Tuesday, 15 May 2018

বৈশাখের কবিতা ১৩



একজোড়া চোখ ডাকে আমায়
                              -মীম মিজান



হেমন্ত কেবলি বাংলা মায়ের শাড়ির আঁচলে রঙ মাখাবে। মাত্র দু'দিন অতিবাহিত। নিম্নচাপের দরুণ চারনম্বর সতর্ক সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার রাতথেকেই ঝরছে তো ঝরছেই আকাশ। দমকা একটু বাতাসও সঙ্গী।

দায়ে পড়েছে যারা তাদেরকেই শুধু দেখছি ঢাকা শহরের কাদামিশ্রিত হাঁটু পানিতেও পথ চলতে। দূর-দূরান্ত থেকে ক্ষ্যাপ দেওয়া রিক্সাচালকরাই শুধু কাকভেজা হয়ে রিক্সা চালাচ্ছে। নানা নম্বরের বাসগুলো জানালা বন্ধকরে যাত্রী হাঁকছে। বাসের সিট ও করিডোরে অকাল বর্ষার জল।

জীবনের ক্রুশিয়াল মুমেন্ট না ছাত্র না চাকুরীজীবী। এরকম যখন ইমেজ সংকটের মূহুর্ত তখন এই বৃষ্টি পারে না আটকাতে আমাকে। মহাখালী থেকে আজমিরি বাসে উঠলাম। গন্তব্য ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ। কলেজে পৌঁছলাম পরীক্ষার তিনঘন্টা আগেই। সেখানে আমার মতো একজন ইমেজ সংকটাপন্নের সঙ্গে জমালাম আড্ডা।

অতপর বিকেল সাড়ে তিনটায় পরীক্ষা শুরু। আমার জীবনের এই এক ঘন্টার পরীক্ষা শেষ হলেও বাইরের অঝোর বর্ষণের একটুও কমতি দেখলাম না। ভিক্টোরিয়া পার্কের ভিতরে রঙ্গিন ছোট্ট ছাতার নিচে এই বর্ষণমুখর বিকেলেও দেখি অনেক জুটি পাখিদের ন্যায় স্নাত হয়ে প্রেমালাপ ও ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটাতে ব্যস্ত।

একই সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা থাকায় সে কী লোকারণ্য।! সদ্য ফুটন্ত ফুলের যেরকম অবয়ব সেরকমই অবয়ব উপহার দিয়েছে এই বর্ষা ভর্তিচ্ছু অষ্টাদশীদের। হেঁটেই আসলাম গুলিস্থান। গোটা পথই ডানে-বামে ও সামনে পিছনে ছিল বৃষ্টিস্নাতদের ভিড়।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আছে মরমী শিল্পী ও কবি দালান জাহানের জন্মোৎসব। তাই বাসে করে বাংলা মটর আসলাম। আটতলার কক্ষে জন্মোৎসবে কবিতা, গান, কেক কাটা ইত্যাদির আনুষ্ঠানিকতা সেরে বের হতে হতে রাত প্রায় দশটা।

সদা হাস্যোজ্জল কবি ও গায়ক সাহেদ এবং কবি ইখতিয়ার হুসাইনকে নিয়ে হাঁটছি কারওয়ান বাজারের দিকে। কত কথা! কত দুষ্টুমী! হালকা বৃষ্টির মাঝেই হাঁটছি আমরা। হঠাতই মনে পড়ল 'মানবকণ্ঠ'র সাহিত্য পাতায় প্রকাশ হয়েছে আমার একটি অনুবাদ। বিশ্ব সাহিত্যের বর্তমান নাম্বার ওয়ান কাজুও ইশিগুরোকে নিয়ে দ্য গার্ডিয়ান'র একটি প্রবন্ধ যা অনুবাদ করেছিলাম।

সারাদিন পরীক্ষা, জন্মোৎসব, আড্ডা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পত্রিকাটি সংগ্রহ করতে পারিনি। তাই সাহেদকে বললাম 'মানবকণ্ঠ' সংগ্রহ করতে হবে। সে বলল ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে পাওয়া যাবে পত্রিকা। তাই হাঁটলাম আনন্দ সিনেমা হলের গেট পর্যন্ত।

