Thursday, 14 February 2019

উত্তরায়ণের কবিতা ১

Related image


প্রেমের কবিতা 
                 -রঙ্গন রায়


প্রতিটি প্রেমিকা আসে , কবিতা উপহার দেয় , তারপর চলে যায়। 
আমি নিজের লেখা সব কবিতা গুলো বারবার পড়ি , অক্ষর হাতড়াই 
খুঁজে দেখি প্রেমিকাদের অস্তিত্বের সুন্দরী গন্ধ 
এসব দিনেই আমি সুস্থ থাকি ভীষণ 
আসলে কেউ সারাজীবন থাকেনা বলে 
একা থাকা শিখি , রাস্তায় বেরোই , চায়ের দোকানে চা খাই 
চাওয়ালা জানায় , ওই মেয়েটি তোমায় ঝাড়ি মারছিল এতক্ষণ 
নিজেকে সন্দেহ করি , সেই মেয়েটি কোনোদিন জানবেই না 
এতক্ষণ আমিও তাকেই দেখছিলাম - 
প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক কীভাবে যেন ঝিমিয়ে আসে 
ভালো লাগেনা , জীবন দেখা যায় , উপলব্ধি করা যায়না। 
তবু ফিরে আসি , সাইকেল চেপে ফিরে আসি , 
ঝুড়িতে পাউরুটি নিয়ে ফিরে আসি - 
রাত বাড়ে তাকিয়ে থাকি খাতার দিকে 
কে লিখবে কাকে এই প্রশ্ন চিহ্নের মাঝে এসে দাঁড়াই 
প্রশ্নচিহ্নের তলে থাকা কালো বিন্দুটা বুলেটের মত গেঁথে থাকে বুকে 
পাউরুটির গুড়ো মুখে সারিবদ্ধ পিপড়েদের সাথে আমিও হাঁটতে থাকি 
সারিবদ্ধভাবে হাঁটি , মিছিলের কথা মনে পরে ...

(ফোটোঃ জেমস ওয়েলিং) 

উত্তরায়ণের কবিতা ২

Image result for abstract photography


পাঁজরের কাছাকাছি‌
                            -জ্যোতির্ময় মুখার্জি 



আঙুলগুলোকে কিছুতেই ধরতে পারছি না। পিছলে পিছলে যাচ্ছে আঙুলের তলা দিয়ে। অথচ ধরতে সুবিধা হবে বলেই তো কাটা চামচ সরিয়ে রেখেছিলাম পাশে


কে যেন বলেছিল, ওরে কাটা চামচ রাখ। হাত দিয়ে খা। অতো স্টাইল্ মারিস না দিকি। আর আমি তখন সবেমাত্র চামচটাকে বসিয়ে ফেলেছি পাঁজরের কাছাকাছি‌। আস্ত একটা বুক মুখে ঢুকবে কি ঢুকবে না এমন সময়…


এই যে আঙুল। তার তলা। তার’ও তলায় মস্ত একটা হাত। কাঁধ থেকে ঝুলে। ঘুমিয়ে বা ঘুমের ভান করে মটকা মেরে পড়ে আছে, তাকে জাগাতে এতো চামচের আয়োজন কেন?




(ছবিঃ শ্যারন কামিং) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৩

Image result for abstract photography

ধুলোমেঘ
             -পিয়াল রায়

ধরা যাক একটা আলো
এগিয়ে আসছে তোমার দিকে
আর তুমি
দাঁড়িয়ে আছ দু'হাত মেলে

ধরা যাক এখানে
শূন্য নামে কোনো মাধ্যম নেই
নীলচেরঙা চামড়াও গায়েব
তাহলে কি তুমি পানি হবে?
অথবা মাছরাঙা, পানকৌড়ি

একবার নিজের দিকে তাকাও
দেখো সেখানে কোনো নিঝুম দুপুর
মুঠো মুঠো ভিজে বাতাস ছড়িয়ে রেখেছে কিনা

যদি বাতাসের গন্ধ তোমাকে
চিনিয়ে দেয় কোনো একদিন
বৃষ্টির পর গোলাকার চিহ্নের মতো
বিদ্যুৎ জ্বলেছিল গাছেদের মাথায়

তাহলে জেনো,
সমস্ত আলোই এরপর তোমাকে
ছুঁতে চাইবে

যদিও তুমি তখন অশরীরী এক

ধুলোগন্ধভরা মেঘের ভিতর

(ফোটোঃ হোলী ম্যার্টলিউ )

