Saturday, 30 May 2020

দহনকালের কবিতা ৯


Fire Study 1 | Rob Pointon


নিন্দিয়া
          -রা জে শ  শ র্মা 


একটি লোকের ভিতর আরেকটি প্রায়

অপসৃয়মাণ ভীতু লোক কিভাবে মারা যায়

ভাবতে ভাবতে অলীকবাবু এসে দাঁড়ালেন নাগরিকচাতালে
তখন উড়ালপুলশোভিত সন্ধ্যা নামছে সালাংকারা
পথিপার্শ্বে পড়ে রইল রোহানি আলো

আর কলম এর দেহলিজ্ পেরিয়ে বাজতে লাগলেন বড়ে গোলাম আলি খাঁ!



(ছবিঃ বব পয়েন্টন) 

দহনকালের কবিতা ৮


The Forest Fire by artist Suman Choudhury – Abstract, Painting ...


এভাবেই সকাল নামবে
                           -সুপ্রিয়া সু চক্রবর্তী

চলো বেরিয়ে পড়ি। আকাশ আরও গভীর হোক। রাত বাড়ুক রাস্তা দূর্গম হোক। সমস্যা নেই। বেরিয়ে পড়ার উদ্দেশ্যটাই সফল হোক। ওরা যে যা বলুক। যে যা করছে করুক। আমাদের ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়া দরকার। ভয় পেও না। লজ্জা পেও না। ওদের মারমুখের সামনে বেরিয়ে আসাটা জরুরী। তুমি বলো ইচ্ছেটাই আসল রাজা। দ্যাখো শহরের সব ল্যাম্পপোস্ট নিভে আছে, গাছেদের মতো চুপ -- ওদের দেখে ভাবো অরণ্যের গভীরে আছো তুমি। এসময়েই গুপ্তহত্যা করে পুঁতে দাও মাটির নীচে আমাদের ভিতরের যত বয়ে চলা ভয়ের ঢেউ। ঘরের আশ্রয় আমাদের এই দস্যুবৃত্তির আরাম দেবে না।

চলো তবে অন্ধকার খুবলে খেয়ে বেরিয়ে আসা যাক। হাতের মুঠোয় আয়না রেখো। ভ্রুমুদ্রায় অভয়। এ যাত্রা সফল করতে শয়ে শয়ে শব পেরিয়ে হলেও রক্তমাখা সড়ক ছেড়ে আগুন মাখা যাক। দাঁতে নখে শান দেওয়ার তাড়নায় রাজা উলঙ্গ হয়েছে অনেককাল আগেই, এখন বারুদ চুরির আগে চলো, বেরিয়ে পড়া যাক।



(ছবিঃ সুমন চৌধুরি) 

দহনকালের কবিতা ৭

Temple Of Fire Oil Painting By Nina Polunina | absolutearts.com


একটি বিভ্রান্তির কবিতা
                               -শতানীক রায় 

এই পৃথিবী জন্মানোর ঠিক কতদিন পর আমি জন্মেছি
এরকম কথা মনে হতেই উঠে বসেছি।

অনেক রাত তখন।
কিছুদিন আগেই একজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল
গীতার বিশ্বরূপদর্শন যোগ নিয়ে

সেদিন কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
তারপর বালির স্বপ্ন দেখি।
আওয়াজের শরীর দেখি
বালিহাঁসের ঘুরে বেড়ানো লম্বা উঠোন
লম্বা মানুষের গল্প
তারা কী করে উপন্যাস পড়তে পড়তে ভাসে
তাদের শরীরে কখন খাঁজ খাঁজ অন্ধকার জমে
উড়ে যায় হামাগুড়ি দিতে থাকি দেখি
ফুল ফলে মূল্য হারিয়ে ফেলেছি আমি,
আমার কোনো চিহ্নবাসনা নেই
চিকিৎসাও নেই
সবুজসাপ নেই
চাল-ডাল-শস্য-পৃথিবী রং কিছুই নেই।

হাওয়ার শরীর
হওয়া আছে
উড়তে দেখি
আবার বানরের ঘুম দেখি
থালা বাসনের গন্ধ ঠুকে ঠুকে কোনো গল্পহীন
ঐতিহ্যে ঢুকে পড়ি।

এরকম বারবার হয়
কারিগর আসে
কারিগর যায়
ভুলে যাই বদলে যেতে
কথা ভুলে যাই
আওয়াজ হারিয়ে ফেলি