হকারের কাছথেকে পত্রিকাটা নিয়ে চোখ বুলাচ্ছিলাম। চোখগুলো একটু পেপারের বাইরে পড়তেই দেখলাম একজন স্মার্টমেয়ে এই হেমন্তের রাতে পাশের দোকানথেকে বিস্কুট খাচ্ছে। হালকা গোলাপী রঙের লিপগ্লোজ। ম্যাচিং করা ভ্যানিটি। ফ্লাট চপ্পল। একটি মধ্যম ধরণের ফ্রেমের চশমা। ওড়ানাটি মাথায় ও গলায় মাফলারের মতো পেঁচিয়ে কটিপর্যন্ত লম্বিত। সামনের চুলগুলো শ্যাম্পু করার পর একটু উঁচু করে ক্লিপ দিয়ে স্পাউটকরা।

তার চোখদুটোতে চোখ পড়তেই কেনো জানি বিদ্যুত ঝলকানির মতো একটা কিছু খেলা করে গেল আমার ভিতরে। সাতপাঁচ ভাবার অবকাশ না রেখেই পেপারের মূল্য পরিশোধ করে পা বাড়ালাম সামনে। পাচঁ ছ'পা হেঁটে পিছনে আরেকবার তাকালাম। দেখি কী যেন এক ডাক ও দু'চোখে। আমাকে কী জানি বলতে চায়! চপলতা কাছে টানে।

ভেজা রাস্তার ডিভাইডার পার হয়ে ছয় নম্বর বাসে উঠব। রাস্তা পার হতে যেয়ে ইখতিয়ার উদ্দিনের পায়ের সাথে লেগে আমার চপ্পলের একপাটি পড়েগেল। দ্রুতই ডিভাইডারের কাছে গেলাম। চপ্পলের একটি রাস্তায় পড়ে থাকল। তার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল একটি একটি করে বাস, এমা ও মাইক্রো।

চপ্পলের বহিরাঙ্গণে তেমন একটা ক্ষত আলো-আধারিতে দেখা যাচ্ছে না। তবে তার ভিতরের উপাদানগুলোতে ফাঁটল ধরেছে নিশ্চয়।

এ রকম বর্ষণমুখর রাত। ফার্মগেটে তেমন লোকজনের ভিড় নেই। তাই আজকে যে উপার্জন হবে না এটা প্রায় নিশ্চিত। বাসাতে সকালবেলা চাল, ডাল, সব্জি, খোকার খাবার নিয়ে ফিরতে হবে তার।

এ রকম আবেদনময়ী শর নিক্ষেপ করে আগে কাউকে হয়তো সে ডাকেনি। তবুও তার আবেদন আজ ব্যর্থ।

আমি কবি। আমি সুঠাম দেহের অধিকারীও। পকেট জোর কম তাও কিন্তু নয়। কিন্তু আমি পারিনি তার ডাকে সাড়া দিতে।

(ছবিঃ লরি জাস্টাস পেস )



বৈশাখের কবিতা ১২

Image result for abstract painting famous artist

ভৈরবী  আলোর মত জ্বালা
                          -সুতপা চক্রবর্তী

হিংসে মিশিয়ে রেখেছি
এসে খেয়ে যেও..... কালসাপ
ভৈরবী আলোর মতো জ্বালা

বিষানো ভাত
হা প্রাণেশ্বর! ভালোবাসা বোঝো?
যৌনতার চাইতে অমোঘ
শরীরী আবদার মেটাতে যেও না
পুড়ে যাবে
আঙড়াওঠা ত্বক জল নয়; একটু পাড় চায়
চিরি, জিরি,  বরাক
যাহয় কিছু একটা।
তার তলে লুকোনো কিছু বিষ ছড়িয়ে দেবে বলে এখন
ভান করছে
ভালোবাসার।
তারচেয়ে রিরংসা ভালো

তবুও কিছু ভালো নয়
যেমন করে কালসাপ
যেমন করে জোড়া ভ্রু
যেমন করে.....
না, থাক আজ বরং
দুমুঠো হিংসে খাই

(ছবিঃ লী ক্রেসনার) 

বৈশাখের কবিতা ১১

Image result for abstract painting famous artist

মাছ তৃষ্ণা
              -রাজেশ শর্মা

কোদাল নিয়ে নামস?
এই যুবক যুবক মাঠে
জল সে যায়
বাহানায় মাছ তৃষ
খলুই ভরে তুলছ মাঠের মন

ফাঁকি দিচ্ছ কাকে?
বৃষ্টি কে? ছাতা কে? কবি কে? হা হা
অ নিয়ন! নোলক ও দেখি!  ঝিকমিক ভাঁটফুল

ভুলছি না!

