জিত ভাতের মুগ্ধতায়
দাঁড়িয়ে থাকে আলপথের খালি পা।



(ছবিঃ অ্যালিস হাম্ফ্রে) 

কুসুমের মাসের কবিতা ৩

শূন্য দশক
             -সৌমনা দাশগুপ্ত

আমাদের তটিনী হৃদয় পড়ে থাকে
মাংসের  দোকানের পাশে, নর্দমায়
কীটকবলিত
আমাদের শূন্য অংকের খাতায় রোদ
রোদ নয়, সে ত এক সূর্যের সন্ত্রাস
নড়ছে সংখ্যা, সংখ্যাগুলি নড়িতেছে
যেন ঝুলন্ত শাবক কিছু, গিলোটিনে 
মাপা হবে তাদের রক্তের স্বচ্ছ অস্বচ্ছ
কণাগুলি বয়ে যাবে আমাদের
খামারবাড়ির পাশে বিষণ্ণ সোঁতায়
গান হয়ে ভেসে যায় শকুন আর 
শেয়ালের হাহাকার
আমাদের গল্পগুলি ধীরে ধীরে
কিংসাহেবের ঘাটে
অতিমরা নদী যেন
তার কোনও কথা নেই
তার কোনও কথা নেই
ঘুম শুধু ঘুম শুধু ঘুম 


সমস্ত লবণ আমি হারিয়ে ফেলেছি
কীভাবে তোমাকে লিখি বাংলাভাষা
তার চোখ চামড়ায় মোড়া, বোবা
শব্দের থেকে উঠে আসে নেই রং
মণি নয়, সংকেতও নয়, হাহাকার নয়
বালির লিপিতে লেখা দিনরাত
অন্ধ বাউল এক বসেছে বিদ্যুতে
তার একতারা থেকে
গোঙানির রব
অস্থি মজ্জা থেকে
কালো এক রক্তের স্রোত নেমে আসে

(ছবিঃ রিম্মা ঝাকারোভা) 

কুসুমের মাসের কবিতা ২

The Black Square (1915)


ও পলাশ....
        -সুমনা দত্ত

আরেকটা করে বসন্ত আসে
আর যৌবনের সব রঙ বিবর্ণ আবছায়ায়
লীন হয়ে যায় মোহগ্রস্ত মরীচিকার মতো।

ফোঁটা ফোঁটা দুপুর গড়ায় জানালায়।
ক্লান্ত চোখ বুজতে গিয়েও দাঁড়িয়ে থাকে সূর্য,
হলুদ পাতার অভিসার এলোমেলো করে দেয় কালো পিঁপড়েদের সারি।

নির্জনতা রাস্তায় বসে
এবং ভাবে,

তোমার ঘাড় হেলানো সম্মতির জন্য বাড়ি ফেরা হল না যার,
তার জন্য শাখা আলো করে লালচে ফুল ফুটিয়েছ পলাশ?


(ছবিঃ কাজিমির ম্যালেভিক)

কুসুমের মাসের কবিতা ১

Image result for russian b/w abstract painting

প্রত্যাবর্তন,যেমন যেটুকু
                               -পিয়ালী বসু ঘোষ 

আধপেটা স্বপ্ন বেঁচে দিনশেষে ঘরে ফিরি
শুকনো ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে
সরিয়ে নিই হু হু ক্ষত

সন্ধ্যা বয়ে গেছে
মেটে সিঁদুর পরিয়ে ঘরে এনেছিলাম যে কমলাকামিনীকে
তার পরনের শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে রাখি
অশ্রুসিক্ত সঞ্চয়

শেষ প্রহরের কুয়াশা কাটলে
বিরহী চাঁদ ঢলে পড়ে রুদ্রদেবের ফাটলে
এসময়ে শরীর মাত্রাহীন ঠান্ডা
তুমুল আলোড়নেও শান্ত অকেজো কিম্বা মৃত

কালঘাম ফেলেও পাথর জাগেনা
সাঁই সাঁই চাবুকের শব্দের ভিতরেই
আবার তলিয়ে যাই ঘুমে

স্বপ্নে আসে সময়, শোক, বিলাস
মানবিক যা কিছু আভরণ খুলে
প্রাগৈতিহাসিক এক আলোর ভিতরে
হেঁটে যাই অপেক্ষমান আগন্তুকের খোঁজে
একজীবন গোধূলি নিয়ে সম্বল

(ছবিঃ মার্শেই দুশঁ)