একইসঙ্গে ঘৃণা ভালোবাসা পেয়ে বসে
আলো অন্ধকার
আকার নিরাকার পেয়ে বসে
জল পেয়ে বসে
পুকুরের গাছ পেয়ে বসে
সাপের চলন পেয়ে বসে
'খুব' শব্দটা পেয়ে বসে
ফিরে ফিরে আসে কিছু
ফিরে আসে শরীর
ফিরে আসে তারা খসা রাত
ফিরে আসে বিদেহী তান্ত্রিক 
গভীর থেকে আরও গভীরে যাই
আমার জন্মানো কোনো এককের দিকে যায় কী,
কোনো শূন্য অগোচর
প্রাচীন মহাসাপের দিকে?       


(ছবিঃ নিনা পলুনিনা)

দহনকালের কবিতা ৬


Otto Piene: Fire Paintings 1965- 2009 | Wall Street International ...

বার্তা 
      – উমা মণ্ডল

চৈত্রের   দুপুর । হলুদ  পাতার  অভিমান  দেখি  না  , দেখি  না  তার  ঠোঁট  থেকে  খসে  পড়া  রক্ত , কান্না.........খরা  বায়ু  ছিঁড়ে  নেয়  শিকড় -বন্ধন ; পড়ে  থাকা  ছাল  ওঠা  ছাদ , একাকী  ঢেকেছে  মুখ  কার্নিশের  কুঁড়েঘরে ।


প্রলেপ  লাগাই  ওষুধের.........মমি  বিছানায়  শুয়ে  থাকে  মৃত  গাছ  । বাহকের  দল  ফিরে
যায় । হাতে  পাখা  নিয়ে  বসে  থাকি  যখ  হয়ে । নীলকণ্ঠ  দেখে  যায় , উড়ে  যায়  মিশরীয়  কাব্যের  পাতায় ; হিব্রু  মুক্তি  পেয়েছে  আদিম  শিকলের  খাঁচা  থেকে । লুপ্তপ্রায়  সভ্যতার সাথে  চিঠি  প্রণালীর  সূচনা  হয়েছে । নীলনদ  খুলে  দেয়  অববাহিকার  পথ । বিষাদের  অক্ষরবৃত্ত  বার্তা  পাঠিয়েছে ; চিঠি  নিয়ে  দরজায়  তুতানখামেনের  যখ............

(ছবিঃ ওটো পিয়েন)
                             

দহনকালের কবিতা ৫

Russian Artist Eduard Grossman Art For Sale - 9 Listings

মেঘ, এক, দুই
                  -জয়ীতা ব্যানার্জী

(১)

মেঘের অনেক নীচে তার ছায়াখানি পড়েছে এমন
যেন কোনও বিরহীর খোঁপা, আপাত বিষণ্ন
তবু আলোকসম্ভব

আমি এই বৃষ্টির দিন ভালোবাসি

হাড়ের মতো বিবর্ণ, অথচ সমুজ্জ্বল এই ভালোবাসা

(২)

ভোরের সমুখে বসে পাখিদের ব্যস্ততা দেখি
দেখি পিঁপড়ের হেঁটে চলা, পতঙ্গদ্বয়ের অভিসারও
পাতা সরানোর শব্দে মনে পড়ে গতরাতে ঝড় হয়েছিল
হাওয়া এখনও শীতল তাই। দূরে একফালি মেঘ
বৃষ্টির গৌরবে আলো হয়ে আছে
ভাবি সমস্ত জীবন এই একই কাজে তারা
পারদর্শী। অথচ কী নিরুত্তাপ
রাত্রির শোকেও কেউ অঝোরে কাঁদে না

(ছবিঃ এদুয়ার্দ গ্রসমান)

দহনকালের কবিতা ৪


Van Gogh inspires Jason Brooks - Van Gogh Museum



একান্ন পিঠ– বিষ, ২০২০
           -সু ত পা  চ ক্র ব র্তী 


সংসার সুস্থির
বয়স্থা স্বামী এসে খেয়ে যান অন্ন

তাঁর দুচোখে  জ্বলজ্বল করতে
থাকে আলস্য, বালিশ

স্ত্রী বৃদ্ধাটি তখনও  জীবিত
পাশের হারে সবেমাত্র গোল্লাছুটের
বয়স পেরিয়েছে

ডানপক্ষ অবশ!