(ছবিঃ ট্রে কোপ্ল্যান্ড)

বৈশাখের আশ্চর্য ধারাবাহিকঃ হারিয়ে যাওয়া নব্বইঃ পর্ব ১০

Image result for red summer abstract image


“কাঠকয়লা কখন কলকাতা ২০/২০ হয়ে যায় ।”
                    - অনিন্দ্য রায় 

 “Loneliness can never be substituted, it’s like a lonely mirror in a lonely room.”  এইরকম এক অথৈ বাক্য লিখে সে শুরু করল কবিতা, বাংলা কবিতা, আর নিঃসঙ্গতার গায়ে লেখে থাকা আলো, নিঃসঙ্গতা থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসা আলো এসে পড়ল পাঠকের চেতনায় ।
তার নাম পাথি, বেশ বড়োসড়ো চেহারা, দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়ালে মনে হত, এই বুঝি উড়ে যাবে । বাঁকুড়ায় কালীপুজোর এক উথালপাথাল সন্ধ্যায় আমাদের দেখা । নব্বইয়ের মাঝামাঝি । পরস্পরের কবিতার সাথে আগেই পরচিতি ছিল, তখন সে ‘কবিতা ক্যাম্পাস’-এ নিয়মিত ।আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন পল্লবদা, প্রিয় পল্লব রায়, মনে পড়ে । তাকেও মনে হয়, তার কবিতারই মতো “like a lonely mirror in a lonely room.”  । যদিও  আর দেখা হয়নি আমাদের, একদুবার ফোনে সামান্য কথার টুকরো বাদ দিয়ে আর কিচ্ছু নেই আমাদের মাঝখানে ।
 আর লেখাও পড়ি না ওর ।
 গত ৪ এপ্রিল পল্লবদা হোয়াটসঅ্যাপে একটা পিডিএফ পাঠান আমাকে, সাথে লেখা, “ পাথির ১ম ও শেষ বই পাঠালাম ।”
 ডাউনলোড করে পড়তে শুরু করি। নাম ,’ কলকাতা ২০/২০’ শিহরিত হই, এই এতদিন পর পাখির লেখা পড়ছি । সেই একই আবেগ, সেই একইরকম ফ্রেস, যেন এই মাঝের এতগুলো বছর সে ঘুমিয়ে ছিল, হঠাৎ জেগে উঠে লিখতে শুরু করেছে । ২০/২০ ক্রিকেটের মতোই টানটান, উত্তেজক ।
কেবল, “ জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার” ।
“ প্রায় কুড়ি বছর ধরে একটা ঠাণ্ডা প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর কয়েকটা বিষণ্ণ প্যাড । কিছু হলুদ আলগা কাগজ । ভালবাসায় মর্চে পড়া তিনটি ডায়েরি । আর অনেকটা অন্ধকার । অন্ধকার থেকে উঠে আসা, এ বইয়ের সিংহভাগ লেখালেখি গত শতাব্দীর অন্তর্গত । বিরানব্বই থেকে ছিয়ানব্বই পর্যন্ত । তারপর লম্বা ঘুম । খওয়াদাওয়া । আর আত্মরক্ষা ।” লিখেছে পাখি, বইটির শুরুতে ।
৮ই এপ্রিল আমি ফেসবুকে লিখি বইটি নিয়ে । কেউ কেউ পড়তে চান । আমি পিডিএফ ফরোয়ার্ড করি ।
শুভ আঢ্য বইটি নিয়ে তার পাঠপ্রতিক্রিয়া জানায় ফেসবুকেই । এবং জানায় যে, সে পড়ে চমকে গেছে । আমার কাছে বইটি পেতে চান অনেকেই, ফরোয়ার্ড করি। বিভিন্ন ওয়ালে বইটি নিয়ে হইচই ।
কিন্তু কোথায় পাখি ?
যেন স্বেচ্ছা নির্বাসনে ।
তার বই তো এখনো প্রকাশিতই হয়নি, প্রকাশকাল লেখা আছে ডিসেম্বর ২০১৮ । আমি যেটা পেয়েছি, পড়তে দিচ্ছি, সেটা প্রাথমিক পাণ্ডুলিপি ।
প্রথম পৃষ্ঠার ওপরদিকটা ফাঁকা । নীচে, একেবারে নীচে লেখা দুটি পঙ্‌ক্তি
“ চুনের দেওয়ালের ওপর কাঠকয়লা দিয়ে কাঠকয়লা লিখি  ।
লিখতে লিখতে কাঠকয়লা কখন কলকাতা ২০/২০ হয়ে যায় ।”
বইটির প্রকাশক দেবরাজ চ্যাটার্জি, ও হ্যাঁ, বলা হয়নি, দেবরাজ চ্যাটার্জি পাখিরই নাম ।
      “ ওঁ গঙ্গা