উত্তরায়ণের কবিতা ৪

Image result for high contrast abstract photography

সম্বল
      -গৌরাঙ্গ মন্ডল


যেহেতু মুদ্রণ ছিল বঞ্চনার একমাত্র সহায়

শোকের প্রেরণাবৃত্তে
মগজ ঘেরাও হল, ধীর
এ-যেন মৃতের পায়ে অনাত্মীয় পাপ
অপারে কী! জানার মোহে ভেঙে পড়ছে নিঁখুত ঈর্ষায়

দুঃখেরা অলীক আর
প্রকাশও যথাযথ নয়

তেমন মুহূর্তে কষ্ট জেগে ওঠা পূর্ণ নিরাময়

(ফোটোঃ বেরী ব্লগ) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৫


Image result for abstract art black and white

আরশি
        -দেবারতি চক্রবর্তী


সময়ের নদী আছে একটা

যেতে হলে চোখ বন্ধ করতে হয়

সেখানে অনেক স্বপ্ন

তুমি আমি আমরা চরিত্রসব বিলুপ্ত

( ফোটোঃ নাতালি কিন্নিয়ার)

উত্তরায়ণের কবিতা ৬

Related image

বেলাশেষে
             -অভিশ্রুতি রায় ভট্টাচার্য 


তুমি প্রতিবার লিখে রাখছ আঙিনা

এই শহুরে রাস্তা কোনো ইস্তফা দিতে শেখেনি

তাই  প্রত্যেকটি বেড়ে ওঠা জড়ুলে সূর্যাস্ত নেমে এসেছে

এই সবকিছু মেখে নিলে

বাকিটা শুধু ঘামঘাম ভিজে ওঠা

আমাকে নিয়ে যায় আরও অনেক পশ্চিমে

আরও অনেক মেরুতে

সেখানে আজ অবধি কোনো শ্যাওলা ধরেনি

কোনো রং বলে ওঠেনি
আজ আমার জন্মদিন

(ফোটোঃ ডেভিড জি পল )

উত্তরায়ণের কবিতা ৭

Image result for abstract art black and white

ক্ষত
    -নীলাব্জ চক্রবর্তী



এডিটেড স্মৃতির ভেতর যে ফোকাস
নড়ে উঠছে
স্পর্শে
আমি খুব স্বাভাবিক আঙুল
শুধু ছায়াতেই
দৃশ্যমানতায় রেখেছি যা যা এলিমেন্টস
ক্ষত হয়
স্ফূরিত এক কমলা অভ্যাস তার নুন
খুলে রাখা সেতু
এই যে নতুন মাংসের দিনে পাউটিং
ঘুরে আসা রোদ
জল হয়
এক বৃক্ষ সারফেস হয় কার পালকে
দেওয়াল থেকে দেওয়ালে
উঁচু শব্দ অথচ...

(ফোটোঃ রজার কোয়েনিগ) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৮

Related image

রেকর্ড
        -নীলিমা দেব 

জানো তো , মুভিং আপেল কখনও পুরানো হয়না  ---
একমুঠো আগুন ঘরটাকে যেভাবে ঠেলছে
আরেকটু এগোলেই রেকর্ড

কালো হাত রসালো আলোর নিচে টাচ করতেই
জানালার ডবল ইমেজ!

প্রতিটি  দৃশ্যের মোচড়ে ,
                        রিভার্স আপেলের মুড
                                         গাছ ছাড়িয়ে উঁচু হয়ে যাচ্ছে আপেলবাগান...



(ছবিঃ হ্যারি মুডি) 

উত্তরায়ণের কবিতা ৯

Related image

খিদে উপাখ্যান
                     –উমা মন্ডল


  চৈত্র এসে গেল
কোকিলন্ঠী বাতাস বয়ে যায় ,
উথলে ওঠা ভাতের ফ্যানের মতো দাবদাহের প্রকট
 এখনও চোখে পড়েনি ,
উট দরজায় দাঁড়িয়ে
চৌষট্টি ছকের নদী ও পার্বত্য জীবন এগিয়ে যায় ।


 রাস্তাও এগিয়ে চলে ধুলা তার যন্ত্রণা সকল নিয়ে ,
মধ্যবিন্দুতে বসে থাকা ভিখারীর সন্তান
লজেন্সের শুকিয়ে যাওয়া প্যাকেট নিয়ে সতর্ক করে !
দিনকাল ভালো নয়
পাপের ঘড়ার প্রায় জবুথবু অবস্থা ,
ঠাকুমার মুখে কবেই শুনেছিলাম চার – পো হতে বেশি দেরি নেই
তারপর অনেকগুলি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার কোটাল এলো ভাটিয়ালী বুকে ,
খাদ ও শীর্ষদেশ একটু নড়েচড়ে উঠলো
তৃতীয় নয়নের স্রোত একবার জেগে উঠেই ঘুমিয়ে পড়লো ।