স্বামীসঙ্গ করে, চিৎকারে

আজানে, গানে মাঝেমাঝেই সুর
তুলে একান্ন জীবন

অকলঙ্ক দেহ,দেখিতে দেখিতে পরবর্তী জন্মান্তরে সেঁধিয়ে যায়

(ছবিঃ জ্যাসন ব্রুকস)

দহনকালের কবিতা ৩

Textured Fire Sunflower" by Nadine Rippelmeyer | Sunflower art ...

একটি নিওলিথিক লেখা
                                -পায়েলী ধর

পাথরও আঘাত বোঝে
ক্ষত বোঝে, হননও সে জানে
তথাপি আঙুলে তার
গূঢ় নখ, বেগতিক ঘৃণা
বুকের আকাশ খুলে
বেলাগাম থুতু ছুঁড়ে মারে
চাবুকে চাবুকে যেন
তুলে নেয় যাবতীয় শোধ—

আমি ওর দু'হাতের মাঝে
আরও কিছু জড়ো হই রোজ
দেখি কোনও নিচুগামী জলে
ঝুঁকে আছে বাঁশি ও বিহান
পাথর আহত ছিল একা
এই ঠিক আমরা যেমন


(ছবিঃ নাদিন রিপেলমায়ার) 

দহনকালের কবিতা ২

Elements. Fire Painting by Elena Genkin | Artmajeur



হাড়ের নির্যাস 
               -সৌমনা দাশগুপ্ত 



মহতী ঝরনাজলে ফেলে রেখে আসি আদি নাভি



দেখছি আলোকরেখা, তার ক্ষীণ অনুপ্রাস

ভোরবর্ণ শালগাছ একটু একটু করে ফুটে ওঠে



ঐশী ধ্বনির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে ডানার বিস্তার

জন্মছক খুলে বসে আঁক কষছেন মেঘের ঈশ্বর



কাত হয়ে পড়ে আছে ছবি

ছবির মেয়েটি শুয়ে, লাল



এখানে সমাসবদ্ধ জল, এইখানে অঙ্গার শীতল

রক্তাক্ত হয়েছে ছায়া, হাতে তার নিবিড় আয়না

আর্শিতে বসত করে রূহদার এক



আত্মঅভিলাষী আমি ময়নাতদন্ত করে দেখে নিই

অগ্নিমন্থনের শেষে পড়ে আছে সোরা ও গন্ধক

হাড়ের নির্যাস আর ঝুঁকে পড়া বিশেষণগুলি



জংধরা দেহের কপাট



বেহেশত দোজক কাঁপে, জ্বলে ওঠে


(ছবিঃ এলেনা জেনকিন)

দহনকালের কবিতা ১

Tsherin Sherpa's 'All Things Considered' (2015) is one of the lots to be auctioned at the Asia House Benefit Auction

শম্ভু দা 
                -পাপড়ি গুহ নিয়োগী

আমরা  প্রত্যেকে একেকটা তরমুজ
এই সময় আপনিও চলে গেলেন

ভালবাসতে পারলাম কই আপনাকে
রাষ্ট্রশিবিরে আঁশটে গন্ধ। অন্ধকারও ভিজে যাচ্ছে

আপনার মহাপৃথিবী গোঙায় যন্ত্রণায়
মরা চোখে মা বলে শম্ভুও চলে গেলো

অথচ পরিচ্ছন মুখোশ পড়ে
ন্যাংটো শিশুর মৃত মায়ের আঁচল টানার  দৃশ্য দেখছি






(ছবিঃ ৎশেরিন শেরপা)

হারিয়ে যাওয়া কবিঃ অমরশঙ্কর দত্ত













অমরশঙ্কর দত্ত 

(২০/১০/১৯৩৮ — ১৫/০৯/১৯৯৮)

 [অমরশঙ্কর দত্ত থাকতেন পুরুলিয়া জেলার মানবাজারে। সম্পাদনা করেছেন ‘জঙ্গলমহল’ পত্রিকা। প্রকাশিত বই ‘দিনকাল’ (‘তিন ভুবন’ সংকলেনের অংশ), ‘ভোটরঙ্গ’ (ছড়া), ‘নির্বাচিত কবিতা’।
 কবিপুত্র সন্দীপ দত্তর সহায়তায় অমর শঙ্কর দত্তর কয়েকটি কবিতা প্রকাশিত হল।
             : অনিন্দ্য রায়]