সে ক্রমে নির্জন এবং একাকী
তার যাবতীয় বিষণ্ণতা অতিক্রম করার জন্য
সে ক্রমে ঈশ্বর
তৈরি করে অন্য এক উপত্যকা
   অন্য আকাশ, বৃক্ষশ্রেনী –
অন্য এক কলকাতা শহর ।”
এই বিভাব কবিতা । শুরু হচ্ছে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানপত্রের “ওঁ গঙ্গা” শিরোনামে । কীসের অন্তিম ক্রিয়াকর্ম করতে চায় সে ? যাপনের ? কবিতার ? জীবনের ?
লিখেছে সে, “ এই বইয়ের অনেক কিছুই নেই । প্রকাশক নেই । কপিরাইট নেই । কোনো বিনিময়মূল্য নেই । তাই বোধহয়, ভালবাসার মানুষও নেই।”
না, বন্ধু, ভালবাসার মানুষ, মানুষকে ভালবাসার মানুষ যে আছে, এখনও আছে, তা বোধহয় তুমি টের পাচ্ছ ।
‘বিনিময়মূল্য’ শিরোনামে লেখা,
       “ চুমু হোক, চাঁটি হোক, একটু ভালো লেবুর চা হোক, হাসি হোক, বাসি হোক, একশো-দুশো
  টাকা হোক, কোক হোক, ফোক হোক...
...
  অনেকটা লম্বা হাঁটা হোক, অসম্বব সব গল্প হোক, সুকুমার রায়ের ভালো হোক ।”
সূচিপত্রের আগের পৃষ্ঠায় লেখা
“ জীবনানন্দ ঘরে ফেরে নাই ।”
আমরাও গৃহত্যাগী হই, অনেকটা লম্বা হাঁটায় সঙ্গী হই পাখির ।
সে হাঁটা দ্রুত শেষ হবে হওয়ার নয়, তাই আগামী সংখ্যায় আবার পাখি ।

(ছবিঃ আলেক্সান্দ্রা রোমানো)


বৈশাখের কবিতা ১০




নির্দয় মানুষের এলাকায়-২
                              -জ্যোতির্ময় বিশ্বাস


আর আমারও কি বলার আছে কিছু বলো
অধিকাংশ সমব্যথী মানুষের মতো অপরিহার্য ও নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা ছাড়া। তুমি তো তবু ফুল বিক্রি করছিলে সংসদ ভবনের সামনে, পার্কে, রাজপথে, দুনিয়ায়। তুমি যখন ডান হাতে চোখ মুছে বয়স্কা রমণীর মতো দুঃখ বিষয়ে কিছু বলছো, আমি নিচু হয়ে চুপ হয়ে বোবা হয়ে যাই, আমি চোখে কিছু দেখিনা আর। বধির হয়ে যাই আর তুমি ভাবো কেউ মন দিয়ে শুনছে কথাগুলি। ফুল বিক্রির কথা, হাতের ব্যথার কথা আম্মুর কথা ইত্যাদি...



( ছবিঃমার্কাস ওবাল )

বৈশাখের কবিতা ৯

Image result for fire tibetan art

গাছ
    -তন্ময় ধর 


গাছের মতই তোমার সে জিজ্ঞাসা
      কোথাও তার ভাষান্তর নেই
~
~
~

"মায়াতরুর তলে ঘর
     ছায়া নাহি পড়ে
পত্র চিইর‍্যা রৌদ্র লাগে
    আমার কপালের উপরে"

~
~
~

গাছের ভিতর জন্মান্তরের পাতা
   লুকিয়ে রাখে আমার মৃত্যুবাণ





( ছবিঃ তিব্বতীয় তন্ত্রচিত্রের অনুকরণে জো ম্যানগ্রাম )

বৈশাখের কবিতা ৮

Related image

পথের প্রার্থনা
                 -বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় 


এসো , লুকোনো রাস্তটাই সন্ধান করি প্রথমে
দরকার হলে সাফসুতরো করে নেব  ময়লা লাগা তন্দ্রার বিন্যাস।
আমি জানি যতই  তীব্র হোক নির্জনতা
দূরে কেউ আছে
তার গায়ে দিগন্তের আকুলতা
তার পায়ে ভিন্ন এক পথের ইশারা
অন্যমনস্ক ভাবে সে পেরিয়ে যাচ্ছে জীবনের কোলাহল।

