অমরশঙ্কর দত্ত
(২০/১০/১৯৩৮ — ১৫/০৯/১৯৯৮)
[অমরশঙ্কর দত্ত থাকতেন পুরুলিয়া জেলার মানবাজারে। সম্পাদনা করেছেন ‘জঙ্গলমহল’ পত্রিকা। প্রকাশিত বই ‘দিনকাল’ (‘তিন ভুবন’ সংকলেনের অংশ), ‘ভোটরঙ্গ’ (ছড়া), ‘নির্বাচিত কবিতা’।
কবিপুত্র সন্দীপ দত্তর সহায়তায় অমর শঙ্কর দত্তর কয়েকটি কবিতা প্রকাশিত হল।
: অনিন্দ্য রায়]
নাম
শুধু নাম মনে পড়ে
অঙ্কুরিত বীজ
চেয়েছিল রৌদ্র মাটি জল
পরিবর্তে
পেলো শুধু খ্যাত ও অখ্যাত কিছু নাম
নাম মনে পড়ে।
ডায়না
ডায়না বিষাদগ্রস্তা তাই পৃথিবীর শোক
ঝরে পড়ে
ডায়না বিষাদগ্রস্তা কুঁড়ি আর পাঁপড়ি মেলে না
রাজহংসীর মতো শুভ্র তবু শৃঙ্খলিত স্রোতধারা
সংবাদপত্র জানায় বলে, সকলেই জানি
ডায়না আজ ভালো নেই।
রাজপ্রাসাদের থামে কালোছায়া- শোকগাথা
গির্জার ঘণ্টায়
ডায়না কি নেপাল যাবে কিংবা গ্রীস
সমুদ্রবিহার চাই- নির্জনতম দ্বীপের
অঞ্জাতবাসের শুশ্রুষায়
পুনঃ সংস্থাপিত হবে তাঁর পূর্বরাগ, প্রেম?
ডায়না একান্তে আজ একা- একদিকে রাজপ্রাসাদের উঁচু থাম
গৌরবগাথা ধ্বজা আভিজাত্য
বিষাদসিন্ধুর মধ্যবর্তী তৃষ্ণার্ত মীন সাঁতার জানে না
সংবাদমাধ্যম আমাদের
শুধুমাত্র উপহার দেয়
কুন্তলঢাকা ডায়নার আধেক মুখ
নিপাট স্তন নাভি
ডুবন্ত নাবিক আমরা
তা থেকেই সমুদ্ভাসিত
আমাদের
সন্ধান সন্ধান।
দাহ
উপরে সুস্থির জল, নিচে ঘূর্ণি
দাম্পত্য কলহ।
বিস্তৃত উদ্যান পড়ে থাকে দূরে- পুষ্পহীন
উদয়াস্ত পরিশ্রমে জীবিকা সংস্থান
তবু অবাঞ্ছিত ঝড়- হিংসা ও সন্দেহ
শুন্য করে দিয়ে যায় পূর্ণ কলস
গুহাবাঘ, তাও কেন অরণ্যসঙ্কুল
ঘরে ঘরে স্বতঃস্ফূর্ত
একটি দাবদাহ
দাম্পত্য কলহ!
বীজ
অক্ষয়রানী খেজুরজুপি ভাসামানিক কেরলাসুন্দরী
কতো না বীজের নাম
কতো জাতি ও প্রজাতি
তবু জাতিদাঙ্গা হয়না সেখানে।
অনুরূপ শিমুল ও পলাশ শাল পিয়াশাল
মহুয়া অর্জুন দেবদারু
পাশাপাশি, একই মাটি ও বৃষ্টিধারায়
বসবাস
জাতিদাঙ্গা সেখানেও নয়।
ভুমি থেকে অঙ্কুরিত হয় না বলে
মানুষেরা অন্যরকম।।
গাছ ও মানুষ
চেনা-শোনা-জানা জীবনের ভিতরে
আমরা বহন করি অন্যজীবন।
চেনার অন্তরালে অচেনা, মানুষের
অন্তরালে অন্য মানুষ
আত্মগোপনকারী মানুষের
অতর্কিত ও এলোমেলো আত্মপ্রকাশ
গাছেরা সে রকম নয়।
গাছের ভিতরে
রামের মধ্যে রহিম
আত্মগোপন করে থাকেনা
তাদের অযোধ্যা নেই-
রামজন্মভুমি নেই
গাছ প্রকৃত ঝড়ের মর্ম বোঝে
বোঝে বলে-
ঝড়ের পর বৃষ্টি
ধারাস্নান!
তোলা
আজকাল বিড়ালের মতো অনেক কিশোর কিশোরীকে
লাফালাফি করতে দেখি।
এর কোলে ও, ওর কোলে এ।
স্কুল বারান্দায় হাসপাতাল চত্বরে
ফাঁক-ফোকরে।
আবার অর্থ শিকারীর চোখ লক্ষ রাখে
আনাচে-কানাচে
পাকড়াও করতে পারলে, তোলা
আদায় করা যায়
হায় প্রেম, হায় শারীরিক অবাধ্যতা
শেষঅব্দি
তুমিও তোলার খপ্পরে।