কালঘুমের অসুখ এভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে
হৃৎস্পন্দন থেকে মেঝেতে ,
আজকাল কেউ লাল রং লাগায় না
সর্বত্রই মার্বেলের চকচকে উপস্থিতি ,
হেঁটে যাওয়া পিঁপড়েরা পিছলে যায় এই ধরাধামে
ওদের জীবন – পঞ্জিকা আর অনুসরণ করতে পারি না ।
তাই শালপাতা নিয়ে বসে থাকি শূন্যের পাশাপাশি
এক নিঃস্ব ভিখারী আমি ,
ঝুলি নিয়ে এসেছি উলঙ্গ পায়ে , এক মুঠো চাল দিও মাগো
অন্নপূর্ণার বাড়া ভাতে পাশাপাশি খেতে বসি
আমি আর ভিখারীর অষ্টম সন্তান .


(ছবিঃ শেইলা নীলে)

                                             

উত্তরায়ণের কবিতা ১০

Image result for abstract art black and white

ব্যাধি 
           -শিবু মণ্ডল 


গোপনে কেটে গেছে লোহা
চুরচুর লোহাতে
যন্ত্রের তবু বিষ নিয়ে কারবার
ক্ষত নিরাময়ে, মাত্রায় সাজিয়ে তোলা রূপ!

এ কৌশলরীতি, হাঁটাহাঁটি আদিকাল হতে
তুমি দিয়েছিলে। আমি গ্রহণে অক্ষম বলে
নীল হয়ে ওঠে কণ্ঠ

শূন্যের উপর শূন্য স্থির হয়ে দাঁড়ালেও
পূর্ণাঙ্গ অক্ষরেখাটি তবু অবিচল
শাসনের ইতিহাস ভুলে তবু রাজদণ্ড হাতে নিতে
গেলে এক এক করে শাটার পড়ে যাবে শহর জুড়ে।

সাদা রঙের দিস্তা দিস্তা পাখি কত উড়ে গেছে
সবুজ খেত ছেড়ে, হলহলে নদী ফেলে
আজ আমি যান্ত্রিক হয়েছি যন্ত্রের কাছে
আবহমান কৃষকের মত ক্ষুধা সইতে পারিনি বলে

মুষল পর্বের শুরুতেই নীল পাতা জুড়ে অক্ষর
মুষড়ে পড়ে। দেবনগরীতে আজ মহা উৎসব
নিজের পোষা পাখিটিকে নিজেই মেরেছে যে শবর
তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে উদ্যত সব

পাতার পর পাতা উল্টে দেখি, পড়ার চেষ্টা করি
ব্যাধেরও তো ব্যাধি আছে! সেই বোধ থেকেই পাখিটি ফিরে আসে
ফিনিক্স হয়ে। আমরা তার আত্মা খুলে খুলে দেখি
নাও আজ বিশ্বযজ্ঞে উৎসর্গ করো পাখিকে






(ছবিঃ অশোক রেবাঙ্কর) 

উত্তরায়ণের কবিতা ১১

Image result for black and white abstract painting

যথার্থ মেয়েটি যেন চন্দ্রবোড়া 
                                       -প্রদীপ চক্রবর্তী 


এক।

পোষা বীজ ও কাদায় মেখে দাও | বীজ শুধু এমন কিছু ,
রক্তপ্রণালী থেকে সমুদ্রের দিকে যেতে যেতে যা হয়েছে মৎস্য ...

এমন প্রেম ও বৈরী | শস্ত্রপচারে অন্ধকার |

এমন হাত মিথুন প্রক্রিয়া | তার মন্থন দুদিকেই |

বৃষ্টি  না অশ্লীল শব্দ খেচর ? বেশ মেঘ করেছে |

সাতসকালে রাঁধুনির ছোট মেয়ে ওই নৈঋতে জং ধরা | পেরেক বাক্সসমেত ভুলভাল কিছু দিয়ে গেলো |

শরীরের নাম : বিন লাদেন | মায়াময় সৌরসন্ধানী ঈশ্বর |
আরো কারণ আছে | আরো হারানো স্বপ্নের কারণ ...

প্রাচী বীজে এখানে এটিই নিয়ম | ছলা পশমে আঁধারকলা |
নিষিদ্ধ স্তরে ভোরের রস খেতে জড়ো হয়েছি |

দূরে কোথাও মিহি ঠুনকো মেয়েটির ছোট ছোট বুকের মধ্যে কীট বোনার ঘর ...