ময়লা লেগে থাকা ভুল স্বপ্নের নীচে খনন করি অনাঘ্রাত পথ ।

( ছবিঃ স্যান্ডর বোর্তন্যিক )

বৈশাখের কবিতা ৭

Image result for fire painting

বিন্দু ও বিসর্গ  
          -প্রদীপ চক্রবর্তী


বিন্দুর মতো বিসর্গের বাড়ি
বিন্দুর মতো শরীর বিসর্গের
বিন্দু পালা গেয়ে গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরছে
জগৎপুরের হাটে দুটো শিঙাড়া খেতে গিয়ে
প্রায় ধরা পড়ার অবস্থায় বিসর্গ বিষম খেলো |

বিন্দুর দৌড়োতে দৌড়োতে সর্বাঙ্গে জমেছে ঘাম
বৃষ্টিভেজা গরমের রাতে
আলো না - নেভানো এক বাড়ি থেকে
জনশূন্য পথে ভেসে আসে উড়ো কথার মতো বিসর্গ ...

বিন্দুর একটাই তো জীবন ...!
প্রতি - নিয়ত বিসর্গ একা হতে থাকে ,
বিন্যাসে ক্রমজায়মান বিন্দু যেন সুযোগের ব্যবহার ,
বিন্দু বৃত্তরেখা | স্পন্দনের নিদ্রাবিষ্ট অচল
স্বীকৃতি ...

অল্প খেয়ে অল্প বেঁচে নিস্তেজ দৃশ্য বোনার ভেতর
যতটা বোঝেন বিন্দু ,
 আর তার সদৃশ চেতনা ,
বিসর্গ কি বোঝে সব ,
                বিসর্গের মতো কেউ বোঝে ?

( ছবিঃ অ্যান্ড্রিয়া অ্যালেগ্রোন )

বৈশাখের কবিতা ৬

Image result for abstract flame painting

তুলসী ও রজনীগন্ধা ৩৩
                       -অভ্রদীপ গোস্বামী 

বৃষ্টিকেই প্রাথমিক শর্ত ভেবেছি এতদিন
প্রেমের প্রখরেরও
যেমন ভেবেছি কবিতার ছন্দগত টানাপোড়েন
দুর্নিবার ভীরু হৃদয়ের কাছে

সমস্ত শব্দের যন্ত্র বিকল ও যন্ত্রনাদায়ক হয়ে
                                                               উঠলে
বৃষ্টি নামে আলগোছে তোমার আঁচলে
ভেজানো মুখের কথা নয়
তবু নামে ছন্দগত মিলে ও বিন্যাসে

সমস্ত প্রদাহ যখন মাত্রাতিরিক্ত
সহ্য ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়েছে
তখন বৃষ্টি নামে ক্ষমতায় দুহাত বুলিয়ে

বৃষ্টিপাতের শব্দ প্রাথমিক জেনেছি এতদিন
শর্তহীন ভাবেই যেমন জেনেছি রাধার অভিসার
এখন প্রতিটি ছন্দ পতনের আগে
মেপে নিচ্ছি জলবিভাজিকা। অভিসারের সংজ্ঞা।



( ছবিঃ সের্গ উইয়াডার্নি ) 

বৈশাখের কবিতা ৫

Image result for abstract flame painting

বিবর
         -পিয়াল রায়

লিখতে পারছি না আর
আমার কলম বিন্দু বিন্দু রক্তে
সাজিয়ে তুলছে কাগজ
তাদের না আছে ভুত না আছে ভবিষ্যৎ

শোনো, তুমি কি একবার
ঘাসের শিকড় সরিয়ে দেখবে
কোনো চিঠি এলো কি না?
যা আমাকে রেবেকা নামের শিশুটি
পাঠিয়েছিল গত গ্রীষ্মে

ওদের ওখানে জল নেই
ওদের ওখানে হাঁসও নেই তাই
অথচ রেবেকা হাঁসের জন্য জমিয়েছে
ঈষৎ রঙা কয়েকশো নূপুর

 জানালায়
আপেলের ক্লান্ত ছায়া সরে এলো
শাখা থেকে ঝরে গেলো সূর্যাস্ত শিখর

আমাকে তার ঠিকানা দাও
সে পথে আমি পাঠিয়ে দিই
আমার বোধশূন্য বেহাগ




( ছবিঃ পিয়া স্নেইডার )