নাম

শুধু নাম মনে পড়ে
অঙ্কুরিত বীজ
চেয়েছিল রৌদ্র মাটি জল
পরিবর্তে
পেলো শুধু খ্যাত ও অখ্যাত কিছু নাম
নাম মনে পড়ে।

ডায়না

ডায়না বিষাদগ্রস্তা তাই পৃথিবীর শোক
ঝরে পড়ে
ডায়না বিষাদগ্রস্তা কুঁড়ি আর পাঁপড়ি মেলে না
রাজহংসীর মতো শুভ্র তবু শৃঙ্খলিত স্রোতধারা
সংবাদপত্র জানায় বলে, সকলেই জানি
ডায়না আজ ভালো নেই।
রাজপ্রাসাদের থামে কালোছায়া- শোকগাথা
গির্জার ঘণ্টায়
ডায়না কি নেপাল যাবে কিংবা গ্রীস
সমুদ্রবিহার চাই- নির্জনতম দ্বীপের
অঞ্জাতবাসের শুশ্রুষায়
পুনঃ সংস্থাপিত হবে তাঁর পূর্বরাগ, প্রেম?
ডায়না একান্তে আজ একা- একদিকে রাজপ্রাসাদের উঁচু থাম
গৌরবগাথা ধ্বজা আভিজাত্য
বিষাদসিন্ধুর মধ্যবর্তী তৃষ্ণার্ত মীন সাঁতার জানে না
সংবাদমাধ্যম আমাদের
শুধুমাত্র উপহার দেয়
কুন্তলঢাকা ডায়নার আধেক মুখ
নিপাট স্তন নাভি
ডুবন্ত নাবিক আমরা
তা থেকেই সমুদ্ভাসিত
আমাদের
সন্ধান সন্ধান।

দাহ

উপরে সুস্থির জল, নিচে ঘূর্ণি
দাম্পত্য কলহ।
বিস্তৃত উদ্যান পড়ে থাকে দূরে- পুষ্পহীন
উদয়াস্ত পরিশ্রমে জীবিকা সংস্থান
তবু অবাঞ্ছিত ঝড়- হিংসা ও সন্দেহ
শুন্য করে দিয়ে যায় পূর্ণ কলস
গুহাবাঘ, তাও কেন অরণ্যসঙ্কুল
ঘরে ঘরে স্বতঃস্ফূর্ত
একটি দাবদাহ
দাম্পত্য কলহ!

বীজ

অক্ষয়রানী খেজুরজুপি ভাসামানিক কেরলাসুন্দরী
কতো না বীজের নাম
কতো জাতি ও প্রজাতি
  তবু জাতিদাঙ্গা হয়না সেখানে।

অনুরূপ শিমুল ও পলাশ শাল পিয়াশাল
মহুয়া অর্জুন দেবদারু
পাশাপাশি, একই মাটি ও বৃষ্টিধারায়
বসবাস
জাতিদাঙ্গা সেখানেও নয়।

ভুমি থেকে অঙ্কুরিত হয় না বলে
মানুষেরা অন্যরকম।।

গাছ ও মানুষ

চেনা-শোনা-জানা জীবনের ভিতরে
আমরা বহন করি অন্যজীবন।

চেনার অন্তরালে অচেনা, মানুষের
অন্তরালে অন্য মানুষ
আত্মগোপনকারী মানুষের
অতর্কিত ও এলোমেলো আত্মপ্রকাশ

গাছেরা সে রকম নয়।
গাছের ভিতরে
রামের মধ্যে রহিম
আত্মগোপন করে থাকেনা

তাদের অযোধ্যা নেই-
রামজন্মভুমি নেই

গাছ প্রকৃত ঝড়ের মর্ম বোঝে
বোঝে বলে-
ঝড়ের পর বৃষ্টি
ধারাস্নান!

তোলা

আজকাল বিড়ালের মতো অনেক কিশোর কিশোরীকে
লাফালাফি করতে দেখি।
এর কোলে ও, ওর কোলে এ।

স্কুল বারান্দায় হাসপাতাল চত্বরে
ফাঁক-ফোকরে।

আবার অর্থ শিকারীর চোখ লক্ষ রাখে
আনাচে-কানাচে

পাকড়াও করতে পারলে, তোলা
আদায় করা যায়
হায় প্রেম, হায় শারীরিক অবাধ্যতা
শেষঅব্দি
তুমিও তোলার খপ্পরে।