দুই ।

পরম সলোমন | অতঃপর মাংসের স্বাদ নোনতা |

প্লেট নামিয়ে তাকাচ্ছো | সেই হাওয়ার মেয়েটি একোয়ারিয়ামের ভেতর বিবিধ মাছের স্থানীয় অস্বাস্থ্য ...

সেই মহাভোজের দৃশ্যটি চোখে ভাসে | বিষণ্ণ শাড়িবিজড়িত সুদূর সুপ্ত | তোমার নিদ্রায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে এই ভেবে শরীর থেকে মন খসে | ফুঁ লাগে জীপের ঝোড়ো হাওয়ায় | রোজই এক পা , দু 'পা গ্যালপিং | তেমন কিছু নয় , অঙ্ক মিলিয়ে শরীরে তার জায়গা খুঁজে নিতে | ফোঁটা দু ফোঁটায় দু ' হাত ভরে যায় | রক্ত বিন্দু সন্নিহিত ক্যাসিনোর সর্বশেষ আমিষ | দন্ডচারী দু 'ঠোঁটঅলা পাখি আত্মহত্যাকালীন সরঞ্জামসমূহ নিয়ে এলো |

চিবুকে পড়ন্ত তিল | সৈকত ময়ূরের মোহ |
অলীক আপেল খাবার দৃশ্য .......

সর্বস্বান্ত ফুরিয়ে ঈষৎ জাদুকর |

গমনে বেশ্যায় |

হতে পারে ভাঁড়  ......................!

(ছবিঃ লরা গোমেজ)

উত্তরায়ণের কবিতা ১২



Image result for numero magazine still life editorials

ছই
     -সু চক্রবর্তী

আমার আষ্টেপৃষ্টে জন্মসাপ
জড়িয়ে গেলে বাবা আর প্রেমিককে
গণিতের এক সূত্র বলে মনে হয়।
বাবা অতীতের হেঁশেলে ডাঁই
করে রাখা দিস্তা কাগজের মতো
কালি পড়া বারণ।
প্রেমিক কখনো জবুথবু কখনো এককৌটো
ভাঙা সসুপুরি
দাঁত ভাঙবে তবু খয়েরসুখ!
বাবা প্রেমিক একই বর্গের
চতুর্ভূজ

একটি আরেকটি ছাড়া
অসম্পূর্ণ; ছই ছই


(ফোটোঃ গুইদো মোকাফিকো)

উত্তরায়ণের অনুবাদ কবিতাঃ ফিলিপাইন্স থেকে আইভী আলভারেজ

Image result for ivy alvarez


গোপন বোন
                   -আইভী আলভারেজ 


উপত্যকায় ও হাজির হল, ভোরের দু'ঘন্টা পরে। ওর চলার ছন্দে রাতপোশাক দুলছে, যেন পাহাড়ে গলন্ত সূর্যের সোনা, কুয়াশামাখা গোলাপ। ও যেখানে দাঁড়াল, শাদা এক স্তম্ভ উঠল সেখানে, এবং ওর বিবর্ণ ঠোঁটে নীল দাগ, চুলে অন্ধকার প্রপাত। ওর দিকে ঘুরে তাকাতে গিয়ে, শীত ছুঁয়ে ফেলল আমার তলপেট, আমার জঙ্ঘা। এক মিনিটে ওর এক বছর বয়স কমে গেল। তুমি যাচাই করতে পারো। রাখো, ঘড়ির কাঁটা ওর তর্জনী আর অঙ্গুষ্ঠের মধ্যে রাখো, পিছনের দিকে সরাও। ওর পোশাক ছোট হচ্ছে, চুল বাড়ছে, ত্বক টানটান হচ্ছে, পুষ্ট হচ্ছে, সুডৌল, বুকের উচ্চতা, কোমরের উচ্চতা, হাঁটুর উচ্চতা। ওর ম্লান মুখ আমাকেই ছিঁড়ে ফেলল। তারপরে ও শুধুই কাপড়ে-জড়ানো এক প্রফেট, তারপর ক্ষুদ্রতম ভ্রূণ, তারপর একটা দাগ। ওর কোন নাম ছিল না।



পরিচিতি- আইভী আলভারেজের জন্ম ফিলিপাইন্সে হলেও বেড়ে ওঠা এবং পড়াশুনো তাসমানিয়ায়। এরপর কিছুকাল বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জে বসবাসের পর তাঁর বর্তমান ঠিকানা নিউজিল্যন্ড। শূন্য দশকের শুরু থেকেই তাঁর লেখালিখির শুরু। এযাবৎ তাঁর পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।

(অনুবাদ- সম্পাদক, উষ্ণিক)

(ছবিঃ কবির ব্যক্তিগত ব্লগ)