বৈশাখের কবিতা ৪

Image result for abstract fire painting

জন্মদাগ
         -শিবু মণ্ডল 

গাছেরা ডালপাতা হয়ে বাড়তে থাকে
সময় কুঠারের ধার নিয়ে চমকায়

কাট্‌ ! কাট্‌ ! আঘাতের সুমধুর কাট্‌

শুকিয়ে যাওয়া সময় আগুনের দিকে তাকিয়ে
বৃক্ষ আর বাতাস ভস্মের দিকে ধেয়ে যায়
মাটির গভীরে শেকড়ের করুণ আর্তনাদ

তবুও রক্তবীজ সবুজ, তবুও রক্তবীজ অঙ্কুরিত

আমরা সেই বৃক্ষের সাথে সময়ের জ্যামিতিক সম্পর্ক
খুঁজতে গিয়ে আসবাবের রূপ দিই ,মাত্রা বেঁধে দিই

তারপরও একটা গাছ যত না  আঘাতের কথা বলে
অনেক অনেক বেশি  সময়ের জন্মদাগ বয়ে চলে


(ছবিঃ এরিক সীবেন্থাল ) 

বৈশাখের কবিতা ৩

Image result for abstract fire painting

সম্পর্ক
       - সুমন সাধু

কিছু বাঁচার তাগিদের মধ্যেই পাশ ফিরে শোওয়া
শোওয়াটির পাশে ঘুম
ঘুমের কোটরে চোখে চোখে কথা

আমাদের বিছানাগুলো ক্রমশ ছোট হয়
আরও গুটিয়ে যায়
তারপর স্বপ্ন, দেখা, উড়ান

প্রতিদিন ভাবি সূর্য দেখব
কিন্তু পাশ ফিরে আলতো ঘুম ভাঙিয়ে দ্যায় না কেউ।
চলো, দু'জনে রোজ একটু একটু
চোখের মাথা খাই।




(ছবিঃ রোনাল ব্রিউয়াল্ট) 

বৈশাখের কবিতা ২

Image result for abstract fire painting


দুটি কবিতা
              -সুপর্ণা মণ্ডল



মা ক্রিকেটের খবর শোনায় আমাকে
কে ক’টা ছয় মারল, কে আউট হল শূন্য রানে
হল তো হল, তাতে কার কি যায় আসে আমি বুঝি না
কথা বলার কোন বিষয় না থাকলে
মা ক্রিকেটের কথা বলে
তাতে জনহীন এই বাড়িতে দু’ একটা কথোপকথন জন্ম নেয়।



দেখো এই দু’মহলা বাড়িতে এখন কেউ নেই
চার থেকে আবার দুই হয়েছ তোমরা
তোমরাও চলে যাও চাকরিতে
বাড়িটা ফাঁকা পড়ে থাকে
ফাঁকার মধ্যেই যে বাড়িটা গড়েছিলে...




(ছবিঃ আইরিনা ৎজুকোউস্কি) 

বৈশাখের কবিতা ১

Image result for abstract fire painting

১৪২৮, বসন্ত
            -নীলাদ্রি বাগচী


ক।।

আজ আবার করতলে রঙীন বাতাস

আজ দেবীর দূর্লভ হাসি চাঁদে রাতে
ঘোর অব্দি নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেলেছে

আজ দোল... হন্তারক পরাভৃত জানে
আজ দিন
নষ্ট হয় পাতার চাবুকে....
আড়ালে বা আবডালে সামান্য শিসে.....

খ।।

জ্যোৎস্না বিন্যাসে একা
শূন্য চাঁদ উঠে আসছে মাথার ওপরে...
পায়ের তলায় সাদা শ্লেট
প্রথম অক্ষর শিখছে আগাছার ঝাড়
আঁক শিখছে বিলিতি বাগান

আমিও অক্ষর চিনছি
নেমে আসা কটু রক্ত স্রোতে....
জ্যোৎস্না গন্ধ ম ম করছে, ভিজে যাচ্ছি
হত্যাকারী চাঁদজাত উল্লাস অভিধা ছুঁয়ে ছুঁয়ে....

গ।।

অবেলা ফিরেছে বারবার

রান্নাঘরে, খাবার টেবিলে..
এলোমেলো কাগজ বাতাসে...
জলের গেলাসে, জাগে, শিয়রে ওষুধে. ..
স্নান ঘরে চুলের মায়ায়....

ফিরেছে বারম্বার
গোছানোর দিনে আরো অগোছালো সম্ভবনা নিয়ে....

( ছবিঃ শ্যারন কামিং )